[justify]১
আশরাফী বেগমের সাথে আসাদ এই প্রথম দেখা করতে যাচ্ছে না, এর আগেও দেখা হয়েছে অনেকবার। তবে এইবারের দেখা হওয়াটা অবশ্য একদম অন্যরকম, ভদ্রমহিলা মনে হয় দুইদিন আগেও জানতেন না লিপুর সাথে তার এখনো পরিচয় আছে। পৃথিবীতে অনেক ধরণের সারপ্রাইজ আছে- নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি আসে আসাদের।
১
আশরাফী বেগমের সাথে আসাদ এই প্রথম দেখা করতে যাচ্ছে না, এর আগেও দেখা হয়েছে অনেকবার। তবে এইবারের দেখা হওয়াটা অবশ্য একদম অন্যরকম, ভদ্রমহিলা মনে হয় দুইদিন আগেও জানতেন না লিপুর সাথে তার এখনো পরিচয় আছে। পৃথিবীতে অনেক ধরণের সারপ্রাইজ আছে- নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি আসে আসাদের।
কি ধরণের জামা-কাপড় পরে যাবে তা নিয়ে সে অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে। আশরাফী বেগম একদমই গ্রাম্য প্রাচীনপন্থী মহিলা, জিন্স আর টি-শার্ট মনে হয় পছন্দ করবেন না। ঠান্ডা এক জোড়া চোখ আছে ভদ্রমহিলার। লিপু বলেছিলো, অনেক আগে, যখন লিপু একেবারেই ছোট, বছর খানেকের, আশরাফী বেগম একদম পাগল হয়ে গিয়েছিলো। ডাক্তার, কবিরাজ থেকে শুরু করে ওঝা পর্যন্ত অনেক কিছুই চেষ্টা করে যখন সবাই প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলো, সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। সুস্থ হওয়ার পরও তিনি অনেককে চিনতে পারতেন না, এমনকী লিপুকেও না। সবাইকে তিনি আবার নতুন করে চেনেন। পাগল হওয়ার আগের স্মৃতি এখনো মনে করতে পারেন না। ভাবতে গেলে কি অদ্ভুত লাগে! একটা মানুষের সব স্মৃতি পঁচিশ বছর বয়স থেকে শুরু হয়েছে। আসাদ জিজ্ঞেস করেছিলো সুস্থ হওয়ার পর লিপুকে আদর করতো কিনা। লিপু বলেছিলো, ‘আদর করবে না মানে! আমি এক বাপের এক মেয়ে না?’ বলেই হি হি করে হেসেছিলো।
লিপুর হাসি প্রায় হিস্টিরিয়া রোগীর মতো, আসাদের ভালোই লাগে। তার নিজের হাসিতে ঠোঁট দুটো শুধু একটু প্রসারিত হয়, হাসির সময় তার দাঁত কেউ কখনো দেখেছে বলে মনে হয় না। প্রাণখোলা হাসির মানুষকে ভালোবাসে বলেই মনে হয় লিপুকে সে প্রপোজ করেছিলো। টিউটর আর ছাত্রীর প্রেম খুব একটা বিরল কোন জিনিস না। প্রথমে মনে হয়েছিলো লিপু ফিরিয়ে দেবে, সেই সাথে টিউশনিটাও যাবে। লিপু ফেরায় নি, কিন্তু বলেছিলো টিউশনিটা ছেড়ে দিতে হবে, না হলে মা মানে আশরাফী বেগম জেনে যাবে।
মাত্র তিনমাসের মাথায় টিউশনি ছেড়ে দিতে চাইলে আশরাফী বেগম রাগ করেছিলো। আসাদকে আশরাফী বেগমই খুঁজে বের করেছিলো, পছন্দও করতো কারন আসাদের দেশের বাড়ি আর লিপুদের দেশের বাড়ি একই শহরে। আসাদ কিছুতেই আর পড়াতে না চাইলে অন্তত আরেকজন টিউটর না পাওয়া পর্যন্ত পড়াতে বলেছিলো। বাধ্য হয়ে আসাদ আরো এক মাস পড়াতে রাজী হয়। এই এক মাস আশরাফী বেগম কেনো জানি তাদের চোখে চোখে রাখতো। তারপর মনে হয় কিছু একটা সন্দেহ হওয়াতে পঁচিশ দিন পরেই ছাড়িয়ে দেয়, আর তাদের পার্ক-প্রেম জীবন শুরু হয়। মনে হয় এই সেদিনের কথা, অথচ আসাদ তখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়তো, লিপু ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে। আর এখন লিপুই অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। দীর্ঘ প্রায় ছয় বছরের প্রেম জীবন তাদের।
অনেক চিন্তা ভাবনা করে কূল না পেয়ে আসাদ শুধু টাই বাদ দিয়ে একদম ফর্মাল ড্রেসেই বেরিয়ে পড়ে। আফটার অল, এটাতো একধরণের ইন্টারভিউই। চাকরীর ইন্টারভিউ থেকে কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ না।
২
