দ্রোহির একটা মজার লেখা থেকে সচলেরা দেখলাম রীতিমত বিবর্তনের মত একটা সিরিয়াস বিষয়ে ঢুকে পড়লেন। আপদ যেভাবে ক্ষেপে উঠলেন তার (মানে আমাদের সবার) খালাতো ভাইদের নাম শুনে তাতে করে মনে হচ্ছে এ বিষয়ে একটা লেখা শেয়ার করলে মন্দ হয় না। কিছুদিন আগে বিবর্তন নিয়ে অনেক হাবিজাবি লিখছিলাম। বাংলায় এ বিষয়ে সাম্প্রতিক তথ্যসহ লেখা ভালো কোন বই নেই - অনেকদিনের এই দুঃখ থেকেই লেখাটার শুরু। এই খটমটা বিষয়ের উপর দীর্ঘ লেখা পড়ে বিরক্ত না হলে বাকি সিরিজটা পরে দেওয়া যাবে।
এলাম আমরা কোথা থেকেঃ
ইন্দোনেশিয়ার ছোট্ট দ্বীপ ফ্লোরস (Flores)। এখানকার অধিবাসীরা অন্যান্য সব জাতির মতই কাজ করে, খায় দায়, ফুর্তি করে আর অবসর সময়ে গল্পগুজব করে। এখানকার বুড়োবুড়িরা আমাদের দাদী-নানীদের মতই ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ সাজিয়ে বসে নাতি-নাতনীদের কাছে - হাজার বছরের মুখে মুখে চলে আসা উপকথাগুলোকে বলে যায় তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। কিন্তু এদের ঠাকুরমার ঝুলিগুলো যেন কেমনতর অদ্ভুত! লালকমল-নীলকমল আর দেও-দৈত্য নেই ওতে, আছে কতকগুলো ক্ষুদে বামনদের গল্প। মাত্র এক মিটারের মত লম্বা বেটে লিলিপুটের মত একধরনের মানুষ অনেক অনেকদিন আগে তাদেরই আশে পাশে নাকি বাস করতো, যা সামনে পেতো তাই মুখে দিতো, তাদের ফসল নষ্ট করতো, নিজেদের মধ্যে ফিস ফিস করে কথা বলতো আর যা শুনতো তাই নাকি নকল করার চেষ্টা করতো। এমনি একজন ক্ষুদে বামনের নাম ছিল এবু গোগো (এবু মানে নানী আর গোগো মানে এমন কেউ যে যা সামনে পায় তাই খায়), তাকে খেতে দিলে সে খাওয়ার বাসনটা পর্যন্ত খেয়ে ফেলতো, সুযোগ পেলে নাকি মানুষের মাংসও খেতে দ্বিধা করতো না ১ ......
দ্বীপবাসীদের বলা গল্পগুলো শুনলে মনে হয় যেনো এই সেদিনই তারা সবাই একসাথে বসবাস করতো। নিছক রূপকথা ভেবেই বেঁটে-বাটুলদের গল্পগুলো সবাই উড়িয়ে দিয়েছিলো এতদিন। অবাক এক কান্ড ঘটলো ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে। বিজ্ঞানীরা ফ্লোরস দ্বীপেরই মাটি খুড়ে পেলেন এক মিটার লম্বা এক মানুষের ফসিল-কঙ্কাল; প্রথমে সবাই ভেবেছিলো হয়তো কোন বাচ্চার ফসিল হবে বুঝি এটা। কিন্তু তারপর ঠিক ওটারই কাছাকাছি জায়গায়ই পাওয়া গেলো আরও ছয়টি একই রকমের অর্ধ-ফসিলের কঙ্কাল। বিজ্ঞানীরা আরও পরীক্ষা করে বুঝলেন এগুলো আসলে পূর্ণাংগ মানুষেরই কঙ্কাল, কার্বন ডেটিং থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জানা গেলো, মানুষের এই নব্য আবিষ্কৃত প্রজাতিটি (প্রজাতি হল এমন কিছু জীবের সমষ্টি যারা শুধু নিজেদের মধ্যে প্রজননে সক্ষম, যেমন ধরুন আমরা অর্থাৎ আধুনিক মানুষ বা হোমোসেপিয়েন্স একটি প্রজাতি যারা আর কোন প্রজাতির জীবের সাথে প্রজননে অক্ষম - আরও অন্যান্য প্রজাতির মানুষের ফসিল পাওয়া গেলেও আমরা একটাই প্রজাতি যারা এখনও টিকে আছি) মাত্র ১২,০০০-১৪,০০০ বছর আগেই এই দ্বীপটিতে বসবাস করতো। ১২,০০০ বছর আগে এই দ্বীপে এক ভয়াবহ অগ্নুৎপাত ঘটে, বিজ্ঞানীরা মনে করছেন হয়তো দ্বীপের অন্যান্য অনেক প্রাণীর সাথে এরাও সে সময়ে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিলো। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে তারা আমাদের হোমিনিড (মানুষ এবং নরবানর বা ape manকে Hominid গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়) গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত হলেও তাদের চোয়াল এবং মস্তিষ্কের মাপ আমাদের মত আধুনিক মানুষের মত নয়। উচ্চতায় মাত্র ১ মিটার কিন্তু হাতগুলো অপেক্ষাকৃতভাবে বেশ লম্বাটে যা থেকে মনে হয় তারা তখনও অনেকটা সময় হয়তো গাছে গাছেই কাটাতো। তাদের মাথার মাপ আবার খুবই ছোট - মাত্র ৩৮০ সিসি (কিউবিক সেন্টিমিটার), যেখানে আমাদের বা আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের মাপ হচ্ছে গড়ে প্রায় ১৩৩০ সিসি। এত ছোট মগজ নিয়ে আধুনিক মানুষের মত অস্ত্র বানিয়ে শিকার করে খাবার সংগ্রহের মত বুদ্ধি কি ছিলো তাদের, নাকি গাছের ডালে ঝুলে ঝুলেই তারা সময় কাটাতো বানর আর শিম্পাঞ্জিদের মত? এই প্রশ্নেরও উত্তর মিললো যখন তাদের ফসিলের পাশে ১২,০০০-৯৫,০০০ বছরের পুরনো বেশ কিছু পাথুরে অস্ত্র পাওয়া গেল যা কিনা শুধুমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণীর পক্ষেই বানানো সম্ভব।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন সম্ভবত অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মানুষের আরেকটি প্রজাতি Homo erectus এর একটি দল এই দ্বীপে এসে বসবাস করতে শুরু করে। হাজার হাজার বছর ধরে অত্যন্ত ছোট এই দ্বীপটিতে বিচ্ছিন্নভাবে বাস করার ফলে তারা বিবর্তিত হতে হতে একসময় ভিন্ন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। তাদের ফসিলের আশে পাশে এক ধরনের বামন হাতি এবং কমডো ড্রাগন সহ অন্যান্য বেশ কিছু প্রাণীর ফসিলও পাওয়া গেছে ২।
এই নব্য আবিষ্কৃত ক্ষুদে বামনগুলো (Hobbit) বিজ্ঞানীদেরকে বেশ অবাক করেছে। এদের কারণে মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে তারা আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন । এই যে এতদিন ধরে আমরা ভেবে এসেছি যে সাম্প্রতিক কালে আমরা ছাড়া মানুষের আর কোন প্রজাতি পৃথিবীতে ছিল না - সেটা তো আর তাহলে সত্যি নয়। ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাওয়া নিয়ান্ডারথালদের (Neanderthal) ফসিল দেখে প্রথমে বিজ্ঞানীরা তাদেরকে আমাদের একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, কিন্তু তারপর বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিশেষ করে ডিএনএর পরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে তারাও আসলে আমাদের Homo sapiens প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত নয় ৩। প্রায় ১৫০ থেকে ৩০ হাজার বছর আগে পর্যন্ত তারা একটি ভিন্ন প্রজাতি হিসেবে বিচরণ করেছে পৃথিবীর বুকে। হয়তো আমাদের পূর্বপুরুষেরাই ইউরোপ দখল করে নেওয়ার সময় তাদেরকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে বাধ্য করেছিলো। কিন্তু সে তো হল ৩০-৪০ হাজার বছর আগের কথা, তারপর তো মানুষের আর কোন প্রজাতির সাথে আমাদেরকে এই পৃথিবী ভাগ করে নিতে হয়নি! কিন্তু এই বামন মানুষদের এতো সাম্প্রতিক কালে টিকে থাকার প্রমাণ মেলার পর বিজ্ঞানীরা ভাবতে শুরু করেছেন তাহলে হয়তো আরও কাছাকাছি সময়েও মানুষের একাধিক প্রজাতি টিকে ছিলো ৩। বানর, বিড়াল, কুকুর বা অন্যান্য প্রাণীর মত মানুষেরও আরও প্রজাতি ছিলো, ভাবতেও অবাক লাগে এই পৃথিবীর বুকে প্রায় আমাদের মতই দেখতে একাধিক প্রাণী হেটে বেড়িয়েছে একই সাথে। শুধু তাই তো নয়, জীববিজ্ঞান, অনুজীববিজ্ঞান সহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অভুতপুর্ব উন্নতির ফলে বিজ্ঞানীরা মানুষের পূর্বসুরী প্রজাতিগুলোকেও সনাক্ত করতে পেরেছেন, তারা আজকে সুদৃ•ভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন যে এক ধরনের নর বানর বা এপ থেকে আসলে মানুষের বিবর্তন ঘটেছে, এদের সাথে আমাদের ডি.এন.এর প্রায় ৯৮.৬% মিল রয়েছে।
