-তুমি এইসব গল্পটল্প কেনো লেখো?
-তুমি এইসব ন্যাকা ন্যাকা প্রশ্ন কেনো করো?
-রাত হচ্ছে ন্যাকা ন্যাকা প্রশ্ন করার সময়! ... আচ্ছা বাদ দাও, কীভাবে লেখো? মানে প্লটের পেছন পেছন চরিত্র আসে নাকি চরিত্রের পেছন পেছন প্লট আসে, নাকি...
-ধুর! এইসবের কোন ধরাবাঁধা নিয়ম আছে নাকি! চরিত্রপ্লটফ্লট দূরে থাক, বললে বিশ্বাস করবা না, অনেক সময় জাস্ট একটা লাইন ঠিক জায়গায় ঠিক ভাবে বলার জন্য আট-দশ পৃষ্ঠার গল্প ফাঁদতে হয়। মানে পড়লেই তুমি বুঝবা, এইটাই আসল লাইন, এইটেই মাথায় আগে আসছে, এখন এক লাইন বিশিষ্ট গল্প তো আর ভালো দেখা যায় না তাই কষ্টেসৃষ্টে আর সব লাইনগুলা যোগ হইছে, মানে বাকি সবই আসলে ফিলার ছাড়া কিছু না...
-এইটাও বাদ দাও। ধরো তুমি এখন একটা গল্প লিখবা। শুরু করবা কীভাবে?
-কী ধরণের গল্প?
-ধরো গোয়েন্দা গল্প।
-আমি খামাকা গোয়েন্দা গল্প লিখতে যাবো ক্যান? আর কী মানুষ তুমি, মাথায় সারাক্ষণ খালি গোয়েন্দা আর গোয়েন্দা।
-আরি খাইছে! কী ভাব! আচ্ছা ধরো আমার খাতিরেই লিখলা একটা গোয়েন্দা গল্প। ক্যাম্নে শুরু করবা?
-গোয়েন্দা গল্প লেখা তো বেশ সোজা... একটা প্লট বানাবো?
-বানাতেই তো বলতেছি। বানাও।
-উমম... ধরো কাহিনী ঘটতেছে গ্রামে। ক্রাইমটা হচ্ছে... ওকে, খুনই, প্রথম গোয়েন্দা গল্পের প্লট, খুনের নীচে কথা নাই। তো...
-গোয়েন্দাটা কীরকম হবে?
-না, আগে ভিক্টিম আর ক্রাইম।
-না, আগে গোয়েন্দা।
-ধুরো! গোয়েন্দা তো ধরো চাইলেই একটা বানানো যায় ইচ্ছেমতো। প্রফেশনাল গোয়েন্দাও আনা যায়। যেমন দেখা যাইতে পারে গোয়েন্দা প্রদোষ মিত্র তার ইঁচড়ে পাকা কাজিন আর টাকলু থ্রিলার রাইটাররে নিয়ে বন্ধুর কিংবা বন্ধুর বোনের বিয়ে খাইতে ঘটনার আগের দিন কিংবা পরের দিন অকুস্থলে পৌছায় গেছে। কিন্তু সমস্যা হইতেছে এরা তো স্বাভাবিক কারণেই মূলত বড়লোকদের গোয়েন্দা, বুঝতেই পারতেছো গোয়েন্দাদেরো খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। ওদিকে আমার ভিক্টিম আবার ভাবতেছি গরীব কিছিমের হবে- প্রফেশনাল দিয়ে কুলানো যাবে না। ... ধরো গ্রামেরই একটা ইয়াং ছেলে, তোমার মতোই ফ্রিক- সারাদিন গোয়েন্দা গল্প পড়ে, রহস্যময় খুন দেখে লাফায়ে পড়তে পারে। কিংবা হয়তো ভিক্টিমের সাথে ইমোশোনালি অ্যাটাচড বুদ্ধিমান কেউ গোয়েন্দাগিরি শুরু করে দিতে পারে... মোদ্দাকথা এইটা আসলে কোন প্রবলেম না, যেমন ইচ্ছা তেমন করা যাবে।
-এরপর?
