হিমেলের ভ্রমণযোগ আমার সাথে কীভাবে কীভাবে যেন মিলে যায়। হিমেল আমার খালাত ভাই। এর আগে চড়কভ্রমণের সময়ও হঠাৎ করে উদয় হয়েছিলো। এবার হামহামযাত্রার আয়োজন চলছে এমন সময় হাজির। হামহাম যাবে কি না জিজ্ঞেস করতেই লাফিয়ে উঠল। গাট্টিবোঁচকা বেঁধে বাসায় হাজির হলো পরের সপ্তাহে।
ঘড়িতে বাজে নয়টা। আমি আর হিমেল কমলাপুর রেলস্টেশনের পথে। রাত ৯:৫০-এর উপবন এক্সপ্রেসে চেপে শ্রীমঙ্গল, সেখান থেকে হামহাম ঝর্ণা যাওয়ার পরিকল্পনা।
সিএনজি পল্টনের জ্যামে বসে আছে। এমন সময় আমাদের অরগানাইজার মুনতাসীর ভাইয়ের এসএমএস- "one seat available. confirm ASAP." শেষ মুহূর্তে একজন যাত্রা বাতিল করেছেন।
আঁকাইন যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু জানাতে দেরি করে ফেলেছিলো। ততদিনে টিকেট কাটা হয়ে গেছে। এসএমএস পেয়েই ফোন দিলাম আঁকাইনকে। সে তখন গুলশান ১-এ, অফিসে। ফোন রেখেই অফিস থেকে দিলো ছুট। সিএনজি নিয়ে কমলাপুরের উদ্দেশে রওনা করতে করতে ৯:২০। আমি আর হিমেল পৌঁছে গেছি তার আগেই। সব টিকেট মুনতাসীর ভাইয়ের কাছে। তার আসতে দেরি হচ্ছে। তিনি ভরসা দিলেন- ট্রেন ছাড়তে নাকি দেরি হয়। ট্রেন ছাড়তে দেরি হোক এমনটাই চাই। অপেক্ষার ফাঁকে ফাঁকে আঁকাইনের খোঁজ নিতে থাকি।
সব মিলে আমরা বারোজন। সবার সিট এক বগিতে হয়নি। চ-তে আটজন আর ঠ-তে চারজন। আমি বাদে এগারোজনের মধ্যে মুনতাসীর ভাই, ঈশিতা আর হিমেলই আমার চেনা। তার সাথে যোগ হলো আঁকাইন (যদি পৌঁছাতে পারে আরকি)। স্টেশনে এসে দেখি বুয়েটের ব্যাচমেট সুমনও যাচ্ছে। ঈশিতা তার অর্ধাঙ্গ সজল ভাইকে নিয়ে ট্রেন ধরবে এয়ারপোর্ট স্টেশনে। সজল ভাইয়ের সাথে ওখানেই পরিচয় হবে।
ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলেছে। মুনতাসীর ভাই এলেন পৌনে দশটার দিকে। ঠ-এর টিকেট দিলেন আমার হাতে। আমি আঁকাইনকে কল দিয়ে যাচ্ছি, এসএমএস করে যাচ্ছি ক্রমাগত। দুদফা জ্যামে আটকে দুশ্চিন্তার পারদ চড়তে থাকে। ওকে বললাম দেরি হলে উপবনের যেকোনো বগিতে উঠে পড়তে। আঁকাইন যখন স্টেশনে পৌঁছেছে আমরা তখন সাত নং প্ল্যাটফর্মে উপবনের পাশে দাঁড়িয়ে। আঁকাইনকে পথ বাতলাতে বাতলাতে ঠ খুঁজছি। আস্তে আস্তে ট্রেন চলতে শুরু করল। ভাবলাম ট্রেন বুঝি ইঞ্জিন বদলাচ্ছে। এখনই থামবে। আমাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে ট্রেনের গতি বাড়তে লাগল। ট্রেন মিস করতে যাচ্ছি ব্যাপারটা উপলব্ধি করামাত্র দৌড় লাগালাম সব। হুড়মুড়িয়ে যার হাতের কাছে যেই বগি তাতেই উঠে পড়লাম। আমি, হিমেল আর আরিফ ভাই গিয়ে পড়লাম ছ-তে। বাকিদের খবর তখনো জানি না। বগিতে উঠে আরিফ ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো। আমরা একই প্রতিষ্ঠানে আলাদা ডিপার্টমেন্টে চাকরি করি। সামনাসামনি দেখা হয়নি এর আগে। একটু ধাতস্থ হতেই মনে পড়ল আঁকাইনের কথা। ও কি ট্রেন ধরতে পেরেছে? ফোন দিলাম। জানালো দৌড়ে শেষ বগিতে উঠেছে। মুনতাসীর ভাই ফোন করে জানালেন বাকি ছয়জনও অন্য বগিতে উঠে পড়েছে। এয়ারপোর্ট স্টেশনে পাঁচ মিনিটের জন্য ট্রেন থামবে। তখন নেমে নিজেদের জায়গায় বসব আমরা। আমার হাতে ঠ-এর চারটা সিটের টিকেট। ঈশিতা, সজল ভাই আর আঁকাইন আমাকে ছাড়া এই গ্রুপের কাউকেই চেনে না। হিমেলকে বললাম আরিফ ভাইয়ের সাথে চ-তে চলে যেতে। এয়ারপোর্ট স্টেশনে নেমে ঈশিতা আর সজল ভাইকে পেলাম। শেষের বগি থেকে আঁকাইনও চলে এলো ঠ-তে। গত এক ঘণ্টার টানটান উত্তেজনায় তখনো দপদপ করছে শিরা।
২
ভোর সাড়ে তিনটার দিকে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে নামলাম। জিপ ঠিক করা ছিলো। তবে ড্রাইভার প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি একা একা চালাতে ভয় পাচ্ছিলেন। তার সঙ্গীর অপেক্ষায় টুকিটাকি পানাহার হলো। সবার সাথে পরিচয় হলো। লাউয়াছড়া বনের ভেতরে ফরেস্ট অফিসের বাংলো শ্যামলীতে ব্যবস্থা করা ছিলো। জিপে চেপে সেখানে যাওয়া হলো।
