বাংলায় কথা কই

নাশতারান এর ছবি
লিখেছেন নাশতারান (তারিখ: রবি, ২৯/০১/২০১২ - ২:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[justify]বাংলায় বোধ হয় আমাদের আর পোষাচ্ছে না। চলনে বলনে কাজেকর্মে কোনোখানেই না। হিন্দিপ্রেম তো অনেক আগে থেকেই ছিলো আমাদের। আজকাল ডোরেমন শিশুরা বাংলার চেয়ে হিন্দিতে পারদর্শী হয়ে উঠছে। কথার ফাঁকে দুয়েকটা হিন্দি বুলি জুড়ে না দিলে বড়রাও ঠিক খুউল হতে পারছেন না। বাংলায় তাই আর পোষাচ্ছে না।

পথ চলতে চলতে বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে চোখ পড়লে পণ্যের নামের আগে বানানপ্রমাদে দৃষ্টি গেঁথে যায় স্বভাবদোষেই। আমার ভীষণ পড়ুয়া খালাত ভাই মাহরাফ পথেঘাটে চলতে ফিরতে ব্যানার-বিলবোর্ড দেখে দেখে বানান শিখত। বলত আ-তে আড়ং, ম-তে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। বইয়ের বিদ্যা বাস্তবে ফলাতে সে ভালোবাসে। স্কুলে শেখা নতুন শব্দগুলো সুযোগ পেলেই কাজে লাগায়। সোফাকে বলে আরামকেদারা, কাপকে পেয়ালা। আমরা ওকে উৎসাহ দিলেও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এই চর্চা বহাল রাখলে বাচ্চাটা বিপদে পড়বে। ব্যানার, বিলবোর্ডে বানান আর ব্যাকরণের অসামঞ্জস্যতা আর ইংরেজির মিশেল দেখে সে নির্ঘাত বিভ্রান্ত হবে। আড়ং এখন খাঁটি দুধের অঙ্গীকার নিয়ে 'রেডি' করছে বাংলাদেশকে। সচেতন মায়েরা সন্তানের 'প্রপার' বেড়ে ওঠার জন্য হরলিক্সকে 'রেগুলার' খাবারের তালিকাভুক্ত করেছেন। ম্যাগি এখন অনেক 'হেলদি', 'টেস্টি' আর 'ইয়াম্মি'। ভুলভাল ব্যাকরণ আর ইংরেজির খিচুড়ির পরিসর এখন চটুল বিজ্ঞাপনী লিফলেট থেকে নামিদামি ব্র্যান্ডের অনুষঙ্গ। এই পরিস্থিতিতে বাংলার অমিশ্রিত প্রয়োগ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ বৈকি।

একটু পেছনের কথা বলি। সালটা সম্ভবত ৯৮। স্কুলের বিজ্ঞান মেলার প্রজেক্টের কাজে সাহায্য করছিলেন এক বান্ধবীর বাবা। তিনি পেশায় জীববিজ্ঞানী। সেই সুবাদে তার সংরক্ষিত ল্যাবে ঘোরাফেরার সুযোগ পেতাম আমরা। তিনি বিজ্ঞানের ব্যাপারগুলো বুঝানোর পর শিখিয়ে দিলেন বিচারকদের সাথে কথা বলার সময় যেন কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি। ওতে নাকি আমাদের স্মার্টনেস প্রকাশ পাবে। সে যাত্রায় কোনো পুরস্কার পাইনি আমরা। যথেষ্ট স্মার্টনেস দেখালেও শেষ রক্ষা হতো বলে মনে হয় না। কারণ আমাদের কারিগরি প্রস্তুতিতে বেশ ঘাটতি ছিলো। এরপর ঘড়ির কাঁটা ঘুরেছে অজস্রবার, পৃথিবী বদলেছে অনেক। বদলায়নি আমাদের স্মার্টনেসের সংজ্ঞা। শুনেছি এক সময় গ্রামে বিয়েবাড়িতে বরপক্ষ ও কনেপক্ষের মধ্যে ইংরেজি বলার প্রতিযোগিতা হতো। সে এক ধরনের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ইংরেজি জানাটা মর্যাদার প্রতীক। গ্রামে এই চল আজও আছে কি না জানা নেই। তবে ইংরেজির মিশেল এখনো আমাদের জাতে তুলে দেয়।

আজ সকালে অফিস আসার পথে গাড়িতে এফএম চলছিলো। আরজের কথা শুনতে শুনতে স্মৃতিকাতর হই কিছুটা। বছর দুয়েক আগে পাশ করে বেরুনোর ঠিক পরপর আমার প্রথম চাকরির প্রয়াস ছিলো ওখানে। শুরুটা হয়েছিলো আরজে হান্ট দিয়ে। অনলাইনে ফর্মপূরণের পর দুটা ইন্টারভিউ আর একটা ভয়েজ টেস্টের পর ওয়ার্কশপে যোগ দিয়েছিলাম।

দ্বিতীয় ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করা হয় বাংলাদেশের কোন আরজে আমার প্রিয়।

বলেছিলাম, "কেউ না।"

"কেন?"

"সবার ভাষা খারাপ।"

"আপনার কি মনে হয় আপনি আরজে হলে রেভুল্যুশন আনতে পারবেন?"

"আমি বাংলা বললে ভালো বাংলা বলি। ইংলিশ বললে ভালো ইংলিশ বলি। আপনাদের এখানে কি এমন কোনো নিয়ম আছে যে ইংরেজি গুলিয়েপাকিয়ে বাংলা বলতে হবে?"

"না, তা নেই।"

"তাহলে পারব। আমি স্বাভাবিকভাবেই কথা বলব।"

বলাবাহুল্য অর্বাচীন আমি ওপাড়ায় গেছিলাম ন্যূনতম ধারণা ছাড়াই। বাসায় ফিরে তাদের ওয়েবসাইট ঘেঁটে জেনেছিলাম ইন্টারভিউ বোর্ডের তিনজনই নামি আরজে। এহেন চাঁছাছোলা জবাবের পরে আমার ডাক পড়বে আশা করিনি। এরপরেও যখন ডাক পড়ল, ইচ্ছের পারদ আকাশ ছুঁয়েছিলো স্বাভাবিকভাবেই।

ওয়ার্কশপে আমরা বাছাইকৃত দশজন ছিলাম। আমাদের বোঝানো হলো প্রচলিত বেতারের সাথে এফেমের সাংস্কৃতিক পার্থক্য, এফেমের উদ্দেশ্য-বিধেয়, করণীয়-অকরণীয় প্রভৃতি। কেতাবি আলাপশেষে কল্পিত কোনো শো'র জন্য স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে হতো। গানের বিরতিতে যাওয়ার আগে বলতে হতো "এখন নিবো ছোট্ট একটা break... till then শুনতে থাকুন অমুকের তমুক গান..."। হিন্দি গান বাজানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাদের উত্তর: "মানুষ হিন্দি গান শোনে, তাই আমরা বাজাই। আমরা না বাজালে অন্য কোনো স্টেশন বাজাবে। হিন্দি গান না বাজিয়ে তো আমরা হিন্দি গানের বাজার বন্ধ করতে পারব না।"

