দেখছেন নাকি কেউ বিল মারের নয়া মুভি - 'রিলিজুলাস'?

বন্যা এর ছবি
লিখেছেন বন্যা (তারিখ: সোম, ০৬/১০/২০০৮ - ৬:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

দেখছেন নাকি কেউ বিল মারের নয়া মুভি - 'রিলিজুলাস'?
অভিজিৎ রায় এবং বন্যা আহমেদ

না দেখলে সময় কইরা দেইখা ফালান। আমেরিকার মুভি থিয়েটারে হপায় আইছে। নিশ্চয়ই অন্যান্য দেশেও যাইবো গিয়া কিছুদিনের মধ্যেই। যারা ধর্মের বিভিন্ন মিথ আর বেবাক কিসিমের মামদোবাজি আর ধান্দাবাজি কম সময়ে জনাতে ইচ্ছুক, কিন্তু তিন মন ওজনের পাহাড় সাইজের সব কিতাবগুলান পইড়া উঠনের সময় কইরা উঠতে পারতাছেন না, তাগো লাইগ্যা এই মুভিটা 'মাস্ট সি' টাইপের। বিভিন্ন ঠাট্টা মশকরার মাধ্যমে বেশ কিছু কঠিন বিষয়রে সহজভাবে তুইলা ধরা হইছে। যদিও বিল মার নিজে কইছে, এই মুভিটায় কারো প্রতি কোন অঙ্গুলি-নির্দেশ করেন নাই, তিনি নিজে কারো প্রতি 'জাজমেন্টাল' হন নাই, কিন্তু আমাগো মনে হইছে যাগো 'ধর্মানুভুতি'র কাঠি খুব তীক্ষ্ম, শিবঠাকুরের ত্রিশূলের আগার মত উচায় থাকে হগগল সময় - তাগো এই মুভির আশ পাশ দিইয়া না যাওনই ভালা হইব।

গত উইকএন্ডে ঘরে তেমন কাম-কাইজ না থাকনে, আমরা হানা দিলাম আমগো বাসার কাছাকাছি মুভি থিয়েটারে। কয়েকদিন ধইরাই সি.নএন.এন আর এম.এস.এন.বি.সি তে এই মুভিটার এড দেখতাছিলাম। তয় মুভিটা কেমন হইব এইটা লইয়া একটা খচখচানি আছিলো। বিল মাররে আমরা চিনি কমেডিয়ান হিসেবে। কমেডি সেন্ট্রাল আর এবিসি চ্যানেলে একসময় 'পলিটিকালি ইনকারেক্ট' নামে 'লেট-নাইট টক শো' করতেন, এখন এইচবিওতে 'রিয়েল টাইম উইথ বিল মার' নামে আরেকখান টক শো শুরু করছেন। ইদানীং বাসায় এইচবিওর চ্যানেল না থাকনে অনেকদিন ধইরা ব্যাটার খোমা দেখতাছিলাম না। 'রিলিজুলাস' আবার আমগো মাথায় 'চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের' ইমারত বানায় দিছে এক্কেরে। আলোচনার ভিত্রে যাওনের আগে মুভিটার ট্রেইলার একটু দেইখা লওন যাইতে পারে -

বিল মারের মত কমেডিয়ান ধর্মের ডকুমেন্ট্রি বানাইছে ল্যারি চার্লসের নির্দেশনায় - কিরম হইব কে জানে - এইরম একখান ধারণা লইয়া আমরা দুইজন মুভি হলে হান্দাইলাম। কিন্তু মুভিটা শুরু হওনের মিনিটখানেকের মইদ্ধেই সমস্ত সন্দেহ, খচখচানি কর্পুরের লাহান উইবা গেল। একে তো বিলের প্রত্যেকটা কথার পেছনেই এক ধরনের বাঁকা অর্থ থাকে, তার উপর এমনভাবে মুভিটা বানাইছে যে আপনে যে কিসিমের 'রামগরুরের ছানা'ই হন না কেন আপনে না হাইসা পারবেন না। যেমন, মুভিটার এক জায়গায় বিল নিজের ছোটবেলার কথা কইবার লাগছিলো এইভাবে -

আমার মা অরিজিনালি আছিলো ইহুদী, আর আমার বাপ আছিলো ক্যাথলিক। কাজেই আমরা ক্যাথলিক পরিবেশে বড় হইছি- যদিও মাঝে সাঝেই আমার মার ইহুদী মানসিকতা আমার মধ্য দিয়া ফাল পাইড়া বাইর হইয়া আইতো। যেমন, আমরা যখন সবাই মিল্লা রবিবারে চার্চের ফাদারের কাছে 'কনফেশন'-এ যাইতাম, আমি লগে একজন আইনজীবী বগলদাবা কইরা লইয়া যাইতাম। ফাদারের সামনে দাঁড়াইয়া কইতাম -'ব্লেস মি ফাদার, আই হ্যাভ কমিটেড এ সিন। নাউ প্লিজ মীট মাই ল-ইয়ার মিস্টার কোহেন'!

বিল তার ইহুদী মারে জিগায়, তুমি তো ইহুদি, আর বাপ আছিলো খ্রিষ্টান, প্রতি রোববার কানে ধইরা চার্চে লইয়া যাইতো, হঠাৎ কইরা বাবা চার্চে যাওন বন্ধ কইরা দিল ক্যান? মা কয়,আমরা তো বার্থ কন্ট্রোল করতাম, যেদিন থেইক্যা অই ব্যাটা পাদ্রী জন্মনিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিছে সেইদিন থেইক্যা মনে হয় তোর বাপ আর চার্চের মুখ দেখে নাই; আমারে কোনদিন সত্যি কইরা কয় নাই, তয় আমার ধারণা -এইডাই মনে হয় আসল কারণ।

এইরম ঠাট্টা মশকরা আছে সারা মুভিটা জুইরাই। আরেকবার এক বিশ্বাসী পাদ্রী ভাবালু হইয়া বিল মাররে কইতাছিলো -'বিল শোন, একবার এক প্রেমে দিওয়ানা এক লোকরে আমি কইলাম - তোমার যে প্যাশন জাগতিক প্রেমের প্রতি - সেইটারে যদি ধর্মের প্রতি, ঈশ্বরের প্রতি প্যাশনে ট্রান্সফার করবার পারো, চিন্তা করবার পারো, কি হইবো ? '

বিল মার মনে মনে কইলো - 'হ, তা পারি বটে'! আর তখনই পেছনের স্ত্রিনে ভাইসা উঠলো হরাম কইরা বোমার বিস্ফোরণ আর টাওয়ার ধইস্যা পড়ন। হ প্যাশনই বটে!

আমেরিকার এক সিনেটর মার্ক প্রায়োর - স্বঘোষিত ইভাঞ্জেলিকাল খ্রিস্টান। ব্যাটা বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করে না। কেন করে না তা বুঝানোর লাইগ্যা নানা তালের গপ্প শুরু করবার লাগছিলো, বিল মার চিপা দিয়া কইলো- "It worries me that people who are running my country . . . believe in talking snakes, not evolution"

মাছের পেটের মইধ্যে হান্দায়া থাইকা যে কোন নবী তিনদিন বাইঁচা থাকবার পারে, আর মানুষজন যে সেইগুলা আবার কেমন খায়, তা এই মুভিটা না দেখলে বুঝন যাইবো না।

আরেক জায়গায় দেখাইলো এক মোল্লার (কোন মসজিদের ইমাম হইবো) সাক্ষাৎকার লইতাছে বিল। মোল্লায় তো ফ্যানায় ফ্যানায় কইতাছে যে ইসলাম কত শান্তির ধর্ম, ধর্মগ্রন্থের মইধ্যে ভায়োলেন্সের টিকিটাও নাই...এর মইধ্যে মোল্লার সেলফোনে ক্যাডা জানি কল করছে। মোল্লায় পাঞ্জাবী থেইক্যা ফোন বাইর কইরা টেক্সট ম্যাসেজে উত্তর দেওন শুরু করছে। আর ওইদিকে স্ক্রিনে ভাইসা উঠছে টেক্সট ম্যাসেজের কমেডি ভার্শন -

- বস, আপনের অর্ডার কি?
- বিল মাররে খুন কইরা ফালাইয়া দে!

auto
কি না দেখাইলো মুভিতে? ভ্যাটিকান সিটি, মরমন চার্চ থেইকা শুরু কইরা গে-মুসলিম কমিউনিটি, শয়তানের অনুসারী, হেইড পার্ক, সায়ন্টোলজি, পাহাড়ে গায়ে ঘাসের মইধ্যে ল্যাংটা দানব আঁকা পুজারীর দল - কোন কিছুই বাদ পড়ে নাই। পাস্কালের ওয়েজার-এর মত দার্শনিক ভিত্তি থেইক্যা শুরু কইরা, ধর্মের অলৌকিকতা, ধর্ম আর নৈতিকতার মধ্যে সম্পর্ক, বাইবেলের নানা কিসিমের ভুলভাল, ক্রিয়েশন মিউজিউয়াম, ডাঈনোসর আর মানুষের একসাথে বসবাস, ফ্লোরিডায় হোলি ল্যান্ডের অভিজ্ঞতা, নানা পদের প্রফেসি-ফ্যান্টাসি সব কিছুই আছে। যাগো সাক্ষাৎকার লওন হইছে তাগো মইধ্যে ভ্যাটিকান মানমন্দিরের জর্জ কোয়েন, ক্যাথলিক পাদ্রী ফাদার রেজিলান্ড ফস্টার, প্যাস্টর জেরিমিয়াহ কামিং, ক্রিয়েশনিস্ট মিউজিয়ামের কেন হ্যাম, আধুনিক যীশুর দাবীদার মায়ামির হোসে লুইস জেসুস মিরান্ডা, প্রোপা-গান্ধি আকি নেওয়াজ, 'এন্টি জিওনিস্ট ইহুদী' র‌্যাবাই ইজোরেল দাভিদ ওয়েইস, ধর্মান্ধ সেনেটর মার্ক প্রায়র, ধর্মে বিশ্বাসী বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস কলিন্স, পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ড্রু নিউবার্গ সহ অনেকেই আছে। পৃথিবীর তাবত জায়গা চইষা ফালাইয়া আব্রাহামিক ধর্মগুলার লিডারগো আর তাগো অনুসারীগো বিভিন্ন কথাবার্তা জিগাইয়া হেগো যুক্তিগুলান লাইড়া লুইড়া দেখছেন, আর এই থেইকাই একটা উপসংহার টানোনের চেষ্টা করেছেন।