হাত-মুখ ধুয়ে, ব্যাগের বোঝা কমিয়ে, অতি চমৎকার খিচুড়ি-ডিম খেয়ে রওনা হতে হতে সকাল প্রায় সাতটা। জিপে চেপে হু হু বাতাস আর নরম রোদ গায়ে মেখে চাম্পারাই চা বাগান হয়ে কলাবন পাড়া পৌঁছাতে লাগল ঘণ্টা দেড়েক।
ট্রেকিং ট্রেইলের মুখে ক্ষুদে লাঠিয়ালরা বাঁশের লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। যে যার পছন্দমতো লাঠি কিনে নিলাম।
এখান থেকে কুরমা বনের ৭-৮ কিমি ভেতরে হামহাম। ট্রেকিং শুরু করতে করতে ঘড়িতে সময় পৌনে নয়টা। সামনে অচেনা পাহাড়ি পথ। হাতে লাঠি, ব্যাগে শুকনো খাবার, অ্যাঙ্কলেট (পা মচকানো এড়াতে), লবণ আর গুল (জোঁকের কামড় থেকে বাঁচতে), কেরোসিন (মশা আর জোঁক এড়াতে) আর বুক ভর্তি টগবগে উৎসাহ।
৩
হাঁটা শুরু হলো। আমরা বারো জন। সাথে দুজন গাইড। সামনেরজনের নাম রাজেশ, পেছনেরজনের ঠনঠন।
চড়াই-উৎরাই-খানাখন্দ-ঝিরিপথ নিয়ে প্রায় চোদ্দ (সাত+সাত) কিলোমিটারের পথ। কোনো কোনোখানে পা রাখার ঠাঁইটুকুও নেই। গাছ বা পাহাড়ের গা আঁকড়ে এগোতে হয়। হামহামযাত্রা কোনো অ্যাডভেঞ্চার-গেইমের থেকে কোনো অংশে কম নয়। শুরুতে চারটা সরু সাঁকো।
তৃতীয় সাঁকোটা পার হতে না হতেই বাঁশের হাতল খুলে পড়ল। হলুদ কী একটা কাঁঠাল জাতীয় ফল জায়গায় জায়গায় পড়ে গিয়ে লেপ্টে পিচ্ছিল করে রেখেছে পথ। চতুর্থ সাঁকো পেরোনোর ঠিক আগে ওতে পিছলে প্রথম পতন হলো। লেভেল ওয়ান এ পর্যন্তই।
লেভেল টু'র নাম 'জোঁকের টিলা'। গুল আর লবণ হাতে নিয়ে, পায়ে কেরোসিন মেখে প্রস্তুত সবাই।
বিনা রক্তপাতে কিছু খুচরা পোকার কামড় খেয়ে লেভেল টু-ও পার হওয়া গেলো।
লেভেল থ্রি সবচেয়ে দীর্ঘ ও দুর্গম। ধারাবাহিক সংকীর্ণ চড়াই-উৎরাই। পায়ে ব্যথা পেলাম সেখানেই। গতমাসে রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে যেখানে ব্যথা জমে ছিলো সেখানটায় আঘাত পেলাম। জুতো খুলে চপ্পল পরে নিলাম। পায়ের জ্বলুনি নিয়ে এগোচ্ছি। শারমিন কানে পোকার তীব্র কামড় খেলো। সেটা উপেক্ষা করেই হাঁটা চললো। কিন্তু পথ ফুরোয় না।
লেভেল ফোর হলো ঝিরিপথ। হাঁটু থেকে বুকসমান পানি কেটে কেঁটে হাঁটতে হয়। ঠাণ্ডা পানিতে পায়ের জ্বালা জুড়িয়ে আসতে থাকে। কুচো পাথড়ের কামড়ে নতুন ব্যথাও জুড়তে থাকে।
একখানে অনেকগুলো পাথর জড়াজড়ি করে রয়েছে। সেখানে বসে একটু জিরিয়ে নেওয়া গেলো, ফটোসেশন হলো খানিকটা।
তারপর আবারো চলা শুরু। জল-কাদা-পাথর মাড়িয়ে কখনো হাঁটুপানি, কখনো বুকসমান পানি ঠেলে এগুচ্ছি সবাই।
এক ফাঁকে ঝুপঝাপ এক চোট বৃষ্টি হয়ে গেল। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে জল মাড়াতে যত ভালোই লাগুক, এই দুর্গম পথে বৃষ্টি মোটেই কোনো সুলক্ষণ নয়। আরিফ ভাইয়ের জুতো হারালো। জুতোর মায়া ছেড়েই এগোতে হলো তাকে। আমি সবার পিছে। আমার সামনে আঁকাইন। একটা বাঁকের মুখে পৌঁছেই আমার দিকে ফিরে এগাল ওগাল হাসি দিলো আঁকাইন। বুঝলাম পৌঁছে গেছি। বাঁক পেরোতেই চোখাচোখি হলো হামহামের সাথে।
পাথরের গা কেটে প্রায় ১৩০ ফুট উচ্চতা থেকে সশব্দে ঝলমলে জল ঝরে চলেছে।
সময় তখন সাড়ে এগারোটার কিছু বেশি। আমাদের পিছে পিছে আরেকটা দলও পৌঁছালো সেখানে।
ঘণ্টাখানেক জলকেলি হলো, ফটোসেশন হলো।
তারপর সামান্য জলযোগ।
শেষ দলীয় ছবি সুমন তুলেছিলো। তাই বেচারা ছবিতে থাকতে পারেনি। তাতে কী? আলু-প্রজন্মের আছে ফটোশপ।
ফেরার আয়োজন যখন করছি, তখন ঘড়িতে প্রায় দুটো বাজে। খাঁটি রিয়্যালিটি শো'র মতো আপাত সফল সফরের এই পর্যায়ে ছোট্ট একটা টুইস্ট- ঝমঝম বৃষ্টি। অভিজ্ঞ ট্রেকার আর গাইডরা প্রমাদ গুনলেন। বৃষ্টিতে পুরো পথ পিচ্ছিল হয়ে পথ আরো দুর্গম করে তুলবে। গাইডরা জানালেন একটা বিকল্প পথে আছে যেটা দৈর্ঘ্যে কম আর জোঁকবিরল হলেও বেশিরভাগই ঝিরিপথ। বৃষ্টিতে পানির উচ্চতা বেশি বেড়ে গিয়ে থাকবে। তাই খানিকটা সাঁতার জানা থাকলে ভালো। দলের অনেকেই সাঁতার জানে না বলে শেষমেষ ও পথে যাওয়া হলো না।
