১.
৯৫। ফেব্রুআরি। রমজান মাস। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধির মাস হলেও সদ্য এইচএসসি পাস আমাদের সমস্ত ধ্যানজ্ঞান স্রষ্টার চাইতে পাঠ্যবইয়ের ওপরই বেশি নিবদ্ধ। অ্যাডমিশন টেস্টের মিশনে ফেইল মারলে জীবনের মিশনে ভীষণ অপদস্ত হওয়ার হাইরিস্ক ফ্যাক্টরে রাতের ঘুম দিনের একফাঁকে শর্ট স্পেলে সেরে নেওয়ার এক অগোছালো সময় তখন।
২.
শাহজালালে তখনও সেশন জ্যাম তেমন প্রকট হয় নাই। রহমত আলি স্যার ছিলেন কলেজে আমার সবচেয়ে কাছের শিক্ষক। পরিসংখ্যান পড়ান। আমরা পাস করতে করতে উনি শাহজালালে জয়েন করেন। ইচ্ছে ছিলো, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু উনার সাজেশন মোতাবেক, মধ্যবিত্তের জন্য টাইম অনেক বড় ফ্যাক্টর। শাহজালালে যেকোনো সাবজেক্টে পড়লেই আমি চীটার হয়ে অতি স্বল্প সময়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে পারবো, এটা ছিলো উনার যুক্তি। অপরপক্ষে, বুয়েটের সেশন জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে ৭ বছর পরে যখন ইঞ্জিনিয়ারের সার্টিফিকেট গলায় ঝুলিয়ে বেরোবো, তখন আবারও শামিল হতে হবে দেশের বাইরে যাওয়ার ইঁদুর দৌড়ে। অনিশ্চিত জীবন! সেই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন অবশ্য বুয়েটে চান্স পাওয়ার গৌরবময় অনিশ্চয়তা! সো, মনের মধ্যিখানটা হালকা মিন মিন করলেও শাহজালালে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সংকল্পে স্থির হতে বেশি বেগ পেতে হলো না। ফর্ম ইত্যাদির ব্যবস্থা রহমত আলি স্যারই করে দিলেন। যথাসময়ে ভর্তি পরীক্ষাও দিলাম। রেজাল্ট দিবে ১৭ তারিখ।
১৪ তারিখে হঠাৎ জানা গেলো, রেজালট ১৩ তারিখেই দিয়ে দিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, সিলেটের আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোর বাইরে পাবলিশড হয়েছে শুধুমাত্র ইনকিলাব বা দিনকাল - এরকম ২/১টা জাতীয় পত্রিকায়। তন্ন তন্ন করে খুঁজে জানা গেলো, চান্স মিল গ্যায়া। কিন্তু ভর্তি ইন্টারভ্যু ১৭ তারিখ। শাহজালালের এমন শাহ প্যাঁচে বিরক্ত হলেও ভর্তিযুদ্ধের প্রথম রাউন্ডে জয়ী আরো ৩ বন্ধুর সাথে ১৬ তারিখ দিবাগত রাইতে সিলেটের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালাম।
খেইল শুরু হল পরদিন ভোরবেলা। হোটেলে গোসল দিয়ে কাকক্ষুধার্ত ৪ বন্ধু বাইরে বেরিয়ে পড়লাম ব্রেকফাস্টের উদ্দেশ্যে। ঘুরছি আর ঘুরছি। হিযাব পরা রেস্টুরেন্টগুলো কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়ে মাহে রমজানের পবিত্রতা বর্ণনায় ব্যস্ত। পথচারী দুয়েকজনকে জিজ্ঞেস করাতে মনে হল, তারা চমকে উঠলেন! রমজান মাসের সকাল বেলা খাবারের কথা জিগায় - এই সাত সকালে এমন নরকের কীটদের সাথে দেখা হয়ে তাদের দিনটাই মাটি হলো বোধহয়। অবশেষে একজনকে পাওয়া গেলো, উনি শাহজালালের স্টুডেন্ট। বললেন, "এভাবে ঘুরে লাভ নেই। শহরের সব রেস্টুরেন্টই বন্ধ। তারচেয়ে ক্যাম্পাসে যান।" অবশেষে, শাহ পরানের ক্যান্টিনে ভরপেট খিচুড়ী উদরস্থ করে রমজানের পবিত্রতা নষ্টের ষোলকলা পূর্ণ করে ৪ জন পাপীর জান রক্ষা পাইলো।
৩.