বিল মারের মুভিটায় ধার্মিকগো লইয়া খালি বেহুদা তামসা আছে ভাবলে ভুল হইবো। অনেক সিরিয়াস সিরিয়াস বিষয় আশয় আসলে এর মইধ্যে লুকায়া আছে। জেরুজালেমরে মুসলিম, খ্রীস্টান, ইহুদী– হগগলতেই ক্যানো 'পবিত্র' ভুমি বইলা মনে করে, ক্যানো সবাই ওই জায়গাটার দখল চায়। হেইটা ইতিহাস থেইক্যা তুইলা ধরছেন মার। আবার, ইহুদী, খ্রীস্টানদের অনেক কিছু থেইক্যা ইসলাম ধার করছে আমরা হেইটা অনেকেই জানি। আদম হাওয়ার গল্প সেইরকম একটা পৌরাণিক কাহিনী। অনেকেই ভাবে গল্পটা খ্রীস্টানদের থিকা মাইরা দিছে মুহম্মদ, হের লাইগ্যাই কোরাণে আদমের কথা আছে। হইবার পারে, কিন্তু খ্রিস্টানদের এই গল্পটাই বা কতটুকু মৌলিক - এই প্রশ্ন কয়জন করে? বিল মার দেখাইছেন যে, বাইবেলের গল্পগুলানো মৌলিক কিছু না; যীশুর ভার্জিন বার্থ, ঈশ্বরের পুত্রের ধারণা, ব্যাপ্টিজম, বারোজন ডিসাইপল সহ গাদাখানেক জিনিসপত্তর প্রাচীন মিশরীয় 'হোরাস'এর কাহিনীর সাথে মিল্ল্যা যায়। হোরাস আর যীশু কাহিনীর মধ্যকার মিল দেখাইয়া ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটেও আছে। গুগল সার্চ দিলেই সেইগুলান বাইর হইয়া আইবো। কিন্তু এর থেইকা কি বুঝন যায়?
auto
বুঝন যায়, এই ধরনের উপাখ্যান বহু আগে থেইকাই মানুষের মইধ্যে আসলে ছড়ায় ছিটায় আছিলো। হের লাইগ্যা শুধু হরাস না, ওসিরিস-ডাইয়োনেসুস, তাম্মুজ, মিথ্রাস সহ অনেক পৌরাণিক উপকথার সাথেই যীশুর উপাখ্যানের মিল পাওন যায় আইজ। এই ব্যাপার স্যাপার গুলান জানন যায় মুভিটা দেখলে।

মুভিটার রিভিউ যখন করতাছি, কিছু তত্ত্ব কথা কওনের লোভ সামলাইতে পারতাছি না। একে তো আমেরিকা এই মুহূর্তে হইতাছে গিয়া উন্নত বিশ্বের দেশগুলার মধ্যে সবচাইতে ধার্মিক এবং রক্ষণশীল দেশ, তয় আবার আমরা থাকি সেই দেশের মধ্যেও অন্যতম বড় খ্রিষ্টান কাঠমোল্লাদের জায়গা জর্জিয়ায়। আমেরিকার দক্ষিণের এই জায়গাটারে কয় বাইবেল বেল্ট। সেইখানের একটা মুভি হলে এইরম একটা মুভি দেখতে গিয়া হাউজফুল দর্শক পাওন, আর পদে পদে তাগো তালি আর 'হাঃ হাঃ হিঃ হিঃ' কইরা অট্টহাসি শুইনা বোঝা যায় মারের প্রচেষ্টা জলে যায় নাই এক্কেরে। তয় আমরা অবাক না হইয়া পারি নাই - গত কয়েক দশক ধইরা সারা বিশ্ব জুইড়া আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদের মারমার কাটকাট ভুমিকা আর তার সাথে রাষ্ট্রের সালামীপুষ্ট রক্ষণশীল খ্রিষ্টানদের লাফালাফির গতি কি তাইলে আপাতত নীচের দিকে? সারা আমেরিকা জুইড়া অর্থনৈতিক অবস্থার যে দুর্গতি দেখা যাইতাছে, মনে তো হয় ঢল নামতে আর বেশী দেরি নাই। আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী ভুমিকা যত কমতে থাকবো সেই সাথে পাল্লা দিয়া কি এই দেশটায় ধর্মের উন্মাদনাও পাল্লা দিয়া কমতে শুরু করবো? গত একশো বছরে ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী ভুমিকা যত কমসে ততই কিন্তু মহাদেশ জুইড়া ধর্মের প্রভাব কমতে শুরু করসে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখন অর্ধেকেরও বেশী মানুষ কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না। সুইডেনে ৮৪%, ফ্রান্সে ৫৪%, ইংল্যন্ডে ৪৪%, আর ওদিকে জাপানে নাকি ৬৫% মানুষই নাকি আর ধম্মকর্মে বিশ্বাস করে না। সেইখানে আমেরিকায় এই অবিশ্বাসীগো সংখ্যাটা মাত্র ১৬%।

আসলেই পুজিবাদী রাষ্ট্র যে কেম্নে ধর্মরে টিকায় রাখে সেইডা আমেরিকায় বইসা না দেখলে এত ভালো কইরা বুঝতাম না। আগে দেশে থাকতে মনে হইতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এইডা বেশী দেখা যায়, সৌদী পয়সায় উঠবোস সরকার আর করবোই বা কি। ব্যাপারটা কিন্তু লক্ষ্য করার মত, কোন দেশ বা জাতি যখন তার অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করে বা কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তখন কিন্তু তারা অনেক বেশী সেকুলার হইয়া যায়, আমরা বাংলাদেশে একাত্তুরে তাই দেখছি, ষাটের দশকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী আফ্রিকান আমেরিকানদের দেখছি, ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদ করা তথাকথিত হিপ্পিদের দেখছি। সারা পৃথিবীতেই এই নিদর্শনের অভাব নাই। তারপর আবার যখন সবকিছু একটু ঠিকঠাক হইয়া আসতে শুরু করে তখন রাষ্ট্র ক্রমাগত ভাবে আবার ধর্মের ইঞ্জেকশানের স্লো ডোজ নিয়া হাজির হয়। বিন লাদেন তৈরি হয় রাশিয়া-আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী কামড়াকামড়ির ফসল হিসাবে, তালেবানরা তৈরী হয় সরাসরি আমেরিকার পয়সায়, সৌদী বাদশাগিরী টিইক্য থাকে আমারিকার সৈন্যদের পেশী শক্তি দিয়া, আমাদের মত দেশগুলাতে মাদ্রাসার পাহাড় গইড়া ওঠে আবার সৌদি পেট্রো-ডলারে।

সাম্রাজ্যবাদী মহাশক্তিগুলার জনগনের বিশাল অংশও যে ডাকাতির পয়সা ভোগ করতে করতে দিন দিন পচনের দিকে গায় তাও এখানে থাইকাই বুঝতে পারলাম। আমেরিকা যেদিন ইরাক আক্রমণ করলো তার পরের দিন অফিসে গিয়া শুনি বেশীরভাগ লোকই এই যুদ্ধের পক্ষে, একজন তো বইলাই বসলো যে বোমা ফালায় শেষ কইরা দিকনা, তাতে আমার কি, বুশ যদি গ্যারান্টি দিতে পারে যে বিনা পয়সায় ইরাক থ্যাইক্কা গ্যাস আইনা দিতে পারবো তাইলেই আমি খুশী। আমারিকান সৈন্য না মরা পর্যন্ত ওদের কিন্তু গায়েও লাগে না, যুদ্ধের সমস্ত ইন্টেলিজেন্স মিথ্যা ছিল জাইনাও ওরা আবার বুশরেই ভোট দিয়া দ্বিতীয়বারের মত প্রেসিডেণ্ট বানায় .....যাউগ গা, বেশী রাজনীতি আর অর্থনীতির কচকচানীতে না ঢুইকা আবার চলেন রিলিজুলাস এ ফিরা যাই।

রেলিজুলাস এ আরেকটা মজার জিনিস দেখাইসে। গত এক দশকে আমেরিকায় নাস্তিকের সংখ্যা ৮% থেইক্কা বাইড়া প্রায় ১৬% হইছে। ১৬ সংখ্যাটা এমনিতে কম মনে হইলেও, তুলনামূলক বিচারে এই অবিশ্বাসীদের সংখ্যাটা একেবারেই ফালাইয়া দেওনের মত না। তাদের সংখ্যা আফ্রিকান আমেরিকান, ইহুদী, হিস্পানিক, টিচার কমিউনিটি, এমনকি গে-লেজবিয়ানদের চাইতেও বেশী, অর্থাৎ তারা এখানকার একটা বড়সড় মাইনরিটি, কিন্তু তাদের কোন 'ঐক্যবদ্ধ প্রকাশ' বা ইউনিফায়েড ভয়েস নাই কোন কিছুতে। বিল মারের মুভিটা সেই দিক দিয়া ব্যতিক্রম। আমেরিকায় গত কয়েক দশকে তথাকথিত লিবারেল মিডিয়ারে সামাল দেওয়ার নাম কইরা এক বিশাল রক্ষণশীল মিডিয়া বিজনেস গইড়া উঠসে। এ দেশে না আসলে বুঝতে পারতাম না যে 'লিবারেল' হওয়াটা একটা লজ্জাকর বিষয়, লিবারেল দৃষ্টিভঙ্গীতে বিশ্বাস করা মানেই হইতেসে আপনি আসলে তথাকথিত বেজন্মা সোশালিষ্ট অথবা আ্যনারকিষ্ট। বারাক ওবামার মত মাঝামাঝি অবস্থানের একজন রাজনীতিবীদএর নামে সবচেয়ে বড় অভিযোগ যে সে নাকি অন্যতম লিবারেল রাজনীতিবিদ, তারে ভোট দিলে তো দেশটাই উচ্ছন্নে যাইবো, দেশ নাকি সমাজতন্ত্রে চইলা যাইবো!