দেখতে দেখতে দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল। প্রথম ভাগ গেল উপরের টিলা দিয়ে, দ্বিতীয় ভাগ ঝিরিপথ দিয়ে এগোতে লাগল। খানিকটা এগিয়ে গিয়ে আবারো পায়ে ব্যথা পেয়ে অ্যাংক্লেট পরার সিদ্ধান্ত নিলাম। অ্যাংক্লেট পরে হেচড়ে হেচড়ে এগোতে এগোতে দলছুট হলাম। আমার সাথে গাইড ঠনঠন আর আঁকাইন। হিমেল দ্বিতীয় দলের সাথে এগিয়ে গেছে ততক্ষণে।
জল মাড়িয়ে ধীরে ধীরে এগোতে লাগলাম। ঝিরিপথ শেষ হলে শুরু হলো চড়াই-উৎরাই পথ। বৃষ্টিতে ভিজে পুরোটা চ্যাটচ্যাটে নরম হয়ে আছে। পা পিছলে যায় সহজেই। গাইডের কথায় পায়ের চপ্পল খুলে ফেললাম। অ্যাংক্লেট পায়ের পাতা বাঁচালেও আঙুল বাঁচাতে পারছে না। চোরা বাঁশ আর পাথরে হোঁচট খেয়ে আঙুলের ডগায় একই জায়গায় বারংবার ব্যথা পেয়ে পা অচল হওয়ার উপক্রম। গাইডকে যতবার জিজ্ঞেস করি, "মামা, আর কতদূর?", তিনি বলেন, "ম্যালা দূর ম্যালা দূর"। টিলার এখানে ওখানে বিশাল বিশাল গাছ ভেঙে পড়ে আছে। গাইড জানালো হাতির কাজ। আমার পায়ের ব্যথা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। খাড়া টিলা বেয়ে উঠতে নামতে দম ফুরিয়ে আসতে চায়। থামার সময় নেই। তাও খানিকতা থামতে হলো। ধাতস্থ হয়ে আবারো চলা শুরু। আঁকাইন ক্রমাগত কথা বলে মোটিভেট করার চেষ্টা করছে আমাকে। বারকয়েক আওয়াজ দিলো সঙ্গীদের। কারো কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। আদৌ ঠিক পথে এগোচ্ছি কি না কে জানে! কিছুদূর যেতে যেতে আসার পথে চোখে পড়া বুনো ফুলগুলো দেখে আশ্বস্ত হই- না, ঠিক পথেই এগোচ্ছি।
কিন্তু পথ ফুরোচ্ছে না। গোটাকয় জোঁক সরাতে হলো পা থেকে। জোঁক নিয়ে কোনোরকম দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো না অবশ্য। দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো দুর্ঘটনার। হাত-পা ভেঙে বসলে বা পা ফসকে পাশের খাদে পড়লে কী হবে ভাবছিলাম। এর মধ্যে আরেক দফা বৃষ্টি হলো। বৃষ্টিতে গায়ের কাদা ধুয়ে যায়। কাদায় মাখামাখি করি, বৃষ্টিতে ধুয়ে নিই, আবারো কাদা মাখি, সামনে জমে থাকা কাদা জলে ধুয়ে নিই- এভাবেই এগোতে থাকি। দেখতে দেখতে পথ আরো পিচ্ছিল হতে থাকে। হাতির পায়ের ছাপ দেখা যায় এখানে ওখানে। হাতির পায়ের চাপে সঙ্গীদের পায়ের চাপ মুছে গেছে। ঠনঠন বলেন, "উনারা মনে হয় চইলা গ্যাছেন।" আমি মনে মনে হিমেলের মুণ্ডুপাত করতে থাকি। জোঁকের টিলা পার হই বিশেষ কোনো উপদ্রব ছাড়াই। হঠাৎ আঁকাইনের কণ্ঠে পেছন ফিরে দেখি ওর দুই পা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। জোঁক কোন ফাঁকে রক্ত খেয়ে সরে পড়েছে টেরই পায়নি। আবারো বৃষ্টি শুরু হয়। পায়ের রক্ত ধুয়ে যায়, পথ আরো পিচ্ছিল হয়। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলেছে। পৌনে পাঁচটার দিকে আঁকাইন তাগাদা দিতে থাকে। আরেকটু দ্রুত, আরেকটু। অন্ধকার নেমে এলে বিপদে পড়ব, সে আমিও জানি। কিন্তু আমার পা এগোয় না। তাও চলতে থাকি। কতটা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সাঁকো পর্যন্ত পৌঁছেছিলাম খেয়াল নেই। চতুর্থ সাঁকোর ওমাথার পথ যাওয়ার পথেই পিচ্ছিল হয়ে ছিলো। ফেরার পথে তার অবস্থা আরো ঝুঁকিপূর্ণ। পাশের ডালপালা, বাঁশঝাড় ধরে খুব ধীরে পার হওয়া গেল সেটুকু। আঁকাইনের কণ্ঠ শুনে আবারো পেছন ফিরি। ওর কাপড়ের মধ্যে জোঁক ঢুকে গেছে। সেটা ছুটাতে গিয়ে ওর চশমা পড়ে গেছে। এদিকে পা দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করেছে আবারো। সে অবস্থাতেই পরের সাঁকো পার হতে হলো। এর পরের সাঁকোর হাতল যাওয়ার পথে ভেঙে ছিলো মনে আছে। এ দফায় কী হবে ভাবতে ভাবতে এগিয়ে দেখি সাঁকোর মুখে হিমেল বসে। হাতি সাঁকো ভেঙে রেখে গেছে। আমাদের ভেলায় করে যেতে হবে। হিমেল বসে আছে আমাদের নিয়ে যেতে। একজন একজন করে আমাদের ভেলায় পার করালেন ঠনঠন। ওদিক থেকে অন্য গাইড রাজেশ এসেছেন আমাদের নিয়ে যেতে। ছোট শেষ সাঁকোটা পার হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। হঠাৎ পেটের কাছে মসৃণ কিছু একটা অনুভব করলাম। কাপড় ঝাড়া দিতেই ইয়া মোটা একটা জোঁক ঝরে পড়ল।
সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে প্রায়। দলের বাকিরা জিপে অপেক্ষা করছে। হাঁটাপথ পেরিয়ে বের হতে হতে সময় পৌনে ছয়টা। কুয়ার জলে হাত-পা ধুয়ে জিপে চেপে বসলাম। ফিরতে ফিরতে সবার চেহারাসুরতই বদলে গেছে, শুধু আমার চেহারা নাকি বদলায় নি। যেভাবে গেছি সেভাবেই নাকি বের হয়েছি। আমার রূপের রহস্য কী জানতে চাইলে বললাম, "মাড প্যাক"।
ফেসবুক ইভেন্টে মুনতাসীর ভাই বলে দিয়েছিলেন একাধিক প্যান্ট নিতে। এতক্ষণে তার কারণ উপলব্ধি করলাম। আঁকাইনের প্যান্ট ছিঁড়ে গেছে। কাপড়চোপড়ের দোকান উলটোপথে পড়ে। মুনতাসীর ভাই বললেন তার সাথে বাড়তি কাপড় আছে। সেই ভরসায় রেস্ট হাউজে ফিরে আসা হলো। কনকনে হাওয়ায় ভেজা কাপড়ে কাঁপতে কাঁপতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল নেই।
৪
রেস্ট হাউজে ফিরে গা ধোয়ার আয়োজন করছি সবাই। শারমিন ওয়াশরুম থেকে চেঁচিয়ে লবণ চাইলো। গায়ে জোঁক খুঁজে পেয়েছে সে। কিছুক্ষণ পর ঈশিতার আর্তনাদে চোখ পড়ল নিজের ডান হাতে। পুরো কবজি রক্তাক্ত। জিপে হিমেল আমার ডানে বসা ছিলো। আমার গায়ের রক্তে তার পুরো হাত লাল হয়ে আছে। রক্তের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল আমার পেট, পিঠ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। কাপড় রক্তে ভিজে জবজব করছে। নির্ঘাৎ জোঁকের কাজ। ওয়াশরুমে গিয়ে আবিষ্কার করলাম জামার কোমরের অংশে লেপ্টে আছে চটচটে মসৃণ লাল কিছু বস্তু। প্রথমে ভেবেছিলাম জোঁকের দেহাবশেষ। আসলে ওগুলো ছিলো আমারই জমাট বাঁধা রক্ত। জোঁক ওয়াশরুমেই পড়ে গেছিলো। পরে ঈশিতা খুঁজে পেয়েছিলো। জোঁকটা হয়ত কাদায় পিছলানোর সময় গায়ে ঢুকে গেছিলো। কাপড়ের রক্ত আর কাদা ধুয়ে ভেজা কাপড় পলিথিনে ভরে ব্যাগে ভরলাম। কাপড় বদলানোর পরেও দেখা গেল কোমর থেকে রক্ত ঝরে চলেছে। ড্রেসিং করা হলো। তাতেও রক্ত থামার নাম নেই। আমরা সাতজন সে রাতেই ঢাকা ফিরছিলাম। খেয়েদেয়ে রক্তভেজা কাপড়েই রওনা দিলাম। অন্যরা বললো থেকে যেতে। কিন্তু জোঁকের কামড়ের রক্তক্ষরণ কখন থামবে ঠিক নেই। থামানোর কোনো উপায়ও জানা নেই। তাই রেস্টহাউজের বিছানা রক্তে না ভাসিয়ে বাসের সিট ভাসানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। বাসের ডানপাশের সিটে বসলাম যাতে আমার গায়ের রক্তে পাশেরজন রক্তাক্ত না হয়।
৫
ঘুমুতে ঘুমুতে ঢাকায় পৌঁছালাম ভোর পাঁচটার দিকে। বাসায় ফিরতে ফিরতে পৌনে ছয়টা। গা ধুয়ে দেখা গেল রক্তপাত থেমেছে। কমপক্ষে বারো ঘণ্টা রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে ব্যথা নেই। একমাত্র অনুভূতির নাম ক্লান্তি।
৬
আমার মা কয়েক কিস্তিতে হামহাম অভিযানের লোমহর্ষক বর্ণনা শুনে ফেলেছে তার বোনের মুখে। এই হুলস্থূলের পর হুটহাট বাসায় আসার আগে হিমেল নিশ্চিত দুবার ভাববে।
কিছু ফাউ জ্ঞান
হামহাম ঝর্ণা
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি ফরেস্ট রেঞ্জের ৭,৯৭০ একর এলাকা জুড়ে কুরমা বনবিটের অবস্থান। এর পশ্চিম দিকে চাম্পারাই চা বাগান। চা বাগানের শেষে কলাবন পাড়া। সেখান থেকে কুরমা বনের ৭-৮ কিমি ভেতরে হামহাম। স্থানীয় অধিবাসীরা ঝর্ণার জল গড়ানোর শব্দকেই হামহাম বলেন (আমরা যেমন বলি কলকল)।
এখানকার চা শ্রমিকদের কাছে হামহাম একটি পবিত্র স্থান। তারা নিয়মিত পুজা অর্চনা করে থাকেন এখানে। অনেকে এখানকার প্রাচীন রাজা সিতাপের নামে একে সিতাপের ঝর্ণা নামেও ডাকেন।
হামহাম যেতে চাইলে
- ভরাযৌবনা হামহাম দেখার জন্য বর্ষার সময়টাই আদর্শ। তবে ট্রেকিংয়ের জন্য নয়। পথ এমনিতেই দীর্ঘ ও দুর্গম। বৃষ্টিতে আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রথমবার ট্রেকিং অভিজ্ঞতার জন্য হামহাম মোটেও আদর্শ নয়।
- নিজের গাড়ি না থাকলে শ্রীমঙ্গল বা কমলগঞ্জ থেকে সরাসরি জিপ ভাড়া করে চাম্পারাই হয়ে কলাবন চলে আসুন। জিপ ভাড়া দুই থেকে আড়াই হাজার।
- বোঝা যত কম তত ভালো। নিজের বোঝা নিজেকেই বহন করতে হবে।