খুব অবাক হই। ধর্ম-কর্ম কি জোর জবরদস্তির জিনিস? আল্লাহ বা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক কি ঢাকঢোল পিটিয়ে জানান দেওয়ার জিনিস? ধর্ম কি মনে, নাকি পোশাকে? রমজান মাসে কেউ ওপেনে কিছু খেলে তাতে ধর্মপ্রাণ মানুষের তো কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হওয়ার কথা না। অন্যের ভোগান্তির বিনিময়ে আত্মশুদ্ধি কখনোই নয়।
---
পোস্টের তারিখগুলো পুরোপুরি ঠিক হওয়ার নিশ্চয়তা লেখক দিলেন না।
মন্তব্য
সন তারিখ উল্টা। মিয়া আপনে কোন সালে পাস করছেন সেইটা বুঝবার পারতাছি না।
যাউগ্গা, আপনে যেই টা কইলেন সেইটা হইলো ধর্মের আনুস্ঠিকতার বাড়াবাড়ি। ফরজ কামের খবর নাই নফল করতে গিয়া লুঙি খোলা। জোর কইরা ধর্মরে কায়েম করার ফালতু লাফালাফি।
এই জিনিসটারে ফোকাস করনে আপনারে ৫ স্টার দেওন হইলো।
মাসু ভাই, সন তারিখ না মিলানোই ভাল।
হ, ফোকাস ওইটাই। ফাইভ স্টারে একটা সুকটান দিলাম।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনার দাবীগুলি খুবই যৌক্তিক।
হোটেল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ধর্ম সমর্থন করে কিনা এটি নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। আমার মনে হয় এটি ধর্মে নেই। কিন্তু এটি হয়ত সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত এবং তা রোজাদারদেরকে শ্রদ্ধা করে তাদের সহায়তা করারই জন্যেই করা। কিন্তু পাশাপাশি আমাদের সমাজ অন্য ধর্মের লোকজন বা যারা ধর্ম পালন করে না তাদের কথাও ভুলে যায়।
এই অনুদারতা ও অসহনশীলতা অবশ্যই কাম্য নয়। তাই আমাদের উচিৎ এসব নিয়ে কথা বলা। সবার আত্মউপলব্ধি দরকার। একসময় হয়ত সচেতনতার মাধ্যমে ধর্ম পালনকে আমরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারব যেমন পশ্চিমা কিছু সমাজ কিছুটা পেরেছে।
উদাহরনস্বরুপ বলা যায় উন্নত বিশ্বে একটি প্রচলিত ধারনা যে প্রকাশ্যে কাপড় শোকানো ভব্য নয়। এবং কোন পাড়া সবচেয়ে এলিট/সভ্য তা বোঝা যায় বারান্দার রেলিং দেখলে।
দুটোর মধ্যে সামন্জস্য কোথায় আছে ধরতে পারছেন তো?
××××××××××××××××××××××××××××××××××××
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
রেজওয়ান ভাই, মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা।
উদাহরণটা চমৎকার দিয়েছেন। পোশাকী বাড়াবাড়ি দেখেই প্রকৃত ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরিমাণটা বুঝা যায়।
রোজাদারদের সম্মান দেখানো জিনিসটার জন্য জোর করার কিছু নেই। একজন মানুষ সারাটা দিন পরিশ্রম করছে, না খেয়ে থাকছে, তাকে যেকোনো সুস্থ মানুষই শ্রদ্ধা করবে। তার জন্য রেস্টুরেন্ট বন্ধ করতে হয় না।
ব্যবসায়িক দিক দিয়ে, রেস্টুরেন্টের ব্যবসায় এমনিতেই টাইমটেবিল চেইঞ্জ হবে। মুসলিম অধ্যুষিত দেশে দিনভাগে বিক্রি কম হবে, সেটা স্বাভাবিক। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, ধর্মপালনের জবাবদিহিতা স্রষ্টার কাছে, মানুষের কাছে নয়। কেউ কেন রোযা রাখে নাই, সেটা সে জানে আর আল্লাহ জানে। অমুসলিম দূরে থাক, কোনো মুসলিমকেও তাই রোযার মাসে প্রকাশ্যে খেতে দেখে বিদ্রুপের চোখে তাকানোর কিছু নেই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
- হ এইরম একটা ব্যাপার মনে হইলো খেয়াল করলাম কালকার আগের দিন। আলডি থাইকা টুকটাক কিছু জিনিষ কিইনা যখন সিগারেটের র্যাকের দিকে টোক্কাই তহন চেকআউটের মাইয়াডা আমার দিকে এমুন একটা চউনি দিলো মনে হইলো এলাকার মুফতি সাবের মাইয়া। সিগারেট চাইয়া মহা অন্যায় কইরা আলছি রোযা-রমযানের দিনের এই আছরের ওয়াক্তে।
লগে লগে টান দিয়া সিগারেটের র্যাকের ঝাপ্টা লাগাইয়া দিছি আবার। লগে থাকা এক পোলা জিগায়, লইলা না ক্যা? আমি কই মিয়া দেহনা জালপট্টি মসজিদের ইমামের মাইয়ায় ক্যামনে চোখ মটকাইয়া চাইয়া রইছে। মরুম নি হালায়!
ঐ পোলা কয়, চান্দু তুমারে কি রোযায় ধরছে নি? এইডা বাংলাদেশের লস্সন্দি না, এইডা জর্মন দেশ। তুমি বিড়ি খাও না চুরুট খাও তাতে ঐ বেডির আব্বার কি?
আমিও চিন্তা কইরা দেখলাম। আসলেই তো। তয় আল্টস্টাডের রাস্তা হাঁটতে গেলে দোকানে ঢুইকা কিছু খাইতে আসলেই সঙ্কোচ লাগে। চরম ক্ষুধা নিয়াও কালকা হাঁটলাম যে!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হুম....ভদ্র মাইনসের সংযম অটোমেটিক্যালি আসে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
শেষ প্যারাটাই সব বলে দেয়। একমত।
নতুন মন্তব্য করুন