আগের পর্বের পর ...
এর আগে আমরা ডারউইনের দেওয়া বিবর্তন তত্ত্বের কথা জেনেছি, এবার তাহলে দেখা যাক গত দের শ বছরে বিবর্তন তত্ত্বের বিকাশ ঘটেছে কিভাবে। বিজ্ঞান তো তার তত্ত্ব প্রচারের পর চুপ করে বসে থাকেনি, নতুন নতুন জ্ঞানের আলোকে বার বার পুরনো তত্ত্বকে ঝালাই করে নেওয়াই তার কাজ। ক্রমাগতভাবে পরিবর্তন, পরিবর্ধণ, এমনকি বর্জন করে হলেও সে আরও আধুনিক এবং উন্নত তত্ত্বকে সামনে নিয়ে আসে। ডারউইনের সময় পর্যন্ত বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলো ঠিক কিভাবে কাজ করে তা সম্পের্ক বিজ্ঞানীদের কোন স্পষ্ট ধারণাই ছিলো না। আমরা আগে দেখেছি যে ডারউইনের আগে ল্যামার্কই (১৭৪৪-১৮২৯) প্রথম সঠিকভাবে সিদ্ধান্তে আসেন যে প্রজাতি সুস্থির নয়, এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির বিবর্তন ঘটে। যদিও তিনি যে পদ্ধতিতে এই পরিবর্তন ঘটে বলে প্রকল্প দেন তা পরবর্তীতে সম্পূর্ণভাবে ভুল বলে প্রমাণিত হয়। তিনি মনে করতেন যে, জীবের যে অংগগুলো তার জীবনে বেশি ব্যবহূত হয় সেগুলো আরও উন্নত হতে থাকে, আর যেগুলোর বেশী ব্যবহার হয় না সেগুলো ধীরে ধীরে ক্ষয় বা বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। তার মধ্যে একটা অত্যন্ত জনপ্রিয় উদাহরণ হচ্ছে জিরাফের গলা লম্বা হয়ে যাওয়ার গল্প, লম্বা লম্বা গাছের ডগা থেকে কঁচি পাতা পেরে খাওয়ার জন্য কসরত করতে করতে বহু প্রজন্মের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে জিরাফের গলা লম্বা হয়ে গিয়েছিলো। ল্যামার্ক আরও বললেন যে, একটি জীব তার জীবদ্দশায় ব্যবহার বা অব্যবহারের ফলে যে বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জন করে সেগুলো তার পরবর্তী প্রজন্মে বংশগতভাবে সঞ্চারিত হয়। যেমন ধরুন, জুতো পরতে পরতে আপনার পায়ে যদি স্থায়ীভাবে ঠোসা পরে যায় তাহলে কি পরবর্তী প্রজন্মের পায়েও সেই ঠোসা দেখা যাবে! এখানেই কিন্তু শেষ নয়, তিনি সে সময়ের আরও অন্যান্য জীববিজ্ঞানীদের মত এটাও ভাবতেন যে, পরবর্তী প্রজন্মে বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে এক ধরণের মিশ্রণ ঘটে; যেমন ধরুন, বাবার গায়ের রং কালো আর মার গায়ের রং ফর্সা হলে ছেলেমেয়ের গায়ের রং মিশ্রিত হয়ে শ্যমলা হয়ে যেতে পারে! কিন্তু ডারউইন এটা ঠিকই বুঝে ছিলেন যে, কোন অঙ্গের ব্যবহারের উপর নির্ভর করে জীবের বিবর্তন ঘটে না, প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করার জন্য শুধুমাত্র বংশগতভাবে যে বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তী প্রজন্মে দেখা যায় তারাই দায়ী। যে বৈশিষ্ট্যগুলো আপনি আপনার পূর্বপুরুষের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে আপানার দেহে পান নি, তার উপর বিবর্তন কাজ করতে পারে না।
ল্যামার্কীয় বনাম ডারউইনীয় দৃষ্টিভঙ্গী
ল্যামার্কীয় দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী পরিবেশের দাবী মেটানোর উদ্দেশ্যে আভ্যন্তরীণ চাহিদা বা প্রয়োজন থেকে জীবের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন বা বিবর্তন ঘটে। এই দাবী মেটানোর জন্য কোন জীব যখন কোন এক বিশেষ অঙ্গের অধিকতর ব্যবহার শুরু করে তার ফলশ্রুতিতেই একসময় নতুন বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণার উদ্ভব ঘটে। এভাবে ক্রমাগত ব্যবহার বা অব্যবভার থেকেই অঙ্গের উৎপত্তি বা বিলুপ্তি ঘটে যেতে পারে। নীচের ছবিতে ল্যামার্কের সেই বহুল সমালোচিত জিরাফের উদাহরণটি দেখানো হয়েছে। প্রথম জিরাফটি হচ্ছে বেটে পুর্বপুরুষ যে উঁচু গাছের পাতা নাগাল পাওয়ার জন্য ক্রমাগতভাবে