কথা ছিলো ৯ তারিখে খোসা ছাড়ানো হবে “গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও জাদুঘরে চুরি রহস্য”-এর।
সে আর হলো না। একঝাঁক কালাকালীর নানান জল্পনাকল্পনা-আয়োজন শেষে তারিখ পৌঁছুলো ১১তে। সকালে পাঠসূত্রের স্টলে হার্ডবোর্ড দিয়ে পোস্টার ঝুলিয়ে দেওয়ার কথা। সে নিয়েই কালাকর্নেল হাসিবের সাথে কথা হচ্ছিলো আগের রাতে। সকাল ১০টার আগে আমার চোখ খুলতে চায় না। তাই ঠিক হলো সকালে হাসিব ভাই কল দিয়ে আমার ঘুম ভাঙাবেন। ১১তারিখ সকালে আমার কালাচেতন মন আমাকে জাগিয়ে তুলল সাড়ে নয়টার। ঘড়ি দেখেই তো আমার মাথায় হাত! হাতড়ে হাতড়ে মোবাইল খুঁজতে থাকি। নির্ঘাত হাসিব ভাই কল দিতে দিতে হয়রান হয়ে গেছেন! মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি, কীসের কী? কোনো কল আসে নি। আমিই কল দিলাম কর্নেল হাসিবকে। ওপাশ থেকে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে তিনি বলে উঠলেন, “হ্যা-অ্যা-অ্যা-অ্যা-লো! কে-এ-এ-এ?” হায় কপাল! উনাকে জাগিয়ে আমি নেয়েখেয়ে পোস্টার হাতে রওনা দিলাম বইমেলার দিকে।
শুক্রবার সকালে বইমেলা বাচ্চায় বাচ্চারণ্য। বাচ্চারা ছোটাছুটি করে খেলছে আর বই কিনছে। ঘুরতে ঘুরতে চারটা বই কিনে ফেললাম। হাসিব ভাই তখনো পৌঁছান নি। নজরুল মঞ্চে বসে বই পড়তে শুরু করলাম। নজরুল মঞ্চের ঠিক পাশেই লাউডস্পিকারে ভেসে আসছে এবারের বইমেলার ছায়াছন্দমার্কা থিমসং “অমর একুশে গ্রন্থমেলা... লেখক-পাঠকের মিলনমেলা... গ্রন্থমেলা... গ্রন্থমেলা... গ্রন্থমেলা...” আর তার পাশেই বাংলা একাডেমীর মঞ্চে চলছে শিশুকিশোরদের সংগীত(?) প্রতিযোগিতা। গানগুলো শোনা বলে চিনতে পারি, তা না হলে ওগুলো আদৌ গান নাকি কবিতা সে নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়তে হয়। তার উপর কোনো একটা অজানা কারণে গানের মাঝপথে প্রত্যেককে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছিলো।
একদিকে গ্রন্থমেলা-গান আর অন্যদিকে এই সংগীত-অত্যাচার সয়ে বই পড়ছি, এমন সময় হাসিব ভাই বোর্ড হাতে হাজির হলেন। তিনি নিমতলী গেট গিয়েছিলেন এই বোর্ড আনতে। বোর্ডের উপর পোস্টার সেঁটে সেটা পাঠসূত্রের দুইপাশে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে এ-ই হলো পরিকল্পনা। নজরুল মঞ্চের ওখানেই বোর্ড বিছিয়ে কাজ শুরু হলো।
পোস্টার সাঁটার পর দেখা গেলো বোর্ড বড়, চারপাশ দিয়ে ভালো দেখাচ্ছে না। কাটতে হবে। কিন্তু কাটব কী দিয়ে? ছুরি-খুর-খুন্তি-করাত কিছুই নেই। হাসিব ভাই পকেট থেকে চাবির গোছা বের করে চাবি দিয়ে কাটতে শুরু করলেন বোর্ড। আর আমি আরেকটা বোর্ডের কোনার খাঁজ ধরে ধরে ছিঁড়তে বসলাম।
