দেশের গোদে ছাত্ররাজনীতির বিষফোড়া, ওটা নেতৃবৃন্দের গোদে নয়!!

জিজ্ঞাসু এর ছবি
লিখেছেন জিজ্ঞাসু (তারিখ: বুধ, ১৮/০২/২০০৯ - ১০:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত ১৯ জানুয়ারি ২০০৯ এ প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান মন্তব্য প্রতিবেদনে পূর্বাপর ইতিহাস বিবৃত করে লিখেছিলেন শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে সামলান।

আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ এ আবার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সম্পাদক সাহেব প্রশ্ন রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী কি ছাত্রলীগকে সামলাতে পারলেন না? বিদগ্ধ জনেরা কথা বলেন অনেক ভেবেচিন্তে। আমরা সাধারণ মানুষ এত ভেবেচিন্তে কথা বলার মত বুদ্ধি রাখি না।
আমাদের সামনে যেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে সেটাই বলে দেই হুটহাট। তাই আমাদের কথার ওজনও কম হয়। প্রধানমন্ত্রী আজ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় যে কথা বলেছেন এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও গুণ্ডাগিরি থামানোর যেসব হাল্কা চেষ্টা করেছেন তাতে ছাত্রলীগকে সামলানোর কোন আভাস পাওয়া যায় নি।
আজ প্রধানমন্ত্রী পূর্বের সুরেই বলেছেন ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাস, চাদাবাজি বরদাশত করা হবে না।

সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ছাড়াও টেন্ডারবাজি, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, কন্ট্রাকটরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্ক্ষলাসহ হাজারো লেখাপড়া বহির্ভুত কাজে লিপ্ত আজকের রাজনীতি করা ছাত্ররা। যে সুরে দেশের প্রধান নেত্রী এবং প্রধান দলের নেতৃবৃন্দ ছাত্ররাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন সে সুরে কোন কাজ হবে না, এটা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হচ্ছে। এবং খুব বেশি না, পনের বছরের অতীতের দিকে ফিরে তাকালে এটা প্রমাণিত সত্যও বটে।

আজকের মন্তব্য প্রতিবেদনে মতিউর রহমান ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন। একই প্রশ্ন আমারও। আজ নয়, যখন থেকে আমি ছাত্র তখন থেকেই আমার প্রশ্ন - ছাত্ররাজনীতির কী প্রয়োজন? কোন প্রয়োজন নেই। দেশে ছাত্রদেরকে ছাত্র হিসেবে গণ্য করতে চাইলে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নেই।

প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন; ছাত্ররাজনীতি তিনি নিজেও করেছেন বলে উদাহরণ টেনে এনেছেন। এসব কথা বলে ছাত্রশিক্ষক রাজনীতিকে একটা অস্পষ্টতার মাঝে রেখে আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে আমাদের রাজনীতিবিদেরা।

প্রধানমন্ত্রীর ধারণা স্পষ্টতই ভুল। আমি জোর দিয়েই বলছি। তিনি তার নিজের রাজনীতি করার ইতিহাসকে টেনে এনে গণমাধ্যমে যে দায়সারাগোছের মন্তব্য করেছেন ছাত্ররাজনীতির পক্ষে, তা দিনবদলের ধারণার সাথে মিলে না। দিনবদল যদি করতে চান তাহলে পুরাতনকে বাদ দিতে হবে; বদলাতে হবে। কেচে গণ্ডুষ করতে হবে। তার কোনটাইতো করছেন না।

ছাত্রদের রাজনীতি সচেতনতা আর ছাত্রদের সক্রিয় রাজনীতি করা বা শিক্ষকদের সক্রিয় রাজনীতি করা এসব বিষয়কে নিয়ে একটা অহেতুক বিতর্ক চলেই আসছে এবং এই বিতর্কের প্রশ্রয়ে তাদের খুন খারাবি সহ ছাত্রদের গুণ্ডা হয়ে ওঠা চলছে তো চলছেই।
কোন এক বিদগ্ধজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের দুর্নীতি ও বিশৃঙ্ক্ষলার কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, সমাজের প্রতিচ্ছবিই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে দেখতে পারি না। অনেকদিন আগের কথা, যিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন (বিবিসিতে) তার নামধাম, তারিখ মনে নেই। কথাটা অন্তরে লেগেছিল বলে মনে আছে। কেন একটা বিশ্ববিদ্যালয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হবে না? কেন সমাজের বিষবাষ্প বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে কলুষিত করবে? কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোকবর্তিকা সমাজকে পথ না দেখিয়ে সমাজের প্রচলিত অন্ধকারে হাতড়াতে হাতড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় নিমজ্জিত হবে সমাজের ভাগাড়ে?

কারণ ছাত্রশিক্ষক রাজনীতি। যেখানে জাতির আলোকবর্তিকা তৈরি হবে। যেখানে রাতদিন গবেষণা হবে জ্ঞানের সন্ধানে মানুষ নাওয়া খাওয়া হারাম করবে, সেখানে ছাত্রশিক্ষক রাজনীতির খাই-খাইয়ের তলে হারিয়ে গেছে সব। প্রধানমন্ত্রী যদি দিন বদলের কথা আন্তরিকতার সাথে বলে থাকেন, ভিশন ২০২১ যদি সত্যিই তার ভিশন হয়, তাহলে ছাত্ররাজনীতি সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বন্ধ করে দিন। ছাত্রশিক্ষকদের রাজনীতি চিরতরে বিদায় নিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে কেউই ঘরে বসে থাকে না। ডিজিটাল বাঙলাদেশের স্বপ্ন দেখানো দলের নেত্রী নিশ্চয়ই জানেন আজকের পৃথিবী শুধু নিজের জাতি রাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

বৈশ্বিক নানান ক্রান্তিলগ্নে ছাত্ররা এগিয়ে আসছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ, পরিবেশ দুষণ, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুশ্রম, গণস্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্বের শিক্ষিত সমাজ সব সময় সোচ্চার। তারজন্য ছাত্রলীগ, ছাত্রদল করতে হবে না। ছাত্রলীগ ছাত্রদল এসব বিষয়ের খবর থোরাই কেয়ার করে।

দেশের দুই প্রধান দলের নেতৃবৃন্দের ভেবে দেখা উচিত তারা নিজেরা সততার সাথে ছাত্ররাজনীতিকে কীভাবে দেখেন। তারা যদি মনে করেন ছাত্ররা তাদের তথাকথিত আন্দোলনের বিনাপয়সার হাতিয়ার হবেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অস্ত্র হবেন; সহজে কোন আণ্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়ার লেলিহান শিখা হবেন ছাত্ররা তাহলে এই জাতি কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। আমরা দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে কোন কাজ করি না। মড়িয়া হয়ে উঠলে আমাদের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। কিন্তু দেয়ালে আমাদের পিঠ অনেক আগেই ঠেকে গেছে, এখন আমাদের দেহ অবশ। আমরা টের না পেলেও দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। তখন বঙ্গবন্ধুর মত ক্যারিশম্যাটিক নেতা আমাদের সে কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু আজও আমাদের এমন কারো দরকার যিনি বলবেন তোমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, আর একপা এগোলে তোমাদের পতন হবে।

আবারও যদি বলেন শেখ মুজিব ছাত্ররাজনীতি করেছেন, তার কন্যা শেখ হাসিনা ছাত্র রাজনীতি করেছেন। আমি বলব তখন আমরা ছিলাম পরাধীন। তখন শেখমুজিব সরকারি টেন্ডারের নিশ্চয়তা পেয়ে ছাত্ররাজনীতিতে নাম লেখান নাই। শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখে ছাত্ররাজনীতিতে ঢুকেন নাই। শেখ হাসিনা ছাত্ররাজনীতির নামে নিজেদের দুই গ্রুপে চুলোচুলি করেন নাই। তখন ছাত্ররা নীলক্ষেত, এ্যালিফেন্ট রোডের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করত না। তাহলে তখনকার বাস্তবতার চুলচেড়া বিশ্লেষণ না করে কেন ছাত্রশিক্ষক রাজনীতিকে সমর্থন করছে দেশের রাজনীতিবিদগন?

কারণ শুধু একটাই। ক্ষমতায় গেলে দেশকে নানাভাবে লুটপাট করে খাওয়ার লাইসেন্স দেয়ার আশা দিয়ে এখন ছাত্রদের দিয়ে মুফত সবকিছু করিয়ে নেয়া যাচ্ছে। তরুন্যের শক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে না লাগিয়ে তাকে লাগানো হচ্ছে মানুষ খুনের কাজে। কী লজ্জা! একটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য এটা লজ্জাজনক। যদি আমাদের লজ্জাবোধ থাকে।

এদিকে উপজেলা পরিষদের উপর থেকে এমপিদের খবরদারি তুলে নেওয়ার বিলটি পাশ না করে তারা তাদের খবরদারি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। অথচ তারা ইতিমধ্যে সংসদে উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছে। তারা যদি নিয়মিত সংসদ অধিবেশনে না উপস্থিত হন তাহলে তারা জনগণের সাথে নিমকহারামি করছেন। উপজেলার কাজে স্থানীয় প্রশাসনসহ উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান আছেন। ওনারাও নির্বাচিত প্রতিনিধি। তাহলে ওনাদের উপর আবার এমপিদের খবরদারির প্রয়োজনটা কী? আগেও বলেছিলাম সংসদ সদস্যপদ কোন ব্যারনেটসি, বা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত টাইপের কিছু না। খবরদারি আর ক্ষমতার দম্ভ করে লর্ড, নাইট বা ব্যারনরা। এগুলো পুরান ধ্যানধারনা। কথায় কথায় আওয়ামী লীগের নেতা, পাতি নেতারা সরকারি কর্মকর্তাদের মনে করিয়ে দেন, "আপনারা হলেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী"। হ্যাঁ তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। কিন্তু তাদের একটা প্রশাসনিক কাঠামো আছে। তারা আওয়ামী লীগের নেতা, পাতি নেতাদের কাছে থেকে অর্ডার নেবেন কি?

তাহলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে দিন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারিরা এখন থেকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতা-নেত্রীদের কমান্ডে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে!

আজ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং ইতিপূর্বের অন্যান্য নেতৃবৃ্ন্দের ছাত্রশিক্ষক রাজনীতির ব্যাপারে যে পারসেপশন তাকে ঝালাই করতে হবে। ঘুণে ধরা পারসেপশন নিয়ে দেশকে দিনবদলের ট্র্যাকে তোলা যাবে না। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা একটা বড় ছাড় দিন। দেশের জন্য বড় রকমের ছাড় দেয়া অনেক বেশি প্রয়োজন আজ। সকল রাজনীতিবিদগণ এক হয়ে ছাত্রশিক্ষকরাজনীতি বন্ধ করে দিন। এতে দেশের মঙ্গল হবে। দেশ জ্ঞানচর্চায় সমৃদ্ধ হবে যার ফল আমরা ভবিষ্যতে অবশ্যই পাব।


মন্তব্য

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

প্রিয় জিজ্ঞাসু,

ভাল একটা টপিক আনসেন। গরম আলোচনা হবে। তবে মনে হয় গোড়ার ভুলটা ধরতে পারেন নাই। সমস্যা ছাত্র রাজনীতির না। সমস্যা কোথায় তার উত্তর আপনার লেখাতেই আছে -

কারণ শুধু একটাই। ক্ষমতায় গেলে দেশকে নানাভাবে লুটপাট করে খাওয়ার লাইসেন্স দেয়ার আশা দিয়ে এখন ছাত্রদের দিয়ে মুফত সবকিছু করিয়ে নেয়া যাচ্ছে।

দেশকে রাজনীতিতে খাসী করার অনেক চেষ্টা তো হইছে, হইতাছে। সুস্থ রাজনীতি বলতে যদি কিছু বাকি থাকে, সেইটা আছে ছাত্র-যুবকদের রাজনীতিতেই। ঐটারেও ওনারা খাসী করতে চান --- ঐ তাল বুইঝা চইলেন।

যে বিষ-ফোড়ার কথা কইলেন, আপাতত তার একটাই অষুধ দেখি, সেইটা হইল অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ গুলাতে নির্বাচন দেওয়া। সেখানে লাঠালাঠি কইরা ভোট চুরি-ডাকাতি যদ্দুর সম্ভব বন্ধ করা যাইতে পারে। নির্বাচিত কার্যকর সংসদ করতে পারলেই ঐসব ভাড়াইটা চান্দাবাজেরা আস্তে আস্তে পলাইব। তয়, এইব্যাপারে এইসব ভাড়াইটা যারা পুষে, তাগো কিরকম সদিচ্ছা আছে, সেইটা একটা বড় প্রশ্ন।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