তার গলা লম্বা করার চেষ্টা করছে। এভাবে চেষ্টা করতে করতে একসময় তার গলা লম্বা হয়ে যায় এবং জীবের জীবনকালে অর্জিত বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চালিত হয়। এভাবেই ধীর প্রকিয়ায় পরিবর্তন হতে হতে একসময় নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। অর্থাৎ বিবর্তন ঘটে সরলরেখায়। চিত্র : ল্যামার্কীয় দৃষ্টিভঙ্গী মেন্ডেলীয় আধুনিক বংশগতিবিদ্যা এবং ডারউইনের বিবর্তনর তত্ত্ব অনুযায়ী কোন জনপুঞ্জে মিউটেশন এবং জেনেটিক রিকম্বিনেশনের কারণে প্রচুর পরিমাণে প্রকারণ থাকে। যেমন ধরুন, নীচের উদাহরণে জিরাফের এই জনপুঞ্জে বেটে লম্বা মাঝারি সব ধরণের গলাবিশষ্ট্য জিরাফ রয়েছে। প্রাকৃর্তিক নির্বাচনের কারণে লম্বা গলার জিরাফরা টিকে থাকার জন্য বেশী সুবিধা পাবে কারণ তারা সহজেই উঁচু ডালের পাতা নাগাল পেতে পারে। তার ফলে তারাই বেশী সফলভাবে টিকে থাকবে এবং পরবর্তী প্রজন্মে এই বৈশষ্ট্যটিকে সঞ্চালিত করতে সক্ষম হবে। তার ফলে ধীরে ধীরে একসময় জনপুঞ্জে প্রকারণ থাকলেও লম্বা গলার জিরাফের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এক্ষেত্রে ইচ্ছা, প্রয়োজন, চাহিদা বা জীবিতকালে অর্জিত বৈশিষ্ট্যের কোন মূল্য নেই। জেনেটিকভাবে বৈশষ্ট্যগুলো বিদ্যমান না থাকলে তা বিবর্তনে কোন ভুমিকা রাখবে না।
|
কিন্তু ল্যামার্কের অন্য দু'টি তত্ত্ব নিয়ে ডারউইন বেশ বিপাকে পড়লেন, আসলেই কি জীবদ্দশায় অর্জিত বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়? সত্যিই কি বাবা মার বৈশিষ্ট্যগুলো সন্তানের মধ্যে মিশ্রিত হয়ে যায়? কিন্তু আসলেই যদি এভাবে বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ ঘটে তাহলে কি তার প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বই ভুল প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে না? আমরা আগেই দেখেছি যে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের অন্যতম প্রধাণ শর্তই হচ্ছে যে, প্রজাতির জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রকারণ থাকতে হবে, যার ফলশ্রুতিতেই জীবের মধ্যে বেঁচে থাকার যোগ্যতায় ভিন্নতা দেখা দেয়। কিন্তু এভাবে যদি কোটি কোটি বছরের বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলো মিশ্রিত হয়ে যেতে থাকে তাহলে তো হাজার প্রজন্ম পরে সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে, প্রকারণ থাকবে কি করে? তখনও জেনেটিক্সের আবিষ্কার না হওয়ায় ডারউইন এর সদুত্তর দিতে পারলেন না, এমনকি কখনও কখনও তিনি ল্যামার্কের তত্ত্বকেই সঠিক বলে ধরে নিলেন। বিবর্তনবাদের বিরোধীরা সে সময় তার এই সংশয়কে প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্বের বিরুদ্ধে অত্যন্ত জোড়ালোভাবে ব্যবহার করতেন।
অথচ তার সমস্যার সমাধান অবশ্যই দিতে পারতেন গ্রেগর মেন্ডেল (১৮২২-১৮৮৪), যিনি ১৮৬৫ সালেই তার জিনতত্ত্বটি (যদিও তিনি 'জিন' শব্দটি কথাও উল্লেখ করেন নি) প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি মা বাবার দুজনের মধ্যে বিদ্যমান বংশগতির একক বা বৈশিষ্ট্যগুলোকে 'ইউনিট ক্যারেক্টর' বলে আভিহিত করেছিলেন, তবে, পরবর্তীতে ১৯০৯ সালে উইলিয়াম জোহান্সেন একে জিন হিসেবে নামকরণ করেন। দুর্ভাগ্যবশতঃ, ডারউইন মেন্ডেলের লেখাটা পড়ারই সুযোগ পেলেন না; আসলে সে সময় কেউই মেন্ডেলের আবিষ্কারের প্রতি ভ্রক্ষেপ না করায় তার এই গুরুত্বপুর্ণ কাজটা তখনকার মত হারিয়েই গেল কালের গহ্বরে। তারপর ১৯০০ সালের দিকে আবার নতুন করে আবিষ্কৃত হল তাঁর কাজ। আমরা অবাক হয়ে জানতে পারলাম, ডারউইন