- জুতা নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আমার জুতা বেশ বাজেভাবে দাগা দিয়েছে আমাকে। তলায় খাঁজকাটা প্লাস্টিকের জুতা (বাটায় পাওয়া যায়, ফুটপাথেও বিক্রি হয়) অথবা জাঙ্গল বুট (কচুক্ষেতে পাওয়া যায়) কিনবেন।
- শুকনো খাবার, ওষুধ, ফার্স্ট এইড সামগ্রী, স্যালাইন, গ্লুকোজ, লবণ/গুল/চুন, কেরোসিন, অ্যাঙ্কলেট সাথে রাখবেন। খাওয়ার জন্য আমরা বিস্কুট, চিঁড়া আর ভেজানো ছোলা নিয়েছিলাম।
- পুরো পা ঢাকা ট্রাউজার বা টাইটস পরা ভালো।
- ঝিরিপথে লাঠি দিয়ে পথ আঁচ করে এগোবেন। অনেক চোরা পাথর আর বাঁশ পাবেন। অসাবধানে জখম হতে পারেন।
- একই গতিতে হাঁটার চেষ্টা করবেন।
- যতটা সম্ভব সকালে রওনা দেবেন যাতে আলো থাকতে থাকতে ফিরে আসা যায়।
- দলের সাথে চলার চেষ্টা করবেন। পরস্পরের খেয়াল রাখবেন। সাথে ভালো গাইড নেবেন। পথ হারানো বিপজ্জনক।
- প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট এখানে ওখানে ফেলে আসবেন না।
- জোঁকের টিলায় নাকি নানা জাতের সাপও রয়েছে। আমরা অবশ্য কোনো সাপের দর্শন পাইনি।
জোঁক
জোঁক নিয়ে খুব আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। জোঁকের পরিপাকতন্ত্রে নানারকম পরজীবী বাস করলেও সেগুলো মানবদেহে বাঁচতে পারে না। তাই জোঁকের মাধ্যমে রোগ সংক্রমণের সুযোগ নেই বললেই চলে। আরো সুখের কথা হলো সব জোঁক রক্তভূক নয়, আবার যেসব জোঁক রক্ত খায় তাদের সবাই রক্তশিকার করে না। রক্তশিকারী জোঁক কামড়ে ধরে চোষক দিয়ে শিকারের গায়ে লেপ্টে যায়। প্রথমেই সে এক ধরনের চেতনানাশক ঢেলে দেয় যাতে শিকার জোঁকের আক্রমন বুঝতে না পারে। তারপর হিরুডিন নামের এনজাইম ঢালে যা রক্তে ভাঙন ধরায়। এরপর জোঁক লালা দিয়ে শিকারের গায়ে লেপ্টে চুষে চুষে রক্ত খেতে থাকে যতক্ষণ না তার পেট ভরে। পেট ভরে গেলে শিকারের গা থেকে খসে পড়ে। হিরুডিনের কারণে শিকারের রক্ত জমাট বাঁধতে দেরি হয় এবং রক্তক্ষরণ কয়েক ঘণ্টা থেকে দিন তিনেক পর্যন্ত চলতে থাকে। একটা জোঁক যে পরিমাণে রক্ত ঝরাতে সক্ষম তাতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা নেই। ক্ষত শুকানোর সময় সামান্য চুলকায়। সেটায় হাত না লাগালেই হলো। দুয়েকটা জোঁকের কামড় গায়ে না মাখালেও চলে। তবে শরীরের সংবেদনশীল অংশে কামড়ালে অথবা অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে (লাল লাল ছোপ, চুলকানি, ঠোঁট বা চোখ ফুলে যাওয়া, মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট) যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া উচিৎ।
জোঁক ছাড়ানোর মোক্ষম উপায় হাত বা ভোঁতা কিছু দিয়ে শরীরের সাথে জোঁকের চোষকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। আমাদের গাইড হাতে দা নিয়ে গেছিলেন সেজন্য। লবণ, চুন, গুল, ভিনেগার, লেবুর রস, ধোঁয়া, জ্বলন্ত সিগারেট ইত্যাদি দিয়েও মুহূর্তের মধ্যে জোঁক ছাড়ানো যায়। এসব ক্ষেত্রে জোঁক বমি করে, বমির সাথে রোগজীবাণু ঢেলে দেয় যা থেকে ইনফেকশন হতে পারে। আমরা এ যাত্রায় গুল ব্যবহার করেছিলাম।
পরিশেষ
হামহাম দারুণ একটা ঝর্ণা। হাঁটার শক্তি আর ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছা ও সাহস থাকলে অবশ্যদ্রষ্টব্য।
বাংলালিংক বাংলার পথে অনুষ্ঠানের হামহাম পর্ব দেখে এ ভ্রমণ সম্পর্কে খানিকটা ধারণা পেতে পারেন। তবে এই দলটি ঝিরি-অধ্যুষিত পথে গেছিলো। আমরা ও পথে যাইনি।
আমার সফরসঙ্গীরা ছিলেন মুনতাসীর ভাই, আরিফ ভাই, আঁকাইন, হিমেল, সুমন, শারমিন, লুবনা, ঈশিতা, সজল ভাই, অমিত ভাই ও মাসুদ ভাই। মুনতাসীর ভাইকে বিশেষ ধন্যবাদ চমৎকার ব্যবস্থাপনার জন্য। আঁকাইনের প্রতি কৃতজ্ঞতা পুরোটা পথ আমার সাথে থাকার জন্য। ফটোগ্রাফির জন্য ধন্যবাদের দাবিদার আজকা ঈশিতা, মুনতাসীর উল হক, আরিফুল হাসান ও মাসুদুর রহমান। সবার অনুমতি নিয়ে ছবি ও নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
মন্তব্য
ছবি দেওয়ার আগে পাগলা হাতিটার অনুমতি নিয়ে ছিলেন তো!
