রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বনাম আত্মহনন

নাশতারান এর ছবি
লিখেছেন নাশতারান (তারিখ: সোম, ১৪/০৩/২০১১ - ৫:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাঙালির সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার ইতিহাস। আমাদের স্বাধীনতার বিজয়গাথা রচিত হয়েছে রক্ত, অশ্রু আর ভালোবাসার অক্ষরে। এ বিজয় শুধু বাঙালির নয়, বরং শোষণের বিরুদ্ধে সাহসী মানবতার। তাই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা পাশে পেয়েছি কিছু অবাঙালিকেও যারা দেশ-জাতির সীমারেখা ভুলে এগিয়ে এসেছেন মানবতার আহ্বানে। এসব অবিস্মরণীয় ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ২৬ মার্চ ২০১১তে নির্বাচিত অবাঙালি ৫০জন ব্যক্তি ও ৪টি সংগঠনকে সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। দেরিতে হলেও, ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য সরকারের এই প্রয়াস অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। নির্বাচিতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে পত্রিকায় যেটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে প্রশংসনীয় এ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তালিকায় বিশেষ কিছু সংগঠনের(যেমন- জেনেভাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ জুরিস্টস – ICJ) উপস্থিতি।

আইসিজে: কবে, কোথায়, কেন

আইসিজের জন্ম বাহান্নতে। সেপ্টেম্বর ১৯৭১-এ অ্যাস্পেনে(কলোরাডো) আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের প্রস্তাব অনুযায়ী সে বছর নভেম্বরে আইসিজের তিন সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিশন গঠিত হয়। পাকিস্তান সরকারের অসহযোগিতাবশত পরে এই কমিশন বাতিল হয়ে গেলে আইসিজের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৭২-এর জুনে নিয়্যাল ম্যাকডারমট কর্তৃক প্রকাশিত আইসিজের অনুসন্ধানী রিপোর্টটিকে(The Events in East Pakistan, 1971, A Legal Study) “১৯৭১-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বরে পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর তথ্যভিত্তিক দলিল” বলে দাবি করা হয়(পৃষ্ঠা-৫)। বহুল প্রচারিত এই রিপোর্টটি পড়লে বাংলাদেশ সরকারের সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে উৎকণ্ঠিত বোধ করার যথেষ্ট অবকাশ থাকে।

এই রিপোর্ট নিয়ে আপত্তির কারণ কী?

সংক্ষেপে বলা যায়, আইসিজের রিপোর্টটি তীব্র পক্ষপাতদুষ্ট এবং আইনগত, তথ্যগত, কৌশলগত ও কূটনৈতিক দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ। এই রিপোর্টের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের যে নিয়ম, সে মতে একাত্তরে আওয়ামীলীগ নেতাদের(পড়ুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের) স্বাধীনতা ঘোষণা করার কোনো অধিকার (entitlement অর্থে) ছিলো না। আর তাই স্বাধীনতার ঘোষণা আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক অবৈধ। বলাবাহুল্য, এই সিদ্ধান্ত এক কথায় বাংলাদেশের বৈধতাকেই সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে।

এই রিপোর্টে একাত্তরে ঘটে যাওয়া গণহত্যায় বাঙালিনিধনের উল্লেখ করা হয়েছে ঠিকই, তবে সেই সাথে একই বাক্যে বলা হয়েছে যে “বাঙালি বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও(পড়ুন মুক্তিবাহিনী) ঠিক একই অপরাধ ঘটিয়েছে বিহারি ও অন্যান্য অবাঙালিদের বিরুদ্ধে।” এখানে মুক্তিযুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ(civil war)বা বিচ্ছিন্নতাবাদ(insurgency) ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী(insurgents) বলে অভিহিত করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও দেশীয় দালালদের অপরাধকে বিহারিদের দুঃখ-দুর্দশার সাথে এক কাতারে এনে দাঁড় করায় এই রিপোর্ট। এর মতে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরেরা এবং মুক্তিযোদ্ধারা একই “আন্তর্জাতিক অপরাধ”-এ অপরাধী।

রিপোর্টের উপসংহারের প্রাসঙ্গিক অনুসিদ্ধান্তগুলো পড়ুন।


২৫ মার্চ থেকে ৩ ডিসেম্বরের গৃহযুদ্ধ এবং ৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বরের আন্তর্জাতিক যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকার লংঘন হয়েছে প্রবল মাত্রায়। অপরাধ ঘটিয়েছে:

(ক) বাঙালিদের বিরুদ্ধে, বিশেষত আওয়ামীলীগ কর্মী, ছাত্র ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সাহায্যকারীরা
(খ) বিহারি ও অন্যান্য অবাঙালিদের বিরুদ্ধে বাঙালি বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ও দাঙ্গাবাজেরা(mobs)


মানবাধিকার লংঘনের মধ্যে রয়েছে আবালবৃদ্ধবণিতার নির্বিশেষ গণহত্যা, প্রায় ১কোটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে বিতাড়িত করার প্রচেষ্টা; বিনাওজরে গ্রেফতার, নির্যাতন, নির্বিচারে হত্যা; নারীধর্ষণ, গ্রামে ও শহরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাট। অপরাধের ব্যাপকতা নিয়ে কোনো সংশয় না থাকলেও সঠিক পরিসংখ্যান তুলে ধরা অসম্ভব। উভয় পক্ষের পরিসংখ্যানই যারপরনাই অতিরঞ্জিত


রাষ্ট্রীয় আইন মোতাবেক সংঘটিত অপরাধ ছাড়াও আন্তর্জাতিক আইন লংঘনের তীব্রতাও চোখে পড়ে। যেমন: যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সশস্ত্র সংঘর্ষের আইন লংঘন করে, এবং তা জেনেভা কনভেনশন ১৯৪৯-এর তৃতীয় পরিচ্ছেদে উল্লেখিত গণহত্যাবিধির সাথে সাংঘর্ষিক।


আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ব্যক্তির সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকারের ধারা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে মার্চ ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার(Proclaim) অধিকার দেয় না


বাঙালি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্রের জোগান ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে ভারত তার নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন না করে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে(VII)।

১০
বাংলাদেশের সাথে মিত্রতার কারণে আত্মরক্ষার স্বার্থে ভারত তার পাকিস্তান আক্রমণকে যৌক্তিক দাবি করলেও তা গ্রহণযোগ্য নয়।

১১
পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা সামাল দিতে জাতিসংঘের ব্যর্থতাবশত ভারতে বাঙালি উদ্বাস্তুদের যে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছিলো তার ভিত্তিতে পাকিস্তান আক্রমণকে যৌক্তিক দাবি করতে পারত ভারত(VII)।

আইসিজের রিপোর্ট পড়ে মনে হয় স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ত আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দই স্বপ্রণোদিত হয়ে দিয়েছিলেন। নবগঠিত সরকারের(মুজিবনগর সরকার) উল্লেখ তাদের রিপোর্টে পাওয়া যায় না। আদৌ তারা এ ব্যাপারে জ্ঞাত ছিলেন কি না তা নিয়েও সংশয় হয়। কারণ স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছিলো দুটি। প্রথমটি ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে যেটা বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে দেন। দ্বিতীয়টি ১০ এপ্রিল ১৯৭১ মুজিবনগর সরকার গঠনের প্রাক্কালে। এই দ্বিতীয় ঘোষণাই প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা তথা স্বীকৃতি(Proclamation), প্রথমটি ছিলো declaration। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিকের অধিকার রয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান ও সার্বভৌমত্বের কাঠামো নির্ধারণের। একে ব্যক্তিবিশেষের স্বপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত বলে প্রকারান্তে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের মূলেই আঘাত হানা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক আইনের ধুঁয়ো তুলে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রয়াস এই রিপোর্টে চোখে পড়ে। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি যে ছয় দফা দাবি, সেটা ছিলো বহুলাংশে ১৯৭০-এর জাতিসংঘের সাধারণ সভার ২৬২৫ নং প্রস্তাবনার সদৃশ, যেখানে সম অধিকার, সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার, বহিরাগত হস্তক্ষেপ ছাড়াই রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের অধিকারের কথা বলা হয়েছে, এবং বলা হয়েছে সকল রাষ্ট্র এই অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে বাধ্য থাকবে। আবার, চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন ১৯৪৯-এর প্রোটোকল-১ অনুসারে “আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘর্ষ”-এর ব্যাখ্যায় ঔপনিবেশিক শাসন, বিজাতীয় দখলদার বা বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে “সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতার প্রয়োগ”কেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এবং এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই যে একাত্তরে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি ঔপনিবেশিক ও বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়েছে।