এ তো গেলো আমদের নিজেদের কথা, এবার চোখ ফিরানো যাক আমাদের প্রিয় বাসভুমির দিকে। আমাদের মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটেছিল প্রায় ১৩-১৫ শ কোটি বছর আগে, আর পৃথিবীসহ আমাদের সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের উৎপত্তি ঘটে সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে। তারপর আরও একশ কোটি বছর লেগেছে আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহটির মহাপ্রলয়ঙ্করী উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরির মত অবস্হা থেকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে প্রাণের উৎপত্তির জন্য উপযুক্ত একটা পরিবেশ তৈরী করতে। এখন পর্যন্ত পাওয়া সব বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্য প্রমাণ অনুযায়ী বলা যায় পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি হতে শুরু করেছে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি বছর আগে। আমরা আজকে আমাদের চারপাশে প্রাণ বলতে যা বুঝি বা দেখি তার সাথে সেই আদিমতম প্রাণের কিন্তু কোন মিলই ছিল না - প্রাণ বলতে ছিল অতি সরল আনুবীক্ষণিক এবং আদিম একধরনের অকোষীয় জীবন। গঠনের দিক থেকে এরা আজকের দিনের ব্যাকটেরিয়ার থেকেও অনেক বেশী সাধারণ এবং সরল। দেখতে যেমনই বা যত আনুবীক্ষনিকই হোক না কেন এদেরকে জীবন্ত বলে স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া কোন উপায়ও নেই! এরা তো জীবের মৌলিক দুটো বৈশিষ্ট্যই ধারণ করে যা কোন জড় পদার্থের মধ্যে থাকা সম্ভব নয় - এরা একদিকে যেমন বাইরের পরিবেশ থেকে সক্রিয়ভাবে শক্তি সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে, বড় হয় এবং বদলায়, তেমনিভাবে আবার বংশবৃদ্ধি করে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধিও করতে পারে। আর সাড়ে তিন’শ কোটি বছর আগে এই আদিম এবং সরলতম জীবগুলো থেকেই শুরু প্রাণের বিকাশ এবং বির্বতনের ইতিহাস। কোটি কোটি বছর ধরে ঘটে আসা বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সরলতম এক কোষী প্রাণ থেকেই উদ্ভব ঘটেছে আমাদের চারপাশের মানুষ সহ অন্যান্য সব জীবের।
বিবর্তনের এই দীর্ঘ ইতিহাসের বইয়ের কোন পাতায় তাহলে মানুষের দেখা মিললো? এক্কেবারে শেষের দিকের পাতায় এসে আমরা খুঁজে পাই মানুষ নামের আমাদের এই আধুনিক প্রজাতিটির এবং তার পূর্বপুরুষদের সন্ধান। ৪০-৮০ লাখ বছর আগে এক ধরনের বানর প্রজাতি দুই পায়ের উপর ভর করে দাঁড়াতে শিখলেও তার থেকে আমাদের অর্থাৎ আধুনিক মানুষের উদ্ভব ঘটেছে মাত্র এক লাখ বছর আগে। ভূতাত্ত্বিক নিয়মে হিসাব করলে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বের ব্যাপারটা এক্কেবারে আনকোরা। ধরা যাক, পৃথিবীর বয়স একদিন বা ২৪ ঘন্টা, তা হলে মানুষ নামের এই তথাকথিত ‘সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিটির’ জন্ম হয়েছে ২৪ ঘন্টা ফুরানোর মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে!
তাহলে এখন স্বভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন আসে, এই যে ছোটবেলা থেকে আমাদের মুরুব্বী, প্রচারযন্ত্র, ধর্ম্প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের উৎপত্তি নিয়ে যে সব গাল-গপ্প শিখিয়ে এলো তার সাথে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত আমাদের উৎপত্তি এবং বিবর্তনের তত্ত্বের কোন মিল নেই কেনো? কারণ, ক’দিন আগেও মহাবিশ্ব বা প্রাণের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তা বোঝার জন্য যে বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ প্রয়োজন তা মানুষের জানা ছিলো না, ছিল না কোটি কোটি বছরের ইতিহাসকে বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা। কিন্তু নিজের ‘সৃষ্টি-রহস্য’ নিয়ে কৌতুহলের তো কোন অন্ত ছিল না সেই সময়ের আদি থেকেই। তাই এই ‘সৃষ্টি-রহস্য’ নিয়ে প্রত্যেক জাতির মধ্যে সেই প্রাচীন কাল থেকেই রচনা করা হয়েছে নানা ধরনের কল্প-কাহিনী, ইংরেজীতে যেগুলোকে বলে ‘ময়তড’। ধর্মগ্রন্থগুলোসহ বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতাগুলো প্রত্যেকে তাদের তদানীন্তন স্হানীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস, সময় এবং জ্ঞানের স্তর অনুযায়ী একেক ধরনের গল্পের অবতারণা করেছে। হিন্দু পুরাণ বলছে, মহাপ্রলয়ের শেষে এই জগত যখন অন্ধকারময় ছিল, তখন বিরাট মহাপুরুষ পরম ব্রক্ষ্ম নিজের তেজে সেই অন্ধকার দূর করে জলের সৃষ্টি করেন, সেই জলে সৃষ্টির বীজ নিক্ষিপ্ত হয়। তখন ওই বীজ সুবর্ণময় অন্ডে পরিণত হয়। অন্ড মধ্যে ওই বিরাট মহাপুরুষ স্বয়ং ব্রক্ষ্মা হয়ে অবস্থান নিতে থেকেন। তার পর ওটিকে বিভক্ত করে আকাশ ও ভূমন্ডল আর পরবর্তীতে প্রাণ সৃষ্টি করেন। বাইবেল এবং কোরাণ বলছে, সৃষ্টিকর্তা ছয় দিনে এই বিশ্বব্রক্ষ্মা¨ তৈরী করেছিলেন। বাইবেলের (জেনেসিস) ধারণা অনুযায়ী ছয়দিনের প্রথম দিনটিতেই ঈশ্বর আমাদের এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেন। এর তিনদিন পর তিনি সূর্য, চন্দ্র আর তারকারাজির সৃষ্টি করেন - আর এ সব কিছুই তিনি তৈরী করেছিলেন মাত্র ছ’হাজার বছর আগে। আবার প্রাচীন চৈনিক একটি কাহিনী থেকে আমরা জানতে পারি, এই বিশ্বব্রক্ষ্মা¨ সৃষ্টির শুরুতে একটা কালো ডিমের মত ছিল। প্যান গু নামের একজন দেবতা তাঁর কুড়ালের কোপে ডিমটিকে দ্বিখন্ডিত করেন এবং মহাবিশ্বকে প্রসারিত হবার সুযোগ করে দেন। প্যান গুর শরীরের মাছি আর উকুন থেকেই নাকি পরবর্তীতে মানব সভ্যতার জন্ম হয়েছে। আবার আ্যাপাচি মিথ অনুযায়ী, সৃষ্টির শুরুতে আসলে কিছুই ছিল না - না ছিল এই পৃথিবী, আকাশ কিংবা কোন সূর্য -চন্দ্র-তারা। এই তমসাচ্ছন্ন নিকষ অন্ধকার থেকে হঠাৎ করেই একটি পাতলা চাকতির অভ্যুদয় ঘটে, যেখানে আসীন ছিলেন এক ‘দাঁড়ি ওয়ালা ভদ্রলোক’ - যিনি এ জগতের মালিক, আমাদের বিশ্বপিতা! তিনিই নিজের ইচ্ছায় জগৎ থেকে শুরু করে প্রাণ পর্যন্ত সব কিছুই সৃষ্টি করেন ......মানুষের উৎপত্তি নিয়ে এমনতর হাজারো গল্পের সন্ধান পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় এবং ধর্মগ্রন্থে ৯।
আসলে আঠারো শতকের শেষভাগ থেকেই মানুষ বুঝতে শুরু করে এই কল্পকাহিনীগুলো নিয়ে পড়ে থাকলে আর চলবে না, কারণ বৈজ্ঞানিকভাবে পাওয়া তথ্য-প্রমাণগুলো ইতিমধ্যেই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে শুরু করেছে যে, মহাবিশ্বের অন্য সব কিছুর মতই আমাদের এই পৃথিবীও ক্রমাগতভাবে পরিবর্তিত হতে হতে অবশেষে আজকের জায়গায় এসে পৌছেছে। এই কোটি কোটি বছরের ইতিহাস হচ্ছে ছোট, বড়, ধীর, ক্রমাগত থেকে শুরু করে অত্যন্ত নাটকীয় এবং অকস্মাৎভাবে ঘটা পরিবর্তন, বিকাশ আর বিবর্তনের ইতিহাস, যা আসলে আজও আমাদের চারপাশে ঘটে চলেছে অনবরত। পৃথিবীর মাটির বিভিন্ন স্তরে জমে থাকা বিভিন্ন প্রাণী এবং উদ্ভিদের ফসিল থেকে আমরা এই পরিবর্তনের নিদর্শন দেখতে পাই। জীবের ডিএনএ বিশ্লেষণ করেও পাওয়া যাচ্ছে একই তথ্য। মানুষসহ পৃথিবীতে অন্যান্য প্রাণের উৎপত্তি, অস্তিত্ব, টিকে থাকার ইতিহাস বুঝতে হলে এই সুদীর্ঘ পরিবর্তনের ইতিহাসকে বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝতে হবে; অজ্ঞতা, কুসংস্কার, প্রাচীন এবং অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভংগী ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে পৃথিবীকে বিশ্লেষণ করতে শিখতে হবে।
কিন্তু এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কেনোই বা আমাদের বিবর্তন সম্পর্কে জানতে হবে, এর খুঁটিনাটি বুঝতে হবে? দিব্যি তো দিন চলে যাচ্ছে এসব তত্ত্বকথা না জেনেই। একটু খেয়াল করে আশেপাশে তাকালেই দেখা যাবে যে, বিবর্তনের তত্ত্ব ছাড়া আজকে আমাদের চারপাশের অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না, অনেক সহজ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। যেমন ধরুন, ডাক্তাররা কেনো বারবার করে রোগীকে তার আ্যন্টিবায়োটিকের পুড়ো ডোজটা শেষ করতে বলে দেন? আমাদের সাথে ঐ বেচারী ইঁদুরগুলোর কিইবা মিল রয়েছে যে, বিজ্ঞানীরা মানুষের উপর নতুন কোন ওষুধ প্রয়োগ করার আগে তাদের উপর পরীক্ষা করে নেন? কিংবা আমাদের চারপাশে এত্ত ধরনের প্রাণের সামহার কেনো, তাদের দরকারটাই বা কি ছিলো? পৃথিবীর একেক জায়গায় কেনো একেক রকমের প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়? আমরাই বা এলাম কোথা থেকে? কেনো একেক জায়গার মানুষ দেখতে একেক রকম হল?.......