-এখন ভিক্টিম। প্রথমেই ভিক্টিমের একটা নাম দিতে হবে, কথা বলতে সুবিধা হবে। কমল নামটা কীরকম হয়? ভালো? ওকে তাহলে কমলই সই। এখন কমল চরিত্রটার ডিটেইলসটা ঠিক করতে হবে। যদিও এই চরিত্রটা পুরো গল্পেই মরে থাকবে, তবুও কিন্তু এই চরিত্রটার ডিটেইলসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকেই তুমি পাবা সাসপেক্টস, পাবা মোটিভ, এমনকী খুনের ধরণ। তো, ধরো কমল একা একা থাকে, মানে বিয়ে হছিলো, কিন্তু স্বামীতে খেদায় দিছে...
-কমল মেয়ে?
-তুমি কী ভাবছিলা?
-আমি যে দু’তিনটা কমলরে চিনি তারা সবাই ছেলে।
-কমল মানে পদ্ম। কমল শুধু ছেলেদের নাম হবে ক্যান?
-আচ্ছা, ঠিক আছে, ঠিক আছে, আগাও তুমি।
- তো, স্বামীতে খেদায় দিয়ে একটা বিয়ে করে ফেলছে। ঠিক খেদায়ে দেয় নাই, স্বামীর সাথে ঐ মেয়ের, মানে পরে যারে বিয়ে করছে, তার আগে থেকেই ইয়ে ছিলো। কমল বুঝতে পেরে নির্বিবাদে চলে আসছে। এখন কমলের বাপ তো ধরো প্রথমে খুব গালাগালিই করছে যে, তুই ফাইট না দিয়ে- ফাইট তো বুঝোই- মানে দাঁত কামড়িয়ে পড়ে না থেকে, স্বামীরে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠিক পথে নিয়ে না এসে নিজে চলে আলি ক্যান। কমল তো ধরো কিছু কয় না। বাপ কিছুদিন গালাগালি করে যখন বুঝছে এ মেয়ে আর যাবে না, ঐদিকে জামাইটাও বিয়েটা করেই ফেলছে, তখন কি আর করা, কমলরে পাঁচ শতক জমি দিয়ে, সেই জমির পর ঢেউটিনের এক ঘর তুলে দিয়ে মরছে।
-বাপ মরছে?
-হ্যাঁ, এসব তো ধরো ঘটনা ঘটার বেশ আগের কথা। আমাদের গোয়েন্দা সায়েব যদি বাইরের লোক হয় তো লোকের কাছে এসব হিস্ট্রি পরে শুনবে- সে শুনবে মানে পাঠকও জানবে, আর যদি গোয়েন্দা ভিক্টিমের পরিচিত কেউ হয় তো অন্যভাবে পাঠকরে এসব জানানো হবে।
-স্বামীটা একটা সাস্পেক্ট তালি?
-না, তা কেনো? সে তো বিয়ে-টিয়ে করে সুখে শান্তিতে ঘর-সংসার করতেছে গত চার বছর ধরে। সে এখন আউট অফ সিলেবাস।
-বুঝছি, নেক্সট?
-এখন একা একটা মানুষ, টাকাকড়ি আসতো কীভাবে? মানুষ তো আর হাওয়া খায়ে বাঁচে না। তো, কমল ধরো একটু লেখাপড়া জানতো, মানে ম্যাট্রিক পাশ করছে আরকী বিয়ের আগে। এখন সে পাড়ার যতো পিচ্চি আছে তাদের ধরো প্রাইভেট পড়ায়- মানে অক্ষর চেনায়, ঐ যে গ্রামে যায়ে দেখো নাই এক গাদা পিচ্চি এক জাগায় বসে সুর করে কয়ে আ-কারে কা, কয় ই-কারে কি করে না? ওইরকম আরকী। আর এছাড়া মানুষের মুড়ি ভেঁজে দেয়, শীতকালে বড়ি দিয়ে দেয়- একটা মানুষ তো, বেশ ভালোই চলে যায়।
কমলের দুইটা বড়ভাই আছে-
-ভাই আছে?
-কি আজিব! মাইনষের ভাই থাকবে না?
-না, না, তা তো থাকবেই, তো তারপর?
-এখন খুব খিয়াল কৈরা, কমল যদি স্বামীর বাড়ি থেকে না আসতো, ঐ পাঁচ শতক জমি কিন্তু এই দুই ভাইয়ের হতো।
-মানে দুইটা সাসপেক্টস?
-চারটা ইনফ্যাক্ট। তুমি কমলের বৌদিদের ধরতেছো না। যখন...