কাটাছেঁড়া হয়ে গেলে পাঠসূত্রে গেলাম দুজন। পাঠসূত্রে তখনো বই আসে নি। সাদা পর্দা ঝুলছে স্টলকে আড়াল করে। আমাদের হাতে পোস্টার দেখে বাচ্চারা এদিক সেদিক থেকে উঁকি দিচ্ছে। ফিসফিসিয়ে বলছে “ঝাকানাকা”, “ঝাকানাকা” আর উঁকি দিচ্ছে স্টলের ভেতর। মনটা একটু খারাপ হলো। ৯ তারিখেই মোড়ক উন্মোচন হয়ে গেলে সবাইকে বই দেওয়া যেত। সে যা-ই হোক। এখন কাজ হলো পোস্টার লাগানো বোর্ডে ফুটো করে পাঠসূত্রের দুই কানে পরিয়ে দেওয়া। ফুটো করব কী দিয়ে? ঝোলাবই বা কী দিয়ে? কয়েক স্টল পেরিয়ে এক স্টল থেকে দুটো সুতলি চেয়ে আনলাম। হাসিব ভাই তার সর্বকর্মপটিয়সী চাবি দিয়ে পোস্টারের কান ফোঁড়াতে লাগলেন। সেই ফুটোতে সুতলি পরানো হলো।
এখন ঝোলাব কী করে? বেশ কসরত করে তাও যা ঝোলানো হলো স্টলের নাম্বার প্লেটের সাথে, তাকে পোক্ত করার উপায় কী? পাশ দিয়ে এক লম্বু ভাই হেঁটে যাচ্ছিলেন বান্ধবীর সাথে। তাকে সাধলাম দড়ি ঠিকঠাক করে দিতে। লম্বু ভাইয়ের বান্ধবী দেখলাম বুদ্ধিতে সরেস। আমার হাতে রোল করা পোস্টার নিয়ে সেটাকে লাঠির মতো ধরে দড়ি ঠিক করে দিলেন। এই গেলো একটা পোস্টার। আরেকটা একটু বেকায়দা কোনায় পড়েছে। পাশের স্টলের লোকটি বুদ্ধি দিলেন চেয়ার বা টুল থাকলে তাতে চড়ে ঠিক করতে। পাঠসূত্রে চেয়ারটেয়ার কিছু বসে নি তখনো। পরামর্শদাতাকেই বললাম, “ভাইয়া, আপনাদের ওখান থেকে একটা চেয়ার দেবেন?” ভদ্রলোক একটু হতচকিত হলেন বটে, তাও কী ভেবে একটা চেয়ার এগিয়ে দিলেন। সেটায় চেপে দ্বিতীয় পোস্টারের গতি করলেন হাসিব ভাই। তাও পোস্টার এদিক ওদিক থেকে খুলে পড়তে চায়। শেষমেষ সেফটিপিন দিয়ে সেগুলো আটকে দেওয়া হলো খুঁটিতে পেঁচানো কাপড়ের সাথে। ব্যস! আপাতত কাজ শেষ।
দুজন মিলে নজরুল মঞ্চে ফিরে এসে কালাসিমনের অপেক্ষা করতে করতে ব্লগরব্লগর করে দুনিয়াদারি উদ্ধার করতে থাকলাম। ওদিকে কালীস্কী ও নূপুরাপু কেনাকাটা করছে নিউমার্কেট এলাকায়। আমাদের কালাঞ্চের আমন্ত্রণ জানালো তারা। মেলার বাইরে এসে ক্লান্ত কালা হাসিব ভাই চা খাওয়ার খায়েস ব্যক্ত করলেন। দেখা হলো অনিন্দ্যদার সাথে। আমার হাত থেকে পোস্টার ছিনতাই করে নিলো ঝিম পলাশ। এরপর হাসিব ভাই আর আমি হেঁটে হেঁটে রওনা দিলাম কাঁটাবনের দিকে। কালাঞ্চ করতে করতে চলে এলেন সিমন ভাই। নূপুরাপু-কালীস্কী চলে গেলো বইমেলার দিকে। বাকিরা গেলাম প্রেসে। চারদিকে বাঁধাই চলছে। ঝাকানাকা আর ঝাকানাকা!