আমি বাংলায় বলার চেষ্টা করলে ফোকর গলে ইংরেজি শব্দ "suggest" করা হতো। তাদের ভাষায় এটাই চলতি ধারা, এটাই "তারুণ্য"। বেতারের মতো কেতাদুরস্ত ভঙ্গিতে বাংলা বললে চলবে না। শ্রোতারা আমাদের "friends", তাই কথা বলতে হবে তারুণ্যের ভাষায়। ওই স্টেশনে আমাদের দশজনের কেউই শেষ পর্যন্ত খুঁটি গাড়তে না পারলেও তৎকালীন আরজেরা এখনো স্বমহিমায় রয়েছেন। ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারুণ্যের ভাষা।

শৈশবে দেখতাম তরুণ প্রজন্মের প্রিয় মুখগুলো চমৎকার বাংলা বলতেন। এখন টিভি চ্যানেলগুলোয় ঘোরাফেরা করলে "করসো খাইসো" ভাষার পাশাপাশি শুনি "বুচ্ছো (বুঝেছ)", "বুস্তে পাচ্ছি না (বুঝতে পারছি না)"র মতো ঘোলাটে বাংলা উচ্চারণ। রোজকার কথ্য বাংলার ফাঁকে "so", "it's like", "you know", "I think" গুঁজে দেওয়াটা এখন সময়ের দাবি। হরলিক্সের বিজ্ঞাপনের নির্মাতাদল হয়ত ব্যাকরণে কাঁচা। তাই "হরলিক্স ছাড়া ও প্রপার (properly হবে) বেড়ে উঠছে তা তো আমি ভাবতেই পারি না" বাক্যটা প্রচারিত হয়। কিন্তু সুশিক্ষিত তরুণ মুখেও যখন শুনি "আমাকে কিছু new dress বানাতে হবে", "day-তে যাবো না, night-এ যাবো", তখন মনে হয় এটাই হয়ত এখনকার কেতা। খানিকটা মিশেল না থাকলে ঠিক জমে না আমাদের। পুরো বাক্যটা ইংরেজিতে বলতে না পারলে সমস্যা নেই, দু-একটা ইংরেজি শব্দ জুড়ে দিলেই চলবে। হয়ত অদূর ভবিষ্যতে বিলবোর্ড জোড়া হিন্দি কথামালাও দেখতে পাবো। আশা করি বড় হতে হতে মাহরাফও বাস্তবতা বুঝে তার চর্চিত বাঙালিয়ানায় খাদ মিশিয়ে স্মার্ট হয়ে উঠবে।


সীমান্তে বিএসএফের নৃশংসতার প্রতিবাদে আগামী ১ মার্চ একদিনের জন্য ভারত বর্জন করছেন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের জনপদ। আমাদের হিন্দি/বাংরেজিভাষীরা একটু আত্মবিশ্বাস জুটিয়ে সেদিন মন খুলে বাংলা বলার চেষ্টা করবেন কি?
ছবি: 
13/11/2009 - 10:46pm

মন্তব্য

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

নিটোল এর ছবি

চলুক

_________________
[খোমাখাতা]

অমিত এর ছবি

খুব সুন্দর করে লিখেছেন চলুক
এখনকার পোলাপাইনদের সাথে কথা বলতে গেলেই নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করে। আর রেডিও শুনলে মনে হয় মঙ্গল গ্রহের ভাষা শুনছি।

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

ইংরেজি ভাষাকে আমরা এত সম্মান দিয়ে রাখি আর বাংলা ভাষার দিকে আমাদের মলিন দৃস্টি! শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী করার জন্য আমরা বাচ্চাকে নিয়ে ছুটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। আসলে ভালো স্কুল বলতে আমারা কী বুঝি, তা নিজেরাই জানি না। যেখানে ইংরেজি বেশি পড়ায় সেটাই কি ভালো স্কুল? ইংরেজি তো একটা ভাষাই। একটা ভাষা শিখতে কয়দিন লাগে? সেজন্য বাচ্চাকে ইংরেজি মাধ্যমেই পড়াতে হবে কেন?

শিবলী এর ছবি

শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী করার জন্য আমরা বাচ্চাকে নিয়ে ছুটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে।

এছাড়াও আমার আশেপাশের কিছু লোকজনকে দেখেছি তাদের বাচ্চাদেরকে ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে দিতে কারণ,

  • এতে বাচ্চাদেরকে শিখানোর পদ্ধতিটা ভালো,
  • বাচ্চাদেরকে স্কুলের পরে আবার গৃহশিক্ষকের কাছে ছুটতে হয় না
  • স্কুলের শিক্ষকরা তুলনামুলকভাবে যত্নবান।।

নাশতারান এর ছবি

ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখার মান ভালো এমনটা আমিও শুনেছি। শুনেছি মুখস্থবিদ্যার চেয়ে ওখানে সৃজনশীলতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর শিক্ষকেরা ভালো বেতন পান বলে প্রাইভেট পড়ানোর ঝোঁক থাকে না। তবে স্কুলের পর ইংরেজি মাধ্যমের ছোট ছোট বাচ্চারা প্রাইভেট পড়তে ছুটছে এমনটাও দেখতে পাই। আমার এক ছাত্র ছিলো যে ধানমন্ডির নামি এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ক্লাস ফাইভে পড়ত। ওদের র‍্যাপিড রিডার ছিলো অলিভার টুইস্ট। ওকে পড়ানোর জন্য দুই রাতে বইটা পড়েছিলাম আবার। যেদিন ওকে পড়াতে বসলাম, ও বললো ওদের নাকি পুরা বই পড়তে হয় না। টিচার নাকি প্রশ্নের লিস্ট দেবে। সেটা দেখে আমি যেন ওকে উত্তর তৈরি করে দিই।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

চিলতে রোদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সচল পাঠকদের এ এমন একটি সচেতনতামূলক লেখা উপহার দেয়ার জন্যে। গুরু গুরু
তবে সবাই যে নিজেকে আধুনিক প্রমান করার জন্য সচেতনভাবে করা থাকে তা কিন্তু নয়। অনেক সময় আমরা পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে অসচেতনভাবে বাংলার মাঝে অপ্রয়োজনীয় ইংরেজী মিশিয়ে কথা বলি। এক্ষেত্রে আমাদের টিভি,রেডিও এবং বিজ্ঞাপন বড় ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে আমাদের বিজ্ঞাপনের আদৌ কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে কিনা জানা নেই।

এছাড়াও মোবাইলে যখন রোমান অক্ষর ব্যবহার করে নানা ধরনের ক্ষুদেবার্তা আসতে থাকে সেটিও আমাদের ভাষার জন্য অবমাননাকর। যেমন, "Ar matro 5tk bebohar korley apni pabe..."। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ইংরেজী ব্যবহার করতে দোষ কোথায়? কোনদিন না জানি আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো অ,আ,ক,খ বাদ দিয়ে A,B,C,D দিয়ে বাংলা লেখা শুরু করে... রেগে টং

নাশতারান এর ছবি

সম্ভাবনা আছে। আমি ইংরেজি মাধ্যমের একজনকে দেখেছি ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লিখতে। এসএমএসে না, কাগজে-কলমে। ভারতীয় মিডিয়ায় তো ইংরেজি বর্ণে হিন্দি লেখা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। এবং এতে ওদের লাভও হয়েছে। ইংরেজি লেখা পড়ে পড়েই অভারতীয়রা হিন্দি শিখেছে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