-আচ্ছা, পাঁচ শতক জমির জন্য বোনরে মেরে ফেলবে?
-আরে! তুমি কমলের দাদাদের কী ভাবতেছো? জমিদার? তারা নিজেরাই পাইছে বিশ শতকের মতো করে, ওতেই বাড়ি, ওতেই ক্ষেত-খামার। ঐটুকু জমিতে ধরো কিছুই হয় না, তাদের মূল ইনকামটা আসলে আসে মাইনষের জমিতে জন খেটে। ইনফ্যাক্ট, যদি তুমি মাথাপিছু হিসাব করো, কমল তার দাদাদের থেকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভালো ছিলো। পাঁচ শতক জমি তাদের কাছে কম হবে ক্যান? আর মানুষ তো জানোই, স্বভাবতই একটু অদ্ভুত। ওরা দুইজন যদি ছোটবেলা থেকেই জানতো যে বোনরে ভাগ দিতে হবে তখন কিন্তু আর সমান ভাগ দিলেও সেটারে অনায্য বলে মনে হতো না। সেটাতো আর ঘটে নাই, ওরা বড়ই হইছে এটা জেনে যে বাপের যা থাকবে তা বাপের মরার পর একটা মোটামুটি বড় গোন্ডগোলের পর দুইজন দুই ভাগ করে নিয়ে নেবে। তাই বুঝতেই পারতেছো ওই পাঁচ শতক জমি ওদের কাছে- যারে বলে ভাগ্যের এক নিষ্ঠুর পরিহাস ছাড়া আর কিছু না।
এই পরিহাস ঠেকানোর জন্য যখন কমলের বাপ কমলরে জমিটা লিখে দিছিলো তখন তার দাদা-বৌদিরা কমলের বাপের কাছে যায়ে কইছিলো এভাবে লিখে দেওয়ার কী দরকার? আমরা কি ওর পর? আমরা কি ওরে দেখবো না? এখন কমলের বাপ তো ধরো তার ছেলেদের চিনতো, তাই লিখেই দিছিলো। তখন ধরো বিরাট একটা ঝগড়া হছিলো, গ্রামের সবাই সেই ঝগড়ার খবর জানে, বৌদিরা যে সে সময় কমলরে আচ্ছা করে পিটাইছিলো তাও সবাই দেখছে, মানে আমি বলতে চাচ্ছি আমাদের গোয়েন্দা এসব তথ্য চাইলেই বের করতে পারবে।
-তুমি কথার ভিতর খালি ‘ধরো ধরো’ করতেছো ক্যান? ধরতে ধরতে আমার হাত তো ব্যথা হয়ে গেলো।
-স্যরি। এমন করো ক্যান! গল্প তো ধরাধরির ব্যাপারই।
-শেষ পর্যন্ত কি কমলের দাদাবৌদিদের কেউই খুনী বলে ধরা পড়বে?
-সে তো পরের চিন্তা। আগে এদিকটা, মানে ভিক্টিমের ডিটেইলসটা শেষ করি। এদিকে দুই পাবলিক আছে যারা ধরো কমলের পিছু পিছু ... ঐ যে আছে না ইয়ে টাইপের? দ্যাখে যে মেয়েটা একা একা থাকে যদি একটু সুযোগ-টুযোগ পাওয়া যায়। ভাবে দ্যাখায় একেবারে প্রেম গলে গলে পড়তেছে। কমল তো তাদের পাত্তা দিতো না, এসব প্রেম ঠিক কখন শুকায় যায় তা সে জানতো। অবশ্য প্রেম শুকায় যাওয়ার সম্ভাবনা পাত্তা না দেওয়ার কারণ না, দুইজনরে তার পছন্দই হতো না। কমল মাঝে মাঝে রাগ করতো, মাঝে মাঝে মজা করতো- বলতো তাদের বউদের কাছে বলে দেবে, এরকম আরকী। যখন দুই জন লোক একই মেয়ের প্রেমে পড়ে তখন তারা সাধারণত পরষ্পরের শত্রু হয়ে যায়। মজার ব্যাপার হলো এইখানে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। তারা শত্রুতো নয়ই, উলটা একে অপরের শুভাকাঙ্ক্ষীই ছিলো বলা যায়। দু’জনেরই ধারণা ছিলো একজন সফল হলে অন্যজনের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যাবে।
-কী শয়তান!