পাগলেরও অনুমতি নিতে হয়?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
যেতে মন চাইছে। ছবি সুন্দর, বর্ণনা সুন্দর ও তথ্য সমৃদ্ধ।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
এই গা ছমছম বর্ণনা পড়েও যেতে মন চাইছে?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
গা ছম ছম না হইলে আর অ্যাডভেঞ্চার হয় কেম্নে? তাইলে দুই পা ফেলে নিরুপদ্রবে বাসার পাশের ড্রেনের পানি দেখে আসলেই হয়। কি সুন্দর হাম হাম করে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ছে। আর আমি এখনো জোঁক দেখি নাই জীবনে। দেখার ইচ্ছা।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
সতর্কতা হিসাবে হাতির বদলে ম্যামথের ছবি দেয়া দরকার ছিলো, আসলেই বড় পোস্ট । আপাতত ছবি দেখে গেলাম, ছবিতে । লেখা পড়তে হবে পরে ।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আর আমি কিনা ভাবলাম আরেকটু লিখলে ভালো হতো।
লেখার চেয়ে কিন্তু ছবিই বেশি।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
হামহাম- কবে যাম কবে যাম...
ট্রেন ছাড়তে নাকি দেরি হয়-
ঝরনা দেখে যতটা মুগ্ধ হইছি, জোঁক কাহিনী পড়ে ততটা আঁৎকে উঠেছি। জগতে সাপের পরে এই জিনিসটারে আমি ডরাই। আমি নিশ্চিত জোঁক কাহিনীটা না লিখলে শতকরা ৯৯ জন পাঠক হামহাম দেখার জন্য লাফিয়ে পড়তো।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
জোঁক নিয়ে তো এক প্যারা লিখলাম। তাতে ডর কমে নাই?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
জোঁকের কাহিনী পড়ে আমারো একই অবস্থা, আমিও সাপের পর সব চেয়ে বেশী ভয় পাই জোঁক
জায়গাটা পছন্দ হয়েছে, যাইতে হবে। শেয়ার করার জন্য
আমার মনে হয় সবার অন্তত একবার হামহাম এ যাওয়া উচিত।বেচে থাকার আনন্দ বুঝতে হলে আপনাকে ওখানে যেতেই হবে।যেতে যেতে এবং ফিরে আসতে আসতে অন্তত শ খানেক বার মনে হবে, আমরা কত আরামেই না জীবন কাটাই বিশ্বাস না হলে একবার ঘুরে আসুন।
-চুপচাপ
ঠিক এই উপলব্ধি আমারও হয়েছে। শহুরে জীবনের ট্র্যাফিক আর কাটা রাস্তা নিয়ে আমাদের অভিযোগের অন্ত নেই। হামহাম থেকে ঘুরে এলেই বোঝা যায় আমাদের দৈনন্দিন জীবন কতখানি মসৃণ।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
লেখা কিন্তু আসলে তত বেশি না, আর ফাঁকে ফাঁকে ছবি থাকায় (তাও এত সুন্দর সুন্দর ছবি) মোটেই কিচ্ছু বোরিং লাগছে না। হুশ করে পড়ে ফেললাম। এতরকম কষ্টের কথা শুনে
হ! এক্কেরে বেদানা দ্য পেইন।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আমিও একটা সহজসরল ট্রেকিং করে এসেছি হুঁহুঁ। আমরা চালিয়াৎ মানুষ তাই কিচ্ছু পেইন হয় নাই।
এরপর এদিকে এলে হামহামও হয়ে যাক, কী বলো?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
দুর্গম গিরি কান্তার মরু পেরোতে গিয়ে এইরকম হবেনাতো?
অন্যদের হলেও হতে পারে। কিন্তু তুমি তো চালিয়াৎ মানুষ। তোমার হবে না। আসো আসো।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
দম বন্ধ করে পড়লাম। নীড়'দা ঠিকই বলেছেন। জোঁকের কথা এইভাবে না বললে আমি হয়তো পড়তে না পড়তেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিতাম। বাঘ-সাপ কোনো ব্যাপার না। কিন্তু জোঁক!!!
তবে জোঁক-দের তো দেখি পারিবারিক বন্ধন একেবারেই দৃঢ় না। একজায়গায় কারো গায়ে উঠে বসে থাকে, আর অন্য জায়গায় টুপ করে খসে পড়ে। খুব খ্রাপ!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
জোঁক তো একাই একশ (উভলিঙ্গ)। পারিবারিক বন্ধন দিয়ে কী করবে? বছরে দুয়েকবার পেটপুরে রক্ত পেলেই খুশি।
জোঁকের ভয় দূর করতে চিকিৎসাকাজে জোঁকের প্রয়োগ দেখে নিতে পারেন
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
যেটুকু দেখা যাচ্ছে, এটা দেখেই আর বাকিটা দেখার সাহস পাচ্ছি না।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
একটু গুছিয়ে নিয়ে আমিও যাব। অনেক আগেই একবার যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মাঝখানে গিয়েছিল এরকম কয়েকজনের কাছে শুনলাম যে দিনে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার লোক যাচ্ছে। তাই আগ্রহ হারায় ফেলছিলাম তখন। হুজুগ কমে গেলে যাব।
লেখা চমৎকার। ছবিগুলো আরও। ছবির কোনটা কে তা বলে দিলে আরও একাত্ম হওয়া যেত। এইরকম পোস্টের শুরুতে হাতীর ছবি না দিলেও চলে। বড় হলেও পড়তে বাঁধে না।
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
দিনে তিন থেকে চার হাজার লোক!
হামহামে যেতে হলে অবশ্যই আপনাকে ভোরে রওনা দিয়ে বিকেলে ফিরতে হবে। কাজেই দিনে একটার বেশি ট্রিপ সম্ভব না। দিনে তিন-চার হাজার লোক গেলে পুরোটা পথজুড়ে প্রতি ২ মিটারে গড়ে একজন মানুষ থাকার কথা। সেটা কি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়?