যে সমস্যাগুলো নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন তার সমাধান ছিলো এক্কেবারেই তার হাতের ডগায়। মেন্ডেল দেখালেন যে, ছেলে মেয়ের প্রত্যেকটা বংশগত বৈশিষ্ট্য মা বাবার কোন না কোন 'ইউনিট ক্যারেক্টর' দিয়ে নির্ধারিত হচ্ছে। বাবা মার কোষের ভিতরের এই ফ্যাকটর বা জিনগুলো একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তাদের সন্তানদের মধ্যে প্রবাহিত হয়। এখন আমরা জানি যে, জিন হচ্ছে ডি এন এ দিয়ে তৈরি বংশগতির একক, যার মধ্যে কোষের বিভিন্ন রকমের প্রোটিন তৈরির (এবং তার ফলশ্রুতিতেই কোষ তৈরি হয়) তথ্য বা কোড জমা থাকে। বাবা এবং মার যৌন কোষে এই জিনগুলো থাকে, তাদের ছেলে মেয়েরা নিজেদের প্রত্যেকটা বৈশিষ্ট্যের জন্য দুজনের থেকে একটা করে জিন পেয়ে থাকে। এই জিনগুলোর মধ্যে কোনরকম কোন মিশ্রণ ঘটে না এবং একটা বৈশিষ্ট্যের জিন আরেকটার উপর কোনভাবে নির্ভরশীল নয়।
অর্থাৎ, আপানার চোখের রং-এর বৈশিষ্ট্যের সাথে নাকের আকারের বৈশিষ্ট্যের কোন সম্পর্ক নেই, প্রত্যেকটা বৈশিষ্ট্যের জিন আলাদা আলাদাভাবে কাজ করে। উত্তরাধিকার সুত্রে আপনি আপনার বাবা বা মার কাছ থেকে কোন একটা জিন হয় পাবেন না হয় পাবেন না, এর মাঝামাঝি কোন ব্যবস্থা এখানে নেই। একইভাবেই আপনার বাবা মাও তাদের পুর্বপুরুষ থেকে তাদের জিনগুলো পেয়ে এসেছে। এভাবেই, জিনগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রবাহিত হয়ে আসছে বিভিন্ন জীবের মাঝে। ডঃ রিচার্ড ডকিন্স খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এই ব্যাপারটাকে -
এই প্রক্রিয়া প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে নিরন্তরভাবে চলতে থাকবে। একেকটি বিচ্ছিন্ন জিন একে অপরের সাথে 'পুডিং-এর উপাদানগুলোর' মত ভর্তা হয়ে না মিশে বরং তাসের প্যাকেটে রাখা তাসের মত 'সাফল্' করে করে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে।
আর এই আবিষ্কারটির ফলেই বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে এসে প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব সম্পর্কে অন্যতম প্রধান বিরোধটির নিরসন হলো।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায় শিল্প বিপ্লবের আগে এবং পরে পেপার্ড মথের বিবর্তন থেকে। বিজ্ঞানীরা গত ১৪০ বছর ধরে বিভিন্ন পরিবেশের মধ্যে পেপারড মথের এই পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে আসছেন। এই ইংলিশ মথ প্রজাতিটিকে হাল্কা এবং গাঢ় - দুটি রং এই দেখতে পাওয়া যায় এবং যেহেতু তারা একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত, তাদের মথের মধ্যে নিয়মিতভাবে প্রজননও ঘটতে দেখা যায়। শুধুমাত্র এক জোড়া জিন দিয়ে এদের গায়ের রং নির্য়ন্ত্রিত হয়। এদেরকে সাধারণত লাইকেন নামের এক ধরনের পরজীবি ছত্রাক দিয়ে ঢাকা গাছের ডালের উপর দেখা যায়। ১৮৪৮ সালের যাদুঘরের এক সংগ্রহ থেকে পাওয়া পরিসংখ্যাণ থেকে জানা যায় যে, ইংল্যান্ডের ম্যঞ্চেস্টার শহরে সে সময়ে গাঢ় রং-এর মথের সংখ্যা ছিল ১% এরও কম, আর বাকি প্রায় ৯৯% মথই ছিলো হাল্কা রং-এর ৬। এই পোকাগুলো পাখিদের অত্যন্ত প্রিয় খাদ্য। হাল্কা রং-এর লাইকেন দিয়ে ঘেড়া গাছের ডালগুলোতে বসে থাকা গাঢ় রং মথগুলো খুব সহজেই পাখিদের চোখে পড়তো এবং তাদের শিকারে পরিণত হত। অন্যদিকে হাল্কা রং-এর পোকাগুলো গাছের ডালের রং-এর সাথে মিশে থাকায় তাদেরকে পাখিরা সহজে আর দেখতে পেত না, এবং তার ফলে তারা শিকারি পাখিদের হাতে ধরাও পরতো কম। এর ফলশ্রুতিতে দেখা গেল যে, প্রতি প্রজন্মে হাল্কা রং-এর জিন ধারণকারী মথের সংখ্যা সমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডে প্রাকৃতিক পরিবেশের অনেক পরিবর্তন ঘটে, কারখানা থেকে আসা ঝুল, ময়লা দিয়ে বাতাস অনেক বেশী দুষিত হয়ে পরতে থাকে। এই পরিবেশ দূষণের কারণে গাছের ডালের উপরের লাইকেনগুলো হয় মারা যায় অথবা তাদের উপর এক ধরনের গাঢ় রং-এর প্রলেপ পরে যায়। তার ফলে দেখা গেলো যে, এই মথগুলোর চারপাশের পরিবেশই ক্রমশঃ বদলে যাচ্ছে, এখন গাঢ় রং-এর প্রলেপ পরা লাইকেন এর উপর বসে থাকা হাল্কা রং-এর মথগুলো আগের থেকে অনেক বেশী করে পাখিগুলোর চোখে পরছে। আর তার ফলে যা হবার তাই হল – হাল্কা রং-এর মথের সংখ্যা ক্রমশঃ কমে গেলো এবং গাঢ় রং-এর মথের সংখ্যা বেড়ে যেতে শুরু করলো। কিছুদিন পরে আরেক পরিসংখ্যানে দেখা গেলো যে, পেপারড মথের জনসংখ্যার ৯৫%-ই গাঢ় রং-এর মথে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখানেই কিন্তু গল্পের শেষ নয়, এর পরপরই ইংল্যান্ডে বাতাসের দূষণ রোধের জন্য আইন পাশ করা হয় এবং দ্রুত বাতাসের দুষণও কমতে শুরু করে। আর প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে আবারও ঠিকই দেখা গেল যে, হাল্কা রং-এর মথের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। পাখিদের দিয়ে আরোপিত প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে আমরা দেখলাম যে কি করে একটা জিন পুলের মধ্যে জিনের ফ্রিকোয়েন্সি বদলে যেতে পারে, এবং তার ফলে সেই জনপুঞ্জে কি করে বিবর্তন ঘটে।
গত একশ বছরে জেনেটিক্স এবং মাইক্রো-বায়োলজী বা অনু-জীববিদ্যা এগিয়ে গেছে অকল্পনীয় গতিতে, ক্রোমোসোম, ডিএনএ এবং মিউটেশন থেকে শুরু করে মানুষের জিনোমের পর্যন্ত হিসাব বের করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। এখন তো জীববিজ্ঞানীরা রীতিমত দাবী করছেন যে, যদি একটা ফসিলের চিহ্নও পৃথিবীর বুকে কোনদিন না পাওয়া যেতো তাহলেও আজকের জেনেটিক্সের জ্ঞান এবং আমাদের ডিএনএ-এর মধ্যে লেখা পুর্ববর্তী প্রজন্মগুলোর হাজার বছরের ইতিহাস থেকেই বিবর্তনের তত্ত্ব প্রমাণ করে ফেলা যেতো। এখন খুব সংক্ষেপে দেখা যাক, জেনেটিক্স এবং গত দেরশো বছরে বৈজ্ঞানীক আবিষ্কারের আলোকে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বটি কিভাবে পরিবর্ধিত হয়ে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত রূপ ধারণ করলো।
ডারউইনের অবদানের পর থেকে বিজ্ঞানীরা কিন্তু বসে ছিলেন না, তারা বিবর্তন নিয়ে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন এবং বিবর্তনের নানা প্রক্রিয়া এবং ধাপকে সনাক্ত করেছেন। আসলে সত্যি কথা বলতে কি , ডারউইনের তত্ত্বটি এতোই গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক যে বিজ্ঞানীরা বিংশ শতাব্দীর প্রায় মাঝামাঝি পর্যন্ত এ নিয়ে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা নীরিক্ষা এবং বিতর্ক চালিয়ে যান। তবে মেন্ডেলের তত্ত্ব, ডিএনএর আবিষ্কারসহ বংশগতিবদ্যা, জনপুঞ্জ বংশগতবিদ্যা , বা জিনোমিক্সসহ জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যত এগিয়ে গেছে ততই আরও বিস্তারিতভাবে বিবর্তন তত্ত্বের সঠিকতা প্রমাণিত হয়েছে। জনসাধারণের কাছে না হলেও, গত অর্ধ-শতকেরও বেশী সময় ধরে বিজ্ঞানীমহলে বিবর্তনত্ত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কি কি প্রক্রিয়ায় বিবর্তন ঘটে, তা শুধুই কি ধীর গতিতে ঘটে নাকি মাঝে মাঝে উল্লম্ফণও ঘটে, এধরণের বিষয়গুলো নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক হয়ে থাকলেও বিবর্তনবাদের সঠিকতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে আর কোন সন্দেহ নেই।