একটা আশ্চর্য জিনিস আজো বুঝলাম না। বিদেশে এক জেনারেশান থাকলে বাঙালীরা বাংলা ভুলে যায়। কিন্তু আমি চীন জাপান কোরিয়া ভিয়েতনাম ইন্দোনেশিয়ান দেখেছি ওরা দুই জেনারেশান পার করেও দিব্যি মাতৃভাষায় লিখন পঠন করে যাচ্ছে। বাংলা কি এমন ভাষা যা মনে রাখলে ভালো ইংরেজী বলতে পারে না। নাকি ইংরেজী এত বেশী মেমোরি খায় যে তার জন্য বাংলার ঠাঁই হয় না মগজে? এখানে প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশী আছেন, বিশেষ করে আমেরিকা প্রবাসী। তারা কেউ বিষয়টা খেয়াল করেছেন? আমি প্রচুর আমেরিকাবাসী বাংলাদেশীর মধ্যে এই সমস্যাটা প্রকট দেখেছি। মুশকিল হলো এটাকে আমিই সমস্যা হিসেবে দেখলেও ওরা কেউ দেখছে না। বাচ্চা ওদেশে বড় হয়েছে সেজন্য বাংলায় কথা বলা শেখেনি। তাইলে ঘরে যতক্ষণ বাচ্চাটা থাকে ততক্ষণ ইংরেজীতেই বাত করে? চমৎকার!

বাংলার সাথে ইংরেজি মিশেলে যে ডিজুশ জেনারেশান তৈরী হচ্ছে তাদের বিবর্তন নিয়ে ভয় আছে। কয়েকযুগ পর বাংলার সাথে আরেকটা ডিজুশ মাতৃভাষা যোগ করার দাবী আসতে পারে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মরুদ্যান এর ছবি

খেয়াল করেছি। হাতে গোনা কিছু অভিভাবক আছে যারা বাংলা শিখানোর ব‌্যাপারে সচেতন, বাকীরা নিজেরাও ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করেছে ঘরে রেগে টং

নাশতারান এর ছবি

কিছু অভিভাবক আছেন যারা "আমার বাচ্চা বাংলা পারেই না" বলতে গর্ববোধ করেন।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

হুঁ। চিনেরা আমেরিকায় যে শহরেই থাকুক নিয়মিত চায়নাটাউনে জমায়েত হয়, নিজেরাও এক ডিপার্টমেন্টে থাকলে লাঞ্চ করার সময় একসাথে অনেকে জড়ো হয়, ওদের গ্রুপ বন্ডিং খুব বেশি। সেটা হয়ত ইংরিজি ভাষায় দুর্বলতা নিয়ে অস্বস্তিতে থাকে বলে। এইটা কিন্তু ভারতীয়-বাংলাদেশীদের মধ্যেও দেখা যায়। কিন্তু ওরা পরের প্রজন্মেও যেভাবে তাদের ভাষাটাকে বেশ ভালোভাবে বজায় রাখে, আমরা সেটা পারিনা।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

চলুক চলুক

আশফাক আহমেদ এর ছবি

দারুণ লেখা।
চলুক
ওয়ার্কশপের অভিজ্ঞতা নিয়ে আরো কিছু লিখুন না

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

জহিরুল ইসলাম নাদিম এর ছবি

খুব দরকারী একটা লেখা। ধন্যবাদ আপনাকে।

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

পুরোপুরি বাংলা বলাটা এখন মনেহয় ক্ষ্যাত হয়ে গেছে। ইংরেজীর তুবড়ি না ছোটালে 'স্মার্ট' হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না।

... শেয়ারিত ...

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমার মনে হয় এফএম রেডিও বর্জনের আন্দোলন শুরু করার সময় চলে এসেছে। কথা হচ্ছে পাবলিক কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে থাকা নিম্ন মধ্যবিত্তের ভাষার ইতিমধ্যে কতটা "এফেমিকরণ" ঘটেছে। এই মুহুর্তে পাবলিক কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন এমন কারো বক্তব্য পেলে ভালো লাগতো।

নাঈম এর ছবি

ঢাবির হলগুলোতে বাংলিশ চর্চা নেই বললেই চলে। ক্যাম্পাসে দেখা যায় না তা নয় তবে তারা সংখ্যায় নগন্য। তবে কলেজ ও স্কুল পড়ুয়াদের উপর এর বেশ খানিকটা প্রভাব পড়েছে বলে আমার ধারণা।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

শুনে খুব ভালো লাগলো

শোয়েব মাহমুদ সোহাগ এর ছবি

আশফাক আহমেদ এর ছবি

পাবলিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই সে নিম্ন-মধ্যবিত্ত---এই ধারণা আপনি কোথা থেকে পেলেন?

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

Amit এর ছবি

স্বপ্নে পেয়েছেন মনে হয়

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমাদের সময় ১৯৯৭-২০০১ এর অভিজ্ঞতা থেকে। এর পরে যদি শ্রেণীগত পরিবর্তন ঘটে থাকে তাহলে জানিনা। তবে প্রশ্ন করতে পারি যাদের বেসরকারী বিশ্ববিদ‌্যালয়ে পড়ার টাকা নাই তারা কই যায়?

নাশতারান এর ছবি

পাবলিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই সে নিম্ন-মধ্যবিত্ত এমনটা বলেননি সম্ভবত। আমাদের দেশের শিক্ষিত জনসংখ্যার বড় একটা অংশ নিম্ন-মধ্যবিত্ত। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তারা সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়েন। এদের সংস্কৃতি দেখে দেশের তরুণ সমাজের সাধারণ চরিত্র সম্পর্কে ধারণা করা যায়। তরুণসমাজের প্রতিবাদী কণ্ঠগুলো এই মেধাবী মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তদের মধ্যেই খুঁজে পাই আমরা। এদের দৈনন্দিন ভাষায় যদি ক্ষয় শুরু হয়, তবে ব্যাপারটা আসলেই দুশ্চিন্তার হবে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

shafi.m এর ছবি

চলুক ঠিক, আমিও তাই মনে করি।

শাফি।

shafi.m এর ছবি

পাবলিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই সে নিম্ন-মধ্যবিত্ত---এই ধারণা আপনি কোথা থেকে পেলেন?