মুভিটার আরো কিছু বিশেষত্ব ভালা লাগছে । মুভিটা দেইখা যে কেউ 'এন্টি রিলিজিয়াস' হিসাবে আখ্যায়িত করতে পারেন, মাগার ঠিকমত দেখলে আর চিন্তা করলে বুঝবেন মুভিটার কোথাও 'নাস্তিক' শব্দটা উচ্চারণ করা হয় নাই। এই মুভিটার কোনখানে রিচার্ড ডকিন্স, ক্রিস্টোফার হিচেন্স, স্যাম হারিস কিংবা তেমন কোন কট্টর নাস্তিকের কোন সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় নাই। মুভিটার লাইগ্যা হেই ধরনের 'সাপোর্ট' দরকারই পড়ে নাই আসলে। বিল মার বিভিন্ন ঠাট্টা মশকরার মাধ্যমে যেইটা উপস্থাপন করছেন, সেইটা সাধাসিধা বাংলায় ' সংশয়'। তার নিজের কথাতেই - 'ডাউট ইজ হাম্বল'। আসলে এইটাই পুরা মুভিটার উপসংহার।

রেলিজুলাস নামকরণ কেন করছে - মুভিটা দেখতে বইসা বুঝি নাই। বুঝলাম এখন মুভিটার রিভিউ লিখতে বইস্যা। আমার মনে হইছে রিলিজুলাস তৈরি করা হইছে দুখান শব্দের কম্বিনেশনে। 'রিলিজিয়ন + রিডিকুলাস = রিলিজুলাস '! অনুমানটা ঠিক হইলে নামকরণের সার্থকতা লইয়া মেট্রিকের সিলেবাসে রচনা লিখবার দিলে দশে দশ পামু - এইডা কইবার পারি।

বিল মায়ারের উপরে আরো কিছু ভিডিও

ল্যারি কিং এ বিল মার -

(১)

(২)

ক্যানাডিয়ান সিবিএস এ-

বন্যা এবং অভিজিৎ
অক্টোবর ৫, ২০০৮


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

খুবই কাকতালীয় ব্যাপার! আমি ইনফ্যাক্ট একটা পোস্ট খসড়া করে রেখেছিলাম মার এর ওপর হাসি

তবে "মাহের" বানানটা সমর্থন করতে পারছি না। "মার"-ই দেখছি আর শুনছি সব জায়গায়।

আর মার নিজেও কিন্তু এথিইজমের সমালোচনা করেন। আমি কয়েকবার তার এই কথাটা শুনেছি, "নাস্তিকতা ধর্মের নিশ্চিত ভাবটিরই আয়না মাত্র।" মার এর বক্তব্য হচ্ছে, "আমি জানি না, জানতে আগ্রহী, তবে ধর্মের ব্যাখ্যাগুলি সবই বাকোয়াজ।"


হাঁটুপানির জলদস্যু

বন্যা এর ছবি

আরে কোন ব্যাপার না , দিয়া দেন আপ্নেরটাও।
আমি খুবই আগ্রহী আপ্নের মতামত জানার জন্য।

হিমু এর ছবি

আমি রেলিজিউলাস দেখিনি, শিগগীরই দেখার যে খুব আগ্রহ আছে, এমনটাও নয়। আমার কাছে এটা প্রিচিং টু আ কনভার্টের মতোই, কাজেই আবেদন কম। আমি মার এর "নিউ রুলস"গুলির ভক্ত।


হাঁটুপানির জলদস্যু

বন্যা এর ছবি

'মার' করে দিলাম। হ্যা,বিলের এথিইজম নিয়ে এই কথাটা আমিও শুনেছি আগে, তবে এই ডকুমেন্টারিটা দেখে কিন্তু মনে হয় নাই যে তিনি আ্যগ্নষ্টিক আর এথিইষ্টের বা নাস্তিকের মধ্যে পার্থক্য করছেন। তার এই ১৬% - অবিশ্বাসী দলের মধ্যে কিন্তু এরা সবাই আছে। আর এখানে ধর্ম মানাকে 'মেণ্টাল ডিসঅর্ডার' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটাও মনে রাখা দরকার।

তর্ক করা যেতে পারে বিলের অনেক দৃষ্টীভঙ্গী নিয়েই, কিন্তু আমাদের মত বহু যুগের ভেটেরান নাস্তিকরাও মুভিটা দেখে বেশ মজা পাইলাম। সারা মুভি জুড়ে দর্শকদের তালির বহর দেখে বোঝা যাচ্ছিল মুভিটা কতখানি মজার।

হিমু এর ছবি

ছবিটা বোধহয় রিজন প্রজেক্টের আওতায় করা, নিশ্চিত নই।

তবে ধর্মের অসারতা প্রচারের জন্যে প্রচারকদের আরো সহিষ্ণু হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তাঁদের অনেকেই যেটা করেন, তাঁদের প্রচারণার পাত্রের কথা না ভেবে হুড়হুড় করে অনেককিছু ঢেলে দেন। ধর্মবিশ্বাস অনেকটা বর্ণশিক্ষার মতো। আজকে যদি হুট করে আপনাকে সিরিলিক হরফে পড়তে বলা হয়, আপনি মুশকিলে পড়বেন। ট্র্যানজিশনের জন্যে সময় লাগে, পরিবেশ লাগে। এগুলি অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে নাহক ধর্মপ্রচারণার মতো নাস্তিক্যপ্রচারণা বরং মাঝে মাঝে মানুষকে আরো উগ্র ধর্মাশ্রয়ী করে তোলে। ডানপন্থার দিকে পাল্লা তখন আরো বেশি ঝোঁকে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অভিজিৎ এর ছবি

আমার মনে হয় এই মুভিটার মধ্যে নাস্তিকতা সে অর্থে প্রচার করা হয়নি। বন্যার লেখা থেকেই এটা তুলে দেয়া যায়-

এই মুভিটার কোনখানে রিচার্ড ডকিন্স, ক্রিস্টোফার হিচেন্স, স্যাম হারিস কিংবা তেমন কোন কট্টর নাস্তিকের কোন সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় নাই। মুভিটার লাইগ্যা হেই ধরনের 'সাপোর্ট' দরকারই পড়ে নাই আসলে। বিল মাহের বিভিন্ন ঠাট্টা মশকরার মাধ্যমে যেইটা উপস্থাপন করছেন, সেইটা সাধাসিধা বাংলায় ' সংশয়'। তার নিজের কথাতেই - 'ডাউট ইজ হাম্বল'। আসলে এইটাই পুরা মুভিটার উপসংহার।

কিন্তু আমার প্রশ্ন অন্য জায়গায়। আস্তিকেরা তো নিজেদের প্রচার শুধু ঢাক না, দরকার পড়লে রীতি মত ডংকা পিটায়, কামান দেগে করে চলছে। সে দিক থেকে চিন্তা করলে বিপরীত দিক থেকে কতটুকুই বা প্রচার হয়? একেবারেই যে প্রচারণার দরকার নেই - সেটা আমি মনে করি না। কাউন্টার আরগুমেন্ট পরিবেশন করার দরকার আছে। তবে প্রেক্ষাপট বোঝাটা জরুরী - আমি স্বীকার করি। আর তাছাড়া মার, ডকিন্সেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা সবসময়ই আমাদের মনে করিয়ে দেন - সব কিছুর সমালোচনা করা গেলে ধর্মের করা যাবে না কেন? কেন ধর্মকে সব সময়ই তোল্লা করে রাখতে হবে ? ধর্ম খুব স্পর্শকাতর - একে আঘাত করা যাবে না, সমালোচনা করা যাবে না, অথচ প্যাশন অব ক্রাইস্ট কিংবা এক্সপেল্ড প্রচার করলে কোন অসুবিধা নেই- এটা তো ঠিক হল না।

যে যেমনভাবে প্রচার করার করুক না - অসুবিধা কি? বাকীটা দর্শকেরাই যাচাই করে নেবে।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

হিমু এর ছবি

ধর্ম "প্রচার" করে দুনিয়াতে কনভার্ট খুব কমই হয়েছে হাসি । সব মিশনারির হাতেই গ্রন্থ ছিলো, আর পাশের লোকটার হাতে ডান্ডা ছিলো।

আমার আপত্তি ধর্মের অসারতার প্রচারভঙ্গিমায়। প্রচারককে আগে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, তিনি কতটুকু বিস্তার চান তাঁর প্রচারণার, কতটুকু গভীরে ঢুকতে চান শ্রোতার বা উদ্দিষ্টের, ঠিক কী গুণগত পরিবর্তন আনতে চান, আর সর্বোপরি, এই পরিবর্তনকে ধরে রাখতে সক্ষম কি না তার অডিয়েন্স। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচারের কৌশল আর মেক্সিকোতে প্রচারের কৌশলে আকাশপাতাল পার্থক্য থাকবে, দুইদেশের ধর্মীয় চর্চার পার্থক্যের জন্যে। প্রচারেই যদি কাজ দিতো, আমরা দুনিয়াতে সৈনিকের বদলে মিশনারিদের যুদ্ধ দেখতাম। তা তো আর হয় না। দখলের কায়দায় যুদ্ধ আর ধর্মপ্রচার এপিঠ-ওপিঠ। এখন যদি এই একই ভঙ্গিতে নাস্তিক্য প্রচারিত হয়, গোদের ওপর বিষফোঁড়া আরেকটা বাড়লো।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, অর্গানাইজড রিলিজিয়নের বিপরীতে সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনে জাগরণ প্রয়োজন। এটি তার গভীরতর চর্চায় আরোপিত হতে হবে। নাস্তিকের বুলি জপার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। আর এই পরিবর্তনের জন্যে ধীর, সুস্থিত প্রচারণা প্রয়োজন। তার প্রথম ধাপই হওয়া উচিত ধর্মের নামে যে অন্যায়, অসহনশীলতা ও অপরাধের প্রশ্রয় চলছে, তার বিরুদ্ধাচরণ। শুধু বাক্যে নয়, কর্মে।

রমজানে যে মাঝরাতে হুজুররা মসজিদ কাঁপিয়ে লোকজনকে জাগিয়ে তোলে, এটি একটি ধর্মীয় আগ্রাসন। এই আগ্রাসনের বিরোধী মনোভাবাপন্ন মানুষ তো কম নেই আমাদের সমাজে, কয়জন আমরা এর প্রতিবাদ করতে পারি? লম্পট এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেছিলো, কয়জন বিবেকবান দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মুসলমান প্রতিবাদ করেছিলেন? এখনও দেশের বাণিজ্যে ঘাপলা বাঁধে শুক্র-শনি ছুটির জন্যে, কয়জন এগিয়ে এসে শনি-রবি করার কথা বলেন?