আমরা যেদিন গেছি আমাদের পিছনে ৬-৭ জনের আরেকটা দল গেছে। গাইডসহ সব মিলে সেদিন ২২-২৩ জন লোক হেঁটেছে ওই পথে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
কিছু ভ্রমণ গ্রুপের সাথে পরিচয় আছে। তাঁদের দেয়া তথ্য এরকমই ছিল। তবে আমার কাছেও বিশ্বাস যোগ্য মনে হয়নি ততটা। কারন ওরকম একটা যায়গায় কয়েকশ লোক গেলেও কয়েক হাজারই মনে হবে। তবে ওই কয়েকশ হলেও একই ব্যাপার। রাস্তার বারটা বেজে যাওয়ার কথা। যাই হোক। লিস্টে আছে। একদিন ঠিকই পৌঁছে যাব।
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
বাংলার পথে'র যে ভিডিওটা দিছেন ওই টুরটায় একমাত্র মেয়েসদস্য ছিলাম আমি জোশ একটা টুর ছিল। এবং একটা জোকও আমাকে কায়দা করতে পারেনাই । আমি শুধু সমস্যায় পড়ছি খাড়া টিলাটায় উঠতে নামতে ! তখনও ওখানে লোকজন সেভাবে যাওয়া শুরু করেনাই । এখনতো শুনছি দোকানপাট হয়ে গেছে !
দোকানপাট বলতে কি ভিড়ভাট্টা বোঝাচ্ছেন নাকি আসলেই দোকানপাট বোঝাচ্ছেন?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আসলেই দোকানপাট ! জঙ্গলের ভেতরে নাকি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চা বিস্কুট চিপসের দোকান খুলে বসেছে শুনলাম । পুরোটাই শোনা কথা অবশ্য ! আপনারা কবে গিয়েছিলেন ?
আমরা গেছি ২২ জুনে। কলাবন পাড়ার পরে কোনো দোকান নেই। আমরা বরং ভাবছিলাম মাঝপথে পানি, ফার্স্ট এইডের কোনো দোকান থাকলে অনেকের সুবিধা হতো।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
দারুণ, চলতে থাকুক এমন, হর হামেশাই!
facebook
ন্না! ন্না! ন্না! 'এমন' আর চ্চাই না!
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
খুবই ভালো হয়েছে। আচ্ছা আঁকাইন কী সারাদিন/রাত অফিসেই থাকে?
...........................
Every Picture Tells a Story
বলতে গেলে সেরকমই।
এইবার কিন্তু আপনার পালা। পোস্ট দেন জলদি।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
...........................
Every Picture Tells a Story
প্রথমে ছবিগুলোতে চোখ বুলিয়ে গিয়েছিলাম এবং একটা জাঝা মেরেই ক্ষান্ত ছিয়েছিলাম। পরে রসিয়ে রসিয়ে (নাকি খুলনার ভাষায় বলবো চুনিয়ে চুনিয়ে বা চুনোয় চুনোয়) পড়লাম আর ছবি দেখলাম। দারুন সুন্দর জায়গা, দেখলেই বোঝা যায়। আর বর্ননাগুনে তা আর্ও সুন্দর হয়ে ওঠে।
আমি কিন্তু প্রথমে জলকেলিরত আপনাদের উচ্ছাস দেখে ভেবেছিলাম লেখার শিরোনামে হয়তো টাইপিং মিসটেক হয়ে গিয়েছে! ভেবেছিলাম ওটা হামহামে হুলুস্থুল না হয়ে হবে হাম্মামে হুলুস্থুল।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
এতটাই সাবলীল ভাষা আর চমকপ্রদ ঘটনাবলী যে পোস্টের আকার সেভাবে নজরেই পড়ে নি! দারুণ লাগল পড়ে। অভিজ্ঞতা বটে!
আসলেই দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। তুমি না গিয়ে ভালো করেছ। আস্ত পা নিয়ে ফিরতে পারতে না।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা বলতে হবে। আমি জোঁক খুব ভয় পায়। একেবারে নীরবে বসে বসে খেতে থাকে রক্ত। এই পার্ট ছাড়া বাকিটা কষ্টের হলেও আনন্দের। আশারাখছি সুযোগ বুঝে ঘুরে আসার।
ছবিগুলো একেবারে জোস ।
আসলেই দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। জোঁককে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দুতিনটা জোঁক মিলে কতটুকুই বা রক্ত খাবে?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
দুইটা হাতির ছবি লাগবে। আমি দুইবার "এটেম" নিয়েও শেষ করতে পারলাম না
আশা করি তৃতীয় দফায় শেষ করব
বিশ্বাস করুন একবার দুইটা হাতির ছবি দিতে চাচ্ছিলাম। পরে দেখলাম কেউ কেউ গড়গড়িয়ে পড়ে ফেলছেন। তাই আর দিইনি।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
তাদের আর কী দোষ, তারা যুবাপোলাপান, গড়গড়িয়ে পড়ে যাবে। আমি বুড়ো হচ্ছি, গড়গড়িয়ে পড়লে তো ব্যাক টু স্কোয়ার (হাসপাতাল)
বড়ই সুন্দর
_____________________
Give Her Freedom!