-তারা সফল না হতে পেরে প্রতিশোধ নিয়ে বসতে পারে। মানে দুইটা সাসপেক্ট বাড়লো। এখন তারা যে ভাদ্র মাসের কুকুরের মতো কমলের আশেপাশে ছোক ছোক করতো তাও ধরো গোপন কিছু ছিলো না, লোকজন জানতো। লোকজনের কাছে এই পরিস্থিতিটা যেনো স্বাভাবিকই ছিলো- আরে বাবা, তুমি একা একটা মেয়ে একা একা থাকবা আর দু’একজন ‘ততোটা ভালো না লোক’ একটু আধটু জ্বালাবে না সেতো আর হয় না। ব্যাপারটার প্রকাশ্যভাবটা এই দুই পাবলিকের পর সন্দেহ বাড়াতেও পারে আবার কমাতেও পারে...
-কমাবে কেনো?
-বা রে! তারা তো জানেই সন্দেহ তাদের উপর এসে পড়বে, সব জেনেশুনে খুন করে নিজেদের বিপদে ফেলবে কেনো? আফটার অল তারা তো আর সত্যি-সত্যি প্রেমে... প্রেম শব্দটা দেখি কনফিউজিং হয়ে যাচ্ছে- মানে কমল তো আর তাদের কাছে বিকল্পহীন কেউ ছিলো না যে তারা এতোটা রিস্ক নেবে। অবশ্য আমি যদি এদের ফাঁসাতে চাই তো এই ব্যাপারটা চেপে যাবো, তখন যৌনতা ব্যাপারটারে আর একটু বেশী সামনে আনতে হবে, ভাব দেখাতে হবে এই খারাপ জিনিসটার জন্য মানুষ কিনা করতে পারে- একেবারে পশু হয়ে যায়! কমল তখন হয়ে যাবে একেবারে মার্টির ফর... কী বলে ওইটারে, ওই যে, সতীত্ব।
আমার অবশ্য সেরকম ইচ্ছা নাই। ধরো কমলের প্রেমিক একজন সত্যি সত্যিই ছিলো। খুব চালু, আর চালু লোকেরই দরকার ছিলো কমলের। এতোই চালু যে তাদের সম্পর্কটা সম্পর্কে কেউ কিছু আঁচ করতেই পারে নাই। ধরো হাটবারের দিন কমল তারে বললো, ‘দাদা, আমার বাজারটা একটু করে দেন না’। সে ভাব দেখাতো এসব ফালতু ঝামেলা তার একেবারেই ভালো লাগতেছে না, নেহায়েৎ বলে যেহেতু ফেলেছেই তাই কী আর করা! অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাজারটা করেই দিতেছে। এদিকে মাঝে মাঝে বাজারটা করে হয়তো টাকা আর নিলো না। মানে হাজার হলেও গোপন প্রেমিকা, প্রকাশ্যে কোন উপহার তো আর দিতে পারতেছে না, বাজারটাই নাই করে দিলো। কমল কিন্তু তারে দিয়ে প্রতিদিন বাজার করাতো না, করাইলে তো লোক বুঝে ফেলবে, সেও চালু কম না, এরকম পরিস্থিতিতে একা একা থাকতে হলে চালু হইতেই হয়।
তো এই হলো আমাদের সাসপেক্ট নাম্বার সেভেন...
-মোটিভ কী?
-হইতে পারে তারে আর কমলের পছন্দ হচ্ছিলো না, কিংবা কমলই হয়তো তার বর্তমান বউরে বাদ দিয়া কমলরেই ঘরে তুলতে বলছিলো... অবশ্য কমল তা বলবে না। শি ইজ টু ক্লেভার টু ডু দ্যাট। একবার মুক্ত হইতে পারলে কে আর আবার বিয়ে কইরা ঝামেলা...
-কী?
-না, কিছু না। স্যরি। তো যদি আমাদের গোয়েন্দা আবিষ্কার করতে পারে যে কমল আর তারে পাত্তা দিতেছিলো না, এই ভদ্রলোকেরও মোটিভ বাইর হয়ে আসবে।
-কিন্তু তার আগে কও গোয়েন্দা বাবাজী এই লোকরে কমলের প্রেমিক হিসেবে আইডেন্টিফাই করবে ক্যামনে? কেউ তো তাদের সম্পর্কটা আচঁই করতে পারে নাই!