প্রথম কপিটা হাতে নিতেই মনটা ঝলমলিয়ে উঠল। কী যে সুন্দর হয়েছে দেখতে! ভালো লাগার প্রধান কারণ এটা টিনিটিন, অ্যাসটারিক্স না। এ আমাদের ঝাকানাকা। আমাদের মানুষ। ঠিকমতো প্রিন্ট হয় নি এমন কাগজগুলো ওরা ফেলে রেখেছিলো এক কোনায়। সেগুলোও নিয়ে এলাম। ইচ্ছা ওগুলো কেটে কেটে কার্ড বানাব।
১০০ কপি বেঁধে রাখা ছিলো আগেই। দুটো বান্ডিল নিয়ে দে ছুট বইমেলার দিকে।
মেলার মুখেই ছিলেন মুস্তাফিজ ভাই ওরফে লোচন বক্সী। মেলায় ঢুকে পাঠসূত্র-লিটল ম্যাগ চত্বর-নজরুল মঞ্চে চক্কর খেতে খেতে প্রায় সবাই চলে এলেন। পাঠসূত্র থেকে ঝাকানাকার প্রথম কপিখানা কিনে ইতিহাসের পাতায় কালাক্ষরে নিজের নাম লিখিয়ে নিলেন অরূপ কুমার চাকী। সবাই তাঁর ছবি তুলতে ব্যস্ত। ছবি তো ছবি, পারলে আমরা তাঁর অটোগ্রাফ নিই... হেহেহে।
এক পিচ্চি ঝাকানাকা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলে তার বাবা ঝাড়ি দিয়ে "এগুলা পড়ে কী লাভ?" বলে নিয়ে গেলেন। কী যে রাগ হলো!
মোড়ক উন্মোচনের সময় ঘনিয়ে আসছিলো। সবাই চলে এলাম নজরুল মঞ্চে। কালীস্কীর আনা কাগজে মোড়ানো হলো ঝাকানাকাকে।
তারপর রীতিমতো কালাক্রমন চালিয়ে মঞ্চ দখল করতে হলো। ঝটপট পোস্টার লাগানো হলো মঞ্চে।
মোড়ক উন্মোচন করলেন রিটন ভাই ও আহমদ মাযহার। কালাবাহিনীর পক্ষ থেকে কালাবাণী দিলো কালীস্কী, কালীসুর, নজু ভাই, সিমন ভাই, আমি।
হৈহৈরৈরৈ করে ঝাকানাকার অভিষেক হয়ে গেল বইমেলায়। এরপর কালাড্ডার পালা। মেলার বাইরে চা-পুরি-চপ-আইসক্রিম সহযোগে চললো কালাহার। তারপর একে একে সবাই ফিরে গেলাম যার যার ডেরায়, হাতে ঝাঁ চকঝকে ঝাকানাকা!
শেষ চারটা ছবির ফটোগ্রাফার রণদা।
মন্তব্য
কালাভিনন্দন সকল কালাকুশলীকে
ঝাকানাকা এগিয়ে চলুক। অনেক শুভকামনা।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কালাম্বো খুশ হুয়া!