প্রয়োগের মাধ্যমে যদি অসারতা প্রতিষ্ঠা না করা যায়, যৌক্তিক বা আনুভূতিক প্রচারণায় কোন লাভ নেই।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অভিজিৎ এর ছবি

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, অর্গানাইজড রিলিজিয়নের বিপরীতে সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনে জাগরণ প্রয়োজন।

ঠিক তাই। কিন্তু এটাও দেখুন,' সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনে জাগরণ' আসবে কি করে, তাদের যদি নিয়ম করে অন্ধকারে রাখা হয়? বাংলাদেশে যে হারে ধর্মীয় প্রচার হয়, তার বিপরীতটা কি সহজে ঢুকতে দেওয়া হয়? সাহিত্যে কিংবা মেইন মিডিয়ায়? যেখানে 'জ্ঞানের কথা' আর 'নারী'র মত বই 'ধর্মানূভুতি'তে আঘাত হানার অযুহাতে বন্ধ করার পায়তারা নেয়া হয়, মুক্তিযোদ্ধা ওহাবকে আরজ আলী মাতুব্বরের বই পড়ার অপরাধে জুতার মালা পড়িয়ে সারা গ্রাম ঘোরানো হয় - আর অন্যদিকে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় চলে শমশের আলীদের বইয়ের ব্যাপক প্রচার - সেখানে ' সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনে জাগরণ' কি এমনি এমনি চলে আসবে?

আমি তো মনেই করি আমি যদি ছোটবেলায় আরজ আলী মাতুব্বর, কিংবা প্রবীর ঘোষের বইগুলো না পড়তে পারতাম, না পড়তে পারতাম দেবী প্রসাদ চট্টোপাধায়ের বই, কিংবা আরো দু'চারটি হাতে গোনা বিজ্ঞানমনস্ক বই - আমার পক্ষে আজ এখানে আসা কষ্টকরই হত। আপনি সেই বইগুলোকে 'নাস্তিকতা প্রচারের' অযুহাতে খন্ডন করে দিতে পারেন অবলীলায়, কিন্তু এর প্রভাব অস্বীকার করতে পারবেন না। আমি মনে করি বিভিন্ন মিথ এবং অলৌকিকতার খন্ডন জরুরী। সে বইগুলোকে কিংবা এধরনের লেখালিখিকে মোটাদাগে কেবল 'ধার্মিকদের উপর আক্রমণ' কিংবা 'নাস্তিকতা প্রচার' হিসেবে দেখলে ভুল হবে মনে হয়।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

হিমু এর ছবি

অভিজিৎদা, আপনি আক্রান্ত বোধ করছেন কি? আপনাকে কি কোনভাবে আক্রমণ করে ফেললাম?

তর্ক দেখবেন লাইনচ্যুত হয় ভুল প্রিজামশনে। যেমন,

আপনি সেই বইগুলোকে 'নাস্তিকতা প্রচারের' অযুহাতে খন্ডন করে দিতে পারেন অবলীলায়, কিন্তু এর প্রভাব অস্বীকার করতে পারবেন না।

আমি তো কোথাও জীবদ্দশায় এই বইগুলি "খন্ডন" করার কথা বলিনি! আর আরজ আলী মাতুব্বরের বই তো নাস্তিক্য নিয়ে নয়, বরং খুব জোরালো, এলিমেন্টারি সংশয়বাদী বই সেগুলি। আপনার সাথে আজই চুক্তি করে নিচ্ছি, আসুন, যে কথা আমি বলিনি, সেটা আপনি মনে মনে ধরে নিয়ে আমার মুখে বসাবেন না। যদি চুক্তি লঙ্ঘিত হয়, আমরা সরিষার তেল মেখে তর্কে নামবো। সেখানে সব জায়েজ হবে। রাজি হাসি ?

আপনার আপত্তির সাথে আমি একমত। বাংলাদেশে ধর্মীয় আগ্রাসন প্রবল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পায়, এবং এর বিপরীতে সুস্থ যুক্তির প্রচারণাকে রীতিমতো প্রহার বা হনন করা হয়। কিন্তু আমার আপত্তিটা অন্য জায়গায়। আজকে যদি আমরা আগ্রাসনের পথ বেছে নিয়ে নাস্তিক্য প্রচারণায় নামি, সেটা হবে একটা ভুল পদ্ধতি। আপনি একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিমকে গিয়ে কোরানের ভুল চোখে আঙুল দিয়ে বোঝানোর আগে তাকে বোঝান, ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নাস্তিক হিসেবে রুখে না দাঁড়িয়ে আগে একজন মুসলিম হিসেবে রুখে দাঁড়াতে। আমার বক্তব্য হচ্ছে, সেটি অনেক বেশি কার্যকরী।

ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের বাইরেও তো এর একটা ভূমিকা আছে মানুষের কাছে। বহু লোককে দেখেছি, কারো কাছে যাবার নেই, তারা ঈশ্বরের কোলে আশ্রয় খোঁজে। শুরুতেই এক বান্ডিল যুক্তি দিয়ে আমি তাকে বাড়ি দিতে চাইলে সে তা গ্রহণ করবে না, প্রতিরোধ করবে আগ্রাসী চর্চা দিয়ে, ফ্যানাটিসিজমের আশ্রয় নেবে।

আমাদের দেশের পারস্পেকটিভে বললে, আমাদের সেপারেশন অব স্টেট অ্যান্ড মস্ক-ই হয়নি, বরং উল্টোটা হয়েছে, সরকারী চাকরিজীবী খতিব সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল দাগছে বায়তুল মোকাররম থেকে। সব কিছুরই তো একটি স্তর থাকে, গোড়া বেঁধে কাজ না করলে আগা-র কাজটা নিস্ফল হয়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অভিজিৎ এর ছবি

নারে ভাই - আক্রান্তবোধ করছি না। জীবনে এত আক্রমণের শিকার হয়েছি যে, এখন আর কিছু টের পাইনা। তবে একটা জিনিস টের পাচ্ছি আমাদের জবাব দেওয়ার রাস্তা চিকন থেকে চিকনতর হয়ে যাচ্ছে। তাই অচীরেই ক্ষ্যামা দিতে হবে মনে হচ্ছে।

আসলে আরজ আলীর বইটা 'এলিমেন্টারি সংশয়বাদী' বই তা আমি জানি। কিন্তু সংশয় বলুন, আর যুক্তিবাদই বলুন শেষ পর্যন্ত তো আরজ আলীর বইটা মোটা দাগে 'ধর্মেরই সমালোচনা' - মানে ধর্মীয় কুপমন্ডুকতার। আর সেজন্যই অনেক ধার্মিকেরাই সেটা দেখে এখনো নাক কুচকায়। তারপরও আরজ আলীকে সংশয় বাদী বালা যায়, সে অর্থে বিল মারের মুভিটাও কিন্তু সংশয় বাদী । আবারো তার উদ্ধৃতি দিয়েই বলি - 'ডাউট ইজ হাম্বল'।

পশ্চিমে এখন নানা ধরনের টার্ম তৈরি হয়ছে - পলিটিকালি কারেক্ট থাকার জন্য। কেউ 'নাস্তিকতা' যাতে প্রচার না করতে হয় - 'ব্রাইট' শব্দটি চালু করেছেন। মাইকেল শারমার 'স্কেপ্টিক্স সোসাইটি' তৈরি করেছেন। পল কার্জ করেছেন সেকুলার হিউম্যানিজম। আমরা বিভিন্ন সেমেটিক নিয়ে তর্ক করতে পারি - কিন্তু এরা একটি বিষয়ে কিন্তু একমত - ধর্মের সমালোচনা করার অধিকার দিতে হবে। এই অধিকার হরণ করলে তা হবে প্রগতিবিমুখ।

আমি আপনার পয়েন্ট বুঝতে পেরেছি। আপনি বলেছেন, 'আজকে যদি আমরা আগ্রাসনের পথ বেছে নিয়ে নাস্তিক্য প্রচারণায় নামি, সেটা হবে একটা ভুল পদ্ধতি'। কিন্তু কোনটা আগ্রাসন আর কোনটা নয় - তা সঠিক ভাবে নির্নয়ের সত্যিকার মাপকাঠি কোনটা? কে বলে দেবে? যে কোন কিছুতেই আরেকজন বিপরীত মতাদর্শের ব্যক্তি আক্রান্ত বোধ করতে পারেন। একজন আওয়ামিলীগার যে কোন সময় আক্রান্ত বোধ করতে পারেন বিএনপির 'উগ্র' প্রচারনায়, একজন সৃষ্টিতাত্ত্বিক আক্রান্তবোধ করতে পারেন বিবর্তনের প্রচারণায়, একজন সমাজতান্ত্রিক আক্রান্তবোধ করতে পারেন পুঁজিবাদের প্রচারণায়, একজন রাজাকার আক্রান্ত বধ করতে পারেন মুক্তযুদ্ধের প্রচারনায়, এমনকি একজন শুদ্ধবাদী সুচিবাইগ্রস্ত ব্যক্তি কিংবা কোন পর্দানসিন নারী আক্তান্তবোধ করতে পারেন 'শিঙ্গালো' কিংবা 'কামরাঙ্গা' ছড়াকারের লেখায়, কিংবা 'সবুজ বাঘের' কোন প্রবন্ধে। তাই না? অথচ ধর্ম ছাড়া বাকি কোনটির ক্ষেত্রেই 'উগ্র' প্রচারণার অভিযোগ ওঠে না। ধর্ম কি এতই স্পর্শকাতর - যে তাকে শুধু হাতের তালুতে তালুতে আদর করে রাখতে হবে? ডেনিয়েল ডেনেট একটি চমৎকার কথা বলেছিলেন তার 'ব্রেকিং দা স্পেল' লিখার সময়। বলেছিলেন, তার বইটা প্রথমবার লেখার পর তার কিছু বিশ্বাসী ছাত্রদের পড়তে দেয়া হয়েছিলো। ছাত্রদের কেউ কেউ আপত্তি শুরু করলেন । তার লেখা নাকি কট্টর ধর্ম-বিরোধী । ডেনেট তার লেখা কেটে কুটে অনেক মোলায়েম করলেন। তারপরো তাদের মনঃপুত হল না। ডেনেট বুঝলেন - এ লড়াইয়ে যেতা যাবে না। যত মোলায়েম করেই আঘাত করা হোক না কেন - কেউ কেউ বলতে থাকবেন - আমার গায়ে আঘাত লাগছে।

যা হোক, এ ক্ষেত্রে আমার শেষ বক্তব্য হল - আমাদের যেমন দেখতে হবে - অযথা 'আগ্রাসনের পথ' যেন আমরা বেছে না নেই, তেমনিভাবে আমাদের হীনমন্যতা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। শিঙ্গালো কিংবা কামড়াঙ্গা ছড়ায় যদি আক্রান্ত বোধ না করে থাকতে পারে কেউ, ধর্মের সমালোচনা নেওয়ার শক্তিও অর্জন করতে হবে তাকে। বুঝতে হবে - এখানে সমালোচনার মাধ্যমে ব্যক্তি-আক্রমণ করা হচ্ছে না কাউকে - যেটি করা হচ্ছে ধর্মের কিছু গেঁড়ে বসা মিথ ও কুসংস্কারের খন্ডন। এটা দরকার। দরকার বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়বার স্বার্থেই।