বিবর্তনবাদ তত্ত্বের মাধ্যমে আজকে আমরা আমাদের চারপাশের জীবন এবং প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর পেতে পারি। আমাদের চারপাশের জীবের মধ্যে এত বৈচিত্র দেখা যায় কেনো, এমনকি একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষের কেনো এত পার্থক্য? বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই আসলে প্রকৃতিতে একেকটা জীবের একেক রকম বৈশিষ্ট্যের বিবর্তন ঘটে, এর ফলশ্রুতিতেই তারা একেকজন একেক পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে খাবার এবং শক্তি জোগার করে টিকে থাকতে সক্ষম হয়। যেমন- মানুষের কথাই ধরা যাক, সব মানুষ একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হলেও তাদের মধ্যে পার্থক্যের কোন শেষ নেই। একেক এলাকার মানুষের মধ্যে একেরকমের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী যে পার্থক্যটা চোখে পড়ে তা হচ্ছে মানুষের গায়ের রং। কালো রং এর গায়ের মানুষের সূর্যের তাপ থেকে নিজের চামড়াকে রক্ষা করার ক্ষমতা অনেক বেশী থাকে। তাই আমরা সাধারণভাবে দেখতে পাই যে, শীতের দেশের মানুষের চামড়া অনেক বেশী সাদা আর গরম দেশের মানুষের গায়ের রং কালো হয়। অবশ্য ইতিহাসের পরিক্রমায় মানুষ তার জীবন আর জীবিকার তাগিদে এতবার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে যে এখন সব জায়গায় এই পার্থক্য আর এত সুক্ষ্মভাবে নাও দেখা যেতে পারে। ব্রিটিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন যে বিভিন্ন প্রজাতির ফিঙ্গে (টনিচড) দেখে খুব অবাক হয়েছিলেন তাদের কথাই ধরি।
গ্যালাপ্যাগাস দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন দ্বীপে তিনি বিভিন্ন রকমের ঠোঁটওয়ালা ফিঙ্গে দেখতে পান, ভালো করে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, সময়ের সাথে সাথে খাবারের প্রকৃতি অনুযায়ী তাদের ঠোটের আকারও বদলে গেছে। অতীতে এক সময় সব রকমের ফিঙ্গেই একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত ছিলো, সময়ের সাথে সাথে বিবর্তনের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এরকম ১৪ ধরনের ফিঙ্গের প্রজাতি খুঁজে পেয়েছেন।
আবার ঠিক উলটোভাবে দেখা যায় যে বিভিন্ন প্রাণীর বৈশিষ্ট্য এবং জিনের গঠনের মধ্যে অকল্পনীয় রকমের মিল দেখা যাচ্ছে ৪। যেমন ধরুন, মানুষের হাতের হাড় আর এত অন্যরকম দেখতে একটা তিমি মাছের সামনের পাখার হাড় প্রায় একইরকম। আবার, জন্মপূর্ববর্তি ভ্রূণাবস্থায় বিভিন্ন প্রাণীর বাচ্চাদের দেখতে আনেকটা একইরকম দেখায়। শিম্পাঞ্জীদের সাথে আমাদের ডি এন এ প্রায় ৯৮.৬%, ওরাং ওটাং এর সাথে ৯৭ % ৫, আর ইঁদুরের সাথে ৮৫% ৬ মিলে যাচ্ছে। এ কারণেই ইঁদুর বা অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে বিভিন্ন ওষুধের বা চিকিৎসার প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে তা পরবর্তীতে আবার মানুষের দেখে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়। আর এসব সাদৃশ্যের পিছনে কারণ একটাই, পৃথিবীর সব প্রাণীই একই আদি জীব বা পূর্বপুরুষ থেকে কোটি কোটি বছরের বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপত্তি হয়েছে। যে জীব যত পরে আরেক জীব থেকে বিবর্তিত হয়ে অন্য প্রজাতি বা জীবে পরিণত হয়েছে তার সাথে ঐ জীবের ততই বেশী মিল খুজে পাওয়া যায়।
বিবর্তনের প্রক্রিয়া থেকে আমরা চারপাশের পরিবেশ, প্রকৃতি এবং তার গঠন সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণাও পাই। বিবর্তনের মাধ্যমে যেমন অহরহ জীবের পরিবর্তন ঘটছে আবার তারই ফলশ্রুতিতে পরিবর্তন ঘটে চলেছে আমাদের পারিপার্শ্বিকতারও। এর একটা মজার উদাহরণ হচ্ছে পৃথিবীর বাতাসে অক্সিজেনের আবির্ভাব। আমাদের তো উদ্ভবই ঘটতো না বাতাসে অক্সিজেন না থাকলে! অবাক লাগে ভাবতে যে আদি পৃথিবীর বাতাসে মুক্ত অক্সিজেনের কোন অস্তিতই্ব ছিলো না। প্রায় আড়াইশো কোটি বছর আগে সালোক সংশ্লেষণকারি উদ্ভিদের বিবর্তন ঘটে যারা পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং পানি গ্রহন করে খাদ্য তৈরী করতে শুরু করে এবং বিনিময়ে পরিবেশে মুক্ত অক্সিজেন ছেড়ে দিতে শুরু করে। তার ফলেই আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের আবির্ভাব ঘটতে শুরু করে। এই যে আমরা আমাদের চারপাশে মানুষসহ অক্সিজেন গ্রহণকাারী সব প্রাণী দেখছি, তাদের সবারই বিবর্তন ঘটেছে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ছড়িয়ে পরার পর।
জীবের বিবর্তন না বুঝলে আজকে চিকিৎসাবিদ্যা, কৃষিবিদ্যার বিভিন্ন আবিষ্কার অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতো। বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলো কিভাবে ওষুধ প্রয়োগের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়ে আরও শক্তিশালী এবং পরিবর্তিত রূপ ধারণ করতে পারে তা না বুঝলে আজকে ওষুধ কোম্পানীগুলোকে ঠিক অসুখের জন্য ঠিক ওষুধটা তৈরী করাই বন্ধ করে দিতে হবে। আজকে ডাক্তাররা অ্যন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ প্রয়োগ বন্ধ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন, কারণ আমাদের শরীরে রোগ সারাতে যত বেশী অ্যন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হচ্ছে ততই ব্যাকটেরিয়াগুলো তাতে খাপ খাইয়ে নিয়ে পরিবর্তিত হতে হতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। একই ব্যাপার ঘটতে দেখা যায় জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করার সময়েও। কদিন আগে আমেরিকার একটা স্টেটের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, ইদানীং কালে সেখানকার হাসপাতালগুলো থেকেই অনেক বেশী রোগী জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে, অর্থাৎ তারা আসে এক রোগের চিকিৎসা করাতে আর ঘরে ফিরে যায় হাসপাতাল থেকে পাওয়া অন্য রোগের জীবাণু শরীরে নিয়ে। এর থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার রোগী মারাও যাচ্ছে। ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রচলিত অ্যন্টিবায়োটিকে অভ্যস্ত হয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে নিজেদেরকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে, আর তার ফলে হাসপাতালগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে অসংখ্য শক্তিশালী জীবাণু যাদেরকে নিরোধ করতে ডাক্তাররা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন।
বিবর্তনের ধারনা জানার এবং বোঝার আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ কারণ রয়েছে। বিবর্তনবাদ আমাদের সময়ের এমনই একটি শক্তিশালী তত্ত্ব যে এর বিস্তৃতি শুধু বৈজ্ঞানিক বা টেকনিকাল জগতেই নয় বরং সামাজিকভাবেও এর গুরুত্ত্ব অপরিসীম। সমাজের বেশীর ভাগ মানুষ, বিশেষ করে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় অংশ, এর কথা শুনলেই আঁতকে ওঠেন, কারণ এটা আমাদের প্রচলিত পুরানো, অবৈজ্ঞানিক এবং ধর্মীয় ধারণাগুলোকে সমর্থন করে না। বিবর্তনবাদকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে শেখার মাধ্যমে আমরা নিজেরা যেমন আমাদের চারদিকের প্রকৃতি এবং পরিবেশকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করতে শিখবো, তেমনিভাবে বুঝতে এবং অন্যদেরকে বুঝাতে পারবো বৈজ্ঞানিক চিন্তা এবং সমাজে হাজার হাজার বছর ধরে টিকে থাকা বহু স্থবির চিন্তাধারার মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়। বিবর্তনবাদ বলে প্রকৃতি প্রতিনিয়ত বিবর্তিত হচ্ছে, পরিবর্তনই জগতের মূল নিয়ম, নতুনকে, পরিবর্তনকে সাদরে অভ্যর্থনা জানানোই প্রকৃতির রীতি। সব কিছুই ঘটছে আমাদের চোখেরই সামনে কখনো খুবই ধীরে, কখনও বা আকস্মিকভাবে খুব দ্রুত গতিতে। পরিবর্তন ঘটছেই; বাইরের কোন ঐশ্বরিক শক্তি এসে যেমন আমাদের কোন কিছু বদলে দিয়ে যাচ্ছে না, তেমনি পরলৌকিক পুরষ্কারের জন্যও হা-পিত্যেশ করে বসে থাকার কোন কারণ নেই। দর্শনের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় যে আমরা আসলে নিজেদের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং সংগ্রামের মাধ্যমেই পরিবর্তিত হতে হতে প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে।
তাই এই বিবর্তন তত্ত্বকে বিজ্ঞানের ইতিহাসে গুটিকয়েক যে বড় বড় ঘটনা ঘটেছে তার একটি বলে ধরে নেওয়া হয়। পদার্থবিদ ভিকটর স্টেঙ্গার যেমন বলেছেন,
‘ ..... তবে গত পাঁচ শতাব্দীতে অন্ততপক্ষে দুটি বৈজ্ঞানিক আবিস্কারকে বড় paradigm shift হিসাবে চিহ্নিত করা যায় ; (১) ষোড়শ শতাব্দীতে কোপার্নিকাসের আবিস্কৃত সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব- পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে এবং (২) উনবিংশ শতাব্দীতে (১৮৫৯ সাল) চার্লস ডারউইন এবং অ্যালফ্রেড রাসেল ওয়ালেসের প্রস্তাবিত তত্ত্ব - প্রাকৃতিক নির্বাচনের (Natural Selection) মাধ্যমে জীবজগতের বিবর্তন। এই দুটি আবিস্কার শুধু যে মানুষের চিন্তাধারাকে এক নতুন স্তরে উন্নীত করতে সাহায্য করেছিল তাই নয়, সেগুলো তখনকার প্রাচীন এবং গভীরভাবে সুরক্ষিত চিন্তাপদ্ধতিকে সরিয়ে দিয়ে পুরানো ধারণাগুলোর উপরও আধিপত্যও বিস্তার করে নিয়েছিল। এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, তত্ত্ব দুটোই পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোর প্রাচীন চিন্তাগুলোকে অত্যন্ত প্রবলভাবে আঘাত করেছিলো - যে গুলোকে মানুষ এতদিন ধরে সৃষ্টিকর্তার অভ্রান্ত বাণী হিসেবে বিশ্বাস করতো ৭।’