দারুণ।
গত রোববার বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে নিরীহ একটা ট্রেকিং করে এসেছি, জঙ্গল ঘন ছিল কিন্তু ঝামেলাবিহীন।
এই হামহাম যাত্রাতে সাপের দেখা পাওনি? ছবি দেখে তো জায়গাটাকে সাপদের রিসোর্ট মনে হলো। অল্প পানির স্রোতের আশেপাশে প্রচুর সাপ থাকার কথা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
সাপ নাকি আছে, কিন্তু আমরা পাইনি। সাপের কথা আগে থেকে কেউ বলেও দেয়নি, তাই সেটা নিয়ে কোনো ভয় ছিলো না।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
বর্ণনা বেশ আর ছবিগুলো অসাধারণ
একবারের জন্য হলেও হামহামে সদলবলে যেতে চাই।
হিল্লোল
গেলে সদলবলেই যাওয়া উচিৎ।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
নীড়পাতায় ছুডু হাতী দেইখা ডরাই নাই। ভিতরে আইসা দেখি না ডরাইয়া ভালৈ কর্সি---
জোঁকের কামড় ভালো না লাগলেও লেখা আর ছবি ভাল্লাগসে--
পথিক পরাণ
জোঁক যারা ভয় পান তারা সম্ভবত কামড় ভয় পান না, জোঁকের স্পর্শ ভয় পান। জোঁকের কামড় তো টেরই পাওয়া যায় না। পিচ্ছিল স্পর্শটাই (তাও যদি ধেড়ে জোঁক হয়) একটু ইয়ে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
বড় লেখা কই! ছবিগুলোর জন্যেই যা পাতা বড় হয়ে গেল!
নজুভাই, ভাবী, মৃদুল দা, বৌদি, পান্থ দা, দিশা, তুমি, মনামি, সৌরাত্রি, মাতিস মিলিয়ে মুস্তাফিজ ভাই আর ভাবীর ঘাড়ে চেপে মাঝরাতে মুক্তাগাছা যাওয়ার কথা মনে পড়ল!
আর কখনো যাওয়া হবে না! জীবন!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আহারে
...........................
Every Picture Tells a Story
কেন যাওয়া হবে না? তুমি কি আর ফিরবে না নাকি? মুস্তাফিজ ভাই তো কথা দিয়েছেন দেশে এসে আমাকে সুন্দরবন নিয়ে যাবেন।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আশাবাদী হইতে ইচ্ছে করে। কিন্তু চিন্তা করলে অবাস্তব মনে হয়! মুস্তাফিজ ভাই সময় নিয়ে ফিরবেন, সেই সময়ে আমিও থাকব আর সবাই ফ্রি থাকবে, তারপর যাওয়া হবে... নাহ! কষ্ট কল্পনা মনে হয়!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ওহ্, দারুণ অ্যাডভ্যাঞ্চারাস্। ভাল লেগেছে ছবি ও বর্ণন।
খুব ভালো লাগলো ছবি, এবং লেখা। জোক সম্পর্কে কিছুই জানতাম না, জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
আসমা খান, অটোয়া
পড়তে পড়তে আর ছবি দেখতে দেখতে মনে হল যেন কিছুক্ষনের জন্যে ফিরে গেলাম ৪০ বছর আগের চা-বাগানের জীবনে।
সাইফ শহীদ
আমার এক খালু আছেন চা-বাগানে। তার ওখানে বেড়াতে গেলে ট্রেকিং হয়। তবে সেগুলো অবশ্যই এতটা অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ নয়।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
পাথরের উপরে এমনে ক্ষ্যাপ ধরে বসে আছেন ক্যান!
আপনের শিরোনামটা দেখে বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত লেখক শ্রীমান জটায়ুর কথা মনে পড়ে গেলো।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হ!
ক্যান আবার? ছবি তুলতে!
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আহারে আমার বাড়ির প্রায় আশ পাশ দিয়ে গেলেন, অনেক বছর যাওয়া হয়না
লেখাটা পড়ে ফেললাম একটানে । লেখা বড় মনে হয়নি মোটেও । ছবিগুলো অসাধারণ । তবে সত্যি কথা হোল সবকিছু চাপিয়ে আমার মনে গেঁথে গেছে শুধু জোঁক আর জোঁক ! তাই আমি নেই ওতে । পড়েই দুধের স্বাদ ঘোলে যতটুকু মিটে আরকি
সে কী! জোঁকে তেমন ভয়ের কিছু নেই তো!
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
জোঁকের সাথে সেই ছোটবেলা থেকেই জানাশোনা। আমরা সাধারনত কোন কাপড় অথবা কাগজ পুড়িয়ে জোঁকের কামড়ের জায়গায় ছাই দিয়ে দিতাম। কিছুক্ষন পর রক্তঝরা বন্ধ হয়ে যেতো।
এতো দুর্গম না হলেও প্রতি বর্ষায় বাড়িতে অনেক জোঁকের কামড় খেতে হতো।
লেখা+ছবি দুর্দান্তিস।
(এখন এমন জায়গায় থাকি যে মাঠি দেখতে গেলে ক্ষেতে যেতে হয়।)
ফ্রুলিক্স
রক্তক্ষরণ থামানোর কোনো উপায়ই জানা ছিলো না। এরপর কখনো জোঁকের খপ্পরে পড়লে ছাই-থেরাপি কাজে লাগিয়ে দেখব। ধন্যবাদ।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
পোস্ট অতি পছন্দ হয়েছে। একটুও বড় লাগে নাই। কিন্তু...এত্ত কষ্ট ! আর জোঁক !!! যত ভালো জায়গাই হোক আমাকে হাতি দিয়েও কেউ টেনে অইখানে নিতে পারবেনা এইটা নিশ্চিত।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আপনি তাহলে ঝিরি-প্রধান পথে যান। ওই পথে জোঁক পাবেন না। সাঁতার জানেন তো?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
হ।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
দারুণ! বেশ তাড়াতাড়ি পড়ে ফেললাম! তেমন বড় মনে হলো না তো!
ঝিরি-পথ শব্দটার অর্থ কি?
ঝিরি বেয়ে যে পথ সেটাই ঝিরি-পথ। ঝিরি হলো ছোট জলপ্রবাহ। একে ছরা/ছড়া-ও বলা হয়। ইংরেজিতে Stream।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
বিরাট অ্যাডভেঞ্চার করে আসলেন দেখি!
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
সে আর বলতে!
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য আর মন্তব্য করার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
দুর্দান্ত!
এই না হলে ট্রাভেলগ!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
অনেক আগে এই লেখাটা পড়সিলাম, আইজকা আবার পরলাম। আইজকা চাকরি ছাইড়া দিলাম। যেহেতু এবার বেকার মানুষ(আপাততঃ) তাইলে হাহাম এর জোঁকগুলান রে দেইখা আইতে হয়। নো জোক!!
নতুন মন্তব্য করুন