আমি যদিও কালাবাহিনীর কেউ না, আমি গুলাবি বাহিনী চালাই।
তারপরেও, অরূপ কুমার চাকী'কে নিখিল রঙীয় বাহিনী'র পক্ষ থেকে বলবেন তাঁকে সাকী দিতে না পারি আমরা, সুরা দিয়ে ঠিকই আপ্যায়ন করবো। মানে, রঙিন সুরা না পারি, মাংসের সুরা দিয়েও তো আপ্যায়ন করতে পারবো, নাকি! পরোটা দিয়ে সেই সুরা খেতে খেতে কালাবাহিনীর সাথে কালালাপ করবেন অরূপ কুমার চাকী।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
যেই পিচ্চির বাবা এভাবে পিচ্চিকে বঞ্চিত করে ভাগিয়ে নিয়ে গেলেন, সেই চৌধুরী সাহেবকে আমরা জানিয়ে দিতে চাই, কোনো লাভ নেই। আপনার পিচ্চি ঝাকানাকা পড়বেই। ঠ্যাকাতে পারবেন না। মুহাহাহাহাহাহাহাহা।
সংশোধনঃ ঝাকানাকার প্রথম ক্রেতা আসলে আমি, বই হাতে পাই বা না পাই। ঝাকানাকার খোমাখাতায় প্রমাণ আছে হু হু। আফসোস! আমার ছবি কেউ তুলবেনা
হুম, অগ্রীম অনলাইন বিক্রেতা হিসাবে আপনার দাবির সত্যতা সমর্থন করিলাম।
আপনেই বিশ্বের পেরথম ঝাকানাকা কাস্টুমার।
মারভিন আপনি ছবি পাঠায় দ্যান qalaidoscope অ্যাট জিমেইল ডট কম বরাবর। ছবি না তুলসে তো কী হইসে, কালাক্যাচার করা হবে।
আমার কালাক্যাচার! আমিতো পুরাই কালাশায়ী হয়ে গেলাম!
কালাবাহিনীর জন্য রইল কাক্কেশ্বর কুচকুচে কালাভিনন্দন।
গুলাবি মাম্মা, ঝাকানাকার র্যাপিডশেয়ার লিংক দেন।
কার্বন মাঝি ময়নারে কন।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঝাকানাকার বহিপ্রকাশ এর মহানন্দের মহাযজ্ঞে ঝাকানাকা দেহ দোলাইতে মন চায়
-অতীত
আমার মেয়ে ডিম্যান্ড দিয়ে রেখেছে, আজ কিনতে হবে!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
লেখা, বিশেষ করে ছবিগুলোর জন্য ধন্যবাদ। ঝাকানাকার আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম!
কালাবাহিনী কে কোকিলকালো অভিনন্দন
ছবিগুলা দারুণ!!!
ঝাকানাকার সকল পুস্টের লগে ঝাকানাকার অনলাইন লিঙ্ক সংযোজন করা হউক
http://boi-mela.com/BookDet.asp?Bookid=157
কি আর করি বাংলাদেশে ফোন করে বলেছি কিনে পাঠিয়ে দিতে নাহলে রেখে দিতে, যখন যাবো তখন পড়বো
ছবিগুলোর জন্য ধন্যবাদ। চৌধুরী সাহেব কি মেলায় এসেছিলেন উপকারী এবং লাভজনক খবরের কাগজ কিনতে?
বৈকাল থেকেই হানা দেওয়ার ইচ্ছে ছিল, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে লেট লতিফ হয়া ফেলাম। তবে ভোজনপর্বটা সারতে পেরেছি, এটাই সান্ত্বনা
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
ঝাকানাকা একদম ঝাকিয়ে দিক
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ঘোর এই কলিকালে কালা বাহিনীকে ঝকঝকে কালা ঝাকানাকা অভিনন্দন।
জয় ঝাকানাকা, জয় হোক কৃষ্ণ কালার।
অনন্ত আত্মা
কালাবাহিনী এগিয়ে চলুক।
ঝাকানাকা এগিয়ে চলুক।
শুভকামনা রইল।
স্টলে তো দেখি ঝাকানাকা রমরমিয়ে বিকোচ্ছে... এই ধারা অব্যাহত থাকুক... অভিনন্দন কালাবাহিনীকে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কালাবাহিনির কালাকার্যক্রমের কালাবর্ণনা মারাত্মক কালিমাময় (অবশ্যয় পজিটিভ অর্থে ধরতে হবে) হয়েছে। কালোত্তীর্ণ হোক কালাসমাবেশ আর ঝাকানাকার যাত্রা অব্যাহত থাকুক নিত্য নতুন কেলো কাহিনিতে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
কালাবাহিনীর সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অভিনন্দন। বই বিক্রি বাড়ুক।
নতুন মন্তব্য করুন