তথ্যসূত্রঃ
1. Villagers speak of the small, hairy Ebu Gogo, 2004,
2. Q&A : Indonesian hominid find, BBC News, 2004,
Flores Man, Nature online news,
'Hobbit' joins human family tree, BBC News,
Moris D, Eton or the zoo? BBC News, 2004,
3. Rincon P, Neanderthals not close family, BBC News, 2004,
4. The National Academies Press (NAP), Teaching about Evolution and the Nature Of Science,
5. Stringer, C and Andrews P, 2005, The Complete World of Human Evolution. Thames and Hudson, New York, USA.
7 Stenger, VJ, 2003, Has Science Found God? The Latest Results in the Search for Purpose in the Universe, Prometheus Books, New York, USA
8. Dawkins R, Darwin and Darwinism, Mukto-Mona Darwin Day celebration,
9 রায় অ, ২০০৫, আইডি নিয়ে কুটকচালি, পড়শী মাসিক পত্রিকা (মুক্ত-মনায় পুনঃপ্রকাশিত)
মন্তব্য
লেখাটা পোষ্ট করার পর এত নিচে নেমে গেল বুঝলাম না, কোনভাবেই ঠিক করতে পারলাম না। সম্পাদকেরা কেউ কি একটু ঠিক করে দেবেন?
আপনার ছেলেবেলার গল্প পড়লাম। খুব ভালো লাগল।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
হুমম ... আমার মনে হয় সচলায়তনের এখন বিজ্ঞানের উপর একটা সংকলন করার সময় এসেছে।
============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
বই সম্পাদনা অর্পিত হইল। করেন চালু একটা বই।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
কিন্তু এই অর্পিত ক্ষমতা ব্যাবহার করে ক্যামনে? ক্ষমতা পেয়ে ত কোন হের ফের দেখতে পাচ্ছি না।
আর বাই দা ওয়ে, বন্যার মত আমিও কিন্তু লেখাটা আধা বিঘত নীচ থেকে শুরু হয়েছে দেখছি। পুরো স্ক্রিন জুরে প্রথমেই সাদা পেইজ। তারপর লেখা শুরু। আমি অবশ্য ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে দেখতেছি। ফায়ারফক্সের খবর জানি না।
==============
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
স্বাগতম বন্যাদি।
পুরোটা পড়িনি, এবু গোগো নিয়ে জানা ছিল বলে আর উৎসাহ পাইনি। তবে দারুন তথ্য সমৃদ্ধ বলে, একবার সময় করে পড়ে নিবো। এবিষয়ে উৎস নামে একজন লিখতেন আগে - তাকে খুব মিস করছি।
লেখা নেমে যাবার ব্যাপার বুঝলাম না। কন্টেন্ট বড় বলে এমনিতেই অনেক লম্বা দেখাবে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
লেখাটার উপরে অনেক খানি স্পেস দেখা যাচ্ছে। আমি কি একাই সেটআ দেখছি? অনেক গুতাগুতি করেও সরাতে পারলাম না।
আমি কোন স্পেস দেখছি না!! একটা স্ক্রীন শট পাঠাবেন কাইন্ডলী?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
স্পেস আমিও দেখতে পাচ্ছি। ফায়ারফক্সে দেখাচ্ছে না।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
- এক্সপি সার্ভিস প্যাক ১-এ আই ই ৬ ব্যবহার করলে ঐ স্পেসটা অনেক সময় আসে। আই ই আপডেট করে নিলেই ঠিক হয়ে যায়।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লেখাগুলো ভাগ ভাগ করে সিরিজ আকারে দিলে কেমন হয়। এক সাথে এতবড় লেখা পড়তে হয়তো অনেকের সময় থাকে না।
বিবর্তন নিয়ে আপনার লেখাটি সাগ্রহে পড়লাম।
সচলে বিবর্তন নিয়ে কিছু লেখা লিখেছেন উৎস ভাই, যিনি এখন ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে লিখছেন না, তবে আশা করছি শিগগীরই আবার লেখা শুরু করবেন।
হাঁটুপানির জলদস্যু
লেখাটা ভালো লাগলো।
বিবলিওগ্রাফিটা সংগ্রহে রাখলাম। আমার দৌড় ছিল নেসতুর্খ পর্যন্ত। রেঞ্জ বাড়াতে হবে ।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
ধন্যবাদ সবাইকে মন্তব্যের জন্য। ব্লগে আমার প্রথম লেখা বলে বুঝতে পারছিলাম না কত বড় হলে ঠিক হয়। আসলেই এত লম্বা লেখা এক পাতায় পড়া বিরক্তিকর। এর পরের অংশগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে ছোট করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
বন্যাদি স্বাগতম।
পড়ে খুবই ভাল লাগলো। সহজ কথায় খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। ...
দীর্ঘ লেখা তো, তাই এটি কয়েকটি পর্বে ভাগ করে অথবা সাব-হেড দিয়ে লিখলে অন-লাইন পাঠকের চোখের আরাম হবে।
আপনি আরো লিখুন; এগিয়ে যান!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
লেখনী সুন্দর হলে বড় লেখা পড়তে আমার তো কোন সমস্যা হয় না। বরং দুই-তিন খন্ড দেখলেই বিরক্ত লাগে।
বন্যা আপনার লেখা একটানেই শেষ করলাম। খুব ভাল লেগেছে। বিষয় গুলো আগে থেকেই জানা ছিল, তবে সিরিজের প্রথম লেখা একটু জেনারেল হলেই ভাল।
এ বিষয়ে আপনার পরবর্তি লেখা গুলোতে আরো গভীরে যাবেন নিশ্চই? পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
ব্লগস্পট | অর্কুট | ফেসবুক | ইমেইল
অমিত এবং বিপ্লবকে ধন্যবাদ (অন্যদের বোধ আগেই দিয়েছিলাম)। হ্যা, বিবর্তন নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে অনেক কিছুই লিখছিলাম গত বছর, সেগুলোকেই আস্তে আস্তে এখানে দেওয়ার কথা চিন্তা করছিলাম। কিছু মন্তব্য পড়ে তো ভাবলাম বোধ হয় পাঠকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাচ্ছি। বুঝতে পারছিলাম না আরও গভীরে ঢোকা ঠিক হবে কিনা। আপনারা অভয় যখন দিলেন তখন এর পরের অংশগুলো ধীরে ধীরে পোষ্ট, ওহ না, ব্লগ করবোঃ)।
আপনি কি এই মেজরে গবেষণা করছেন ,,, তাহলে একটা প্রশ্ন ছিল ,,,,হয়ত একটা রিসার্চের টপিক হয়ে যেতেও পারে ,,,,অথবা হয়ত অলরেডি রেজাল্টটা জানা ,,,,ইউনিভার্সিটি ফোর্থ ইয়ার থেকে একটা ব্যাপার মাথার ভেতর খচখচ করছে ,,,
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
জ্বিনের বাদশা, (আপনার আইডিটা কিন্তু অপূর্ব, যতবারই দেখি ততবারই একবার হাসি) আমি এ বিষয়ে কোন পণ্ডিত নই, মেজরও করছিনা। একাডেমিক লেখাপড়ার পাট চুকে গেছে অনেক আগে। আন্ডারগ্র্যাড করতে শুরু করেছিলাম কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটা বিশেষ শাখায়, বায়োটেকনলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ কনসেন্ট্রেসন এ। কিন্তু ৪র্থ ইয়ারে এসে, চাকরি যদি না পাই এই ভয়ে, কম্পিউটার সাইন্সে মুভ করে গেছিলাম। তবে এ বিষয়ে আমার আগ্রহ বহুকালের, সেই ছোটবেলা থেকেই... তাই গতবছর, বাংলায় এ বিষয়ে তেমন কোন ভালো বই নেই এই দুঃখ থেকে, সাম্প্রতিক গবেষনাগুলোকে তুলে ধরে এর উপর একটা বইই লিখে ফেলেছিলাম, যেটা এবছরের বই মেলায় বের হয়েছে। বাংলাদেশের বিবর্তন বিষয়ে এক্সপার্ট কয়েকজন শিক্ষক (প্রফেসর দ্বিজেন শর্মা, ডঃ আখতারুজ্জামান , নামের সাথে তাদের লেখাগুলোর লিঙ্ক দিলাম, ইচ্ছা করলে দেখতে পারেন, ) বইটির রিভিউ করেছেন। আমার এই লেখাগুলো সেই বইয়েরই অংশ। প্রশ্নটা করতে পারেন, যদি সাধ্যে কুলায় জবাব দেব, তবে বেশি গবেষনাভিত্তিক হলে নাও জানতে পারি।
ধন্যবাদ বন্যা ....জ্বিনের বাদশার জন্য নজরুলকে ধন্যবাদ দিতে হবে
আচ্ছা যে প্রশ্ন জেগেছে .... আমি নিজেও এই লাইনে এক্সপার্টনা তো তাই কিছু খটকা আর কি
একটু ভুমিকা দরকার
এই যে আমরা দেখি, আলো আমাদের চোখে পড়ে, এই ব্যাপারটা পুরোটাই হলো আমাদের শরীরের একটা অংগ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ কে ক্যাচ করছে, তারপর নিজের মতো করে বুঝে নিচ্ছে ,,,আলো বলে আসলে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভের চেয়ে আলাদা কিছু নেই ,,,ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেক্ট্রামেরই একটা অতিক্ষুদ্র অংশকে আমরা আলো বলি ,,,ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের অন্যান্য অংশগুলোতে আছে কসমিক রে, গামা রে, এক্স রে, ইউভি, আইআর, মাইক্রোওয়েভ, রেডিও সিগন্যাল ...এসব
এদের যেকোন স্পেক্ট্রামের ওয়েভকেই ইমেজ হিসেবে দেখা যায় ...একসেন্সে বলা যায় যে আমাদের ভিজিবল লাইটের স্পেক্ট্রাম যদি এখন যা তার চেয়ে বেশী হতো, তাহলে হয়ত আমরা সবকিছু দেখতাম অন্যরকম, সুন্দরকে অসুন্দর মনে হতো; আবার অসুন্দরকে সুন্দর,,,
এখন প্রথম প্রশ্ন যেটা এসে যায়, তা হলো,
১. আমাদের শরীরে শুধু বর্তমানে যে ভিজিবল লাইট সেই স্পেক্ট্রামের ইএমওয়েভ ক্যাচ করার ডিভাইস বিবর্তিত হলো কেন? কেন আমাদের এক্সরে বা রেডিওওয়েভ ক্যাচ করার ক্ষমতা হলোনা?