ভাইরে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে যত কথা আজ পর্যন্ত বলা হইছে, ছাত্রদের পক্ষে বর্তমান সময়ের প্রয়োজনে কোন ছাত্ররাজনীতিই আর গ্রহণযোগ্য না। যাদেরকে আপনি চান্দাবাজ বলে আলাদা করতে চাচ্ছেন তারাও ছাত্রই। তাদের অনেকে একসময় পড়ালেখায়ও ভাল ছিল। কিন্তু আমি এই সিস্টেমটাকেই বিলোপ করতে বলেছি। ছাত্রশিক্ষকরা কে, কোথায়, কী রাজনীতি করবে তা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা চাই ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ইত্যাদি বিলোপ হোক। না হলে দেশের মেধা নষ্ট, জনগণের শান্তি নষ্ট ছাড়া আর কিছু পাবেন না। যে মাতাপিতা গ্রামে কষ্ট করে ছেলেমেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে পাঠিয়েছে তাদের রাতদিনের ঘুম হারাম। সন্তানের কথা চিন্তা করে। এদের কেউ কেউ সিস্টেম থেকে কন্ট্রাকটর/ঠিকাদার হয়ে বের হয়, ভবিষ্যতে এমপি হওয়ার স্বপ্ন ও আশা নিয়ে। দেশের শিক্ষকরা রাজনীতি করে এটা ওটা পদ পাওয়ার আশায়। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি সবই তারা করে। এতে দেশের ক্ষতি। শেখ হাসিনার ছেলেকে তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান নাই। তিনি জননেত্রী। তিনি 'জন' বা 'গণে'র মধ্যে গণ্য হন না। তেমনই দেশের নেতৃবৃন্দ তাদের সন্তানদেরকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াবে, বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবে। আমাদের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ভাগাড় বানিয়ে রাখবে; যেখানে দরিদ্র কৃষকের মেধাবী সন্তানেরা একসময় চাঁদার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কামড়াকামড়ি করে গোলাগুলি করে কেউ মরবে কেউ ভবিষ্যত রাজনীতির ঝাণ্ডা নিয়ে বেরিয়ে গতবাঁধা মুর্খ রাজনৈতিক বুলি আউড়াবে। কারণ শিক্ষায়তনে সে কোনদিন ক্লাসেই ঠিকমত উপস্থিত হয়নি। তার জ্ঞানের বহর সহজেই অনুমেয়।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

ফাহিম এর ছবি

সুস্থ রাজনীতি বলতে যদি কিছু বাকি থাকে, সেইটা আছে ছাত্র-যুবকদের রাজনীতিতেই।
কোথায়, বাংলাদেশে? বলেন কি?

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

হু, তাই। তবে "ছাত্র-যুবকদের রাজনীতিতেই" থেকে "ই" টা বাদ দিলাম। ছাত্রদের ছাড়াও বেশ কিছু সুস্থ রাজনীতির উদাহরণ নিকট অতীতে আছে।

যাহোক, জাহাঙ্গীরনগরের সাম্প্রতিক ঘটনা তো দেখলেন। ছাত্রদের রাজনীতির উদাহরণ খুজতে গেলে এক জাহাঙ্গীরনগরেই আপনি সুস্থ আর ফোড়াঅলা দুই জাতীয় উদাহরণই পাবেন, নিকট অতীতে। এব্যাপারে ওল্ড-জাহাঙ্গীরিয়ান রা আরো ভাল বলতে পারবেন।

ভাঙ্গা মানুষ [অতিথি] এর ছবি

এত সহজে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হবেনা, এই একটা ব্যাপারে দুই পলিট্রিক্স পার্টিই একমত হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে হাতছাড়া করার রিস্কে এরা যাবেনা - কর্মী (কিংবা ক্যাডার) ধরার এটা একটা বিশাল মার্কেট...

আর ঐসব ছাত্ররা যারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির (আরো না জানি কী!) জন্য ছাত্রপলিট্রিক্স করে, তারাও এটা চায়না; দুর্ভাগ্য, এদের কথাই ছি!নিয়ার পলিট্রিশিয়ানরা গ্রাহ্য করে।

সত্যিকার অর্থে ছাত্র রাজনীতির দরকার আছে বলে আমি মনে করি, তবে সেটা যার যার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক হবে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের প্রয়োজন (যেমন, যৌক্তিক দাবী-দাওয়া, সমস্যা উপস্থাপন ইত্যাদি) এবং নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন (যেমন, সাংস্কৃতিক, সমাজসেবী বা প্রতিবাদমূলক অনুষ্ঠান ইত্যাদি) মিটিয়ে যাবে; জাতীয় ক্ষেত্রে কালে ভদ্রে একত্র হবে (হয়ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলল বা করলো কিংবা সরকারেরই কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ জানাতে)।

সমস্যা হচ্ছে, এই জিনিসটা কোনো রাজনীতিবিদ (কি ছাত্র, কি বৃদ্ধ) চিন্তাও করেননা। আজকে যেসব ছাত্র রাজনীতিবিদদের জন্ম হচ্ছে, এরা সামনে আরো ৩০/ ৪০ বছর রাজনীতি করবে, সুতরাং, এখন যদি ছাত্র রাজনীতি বন্ধও করে দেয়া হয়; আগামী ২০ বছরেও দেশের পলিট্রিশিয়ান-ভাগ্যের পরিবর্তন হবে বলে মনে হয়না।

শাহ্ আসাদুজ্জামান-এর

সুস্থ রাজনীতি বলতে যদি কিছু বাকি থাকে, সেইটা আছে ছাত্র-যুবকদের রাজনীতিতেই।
-এই কথা ধরে বলতে হয়, আপনার কথা আংশিক সত্য; শুরুর দিকে সবাই সুস্থ রাজনীতির পক্ষে নিষ্ঠাবান থাকে এরপর চাপে পড়ে হয় তারা নীরবে সরে যায়, নয় লেজুড়বৃত্তি করে; আর একটা ত্যাদড় অংশ ক্যাডার/ টেন্ডারবাজ/ চাঁদাবাজ হয়ে যায় - এই এরাই আবার ভবিষ্যতে নেতা হয়ে পরবর্তি জেনারেশনকে সেই চাপে ফেলে দেয়।

শামীম এর ছবি

রাজনীতির সংজ্ঞাটাকে নতুন করে শিখতে হবে মনে হচ্ছে।

মুখ্যূসুখ্যু মানুষ তাই ... বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জ্যাম ছাড়া ছাত্র রাজনীতির আর কোন অবদান চোখে পড়েনি। ইয়ে, মানে...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

তানবীরা এর ছবি

একমত

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

ছাত্র রাজনীতির বর্তমান রুপে দোষের কিছু থেকে থাকে তবে মূলধারার রাজনীতি এর চেয়ে অনেক জঘন্য,,,

তো মূলধারার রাজনীতি উঠিয়ে দেয়া হয় না কেন??

রাজতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র যদি গনতন্ত্রের চেয়ে বেটার হয় তাহলে তাদের কেন গ্রহণ করা হয় না???

ছাত্র রাজনীতি কলুষিত হয়েছে,,, আমাদের সবার মতো,,,, পরিবেশের প্রভাব,, এইটাকে সুস্থকরে তুলতে হবে,,, এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না,,,

নিবন্ধন-নামঃ রিসাত
ইমেইল ঠিকানাঃ

তনময় এর ছবি

মতিউর রহমান ছাএলীগ-ছাএদলের নোংরা রাজনীতির দায়ভার সকল ছাএ সংগঠনের উপর চাপিয়ে চামে চামে ছাএরাজনীতি বনেধর আসল কথাটি পেড়েছেন। আপনিও তার সাথে মা্রচ করলেন !কেন? দল-লীগের বাইরে কি কোনো সংগঠন নেই ? তারা কি করছে ? তারাও কি এদের মতো চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস-অস্ত্র প্রদর্শনী করে বেড়াচেছ ? না করলে কী করছে ? আর নাই যদি করে তো দল-লীগের কর্মকান্ড দিয়ে সামগ্রিক ছাএ রাজনীতিকে বিচার কেন করা হবে বা এদের ভুলের ফল বাকিদের কেন ভোগ করতে হবে ?

আমি ছাএরাজনীতি বনেধর বিপরীতে নই, বরং ছাএ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সুস্ঠু ও গঠনমূলক ছাএ রাজনীতির পখখে । এটাকে লেজুড় মনে করতে পারলাম না। আর যারা লেজুড় মনে করছেন তাদের কাছে জানতে চাই- লেজ কেটে কী লাভ হবে বলুন তো? সাপের বিষ মাথায়ই থাকে,লেজে নয় ।

কীভাবে বল্লেন যে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো বিিচছন্ন দ্বীপের মতো হবে ?আপনি নিজে কি বিিচছন্ন ? আপনার মা-বাবা নাই ? তাদের হেলপ ছাড়া আপনি বঁাচতে পারতেন ? যদি মা বাবা কে না চিনতেন, তাদের থেকে বিিচছন্ন হতেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আপনার বনধুদের না চিনতেন তো তাদের প্রতি আপনার কোনো দরদ-ভালোবাসা ও দায়বোধ, তা যেটুকুই হোক, তৈরী হতো ? সেইরকম একটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি সমাজ থেকে বিিচছন্ন হয় তো সেখান থেকে বের হওয়া ছাএরা কী করবে সেটা ভাবেন ।এখন বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের গণমুখী শিখ্খা দিচেছ কিনা সেটা একটা আলোচনার বিষয় হতে পারে।তবে তা ভিন্ন আলোচনা ।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি পোরথোম আলোর কথা বলাই বাহুল্য ।মাএ দুমাস আগেই তো আওয়ামী লীগের নামে মতিউর রহমানের গলায় মধু ঝরলো !! তখন তো এইসব বন্দুকধারী যোদ্ধাদের তার চোখে পড়লো না।নাকি গতবারে মানিকের উত্তরাধারীকার বহন করা ছাএলীগকে চিনে নিতে ২০০৮ এ এসে বিদদ্ধ মতিবাবুর ভুল হলো ? এইসব ভন্ডামোর কোনো মানে হয় না ।

যারা ছাএরাজনীতি বনধ্ের কথা বলছেন তাদের কাছে আরো কিছু প্রশ্নের জবাব আশা করি।

# ছাএরাজনীতি বনধ্ হলে কী হবে ? কীভাবে হবে ? তাতে কার লাভ হবে ? কীভাবে ?
#গত দুই বছর তো ছাএরাজনীতি বনধ্ ছিল ? তাতে কী হোলো ফলাফল?

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

তন্ময়কে চলুক
আপনার প্রশ্নদুটো আমারও। জিজ্ঞাসু, বলুন এবার, আপনার প্রথম আলো গং তো সুযোগ পাইলেই ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ করা হউক এরকম স্লোগান তুলে। কেমনে করবেন কনতো?

আমার বুয়েটের অভিজ্ঞতা বলি। ঠিক কোন সালে মনে নাই, বুয়েটে মনে হয় একবার সিন্ডিকেটের সভা কইরা "বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ক বছরের জন্য নিষিদ্ধ" এরম একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হল। তার প্রয়োগ পদ্ধতি কি হইল? সোজা কথায়, ছাত্র সংসদ বন্ধ, ক্যাম্পাসে মিছিল সমাবেশ বন্ধ। জলপই-বাহিনী রাষ্ট্রে আইসা মাঝে মাঝে যেমুন্ডা করে আর কি!

তয় ফল কি হইল? ছাত্রগো সংগঠন-শিক্ষা শেষ হইল, গণতন্ত্র-বোধ লোপ পাইল। খেলাধুলা-সংস্কৃতির চর্চায় বাধা পড়ল। আর মাঝখান থেইকা? যে পিচ্চিহান্নান-লাম্বামান্নানগো থামানের লাইগা এত কিছু, তারা মহা আরামে খোলা ময়দানে বন্দুক মারামারি করল, টেন্ডারবাজি করল।

আপনের কাছে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের এর চেয়ে "সফল" অন্য কোন পদ্ধতি আছে নাকি কন দেহি?