লিপু তাকে ড্রইং রুমে বসিয়ে একটা আশ্বস্ত করা হাসি দিয়ে ভিতরে চলে যায়। আসাদ অবাক হয়ে লক্ষ্য করে এই রুমে পোড়ামাটির সেই গন্ধটা এখনো আছে। তার ঘ্রাণশক্তি ভালো, সে গন্ধ মনেও রাখতে পারে ভালো। শুনতে অবাক লাগতে পারে কিন্তু আসাদ তার মায়ের স্তন আর বুকের দুধের গন্ধ মনে করতে পারে। অবশ্য সে দুধ ছেড়েছেও ধাড়ি বয়সে। সাড়ে তিনবছর বয়সেও সে মায়ের দুধ খেতো। মায়ের কথা মনে পড়ায় সে বিষন্ন হয়। মা আর লিপুর ডাকনামে কি দারুণ মিল! তার মায়ের নাম অবশ্য একটু পুরনো ধাচের, লিপি খাতুন।
আশরাফী বেগম এসে তার সামনের সোফায় বসেন, লিপু এসে বসে সেই সোফার হতলে। তাদের এই অবস্থানকে আসাদের বেশ একটু সিনেম্যাটিক বলে মনে হয়। দু’এক সেকেন্ডের নিরবতার পর আশরাফী বেগমই প্রথম কথা বলেন।
-তোমার স্বাস্থ্য দেখি ভালো হয়েছে কিছুটা।
-হ্যাঁ, তা কিছুটা হয়েছে।
-দেখো প্রথমে আমি বেশ রাগ করেছিলাম। কি দিন আইছে, বাপ-মা নিজের ছেলেমেয়েদেরও বিশ্বাস করতে পারে না। তা একটাই বাপ-মরা মেয়ে আমার, তার অমতে এই বয়সে আর যেতে ইচ্ছে করে না, আর তুমিও ভালো চাকরী-বাকরী করছো... তবে আমার কিছু শর্ত আছে।
-জ্বি বলেন।
-বিয়ের পর তোমরা কিন্তু এই বাসাতেই থাকবে।
-কিন্তু...
-না তুমি যা ভাবছো তা না। ঘরজামাই থাকতে বলছি না। তোমার পরিবারের সবাই তো দেশেই থাকে। তারা যদি কখনো ঢাকাতে থাকতে আসে তখন না হয় আলাদা বাসা নিয়ো। এখন যেহেতু তোমরা শুধু দুইজনই থাকবে, শুধুশুধু আর আলাদা বাসাই বা নিবে কেনো আর আমাকেই বা খামোখা একা করবে কেনো?
আসাদের প্রস্তাবটা ভালোই লাগে আর লিপুও যে একভাবে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে তা বুঝতে পারে।
৩
বিয়ের পর প্রথম প্রথম দিনের বেলাটা বেশ বিব্রতকর কাটে। রাত্রে অনিদ্রার পর সারা দিন কেবল ঘুম-ঘুম লাগে আর মনে হয় পরিচিত সবাই মুখ টিপে হাসছে। সকালে উঠেই লিপু বাথরুম দখল করায় আসাদ ঘুম-ঘুম চোখে ড্রইং রুমে এসে বসে। একটু পর আশরাফী বেগম রান্নাঘর থেকে এসে জিজ্ঞেস করে পেপার লাগবে কিনা। আসাদ তাকে ব্যস্ত হতে নিষেধ করে, বলে সে নিজেই খুঁজে নেবে। আশরাফী বেগম হাসে, বলে আসাদ তার ছেলের মতোই, কেনো সে লজ্জা পায়। এই বলে তিনি আসাদের মাথায় হাত রাখেন, অনুযোগ করেন আসাদ এখনো তাকে মা বলে ডাকে নি। তারপর আসাদকে অবাক করে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আবারো বলে সে তো আসাদের মায়ের মতোই, লজ্জা কি। এরপর তিনি আসাদের চা আনার জন্য রান্নাঘরে চলে যান।
বস্তুত বিয়ের তিনদিন পরেই শাশুড়ীর মেয়ে-জামাইকে এভাবে জড়িয়ে ধরাটা বেশ অদ্ভুত, একটু অশালীনও বটে। কিন্তু এগুলো আসাদের মাথায় আসে না। সে অত্যন্ত অবাক হয়ে খেয়াল করে আশরাফী বেগমের গায়ের গন্ধ তার মায়ের মতোই। প্রথমে তার মনে হয় পৃথিবীর সব মায়ের গন্ধই বোধহয় একরকম, তারপর তার মাথা থেকে সকল চিন্তা দূরীভূত হয় আর সে বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়। সে কখনোই জানতে পারে নি তাকে চার বছরের রেখে তেইশ বছর আগে তার মা কেনো আত্মহত্যা করেছিলো।
রান্নাঘর থেকে পরিতৃপ্তির সাথে লিপি খাতুন আসাদকে দেখতে থাকেন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, অনেক পরিকল্পনা করে তিনি আসাদকে এই বাসায় আনতে পেরেছেন। তেইশ বছর আগে আশরাফী বেগমের শরীরে ভর করার পর থেকে তিনি আশরাফী বেগমের চরিত্রে অভিনয় করে করে ক্লান্ত, এখন অন্তত আসাদকে প্রতিদিন চোখের সামনে দেখে মানসিক শান্তি পাবেন। লিপু ভালো মেয়ে, তিনি জানেন; তাঁর ছেলেকে সুখে রাখবে।
ব্রুনো
eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%6d%65%67%68%64%75%74%30%30%36%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%22%3e%6d%65%67%68%64%75%74%30%30%36%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b'))
মন্তব্য
বাহ =DX =DX
অফটপিক: আপনার সব পোস্টের নিচে ৪ লাইনের কিছু কোডের মত দেখা যায়। এগুলা কি?