এই প্রশ্নের একটা জবাব হতে পারে, ভিজিবল লাইটের স্প্রেকটামে বাতাস রংহীন , কিন্তু সেখানে প্রশ্ন থাকে,
২. এক্সরে/গামারে/কসমিক রে স্পেক্ট্রামেও বাতাস রংহীন
আরেকটা জবাব হতে পারে দিনের বেলা যে সূর্য্যের আলো তাতে ভিজিবল লাইটের পরিমাণ বেশী, কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন
৩. দিনরাত সারাদিনই অন্যন্য মাইক্রোওয়েভও প্রচুর পরিমাণে বিরাজ করে বায়ুমন্ডলে
৪. দিনের সুর্য্যের আলোর জন্য যদি ভিজিবল লাইটের উপযোগী চোখ তৈরী হয়, তাহলে রাতে সেই স্পেক্ট্রামের ইএমওয়েভ যখন থাকেনা, তখন অন্য যে স্পেক্ট্রামের ইএমওয়েভ থাকে সেটা ক্যাচ করার জন্য অর্গান তৈরী হলোনা কেন? দিন-রাতের দৈর্ঘ্য সৃষ্টির শুরুতে অনেক ফারাক ছিল, দিনের পরিমাণ কি অনেক বেশী ছিল?
উপরের ১,২,৩,৪ প্রশ্নগুলোর সাথে যেটা জুড়ে দেয়া যায়, তা হলো,
পানির নীচে যেসব প্রাণী থাকে তাদের ভিজুয়াল এবিলিটির ইএমওয়েভের স্পেক্ট্রাম কি? সেটা ভাঙার প্রাণীর মতো হবার কথা না কারণ, আমাদের ভিজ্যুয়াল স্পেক্ট্রামে পানির একটু পুরুস্তর আর স্বচ্ছ থাকেনা। এটা জীববিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় হতে পারে (হয়ত গবেষণা হচ্ছেও)
তবে উপরের সবপ্রশ্নকে ওভারলুক করে, যাকবাবা কোনভাবে হয়েছে বলে মেনে নাও বললেও একটা ঝামেলা থেকে যায় ....
তা হলো
বিবর্তনের বেসিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী,
যখন চোখ প্রথম জীবদেহে বিবর্তিত হলো তখন এই ডিভাইসটা সব ইএমওয়েভই ক্যাপচার করত ধারনা করা যায় ...তারপর বিবর্তনের ধারায় সে আস্তে আস্তে অপ্রয়োজনীয় (যদিও আমি মনে করিনা অপ্রয়োজনীয়) বা কনভিনিয়েন্ট না এমন ওয়েভগুলোকে যাতে ক্যাপাচার বা প্রসেস না করতে হয় সেভাবে বিবর্তিত হলো। এখন, ইএম ওয়েভের স্পেক্ট্রামের দৈর্ঘ্য হলো একশ কোটি কোটি A। আর, আমাদের ভিজিবল স্পেক্ট্রামের দৈর্ঘ্য অড়েগড়ে ৫০০০ A। তারমানে, টোটাল স্পেক্ট্রামের ২লক্ষ কোটি ভাগের একভাগ।
৬. ২লক্ষ কোটি ভাগের একভাগ --এত ছোট একটা ব্যান্ডউইডথে যদি পিওর ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে ন্যারো-ডাউন করতে হয়, তাহলে জীবের বিবর্তনের টাইমফ্রেম কি সেটাকে সাপোর্ট করে?
***********************************
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
যাক বাচা গেল, আপনার প্রশ্নটা দেখতে শুনতে বেশ মোটা সোটা কঠিন হলেও এর উত্তরটা বোধ হয় বেশ সোজা। আমার 'মসজিদ পর্যন্ত দৌড়' নিয়েই বোধ হয় এ যাত্রা উতরে যেতে পারবো। হিমুকে ধন্যবাদ ইতোমধ্যেই উত্তর দেওয়ার জন্য। আপনি এক্কেবারে বিবর্তনবাদের মূলে হিট করেছেন, এটা বিবর্তনবাদের এক্কেবারে বেসিক একটা ব্যাপার। সত্যি কথা বলতে কি, ডারউইন নিজেও এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছিলেন। মেন্ডেলের আবিষ্কারের পরে জেনেটিক্স সহ আধুনিক জীববিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে ধীরে ধীরে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে ওঠে। বিবর্তন কারও 'জন্য', কোন 'কারণে', 'প্রয়োজনে' বা 'কোনটা ভালো হবে' সেই টার্গেট করে ঘটে না। ডকিন্সের ভাষায়, 'আমাদের চারপাশে র বিশ্বজগতে বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলো দেখলেই বোঝা যায় এর মধ্যে কোন পরিকল্পনা নেই, উদ্দেশ্য নেই, নেই কোন অশুভ কিংবা শুভের অস্তিত্ব; আসলে অন্ধ, করুনাহীন উদাসীনতা ছাড়া এখানে আর কিছুই চোখে পড়ে না'। আপনি যে অ্যঙ্গেল থেকে প্রশ্নটা করেছেন সেটা আসলে ল্যমার্কীয় মতবাদের মধ্যে পড়ে। ল্যমার্কের সেই বিখ্যাত জিরাফের উদাহরণটার কথাই ধরা যাক। ল্যামার্কীয় দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী পরিবেশের দাবী মেটানোর উদ্দেশ্যে আভ্যন্তরীণ চাহিদা বা প্রয়োজন থেকে জীবের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন বা বিবর্তন ঘটে। এই দাবী মেটানোর জন্য কোন জীব যখন কোন এক বিশেষ অঙ্গের অধিকতর ব্যবহার শুরু করে তার ফলশ্রুতিতেই একসময় নতুন বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণার উদ্ভব ঘটে। এভাবে ক্রমাগত ব্যবহার বা অব্যবহার থেকেই অঙ্গের উৎপত্তি বা বিলুপ্তি ঘটে যেতে পারে। চেষ্টা করতে করতে একসময় তার গলা লম্বা হয়ে যায় এবং জীবের জীবনকালে অর্জিত বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চালিত হয়। এভাবেই ধীর প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন হতে হতে একসময় নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। অর্থাৎ বিবর্তন ঘটে সরলরেখায়।
আর ওদিকে মেন্ডেলীয় আধুনিক বংশগতিবিদ্যা এবং ডারউইনের বিবর্তনর তত্ত্ব অনুযায়ী কোন জনপুঞ্জে মিউটেশন এবং জেনেটিক রিকম্বিনেশনের কারণে প্রচুর পরিমাণে প্রকারণ থাকে, যার পিছনে কোন নিয়ম, উদ্দেশ্য বা অভিযোজন কাজ করে না, ব্যাপারটা random. এই বৈশিষ্টগুলোর কোনটা যদি বেঁচে থাকার জন্য বাড়তি সুবিধা প্রদান তাহলে তারা হয়তো বেশীদিন বেচে থাকবে এবং অন্যান্যদের চেয়ে অধিক সন্তান উতপাদনে সক্ষম হবে। তার ফলেই এই বৈশিষ্টগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্ছারিত হয়ে বিবর্তিত হবে। যেমন ধরুন, উপরের উদাহরণে জিরাফের এই জনপুঞ্জে কিন্তু ইতোমধ্যেই বেটে লম্বা মাঝারি সব ধরণের গলাবিশষ্ট্ জিরাফ রয়েছে। প্রাকৃর্তিক নির্বাচনের কারণে লম্বা গলার জিরাফরা টিকে থাকার জন্য বেশী সুবিধা পাবে কারণ তারা সহজেই উঁচু ডালের পাতা নাগাল পেতে পারে। তার ফলে তারাই বেশী সফলভাবে টিকে থাকবে এবং পরবর্তী প্রজন্মে এই বৈশষ্ট্যটিকে সঞ্চালিত করতে সক্ষম হবে। তার ফলে ধীরে ধীরে একসময় জনপুঞ্জে প্রকারণ থাকলেও লম্বা গলার জিরাফের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এক্ষেত্রে 'ইচ্ছা', 'প্রয়োজন', 'চাহিদা' বা 'জীবিতকালে অর্জিত বৈশিষ্ট্যে'র কোন মূল্য নেই। জেনেটিকভাবে বৈশিষ্ট্যগুলো কোন প্রজন্মে বিদ্যমান না থাকলে তা বিবর্তনে কোন ভুমিকা রাখবে না। আপনার চোখের উদাহরণটার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যেমন, আপনি প্রশ্ন করেছেন, 'আমাদের শরীরে শুধু বর্তমানে যে ভিজিবল লাইট সেই স্পেক্ট্রামের ইএমওয়েভ ক্যাচ করার ডিভাইস বিবর্তিত হলো কেন?'