এনকিদু এর ছবি

তয় ফল কি হইল? ছাত্রগো সংগঠন-শিক্ষা শেষ হইল, গণতন্ত্র-বোধ লোপ পাইল। খেলাধুলা-সংস্কৃতির চর্চায় বাধা পড়ল। আর মাঝখান থেইকা? যে পিচ্চিহান্নান-লাম্বামান্নানগো থামানের লাইগা এত কিছু, তারা মহা আরামে খোলা ময়দানে বন্দুক মারামারি করল, টেন্ডারবাজি করল।

আমিও আমার বুয়েটের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বলি । ছাত্র রাজনীতি না থাকায় (গত প্রায় দুই বছর) আমরা পরপর চারটী সেমিস্টার দ্রূত ঠিকঠাক মত পড়ে শেষ করতে পেরেছি । শেষ চারটি সেমিস্টা যতটা সুন্দর করে লেখা পড়া করতে পেরেছি, সেরকম গতিতে বুয়েট যদি তারও আগের চার সেমিস্টার চলত তাহলে আমাদের ব্যাচে কোন সেশন জট দেখা লাগত না । কিন্তু দুঃখের বিষয় তা হয়নি । আমরা যখন পাস করছি, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া স্কুল কলেজের বন্ধুরা ততদিনে চাকরি-বাকরি করে, অনেকেরই দুই একবার প্রমোশন হয়েছে । কয়েকজন বিয়ে শাদীও করে ফেলল । বন্ধুর বিয়েতে যাই, দেখি সমবয়সী অনেক ছেলে মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে, তাদের চাল চলন কথা বার্তা কি সুন্দর আত্নবিশ্বাসে ভরা । আমরা যারা বুয়েট এবং অন্যান্য সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তারা তখনো "ছাত্র" । একদল তরুন পরিশ্রমী কর্মী বন্ধুর মাঝে কয়েকজন আইবুড়ো বেকার ।

এইবার সংগঠন-শিক্ষা, খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা ইত্যাদির কথা কিছু বলি । গত দুই বছরের একটু বেশি সময় ধরে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ আছে আগেই বলেছি । এই দুই বছরে বেশ কয়েকটি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বিভাগের নামে উৎসব করেছে । তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশলের "ইলেক্ট্রিকাল ডে"(electrical day), কম্পিউটার কৌশলের "সি এস ই ডে"(cse day) , কেমিকৌশলের "ক্যামিক্যাল ডে"(chemical day) , পুরকৌশলের "সিভিল ডে"(civil day), যন্ত্রকৌশলের "মেকানিকাল ডে"(mechanical day) আইপিই বিভাগের "আই পি ই ডে"(IPE day) ইত্যাদি । কোন কোন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা এই সময়ের মধ্যে একাধিক বার তাদের বিভাগের উৎসব করেছে । সেই সাথে প্রত্যেক ব্যাচের ছেলেমেয়েদের র‌্যাগ আর লেভেল-কম্পিলশন আয়োজন তো আছেই । কোনটাতেই তো গানবাজনা, অভিনয়, বিতর্ক প্রতিযোগীতা, সিনেমা দেখার আয়োজন, সেমিনার ইত্যাদি এবং হৈ-হুল্লোড় কম হয়নি । র‌্যাগ বা লেভেল কমপ্লিশনে রঙ ছিটানোতে তো কোন ঘাটতি দেখলাম না । কাজেই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হওয়াতে সংস্কৃতি, খেলাধুলা, সাংগঠনিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়েছে - এই কথাটা একেবারেই ভুল ।

শুধু মাত্র ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে পিচ্চি হান্নানদের কে থামান যাবে না । আরো অনেক কিছু করতে হবে । তবে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে একদল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যতের বারটা বাজান থামন যাবে খুব ভাল ভাবেই ।

মৌলবাদী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অনেক আছেন । কিন্তু বিপ্লবের জন্য অন্তপ্রান বামপন্থী শিক্ষক নেই কেন ? এও আমাদের "ছাত্র রাজনীতির" ফলাফল । শিবিরের সদস্য ভাল ছাত্রটিকে যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয় যেন সে জীবনে উপরে উঠতে পারে, ঠিকঠাক মত যেন লেখাপড়া করতে পারে । হলের পরিবেশ বিরূপ হয়ে যাচ্ছে, তোমরা ধানমন্ডিতে অ্যাপার্টমেন্টে চলে যাও । ভাড়া পার্টি দেবে । নতুন বই পত্র কম্পিউটার যা দরকার সব পার্টি দেবে । একটা জিনিস বলে রাখি, বিশ্বাস করুন আর নাই করুন । এরা কিন্তু নকল করে পাস করে না । নিজ যোগ্যতাতেই পাস করে । তাই আমাদের প্রগতিশীল দলের প্রতিনিধি রাজপথ গরম করে আসা ছাত্র নেতাদেরকে দূর্নীতি করে শিক্ষক বানানর পরেও দেখা যায় মৌলবাদী শিক্ষকের মেধার দাপটে তারা খাবি খায় ।

আমাদের প্রগতিশীল দলের সদস্য ভাল ছাত্রটিকে শুধু মাত্র রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাষণ আর সেই রাস্তায় হেঁটে হেঁটে মিছিল করা ছাড়া আর কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পার্টি খুব একটা আগ্রহী হয়না । একজন মৌলবাদী ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক একশ জন বিপ্লব-অন্তপ্রান কমরেডকে এক ঢোক পানিতে গিলে খাওয়ার ক্ষমতা রাখে । একজন বিপ্লব অন্তপ্রান কমরেড যদি বড় ডাক্তার, প্রকৌশলী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারতেন, তাহলে তিনি মৌলবাদী দলের একহাজার কর্মীকে এক ঢোক পানি দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলতে পারতেন । প্রগতিশীলেরা কি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রক্ত ঢালতেই থাকবে ? আর ড্রাকুলা হয়ে মৌলবাদীরা সেই রক্ত চুষে খাবে ?


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

স্পর্শ এর ছবি

শুধু মাত্র ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে পিচ্চি হান্নানদের কে থামান যাবে না । আরো অনেক কিছু করতে হবে । তবে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে একদল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যতের বারটা বাজান থামন যাবে খুব ভাল ভাবেই ।

শিবিরের সদস্য ভাল ছাত্রটিকে যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয় যেন সে জীবনে উপরে উঠতে পারে, ঠিকঠাক মত যেন লেখাপড়া করতে পারে । হলের পরিবেশ বিরূপ হয়ে যাচ্ছে, তোমরা ধানমন্ডিতে অ্যাপার্টমেন্টে চলে যাও । ভাড়া পার্টি দেবে । নতুন বই পত্র কম্পিউটার যা দরকার সব পার্টি দেবে । একটা জিনিস বলে রাখি, বিশ্বাস করুন আর নাই করুন । এরা কিন্তু নকল করে পাস করে না । নিজ যোগ্যতাতেই পাস করে । তাই আমাদের প্রগতিশীল দলের প্রতিনিধি রাজপথ গরম করে আসা ছাত্র নেতাদেরকে দূর্নীতি করে শিক্ষক বানানর পরেও দেখা যায় মৌলবাদী শিক্ষকের মেধার দাপটে তারা খাবি খায় ।

চলুক
এ বিষয়ে নিজেই একটা পোস্ট দেব ভাবছি। তাই এখানে আর কিছু লিখলাম না। তবে তোমার কথাগুলোর সাথে আমার পর্যবেক্ষণ মেলে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

এনকিদু, "ছাত্র রাজনীতি" বন্ধ করার কার্যকর প্রক্রিয়া জানতে চেয়ে আমার এবং তন্ময়ের যে প্রশ্ন, আপনি তার উত্তর পরিস্কারভাবে দিয়েছেন বলে তো মনে হল না।

শুধু মাত্র ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে পিচ্চি হান্নানদের কে থামান যাবে না । আরো অনেক কিছু করতে হবে । তবে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে একদল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যতের বারটা বাজান থামন যাবে খুব ভাল ভাবেই ।

এর মানে কি? ছাত্র-রাজনীতি বন্ধের আসল উদ্দেশ্যই কি পিচ্চি হান্নানদেরকে থামানো না?আরো অনেক কিছু কি কি করতে হবে বলেন না?

মেধাবী ছাত্রদের ভবিষ্যতের বারোটা বাজানোর দায় ছাত্ররাজনীতির নয়। আবারো আমার বুয়েট-জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলি।

শুরুতে, আমরা ৯২ সালের ব্যাচ ক্লাস শুরু করলাম ৯৪ এর জুনে। এই যে ২ বছরের সেশন জ্যাম, এর দায় পুরোটাই কিন্তু ৯০ পূর্ব সময়ের এরশাদ-ভ্যাকেশনের। ঐ ভ্যাকেশন গুলোর দায় কি ছাত্র রাজনীতির, নাকি সামরিক সরকার তার বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলনকে উত্খাত বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বার বার প্রতিষ্ঠান বন্ধ, হল ভ্যাকান্ট করেছে, তার?

এখানেই শেষ না। আমরা ৯৪ এ দুই বছর দেরীতে ঢুকলেও ৪ বছরের কোর্স শেষ করেছি সাড়ে ৫ বছরে, ৯৯ এর শেষে। চলেন দেখি এই দেড় বছরের বাড়তি সেশন জ্যামের দায় কার?

প্রথম টার্মেই ফাইনালের আগে আগে ছাত্র-সংসদের নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে মারা মারি ভাংচুর, তার পর ভ্যাকান্ট। ব্যাপার কি? দেশে গণতন্ত্র এসেছে, বুয়েটেও আসবে, তাই নির্বাচন দেয়া হল। দেখা গেল জাতীয় নির্বাচনে যে দল জিতেছে, বুয়েটেও সেই দল জেতার সম্ভাবনা বেশি। তাতে নিশ্চিত পরাজয়ের আশংকায় ছাত্রলীগের পাণ্ডারা নির্বাচন বানচালের পায়তারা করল। তার থেকেই ভাংচুরের শুরু। তাহলে? এক্ষেত্রেও ছাত্র-রাজনীতি যারা বানচাল করতে চায় তারাই দায়ী।

দ্বিতীয় টার্মে পিএলে এর মাঝে আবার এক ঝামেলা হল। কোন এক ব্যাক্তিগত শত্রুতার জের ধরে (কারণ ঠিক জানা হয়নি) বুয়েট ক্যাম্পাসে এক ছাত্রকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হল। এর ফলে কোন এক কারনে ছাত্ররা গেল ক্ষেপে। তখন আগের টার্মের গ্যাঞ্জামের কারণে ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ। বহুতদিন পোলাপানে মিছিল-টিছিল করে নাই। তার উপরে পিএল, পরীক্ষা নিয়া এমনিতেই মাথা গরম। দিল কর্তৃপক্ষের গদিতে আগুন। মার ধর ভাঙ। পরিণামে আবার -- হল ভ্যাকান্ট, পরীক্ষা পিছাল ২ মাস।

তারপরে অনেকদিন অবস্থা ভাল গেল। অনেক পরে ৯৬ তে আওয়ামী-লীগ সরকার আইসা নির্বাচন দিল, নির্বাচন হইল, নির্বাচনে দল-লীগ-ফ্রন্ট-ইউনীয়ন সবাই খেলল, সবাই কিছু কিছু আসন পাইল, কই হল তো ভ্যাকান্ট হইল না?

তার পরেও কিসু ঘটনা হইসে। একবার ভিসি তাড়ানোর আন্দোলন। একবার আর্কিটেকচারের ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম নিয়া মারামারি। এক বা একাধিক বার বিশ্বকাপ ফুটবল আর ক্রিকেট নিয়া পরীক্ষা পিছানোর দাবি। সবগুলাতেই পরীক্ষা/সেশন কিছু না কিছু পিছাইসে।

আমার বুয়েট জীবনের এতগুলা সেশন জ্যামের ঘটনার মধ্যে আপনি কোন কোন টার জন্য ছাত্র রাজনীতিকে দায়ী করেন?

এনকিদু এর ছবি


এনকিদু, "ছাত্র রাজনীতি" বন্ধ করার কার্যকর প্রক্রিয়া জানতে চেয়ে আমার এবং তন্ময়ের যে প্রশ্ন, আপনি তার উত্তর পরিস্কারভাবে দিয়েছেন বলে তো মনে হল না।

আপনার লেখা ৮ নং মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য আমার লেখা ৮.১ । শুরু করেছি আপনার লেখা একটি প্যারাগ্রাফের উদ্ধৃতি দিয়ে । সেখানে আপনি লিখেছেন ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ফলে খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা ইত্যাদি বন্ধ হয়ে গেল । কিন্তু আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অভিজ্ঞতা ঠিক তা বলেনা । তাই আপনার মত আমিও আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অভিজ্ঞতা সবার সাথে ভাগাভাগি করলাম । এবং উদ্ধৃতির পর আমার নিজের লেখা প্রথম লাইনেই কিন্তু সেটা স্পষ্ট করে বলেছি হাসি

যেই দুটি প্রশ্ন করেছেন তন্ময় এবং আপনিও, সেই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা আমি করিনি । এজন্যই আপনি সেই প্রশ্ন দুটির উত্তর আমার ৮.১ নং মন্তব্যে পাননি ।


আমার বুয়েট জীবনের এতগুলা সেশন জ্যামের ঘটনার মধ্যে আপনি কোন কোন টার জন্য ছাত্র রাজনীতিকে দায়ী করেন?