না, পড়ে আমারো কিন্তু মনে হয়নি সুমন ভাই সেটা বলেছেন। মনে হল উনি বলতে চাইলেন যে, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে যে ছাত্ররা তুলনা মুলক কম আয়ের পরিবার (যেমন-নিম্ন বিত্ত) থেকে পড়া লেখা করতে যান/এসেছেন তাদের ইতিমধ্যে কতটুকু "এফেমিকরণ" ঘটেছে? আমার ভুল হতে পারে, তবে আমি সেভাবেই পড়েছি।

শাফি।

নাঈম এর ছবি

লেখায় চলুক

পৃথ্বী এর ছবি

পোষ্টের সাথে প্রাসঙ্গিক কিনা জানি না, তবে অনেক দিন ধরেই আমি চিন্তা করছি বাঙ্গালী বাংলায় নাম রাখে না কেন। এক-দুই প্রজন্মের আগের মানসিকতা বুঝতে পারি, কিন্তু বর্তমানে যারা বাবা-মা হচ্ছেন, তারা কি বাংলায় নিজের সন্তানের নাম রাখতে ভয় পান? নাকি লজ্জা পান? এখানে সওয়াব কামানোর কোন বিষয় আছে কিনা জানি না কারণ অনেক ধর্ম-কর্ম না করা বাবা-মাকেও আরবি-ফারসি ভাষায় অদ্ভুত-কিম্ভুত সব নাম রাখতে দেখি। এমন কোন দম্পতিকে অবশ্য এরকম নামকরণের হেতু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পাইনি। আমার নিজের তিন শব্দযুক্ত নামে সংস্কৃত-আরবি-ফারসি সবই আছে, যেকারণে আমার নিজের কাছেই আমার নাম ভাল লাগে না। বাংলা ভাষার শব্দভান্ডার কি এতই ক্ষুদ্র যে একটা বাচ্চার নাম রাখার জন্য শব্দ খুজে পাওয়া যায় না?

কথ্যভাষার ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নাই। আমি শুধু জানতে চাই একটা বাঙ্গালী শিশুর নাম সম্পূর্ণ বাংলায় রাখা সম্ভব কিনা, আমি জানতে চাই কেন ধর্মের ব্যাপারে উদাসীন বাবা-মারাও নাম রাখার সময় আরবি-ফারসির বাইরে চিন্তাই করতে পারেন না।

নাশতারান এর ছবি

আমার নিজের নামই ভিনদেশি এবং অনেক কঠিন। বাবা-মা একটু আলাদা নাম রাখতে গিয়ে অনেক কঠিন নাম রেখে ফেলেন। আজকাল এটা মহামারী আকারে দেখতে পাই। বাংলা হিন্দুয়ানি ভাষা- এমন ধারণা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের সমাজে প্রচলিত। আরবি-ফারসি নামকরণের পেছনে ধর্মীয় স্বজাত্যবোধ তাই কাজ করে অনেক ক্ষেত্রেই। এক সহপাঠী একবার বলছিলো নাম নাকি মানুষের চরিত্রে প্রভাব ফেলে। ধর্মীয় নাম রাখলে বাচ্চা ধর্মবোধসম্পন্ন হবে। তাই নাকি ইসলামী নাম রাখা হয়। আমার নামের পেছনে অবশ্য কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্য নেই। আলাদা সুন্দর নাম রাখতে গিয়ে ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছে আমার বাবা-মা। শ্রাবণ মাসে জন্ম বলে শ্রাবণী রাখতে গেছিলো একবার। কিন্তু নামটা কমন বলে বাদ পড়েছে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সাবেকা এর ছবি

এই নাম রাখা নিয়ে একবার আমার বেশ মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিল । বিলেতে জন্ম হওয়া এবং বেড়ে উঠা একছেলে তাঁর বাবাকে একদিন রাগত স্বরে জিজ্ঞেস করেছিল, তার কেন হিন্দু নাম রাখা হয়েছে, কারণ এ নিয়ে সে প্রায়ই লজ্জায় পরে তার ভিনদেশী মুসলমান বন্ধুদের কাছে । ওরা নাকি হাসাহাসি করে তার নাম নিয়ে, মানে হিন্দু নামের সাথে মুসলমানের পদবী দেখে । বাবা বেচারা আসলে শখ করে বাংলা নাম রেখেছিলেন, কিন্তু ছেলে বলে বাংলা নাম নাকি হিন্দুদের নাম !

নাশতারান এর ছবি

বাচ্চাকে বুঝিয়ে বললেই সে আর লজ্জা পাবে না।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সাবেকা এর ছবি

বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলা তো হয়েছে অবশ্যই তবু সে কিছুতেই মানবে না, কারণ সে আর ঠিক সে অর্থে বাচ্চাও নেই, বুড়োধাড়ি হয়ে গেছে হাসি পচিশ অথবা ছাব্বিশ বয়স । আসলে তার মগজ ধোলাই হয়ে গেছে, সে আরেক কাহিনী ।

স্বপ্নাদিষ্ট এর ছবি

লেখায় চলুক

-স্বপ্নাদিষ্ট
=======================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।

সাজ্জাদ সাজিদ এর ছবি

আমি ভিন্ন একটি দিকে খানিক আলোকপাত করি। সম্প্রতি ফেইসবুকে বাংলাভাষার বিকৃত উপস্থাপন আমাকে ভাবিত করে। 'সিড়াম কয়েচিস মামা', 'এইডা কিসু অইলো' বাংলাভাষার এইরকম যথেচ্ছ ব্যবহার চলছে। আমার ৫০০/৬০০ ফেইসবুক বন্ধু এটা লক্ষ করছে, এদের মধ্যে কেউ কেউ সস্তা জনপ্রিয়তার মোহে নতুন করে একটু একটু করে এই ভাষা ব্যবহার শুরু করছে। এই ঢং-এ প্রভাবিত হয়ে ফেইসবুকে এই ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
এসব জন্মপরিচয়হীন ভাষারূপ ভাষার মাধুর্য কেড়ে নেয়, ভাষার অহংকার কেড়ে নেয়। ফেইসবুকের মত খোলা মাধ্যমে আমি প্রমিত ভাষা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। এটা ৩/৪জনের আলাপ না, আমার একটা স্ট্যাটাস আমার শত শত বন্ধু লক্ষ করছে, এখানে আমি যা খুশি তা ভাষা ব্যবহার করে ভাষাকে ভুল রাস্তায় নামিয়ে দিতে পারি না।

শিবলী এর ছবি

চলুক

জাগরুক এর ছবি

সিরাম কয়েচিস মামা।হচ্চে নাকি এগুলো আঞ্চলিক ভাষা(মুলত পাবনা,নাটোর আংশিক,কুস্টিয়া আংশিক)।সবাই আপনার মত করে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবে এটা আপনি আশা করেন কিভাবে ,নাকি এটা আঞ্চলিক বিদ্বেষ?মানুষতো অনেক আগে থেকেই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে আসছে কই আগেতো এমন শুনিনি যে

এসব জন্মপরিচয়হীন ভাষারূপ ভাষার মাধুর্য কেড়ে নেয়, ভাষার অহংকার কেড়ে নেয়

আগে নিজের মনের মাধুর্য বাড়ান তারপরে অন্যদের মাধুর্য মাপার মাপ কাঠি নিয়া আসেন।

সাজ্জাদ সাজিদ এর ছবি

ধন্যবাদ জাগরুক, আমার মন্তব্য পড়ে প্রতিমন্তব্যের জন্য। আঞ্চলিকতা প্রতি আমার বিদ্বেষ নাই বরং অহংকার আছে। 'সিড়াম' যদি পাবনা, নাটোরের ভাষা হয় তাতে আপত্তি নাই। কিন্তু সেখানে কি অর্থে-কি ঢঙে-কি কারণে এই শব্দ ব্যবহার হয় এবং ফেইসবুকে যারা ব্যবহার করেন তারা কি অর্থে ব্যবহার করেন? তারা কি পাবনা নাটোরের লোক বলে ব্যবহার করেন?
আপনার আঞ্চলিকতাবোধে আঘাত করা আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নয়, যদি তাই হয়ে থাকে আমি দুঃখিত।
আর আপনার কথা শিরোধার্য--