... কারণ হয়তো একসময়ে আমাদের মধ্যে যে কারনেই হোক এই জিনটার বিবর্তন ঘটেছিল, এবং পারিপার্শ্বিকতার কারণে তা আমদেরকে বেচে থাকার জন্য বাড়তি সুবধা এনে দিয়েছিল। ব্যাপারটা এই নয় যে, 'দিনের সুর্য্যের আলোর জন্য যদি ভিজিবল লাইটের উপযোগী চোখ তৈরী হয়', বরং ব্যাপারটাকে ঠিক তার উলটো দিক থেকে দেখতে হবে, আমাদের শরীরে random কোন মিউটশনের কারণে এই জিনটার (এখানে কিছু ফিনোটাইপিক ব্যাপার আছে, যার মধ্যে আপাতত আর ঢুকলাম না) উদ্ভব ঘটেছিল, এবং পরে সেটা টিকে থাকার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দিয়েছিল বলেই আমরা এভাবে দেখতে পাচ্ছি। আর পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবের বিষয়টিও এখানে আরেকটি বিবেচ্য বিষয়। আমাদের চোখ কেন লাল থেকে বেগুনি- এই ভিজিবল রেঞ্জে বিবর্তিত হয়েছে তা বুঝতে হলে আমাদের পৃথিবীর আদিম পরিবেশ থেকে বর্তমান পরিবেশের দীর্ঘদিনের বিবর্তন বুঝতে হবে। বছরের পর বছর ধরে এই পরিসীমার আলোই পৃথিবীতে এসে পৌঁছুচ্ছে। রেডিয়েশনের বেশিরভাগই ওজন স্তরে ফিল্টার হয়ে যায়। বিবর্তন যেহেতু নতুন কিছু তৈরি করতে পারে না, বরং বিদ্যমান উপাদানের উপরেই কাজ করে সেহেতু তার সাথে তাল রেখে মানুষের চোখ ভিজিবল রেঞ্জেই বিবর্তিত হয়েছে। আদিম যুগে যখন ওজন স্তর এভাবে কাজ করছিল না, তখন রেডিয়েশনের এক বড় অংশ পৃথিবীতে এসে পৌঁছুতে পারত, ফলে এখনো দেখা যায় অনেক ছোট জলজ মাছ এবং পতঙ্গের মধ্যে এখনো ভিজিবল রেঞ্জের বাইরের স্পেকট্রাম কাজে লাগিয়ে 'দেখতে' পারে। আবার ধরুন, ডাইনোসর থেকে পাখির বিবর্তন ঘটে তারা দিব্যি উড়তে শুরু করলো, আমরা উড়তে পারলেও তো কি দারুণই হত! কিন্তু আমরা শত কান্নাকাটি করে মাথা ঠুকে মরি না কেন, কোন কারণে আমাদের মধ্যে উড়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনের উদ্ভব না ঘটলে এবং তা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য বাড়তি কোন সুবিধা না দিলে আমরা কোনদিনও উড়তে পারবো না।
জ্বিনের বাদশা, আপনাকে উত্তরটা লিখতে লিখতে বেশ বড় হয়ে গেল, আসলে এ নিয়ে একটা আস্ত চ্যাপ্টারই লিখে ফেলা যা , বিবর্তনবাদ বুঝতে হলে এই বেসিক জিনিষটা বোঝা ছাড়া গতি নেই, না বুঝলে সাম্প্রতিক কালের 'হিপ' সৃষ্টিবাদী তত্ত্বের আধুনিক ভার্ষান ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের 'চ্যালা' হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে (এ বিষয়ে পড়তে চাইলে, আইডি নিয়ে কুটকাচালী এবং ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন এবং সৃষ্টিতত্ত্বের বিবর্তন লেখা দুটো পড়তে পারেন )। আপনি প্রশ্নটা করে একটা ভাল কাজ করেছেন, আমাদের অনেকেই বিবর্তন নিয়ে টুকটাক পড়াশুনা করলেও অনেক সময় এই বেসিকটা খেয়াল করতে ভুলে যাই। পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে এ নিয়ে আলচনা করা হবে।
তয় আমি আপাতত ক্ষ্যমা দিতেছি, মূল লেখাটা বড় হয়ে গেছিল দেখে ছ্যাচা খাইছিলাম, এটা এখন বেশী বড় করলে দেখা যাবে আবার ১৫জন সচল হুমকি ধামকি দিয়ে উত্তর দিয়ে বসছেন, এই রিস্ক আর নেওয়া ঠিক হবে না । তয় আপনি যদি ক্ষ্যামা দিতে না চান, তাহলে জানায়েন, আমি আপনাকে ইংরেজি বাংলায় লেখা হাজার রকমের লিঙ্ক পাঠায় দিব নে।
ধন্যবাদ বন্যা,
আসলে বছরের পর বছর ধরে লাল থেকে বেগুনী রেঞ্জের আলো পৃথিবীতে আসে এটা ঠিক না ...শুধু সূর্য্যের আলোতেই প্রচুর আলট্রাভায়োলেট আর ইনফ্রারেড তরঙ্গ থাকে ,,, পরিমাণ হিসেব করলে মোট ইনফ্রারেডের পরিমাণ ভিজিবল লাইটের চেয়েও অনেক লুমেন বেশী ...
আমিও আসলে প্রশ্নে এই প্রসঙ্গটাই আনতে চেয়েছিলাম যে
ল্যামার্কীয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী "ভিজিবল লাইটের রেঞ্জে আমাদের চোখ বিবর্তিত হয়েছে" এটা ব্যাখ্যা করা যায়, কিন্তু তখন প্রশ্ন থাকে কেন ইনফ্রারেড বা আলট্রাভায়োলেট আমরা দেখতে পাইনা,
কারণ,
আলট্রাভায়োলেট সংবেদনশীল হলে এর প্রভাব থেকে আমরা বাঁচতাম এবং ইনফ্রারেড সংবেদনশীল হলে রাতে দেখতে পেতাম।
যেহেতু এটা নেই, তারমানে এমন কোনসময় ছিলনা যখন মানুষের পূর্বপুরুষ যে প্রাণীগুলো ছিল, সেই চেইনে আলট্রাভায়োলেট বা ইনফ্রারেড সংবেদনশীল প্রাণী ছিল ....কারণ তাহলে সেরকম চোখের টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী ছিল
এখন আসি ড়্যান্ডম মিউটেশনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে .... এখানে আপনাকে খুবই সাবধানে যেটা মাথায় রাখতে হবে সেটা হলো আলো হচ্ছে গিয়ে যাস্ট একটা ইএমওয়েভ ক্যাচার ...কাজেই আলোক সংবেদনশীল কোন কোষ যদি বিবর্তিত হয়, তাহলে সেই কোষের সংবেদনশীলতার সম্ভাবনা ১০^-৪A থেকে ১০^১২ Aএর যেকোনটাই হতে পারে
সেখান থেকে কারো কারো টিকে যাবার সম্ভাবনা আছে
এখন এইক্ষেত্রে আমরা যদি ধরে নেই ড়্যান্ডমলি আমাদের ভিজিবল লাইট স্পেক্ট্রাম-সংবেদনশী(যার রেঞ্জ ৫০০০A)একটা চোখ বিবর্তিত হয়েছিল, তবে টোটাল ইএমওয়েভ স্পেক্ট্রামের সাপেক্ষে সেটা ২ লাখ কোটি ভাগের একভাগ .... মানে, এরকম দুই লাখ কোটি ধরনের চোখ ড়্যান্ডম স্যাম্পলিংয়ে তৈরী হওয়া সম্ভব ..(এটা কি টাইমস্কেলকে সাপোর্ট করে?) ,,,তারপর সেখান থেকে ল্যামার্কীয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী আমাদের চোখের টিকে থাকাটা মেনে নেয়া যায় ,,,কিন্তু দুই লাখ কোটির প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই গেল
এখন দেখুন, ড়্যান্ডম মিউটেশনের ব্যাখ্যাটা নিলেও পরবর্তী স্টেপে কোন ধরনের চোখগুলো টিকে থাকবে তা ব্যাখ্যা করার জন্য আমাদের ল্যামার্কীয় ব্যাখ্যার কাছে আসতেই হচ্ছে, এবং তখন প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে কেন ইনফ্রারেড বা আলট্রাভায়োলেট না?