আগেই দেখেছি, জীবন সংগ্রামে যে সব প্রকারণ জীবকে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকতে বেশী সুবিধা করে দেয় সেই সব জিনের অধিকারী জীবই বড় হওয়া পর্যন্ত টিকে থাকে এবং যারা পরিবেশের সাথে কম খাপ খাওয়াতে পারে তাদের তুলনায় তারা অনেক বেশী সন্তান রেখে যেতে সক্ষম হয়। ডারউইন বিবর্তনকে দেখেছিলেন ব্যক্তিগত প্রাণী বা উদ্ভিদ এবং প্রজাতি লেভেলে, এখন বোঝা যাচ্ছে যে, বিবর্তন ঘটছে জিন, বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য এবং জনপুঞ্জে ৭। একটি প্রজাতির কতগুলো জীব যখন নিজেদের মধ্যে যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে তখন তাদের জনপুঞ্জের সবার জিনের সমষ্টিকে একসঙ্গে বলে জিন সম্ভার। একদিকে যৌন প্রজননের মাধ্যমে ছেলে মেয়ের মধ্যে বাবা মার জিনের যে জেনেটিক রিকম্বিনেশন হয় তার ফলে পরবর্তী প্রজন্মে জিনের অদলবদল ঘটে, আবার অন্য দিকে, জিনের মধ্যে আকস্মিকভাবে পরিবর্তন ঘটার ফলে কখনও কখনও তার ডিএনএর গঠন বা সংখ্যায়ও পরিবর্তন ঘটে, যাকে বলা হয় পরিব্যাক্তি। মিউটেশনের মাধ্যমেই প্রকারণের সৃষ্টি হচ্ছে আর তারপর যৌন প্রজননের মাধ্যমে তা সমগ্র জিন পুলে মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে একটা জনপুঞ্জের মধ্যে শুধুমাত্র একটি বা দুটি জীবের জীনগত পরিবর্তনকেই বিবর্তন বলে ধরে নেওয়া যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না সমগ্র জনপুঞ্জের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ছে এবং তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যাবে না যে বিবর্তন ঘটছে। তার মানে ঘটনাটা দাঁড়াচ্ছে এরকম - বেশী উপযুক্ত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জীব বেশী দিন বেঁচে থাকে এবং বেশী বংশবৃদ্ধি করতে পারে, তার ফলে তাদের জিন অনেক বেশী পরিমানে প্রবাহিত হয় সন্তানদের মধ্যে। এর ফলে সময়ের সাথে সাথে একটি জীবের জনসংখ্যায় জিনের ফ্রিকোয়েন্সি বা মাত্রা বদলাতে থাকে - পরবর্তী প্রজন্মে কিছু জিন বেশী প্রবাহিত হয় আর কিছু জিনের সংখ্যা কমে যেতে থাকে। এইভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জনপুঞ্জে জিনের পরিবর্তন ঘটতে থাকাকেই বিবর্তন বলে। জেনেটিক্সের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বংশগত প্রকারণগুলোর প্রভেদমুলক প্রজননকে বলে প্রাকৃতিক নির্বাচন; আর, প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া মাধ্যমে কোন প্রজাতির জনসংখ্যায় জিন ফ্রিকোয়েন্সির পরিবর্তন বলে বিবর্তন।
প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবের অভিযোজন ক্ষমতা বাড়তে থাকে, আর তারই ফলশ্রুতিতে সে তার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার জন্য আরও যোগ্যতর হয়ে গড়ে ওঠে। তবে এখন আমরা জানি যে, প্রাকৃতিক নির্বাচন ছাড়াও আরও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমেও বিবর্তন ঘটতে পারে। ডারউইন বিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার কথা বলে থাকলেও আজকের দিনের বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা অবশ্য প্রজাতির উৎপত্তির পেছনে প্রাকৃতিক নির্বাচনের পাশাপাশি বিবর্তনের জন্য অন্য বেশ কিছু ফ্যাক্টরকেও গন্য করে থাকেন, ফ্যাক্টরগুলো হল এই হল :
* জিন মিউটেশন
* ক্রোমজম মিউটেশন
* জেনেটিক রিকম্বিনেশন
* জিনের পুনরাগমন বা জিন প্রবাহ
* জেনেটিক ড্রিফট
* এবং অন্তরণ বা Isolation