ভাল লাগলো সুন্দর আলোচনায়।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

হিমু এর ছবি

বস, এককালে ট্রেকিং করতাম, সুযোগ পাইলে এখনো করি। চিকন রাস্তা দিয়ে কিছু যাতায়াত করেছি। কাজেই রাস্তার প্রস্থ দেখে যেন আমাদের দম না কমে।

আপনি ঠিকই বলেছেন, আগ্রাসনের মাপকাঠি নির্ধারণ করবে কে! আমি বলবো, এই মাপকাঠি বেঁধে দেবে অডিয়েন্স। কারণ প্রচারের ওনাস আপনি বা আমি কাঁধে নিয়েছি। অডিয়েন্সই আপনাকে বলে দেবে, আপনি ঝোলা থেকে কোন বলটা কখন বার করবেন।

কামরাঙা বা শিঙালো ছড়ায় কিন্তু ব্যাপারটা উল্টো। আগ্রহ পাঠক তরফের। তাছাড়ায় দোরগোড়াতেই নোটিশ, ১৮ বছর বয়স বা তদুর্ধ্ব। তারপরেও আবার গুটি গুটি হরফে লেখা, শ্লীলবায়ুগ্রস্তদের পাঠ নিষেধ! তারপরও যদি কেউ এসে পড়ে কেঁদেকেটে একশা হন, দোষ তাঁরই।

রেলিজিউলাস (বইয়ের কথা বলবো না, কারণ টেক্সট বেইজড প্রচারে আগ্রহ পাঠকের তরফের) এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে, দর্শককে আহ্বান করা হচ্ছে এসে দেখার জন্যে। অতএব দায়টা চাপে নির্মাতার ঘাড়েই।

বাংলাদেশের পারস্পেক্টিভে চিন্তা করে দেখুন, কাঠামোটাই ভিন্ন। বহু যুক্তিবাদী কঠোর নাস্তিককে চিনি, শ্বশুরবাড়ির লোকের কাছে প্রেস্টিজ থাকবে না, এই ভয়ে দুইটা গরু কোরবানি দেয়। কী বলবেন এদের?

ধর্মের অনুপস্থিতি পূরণ করে যুক্তি, ন্যায়বোধ, আইনপ্রয়োগকাঠামো, পরিবার। আপনি একজনকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে ধর্মকে অসার প্রমাণ করলেন, ভালো কথা, সে খুব বুঝলো, কিন্তু তার প্রয়োগের বেলায় ঢুঁ ঢুঁ হলে লাভটা কী দাঁড়ালো?

আমাদের সমাজে যে ধর্মীয় আগ্রাসন এবং ধর্মের আবরণে নীতিবিবর্জিত কাজগুলি হয়, সেগুলি কি আরজ আলী মাতুব্বরের বইগুলি পড়লে দূর হবে? যিনি কট্টর মুসলিম থেকে বুলন্দ সংশয়বাদী হয়ে ওঠেন, তিনিও কি নিঃশ্বাসের ফাঁকে মাঝে মাঝে বেশ সজোরেই মালুদের বদনাম করেন না? ঈশ্বরকে স্টেজ থেকে পোঁদে লাথি মেরে বার করে দিলেই কি মানুষ পারে নিজের ভেতরের ক্ষুদ্রতাগুলি ঝেড়ে ফেলতে?

ধর্মের অসারতা প্রমাণের জন্যে আমি এ কারণেই বলছি, মোকাবেলা হওয়া উচিত এর কাঠামোকে ভিত্তি করেই। আজকে একজন বিশ্বাসী মুসলিমকে এগিয়ে আসতে হবে রমজানে হুজুরদের মাইকসন্ত্রাস বন্ধ করার জন্যে, একজন বিশ্বাসী হিন্দুকে এগিয়ে আসতে হবে দূষিত চরণামৃত পান রোধের জন্যে, বিশ্বাসী খ্রিষ্টানকে এগিয়ে আসতে হবে ক্যাথলিক চার্চের বালকবিলাসী পাদ্রীদের শাস্তির জন্য। এটি রাজনৈতিকভাবে সঠিকতর পন্থা।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অভিজিৎ এর ছবি

আপনি ঠিকই বলেছেন, আগ্রাসনের মাপকাঠি নির্ধারণ করবে কে! আমি বলবো, এই মাপকাঠি বেঁধে দেবে অডিয়েন্স।

হ, আমিও তো তাই কই। আসেন হুদা আর ক্যাচাল না কইরা কিংবা নিজেই 'বিচারক' না সাইজা আমরা অডিয়েন্স-এর উপর ছাইড়া দেই -কোনটা আগ্রাসন আর কোনটা নয়।

তারপরো কিছু কথা থাকে। যেহেতু সকল অডিয়েন্স একই ভাবধারার নয়, তাদের মধ্যে ভিন্নতা থাকবেই। কেউ একটা জিনিস আপত্তি করলেও দেখা যাবে আরেকজনের সেই জিনিসটাই খুব পছন্দের। (নীচের কমেন্টেই দেখা যাবে, অমিত আহমেদ আমার সাথে একমত পোষন করেছে, নিঃসন্দেহে অনেকেই আছেন যারা আবার করছেন না)। এটাই স্বাভাবিক। কারো কাছে একটা জিনিস অশ্লীল মনে হতে পারে, আবার অন্যদের কাছে সেটাই হয়ে উঠতে পারে সুস্থ্য সাহিত্য। যেমন, একসময় বিপ্লব রহমানের কাছে সবুজ বাঘের একটা প্রবন্ধ অশ্লীল মনে হয়েছিলো, অনেকের কাছেই তা আবার মনে হয়নি। এই ভিন্নতা নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। ধর্মের সমালোচনাকেও আমি সেভাবেই দেখি। আলাদা কোন 'লেভেল' এঁটে দিয়ে 'এভাবে আক্রমন করো',--'ওভাবে কোর না - লোকে ব্যাথা পাবে' - উপযাজক হয়ে এগুলো বলার তেমন কোন কারণ আমি খুঁজে পাইনি। আমার চোখে ধর্ম কিংবা ধর্মীয় মিথগুলো আলাদা কোন 'রেসপেক্ট' বা 'সহানুভূতি' দাবী করতে পারে না, কোনভাবেই।

এনিওয়ে, রাস্তা এমনিতেই চিপা হয়ে গেছে; আর আমার আবার ট্র্যাকিং এর অভ্যাস তেমন একটা নাই। আর তাছাড়া আমরা মনে হয় দু'জনেই দুজনের কথা বলে ফেলেছি। এখন দেখি 'অডিয়েন্স' কি বলে! ভাল থেকেন আপনি।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

চলুক

বেশ উপভোগ্য আলোচনা। দু’জনের পয়েন্টগুলোই বুঝলাম। আপনার এই ভাবনাগুলো অজানা ছিলো। আপনার সাথে অনেকটাই সহমত। সবচেয়ে ভালো লাগলো এই লাইনটাঃ

আপনি একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিমকে গিয়ে কোরানের ভুল চোখে আঙুল দিয়ে বোঝানোর আগে তাকে বোঝান, ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নাস্তিক হিসেবে রুখে না দাঁড়িয়ে আগে একজন মুসলিম হিসেবে রুখে দাঁড়াতে।

এখন এসব নিয়ে আপনার ভাবনা আর শুনি না। লিখবেন আশা করি!

কাজি-মামুন এর ছবি

একজন মুসলিমের পক্ষে ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিভাবে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব যখন সে জানে ধর্মের তরে সকল আগ্রাসন জায়েজ?

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ধর্ম মাত্রই খ্রাপ, মুসলমান মাত্রই একরূপ, আপনি কি সেই বুলি কপচাতে চাচ্ছেন? মনে হয় না। হাসি

এই কথাটা বার বার আসে। "অনেক মুসলমানই ভোদাই, তাই মুসলমান মাত্রই ভোদাই।" মহা মহা যুক্তিবাদী পণ্ডিতেরা ধর্ম ব্যাশিংয়ের সময় যুক্তিবুদ্ধি ফ্যালাসি গুলিয়ে খেয়ে ধর্মের পেছনে উঠে পড়ে লাগেন। ধর্ম ব্যাশারদের প্রিয় অ্যাকটিভিটির একটা হলো সকল মুসলমান (বা হিন্দু) -কে একই চরিত্র আরোপ করে তথা এক লাইনে এনে তারপর ব্যাশানো। সব মুসলমানকে একরকম ভাবতে পারলে ব্যাশানোতে সুবিধা। কারণ মূল উদ্দেশ্য তো আসলে ব্যাশানো। কিন্তু চেপে ধরলে বলে যে নাকি মুসলমানদের হেদায়েত করছে তারা।

এখন প্রশ্ন যদি হেদায়েতেরই হয়, তাহলে প্রয়োগ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা তো হবেই! এবং শ্রেয় পদ্ধতির সন্ধানও করতে হবে। এবং সেক্ষেত্রে স্বল্প চর্চিত এবং ধর্ম ব্যাশারদের রীতিমত অপ্রিয় কিন্তু সম্ভাব্য কার্যকর হেদায়ত পদ্ধতিটা হলো (হিমু ভাইকে কোট করছি, কারণ এটা আমি সমর্থন করি) -

একজন বিশ্বাসী মুসলিমকে এগিয়ে আসতে হবে রমজানে হুজুরদের মাইকসন্ত্রাস বন্ধ করার জন্যে, একজন বিশ্বাসী হিন্দুকে এগিয়ে আসতে হবে দূষিত চরণামৃত পান রোধের জন্যে, বিশ্বাসী খ্রিষ্টানকে এগিয়ে আসতে হবে ক্যাথলিক চার্চের বালকবিলাসী পাদ্রীদের শাস্তির জন্য। এটি রাজনৈতিকভাবে সঠিকতর পন্থা।

তবে হেদায়েতের পদ্ধতি হিসেবে ধর্ম ব্যাশিংয়ের সমালোচনা করা মানে এই নয় যে ধর্ম ব্যাশিংয়ের আগা গোড়া বিরোধিতা করছি। ধর্ম ব্যাশিংয়ের অস্তিত্বকে আমি সমর্থন করি অনেকগুলো কারণে - ১) এটা করার প্রাকৃতিক অধিকার মানুষের আছে বলে আমি মত পোষণ করি ২) হেদায়েত পদ্ধতি কেবল একরকম থাকাটা আমি সমর্থন করি না, সে কারণে হরেক রকমের (ভালো , কম ভালো) হেদায়েত পদ্ধতির মধ্যে ধর্ম ব্যাশিংও থাকাটা কাম্য ৩) ঐতিহাসিকভাবে ধর্ম ব্যাশিংয়ের নূ্যনতম কিছুমাত্র হলেও উপযোগ দেখা গেছে। তবে ওই! অধিকার আছে বলেই এর সমস্যাগুলোকে না জানার চেষ্টা করার ভান কেনো? তাছাড়া আমার ইন্টেলেকচুয়াল ভাইয়েরা সবাই-ই কেনো এরকম নিচুমানের একটা হেদায়েত পন্থা নিয়ে পড়ে থাকবেন? ব্যাশানো খুউব-ই সহজ। মূর্খ নাস্তিকও ধর্ম ব্যাশাতে পারে, অনেকে দোস্তির চোটে খেয়ালও করে না তার মূর্খামী। কিন্তু কেউ কেউ তো আলস্য ঝেড়ে সঠিকতর কাজগুলোয় হাত দিতে পারে, নাকি?