উত্তর আপনি নিজেই দিয়েছেন হাসি
আপনার লেখাতেই (মন্তব্য ৮.১.২ )


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

সেখানে আপনি লিখেছেন ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ফলে খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা ইত্যাদি বন্ধ হয়ে গেল ।

উহু, আমি লিখেছি - খেলাধুলা-সংস্কৃতির চর্চায় বাধা পড়ল। একেবারে বন্ধ হয়ে গেলনা ঠিকই। এক পর্যায়ে ছাত্র-সংসদের কাজকর্মের শুন্যতা পূরণ করতে অন্য সংগঠন গুলো এগিয়ে এল। সেজন্য সংস্কৃতি চর্চায় কিছুটা বাধা পড়লেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। যাক, সেটা আলোচনার মূখ্য বিষয় না।

ঐকথার পরেই আমি লিখেছি, যেটা আপনিও কোট করেছেন -

আর মাঝখান থেইকা? যে পিচ্চিহান্নান-লাম্বামান্নানগো থামানের লাইগা এত কিছু, তারা মহা আরামে খোলা ময়দানে বন্দুক মারামারি করল, টেন্ডারবাজি করল।

বুঝলাম আপনি "ছাত্র রাজনীতি" বন্ধ করার কার্যকর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলতে চাননি! কিন্তু ঐটাই তো মূল প্রশ্ন। এত যে বিষফোড়া, কেমনে তার অপারেশন হবে? অষুধ-পথ্য কি? আপনার মত বা অভিজ্ঞতা কি বলে?

এতগুলা সেশন জ্যামের ঘটনার মধ্যে আপনি কোন কোন টার জন্য ছাত্র রাজনীতিকে দায়ী করেন? -- উত্তর আপনি নিজেই দিয়েছেন

মনে তো হল না। আমি তো ছাত্র রাজনীতিকে দায়ী করিনি। আপনি আরো সমসাময়িক কালের অভিজ্ঞতা থাকলে বলুন না। যোগ হয় কিছু।

আর সংগঠন থাকলে দলাদলি থাকবে, কোন্দল থাকবে। এসব বাস্তব জীবনের অনিবার্য সত্য। সেখানে সংগঠনের নেতৃত্ব ওসব কোন্দলকেই পুষতে চায় নাকি গঠন মূলক কিছু করতে চায়, সেটা নেতৃত্বেরই দোষ বা গুণ। হতে পারে সেটা জাতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিরই দোষ। সেই দোষ দুর করতে হলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির চর্চা বাড়ানো ছাড়া আমি তো আর কোন সোজা পথ আপাতত দেখি না। গণতান্ত্রিক চর্চা থাকলেই ঐসব মারদাঙ্গা নেতৃত্ব ধীরে ধীরে নতুন নেতৃত্ব দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। শর্টকাট আর কোন পন্থা আছে বলে তো মনে হয় না।

সুশীলরা অবশ্য নানান রকমের এঞ্জিনিয়ারিং করতে চান, আমি তাদের দলে নাই।

ফাহিম এর ছবি

পরিপূর্ণভাবে সহমত

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

ভ্যানগার্ড [অতিথি] এর ছবি

প্রিয় জিজ্ঞাসু
আমি জানি, আপনি এবং আপনার মতো যারাই ছাত্ররাজনীতিরআজকের কলুষিত চেহারা নিয়ে, ছাত্ররাজনীতিকে ঘিরে চলমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তিত, আপনাদের সকলের সাথে আমিও শরিক । আপনাদের এ শঙ্কা এবং মর্মবেদনা আসলে দেশের ভবিষ্যত, শিক্ষা এবং ছাত্রসমাজের ভবিষ্যত নিয়ে । কিন্তু ভাই মনের দুখে বনে গেলেও যেমন লাভ হবে না, তেমনি হা-হুতাশ বা বিলাপ করলেও কোনো ফল হবে না । কি, কেন, কিভাবে _ অন্তত এ তিনটি প্রশ্ন তুলতেই হবে।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার জন্য আপনি সুপারিশ করেছেন । তাতে কি হবে? না, সন্ত্রাস বন্ধ হবে । তাতে কি হবে? না, চাঁদাবাজী বন্ধ হবে।তাতে কি হবে? না, টেন্ডারবাজী বন্ধ হবে।আপনার ভাষায়_"এদের কেউ কেউ সিস্টেম থেকে কন্ট্রাকটর/ঠিকাদার হয়ে বের হয়, ভবিষ্যতে এমপি হওয়ার স্বপ্ন ও আশা নিয়ে। দেশের শিক্ষকরা রাজনীতি করে এটা ওটা পদ পাওয়ার আশায়।"_ অর্থাত ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলে এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।অত্যন্ত আশার কথা।এ রকম হলে খুবই ভালো হয়।আমরা অনেকেই স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে বাঁচি।'এই জাতি' আবার ‍'মাথা তুলে' দাঁড়াবে।
ছাত্ররাজনীতি পরাধীনতারআমলে ভাল ছিল, কেউ কেউ বলেন।আপনিও বলেছেন।অনেকে আরেকটু এগিয়ে বলেন, ৯০এর গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতির একটা ইতিবাচক ভূমিকা ছিল।আজ আর নেই।কিন্তু কেন নেই? এর জবাবে আপনারা বলেন, সেদিন দেশ পরাধীন ছিল, সবাই স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছিল, তাই ওই রাজনীতির একটা প্রগতিশীল ভূমিকা ছিল।
এর অর্থ করলে দাঁড়ায়_ সেদিন ছাত্ররা পরাধীনতার বিরুদ্ধে, যা ছিল সে সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা, তার বিরুদ্ধে লড়াই করছিল।আমি যদি ভুল না করি, সেদিনো আজকের মতো সন্ত্রাসী-গুন্ডামী শিক্ষাঙ্গনে ছিল (আজকের বিচারে সেগুলোকে যত তুচ্ছই মনে হোক না কেন, সেদিনকার বিচারে তার মাত্রা ছিল শঙ্কিত হওয়ার মতোই।সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ঠ্যাঙারে বাহিনী ছিল যার নাম ছিল এন এস এফ।ছাত্রশিবির ছিল যারা '৭১ সালে বাঙালি জাতির ওপর ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড, নারী নির্যাতন, বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো কাজে শরিক হয়েছিল।) কিন্তু দেশের মানুষ তাদের পক্ষে সমর্থন দেয়নি।সেদিনও ক্ষমতালিপ্সু দালাল শিক্ষক ছিল।অনেকের নাম করা যাবে, শুধু একটা উদাহরণই যথেষ্ট_'অধ্যাপক' গোলাম আযম।আর সেদিনও দেশের শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-অভিভাবক কেউ কেউ ছাত্রদেরকে এসব 'নোংরা ব্যাপার' থেকে দূরে থাকার সুপরামর্শ(!) দিয়েছিল।প্রশ্ন হল আজকের পরিস্থিত কি? দেশের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা কি? সে সমস্যা সম্পর্কে ছাত্রসমাজ কি মনোভাব ধারণ করবে? তাদের কি ভূমিকা হবে? এর কোনে জবাব কিংবা উল্লেখ আপনার বা আপনারা যারা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার কথা বলছেন, তাদের লেখায় বা কথায় নেই।প্রথম আলোর মতিউর রহমান সাহেবের লেখায়ও নেই।
* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজেই অস্ত্র তৈরি হয় না।তাহলে ছাত্রদের হাতে বা তথাকথিত ছাত্ররাজনীতির সৈনিকদের হাতে অস্ত্র আসে কীভাবে?আমাদের পুলিশ-বিডিআর কি করে? র‌্যাব কি করে?
* বাসটার্মিনাল, হাট-বাজার, ফুটপাথ, নগর-ভবন ইত্যাদি দখল নিয়ে যে মারামারি হচ্ছে,আগেও হয়েছে, সেখানে কারা করে? ছাত্রদল-ছাত্রলীগ না হয় থাকলো না কিন্তু যুবদল-যুবলীগের কি হবে?
* না হয় যুবদল-যুবলীগও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল।কিন্তু আওয়ামীলীগ-এনপি-জামাত-জাতীয়পার্টির কি হবে? লক্ষ্মী-তাহের-গোলন্দাজ-শামীম ওসমান-হাজী সেলিম-হাজারী গং কিংবা তারেক-ফালু-দুলু কিংবা সদ্যসমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে যে ভদ্রলোকদের তাণ্ডব দেশবাসী দেখলেন (এবং আমি শুধু নই, আপনিও নিশ্চিত যে এ ধরনের আরো অনেক নাম আগামীতে আমাদের শুনতে হবে) তাদের কি হবে?
* ট্প-টেরর খ্যাত সুইডেন আসলাম-কালা জাহাঙ্গীর-কালা ফারুক-মুরগি মিলন _এরা তো কেউ ছাত্ররাজনীতির প্রডাক্ট নয় _এদের জন্ম বন্ধ হবে কি করে?এদের এ পরিণতি কি এদের বাবা-মা-ভাই-বোন নিকট আক্মীয়-স্বজন কেউ চেয়েছিল? আপনি বা আমি চেয়েছিলাম? এদের যখন ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয় _এমন পরিণতি কে চেয়েছিল?
* গতবছর দৈনিক ইত্তেফাকে (আমি পরে তারিখ জানাব, এ মুহূর্তে পত্রিকাটি আমার হাতের কাছে নেই) একটি রিপোর্ট বেরিয়েছিল।ঢাকা শহরের কিলার-গ্রুপের সদস্যদের অধিকাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০/২২ এর ভেতরে।এরা কোন রাজনীতির ফসল?এদের বাবা-মা কি চেয়েছিল যে এরা কিলার হোক?
* মতিউর রহমান বা আপনারা যারাই সন্ত্রাসের অজুহাতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা বলেন _এ কথাগুলোর জবাব কেউ দেন না। বরং মতিউর রহমানরা যা করেন তা হল _
* নির্বাচনের আগে যখন যে দিকে হাওয়া তখন সে দিকে পাল তুলে দেন। ২০০১এর নির্বাচনের সময়ও দেখলাম, খালেদা জিয়ার চাইতে দেশপ্রেমিক আর কেউ নাই, আওয়ামীলীগের চাইতে খারাপও কেউ নাই _এ জাতীয় প্রাচার চালাতে। (আমার কথার সত্যতা চাইলে ২০০১এর নির্বাচনের আগের পত্রিকাগুলো যে কোনে লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখে নিতে পারেন।) এবারো তাই। বিএনপি-জামাতের চেয়ে খারাপ কেউ নাই।টাকার খেলা শুধু বিএনপি-জামাতই খেলছে।দেশের সব সন্ত্রাসী যেন বিএনপির ভেতর গিয়ে বাসা বেঁধেছে।আ:লীগ ধোয়া তুলসি পাতা।এ রকম হাওয়া তুললেন।
তা নাহলে গত ১৮ তারিখ বিশেষ ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যে বিশেষ ক্রোড়পত্র উনি ছাপলেন _ তাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শততম ধর্ষণের উদাহরণ দিলেন।অথচ ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই তো ছাত্ররাজনীতির আরেকটি ধারা _ বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো পুলিশের ঠ্যাঙানি, ছাত্রলীগের কর্মীদের ঠ্যাঙানি, প্রশাসনের রক্তচক্ষু, শিক্ষকদের ফেল-করিয়ে দেওয়া, বহিষ্কার করা ইত্যাদি নানা হুমকি মোকাবেলা করে ওই কুখ্যাত ধর্ষক মানিক (ছাত্রলীগের জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক _এক অসাধারণ মানিক রতন, যার কোনে বিচার এ দেশে হয়নি, যাকে হাসিনা সরকার জামাই আদরে বিদেশ উচ্চশিক্ষা নিতে পাঠিয়ে দিল) এবং তার সহযোগী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে গেছে_ তাদের কথা একবারও উচ্চারণ করলেন না।।মানিক যদি ছাত্ররাজনীতির কলংক হয়, তাহলে জাহাঙ্গীরনগরের ওই আন্দোলনকারীরা কি আমাদের অহংকার নন? বাংলাদেশ কি তাদের নিয়ে গর্ব করবে না?
*একই কথা খাটে বুয়েটর সনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। সনি হত্যার বিচার কবে হবে _এ প্রশ্ন তুলেছে মতিউর রহমানের প্রথম আলো।পত্রিকার পাতায় এ বিচার চাওয়া অনেক সহজ।কিন্তু আমার চারজন বন্ধু সনি হত্যার বিচার, সানি হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বুয়েট থেকে বহিষ্কার _এ সব দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে বুয়েট থেকে বিভিন্ন মেয়াদের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।সেদিন বুয়েটে যারা আন্দোলন করেছিল, তারাও পুলিশের ঠ্যাঙানি, ছাত্রদলের গুন্ডাদের ঠ্যাঙানি খেয়েছিল। প্রশাসনের নানা হুমকি মোকাবেলা করেছিল। কই _ প্রথম আলো বা মতিউর সাহেব তে একবারও (ভুল করেও) তাদের কথা লিখল না। তারাও তো ছাত্ররাজনীতির ফসল। নির্বাচনের সময় যে মহামতি নাসিরউদ্দীন পিন্টু সাহেবর কথা মতিউর সাহেবরা লিখতে ভোলেন নি, ওই পিন্টু ভাইজানইতো তখন ছাত্রদলের নেতা ছিলেন! বুয়েটে সনি হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের একজন এবার ঢাকা শহরের বুকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। মতিউর ভাইদের পত্রিকায় তো একদিনো তার কথা লেখতে দেখলাম না!
* পুনরাবৃত্তি, তবুও লিখছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী-নির্যাতন কিংবা শিক্ষক হত্যার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ছাত্রশিবির যেমন ঘটিয়েছে _ তার প্রতিবদাও তো সেখানে হয়েছে। মতিউর রহমানরা কি তাদের দেখতে পান না?