আগে নিজের মনের মাধুর্য বাড়ান তারপরে অন্যদের মাধুর্য মাপার মাপ কাঠি নিয়া আসেন।

জাগরুক এর ছবি

ধন্যবাদ সাজ্জাদ ব্যাপারটা বোঝার জন্য।ভাষার অপব্যাবহার(হিন্দি,বাংলা,ইংলিশ মেশানো ককটেল বানানো ভাষা) কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।তা যেই হোক না কেন কিন্তু আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলাটা সবার কাছেই গ্রহনযোগ্য(বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষেরই আঞ্চলিক ভাষা আছে)।আমি মনে করি ফেসবুকে যে ভাষা ব্যাবহারের কথা বলেছেন তা হয়তো হয়েছে বন্ধুবান্ধবের মধ্যো মজা করার জন্য।

নাশতারান এর ছবি

ভাষার মাধুর্য বা অহংকার রক্ষার জন্য নয়, যোগাযোগের সুবধার্থে প্রমিত ভাষার প্রয়োজন বোধ করি আমি। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষা কষ্ট করে বুঝতে হয় আমার। চট্টগ্রামের ভাষা তো বুঝিই না। একেকজন একেক ভাষায় কথা বললে যোগাযোগ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

কলকাতায় থাকলে পথেঘাটে রেডিও শোনা হয়, তখন দেখি কলকাতার আরজে-দের ভাষাও একই রকম, বাংলা-ইংরিজি-হিন্দি মেশানো। আমার মনে হয় ওদের এরকম করার একটা কারণ আছে। কলকাতায় অবাঙালী প্রচুর। তারা অল্পস্বল্প বাংলা জানে, বাংলা পপ-কালচার মানে দেব-জিৎ এদের সিনেমার হিট গানগুলোও একটু-আধটু শুনতে ভালোইবাসে, কিন্তু রেডিওতে পুরো বাংলায় বললে তারা ধরতে পারবে না। আবার ইংরিজি মিডিয়াম থেকে পাশ করা অনেক ছাত্রও আছে যাদের বাংলার অবস্থাও তথৈবচ। এই সব মিলিয়ে পুরো শ্রোতাগোষ্ঠীকে পরিবেশন করতে গেলে ইংরিজি-হিন্দি মেশানোই দরকার, নইলে বিশুদ্ধ ইংরিজি বা বিশুদ্ধ হিন্দি বলা চ্যানেল খুলে শ্রোতাদের ভাগ করে ফেলতে হবে, সেটা অবশ্যই চ্যানেলগুলো চাইবে না। আবার অন্যদিকে, কলকাতার গড় বাঙালিও এখন কথ্যভাষায় অনেকটাই ইংরিজি-হিন্দি মেশায়, ফলে রেডিওর ভাষাটা তার কাছে খুবই স্বাভাবিক।

নাশতারান এর ছবি

আমাদের আরজেদের ভাষার প্রণোদনা ভারত থেকে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। বাংলাদেশে এফেমের শুরুর দিকের আরজেদের ভারতীয় সেলিব্রিটি আরজেরাই গড়ে দিয়েছিলেন বলে জানি। আমাদের আরজেরা সেই রঙে রাঙিয়ে নিয়েছেন নিজেদের।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সাত্যকি. এর ছবি

আপনি যদি কাউকে হিন্দি/ ইংরেজির অনর্থক ব্যবহার থেকে নিবৃত্ত করতে চান, তাহলে প্রথমেই সোজা যে প্রশ্নটা শুনবেন, তা হলোঃ করলে প্রব্লেম কি?

আপনি কিন্তু তাকে "বাংলা ভাষার সম্ভ্রম, ভাষার জন্য ত্যাগ" ইত্যাদি এবস্ট্রাক্ট আর্গুমেন্ট দিয়ে টলাতে পারবেন না, ওদের জন্য দরকার একটা বস্তুবাদী যুক্তি। অনেকটা পেন্সিল পেপার দিয়ে অংক কষে দেয়ার মত, এক্স স্কয়ার মাইনাস লগ অব ওয়াই ইকুয়াল টু "সে নো টু খিচুড়ি ভাষা"।

রেডিও আরজে অথবা ফারুকীগং সচলে এসে পালটা প্রশ্ন করবে, এমনটা আশা করা বোকামি। তাই প্রশ্নটা আমিই করছি--
অবিমিশ্র বাংলার বিপরীতে খিচুড়ি বাংলা, ভুল বাংলা, কিংবা নাই-বাংলা -- কি পার্থক্য তৈরি করে? আঞ্চলিক ভাষার মত এটা কেন বাংলাভাষার আরেকটা সর্বজনগৃহীত বিকৃত রূপ হবে না? আমি কেন ধরে নিচ্ছি, দেশের তরুণদের বৃহদাংশকে রবীন্দ্রনাথের ভাষার উত্তরসূরি হতেই হবে?

ফারুকীতরিকার কাজ কিন্তু নতুন ভাষার সৃজন নয়, যে ভাষা ইতোমধ্যেই শহুরে মধ্যবিত্ত লোকের মুখের ভাষা- তাকেই মিডিয়াকরণ করা। আরজে ফারুকীরা না এলেও এই লোকেরা এই ভাষাতেই গালাগালি গলাবাজি করতে থাকতো, বুদ্ধদেব বসুর কবিতার ভাষায় কথা বলতো না।

এদের এই স্বতঃস্ফূর্ত 'মাইরালাইসে' ভাষার মুখে আমরা বাঁধ 'কিভাবে দেবো', তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, 'কেন দেবো' - এই প্রশ্নের লক্ষ্যভেদী ও লৌকিক উত্তর খোঁজা।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

চলুক
দারুণ বলেছিস জয়। ভাবনার বিষয়

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

সাত্যকি, আপনার কথাটা অবশ্যই ভাববার মত । ভাষা তো অনেক ভাবেই পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়, গ্রহণ-বর্জনের মধ্যে দিয়েই সে সচল থাকে । ইংরেজী ভাষাও বিভিন্ন ভাষা থেকে গ্রহণ করেছে । এটা স্বাভাবিক । কিন্তু এটা তো স্বীকার করবেন যে, শহুরে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণী কিন্তু সন্তানেরা বাংলার চেয়ে ইংরেজী ভাল বলতে পারলে বেশি গর্বিত হন । অবশ্যই ইংরেজী ভাল জানাটা জরুরী । কিন্তু একজন বাঙালী হয়ে বাংলা ভাষা, সাহিত্য, গান ভাল না বাসলে (অবশ্যই নিজের ভাষাকে ভালোবাসাটা বাধ্যতামূলক নয়) সেটা কি হতাশাজনক নয় ? মানে আমি বলতে চাইছি, নিজেদের শিকড়টাকে ভালোবেসে অন্য ভাষায় পারদর্শী হবার কথা । রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসু না হয় হারিয়েই যাবেন, তাঁদের টিকে থাকতেই হবে সেই দিব্যি কে দিয়েছে ? কিন্তু বাংলা ভাষাটাকে টিকে থাকতে হলে তো নতুন প্রজন্মকেও তাদের ভাষায় তাদের মত করে কিছু করতে হবে যাতে সেই শূণ্যস্থান পূরণ করে নতুন কেউ উঠে আসে । আর বাংলা ভাষায় নতুন গান, সাহিত্য, সিনেমা বা নাটক কিছু করতে গেলে ভাষাটাকে তো ভালোবাসতে হবে । সেটা যেরকম বাংলা ভাষাই হোক না কেন । নিজেদের ভাষা কে নিয়ে যদি কেউ হীনমন্যতায় ভোগে বা অন্য ভাষার তুলনায় কম যোগ্য মনে করে তবে ধীরে ধীরে আমাদের ভাষা তার নিজস্বতা হারাতে হারাতে পুরোপুরি হারিয়ে যাবে ।

