স্কুলজীবন: নকল - ২

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: বুধ, ০৫/০৯/২০০৭ - ২:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগের পর্ব

চার. (২)

'দশে মিলি করি কাজ' নীতি প্রফেশনাল নকলের জগতে অনেক সমাদৃত। যারা নকল বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ, তারা নকলকারীদের সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা নিয়ে ঘুরেন, এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নাই। তারা চিন্তাও করতে পারবেন না, নকল কত বড় বৈজ্ঞানিক একটি কাজ; তার পিছনে কতোটা মেধা, কতোটা সৃজনশীলতা আর কতোটা ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার থাকে। কোন নকল কোথায় রাখা আছে, তার জন্য একটা আলাদা লিস্টি থাকে। ওই লিস্টি ধরা খাওয়া হাইপাওয়ার চশমাওয়ালার চশমা হারানো থেকেও বিপজ্জনক। আবার কাছে রাখা নকলের ভল্যুম যত বাড়ে, ধরা খাওয়ার রিস্কও ততোই বাড়তে থাকে। তার ওপর সবকিছু একা কপি মারা মানে মূল্যবান সময়ের নিদারুণ অপচয়। সেযুগে ফটোকপি মেশিনে ফন্ট ছোট করে কপি করার টেকনোলজিও আমাদের আয়ত্বের বাইরে। সুতরাং যা করতে হতো, সবই হাতে খেঁটে।

এ সমস্যা সমাধানে আমরা ক্লাসে শেখা কঞ্চির লাঠিভাঙ্গা গল্পের 'দশে মিলি করি কাজ' নীতির সফল ব্যবহারিক প্রয়োগ করতে সক্ষম হই। পরীক্ষার আগেই কয়েক বন্ধু মিলে ভাগ করে নেয়া হতো কে কোন প্রশ্নের উত্তর কপি করবে। পরীক্ষার হলে তাই সহজেই ট্রেস করা যেতো, কার কাছে কতো 'নম্বর' পাওয়া যাবে। একজনের লিখা হয়ে গেলে সে পায়ে ঠেলে ঠেলে পাশের জনকে পাস করে দিতো। এভাবে ঠেলার সময় ধরা পড়লেও স্যারকে বুঝতে হিমশিম খেতে হতো ওই নকলের অরিজিন্যাল মালিক কে। এই পদ্ধতির আরো একটা সুবিধা হলো, একজন ধরা খেলেও বাকিদের কালেকশনে যা থাকতো, পাশ করার জন্য তা-ই যথেষ্ট।

শুধু পরীক্ষার হল কেন! এর বাইরেও সময় সুযোগ পেলে মশকো চলতো জামাতে নকলের। একবার সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার এসেছেন স্কুল পরিদর্শনে। আমরা জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা দিবো। হোস্টেলে থাকি। স্যারেরা তাকে আপ্যায়ন করে হোস্টেলে নিয়ে এলেন। বলা নেই, কওয়া নেই, এ কী উৎপাত! শুধু মৌখিক হলেও সে এক কথা, উনি ধুম করে 'বর্ষাকাল' রচনা লিখতে দিলেন। রুমের চারটি খাট টেনে মিশিয়ে তার ওপরে গোল হয়ে বসে পড়লাম খাতা কলম নিয়ে। সবার মাঝখানে টেস্ট পেপার। উনি দূর থেকে দেখলেন খুব মনোযোগ দিয়ে লিখছি আমরা। আসলে তো ওই টেস্ট পেপার থেকে কপি মারছি।

গোল বাঁধলো খাতা চেক করার সময়। একই গরু দেখে একই রচনা অনেকে লিখতে পারে; কিন্তু বর্ষাকালের রচনা এক হওয়া ভয়ঙ্কর। ভয়ঙ্কর হলে কি হবে, এ প্রশ্ন আসবে, সেটা আমাদের জানা। উত্তরটাও মুখস্ত তাই। একই বই থেকে সবাই মুখস্ত করেছি বলেই না!! বাহ বাহ! উনি আমাদের সম্মিলিত মুখস্ত শক্তির প্রশংসা করে বিদায় নিলেন।

(চলবে)


মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এই সিরিজের প্রথম দিককার লেখাগুলো পাচ্ছি না।সামহোয়্যারে গিয়েছিলাম।সেখানেও দেখি আপনার ব্লগটি খালি।

পুরনো লেখাগুলো দরকার।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বস, সামহোয়্যারে লিখি নাই। সচলে আছে আগেরগুলাও:

তালপাতার সেপাই

ছায়ার প্রেম

পরী দেখা

নকল শুরু

নকলের আরো ২/১টা পর্ব থাকবে সম্ভবত। লিখা জমা দেওয়ার ডেডলাইন কবে? ডেডলাইনের মধ্যে আমি সবগুলো একসাথে করে আপনাকে পাঠাতে পারি।

লিখার মান নিয়া অবশ্য দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নাই। চোখ টিপি
সবাই যখন ভালো লেখকদের লিখা পড়তে পড়তে শাঁকপাতা খুঁজবেন, তখন এগুলা কাজে লাগবে। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আরো দুয়েকপর্ব নামান।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব,ততো ভালো।সবগুলোকে একসাথে জুড়ে দিয়েন নিজের মতো করে,যাতে একটা লেখা হিসেবে আসে।
আর লেখার শিরোনামটাও নিজের মতো করে দিয়েন।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভাল লাগলো।

দৃশা এর ছবি

আপনার লেখা পইড়া গেন্ডা কালের কাহিনি মনে পড়ল।
বৃত্তির লাইগা স্কুলের স্পেশাল কোচিং ক্লাসে বইসা গণহারে দোস্তরা সমাজ-বিজ্ঞান নকল কইরা ভাসাইয়া দিতাম।অবস্থা এমুন খারাপ হইছিল মুখস্ত কইরা আইলেও বই না দেইখা আর লিখতে ভালা লাগতো না... মনে হইত ফরজ কাম আদায় করা ব্যাহত হইতাছে।

এক্সাম হলে নকল করা যে কত প্রতিভার একটা কাম আমার এক দোস্তরে দেইখা বুঝছিলাম। ওই উজবুক মাইয়া ইসলামিয়াত পরীক্ষায় আরবী লিখা আনছিল বোর্ডে । এক্সাম শুরু হওয়ার পর মাইয়া দেখি কতক্ষন পর মাস্টাররে ডাইকা কয় স্যার আমার কাছে নকল আছে নিয়া নেন আর আমারে মাফ কইরা দেন। পরে মাইয়ারে জিগাইলে কয় দোস্ত ডরের চোটে যা শিখা আইছিলাম তাও লিখতে পারতেছিলাম না।

দৃশা

সৌরভ এর ছবি

কতো নকল করতো রে!



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ঈভ এর ছবি

নকল করে এ পর্যন্ত??

অমিত আহমেদ এর ছবি

এই নকল জিনিসটা আমার দ্বারা আর হলো না... কখনো হবে সে সম্ভাবনাও দেখিনা!
সিরিজের সব লেখাই আগ্রহ নিয়ে পড়ে এসেছি, খুব সুন্দর হচ্ছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।


একটা ঝলসে যাওয়া বিকেল বেলা, একটা লালচে সাগরের জলে
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...

থার্ড আই এর ছবি

আমাদের যে সহপাঠী আমাদের ব্যচে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হয়েছলিলো। তাকে আমরা নকলবাজদের মধ্যে অন্যতম বলতাম। আসলে এটি একটি শিল্প।
আমি একবার এ্যাডমিট কার্ডে কোটেশন লিখে ধরা খেয়েছিলাম,তার পর থেকে তওবা।
-------------------------------
জল ভরো সুন্দরী কইন্যা, জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

চাকরীর ইন্টারভিউয়ে অবশ্যই প্রশ্ন করা উচিত, 'ছোট বেলায় নকল করছ?' কারণ, এর চেয়ে ক্রিয়েটিভ কিছু স্কুললাইফে করা মনে হয় সম্ভব না। আরেকটা হলো স্যারদের সাইন নকল
বলাইদা, ভুগোলের ম্যাপ নকল করতেন কিভাবে?
আমগো বন্ধুদের মধ্যে এক জটিল পদ্ধতি চালু ছিল চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।