#এমন অনেক কথা লেখা যায়। জানি না এ সব কথা আপনাদের মর্মে পৌঁছবে কি না।আপনারা ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-শিবিরের অপরাজনীতির দায় গোটা ছাত্রসমাজের কাঁধে এবং সত্যি সত্যি ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে, দেশের সমস্যা নিয়ে, কৃষক-শ্রমিকের সমস্যা নিয়ে সোচ্চার_ তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেদের দায় এড়াতে চান। যারা সন্ত্রাসের জন্মদাতা, লালনকর্তা তাদের বহাল রেখে, তাদের সমর্থন দিয়েই আপনারা সন্ত্রাস দূর করতে চান। যারা একবার দেশের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী রাজাকারকে পুনর্বাসন করেছে, আরেকবার পতিত স্বৈরাচারকে (আরেক রাজনৈতিক খুনী-সন্ত্রাসী) কোলে নিয়েছে _আপনারা তাদের পেছনেই লেজুড় হয়ে ঘুরছেন। তাদের কাছেই ইনসাফ চাইছেন। মনে রখাবেন, এরা যদি কোনোদিন ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার কথা বলে, সেটা আপনার আমার কিংবা দেশের মানুষের কথা ভেবে, শিক্ষার পরিবেশের কথা ভেবে করবে না _ করবে দেশের আরো বড় সর্বনাশ করার জন্য।
সবশেষে একটা কথা বলি, আপনারা হয়ত জানেন, ন্যায়বিচার সম্পর্কে একটি কথা খুব জোর দিয়ে বলা হয়_ তথ্য-প্রমাণ-সাক্ষী-সাবুদের অভাবে যদি একজন অপরাধী ছাড়াও পেয়ে যায় কিছুতেই যাতে একজন নিরপরাধ ব্যক্তি সাজা না পায়।সবচেয়ে ভাল হয় যদি প্রকৃত দোষী সাজা পায়। আশা করি আপনাদের বিচার ন্যায়বিচার হবে।দোষীকে মকুব করে নিরপরাধকে সাজা দেবেন না।
আপনাদের সবাই কে ধন্যবাদ।
ভ্যানগার্ড

জিজ্ঞাসু এর ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলবার মানিক গংদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ছাত্ররাজনীতির সদস্যদের চেয়ে সাধারণ ছাত্ররাই কিন্তু সংখ্যায় বেশি ছিল। আমার পরিচিত বন্ধুবান্ধব ছিল সেখানে। আমি বলতে চাই কোন সচেতন আন্দোলনের জন্য কি শিক্ষাঙ্গনে আমার ছাত্র পরিচয়টাই যথেষ্ট নয়!! আমি ছাত্রশিক্ষকরাজনীতির অবসান চাই। শিক্ষাঙ্গনের চার-পাঁচটা বছরকে অন্তত আমাদের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নির্বিঘ্ন করা হোক।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

সাধু এর ছবি

ইতিহাস থেকে কেউ শিখ্খা নেয় না । স্বাধীনতার সফল সংগঠক হিসাবে বংগবন্ধু জাতির পিতা নিঃসন্দেহে, কিন্তু ৭১ পরবর্তী মুজিবের ভুল ও ব্যর্থতার সমালচনার প্রয়োজন আছে । সেই কাজটা আ,লীগের দ্বারা কখনো হয়নি । কাজটা করতে পেরেছে প্রতিকৃয়াশীলেরা । পরিতাপের বিষয় । রাষ্ট্র পরিচালনার বেলায় সাফল্যটাকে সবার এবং ব্যর্থতাকে নিজের বলে মেনে নেয়া, গনতন্ত্রের স্বাভাবিক শীষ্টতা । ৭১ এর পরে কোন বর পূত্র বা কন্যাদের দ্বারা এমন বাআদাব হওয়া সম্ভব হয়নি। অত্যান্ত স্বাভাবিক প্রকৃয়ায় আলীগ একই ভুলের দিশারি । অতীতের মানুষ ও দিন গুলোর কাছ থেকে কেউ শিখ্খা নেয়নি, নিলে বর্তমান অন্যরকম হতো । এখন আর এদেশে মন্দের ভাল বলে কোন ব্যক্তি বা দল পরিচয় দিতে পারবে না । মন্দের ভালর জন্য আমাদের অপেখ্খা করতে হবে ।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

দেখুন ছাত্ররাজনীতি আর ছাত্রদের সাংগঠনিক বিভিন্ন তৎপরতাকে এক করে ফেলেই সবসময় ছাত্রশিক্ষক রাজনীতির পক্ষে বলা হচ্ছে। আমি মূল নিবন্ধে বলেছি বর্তমান রূপে ছাত্ররাজনীতির নামে বিদ্যমান সিস্টেম আর চলতে পারে না। যারা সাংগঠনিক বিভিন্ন তৎপরতার দোহাই দেন তাদের জন্য বলি- নটরডেমিয়ানরা সবচেয়ে বেশি সাংগঠনিক দিক দিয়ে তৎপর। তাদের কোন্ দিক থেকে আপনি খাটো করবেন। ন্যাচার স্টাডি ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, আউটওয়ার্ড বাউন্ড এডভেঞ্চার ক্লাব, কম্পিউটার ক্লাব, সাইন্স ক্লাব ইত্যাদি সহ অনেকগুলো প্রকাশনা নটরডেমে প্রকাশিত হয় ছাত্রদের সাংগঠনিক তৎপরতার অংশ হিসেবেই। তার জন্য নটরডেমিয়ানরা ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলে বা ছাত্র ইউনিয়নে নাম লেখাতে যায়নি কোনদিন। তাতে তাদের রাজনীতি সচেতনতা, সংস্কৃতি সচেতনতা, সাংগঠনিক সচেতনতা কোন অংশে কম হয় বলে কি কেউ দেখাতে পারেন? ছাত্ররা ছাত্র এই পরিচয়টাই কি যথেষ্ট নয়? সে অমুক দলের জিএস, অমুকে ভিপি এসব পরিচয় ছাত্রত্বকে নষ্ট করা ছাড়া আর কোন উপকার করেছে কোন কালে? শিক্ষাঙ্গনে কেন ছাত্র ছাড়া আমার অন্য কোন পরিচয় থাকবে? একজন শিক্ষকেরই বা কেন লাল, নীল পরিচয় থাকবে? কেন শিক্ষকেরা নিরন্তর গবেষণা বাদ দিয়ে ছাত্রদের লেখা মেরে দিয়ে গবেষণা জার্নালে নিজের নামে ছাপাবে? এসবই হয় কারণ তারা রাজনীতি করে। শিক্ষকেরা পাঠদান করে না, ছাত্ররাজনীতিবিদরা অধ্যয়ন করে না। এতে জড়িতরা ছাড়াও প্রকৃত ছাত্রছাত্রীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তথা সার্বিকভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

ন্যাচার স্টাডি ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, আউটওয়ার্ড বাউন্ড এডভেঞ্চার ক্লাব, কম্পিউটার ক্লাব, সাইন্স ক্লাব
ইত্যাদির পাশাপাশি "পলিটিকাল একটিভিস্ট ক্লাব" থাকতে অসুবিধা কি? সেটার নাম আওয়ামী ক্লাব না বাওয়ামী ক্লাব হল তাতে কি আসে যায়? সায়েন্স, ডিবেট, সাহিত্য এসব কিছু তো মানুষের জন্যই, তাহলে মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্লাব থাকবে না কেন?

জিজ্ঞাসু এর ছবি

আমার মতে শিক্ষাঙ্গনে আমি যেসব একটিভিটির কথা উল্লেখ করেছি সেগুলো ছাত্রদের গুণগত উৎকর্ষের জন্য প্রয়োজন। পলিটিক্যাল একটিভিস্ট ক্লাবের যে কথা আপনি বলছেন, তা থাকার অর্থ হচ্ছে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়া। ছাত্ররা মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে হলে তাদের সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে যার জন্য শিক্ষার পাশাপাশি তাদের জন্য আমার উল্লেখিত কর্মকাণ্ডগুলি সহায়ক ভূমিকা রাখে। নিজেদের প্রস্তুত না করেই তারা চেয়ারটেবিল ভেঙ্গে নিয়ে, হকিস্টিক আর গোলাবারুদ নিয়ে রাস্তায় অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেমে পড়তে হবে এমন ধারনা মোটেই শুভ ধারনা নয়। এদেশের বিপ্লবী বলুন গণতন্ত্রী বলুন সবারই ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের হাতে গোলাবারুদের কমতি নেই। যা তাদের আদৌ কোন প্রয়োজন নেই। ছাত্র অবস্থায় অধ্যয়ন ছাড়া আর কোন কিছুর প্রয়োজন আছে বলে আমি মানি না। আর পাশাপাশি যেসব সুকুমার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আছে দুর্যোগে ত্রাণ তৎপরতা বলুন, বয়স্কাউট, গার্লগাইড, রেডক্রস সবকিছু সময়ের প্রয়োজনে ছাত্ররা করে। সেখানে তারা সফলও হয়। মৌলিক অধিকারের দোহাই দিয়ে শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির মত ভারি বিষয়কে টেনে এনে শুধু ছাত্রদের ক্ষতিই হয়। ছাত্রদেরকে চারপাঁচটি বছর ছাড় দিন, তারা নিজেদের তৈরি করুক; তারপর শিক্ষাঙ্গনের গণ্ডি ভালভাবে পার হয়ে গিয়ে সে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়ুক তাতে দেশের ভালই হবে। কারণ ততদিনে সে নিজেকে তৈরি করেছে। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির যত দোহাই আপনারা দিচ্ছেন তা হচ্ছে কাঁচা ইট দিয়ে ঘর বানানোর মত। বৃষ্টি, বর্ষায় সহজেই গলে যেতে বাধ্য সে ঘর। ছাত্ররা চারপাঁচ বছরে নিজেদের পোড়া ইটের মত মজবুত করুক তারপর তারা রাজনীতিতে সক্রিয় হোক তাতে বরং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নতিই হবে।
@ ভ্যানগার্ড
ছাত্র রাজনীতির নেতারাই সমস্যার সৃষ্টি করেছে। আপনি আন্দোলনকে সংগঠিত করার কথা বলেছেন। সময়ের প্রয়োজনে মানুষের মধ্য থেকে সংগঠক দাঁড়িয়ে পড়তে দেখেছেন কখনো? বিবেকই মানুষের সংগঠক। সিপাহি বিপ্লবের সময় এমন কতক লোক দাঁড়িয়ে গিয়েছিল যাদের কেউ সংগঠিত করতে হয় নি। এজন্য দয়া করে ওসব সাংগঠনিক তৎপরতার দোহাই দিয়ে শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক তৎপরতাকে জাস্টিফাই করবেন না। আমার অত্যন্ত মেধাবী এক বন্ধু বিপ্লবী ছাত্ররাজনীতি করে শেষ পর্যন্ত মাস্টার্স পরীক্ষায়ই অংশ নেয়নি। কেউ কি পারবে তার শিক্ষা জীবনকে ফিরিয়ে দিতে?