বিবর্তনের এই আধুনিক সংশ্নেষণী তত্ত্ব (Synthetic theory of Evolution) অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে, জনপুঞ্জে জিনের প্রকারণ রয়েছে এবং এই প্রকারণগুলো তৈরি হচ্ছে আকস্মিক মিউটেশন এবং জেনেটিক রিকম্বিনেশন থেকে, এদের পিছনে কোন নিয়ম, উদ্দেশ্য বা অভিযোজন কাজ করছে না। কোন জনপুঞ্জে এই মিউটেশন এবং জেনেটিক রিকম্বিনেশনের হারের উপর জিনের ফ্রিকোয়েন্সির পরিবর্তন নির্ভর করবে। কোন জনপুঞ্জে যদি মিউটেশনের হার বিরল হয় তবে জিনের ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তনে এর ভুমিকাও হবে অত্যন্ত নগন্য। এখন কোন জনপুঞ্জে এই জিনের ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তনের মাধ্যমে বিবর্তন ঘটার পিছনে প্রধাণ কারণগুলো হচ্ছে: জিন প্রবাহ, জেনেটিক ড্রিফট, অন্তরণ এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন। প্রাকৃতিক নির্বাচন কাকে বলে তা তো আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে দেখেছিই, চলুন তাহলে খুব সংক্ষপে দেখে নেওয়া যাক বিজ্ঞানীরা জিন প্রবাহ, জেনেটিক ড্রিফট বা অন্তরণ বলতে কি বোঝাচ্ছেন। কোন জনপুঞ্জে বাইরে থেকে কেউ এসে বা চলে গিয়ে অর্থাৎ জিনের পুনরাগমনের মাধ্যমে নতুন জিনের প্রবাহ ঘটাতে পারে। জিনের প্রবাহজনিত ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন নির্ভর করবে স্থানীয় বাসিন্দা এবং নতুন অতিথিদের জিনের বিভিন্ন কপি বা আ্যলেল (অলললেসে, অর্থাৎ কোন জিনের বিভিন্ন রূপ, যেমন ধরুন রক্তের টিপের মধ্যে 'এ', 'বি' বা 'ও' টিপগুলোকে একই জিনের বিভিন্ন আ্যলেল বলা হবে ) মধ্যে তারতম্যের হার এবং পুনরাগমনের হারের উপর। আবার ধরুন, অনেক সময় সময়ের সাথে সাথে আকস্মিকভাবে জনপুঞ্জে জিনের ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে, এর পিছনে অভিযোজন বা টিকে থাকার যোগ্যতা বা প্রাকৃতিক নির্বাচন কোন ভুমিকা পালন করে না আর তাকেই বলে জেনেটিক ড্রিফট বা বাংলায় বললে বলতে হয় বংশানুসৃত সম্প্রবাহ। একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক ব্যাপারটা। ধরুন, কোন এক হলুদ ব্যাঙের জনপুঞ্জ রয়েছে, সেখানে মাত্র দুইটি ব্যাঙের মধ্যে সবুজ গায়ের রং এর বিরল জিনের আ্যলেল বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু প্রজননের আগেই তারা দুজনেই গাড়ি চাপা পরে মরে গেলো। তখন সেই জনপুঞ্জ থেকে এই সবুজ রং এর আ্যলেলটি কিন্তু চিরতরে হারিয়ে গেলো, এই জনপুঞ্জে এই বৈশিষ্ট্যটি আর দেখা যাবে না, - এর পিছনে কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচনের কোন ভুমিকাই ছিলো না। বিবর্তনের মাধ্যমে প্রজাতির তৈরির ক্ষেত্রে আবার অন্তরণও খুব গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে। আরেকটি মজার উদাহরণ দেওয়া যাক এ প্রসঙ্গেঃ ধরুন, একটি শামুকের জনপুঞ্জে হাল্কা , ড়গাঢ় সব রং-এর শামুক আছে। একবার এক ঘূর্নিঝড়ে দুই একটি গাঢ় রং-এর শামুক উড়ে গিয়ে পড়লো আরেক দ্বীপে। এখন এখান থেকে নতুন এক প্রজন্মের শামুকের উৎপত্তি ঘটলো যাদের মধ্যে শুধুই গাঢ় রং-এর জিন বিদ্যমান। এছাড়াও এই নতুন জনপুঞ্জে শুধুমাত্র সেইসব জিনই উপস্থিত থাকবে যা তাদের ওই দুই একজন পূর্বপুরুষের মধ্যে বিদ্যমান ছিলো, পুরনো সেই আসল জনপুঞ্জের জিন পুলে বহু কালের বিবর্তনের ফলশ্রুতিতে যে বহু রকমের জিনের উদ্ভব ঘটেছিলো তা কিন্তু এই জনপুঞ্জে আর থাকবে না, তার ফলে তাদের বিবর্তন ঘটতে শুরু করবে এক নতুন নিয়মে এবং গতিতে। আসলে জনপুঞ্জের মধ্যে ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা ঘটলে নতুন প্রজাতি তৈরির পথ সুগম হয়ে ওঠে। কারণ এর ফলে দু’টি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া জনপুঞ্জের মধ্যে জিনের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং নতুন এই জনপুঞ্জের জিনপুলে নতুন ধরণের মিউটেশন, জিন প্রবাহ বা জেনেটিক রিকম্বিনেশনের মাধ্যমে নতুন নতুন পরিবর্তন ঘটতে থাকে। প্রকার্তিক নির্বাচন বা জেনেটিক ড্রিফটের ফলে ধীরে ধীরে এতই পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে যে, তাদের পক্ষে আর পুরনো সেই জনপুঞ্জের সাথে প্রজনন সক্ষম হবে না। আর তখনই উৎপত্তি ঘটে নতুন প্রজাতির।