-ওয়েল, (কাশি) কেউ না কেউ তো করছেই। মানে জানে নাই হয়তো কিন্তু সন্দেহ করছে। হয়তো খেয়াল করছে কমলের ফুট-ফরমাশ এই লোকই বেশী খাটে। কিংবা রাতে হয়তো কমলের ঘরের কাছে দেখে থাকতে পারে। তার এই সন্দেহের ব্যাপার গোয়েন্দা জানলে ব্লাফ দিয়া এই লোকের কাছ থেইকা সম্পর্কের ব্যাপারে স্বীকারোক্তি আদায় করে নিতে পারে। ... কিংবা ধরো আগের যে দুইজন ছিলো তাদেরই কেউ রাতে কমলের ঘরের পর নজর রাখার সময় এরে দেখে ফেলছিলো। এই ঘটনা ঘটলে কিন্তু আগের দুইজনের পর সন্দেহ আবার বাড়বো- মানে তারা হয়তো ভাবছিলো, আচ্ছা আমাদের পাত্তা দাও না আবার এদিকে নাগররে ঠিকই ঘরে তোলো। ... তো, এই পর্যন্তই, আর সাসপেক্ট বাড়ানো যাবে না, বাড়ালে বেশী জটিল হয়ে যাবে। এখন ক্রাইমটার ডিটেইলস ঠিক করতে হবে... ঘুমাই গেছো?
-তোমার গল্প কতটুকু বাস্তবসম্মত তা ভাবতেছি। কমলের মতো মেয়ে যে কিনা এতো কষ্ট করে চলে, বলতে গেলে হতদরিদ্র, তারে কিনা এতো লোক খুন করতে চাবে?
-আমি আগেও দেখছি, যখন অন্য মাইনষের ছাই-পাশ গেলো তখন সবকিছু বিশ্বাস কইরা নেও, আর আমার গল্প শোনার সময় তোমার যতো রাজ্যির সাসপেনশন অফ ডিসবিলিফ লাফ মাইর্যাশ আসে!
-আচ্ছা, তুমিই কও, আমারে কয়জন খুন করতে চাইতে পারে বলে তোমার ধারণা?
-তোমার গোপন প্রেমিক তোমারে খুন করবে না বলতে চাইতেছো?
-ফাইজলামি কইরো না তো! সিরিয়াস আমি-
-তোমার সাথে তার তুলনা আসে কেম্নে? তোমারে খুন কইরা লাভ কী? তোমার টাকাকড়ি ব্যাঙ্কে ঠিকঠাক ভাবে রাখা আছে, নমিনিও ঠিক করা আছে, তোমারে মাইরা তোমার সম্পদ তো কেউ নিতে পারতেছে না। ওদিকে কমল মারা গেলে তার জমিজমা তো ভাইরা পায়ে যাচ্ছে!... আবার ধরো কমলের কোন বৈধ প্রেমিক নাই বরং তার প্রেমিকই কিন্তু অন্য মেয়ের বৈধ প্রেমিক, মানে স্বামী। তোমার যদি অন্য কোন প্রেমিক না থাকে তো তোমার লাভ লাইফ তো নিরামিষ একেবারে, খুনখারাপি আসবে কীভাবে?
-এই ভালো কথা, তুমি কমলার খুনের একটা সাসপেক্ট মিস করেছো কিন্তু!
-কোনটা?
-কমলের প্রেমিকের বউ। সে ঠিক পেলে কি আর এমনি এমনি ব্যাপারটা যেতে দেবে?
-উফস, তাই তো! দেখো তাইলে, তোমার প্রেমিক একটা, তার বউ আবার তুমি নিজে। খুন হওয়ার চান্সই নাই!
-এই জটিলতায় না যাইতে চাইলে, মানে আমার মতো নিরাপদে থাকতে চাইলে কমল কী করতে পারতো?
-কি জানি কী করতে পারতো! উমম... বাপের কথা শুনতে পারতো। বরের বাড়ি মাটি কামড়ায়ে পড়ে থাকতে পারতো।
-তুমি শালা একটা...
-আমি কি আর ওরে ঐটা করতে বলতেছি নাকি! তুমি বললে বলেই না একমাত্র পথটা বলতে গেলাম। দেখো এই কাজ করলে কিন্তু সব সাসপেক্ট ঝরে পড়ে একে একে।
-জমিটা কিন্তু পায় না তাইলে।
-তা পায় না, কিন্তু বরের জমিতো ...