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

ভ্যানগার্ড [অতিথি] এর ছবি

প্রিয় জিজ্ঞাসু
ব্লগে বসে বসে জওয়াব আর জওয়াব-ই-শিকওয়া করার জন্য অনেক শক্তি দরকার। আমার সে শক্তি খুবই সীমিত। ফলে আপনার সঙ্গে অসীম সময় ধরে কথা-চালাচালি করা আমার জন্য কঠিন। আমি কিছু প্রশ্ন করেছিলাম, তার জবাব কিন্তু পাইনি। আপনার, কিংবা মতিউর রহমান সাহেবদের লেখায়ও না। ফলে পুনরায় প্রশ্নগুলো রাখছি।
এর সাথে শুধু এটুকুই বলব, জাহাঙ্গীরনগরে আপনার বন্ধুরা ছিলেন যারা সেদিন ধর্ষণেনর বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন _ এ কথা শুনে খুশি হলাম। কিন্তু আপনার কথার সাথে শুধু এটুকু যুক্ত করতে চাই _ আপনার ওই বন্ধু, যারা আপনার ভাষায় সাধারণ ছাত্র, কোনোভাবেই একথা দাবি করতে পারবেন কি যে ওই আন্দোলন তারাই গড়ে তুলেছিলেন? আন্দোলনের শেষ পর্যন্ত লেগেছিলেন? আমি আশঙ্কা করিছ, তারা কেউ-ই বুকে হাত দিয়ে সততার সাথে এ কথা বলতে পারবেন না।
ক্ষণিক উত্তেজনার বশে, আমি আপনি বা অনেকেই ক্ষেপে ওঠে যা-তা একটা করে ফেলতে পারি। কিন্তু আন্দোলন বলতে যদি কিছু বোঝায়, তার জন্য সংগঠিত শক্তি চাই, সে শক্তির একটা আদর্শিক ভিত্তি চাই।
আশা করছি আপনি আমার পূর্বোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন। আপনারা দেশ-সমাজ নিয়ে ভাবেন, এর জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
ভাল থাকুন।

স্পর্শ এর ছবি

কিন্তু আন্দোলন বলতে যদি কিছু বোঝায়, তার জন্য সংগঠিত শক্তি চাই, সে শক্তির একটা আদর্শিক ভিত্তি চাই।

প্রিয় ভ্যানগার্ড
আর আমার চাই এই 'ভাল জিনিসের' কিছু 'সাম্প্রতিক' উদাহরণ। একই উৎস(সাংগঠনিক শক্তি) থেকে উৎসরিত যার চেয়ে তীব্র কোন খারাপ উদাহরণ আমরা কেউ দিতে পারব না।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

বুয়েটে সনি হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলন কিম্বা জাহাঙ্গীরনগরে ধর্ষক বিরোধী আন্দোলনে কি সাংগঠনিক কোন শক্তি লাগে নি বলে আপনি মনে করেন?

স্পর্শ এর ছবি

সনি কে যারা হত্যা করল তারা কি ডাকু ছিল, নাকি ছিল ছাত্রনেতা?
সেই ধর্ষক কি লম্পট জমিদার পুত্র ছিল, নাকি ছিল ছাত্রনেতা?


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

তারা ছাত্রনেতা ছিল ঠিকই। কিন্তু প্রতিবছর নিয়মিত সংসদ নির্বাচন না হওয়ায়, এবং তদুপরি বৃহত্তর জাতীয় রাজনীতির মাস্তানদের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা লম্পট-ডাকুতে পরিণত হয়েছে।

সুস্থভাবে নিয়মিত নির্বাচন হলে, সংসদের জবাবদিহিতামূলক গঠনমূলক নিয়মিত কার্যক্রম থাকলে এসব লম্পট-ডাকাত বেশিদিন টিকত না।

অনিশ্চিত এর ছবি

সমস্যা হলো, ছাত্রদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। ফলে ছাত্রদের কোনো বিচ্যুতি দেখলে মানুষ খুব সহজেই সচকিত হয়। না হলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধে যেসব কথাবার্তা হচ্ছে, সেসব কথাবার্তা প্রযোজ্য হওয়া ছিলো যুবরাজনীতি, শ্রমিকরাজনীতি এমনকি জাতীয় রাজনীতিতেও। কারণ রাজনীতির নামে ছাত্ররা যা করছে, তার চাইতেও বেশি করছে ওই রাজনীতির মানুষরা।

কিন্তু এ দিয়ে ছাত্ররাজনীতির বর্তমান কলুষতাকে জাস্টিফাই করা যায় না। খারাপ কাজ খারাপই। প্রশ্ন হলো, এটা ছাত্ররাজনীতির দোষ, নাকি যারা ছাত্ররাজনীতি করছে তাদের গুটিকতকের দোষ? দুটোকে এক করে দেখলে সমস্যা। আমি যদি আজকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে পর্ণোগ্রাফি দেখি, তাহলে সমস্যাটা ইন্টারনেটের? নাকি আমার? এগুলোর পার্থক্যটা খোলাসা হওয়া উচিত।

আজকে কথায় কথায় ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা বলা হয়। কিন্তু একটু খোঁজখবর নিলেই পাওয়া যাবে ছাত্ররাজনীতির এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেন জাতীয় পর্যায়ের মূল সংগঠনের দলীয় নেতারা। পত্রিকাতেই খবর পাওয়া যায়, একেক বড় নেতা দলের একেক গ্রুপকে সমর্থন দেয়। সবাই চায় তার নিজের গ্রুপ ক্ষমতা দখল করুক। তাদের এই ধরনের মানসিকতার বলি হচ্ছে ছাত্ররা। ছাত্রদল, ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্রশিবির- দলগুলো তাদের মূল দলের হয় অঙ্গসংগঠন নয় সহযোগী সংগঠন। সেক্ষেত্রে দলগুলোকে সামলানোর দায়িত্ব মূল দলের কাধেই পড়ে। তারা সেখানে ব্যর্থ। সেজন্য প্রথমেই যদি বন্ধ করার কথা বলা হয় তাহলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না করে দলীয় রাজনীতি থেকে একে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। কোনো ফর্মেই যেন ছাত্ররা দলীয় রাজনীতির লেজুরবৃত্তি করতে না পারে, সেই ব্যবস্থাটাই আসলে করা দরকার। আর ছাত্ররাজনীতিকে সামলাতে না পারার জন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের যেমন শাস্তি হওয়া উচিত দুর্বৃত্ত হিসেবে, তেমনি তাদের অভিভাবক মানে মূল দলের নেতৃবৃন্দকেও নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে এর ব্যর্থতা স্বীকার করা উচিত।

সমাজে অন্যদের মতো ছাত্ররাও নাগরিক। তাদের রাজনীতি বন্ধ করার অর্থ হচ্ছে নাগরিক অধিকার থেকে তাদের বিযুক্ত করা। সেটা আইনের চোখে অপরাধ হওয়ার কথা। যদি সেটা করা হয়, তাহলে একই যুক্তিতে শ্রমিক রাজনীতি, যুবরাজনীতি ইত্যাদিও বন্ধ করা দরকার। আর জাতীয় রাজনীতির কথা তো বলাই বাহুল্য। সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাস, সহিংসতা তো হয় জাতীয় রাজনীতিতেই।

ছাত্ররা যাতে নিজেদের অধিকার আদায় নিয়ে কাজ করতে পারে সুস্থভাবে, সেই প্রক্রিয়াটা খুঁজে বের না করে ঢালাওভাবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার কথা বলাটা বর্তমান সময়ের ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

ফাহিম এর ছবি

এতো বেশি বোঝার তো দরকার নেই। সাদা চোখে কি দেখি? ছাত্র রাজনীতি এই পর্যন্ত এক আনা ভালো কিছু দিয়ে থাকলে বাকি পনেরো আনাই খারাপ ফল দিসে। কারন যাই হোক না কেন, একে পোষার কোন দরকার দেখতেসি না।

ছাত্রাবস্থায় মানুষের প্রথম উদ্দেশ্য লেখাপড়া করা। কেউ যদি নিজের একাডেমিক রিকোয়ারমেন্ট সফলতার সাথে চালানোর সাথে সাথে পর্যাপ্ত সময় পায়, তবে নিজ উদ্যোগে রাজনীতি কতে পারে, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয়। রাজনীতি করার বেশি খায়েশ হলে এলাকায় করুক। চান্দাবাজী, টেন্ডারবাজীর জায়গা ইউনিভার্সিটি না।

রাজনৈতিক দলগুলা এই ছাত্র-রাজনীতি এখন পুষতেসে শুধুমাত্র নিজের সুবিধা উদ্ধারের জন্য। বুয়েটে সনি নামের নির্দোষ মেয়েটা মারা গেলো শুধুমাত্র টেন্ডার দখলের লড়াইয়ে। সনি হত্যা বিচারের জন্য যতটা না ছাত্র-নেতারা আগায় আসছিলো, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্পৃক্ততা ছিলো সাধারন ছাত্রদের।

ছাত্রলীগ আর ছাত্রদল সম্পূর্নভাবে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, বামপন্থীগুলারে কেন যেন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা মনে হয়, হুদাহুদিই লাফায়, কামের কাম কিসু করার মুরোদ নাই। আর শিবিরগুলা মানুষ না, ওগোর কথা কইলাম না।

মোট কথা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যাহত করে, এই রকমের ছাত্র-রাজনীতির খ্যাতা পুড়ি। ৪ বছরের কোর্স শেষ করতে ৬ বছর লাগাইসে যেই রাজনীতি, সেই রাজনীতির খ্যাতা পুড়ি। সনিরে মারসে যেই রাজনীতি সেই রাজনীতির খ্যাতা পুড়ি। সেঞ্চুরিয়ান মানিক জন্ম দেয় যেই রাজনীতি, সেই রাজনীতির খ্যাতা পুড়ি।

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

শাহ্ আসাদুজ্জামান এর ছবি

আরে ভাই খ্যাতা কেমনে পুড়বেন হেইডা কন না? ছাত্র-সংসদ, নির্বাচন, মিটিং-মিছিল বন্ধ কইরা তো আসল খ্যাতা পুড়তাছেনা! খালি "ছাত্র রাজনীতি" নাম কইয়া এবস্ট্রাক্ট একটা কনসেপ্টের খ্যাতা পুইড়া তো লাভ নাই।

ফাহিম এর ছবি

ক্যানো ছাত্র-সংসদ, নির্বাচন, মিটিং-মিছিল বন্ধ কইরা খ্যাতা পুড়বো না? অবশ্যই পুড়বো!

এইগুলা না থাকলে অন্তত ক্লাসগুলা ঠিকঠাক মতো হইবো, ৪ বছরের কোর্স ৬ বছর লাগবো না। এনকিদুর আগের একটা মন্তব্যে তো বলসেই, যেই দুই বছর রাজনীতি ছিলো না, সেই দুই বছর কোন ঝামেলা ছাড়াই গেসে, এই ফ্যাক্ট অস্বীকার করতেসেন কেন?

ভাই, আমি একটা জিনিষ বুঝতে পারি না, যার এতো রাজনীতি করার খায়েশ, সে মূলধারার রাজনীতি করুক। ইউনিভার্সিটিতে কি দরকার?

দরকার একটাই, চান্দাবাজী, হল দখল আর টেন্ডারবাজী। আর জাহাংগীরনগর হইলে মেয়েবাজী। আরেকজন ছাত্র নামের অছাত্র হের সুবিধার লেইগা ক্যাম্পাসে পিডাপিডি করবো, আর হের লেইগা সাফারার হমু আমি, এইটা কি ধরনের যুক্তি? জাহাংগীরনগরে এখন যা হইতেসে, এতে ফায়দা কার? আ.লীগের একটা গ্রুপের। তাইলে সাধারান পোলাপাইন, যারা সংখ্যায় ৯৯% এরও বেশি, হেগোরে মাঝখান দিয়া সাফারার বানানোর কি যুক্তি??? গত পরশুদিন যেই গোলাগুলি হইলো, তখন যদি আরেকটা সনি চইলা যাইত??? খুশি হইতেন???

ছাত্র রাজনীতি নিয়া যারা ইউটোপিয়ান ধ্যান ধারণা পোষন করেন, তাদের কি এইটা চোখে পড়ে না, যে গত কয়েক দশকে ছাত্র রাজনীতি সেই ইউটোপিয়ার ধারে কাসেও যাইতে পারে নাই??? বরং আরো খারাপ হইসে? আপনারা কি কানা???