আপনার বক্তব্যকে সমর্থন করেও এই ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি জানবার অপেক্ষায় রইলাম ।
ভালো থাকবেন সাত্যকিদা ।

মরুদ্যান এর ছবি

ফারুকীগংয়ের করসি খাইসি গেসি এতে সমস্যা নাই, কারণ বেশিরভাগ মানুষের কথ্য ভাষাই এরকম। সময়ের সাথে সাথে অনেক বিদেশি শব্দ বাংলা ভাষায় ঢুকে যাবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপত্তি সেখানেই যখন মাতৃভাষাকে ব্যবহার না করা কারো যোগ্যতা বা স্ট্যাটাসের পরিচায়ক হয়ে উঠে (যেমন স্ট্যাটাস কথাটাও কিন্তু বাংলা না, কিন্তু বোধগম্যতার জন্য আজকাল এর বহুল ব্যবহার)।
বাংলা ভাষার সর্বজনগৃহীত বিকৃত রূপ বলতে কি আপনি ডায়ালেক্ট বুঝাতে চেয়েছেন? (ডায়ালেক্টের বাংলা মনে পড়ছেনা) যদি তাই হয় তাহলে ডায়ালেক্টকে কেন বিকৃত রূপ বললেন সেটা ব্যাখ্যা করবেন একটু?

রেশাদ শাহবাজ এর ছবি

ফারুকীগংয়ের করসি খাইসি গেসি এতে সমস্যা নাই, কারণ বেশিরভাগ মানুষের কথ্য ভাষাই এরকম।

কী রকম?

নাশতারান এর ছবি

আমার আরেকটা প্রশ্ন হলো, ভাষার এই আকস্মিক বিবর্তন কেন? অতীতে হিন্দি থেকে অনেক শব্দই বাংলায় প্রবেশ করে একীভূত হয়েছে। কিন্তু হিন্দির এই মহামারি নতুন। এর পেছনের মনস্তত্ত্ব কী?

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

একদম সঠিক প্রশ্ন । চলুক

সাত্যকি. এর ছবি

হিন্দির মহামারি মানে কি? হিন্দি গান শোনার হিড়িক? হিন্দি কার্টুনের জনপ্রিয়তা? ফেইসবুকে হিন্দিতে স্ট্যাটাস?

হিন্দি গান শোনার এবং এতদসংগে নৃত্যভঙ্গির যুযুৎসু প্রচেষ্টা তো আজকের না। হাজার বছরের পুরনো রাত বাড়ছে কেবল। অচিরেই আরো বাড়বে।

কার্টুনের জনপ্রিয়তার সাথে ভাষার সম্পর্ক দূরবর্তী। দৃশ্যায়নটাই মুখ্য। বাচ্চারা কিন্তু মীনা কার্টুনও দেখে, ডোরেমনও দেখে। ব্যাপার হচ্ছে, অনুকরণপ্রিয় বাচ্চারা মিনা কার্টুন নকল করলে আপনি আহ্লাদিত হয়ে ব্লগ লিখতে বসবেন না, কিন্তু ডোরেমনের একটা ডায়ালগ নকল করলে ছ্যাঁত করে উঠবেন, ধর্শালারে।

আপনি কি তাদের আচরণ থেকে লিনিয়ার এক্সট্রাপোলেশন করে বের করে ফেলেছেন যে, এই বাচ্চারাই বয়ঃপ্রাপ্ত হলে বাংলা হঠিয়ে ভার্চুয়াল হিন্দিসাম্রাজ্য কায়েম করবে? নিশ্চিন্তে থাকুন ম্যাডাম। গাবদাকালে বাহারি পিস্তলে আমার খেলনার বাক্স বোঝাই থাকায়, আপনার হিসাবানুসারে তো, এতদিনে আমার বিরুদ্ধে 'মোস্ট ওয়ান্টেড' হুকুমনামা জারি হয়ে যাওয়ার কথা।

ফেসবুক দুনিয়ায় হঠাৎ হিন্দির বচন-ভাষণের প্রাদুর্ভাবের কারণ মনস্তত্ব নয়, অবারিত টেকনোলজিতত্ত্ব। ফ্রি একাউন্ট আর একটা কি-বোর্ড থাকলে এখন জ্বিনের অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হাজির করা যায়, হিন্দিতে স্ট্যাটাস দেয়াতো তার কাছে শিশু।

দুই মিনিটের হিন্দীভাষীরা আগামী দিনের বাংলা ভাষার পথিকৃৎ হতে যাচ্ছে না। সুনিশ্চয়।

নাশতারান এর ছবি

অনুকরণপ্রিয় বাচ্চারা মিনা কার্টুন নকল করলে আপনি আহ্লাদিত হয়ে ব্লগ লিখতে বসবেন না

আপত্তিকর

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

খুব গুরূত্বপূর্ণ একটা লেখা ।
এই সমস্যাটা শুধু বাংলাদেশের নয় আমাদের পশ্চিমবঙ্গেরও ।
সবাই ছুটছে জগাখিঁচুড়ি ভাষার দিকে ।
নিজের ভাষা এবং সংষ্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে নাকি "smart" হতে হবে !!
শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারা মানুষ আজ বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী ।

এই বিষয়ে আরও লিখুন ।
ভালো থাকবেন ।

নাশতারান এর ছবি

পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারটা একটু আলাদা। বাংলা ওখানে প্রাদেশিক ভাষা। হিন্দি রাষ্ট্রভাষা হওয়ায় তাকে উপেক্ষা করার অবকাশ নেই। আমাদের তো তা না।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আপনি ঠিকই বলেছেন । অবশ্যই আপনাদের ব্যাপারটা অনেকটাই আলাদা । কারণ আপনাদের দেশটার জন্মই এই ভাষাটাকে ভালোবেসে ।

তবে কিনা জানেন, আমাদের এখানেও দক্ষিণের রাজ্যগুলো নিজেদের ভাষা বিষয়ে অনেক সচেতন । অনেক বড় বড় জায়গায় শুধু তামিল-তেলেগু তে নাম লিখে রাখে । সাথে হিন্দী তো দূরের কথা ইংরেজীও লেখে না । আর কলকাতায় তো বাংলা প্রায় বিলুপ্ত ।

তাই কোথায় যেন নিজের ভাষাকে অবজ্ঞা করার একটা একইরকম মানসিকতা দেখতে পেলাম ।

নাশতারান এর ছবি

হুম। আমি দক্ষিণ ভারতে গিয়ে দেখেছি ব্যাপারটা। ওরা নিজেদের ভাষাতেই কথা বলতে ভালোবাসে। হিন্দি তো চলেই না। ঠেকায় না পড়লে ইংরেজিও বলে না।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সত্যপীর এর ছবি

অতি সত্য কথা। রেডিয়োতে লাস্যময়ী তরুণিকন্ঠে "হ্যাল্লোওওও লিসেনার্স, ক্যামন আছেন আপনারা..." শুনলে মনে হয় চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেই।

..................................................................
#Banshibir.