-একটা জিনিস ভেবে দেখছো কি? মানে অন্য ভাবে নিয়ো না, যাস্ট ধরার জন্য ধরা আরকি... ইয়ে মানে, আমার সব টাকা পয়সার নমিনি তো ধরো তুমি, আমি মারা গেলে তোমারই হবে, আবার যদি ধরে নিই তোমার একটা... যাস্ট ইন কেস আরকি... তোমার একটা প্রেমিকা আছে...
-কি উদ্ভট! ওরকম তো আমিও বলতে পারি, আমারও তো সব টাকা পয়সার নমিনি তুমি, যদি তোমারও একটা প্রে...
-সেটাই আরকি... মানে বলতেছিলাম কি...
-আবার আমি কি শুধু তোমার ব্যাঙ্কের নমিনি নাকি? আমার বাবার সব টাকা-পয়সা, বাড়ি ঘর, সবকিছুর নমিনিই তো আমি। তো আমি কি তার জন্য... না দিনদিন তুমি সত্যি সত্যি ফ্রিক হয়ে যাচ্ছো!
-আমি কি আর সত্যি সত্যি বলছি নাকি। তুমি যেভাবে কমলের গল্পটা সাজাচ্ছো, আমিও সেভাবে একটু...
-আমার কিংবা তোমার গল্পটা সাজাতে যাচ্ছিলে? ইরি খাইছে! ভাইরে, মাফও চাই দোয়াও চাই, তোমার সাথে আর না!
-নাতো! আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে জনাব, কমল বরের বাড়ি থেকে গেলেও মোটিভসহ সাসপেক্ট থাকতোই, মনে হয় সবসময়ই থাকে। তার চেয়ে এই ভালো।
-নিজের বাড়িতে খুন হওয়া?
-তুমিতো হুদাই একটা গোয়েন্দা গল্প বানানোর জন্য ব্যাপারগুলোরে এক্সট্রিমে ঠেলতেছো। খুনফুন এতো সহজ নাকি? ... আসলে কমল মেয়েটারে আমার খুবই ভালো লাগতেছে। বেশ ইয়ে ভাব আছে। বরের বাড়ি ব্যাক না করে ভালো করছে। আবার কি চালু দেখছো, এমন একটা প্রেমিকরে এমন ভাবে জুটাইছে যারে ইচ্ছে করলেই দূরে যেয়ে মুড়ি খাইতে বলতে পারে! হিহিহি...
-বুঝলাম। তো এইসব মোটিভ ফোটিভ বের করার পর আমরা এখন কী করবো? দুইজনে দুই ঘরে ঘুমাবো?
-না, তুমি এখন গল্পটা শেষ করবা।
-ও আর শেষ হইছে!
-তাইলে কিন্তু আমি আমার খুনের মোটিভ ফোটিভ নিয়ে যা শুরু করছিলাম তা শেষ করবো।
-করোগা। আমি শুনতেছি না।
-দেখা যাক! ধরো একদিন দেখা গেলো আমি খুন হয়ে গেছি...
-থামো তুমি!
-হিহিহি...
-দাঁড়াও, দেখি তোমারে খুন করতে পারি কিনা।
-হিহিহি, সরো তুমি, গলার কাছে হাত আনবা না, তোমার পর কোন ভরসা নাই।
-ঠিক আছে, হাত না অন্য কিছু আনতেছি। আমি তো ভ্যাম্পায়ার, আসো এখনি তোমারে ভ্যাম্পায়ার বানায়ে দিই।
ব্রুনো
মন্তব্য
হৈ মিয়া, এইটা কি আশির দশকের বাংলা সিনেমা পাইছেন যে ফুলে ফুলে ঠোকাঠুকি করে যা বুঝার বুঝায়া দিবেন?
তারপর কী হৈছে সেইটা কন। নো চুদুরবুদুর!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
____________________________
আরো লিখুন - আরো পড়তে চাই - যবনিকা টানবেন না যেন---
____________________________
এই গল্পের?
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
দুই -ই।
____________________________
গল্প শ্যাষ।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
নতুন গল্পে আবার হবে!!
____________________________
নো চুদুরবুদুর!