(ধইন্যা)
মেইল ঠিকানা দিলে এরকম কোড দেখায়।
বাহ, আষাড়ে গল্পটাতো ভালোই লাগল। (Y)
(ধইন্যা)
ভয় পাইছি। =DX
খুব একটা ভয়ের না তো! (ধইন্যা)
(জাঝা)
(ধইন্যা)
তিনটাই পড়লাম। প্রথম দু'টো খুবই ভালো লেগেছে, এটা তেমন টানলো না।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
এইটা একটু বেশী আষাঢ়ে হয়ে গেছে :)
পড়ার জন্য (ধইন্যা)
প্রথমগুলো পড়ি নাই- পড়বো ।
এটা ভালই তো লাগল
কড়িকাঠুরে
(ধইন্যা)
):)
):)
(Y)
(ধইন্যা)
গল্প হয়তো ওয়াও ধাঁচের কিছু হয়নি, কিন্তু আপনার ভাষার গুণেই সেটা লেটার মার্ক পেয়ে গেছে। :)
নামের নিচে ইমেইল এড্রেসটা সরাসরি না লিখে যদি এইভাবে লিখেনঃ
brunoএটgmail.com
তাহলে এইরকম ম্যাটল্যাব কোডিং আর দেখা যাবে না।
না, এইটা আসলেই জাতের হয় নাই :( । অনেকদিন পর ভুতের স্বপ্ন দেখে ভাবলাম লিখে ফেলি একটা (গল্পটা অবশ্য স্বপ্নের হুবহু কপি না, স্বপ্নের অর্ধেক ঘুম থেকে উঠেই ভুলে গেছি)।
এইটাই তাইলে উদাসদার ম্যাটল্যাব কোডিং :p
#অনেক সুন্দর লিখেছেন, অভিনন্দন ব্রুনো। ভাল থাকুন
(বাঘুবাচ্চা)
(ধইন্যা)
এবার আপনার ওপর আনাড়ি লেখক ভর করুক। (দেঁতোহাসি)
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আপনি প্রথম কমেন্টটা করতে পারলে এই গল্পটা আরো ভালো হতো। সব দোষ আপনার X( :D
অনেক অনেক (ধইন্যা)
হাহাহাহাহাহা
সেই কথা আগে বলবেন তো!
এরপর লেখা পোস্ট করেই আমাকে একটা মিসড কল দিয়েন। (চোখটিপি)
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
(ধইন্যা) দেখা যাক কি হয়।
বেশ ভালো লাগল! সাদামাটা গল্প, তবে ভালোই গুছিয়ে লিখেছেন। (Y)
ডাকঘর | ছবিঘর
অনেক (ধইন্যা)
ভাল লাগছে সব কটা আষাঢ়ে গল্প।
(ধইন্যা)
আষাঢ়ে গল্পটা তো বেশ হয়েছে ব্রুনো।
(ধইন্যা)
ধন্যবাদ আবারো।
চিন্তা করেন না, নিজেরে বঞ্চিত না করার জন্যই লেখালেখি চালু থাকবে আরো বহুদিন। আফটার অল, প্লেজার ইজ অল মাইন :D
আহা, আপনার গল্প পড়তে থাকলে আস্তে আস্তে চিয়ারলিডারে পরিণত হবো মনে হচ্ছে! (জাঝা)
আমাদের বঞ্চিত করবেন না। আরো নিয়মিত লিখুন। শুভেচ্ছা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হুমম, বেশ। লেখালেখি জারি থাকুক।
:)
=DX
আমারতো ভালোই লাগলো। অমন করে যদি আমার মা-ও ফেরত আসতেন!!!
অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা।
-----------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
(ধইন্যা)
নতুন মন্তব্য করুন