রিপোর্টে ইয়াহিয়ার সামরিক শাসনকে অবৈধ বলা হয়। ঐতিহাসিক সত্য হলো- একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফলকে উপেক্ষা করে ইয়াহিয়ার নির্দেশে ২৫ মার্চ রাতে পরিচালিত হয় “অপারেশন সার্চলাইট” শিরোনামে নৃশংস গণহত্যা। আইসিজের রিপোর্ট যদি পরস্পরবিরোধী না হয়ে থাকে, তবে ধরে নিতে হয় অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী সামরিক শাসকের আক্রমণের পর আত্মরক্ষার অধিকারটুকুও বাঙালির ছিলো না। অথচ তারাই কিনা বঞ্চিত হয়েছে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার গঠনের অধিকার থেকে।

ভারতের অবস্থান সম্পর্কে আইসিজের মতামত সুস্পষ্টতই তৎকালীন পাকিস্তানের মিত্রশক্তির(যুক্তরাষ্ট্র, চীন ইত্যাদি) দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা অনুপ্রাণিত। বাঙালির সাথে মিত্রতার কারণেই সমালোচিত হয়েছে ভারত।

জানামতে আইসিজে কখনোই তাদের মতামত প্রত্যাহার করেনি। আইসিজেকে সম্মানিত করতে চাইলে আমাদের মানতে হবে একাত্তরে স্বাধীনতার ঘোষণা অবৈধ, মানতে হবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে ছিলো কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী বাঙালির গৃহযুদ্ধ, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা আন্তর্জাতিক অপরাধের অপরাধী এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরিসংখ্যান বহুলাংশে ত্রুটিপূর্ণ। রিপোর্টের বক্তব্য মেনে নিয়ে সরকার শুধু যে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহাবস্থানকে খেলো করবে তা-ই নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের অবস্থানকেও করবে প্রশ্নের সম্মুখীন। কাজেই আইসিজেকে সম্মানিত করে সরকার প্রকারান্তে তাদের স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানকেই স্বীকৃতি দিচ্ছে। সেই সাথে খাটো করছে এই সম্মাননার উপযুক্ত দাবিদারদের অবদানকেও।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই নিছক ভুল বলে একে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখনো সময় আছে। সরকার তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে এই গ্লানির হাত থেকে বাঁচাতে পারে জাতিকে। সমগ্র জাতি যুদ্ধাপরাধীরের বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। এমন সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী মতকে স্বীকৃতি দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থানকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার অবকাশ নেই।

...

তথ্যসূত্রসহ সবিস্তারে জানতে মূল স্মারকলিপিটি পড়ার এবং বিতরণের অনুরোধ রইলো সকলের প্রতি।

নিচের এই লিংকগুলো থেকে স্মারকলিপিটি ডাউনলোড করে নেয়া যাবে:
- শুধু স্মারকলিপির টেক্সট (সংয়ুক্তি ছাড়া)
- স্মারকলিপিতে উল্লেখিত তথ্যের সমর্থনে স‍ংযুক্তিসমূহের তালিকা
- সম্পূর্ণ স্মারকলিপি (টেক্সট + সংযুক্তিসমূহ)

...

কৃতজ্ঞতা:
রায়হান রশিদ
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম [ICSF]-এর সংশ্লিষ্ট গবেষক ও সদস্যবৃন্দ


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

রায়হান রশীদ ও বুনোহাঁসকে অজস্র ধন্যবাদ ব্যাপারটি গোচরে আনার জন্যে।

আসুন এই পোস্টটি ছড়িয়ে দেই ফেসবুক ও টুইটারে।

নাশতারান এর ছবি

পোস্ট তৈরি করার সময় মেহেরজানকে খুব মনে পড়ছিলো।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

হাসিব এর ছবি

সম্মাননার সম্মান রাখাটা জরুরী। আইসিজে-কে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হোক।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