কাজি-মামুন এর ছবি

প্রথমত, ধর্ম ব্যাশিং কাকে বলে তা আমার জানা নেই।
দ্বিতীয়ত, মনের ভিতর জেগে উঠা একটি প্রশ্ন করেছি। আর এটা তো মানবেন, মূর্খদেরও প্রশ্ন করার অধিকার আছে! বস্তুত মূর্খরাই তো প্রশ্ন করবে, যেহেতু তারা জানে না। হাসি

'একজন মুসলিমের পক্ষে' বললে অনস্বীকার্যভাবেই পুরো মুসলিম জাতিকে বোঝাবে? পরে যে এট্রিবিউট আরোপ করা হল, তা দিয়ে কি শুধু এক শ্রেণীর মুসলমানকে নির্দেশ করা যেতে পারে না? যেমন, ''একজন মানুষ কি করে মুক্ত মনের অধিকারী হবে, যদি সে আগাগোড়া বদ্ধ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবেশে বড় হয়?'' এ প্রশ্ন করলে কি এমন বোঝাবে যে, এখানে সমগ্র মানবজাতিকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন বা গোঁড়া বলা হয়েছে? যুক্তিবিদ্যার রায় কি এখানে? কোন ফ্যালাসির উদ্ভব হয়েছে?

সম্ভাব্য কার্যকর হেদায়েত পদ্ধতির প্রয়োগক্ষেত্র হিসেবে কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে, যা কার্যকর করা অপেক্ষাকৃত সহজ বা কিছু কিছু ইতিমধ্যেই কার্যকর। যেমন, রমযানের মাইক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক ইমামকে বলতে শুনেছি, যিনি আবার বিন লাদেনের মহা ভক্ত! হিন্দুরা বোধহয় এখন চরণামৃত খুব কমই পান করে। তবে সম্ভাব্য কার্যকর হেদায়েত পদ্ধতিটি আরও কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে দেখলে কেমন হয়, যেমনঃ

একজন বিশ্বাসী খ্রিস্টানকে এগিয়ে আসতে হবে একজন ভিন্নমতাবলম্বীর কণ্ঠরোধ প্রতিরোধ করতে, এমনকি যদি সেই ভিন্নমতাবলম্বী খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তককে নিয়ে কোন বিরূপ মন্তব্যও করে থাকে, আবার একজন বিশ্বাসী হিন্দুকে এগিয়ে আসতে হবে বাবর মসজিদ ভাঙ্গন রোধ করতে, এমন যদি তাদের নিশ্চিত বিশ্বাস থাকে যে, ঐ বাবরি মসজিদ মন্দির ভেঙ্গে নির্মিত হয়েছে।

অনেক বিশ্বাসী ও নির্বিবাদ (মানে কারো সাথে ঝগড়া ফ্যাসাদে লিপ্ত হয় না) ধার্মিক দেখা যায়, যারা অন্তরে ধারণ করে যে, এমনকি একটি শিশুও যদি তাদের ধর্মে দীক্ষিত না হয়ে মারা যায়, তাহলে অনন্ত নরকের ফাইনাল ফয়সালা তার জন্য তাৎক্ষনিকই হয়ে যায়। অনেক সময় ধর্মের ভিতরেই লুকানো থাকে ভয়াবহ আগ্রাসনের বীজ (জেনারালাইজ করা হচ্ছে না এখানে)। ধরা যাক, সেন্ট পিটার্স চার্চ আর পোপের কথা। খ্রিস্টান জগতে এদের গুরুত্ব ততটাই যতটা মুসলিমদের কাছে মক্কা-মদীনার, বা ক্ষেত্রবিশেষে বেশী। যেকোন ধর্ম ব্যাখ্যায় পোপের রায়ই বেদবাক্য বেশিরভাগ খ্রিস্টানের নিকট। মধ্যযুগে ইউরোপের রাজারা শাসন ক্ষমতায় টিকে থাকতেন বিরুদ্ধ মত উচ্ছেদের শর্তে। পোপের আদেশে কোন রাজা নিপীড়ন চালাতে অস্বীকার করলে তার ভূ-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করত চার্চ; শুধু তাই নয়, ঐ রাজার রাজ্য যেকোন আক্রমণকারীর দখলের জন্য উন্মুক্ত করে দিত চার্চ। এই আগ্রাসনকে একজন সাধারণ খ্রিস্টান (সবাই নয়) ধর্মবিশ্বাসের অঙ্গ হিসেবেই দেখত।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ধর্মীয় আগ্রাসন বোঝেন, কিন্তু ধর্ম ব্যাশিং বোঝেন না?

মূর্খদেরও প্রশ্ন করার অধিকার আছে!

সমালোচনা করা মানে অধিকার নেই বলা না। কিন্তু আমি মূর্খদের প্রশ্ন করা নিয়ে কিছু বলিও নি। হেদায়েতের চেষ্টা করা মানে তো প্রশ্ন করা নয়, বরং সেটা হলো দায়িত্ব নিয়ে অন্যকে বোঝানো। নিজে ঊর্ধ্ব, অপরজনে অধঃ, সেটা দেখানোর চেষ্টা যার (অনিচ্ছাকৃত হলেও) অংশ হয় সাধারণত। কিন্তু ব্যাশিংগত হেদায়েতের পদ্ধতিটা এতোটাই দুর্বল যে কেবল অন্যকে দেখে দেখে এটা চর্চা করা সম্ভব। অনেকে করে। সেটা খুব চিন্তাপ্রসূত কাজ না। বরং এক ধরনের রিচ্যুয়াল। সেই কাজের উদ্দেশ্যও তাদের জানা নেই। ফলাফলও জানা নেই। পরিকল্পনা নেই। টিটকারি করার যে মজাটা, যেটা অনেক মুসলমান আরেকজন হিন্দুকে নিয়ে করে, সেই ক্যাটাগরিরই রিচ্যুয়াল এটা একটা। যে হেদায়েতের পদ্ধতিকে এতো সহজে চিন্তাবিবর্জিত রিচ্যুয়ালে পরিণত করা যায়, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে বৈকি!

তাছাড়া, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে মুসলমান সবারই এক রূপ, সবাই মনজঙ্গি, জেহাদি, সম্ভাব্য পেডোফাইল ও খুনী, সেখানেও গোটা জাতি ধরে ব্যাশিং করার ফলাফল কী বলে আপনার মনে হয়? (হিমু ভাইকে কোট করে) সেটা করা যে "মানুষকে আরো উগ্র ধর্মাশ্রয়ী করে" তুলতে পারে, সেটা কি অস্বীকার করা হচ্ছে? আমাদের আসল লক্ষ্য কী? এই পেডোফাইল ও খুনী জেহাদি উৎপাদক ধর্মাশ্রয়ীরা দলে দলে তাদের ধর্ম ছেড়ে আসা? নাকি মুসলমানেরা আরো সহনশীল হোক সেটা কামনা করা? এক বিলিয়ন মুসলমানের দিকে তাকিয়ে বলুন কোনটা ঘটার নূ্যনতম হলেও সম্ভাবনা আছে? এবার বলুন ব্যাশিং করে সেটার কতোটা হেদায়েত হবে বলে আপনার মনে হয়? আবার অধিকারের তর্কে আশা করি আমরা যাবো না। কারণ এখানে পদ্ধতির কার্যকারিতার মূল্যায়ন হচ্ছে, অধিকারের নয়।

কাজি-মামুন এর ছবি

ধর্মীয় আগ্রাসন বুঝলেই ধর্মীয় ব্যাশিং বুঝতে হবে, যুক্তিবিদ্যায় বোধহয় এমন কোন স্বতঃসিদ্ধ শর্ত নেই! ধর্মীয় ব্যাশিং টার্মটা আগে পাইনি, তাই জানতাম না। এখন আপনার কাছ থেকে শুনলাম এবং জানলামও। এটা টিটকারির মতই একটি রিচুয়াল এবং অবশ্যই কার্যকর পন্থা হতে পারে না।

তাছাড়া, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে মুসলমান সবারই এক রূপ, সবাই মনজঙ্গি, জেহাদি,

সব মুসলমানের কথা বলিনি; মাত্র এক শ্রেণীর মুসলমানের কথা বলেছি যারা ধর্মের তরে যেকোনো অন্যায় কাজকেও পুণ্য মনে করে। 'একজন মুসলিমের পক্ষে' বলতে কি বোঝাতে পারে, তা তো আরেকটি বাক্যের উদাহরণ টেনে বলার চেষ্টা করলাম!

এবার বলুন ব্যাশিং করে সেটার কতোটা হেদায়েত হবে বলে আপনার মনে হয়?

ব্যাশিং করে তো হবে না; কিন্তু আপনার পন্থায় কতটুকু সহনশীল করতে পারবেন, সে বিষয়ে আমার ঘোর সন্দেহ রয়েছে! আপনার সমর্থিত পন্থায় হয়ত মাইক সন্ত্রাস বন্ধ করতে পারবেন, কিন্তু পারবেন ভিন্ন মতের কণ্ঠরোধ রোধ করতে? যখন পোপ ঘোষণা দেয়, ক্ষমতায় থাকার মানদণ্ডই হচ্ছে, বিরুদ্ধ মতের লোকদের চরম শাস্তি প্রদান, তখন কিভাবে আপনি সাধারণ বিশ্বাসী খ্রিস্টানদের 'বিরুদ্ধ মতের' প্রতি সহনশীল করে তুলবেন? অথচ দেখেন, আজকের পোপ কিন্তু এমন বলে না! পোপের এই পরিবর্তনের পেছনে স্বাধীন চিন্তকদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়েছে, তাদেরকে বাইবেলের অকার্যকারিতা প্রমাণ করে তার প্রভাব কমিয়ে দিতে হয়েছে সাধারণ খ্রিস্টানদের মাঝে! জন লক, স্পিনোজা, ভলতেয়ার, রুশো, হিউম, কান্ট সহ আরও অনেকে এই কার্যকর পথের কাণ্ডারি ছিলেন!