ড়্যান্ডম স্যাম্পলিং হলে তো সবরেঞ্জের স্পেক্ট্রামেই কিছু চোখের বিবর্তিত হবার কথা, কোন ডিস্ট্রিবিউশন ফলো করার কথা না
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আপনার উত্তরটা দেখা হয়নি আগে, তাই উত্তর দিতে দেরি হয়ে গেল। আপনি বেশ কয়েকবারই ল্যমার্কীয় ব্যাখার কথা উল্লেখ করেছেন, বলেছেন
আমি একটু কনফিউসড, আপনি কি ল্যমার্কীয় ব্যখ্যাকে সঠিক বলে ধরে নিচ্ছেন? আসলে তো ল্যমার্কের ব্যখ্যা দিয়ে কিছুই বোঝা সম্ভব নয়, কারন তার এই 'অর্জিত বৈশিষ্ট্যে'র ব্যাখ্যাটা সম্পুর্নভাবে ভুল। প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাথে ল্যমার্কের ব্যখ্যার একটা খুব সুক্ষ্ম পার্থক্য আছে। ল্যামার্ক বলছেন প্রয়োজন বা ব্যাবহারের কারনে কোন জীব বেচে থাকতে থাকতেই তার বৈশিষ্ট্যগুলোর বিবর্তন ঘটে যায়, কিন্তু এটা তো ঠিক নয়। প্রাকৃতিক নির্বাচন কিন্তু ঠিক এর উলটো কথা বলছে। জেনেটিকালি যদি কোন বৈশিষ্টের উদ্ভব না ঘটে, যতই প্রয়োজন থাকুক না কেন সেই বৈশিষ্ট্যগুলোর বিবর্তন ঘটা সম্ভব নয়। জনপুঞ্জে মিউটেশন, জেনেটিক রিকম্বিনেশনের মত কারণে এই প্রকারনগুলোর উদ্ভব ঘটে যার পিছনে কোন নিয়ম, উদ্দেশ্য বা অভিযোজন কাজ করে না, ব্যাপারটা random. এখানে আরেকটা জিনিস মনে রাখতে হবে যে, মিউটেশন random হলেও, প্রাকৃতিক নির্বাচন কিন্তু random নয়, সুতরাং বিবর্তন প্রক্রিয়াটা আসলে কিন্তু পুরোটা random নয়।
আপনি বলেছেন,
রিচার্ড ডকিন্সের সেলফিশ জিন বইটা হাতে আসল ...অফিস ফাঁকি দিয়ে পড়ব ভাবছি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আশাকরি আমিও ততদিনে অনুবাদের কাজ শুরু করে দিতে পারব।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এই প্রপঞ্চটা বেশ বিষ্ময়কর আর আরো অনেক চিন্তা উস্কে দেয়, যেমন আগামীদিনগুলোতে মানুষ কোথায় যাবে আর শেষটা কোথায়।
সবমিলিয়ে চমৎকার লেখা। ঠুনকো ধর্মবিশ্বাস যাদের কাছে এইসব জ্ঞান পৌঁছুতে বাধা দেয়, তাদেরও দুয়ার খুলুক, সেই প্রত্যাশা রাখি।
দুটো ভাগ করতে পারতেন, পটভূমির অংশ আর শেষের বিবর্তনবাদের প্রয়োজনীয়তার অংশটুকু আলাদা করতে পারতেন। তাতে অনেক পাঠকই বেশ স্বস্তিবোধ করেন।
সবশেষে আপনাকে স্বাগতম। আপনাদের অবদানে সচলায়তন হয়ে উঠুক আগামী প্রজন্মের বাঙালিদের জন্যে এক অনন্য জ্ঞানভাণ্ডার।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
জ্বিনের বাদশার প্রশ্ন থেকে চমৎকার একটি তর্কের সূত্রপাত হতে পারে। এ তর্ক অবশ্য পুরনো, এখনও চলমান। নকশা বনাম বিবর্তন।
জ্বিনের বাদশার প্রশ্নের গঠনটি একটু দেখি। "কেন অন্যরকম হলো না?"
প্রাণীজগতে (সম্ভবত) ১১ ধরনের চোখ আছে। এখানে চোখ বলতে বোঝাচ্ছি তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গকে অনুধাবন করে তার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও সে তথ্যকে মস্তিষ্ক বা স্নায়ুকেন্দ্রে পাঠানোর উপযোগী অঙ্গকে। মানুষের চোখ যথেষ্ট "উন্নত", অর্থাৎ বেগুনী থেকে লাল পর্যন্ত আলো প্রসেস করতে পারে, যা পৃথিবীর অনেক প্রাণী পারে না। মানুষের চোখের গড়ন নিয়ে কিন্তু সৃষ্টিবাদী (ক্রিয়েশনিস্ট) বা নকশাপন্থীরা (ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন তত্ত্বের সমর্থকরা) কিছু সংশয়ের কথা সবসময়ই বলে আসছেন, যে এমন একটি সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল যন্ত্র শুধু বিবর্তনের মাধ্যমে উদ্ভূত হওয়া সম্ভব নয়।
জ্বিনের বাদশার কাছে প্রশ্ন করা যেতে পারে, ফ্রিকোয়েন্সি আর অ্যাম্পলিচ্যুড ডিস্ট্রিবিউশন করলে পৃথিবীতে দিনে ও রাতে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের কোন অংশটি বেশি পীকি হবে? ধরা যাক ক্যাম্ব্রিয়ান পিরিয়ডের কথা, তখন পৃথিবীতে বায়ুমন্ডলে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের কোন অংশটি "উচ্চকিত" ছিলো? রেডিও ওয়েভ বা এক্সরে নয় নিশ্চয়ই, অত নিচু বা উঁচু ফ্রিকোয়েন্সিতে বায়ুমন্ডলে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের অ্যাম্পলিচ্যুড নিশ্চয়ই ভিজিবল স্পেকট্রামের চেয়ে নগণ্য? তাছাড়া শুধু অনুধাবন করলেই হবে না, এ তরঙ্গকে তথ্য ধারণ করতে হবে। উঁচু তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর পক্ষে তথ্য ধারণ করা একটু মুশকিল, তারওপর সে তথ্য যদি খুব সূক্ষ্ম হয়, তা প্রসেস করার জন্যেও সূক্ষ্ম স্নায়ুকেন্দ্র প্রয়োজন। চোখের উদ্ভবের শুরুতে কিন্তু তা ছিলো মূলত আলোকসংবেদী কয়েকটা কোষের সমন্বয়মাত্র, এ ব্যাপারটাও ভাবতে হবে। জীবকোষের ক্ষমতার সীমার মধ্যে কতটুকু তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ কিভাবে কাজ করে, সেটাই প্রশ্ন।
সরীসৃপ খুব ভালোকরে অবলোহিত আলো প্রসেস করতে পারে। মৌমাছি পারে অতিবেগুনী আলো প্রসেস করতে। প্রশ্ন আসতে পারে মানুষ কেন পারে না? কারণ মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস বেশিরভাগ সময় কেটেছে সাভানা অঞ্চলে, দিবাচর প্রাণী হিসেবে। তারও আগে বৃক্ষচর প্রাণী হিসেবে মানুষ আর শিম্পাঞ্জি আর গরিলার গেছো পূর্বপুরুষের চোখ মূলত প্রসেস করেছে সবুজ ও উষ্ণ রঙের আলো (মানুষের শরীরে আলোকসংবেদী কোষের জন্য দায়ী জিনগুলি এখন চিহ্নিত)। অন্যদিকে যেসব নিশাচর প্রাইমেট রয়েছে, তারা মানুষের মতো তিনটি মৌলিক রং দেখতে পায় না। তাদের চোখে গড়ে উঠেছে অন্য রকমের আলোক সংবেদী পদ্ধতি, যা প্রতিটি ফোটনকে দুইবার রেটিনার ওপর প্রক্ষেপিত করে, অর্থাৎ রাতের বেলা স্বল্প আলোকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে।
বিবর্তনের ব্যাপারে একটি দিক আমরা এড়িয়ে যাই বা বুঝতে পারি না, সেটি হচ্ছে, বিবর্তন প্রক্রিয়ার কোন নির্দিষ্ট টার্গেট নেই। এটি নির্ভর করছে পরিপার্শ্বের ওপর। আজ থেকে পাঁচশো কোটি বছর আগে কোন প্রাণী একদিন অলস বিকেলে "মানুষ হতে হবে" বা "জিরাফ হতে হবে" ভেবে দাঁতে দাঁত চেপে বিবর্তিত হয়নি। তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের পুরোটা জীবকোষের ওপর বিভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে, কিন্তু অনুধাবক অঙ্গ বিবর্তিত হয়েছে সবচেয়ে সহজপ্রাপ্য অংশটুকুকে রেফারেন্স ধরে। কাজেই পুরোটা থেকে ফিল্টার করে অতিবেগুনী-অবলোহিতে নামার ব্যাপারটা আসলে ঘটেনি, বরং ব্যাপারটা শুরুই হয়েছে সরু একটা ব্যান্ডউইডথ ধরে। গাছ যেমন শুধু অতিবেগুনী বোঝে (সালোকসংশ্লেষণের সময়)।
জলজ জীবের চোখ কিন্তু অনেক বেশি ডাইভার্সিটি ধারণ করে। স্কুইডের চোখ কিন্তু দুর্দান্ত উন্নত (মিশমিশে অন্ধকার গভীরে বাস করে) আবার পিনহোল ক্যামেরার মতো চোখও আছে অনেক প্রাণীর।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ধন্যবাদ হিমু চমৎকার তথ্যসম্বলিত ব্যাখ্যার জন্য
হুমম ....এটা ভেবে দেখার প্রয়োজন যে চোখের প্রাথমিক বিবর্তনের সময় পৃথিবীতে ইএগওয়েভের ডিস্ট্রিবিউশন কেমন ছিল?