শেয়ারে দিলাম।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

শেয়ার কর্লাম।

রায়হান রশিদ এর ছবি

বুনোহাঁসের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা সাবলীল বাংলায় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।
এই বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে লিখিত ৩৯ পৃষ্ঠার মূল স্মারকলিপিটি আসলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম [ICSF] এর একাধিক সদস্যের (বিশেষত গবেষণা গ্রুপের) গত কয়েকদিনের পরিশ্রমের ফসল। বুনোহাঁসের আলোচনায় মূল বিষয়গুলো চমৎকারভাবে উঠে এসেছে, তারপরও তথ্যসূত্রসহ আরেকটু বিস্তারিত জানতে মূল স্মারকলিপিটি পড়ার এবং বিতরণের সনির্বন্ধ অনুরোধ থাকবে সকলের প্রতি। কিছু কিছু বিষয় (যেমন: আত্ম-নিয়ন্ত্রনের অধিকার, আন্তর্জাতিক‍‍্যুদ্ধ, স্বাধীনতার ঘোষণা, বিহারীদের নিয়ে বিতর্ক ইত্যাদি) নিয়ে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে, প্রকাশিত রেফারেন্সে যার অনুপস্থিতি বিশেষভাবে অনুভূত হচ্ছিল বেশ কয়েকদিন ধরেই - একারণেই সম্পূর্ণ স্মারকলিপিটি নিবিড় পাঠের অনুরোধ, যাতে এই বিষয়ে ভবিষ্যতে যে কোন বিতর্কে অবতীর্ণ হতে হলে প্রয়োজনীয় মালমশলা এবং যুক্তিগুলো হাতের নাগালে থাকে। নিচের এই লিন্কগুলো থেকে স্মারকলিপিটি ডাউনলোড করে নেয়া যাবে:
- শুধু স্মারকলিপির টেক্সট (সংয়ুক্তি ছাড়া)
- স্মারকলিপিতে উল্লেখিত তথ্যের সমর্থনে স‍ংযুক্তিসমূহের তালিকা
- সম্পূর্ণ স্মারকলিপি (টেক্সট + সংযুক্তিসমূহ)

বুনোহাঁসের প্রতি আবারও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আশা করি সরকারের নীতি-নির্ধারকগণ অবিলম্বে উত্থাপিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে তার এই পরিশ্রমকে সার্থক করবেন।
======================
মুক্তাঙ্গন | টুইটার | ফেসবুক

নাশতারান এর ছবি

আপনাকে এবং [icsf]-এর সংশ্লিষ্ট সদস্যের অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রমসাধ্য কাজটির জন্য।
দেখতেই পাচ্ছেন মূল বিষয়গুলোই এনেছি এখানে, যাতে তথ্যের ভারে ধৈর্যচ্যুতি না ঘটে। যত বেশিজন পড়বে, তত ভালো। তবু জরুরি কিছু বাদ পড়ে থাকলে জানাবেন দয়া করে, জুড়ে দেবো। হাসি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

হাসিব এর ছবি

উপরের তিনটি লিংক (এর মধ্যে একটি পোস্টশেষে আছে) পোস্টের শেষে জুড়ে দিতে পারেন আপাতত। অনেকসময় পাঠকেরা মন্তব্যগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েন না।

নাশতারান এর ছবি

আমি তিনটা পিডিএফই নামিয়েছি। কিন্তু দুটো ওপেন হচ্ছিলো না। তাই প্রথমে লিংক দেইনি।

এখন রায়হান ভাইয়ের মন্তব্য থেকেই জুড়ে দিলাম।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

"আইসিজি" র পরিবর্তে "আইসিজে" হবে না?

বুনোহাঁস কে অনেক ধন্যবাদ হাসি

নাশতারান এর ছবি

"আইসিজি"র মধ্যে "হাইসিজি(high CG)" ভাব আছে। সেজন্য মনে হয় ভুলটা হয়েছে। ঠিক করে দিলাম।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আমার একটা প্রশ্ন হলো, ৫০ জন ‌ব্যক্তি ও ৪টি সংগঠনকে সম্মানিত করার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে কে কে আছে, সেটা কি জানা যাবে?

দ্বিতীয় প্রশ্ন আসবে পরে। এই কমিটি ঠিক 'কী' এবং 'কোন' দিক বিবেচনায় রেখে তালিকাটি তৈরী করেছে?

তারপরের প্রশ্ন আসতে পারে, প্রধানমন্ত্রী কি আদৌ তালিকায় নাম ওঠা ব্যক্তি এবং সংগঠনের 'ভূমিকা' যাচাই করেছেন?

এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ICJ-এর নাম তালিকাভুক্তি 'কার' সুপারিশে হয়েছে?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নাশতারান এর ছবি

তালিকায় এমন আর কে বা কারা আছে সেটা নিয়েও দুর্ভাবনা হচ্ছে Smiley

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সম্মাননার সম্মান রাখাটা জরুরী। আইসিজে-কে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হোক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আইসিজে-কে বাদ দেয়া হোক।

বুনোহাঁস কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সুপ্রিয় দেব শান্ত

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সর্ব সাধ্যে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আপত্তিটা পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করা দরকার।

ধন্যবাদ রায়হান ভাই ও বুনো।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নৈষাদ এর ছবি

রায়হান রশীদ ও বুনোহাঁসকে অনেক ধন্যবাদ এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার গোচরে আনার জন্য...।