অনেকেই অনেক রকমের সংগা দিয়েছেন প্রজাতির, কিন্তু ১৯৬৩ সালে বিজ্ঞানী আর্নেষ্ট মায়ার যে সংগাটি দেন তাকেই জীবিবিদ্যায় এখন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংগা বলে ধরে নেওয়া হয়। তার সংগা মতে,
প্রজাতি হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক জনপুঞ্জ যার সদস্যরা নিজেদের মধ্যে অবাধভাবে জননরত অথবা জনন করার ক্ষমতা রাখে, তাদের একটি সাধারণ জিন পুল আছে তবে তারা এ ধরণের অন্যান্য দল সাথে যৌনজননের দিক থেকে বিচ্ছিন্ন।
অর্থাৎ, এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতি উৎপত্তির পিছনে মুল বিষয়টি হল এক জনপুঞ্জ ভেঙ্গে আরেক জনপুঞ্জের উদ্ভব অথবা এক জিন পুল ভেঙ্গে একাধিক জিন পুলের উৎপত্তি। ডারউইন তার সময় উপরে বর্ণিত সবগুলো প্রক্রিয়ার কথা না জানলেও বিবর্তনবাদের মুল বিষয়টিকে সঠিকভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন: প্রথমতঃ প্রজাতির উদ্ভবের কারণ বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে সংগ্রাম নয় বরং একই প্রজাতির ভিতরে আন্ত-প্রজাতি সংগ্রাম, দ্বিতীয়তঃ নতুন নতুন প্রজাতির যেমন উৎপত্তি ঘটছে তেমনি অগুন্তি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে এবং তৃতীয়তঃ বিবর্তন ল্যমার্কীয় ধারায় সরলরেখায় ঘটেনা বরং তা ঘটে গাছের শাখা প্রশাখার মত বিস্তৃত হয়ে ২। প্রাকৃতিকভাবে, প্রাণের উৎপত্তির সেই আদি থেকেই জীবের বিবর্তন ঘটে চলেছে বলেই আমাদের চারপাশে প্রাণের এত বৈচিত্র। পরিবেশ এখানে নির্বাচনী শক্তি হিসেবে কাজ করে, এবং যেহেতু সময় এবং অঞ্চল বিশেষে পরিবেশ বদলে যায় তাই বিভিন্ন পরিবেশে জীবের বিভিন্ন প্রকারণ নির্বাচিত হয়। আর তাই, কোন জায়গার জীবকে, সেখানকার সব প্রজাতিকে বিচার করতে হবে তার চারপাশের পরিবেশের আপেক্ষিকতায়।
আজকে প্রাণীবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে শুরু করে জেনেটিক্স, জিনোমিক্স, অনু-জীববিজ্ঞান কিংবা ওষুধ বা কিটনাশক তৈরি, এমনকি চিকিৎসাবিজ্ঞানের সমস্ত শাখা অচল হয়ে পড়বে বিবর্তনবাদকে অস্বীকার করলে। ডারউইন প্রায় দেড়শো বছর আগে যা বলে গেলেন তার সারকথা প্রমাণ করতে আমাদের এতদিন লেগে গেলো। আর জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যতই চাঞ্চল্যকর এবং আধুনিক আবিষ্কার দিয়ে ভরে উঠতে থাকলো ততই নতুন করে প্রমাণ হতে থাকলো বিবর্তনের যথার্থতা। এই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রজাতির জীবসহ দ্বিপদী এই মানব প্রজাতিরও সেই আদি এক কোষী প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে এখানে এসে পৌছানোর জন্য কোন পরিকল্পনা বা ডিজাইন বা অতিপ্রাকৃত স্রষ্টার প্রয়োজন হয়নি, কোটি কোটি বছরের বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় উদ্ভব ঘটেছে তাদের। মানুষ যতই সে নিজেকে ঘিরে শ্রেষ্ঠত্বের মায়াজাল তৈরি করুক না কেনো, সে আর সব প্রাণীর মত এই প্রকৃতিরই একটি অংশমাত্র।
মন্তব্য
লেখাটা লম্বা হয়ে গেল। কিন্তু শেষ অংশটুকুকে আর ভাঙ্গতে ইচ্ছে করল না। একসাথেই দিয়ে দিলাম। কারও ধৈর্যচ্যুতি ঘটে থাকলে খুবই দুঃখিত......