ধরেন ফুলে ফুলে ঠোকাঠুকির পর কিছুক্ষণ দুই পাখিতে ঠোকাঠুকি হলো, তারপর এক ফুলের সাথে এক ভ্রমরের ঠোকাঠুকি হলো, তারওপরে জানালা দিয়ে দেখা গেলো সূর্য উঠতেছে আর এই দুই পাবলিক আড়মোড়া ছাইড়া বিছানার পর উঠে বসতেছে। এইতো?
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
কুপায়ে লিখতে থাকেন!
আপনার হাচল অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভেট করার আবেদন জানিয়ে গেলাম।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আপনার আবেদনের যে এমন জোর তা কিন্তু জানতুম না! হাচলত্ব প্রত্যাশী ব্লগারদের দলে দলে স্পর্শ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া গেলো
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
ভালো লিখেছেন ব্রুনো।
---এবিএম।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
নীহারবাবুর গপ্প মনে পইড়া গেল।
কিন্তু খুনটা আসলে করল কে?
চলুক
কেম্নে কমু? গল্পটা তো ওরা আর শেষ করলো না
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
দারুণ লিখেন আপনি! আরো লিখুন।
চেষ্টা থাকবে আরো লেখার।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
আপনার একাউন্ট এখন না, আরো এক বছর আগে থেকেই পাওনা, নিয়মিত লিখুন, বেশি সময় লাগার কথা না
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
হয়ে গেছে আপনাদের সবার শুভকামনায় । ভালো থাকুন।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
অন্য স্বাদের গল্প। ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।
একটা অনুরোধঃ লিখ্যা ফাডায়ালান
ফাডায়েই ফ্যালামু।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
আপনার লেখার হাত জব্বর
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
থ্যাঙ্কু
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
দেখি একটা গোয়েন্দা গল্প লেখা যায় কি না
বেস্ট অফ লাক।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
সেইরাম তো!!!!! তয়, ধুগো দাদার সাথে একমত।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
গান্ধর্বী
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
শেষ তো! পপকর্ন ফুরায় নাই?
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
লেখা ঝরঝরে কিন্তু, মনে হল একটা দ্বিধার মাঝে গল্পটা আটকে রইল - কেমন গল্প হবে সে, খুনের গল্প না খুন নিয়ে শিব্রাম চক্রবর্ত্তী ধরণের রস-রসিকতার গল্প। আরও লিখুন, আরও ভাল হবে।
অফ ট: হিমুর 'কামড়' মনে পড়ে গেল। সচলায়তনের দায়িত্ব সামলানোর কাজে ব্যাস্ত থাকার ফলে সে' লোকের কাছ থেকে অনেক অসাধারণ গল্প পাওয়ার সুযোগ আমাদের সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। কি আর করা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
হাচলাভিনন্দন!!!!!!!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
থ্যাঙ্কু
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
লেখা ভাল্লাগছে! শেষে আইসা কেমন কেমন জানি
পরের বার, কিভাবে ভ্যাম্পায়ার বানাবেন টাইপ কিছু দিয়া দিয়েন
জিউস
নিজে ভ্যাম্পায়ার হলেই ভ্যাম্পায়ার বানানো যায়
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
বহুদিন পর আপনার লিখা পেলাম।
মাঝে আরেকটা লিখেছিলাম।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
তাপ্পর??
তাপ্পর আমারে রুম থেকে বাইর করে দিছে
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
হাচল হইছেন এইবার এদের গল্পটা আপনিই শেষ করেন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
দেখা যাক।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
গোয়েন্দা গল্পটা কিন্তু জমে গিয়েছিলো।
দুই ফুলের ঠোকাঠুকির গল্পের পাশাপাশি গোয়েন্দা গল্প লেখাও চালিয়ে যান।
পপ্পন চিবাইতে থাকলাম।
*****
আপনার সচল হওয়াটুকু অন্যরা বুঝতে পারলেও আমি পারিনি।
অভিনন্দন জানবেন।
-----------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
ওকে।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
অভিনন্দন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
থ্যাঙ্কু সাক্ষী সত্যানন্দ।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
মুখের ভাষায় সুন্দর গল্প।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
ভালা লাগছে
- আরাফ করিম
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
চমৎকার।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ।
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
দারুণ।
অনেক অনেক থ্যাঙ্কু
____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।
গল্পবলায় নতুনত্ব পেলাম। দারুন লাগল ব্রুনো দা।
মাসুদ সজীব
নতুন মন্তব্য করুন