তবে এখনকার হিসেবে, দিনের আলোতে ভিজিবল স্পেক্ট্রামে পীক থাকলেও, ২ ন্যানো থকে ২৫০০ ন্যানোর যে রেঞ্জের আলো সূর্যালোক থেকে রীড করা যায় তাতে আলোকের পরিমাণ হিসেবে ইনফ্রারেডের পরিমাণ বেশী ...তারওপর প্রশ্ন চলে আসে রাতের ব্যাপারে ,,,তখন তো ইনফ্রারেড একাই রাজা ...তাছাড়া গ্যাসগুলো রেডিওওয়েভ এমিট করে
"উঁচু তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর পক্ষে তথ্য ধারণ করা একটু মুশকিল" এটা কেন বললেন বুঝলামনা ,,,যদি যথেষ্ট পরিমাণ এম্পলিচিউডের উঁচু তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওয়েভ থাকে তাহলে সে তথ্য দিতে পারবে
মানুষের পূর্বপুরুষের দিবাচর হিসেবে কাটানোর ফলে তার চোখ দিনের আলোর প্রতি সংবেদনশীল হয়েছে, নাকি শুধু দিনের আলোর প্রতি সংবেদনশীল চোখ আছে বলে মানউষের পূর্বপুরুষেরা দিবাচর হিসেবে কাটিয়েছে -- এই প্রশ্নটাও থেকে যায়।
আপনার জবাবের শেষ প্যারার আগের প্যারার কথাটাই বলতে চাচ্ছি ,,, ড়্যান্ডমলি যদি একটা স্পেক্ট্রাম সংবেদনশীল হয়ে পড়ে তবে সেখানে সূর্য্যের আলোর সাথে সংগতিপূর্ণ একটা স্পেক্ট্রামের আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ ...বিশেষ করে যখন আপনি আলো না ভেবে ইএমওয়েভের কথা ভাববেন ...মানে ইএমওয়েভ সংবেদনশীল একটা অঙ্গ বিবর্তিত হয়েছিল এটা ভাববেন ... আমি সেই সম্ভাবনাকেই প্রশ্ন করছি ,,,চোখের বিবর্তন নিশ্চয়ই জীব সৃষ্টির অনেক পরের ঘটনা ....ধরলাম একশ কোটি বছর আগে ... প্রাপ্ত একশকোটি বছর কি এরজন্য যথেষ্ট?
আর যদি ব্যাখ্যাটা এভাবে করেন যে, সিম্পলি ইএমওয়েভ ক্যাচার না ,,,পৃথিবীতে ভিজিবল স্পেক্ট্রাম বা অতিবেগুনী বা অবলোহিতের ডিস্ট্রিবিউশন যেহেতু অনেক বেশী, তাই এগুলোর প্রতি সংবেদনশীল একটা অঙ্গ তৈরী হয়েছে, যা শুরু থেকেই এই ১ ন্যানো থেকে ৩০০০ ন্যানোর ইএমওয়েভের যেকোন একটা অংশের প্রতি সংবেদনশীল ছিল, তাহলে কিন্তু চোখের বিবর্তনের আগেই তার পৃথিবীর দিনের আলোর উপর নির্ভরশীলতার দিকে আমরা চলে যাচ্ছি ,,,মানে কোন একটা উদ্দেশ্যে চোখ বিবর্তিত হয়েছিল এই ব্যাখ্যার দিকে চলে যাচ্ছি।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আঃ, হিমুর মন্তব্যে বিপ্লব ... বন্যাদির লেখার আমি ফ্যান, তাই লেখা নিয়ে বক্তব্য রেখে আমি সময় নষ্ট করব না। বছরখানেক আগে বন্যাদির লেখা পড়ে আমার বিবর্তন সম্পর্কে আগ্রহের শুরু ... পরে সেটা ডকিন্স আর জেমস ওয়াটসন মারফত্ আরো গভীর হয়। একটা সময় ছিল যখন আমি শুধু বিবর্তন নিয়েই দিনে গড়ে ২ ঘন্টা পড়তাম ... লিখতামও ... বিবর্তন আর প্রাকৃতিক নির্বাচন এত সহজ একটা তত্ত্ব যা আমাদের পারিপার্শ্বিক জগতের এত বড় একটা প্রশ্নের উত্তর দেয় যা একরকম অকল্পনীয়। আমার মনে হয় সব মানুষেরই নিউটনের মহাকর্ষের মত ডারুইনের তত্ত্বও কিছুটা অন্ততঃ পরিষ্কারভাবে জানা উচিত ...
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পার্সিমোনি বলে একটা "ব্যাপার" আছে, যাকে বলা যেতে পারে ইকোনমি অব অ্যাজাম্পশন, অর্থাৎ অনুমানের সাশ্রয়। কোন দুটি হাইপোথিসিসের মধ্যে তুলনা করতে হলে পার্সিমোনি একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। কোন ব্যাখ্যায় যদি প্রচুর অনুমান থাকে, তাহলে সেটা কম পার্সিমোনিয়াস, কোন ব্যাখ্যায় যদি অনুমান কম থাকে, সেটা বেশি পার্সিমোনিয়াস। বিবর্তনের ব্যাখ্যাটাকে বলা যেতে পারে সবচেয়ে পার্সিমোনিয়াস তত্ত্ব, এখানে কোন অনুমান নেই, সব রীতিমতো চোখে দেখা জিনিসপত্র নিয়ে কারবার। বিবর্তন এখন আর কোন "তত্ত্ব" নেই, বিবর্তন একটি চলমান ঘটনা, যাকে দেখা যায়, মাপা যায়। বিবর্তন ব্যাপারটা বুঝতে গেলে শুধু একটি জিনিসই মাথায় রাখতে হবে, টাইমস্কেল। বিবর্তন হয়ে আসছে কোটি কোটি বছর ধরে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
হিমু মনে হয় অকামস রেজরের কথা বলেছেন।
আর বিবর্তনের ব্যাপারটা এখন ২ ভাগে ভাগ করা যায় ... একটা হল এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির সৃষ্টি - যেটা প্রমাণিত সত্য। আরেকটা বিবর্তন সংক্রান্ত তত্ত্বগুলো - যারা ব্যাখ্যা দেয় কিভাবে বিবর্তন হয়েছে সে বিষয়ে (যেমন প্রাকৃতিক নির্বাচন)। প্রথমটিতে অনুমানের কোনো বালাই নেই ... তত্ত্বের ক্ষেত্রেই পার্সিমোনির প্রয়োগ হবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দিগন্ত, আপনার কথা অভিজিতের কাছ থেকে শুনেছি, মুক্তমনা এবং মুক্তান্বেষাতেও দেখেছি। কিন্তু 'ফ্যান' এর কথা জেনে এবং আপনি যে আমার লেখা পড়ে বিবর্তন সম্পর্কে আগ্রহী হয়েছিলেন তা শুনে তো হতভম্ভ হয়ে গেলাম। আপনার লেখা পরে কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম আপনি বিবর্তন সম্পর্কে যে রকম পন্ডিত কবে না আমার লেখা দেখে কি বলে বসেন। সে যা হোক, আমরা আপাতত হারিকেন লাগায় অনুবাদের জন্য লোক খুজতেছি। শুরু করবেন নাকি? ঢাকার বেশ কয়েকজন ভালো প্রকাশক বারবার অনুরোধ করছেন ডকিন্সের অনুবাদ করার জন্য, সমায়াভাবে করা হয়ে উঠছেনা। মনে হয় অনুরোধ করলে অভিজিত, ফরিদ ভাই ( না জিগায়াই কইলাম) সহ আরও কয়েকজনকেও দলে পাওয়া যাবে। আর তার সাথে সচলেরাও যদি যোগ দেন তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সেলফিশ জিনের কথা একজন অনেক দিন ধরে বলছেন, কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল, ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার হয়তো বেটার চয়েস হত, সেলফিশ জিনটা থেকে একটু ভুল বোঝার অবকাশ থেকে যায় কিনা কে জানে। কিন্তু সেটা পরে ডিসাইড করা যাবে। আগে বলুন, অনুবাদের জন্য একটা প্ল্যান করা যায় নাকি?
অনুবাদের জন্য প্ল্যানে আমাকে নিশ্চিতভাবে ধরতে পারেন। আমি শুধু এই মাসটাতে একটু ব্যস্ত থাকব, এরপরে ফ্রি। তবে কোন বইটা করা হবে সে ব্যাপারে আপনি ভালভাবে সবার সাথে কথা বলুন। আমার মনে হয়, সেলফিশ জিন একটু টেকনিকাল গোছের বই। ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার সেদিক থেকে অনেক ভাল। কিন্তু ব্লাইন্ড ওয়াচমেকারের থেকে সেলফিশ জিন বই হিসাবে অনেক নামকরা বলে পাঠকদের কাছ থেকে সাড়া মেলার সম্ভাবনা অনেক বেশী।
এদিকে আমি কোলকাতার পাবলিশার খুঁজছি বইগুলো পাবলিশ করার জন্য। যাহোক, সব পুজোর পরে, আগে পুজো ...
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
প্রায় ৫ বছর পরে বিবর্তন নিয়ে লেখা পড়লাম
অনেক কিছু রিভিউ হয়ে গেলো
আর নতুন করে মাথায় ঢুকে গেলো কয়েকটা পয়েন্ট
ধন্যবাদ লেখককে
আমি একেবারে খাঁটি কামলা মানে মোটা বুদ্ধির প্রকৌশলী।অনেক কিছু জানলাম।অনেক ধন্যবাদ বন্যা আর অন্যান্য দের কেও।
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
আপডেট হয়েছি।ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
। অনেক কিছুই জানা হলো আবার অনেক কিছুই মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেছে । যেগুলো উড়ে গেছে সেগুলোকে ধরে নিয়ে আসার চেষ্টায় আছি, সেই চেষ্টায় সচলে বিবর্তনের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ি।
মাসুদ সজীব
নতুন মন্তব্য করুন