বন্যা আপা,থুক্কু, ভাবী :
লম্বা আর কই হল। আমার মত মুর্খ পাঠকের জন্য আরেকটু লম্বা হলে বুঝতে সুবিধে হত বৈকি ।
বিনীত
নুরুজ্জামান মানিক
মানিক, 'আপা'তেই থাক না, ভাবী টাবীর দরকার কি..। আরও বড় লেখা পড়ে নিজেকে বোরড করতে চাইলে আগের অধ্যায়গুলো পড়তে পারেন ঃ)।
বন্যা,
বিজ্ঞান-দর্শন বিষয়ক লেখা পাঠ করতে হলে বোরড হবার রিস্ক তো একটু নিতেই হয় । আর বোরড হ্রাসের জন্য তো হাতের কাছে হিমু আর সংসারে এক সন্যাসী আছেই । সে সাথে বোনাস হিসেবে আছে মুজিব আর ফকির ইলিয়াসের কাব্য ও কাব্য আলোচনা।
বিনয়ের সাথে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গঃ
আমার একটা দোষ হল, যে কোন লেখা /গ্রন্থ এর প্রথম পর্ব /খন্ড না পড়ে পরের পর্ব না পড়া , যথাসম্ভব । আরেকটা দোষ হল , প্রকাশনার প্রথম সংস্করন খুজে বেড়ানো কারণ প্রথম সংস্করনের অনেকাংশ পড়ে নানা কারণে বাদ/এডিট করা হয়। সুতরাং , বুঝতেই পারছেন আপনার লেখার আগের পর্ব পড়েই শেষ পর্বে এসেছি ।
বিজ্ঞান এ আমার জ্ঞান শূন্যের কোঠায় হলেও , একসময় আমি (অন্ধের হস্তি দর্শন এর মত )এদেশের প্রিন্ট মিডিয়া(বিশেষত ইত্তেফাক , জনকণ্ঠ )বিজ্ঞান বিষয়ক নানা লেখা লিখেছিলাম । ৭/৮ বছর আগে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু এদেশের অনেক বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যগাজিন (যেমন ড.ইব্রাহিম সম্পাদিত ‘বিজ্ঞান সাময়িকী’ ) এখনও আমাকে ‘বিজ্ঞান লেখক’ কোটাবন্দি করে বিনামুল্যে তাদের গ্রাহক করে আমার পাঠ সহায়কের ভুমিকা পালন করছে ।
ভালো থাকুন ।
নুরুজ্জামান মানিক
অসাধারণ!
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
জ্বি পড়ে ফেললাম
দুর্দান্ত
আচ্ছা এই বিষয়টাকে কোনোভাবে সহজ করে ছোটদের জন্য কোনো ভার্সন কি তৈরি করা যায়?
টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে বেশি না গিয়ে। গল্পের মতো করে বেসিক জিনিসগুলোকে নিয়ে আসলে মনে হয় একটা কাজের কাজ হবে
ধন্যবাদ। আমার এই বইটার প্রকাশক(অবসর প্রকাশনা) বহুদিন ধরেই বাচ্চাদের জন্য কিছু ভালো বই লেখার জন্য অনুরোধ করছেন। লিখবেন নাকি? আমারও ইচ্ছা ছিল বাচ্চাদের জন্য, সোজা করে, অনেক ছবি দিয়ে, বিভিন্ন টপিকের ওপর সিরিজ লেখার। সময়ের অভাবে কিছুই করতে পারছি না, আপনি কিংবা অন্য কেউ লিখলে সাহায্য করতে পারি।
আমার মনে হচ্ছে আমি একপায়ে খাড়া
কিন্তু এখন আমার যা অবস্থা মরার জন্যও একটু খাড়া হবার সুযোগ নেই
ফেব্রুয়রি চলে এলো কিন্তু আমার বইয়ের কাজ এখনও ২০% পার হয়নি
মনে হয় কয়েকজনে মিলে চেষ্টা করলে একটা ভালো জিনিস দাঁড়িয়ে যাবে
তবে বিষয় বিশেষজ্ঞের (সাবজেক্ট ম্যাটার স্পেশালিস্ট) দায়িত্বটা আপনাকেই নিতে হবে
দাঁড়ান। আমি আরো কয়েকজনের সাথে একটু আলাপ করি
কারণ এই বিষয়টা আমি একা সামলাতে পারবো না
বরাবরের মতোই মুগ্ধ
আমি সচরাচর সিরিয়াস লেখা পড়ি না। হালকা চরিত্রের অগভীর চিন্তার মানুষ কিনা! কিন্তু কঠিন-কঠিন ব্যাপারগুলো নিয়ে আপনার আর অভিজিতদা'র লেখাগুলোর জন্যে আমি সত্যিই অপেক্ষায় থাকি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
নতুন মন্তব্য করুন