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

গৌতম এর ছবি

আচ্ছা, আওয়ামী লীগ আর বিএনপি যখন মারামারি করে, তখন তো কাউকে বলতে শুনি না যে জাতীয় রাজনীতি বন্ধ করা দরকার? অর্থাৎ জাতীয় রাজনীতির ব্যাপারে আমাদের কনসেপ্টটা পরিষ্কার থাকলেও ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রে কনসেপ্টটাই বোধহয় অপরিষ্কার রয়ে গেছে। কোনো সিস্টেমের খারাপ অংশকে দূর করতে গিয়ে পুরো সিস্টেম বাদ দেওয়ার আলোচনাগুলো অর্থহীন মনে হয়। সেক্ষেত্রে যারা সিস্টেম বাদ দেওয়ার কথা বলে, তারা আদৌ সিস্টেম সম্পর্কে অবগত কিনা সে প্রশ্নও জাগে। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

জিজ্ঞাসু এর ছবি

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাথে মারামারি করার বিষয়টা আমাদের গণতন্ত্রের চর্চার প্রশ্ন। আমাদের রাজনীতি পরমতসহিষ্ণুতা বিবর্জিত বলে মারামারির ঘটনা ঘটে। সেই মূলধারার রাজনীতিকে ঝালাই করার প্রশ্নে ভিন্ন বিতর্ক হতে পারে। তার সাথে ছাত্রশিক্ষক রাজনীতির প্রশ্নকে এক করার অবকাশ নেই। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রশিক্ষক রাজনীতির যে প্রচলিত ধারা তার বিলোপ এখন সময়ের দাবি। কারণ আমরা দিনবদলের স্বপ্ন দেখি। ছাত্রশিক্ষকগণ রাজনীতি করবেন তাদের মৌলিক অধিকারের অংশ হিসেবেই তবে সেটা শিক্ষাঙ্গনে নয়। মাত্র চারপাঁচটা বছর। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে তারা রাজনীতি করুন। শিক্ষকগণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে রাজনীতি করুন। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না। এটা কোন সভ্য সমাজের জন্য শুভ ফলদায়ক না বলেই উন্নত বিশ্বে এমনটা চোখে পড়ে না। আমাদের দেশে আছে বলেই আমরা সবদিক থেকে দিনদিন পিছিয়েই যাচ্ছি। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিক্ষকরা স্বার্থান্বেষী মহলের গুণ্ডাবাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াটা কোন সঠিক পারসেপশন নয়। আর আদর্শিক ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা কোন আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেন? যখন নেতারা নৌকা নিয়ে এমপি হওয়ার লোভ সংবরণ করতে পারেন না। এগুলো সবই আদর্শের নামে ছাত্রদের অফুরাণ শক্তিকে বিনষ্ট করার চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু না।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

বিপ্রতীপ এর ছবি

বুয়েটের ব্যাপারটা মনে হয় একটু ভিন্ন। পরীক্ষা পেছানোর সময় এইখানে আমলীগ-বিম্পি সব এক হয়ে যায়। জাতীয় রাজনৈতিক ইস্যু ছাড়া লীগ-দলের মারামারিতে বুয়েট বন্ধ থেকেছে এমন ঘটনা খুব কম (অন্তত আমাদের ব্যাচ যদ্দিন ছিল বুয়েটে)

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে ছাত্ররাজনীতির দরকার এখন আর আছে বলে মনে হয় না। এখন বাম ছাড়া আর দেশ গড়ার স্বপ্ন বা আবেগে কেউ ছাত্ররাজনীতিতে আসে না। বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর বামরা তত্বীয় জ্ঞান হজম করতে করতে একসময় বেশি বুঝে ফেলেন সবকিছু। বুর্জোয়া বলে চেঁচাতে চেঁচাতে ফলাফল দাঁড়ায় ভবিষ্যতের মেনন কিংবা ইনু...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

ভ্যানগার্ড [অতিথি] এর ছবি

প্রিয় জিজ্ঞাসু এবং অন্য সবাই
আমার একটি মন্তব্য যে কোনো কারণেই হোক, অপলোড হয়নি। আমার শক্তি কম, সামর্থ্যেরও সীমা আছে। তাই ওই একই কথা বার বার লেখা সম্ভব নয়।
সর্বশেষ যার মন্তব্য চোখে পড়ল _ রাগীব _ উনার মন্তব্যের সূত্র ধরেই বলি।
উনি লিখেছেন _ "বামপন্থী দলগুলোতে অনেক অনেক মেধাবী ছাত্র গিয়েছেন, কিন্তু মাঝখান থেকে তাদের লেখাপড়ার বারোটা বেজেছে বিভিন্ন আন্দোলনে। আমার স্কুলের প্রথম ৫ জনের মধ্যে থাকা দেবকান্তি বড়ুয়াকে দেখেছি (২০০২ এর অনশনের সময়ে অনেকে দেখেছেন ওকে), HSC পর্যন্ত প্রচন্ড ভালো ফল করে আসা ছেলেটা, বুয়েটে একটি বাম দলের সাথে যুক্ত হয়ে পরে পিছিয়ে গেলো এমনই, ফেল করতে করতে শেষে ৩/৪ বছর জুনিয়রদের সাথে ক্লাস করতো। আমি যখন শিক্ষক হই, তখন আমার ক্লাসের তালিকাতে তার নাম দেখি, যদিও সক্রিয় রাজনীতির জন্য পাশ করতে পারেনি সেবারেও। এরকম একজন ভালো ছাত্রকে দেশ হারালো কেবল বছর কয়েকের রাজনীতির জন্যেই। পাশ করার কয়েকটা বছর পরে মনের সুখে রাজনীতি করলে তার জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো।"
ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে আপনাদের মূল বিতর্ক, ছাত্ররাজনীতির কারণে সন্ত্রাস হয়, মারামারি হয়, খুনাখুনি হয়, চাঁদাবাজী হয় _ তাই এটা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। মারামারি-সন্ত্রাস এগুলো করছেন হাতে গোনা কয়েকজন। তাদের পুলিশ ধরবে না, রেব ধরবে, সেনাবাহিনী-বিডিআর অস্ত্র চোরাচালান রোধ করবে না, তাদের প্রশ্রয় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় অস্ত্র সুলভ হয়ো থাকবে, শুধু ওই গোটা ব্যবস্থার পঁচনের যারা শিকার তারাই শাস্তি পাবে! আবার সেই সন্ত্রাস এবং মারামারী-খুনাখুনীর প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেবকান্তি বড়ুয়া মুন বা এরকম দু'চারজন যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়ে শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তখনো দোষ ওই ছাত্ররাজনীতিরই! এ বড় অজব ব্যাপার।
আমার যে পোষ্টটা প্রকাশিত বা আপলোড হল না তাতে আমি আমার আরো কিছু প্রশ্ন ছিল। আমার আগের পোষ্ট যথাক্রমে ৯ ও ১২। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসু, স্পর্শ বা রাগীব সবার কাছ থেকে আমার উত্থাপিত প্রশ্নগুলো ধরে ধরে যুক্তি-তর্ক আশা করছি।
ধন্যবাদ তন্ময়, অনিশ্চিত, শাহ আসাদুজ্জামান ও গৌতম-কে। ওনাদের লেখায়ও বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন আছে যার জবাব ছাত্ররাজনীতির-বিরুদ্ধবাদীরা কেউ দেননি। এক কথার ল্যাজে অন্য কথাই শুধু এসেছে।
জনৈক স্পর্শ লিখেছেন : "সনি কে যারা হত্যা করল তারা কি ডাকু ছিল, নাকি ছিল ছাত্রনেতা? সেই ধর্ষক কি লম্পট জমিদার পুত্র ছিল, নাকি ছিল ছাত্রনেতা?"
আমি অপ্রকাশিত মন্তব্যটিতে লিখেছিলাম _ ওই হত্যকারী বা ধর্ষক এরা সকলেই ছাত্রনেতা। এবং তারা ছাত্রও। এবং তারা পুরুষও। তাহলে এই প্রতিটি ঘটনার জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি ছাত্রই দায়ী। প্রতিটি ধর্ষণের জন্য তাহলে আমি, আপনি বা আমরা যারা পুরুষ আমরা সবাই দায়ী। কিন্তু আপনারা কি সেই দায় স্বীকার করেন? সম্ভবত করেন না। কিন্তু আমি সে দায় স্বীকার করি। আর স্বীকার করি বলেই নিজেকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করাই। কোন রাজনীতি এগুলোর জন্ম দিচ্ছে? কোন রাজনীতি তারেক-বাবর কিংবা মানিক গংদের জন্ম দিচ্ছে? এর প্রতিকার কিভাবে? শুধু কতগুলো স্বপ্নচারী ভালমানুষী কথাবার্তায়? দায়হীন মন্তব্যে? আমি পারি না। সে কারণেই বোঝার চেষ্টা করছি _ এই কলুষিত রাজনীতির কবল থেকে দেশকে একটা সামগ্রীক মুক্তির দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস ছাড়া লাভ হবে না। এবং সে প্রয়সা নিঃসন্দেহে রাজনীতি। ফলে ছাত্র হই আর শ্রমিক হই, সে রাজনীতির বাইরে আমি থাকি কি করে? আমি ন্যায়বিচারের কথা বলেছিলাম। ন্যায়বিচার করার জন্য বিচারককেও নিজের বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। একবার সে কাজটা করুন। যারা ছাত্ররাজনীতিকে কলুষিত করল, শ্রমিক রাজনীতিকে কলুষিত করল, শিক্ষক রাজনীতিকে কলুষিত করল, গোটা দেশটাকে কলুষিত করল, দেশের কপালে পর পর পাঁচবার সেরা দুর্নীতিবাজের কলঙ্ক লেপন করল, তাদের বহাল রাখবেন, তাদের ল্যাজে বা গোঁদে ল্যাজ লাগিয়ে বসে থাকবেন, ভোট তাদের দেবেন, তাদের ক্ষমতায় বসাবেন আর গাল দেবেন শুধু ছাত্ররাজনীতিকে? এদের বিপরীতে যারা আদর্শবাদী জনগণের স্বার্থরক্ষার রাজনীতি করবে তাদেরকেও সে চেষ্টা করতে দেবেন না? যেহেতু তারা দৃশ্যমান নয়? যেহেতু তাদের শক্তি কম? আপনাদের সমর্থন পেলে তো এ শক্তি আরো একটু বাড়ত। আর দৃশ্যমান করার কাজটি যারা করেন তারা মতিউর রহমান গং। তাদের পত্রিকায় ২০/২৫ জনের মারামারির খবর যত যত্ন নিয়ে ছাপা হয় ততটা গুরুত্ব এবং যত্ন নিয়ে কিন্তু অপর্ণা চরণ স্কুল রক্ষার আন্দোলনের খবর ছাপা হয় না। ছাপা হয় না বুয়েটে কিছু শিক্ষকের স্বার্থে নাইট কোর্স এবং পোষ্যকোটা চালুর বিরুদ্ধে আন্দোলনের খবর। ছাপা হয় না বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক জামানত ফি আন্দোলনের চাপে প্রশাসন যে বাতিল করতে বাধ্য হল সে খবর। এ তিনটি আন্দোলনই ঘটেছে গত এক মাসে। যখন ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-শিবিরের সন্ত্রাসীরা মারামারি করছে তখন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোই (যারা জনৈক ব্লগারের ভাষায় _ "ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা মনে হয়, হুদাহুদিই লাফায়, কামের কাম কিসু করার মুরোদ নাই।") এ আন্দোলনগুলো করেছে। আপনারা যারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেহাদী তারা কে কি করেছেন নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করুন।
অন্য একজন লিখেছেন _ "আরেকজন ছাত্র নামের অছাত্র হের সুবিধার লেইগা ক্যাম্পাসে পিডাপিডি করবো, আর হের লেইগা সাফারার হমু আমি, এইটা কি ধরনের যুক্তি? জাহাংগীরনগরে এখন যা হইতেসে, এতে ফায়দা কার? আ.লীগের একটা গ্রুপের। তাইলে সাধারান পোলাপাইন, যারা সংখ্যায় ৯৯% এরও বেশি, হেগোরে মাঝখান দিয়া সাফারার বানানোর কি যুক্তি??? গত পরশুদিন যেই গোলাগুলি হইলো, তখন যদি আরেকটা সনি চইলা যাইত???" এই যে ৯৯ জন, যারা সাফারার না হয়ে থেকে এক হয়ে ওই ১% অছাত্রগুলারে ঠ্যাঙ্গাইয়া ক্যাম্পাস থেকে বাইর কইরা দেন না ক্যান? হেইগুলার বিরুদ্ধে নামেন না কেন? ছাত্ররাজনীতি যারা করছে - তারাই তো নামছে।
ধন্যবাদ।
ভ্যানগার্ড