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

পোপের এই পরিবর্তনের পেছনে স্বাধীন চিন্তকদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়েছে, তাদেরকে বাইবেলের অকার্যকারিতা প্রমাণ করে তার প্রভাব কমিয়ে দিতে হয়েছে সাধারণ খ্রিস্টানদের মাঝে! জন লক, স্পিনোজা, ভলতেয়ার, রুশো, হিউম, কান্ট সহ আরও অনেকে এই কার্যকর পথের কাণ্ডারি ছিলেন!

এর সাথে আমার বর্ণিত পন্থার পার্থক্য কোথায়? আপনি আপনার লিস্টের মানুষগুলোকে অখ্রিষ্টান ভাবছেন? এদের অনেকেই কিন্তু খ্রিষ্টানই ছিলেন। হ্যাঁ, হেরাটিক (heretic) ছিলেন। কিন্তু নিজে খ্রিস্টান থেকেই কিন্তু খ্রিস্টানদের কথা চিন্তা করেছেন। তাদের মুক্তি কামনা করেছেন। সাংস্কৃতিক এমন কি রিচ্যুয়ালগত খ্রিস্টানিত্ব পালন করে গেছেন।

যখন আমি বলছি যে একজন মুসলমানকেই এগিয়ে আসতে হবে মুসলমানের হেদায়েতের জন্যে, তখন কিন্তু আমি এটা বলছি না যে আপনার মতো নাস্তিক বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে কিছু হবে না, কেবল সাধারণ মুসলমানদেরকেই তাদের কাজটা করতে হবে। আমি কিন্তু আপনার কথাও বলছি। আপনি হয়তো আসবেন না। কিন্তু আমার পন্থা বলছে আপনাকেও মুসলমান পরিচয়ে এগিয়ে আসতে হবে, দলত্যাগী হিসেবে নয়।

নিজেকে অমুসলমান দাবী করার পর কোরানের শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন করা কিন্তু আর কোনো ব্যাপার না। আপনি মুসলমানদের সংস্কৃতি, গোষ্ঠি, আচারাদি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে যখন ফেলেছেন, তখন আপনি আর মুসলমানদের মাঝে জড়িত নন। সেই চেষ্টাও করছেন না। কেবল বাইরে থেকে কোরানের শুদ্ধতা নিয়ে বলছেন। সেটা খ্রিস্টান ও ইহুদিরা অনেক আগে থেকেই তো করে আসছে। এতে মুসলমানরা কোনোকালে কোনো কর্ণপাত করেছে বলে কি আপনার মনে হয়? কঠিন কাজটা কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে থেকেই কোরানের শুদ্ধতা নিয়ে তাদের সাথে আলাপ করা। মুসলমানেরা নাস্তিকদের ভয় পায় না, হেরাটিকদের পায়।

এখন অনেকের শর্টটার্ম উদ্দেশ্যই থাকে এইরকম প্রচার করা যে - দেখো কোরানে ভুলভাল আছে অতএব অমুসলমান হয়ে যাও। এটা আলস্য, তাড়াহুড়া। ফলে এটাতে অন্য মুসলমান কান দেয় না, কারণ উদ্দেশ্যটা উদ্ভাসিত। কিন্তু মুসলমানকে মুসলমান থাকতে দিয়ে, তার নিরুপদ্রব সাংস্কৃতিক পরিচয় বজায় রাখতে দিয়েই তার ধর্মীয় ক্ষতিকর আগ্রাসনগুলোকে দেখিয়ে দিতে কিন্তু কেউ গা করে না। সেই কাজ অনেক কঠিন। যথেষ্ট সূক্ষ্মতার প্রয়োজন সেখানে। চিন্তাশীলতার প্রয়োজন। আমার মহাবুদ্ধিমান ইন্টেলেকচ্যুয়াল ভাইয়েরা বরং ভাবেন - এতো কষ্ট করে কী হবে! সরাসরি এস্পার কি ওস্পার করে ফেল্লেই তো হয়! বুশের মতো, তুমি হয় এইদিকের লোক, নয় ওই দিকের! এজন্যে ওনারা খালি গাল ভরে ভরে বলতে আসেন, কোরান ভুল, তাই ধর্ম পুরাই খ্রাপ, ওটা সুরুৎ করে ছেড়ে ফেলো! যা বলার বললাম, তোমরা এখন লাইনে আসো কি চিরকাল আমাদের গালমন্দ খেয়ে বেঁচে থাকো, কী যায় আসে! আমাদের তো হেদায়েত হয়েই গেছে! চিরকার তোমাদের গালমন্দ করার লাইসেন্স পেয়েই গেছি!

আমি হেরাসির পক্ষে। ধর্মত্যাগী নাস্তিক্য আর কোনো হেরাসি নয়। হেরাটিক কিন্তু ধর্ম বা অন্তত ধর্মীয় সংস্কৃতি, পরিচয়, পরিমণ্ডল সম্পূর্ণ ত্যাগ করে না। মুসলমানের প্রয়োজন হেরাটিক, যারা মুসলমানদের ত্যাগ করবে না। তাদের মধ্যে থেকে তাদের ধর্মীয় ভাবনাগুলোর আমূল পরিবর্তনে রাজি থাকবে। মুসলমানের যে একটু আধটু নরম রূপটাও আমরা দেখতে পাই, সেটার পেছনেও কিন্তু এককালের হেরাটিক সুফিদেরই অবদান।

কাজি মামুন এর ছবি

আমি এটা বলছি না যে আপনার মতো নাস্তিক বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে কিছু হবে না,

আমাকে বলছেন? মনে হয় না। সম্ভবত অন্য কারো উপরকার ক্ষোভ (ধর্ম ব্যাশিংয়ের দয়ায়ে) ঝারছেন এই অধমের উায়ে!
তবে আমাকেই যদি বলে থাকেন, তাহলে তা হবে ঘোরতর অবিচার। আমি নাস্তিকও নই, বুদ্ধিজীবীও নই।
আমি বিশ্বাস করি, একজন গানপ্রেমির যেমন আপন মনে রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ার অধিকার আছে, তেমনি একজন ধার্মিকের আপন মনে ঈশ্বরকে ডাকার অধিকার আছে। কিন্তু সমস্যা হয়ে যায়, যখন ঐ ধার্মিক কোন গান-প্রেমীর কণ্ঠ হতে গান তুলে নিতে চায় ধর্মের দোহাই দিয়ে। আমি ঐ শ্রেণীর ধার্মিকদের (শ্রেণীটি যে সংখ্যায় খুব একটা ছোট নয়, তা বোধহয় স্বীকার করবেন) এহেন আগ্রাসনের কথা বলেছি, যা তারা জেনে-শুনে (ভুল জানা হতে পারে এবং সে অন্য তর্ক) ধর্মের প্রতি কর্তব্য হিসাবেই করে থাকে। আমি এই প্রসঙ্গেই প্রশ্নটা করেছি; অথচ আপনি প্রতি-উত্তরে অনেক কথা লিখলেও এই প্রশ্নের ব্যাপারে তেমন কিছুই বলেননি। এখন তাহলে 'এক শ্রেণির ধার্মিকের ধর্মগত দায়িত্ব মনে করে হিংস্রতা প্রদর্শন' নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না? একে 'ধর্ম ব্যাশিং' নাম দিয়ে রুদ্ধ করে দেয়া হবে?

কিন্তু নিজে খ্রিস্টান থেকেই কিন্তু খ্রিস্টানদের কথা চিন্তা করেছেন। তাদের মুক্তি কামনা করেছেন। সাংস্কৃতিক এমন কি রিচ্যুয়ালগত খ্রিস্টানিত্ব পালন করে গেছেন।

দেখুন ভলতেয়ার তার The Tomb of Fanaticism গ্রন্থে কি বলছেন:
'একটি সহজ ও বিশ্বজনীন ধর্মের পরিবর্তে মানুষ অন্ধভাবে বেছে নিয়েছে একটা অযৌক্তিক ও রক্তাক্ত ধর্মমত, যার সমর্থনে রয়েছে জল্লাদের দল এবং যাকে ঘিরে রেখেছে জ্বলন্ত কাষ্ঠখণ্ড..'
আপনি এক শ্রেণীর ধার্মিকের আগ্রাসী মনোভাব সম্পর্কিত আমার একটি প্রশ্নকে ধর্ম ব্যাশিংয়ের দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন, আর উপরোক্ত মন্তব্যকারীদের 'খ্রিস্টান ধর্মে থেকেই ক্রিস্টানদের মুক্তি' কামনার গৌরবে ভূষিত করলেন (যে গৌরব তারা নিতে চাইতেন না বোধ করি)।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনার প্রতি ঘোরতর অবিচারের জন্যে অত্যন্ত দুঃখিত, কাজি মামুন। আমি নিজে নাস্তিক বুদ্ধিজীবী কিনা। আমার দলে যোগ দিবেন সেই আশা ছিলো! হাসি

আপনি কিন্তু আপনার একটা মন্তব্য এখানে আসার আগেই আমাকে মেইলও করেছেন। সেখানে বলেছিও আপনার প্রথম প্রশ্নটাকে আমি কীভাবে দেখেছি। যখন আপনার কথা আরেকজনের কাছে পরিষ্কার হয় না, তখন সেটা পরিষ্কার করা বাঞ্ছনীয়। আপনি এখনো মনে হচ্ছে পড়ে আছেন আপনার কথাটাকে কেনো ভুল বোঝা হয়েছে সেই নিয়ে। কিন্তু আপনি কথাটা বলেছিলেন আমার কথার পিঠে। ফলে আমি কিন্তু আলোচনা করবো আমার আলোচনার কনটেক্সটেই।

আরও নানা তর্ক করা যায় যে কারটা ধর্ম ব্যাশিং ছিলো আর কারটা ছিলো না। তবে আমি স্ব উন্নয়ন আর অপর দলে বসে হেদায়েত, এর যে পার্থক্য করছি, আমার জিজ্ঞাস্য হচ্ছে সেটা আপনার কাছে পরিষ্কার কিনা?