নাশতারান এর ছবি

সে কী! আরজের লাস্যময়ী কণ্ঠ আপনার ভালো লাগে না? ওয়ার্কশপে তো আমাদের বেশি বেশি করে লাস্য ঢালতে বলত কণ্ঠে। রেডিওতে যেহেতু দেখানোর সুযোগ নেই, তাই শুনিয়েই মন জয় করতে হয়।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সত্যপীর এর ছবি

নাহ ভালো লাগে না, মনে হয় পোংটামীতে দশে দশ পাওয়া মেয়েগুলিকে বেছে বেছে রিক্রুট করা হয়েছে। ছেলে আরজেগুলিও আরেক জিনিষ, "সো ফ্রেন্ডস, আজ সারারাত চলবে আড্ডা আর সংস আর অনেক অনেক আড্ডা..."। কইত্তে যে পায় এগুলিরে।

..................................................................
#Banshibir.

ধূসর জলছবি এর ছবি

শুধুমাত্র ভাষার কারনেই রেডিও শুনি না কখনো। বিরক্ত লাগে। পাবলিক ভার্সিটি গুলোতে এভাবে কথা বলার চর্চা কম। কিন্তু ইদানিং কিছু কিছু হচ্ছে । সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা ।

মন মাঝি এর ছবি

চলুক

পোস্টের তলায় পোস্টারটা কার করা? চমৎকার পোস্টার!!
শুধু একটা জিনিষ চোখে লাগল - এর মধ্যে 'bothered' শব্দটা ঠিক যুৎসই মনে হল না। এই ক্ষেত্রে বেশি হাল্কা মনে হল। আমার জানা-বুঝার ভুল কিনা জানি না, তবে Bothered বলতে মনে হয় 'ঈষৎ বিরক্তিভাব' বুঝায় - অনেকটা যেন মুখের কাছে বারবার মাছি ভনভন করলে এবং তাড়ানো সত্ত্বেও বারবার মুখে বসলে যেমন লাগে। সহস্রাধিক স্বদেশবাসীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও রোমহর্ষক নিগ্রহের পরেও কি আমাদের এমন মাছি-তাড়ানো 'ঈষৎ বিরক্তি'-বোধই হয় শুধু নাকি তার চেয়েও বেশি কিছু হয়?

আমার মনে হয় এক্ষেত্রে নিদেনপক্ষে 'outraged' শব্দটা আরো লাগসই হবে।

কিছু ভুল বলে থাকলে মাইন্ড খাইয়েন না যেন আবার - সমালোচনার জন্য বলি নাই।

****************************************

নাশতারান এর ছবি

মাইন্ড খাই নাই। মাথায় যা এসেছিলো লিখে ফেসবুকে কভার ফটো বানিয়ছিলাম। ওই লেখা দিয়েই পরে মুস্তাফিজ ভাই আরো সুন্দর করে এটা বানিয়েছেন।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

মর্ম এর ছবি

পর পর দুটো চমত্‍কার লেখা পেলাম তোমার কী বোর্ড থেকে। বুনোহাঁস ফিরে আসছে ফের, এটা বেশ খুশির ব্যাপার।

ইদানিং খেয়াল করেছ কি না জানি না, ভারতীয় টাইটান ঘড়ির একটা বিজ্ঞাপন দেখি কাগজে, ভয়াবহ বললেও কম বলা হয়! রোমান হরফে বাংলা লিখে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, সত্যি সত্যি মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে!

বিজ্ঞাপনী সংস্থার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে বলেই জানি, মূল কোম্পানীর দায় ও কম নয়।

যতবার ঐ বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়েছে ততবার এর পেছনের বুদ্ধিদাতা মানুষগুলোর কাছ থেকে জানতে ইচ্ছে করেছে এর পেছনের চিন্তাটুকু ঠিক কিরকম ছিল!

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

নাশতারান এর ছবি

হাতে নিয়ে কাগজ পড়ি না বহুদিন। সবই অনলাইনে। তাই চোখে পড়েনি। সময় পেলে তোমার বিজ্ঞাপনী সংস্থার সাথে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখো।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

তানিম এহসান এর ছবি

অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পোস্ট। শেয়ার দিলাম।

শেহাব- এর ছবি

দুইটা ভাল না লাগা অভিজ্ঞতা:
১. একটি এন.জি.ও. কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতায়, যেখানে থানা পর্যায়ের বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করবে, সব কাগজপত্র ছিল ইংরেজী ভাষায়। আমি বিচারকদের একজন ছিলাম। সবাই বাংলাদেশী। প্রস্তুতি সভার কথাবার্তা সবই চলল ৭৫% ইংরেজী ভাষায়!

২. আরেকটি এন.জি.ও.র তথ্য প্রযুক্তি শাখায় একজন প্রকৌশলী নেয়া হবে। আমি আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে পরীক্ষকদের মধ্যে ছিলাম। কথাবার্তা সবই হল ইংরেজীতে!

একটি ভাল লাগা অভিজ্ঞতা:
দেশে করা একমাত্র চাকরীর নিয়োগ পরীক্ষায় আমার সাথে কথাবার্তা বলা হয়েছিল বাংলায়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

আমার ধারণা, সমস্যাটা আসলে ইংরেজিতে কথা বলা নিয়ে না।
কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কাজ যদি ইংরেজিতে করতে হয় তাহলে সাক্ষাতকার ইংরেজিতে হওয়া বা কোন সেমিনার ইংরেজিতে পরিচালিত হলে সমস্যা নাই।

সমস্যাটা হল বাংলা-ইংলিশ বা বাংলা-হিন্দি খিচুড়িতে।

তবে আপনার বাংলায় সাক্ষাতকারের অভিজ্ঞতা আছে জেনে ভাল লাগলো।

ইউসুফ এর ছবি

অতি চমৎকার বিশ্লেষণ। এই জাতিও লেখা আরও চাই।

তারেক অণু এর ছবি
guest_writter এর ছবি

বুনোহাঁস, প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি খুব সুন্দর লেখটার জন্য।
এক সময় বাংলা নাটকগুলো শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চার জন্য যথেষ্ট ছিলো। আর এখন নাটকে নুতন ভাষার প্রচলন হয়েছে, যেটাকে আমরা ফারুকী ভাষা নাম দিতে পারি। যেমনঃ করছো, খাইছো ইত্যাদি।
হায়রে বাঙালি, ইংরেজিতো শুদ্ধ করে বলতে, লিখতে পারলই না, মনে হয় কিছুদিন পর নিজ ভাষাটাও ভুলে যাবে। কি আর করা এখন হিন্দীর যুগ। স্মার্ট হতে হবে না!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