জিজ্ঞাসু এর ছবি

আপনি সংশোধনের কথা বলছেন। সে সংশোধন হওয়া দরকার দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। আমি শুধু ছাত্রদেরকে তাদের ছাত্রজীবনের সময়টুকু ছাড় দেয়ার কথা বলেছি। আপনার চোখে যে সমস্যাগুলো ধরা পড়ছে সে সমস্যাগুলো কিন্তু সচেতন লোকদের চোখেও পড়ছে। আমি মূল নিবন্ধে সেসব সমস্যার দিকেও আলোকপাত করিনি। যেমন কেউ কেউ মন্তব্যে সন্ত্রাস এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের কথা বলেছেন যারা আমাদের দেশের রাজনীতির ফসল। সেদিকেও আমি আলোকপাত করিনি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনা করুন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে শিক্ষার মান ও পরিবেশ দিনদিন ভাল হচ্ছে সেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক বেশি রিসোর্স নিয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে - শুধুমাত্র ছাত্রশিক্ষকদের রাজনীতির কারণেই। সে রাজনীতি যেদিন থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমিত হয়েছে সমস্যার শুরু সেদিন থেকেই। এই রাজনীতিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাসিত করতে হবে। এবং অবশ্যই করতে হবে। এভাবেই সমাধানের পথ খুঁজতে চেয়েছি আমি। সামাধানের অন্য কোন তরিকা কারো জানা থাকলে বলুন যা আমাদেরকে আরও গহীনে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করবে। সাঁইত্রিশ বছর ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে। সমাধানের তরিকা, সমাধানের সময় সবকিছুর কথা ভেবেই আমি মতিউর রহমানের থেকে একটু আগ বাড়িয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা উচ্চারণ করেছি; যা মতিউর রহমান সংকোচে উচ্চারণ করেননি। প্রথম আলোর ব্যাপারে যেসব প্রশ্ন আপনি করেছেন সেসব প্রশ্ন আমারও; উত্তর দিব কী? মতিউর রহমান নিজেও আদর্শবাদী ছাত্ররাজনীতির ফসল। দেশের আপামর রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কবে, কী ধরনের পরিবর্তন আসবে তার জন্য আমাদের আরও কতকাল অপেক্ষা করতে হবে, সে ধৈর্য আমাদের ছাত্রদের আরও কত ক্ষতি করবে, শিক্ষাঙ্গনগুলো আরও কতটা নিম্নমুখী হবে, এসব চিন্তা করেই আমি বাধ্য হয়েছি ছাত্ররাজনীতির যে বিদ্যমান ধারা তা বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে বলতে। আসুন আমাদের সকলের মেধা ও শক্তিকে আমরা মূলধারার রাজনীতিতে নিয়োজিত করি। ছাত্রশিক্ষকদেরকে শিক্ষাঙ্গনের অপরাজনীতি থেকে নিরাপদ রাখি।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

তানভীর এর ছবি

যারা ছাত্ররাজনীতিকে কলুষিত করল, শ্রমিক রাজনীতিকে কলুষিত করল, শিক্ষক রাজনীতিকে কলুষিত করল, গোটা দেশটাকে কলুষিত করল, দেশের কপালে পর পর পাঁচবার সেরা দুর্নীতিবাজের কলঙ্ক লেপন করল, তাদের বহাল রাখবেন, তাদের ল্যাজে বা গোঁদে ল্যাজ লাগিয়ে বসে থাকবেন, ভোট তাদের দেবেন, তাদের ক্ষমতায় বসাবেন আর গাল দেবেন শুধু ছাত্ররাজনীতিকে?

উত্তর আপনার মন্তব্যেই আছে। আমি ছাত্র-রাজনীতি সমর্থন করি। কিন্তু বাংলাদেশে যে ছাত্র-রাজনীতি এখন বর্তমান তা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া আদতে মূল রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি ছাড়া কিছুই নয়। তাই যতদিন মূল রাজনীতি শুদ্ধ না হয় (কেন অশুদ্ধ বিস্তারিত আপনিই বলেছেন) অথবা যতদিন ছাত্র-রাজনীতি এই লেজুড়বৃত্তির বৃত্ত থেকে বের না হয়ে আসে (রাজনীতি শুদ্ধ হয়েছে কিনা তা বুঝতেও এটা ইন্ডিকেটর হতে পারে) ততদিন গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত এই লেজুড়টা বাদ থাকুক- সেটাই যারা ছাত্র-রাজনীতির বিরূদ্ধাচারণ করছেন- বোধহয় তাদের মূল বক্তব্য। অন্তত এটাই বাংলাদেশের বর্তমান ছাত্র-রাজনীতি সম্পর্কে আমার অভিমত। এখন আপনি যদি বলেন- এখনকার ছাত্র-রাজনীতি লেজুড়বৃত্তি নয়, অতি সুমহান- তাহলে আমার আর বলার কিছু নাই। খুদাপেজ।

সবজান্তা এর ছবি

আচ্ছা, বুয়েটে একবার যে আন্দোলন হইলো, দুর্গাপূজার সময় ছুটি না দেওয়াকে কেন্দ্র করে, যে'টা আসলে সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে হলেও পলিটিক্যাল পোলাপানের বেশ ভালো ভূমিকা ছিলো।

ওই রকম ক্রুশিয়াল আন্দোলনগুলার জন্য তো পার্টি না থাক, একটা সংঘ লাগবেই, তাই না ? ওইটার ব্যাপারে আপনাদের কার কী মত ?


অলমিতি বিস্তারেণ

tamal এর ছবি

ami bangla type korte pari na, tai english horofe bangla lekhchi. ami sudho ragib vai er ekta comment er ans dite chai. ami ragib vai er bondhu debkanti borua moon er ekjon sohokormi bondhu chilam. amar jotadur mone pore moon da rajnitite jukto hoar onek din ag thekei pichie porechilen baktigoto kichu karone. uni jehetu apnar bondhu chilen ta apnar janar kotha. eitao janar kotha pore onar porasuna jeno regular hoy setar jonno sei chatro songothon ti organizationally aparan chesta korechilo. tokhon kintu onake sahajjo korar jonno temon kono bondhu amara dekhi nai!!! rajniti kore na emon bohu chatro ke dekhechi porashuna sesh korte pare ni. tader khetre apnar motamot ki ragib vai ektu janaben??

ভ্যানগার্ড [অতিথি] এর ছবি

আমি দু:খিত যে 'রাগিব' লিখতে 'রাগীব' লিখেছি। তাতে আপনি রাগ করেছেন। এটা আমার তাড়াহুড়া-প্রসূত, আপনার ওপর বিরাগ-বশত নয়। আপনি অনেক দিন ধরে ব্লগে লেখালেখি করেন। আমি মাত্র এক-দু সপ্তাহ। আর আপনি নামের বানান কিভাবে লিখেছেন, আমার মনোযোগ সে দিকে ছিল না, ছিল আপনার বিষয়বস্তুর প্রতি। তবুও দু:খিত।
আপনি লিখেছেন _ "বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার বন্ধুটি বহিষ্কৃত হয়নি, "পার্টির" স্বার্থে আন্দোলনে নেমেই তার এরকম বিশাল ল্যাগ হয়েছে। আমি যে কোর্সটি পড়াতাম, তার খাতায় নাম ছিলো তার, ক্লাসে কেনো আসতোনা সেটা তার দলের নেতারাই বলতে পারবেন। অথবা হয়তো আপনি পারবেন। কোনো একটি তত্ত্বের গৎবাঁধা কথা বলা হবে। আদর্শের বুলি কপচানো অনেক সহজ, কিন্তু দেশের রাজনীতি দেখার জন্য অঢেল লোকজন আছে। ছাত্রসমাজ, যাদের প্রধান কাজ তাদের পেছনে ঢালা আম-জনতার লাখ লাখ টাকার যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া, তারা যখন টেন্ডারবাজি, অথবা ৫টাকা ফি বাড়াবার বিরুদ্ধে বিশাল আন্দোলনে পড়াশোনা বাদ দিয়ে বসে, তখন তাদের আদর্শ নিয়েই সন্দেহ জাগে।"
সামান্য নামের বানানের ভুলের জন্য বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়েছেন, যেহেতু ওটা আপনার নাম। আর যে বিষয়ে বা বিষয় লিখলেন, সে সম্পর্কে সঠিক বলছেন না ভুল বলছেন সেটা কি একবার ভেবে দেখেছেন? আপনার ২১.২ নম্বর মন্তব্যের আগে আমার আরো দু-একটা মন্তব্য আছে। আশা করি সেগুলো পড়েছেন। সেগুলোতে আমি সনি হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন, জাহাঙ্গীরনগরে ধর্ষণ-বিরোধী আন্দোলন এমন কয়েকটি আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে ছিলাম। সনি হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে বুয়েট থেকে কেউ বহিষ্কৃত হয় নি? আমি বুয়েটের ছাত্র ছিলাম না, আপনি ছিলেন, কই আপনি তো সে প্রসঙ্গ তুললেন না? বেছে বেছে দেব কান্তি বড়ুয়ার কথাই তুললেন। হয়ত অতীতের ঘটনা আপনার জানা নেই, অথবা আপনি অতীত নিয়ে খুব একটা আগ্রহ বোধ করেন না। যা চোখের সামনে দেখেন তাই আপনার কাছে সত্য এবং বিবেচ্য। ভাই রাগিব, রাগ না করে তাহলে খুলে বলুন, দেব কান্তি বা তার 'পার্টি' কোন বিশেষ 'স্বার্থ' হাসিলের জন্য সেদিন আন্দোলন করেছিল? দেব কান্তি বুয়েটর টেন্ডারের ভাগ চেয়েছিল? নাকি তার সংগঠন বুয়েটের টেন্ডারের ভাগ না পাওয়ায় আন্দোলন আন্দোলন খেলা খেলেছিল আর তাতে দেব কান্তিকে ব্যবহার করেছিল? বোধ করি আপনার জানা আছে।
আর দেব কান্তি 'ক্লাসে কেনো আসতো না' তার জবাব নেতারা দেবে কেন? দেব কান্তি নিজে কোনো দিন দেয় নি? ‌'তত্ত্বের গৎবাঁধা কথা' বলতে নিষেধ করেছেন। তাই বললাম না। তাহলে গৎ-ছাড়া একটা কথা বলি। আমি আবারো বলি, আমি বুয়েটের ছাত্র ছিলাম না, তাই ভুলও হতে পারে। বুয়েটে ছাত্র-রাজনীতি করেনি এমন কেউ নেই যারা পড়াশোনায় অবহেলা করেনি? বাউন্ডুলে-পনা করে জীবন বরবাদ করেনি? প্রেম করে সময় নষ্ট করে নি? প্রেমের জটিলতা বা ব্যর্থতায় আত্মহত্যা করেনি? বুয়েটে রাজনীতি করেও ভাল রেজাল্ট করেছে এমন একজনও কি আপনি দেখেন নি? আমি অন্তত ৫০ জনের নাম বলতে পারব। কিন্তু এ-রকম চলতে থাকলে, যুক্তির জায়গায় উদাহরণ ধরে টানাটানি করতে থাকলে, আলোচনার কোনো মানেই দাঁড়াবে না। ওগুলো কূট-তর্ক। আমার বিগত পোষ্টগুলোতে উত্থাপিত প্রশ্ন এবং অন্যদের উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর জবাব আপনারা কেউ-ই দেন নি।
"দেশ চলছে প্রবাসী শ্রমিকদের হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনির টাকায়, সেই টাকা দেয়া হচ্ছে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের পড়াশোনার খাতে ... সেই টাকাকে অবজ্ঞা করাটা, নিজের যা প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য, তা খেয়াল না রাখাটা অপ-আদর্শ।" আপনি যে কথাটা মনে রেখেছেন সে জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। তবে প্রবাসী শ্রমিকদের হাড়ভাঙা ('হাঁড়' নয়) খাটুনি যেমন আছে তেমনি দেশের শ্রমিকদেরটাও আছে, কৃষকদেরটাও আছে (দেশের শ্রমিক-কৃষকের অবদানই বেশি), তাদের কথাও নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে। আমরা কে কিভাবে ওদের প্রতিদান দিচ্ছি, আশা করি সে কথাটাও একবার ভেবে দেখবেন।
ধন্যবাদ
ভ্যানগার্ড

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।