সুপারিশ কমিটিতে কে আছে কে জানে!! চলুক লেখালেখি... লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া...।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ধন্যবাদ রায়হান ভাই ও বুনো। ফেসবুকে শেয়ার করলাম ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নীড় সন্ধানী এর ছবি

১. সরকার কি সচেতনভাবে আইসিজেকে সম্মাননা তালিকাভুক্ত করেছে? যদি সচেতনভাবে করে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সরকারের ভেতর লুকিয়ে আছে ট্রয়ের ঘোড়া। যারা এই স্মারকলিপিকে অগ্রাহ্য করানোর ক্ষমতাও রাখে। এটা বিপদের কথা।

২. সরকার কি অজ্ঞতাবশত আইসিজেকে সম্মাননতার তালিকাভুক্ত করেছে? এরকম একটা বিষয়ে অজ্ঞতা ক্ষমার অযোগ্য। তার মানে হলো তালিকাভুক্ত সংগঠন বা ব্যক্তির ব্যাকগ্রাউন্ড চেক যথাযথভাবে করা হয়না। এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়ায়ও এটা একটা বিরাট ফাঁক।

৩. সরকার কি সম্মাননার জন্য মনোনয়ন আহবান করেছিল? আইসিজেকে বিশেষ কেউ সুপারিশ করেছে বিশেষ উদ্দেশ্যে? আইসিজের রিপোর্টের নিরপেক্ষতা রুবাইয়াতের মতোই সন্দেহজনক।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

একজন পাঠক এর ছবি

ব্যাপার গুলা জানা ছিল না। আসলেই জানার অনেক অভাব এবং জানানোর মত পীঠস্থান নাই...।।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এরকম সংগঠনকে কিভাবে নির্বাচিত করা হল! তাও ভালো আগেই ধরা পড়েছে। সরকারের কাছে যেভাবেই হোক এটা পৌঁছানো হোক। রায়হান ভাই, বুনো, হাসিব সহ যারা এই আর্টিকেলএর পেছনে সময় দিচ্ছেন/দিয়েছেন তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।

ফাহিম হাসান এর ছবি

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। ছড়িয়ে দিচ্ছি যতটা সম্ভব।

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

থাম্বস আপ!

মুস্তাফিজ এর ছবি

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

...........................
Every Picture Tells a Story

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আইসিজের রিপোর্ট যদি পরস্পরবিরোধী না হয়ে থাকে, তবে ধরে নিতে হয় অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী সামরিক শাসকের আক্রমণের পর আত্মরক্ষার অধিকারটুকুও বাঙালির ছিলো না।

চলুক

লেখাটার জন্যে ধন্যবাদ।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

এবার সরকারের গোচরে আনার উদ্যোগ নেয়া হউক।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভালো কাজ হয়েছে। চলুক

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

হাসিব এর ছবি

সাম্প্রতিক খবর হলো, এবার সবাইকে ডেকে সম্বর্ধনা দেয়া হচ্ছে না। তবে নাম ঘোষণা করা হবে। মেমোরান্ডামটি যথাযথ জায়গায় পৌছানো হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

সংক্ষেপে সহজ ভাষায় তুলে ধরার জন্যে বুনোহাঁসকে ধন্যবাদ।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

হাসিব এর ছবি

সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত রিপোর্ট -

এ সময় বিদেশি নাগরিকদের আনা-নেওয়া করা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ২৬ মার্চ সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। অনুষ্ঠান স্থগিত করা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন ওই ৪৭ বিদেশি নাগরিক ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করবেন। ওই ৪৭ জনের মধ্যে রয়েছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ফিল্ড মার্শাল মানেক শ, জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি, গায়ক জর্জ হ্যারিসন প্রমুখ। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘ উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশন, জেনেভাভিত্তিক আন্তর্জাতিক জুরিস্ট কমিশন, বিবিসি ও আকাশবাণী।

সূত্র - লিংক

আড্ডাবাজ এর ছবি

তথ্যবহুল ও জনগুরুত্বপূর্ণ এই লেখাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

অপছন্দনীয় এর ছবি

লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।

হাসিব এর ছবি

আপডেট ২২শে মার্চ - অনানুষ্ঠানিক সূত্র থেকে জানা গেছে ICJ-এর নাম তালিকা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যারা এই ইস্যুটি তুলে ধরতে শ্রম ও উৎসাহ যুগিয়েছেন তাদেরকে আবারো কৃতজ্ঞতা জানাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।