দীপাবলি।

দুর্দান্ত এর ছবি

ভাষা বদলাবেই।

সবজান্তা এর ছবি
ফাহিম হাসান এর ছবি

কিন্তু বদলের রকমফের আছে। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে প্রচুর আরবী-উর্দু-ফার্সি শব্দ আমদানী করে বাংলাকে মুসলমানী ভাষা করার একটা প্রচেষ্টা ছিল। কবি-সাহিত্যিকরাও সাহিত্য রচনায় এছালমি শব্দ ঢুকিয়ে দিতেন। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সফল হয় নাই। কারণ ঐ বদলটা ছিল আরোপিত।

যে বদল ভাষার স্বাভাবিক গতিপথকে রুদ্ধ করে তা বর্জনীয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

সহমত, ভাষায় জোরাজুরির জায়গা নাই। পাবলিক যেটা নেবে, সেটাই ছহিহ। অতীতে ফার্সী-আরবী-ইংরেজী নিয়েছে। এখন হিন্দী নিচ্ছে। আগামীতে চীনা নেবে। আরো পরে মংগলগ্রহের ভাষাও নেবে। ঠেকানোর প্রচেষ্টা আগেও চলেছে, এখনও চলছে, নিশ্চিত আগামীতেও থাকবে। কিন্তু যেমন বললাম। ভাষা বদলাবেই।

তাপস শর্মা এর ছবি

ইউ নো ... আপনার লেখাটা না , ওওফ রিয়েলি দারুন হয়েছে। আই হোপ এই ধরণের লেখা আমাদের ইনস্পিরেশন দেবে। চোখ টিপি শয়তানী হাসি

... সত্যি আমরা চরম মাত্রায় বাংলিশ হয়ে গেছি।

দুর্দান্ত এর ছবি

লাইক!

তিথীডোর এর ছবি

চমৎকার লেখা! চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অন্যকেউ এর ছবি

চলুক

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

চমৎকার লেখা, এরকম একটা লেখা আপনার কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল।

shafi.m এর ছবি

চলুক আপনি (ও রাগিব ভায়ের মন্তব্য) মনের কথা বলেছেন। ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করিনা তা নয়, কিন্তু ভাষার মিশ্রণ এড়িয়ে চলি। বাংলাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

শাফি।

দ্রোহী এর ছবি

চলুক

পথের ক্লান্তি এর ছবি

ভাষার ১২টা বাজাচ্ছে বর্তমানে ৩টা জিনিস;

১) এফএম আরজে
২) ফারুকি গং
৩) হিন্দি

নাশতারান এর ছবি

আমরা নিজেরাও বাংলার বারোটা বাজাচ্ছি। বাংলা আর ইংরেজি ভালোমতো পারলে কোথাও আটকানোর কথা না। দুটোর কোনোটাই ভালোমতো না পারলে জোড়াতালি মারতে হয়। ভারতীয়দের সাথে যেচে হিন্দি বলতে যান তারাই যারা ইংরেজি ভালো পারেন না।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

আনিস মাহমুদ এর ছবি

ভাষা জ্যান্ত। তাই ভাষার পরিবর্তন হবেই। যে ভাষাকে আজ আমরা প্রমিত ভাষা বলছি, মাত্র দুই-তিন দশক আগেই সেই ভাষা হয়তো আদৌ পাতে দেবার যোগ্য ছিলো না। ভাষাকে আটকে রাখা যাবে না। কোন ভাষা টিকবে, টিকলে তার কেমন পরিবর্তন হবে, সে পরিবর্তন কি বিবর্তনের পথ ধরে এগুবে নাকি বিপ্লবের পথ ধরে, কোন ভাষা হারিয়ে যাবে, সেটা নির্ধারণ করবে সময়। এটা নিয়ে জাজমেন্টাল হওয়ার খুব একটা অবকাশ নেই বলেই আমার মনে হয়।

তবে হিন্দির আগ্রাসন আর সেটা নিয়ে আহ্লাদীপনার ব্যাপারে আমার প্রচণ্ড বিরক্তি।

.......................................................................................
Simply joking around...

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনার সাথে একমত। এবং আমার মনে হয় এই ভাষা রক্ষণশীলতাটাও স্বাভাবিক এবং হয়তো জাজমেন্টোর্দ্ধও। হাসি

আনিস মাহমুদ এর ছবি

আমি কিন্তু সেটাই বলেছি।

.......................................................................................
Simply joking around...

নাশতারান এর ছবি

প্রমিত ভাষা না, বাংলা ভাষার কথা বলছিলাম। প্রমিত, আঞ্চলিক সবই। ভাষার বিবর্তন হবেই। যে অহেতুক আহ্লাদীপনাগুলো চোখে লাগছে সেগুলো বিবর্তন নয়, বরং এক ধরনের মিউটেশন মনে হয় আমার।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

guest_writer এর ছবি

লেখাটা অসাধারণ লেগেছে।

অনেক আগেই এফ এম রেডিও কে না বলেছি। কিন্তু ওদের পেছনে যে বাণিজ্যিক তাড়না তার কিছু একটা বিহিত কি হবে?

তাসনীম এর ছবি

চমৎকার লেগেছে। যেটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা উপরে আনিস ভাই বলে দিয়েছেন। তবে মিউটেশন নিয়ে তোমার অভিমতও ঠিক আছে, এখন যেটা হচ্ছে সেটা ঠিক বিবর্তন নয়।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

উচ্ছলা এর ছবি

কী ধারালো, মজবুত অথচ সরল আপনার যুক্তি উপস্থাপনের ভঙ্গী !
চলুক উত্তম জাঝা! বাঘের বাচ্চা

চমৎকার লেখাটির জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

চলুক

উদ্বেগজনক। বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিৎ।

হিন্দি বলা/মেশানো, ইংরেজি মেশানো দুটোই সমর্থনযোগ্য নয়। এটা আসলেই মিউটেশন, বিবর্তন নয়। বিরক্তিকর এবং শ্রুতিকর্কশ।

তবে কথ্য ভাষার যে পরিবর্তন হচ্ছে তা হবেই। ভাষার কাজই বদলে যাওয়া, সে রূপ-ভোল পাল্টাবেই। তবে প্রমিত ভাষাকে সাহিত্যে এবং শিক্ষার মাধ্যমরূপে টিকিয়ে রাখতে হবে, চর্চা করতে হবে।


_____________________
Give Her Freedom!

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

প্রত্যেকটা ভাষাই কোন না কোন ভাষার আগ্রাসনের মুখে পড়ে। বাংলাদেশে বাংলা পড়ছে হিন্দির আগ্রাসনের মুখে। আর ভারতে হিন্দি পড়ছে ইংরেজির আগ্রাসনের মুখে। কোন ভাষা সেই আগ্রাসন কি করে মোকাবেলা করবে তার মাধ্যমে অনেকসময়ই তার চরিত্র নির্ধারিত হয়। এটা তার একটা পরীক্ষা। জোর করে কোনকিছু বন্ধ না করে বাংলা ভাষা কি করে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, আমি তা দেখতে আগ্রহী।

নাশতারান এর ছবি

প্রশংসা, আলোচনা, সমালোচনার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।