আর আপনি যেহেতু ভাবছেন আপনার উপর বেশ কয়েক দফা অন্যায় করে ফেলেছি, আপনার প্রশ্নটার পুনর্বার উত্তর করার চেষ্টা করি (পুনর্বার দুঃখ প্রকাশ সহকারে) -

প্রশ্নঃ

একজন মুসলিমের পক্ষে ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিভাবে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব যখন সে জানে ধর্মের তরে সকল আগ্রাসন জায়েজ?

উত্তরঃ যখন আমরা যারা ধর্মের সকল আগ্রাসনকে জায়েজ মনে করি না, তারা ওই মুসলমানের সম্পূর্ণ ধর্মটাকেই খেলো না দেখিয়ে, অমুসলমান হয়ে ওঠার পরামর্শ না দিয়ে কেবল যৌথ বিষয়ে যা কিছু ম্যাটার করে, সেগুলোতে ধর্মীয় আগ্রাসনের ব্যাপারে সোচ্চার হতে বলবো। তার ব্যক্তিগত ও যৌথ-অসংক্রান্ত বিশ্বাসকে বিচলিত না করে। কিন্তু তার বদলে একদল এখন অতিরিক্ত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মুসলমানের (বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর) ব্যক্তিগত ও যৌথ-অসংক্রান্ত বিশ্বাসের ব্যাপারে তোড়জোর করা নিয়ে। যদি উদ্দেশ্য হয় মুসলমানকে যৌথ বিষয়ে সহনশীল করে তোলা, তবে সেটা নেহায়েত ভুল যুদ্ধ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এইটা দেখব ঠিক করে রেখেছি।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত আহমেদ এর ছবি

সামনের উইকএন্ডে দেখার কথা।

অভিজিৎ'দার সাথে একমত।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

বন্যা এর ছবি

হিমু,
আলাদা করে উত্তর দিচ্ছি আপনাকে, উত্তরের পিছনে উত্তর দিতে থাকলে বক্সের সাইজটা চিকন থেকে চিকনতর হয়ে যেতে থাকে বলেঃ)।
শুধুমাত্র ধর্ম নিয়ে সমালোচনার বিরোধী আমি এক্কেবারে অন্য কারণে। আমি বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রত্যাঞ্চলে ঘুরেছি এক সময়, আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি যে সাধারণ মানুষগুলোকে আসলে আমরা যেভাবে ভাবি তারা আসলে ততটা ধার্মিক নয়, এত সহজে তাদের মনে ব্যাথা লাগে না (সে ভাবে দেখলে, শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা আসলে অনেক বেশী ধার্মিক) ধর্মকে অনেক ক্ষেত্রেই উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমার বিরোধীতা অন্য কারণে, ধর্মকে সব ধরণের খারাপ কিছুর পিছনে একমাত্র শত্রু বলে চিহ্নিত করলে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারণগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। যেমন ধরুন, বিন লাদেনের উত্থানের জন্য যদি ধর্মকে দায়ী করা হয় তাহলে তার পিছনে রাশিয়া এবং আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী ভুমিকার পুরোটাকেই বাদ দিয়ে দিতে হয়। ধর্ম শুধু অপ্রয়োজনীয়ই নয়, ক্ষতিকরও বটে, এর সমালোচনার অবশ্যই দরকার আছে, তবে তাকে যারা টিকিয়ে রাখে তাদের কথাটা বাদ দিয়ে ধর্মের সমালোচনা করলে সেটা আমার কাছে সম্পুর্ণ মনে হয় না। আজকে বিজ্ঞান যে জায়গায় পৌছেছে, আমি মনে করি রাষ্ট্র ধর্মকে টিকিয়ে না রাখলে এর ভিত্তি আরও অনেক আগেই দুর্বল হয়ে যেত।

স্নিগ্ধা এর ছবি

বিলু (বিল মার কে ভালোবেসে আমি ঐ নামেই ডেকে থাকি) আমার অতি পছন্দের হওয়া সত্বেও, এবং এই পোস্ট নিয়ে মন্তব্য করার সবিশেষ বাসনা থাকা সত্বেও - করবো না!!

কারণ, বন্যার ওপর আমার মেজাজ অতিশয় খারাপ .........

তবে, অভির ব্যবহারেও আমি খুব দুঃখ পাইসি! হিমু'র বক্তব্যের সমান্তরাল যুক্তিতেই বলা চলে- একসময় আমিও যখন নন্দিনী হোসেনের এক পোস্টের মন্তব্যে লিখসিলাম যে, ধর্মকে চ্যালেঞ্জ করার প্রসেস এবং ধরনটা আরো একটু স্ট্র্যাটেজিক এবং ধীরে হওয়া উচিত, তখন অভি এমন খ্যাক খ্যাক করলো আমার সাথে যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে হুমকি দিয়ে সেটা আমার বন্ধ করতে হইসিলো!! আর এখন হিমুর সাথে কি মিষ্টি ব্যবহার!!

তবে শুধু বিলু না, তার শো তে মাঝে মাঝে এমন সব তুখোড় আলোচক আসে, যে তাব্দা হয়ে তাকায় থাকি!

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

বোরাট ঘরানার ছবি দেখছি! নির্মল বিনোদনের জন্যই দেখতে হবে। দেখি বাজারে ডিভিডি এসেছে কিনা?

মন্তব্যে অনেক দীর্ঘ আলোচনা দেখলাম। সব পড়া হয় নি। তবে অভিজিৎ-এর একটা মন্তব্য দেখে আমার অভিজ্ঞতা যুক্ত করতে চাইছি। অভিজিৎ লিখেছেন যদি কৈশোরে তিনি প্রবীর ঘোষ, বা আরজ আলী মাতুব্বর প্রমুখের লেখা না পড়তেন তবে হয়তো ধর্মের অসারতার ধারণাগুলো তার মনে পাকাপোক্ত হতো না।

আমার অভিজ্ঞতা একেবারে ভিন্ন। ছাত্রশিবির কালে যখন প্রতি সপ্তায় ২/৩টি বই পড়ে সে সম্পর্কে রীতিমতো একটা সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন লিখে সবার সামনে আলোচনা করতে হতো, সেই সময় আমি বাংলা ভাষায় লিখিত প্রায় সব ইসলামি বই পড়ে ফেলেছি। আমি কিন্তু এসব ধর্মীয় বই পড়তে পড়তে আর নানা তফসিরকারকদের নানা ব্যাখ্যা হাতড়াতে হাতড়াতেই বুঝতে শুরু করি সমাজে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা আর অসারতা।

তবে সম্ভবত: ইমাম গাজ্জালির বই পড়েই আমি প্রথম নিশ্চিত হই যে, ধর্মের নানা গাল-গল্পগুলো যে অকারণ কল্পনা। কিন্তু গাজ্জালির বই ধর্মীয় বই হিসেবেই পাঠ করে লোকে।

ধর্মের বইগুলোর মধ্যেই এতো স্ববিরোধিতা, এতো উদ্ভট তথ্য আর এতো অবিশ্বাস্য সব যুক্তি দেয়া আছে যে একটু ক্রিটিক্যাল মন নিয়ে ভাবলেই এসবের ত্রুটি ধরা পড়ে।

কিন্তু সব জাতি বোধহয় সমান সৎ নয়। জন্মনিরোধক বাতিল করেছে এবং তার নিজের কাছে এটা যৌক্তিক মনে হয়নি বলে উপাসনালয়ে যাবে না এমন সরাসরি চিন্তাভাবনা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। আমার এক নামাজি অথচ ক্রিকেটপ্রেমি খালাতো ভাইতে সহিহ হাদিস খুলে দেখিয়েছিলাম যে ইসলামে মাত্র তিন ধরনের খেলাকে হালাল বলা হয়েছে এবং তার মধ্যে ক্রিকেট নাই। সে ঐ হাদিসটুকু না মেনে আরো পাক্কা মুসলমান হয়েছে।

সমস্যা হলো ধর্মকে যে যার মতো কাটছাঁট করে নেয়। সুতরাং প্রকৃতঅর্থে পৃথিবীতে যদি ৪০০ কোটি ধর্মবিশ্বাসী থেকে থাকে তবে ধর্মের সংখ্যাও ৪০০ কোটি। ফলে আমরা দেখতে পাই, পাঁচ ওয়াক্ত প্লাস নামাজ পড়েও লোকে মুসলিম, না পড়েও নিজেকে মুসলিম মনে করে, কালো তাঁবুর মতো বুরখা পরে নিজেকে মুসলিম নারী ভাবে অনেকে, আবার স্কার্ট পরে মাথায় কাপড় না দিয়েও তার বিশ্বাসের কোনো হেরফের হয় না।কোরান, হাদিস, ইজমা, কিয়াস মেনে মুসলিম আছে। আবার শুধু কোরান মেনেও মুসলিম আছে। আবার আলাদা ধর্মগ্রন্থ আছে, আলাদা পয়গম্বর আছে এমন ধরনের মুসলিমও আছে।

এ এক সাংঘাতিক সোনার পাথরবাটি।

ধর্মের এই যে সব যুক্তিহীন বিষয়-আশয় এসব এর অনেক অনুসারীরাই মানে না। এদের নিযে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে যখন তাদের ধর্মের অযৌক্তিক রীতি-নীতি তারা শক্তিবলে চাপিযে দিতে চায় অন্যদের ওপর। যখন নানা ধর্মে তৈরি হয় আল-কায়েদা টাইপ জঙ্গিগোষ্ঠী তখন আমাদের আতংকিত হয়ে উঠতে হয়।

আমাদের মূল কাজ হওয়া উচিত এইসব আল-কায়েদা গোষ্ঠীগুলো যাতে তরুণ ধার্মিকদের রিক্রুট করার মতো মানসিক আকর্ষণের পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। রিলিজুলাস ছবিটি মনে হয় রসিকতার মাধ্যমে অনেকের মনের গহীনে একটা ধর্ম-সমালোচকের বীজ বপন করতে সক্ষম হবে। (তবে বোদ্ধা লোকরা নিজেদের মধ্যে আরো গভীর তত্ত্বালোচনা করে সত্য পথের চিন্তাকে আরো এগিয়ে রাখবেন -এতে অসুবিধার কিছু নাই।)

নবীন অতিধর্মবিশ্বাসীদের একেবারে না রগড়ে এরকম রসিকতার মাধ্যমে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ধরিয়ে দেয়া উচিত। তারপর যে যার ঈশ্বর বা না-ঈশ্বরকে পাবে নিজস্ব যুক্তি সাজিয়েই।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।