মে মাস। ব্যক্তিগত, সামাজিক, পেশাগত অন্তর্দ্বন্দ্বের অথৈ সময় চলছে। কোনো এক সকালে হঠাৎ এসএমএস- "তোর ইমেইল আইডি দে। এক্ষুনি।"
দিলাম। দিয়ে বসে থেকে কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলাম- "তারপর?"
জানলাম জার্মান দূতাবাস থেকে ব্লগার খোঁজা হচ্ছে। তারা কিছু নাম চেয়েছে। বন্ধুটি আমার নাম সেখানে মনোনয়নের জন্য দিয়েছে।
কেন? কীসের জন্য?
উত্তর এলো কদিন পর মেইলে। জার্মান সরকার প্রতি বছর Visitors Programme-এর আয়োজন করে বিভিন্ন দেশ থেকে সংশ্লিষ্ট মানুষজনকে দাওয়াত দিয়ে থাকে। এ বছরের বিষয়বস্তু তথ্য অধিকার, সাইবার স্বচ্ছতা ইত্যাদি। এবারের অতিথি ব্লগাররা। আরো ভেঙে বলতে গেলে যেসব দেশে বাকস্বাধীনতা হুমকির মুখে সেসব দেশের ব্লগাররা। এমন কিছু দেশ থেকে জনা চল্লিশেক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ ব্লগার নিয়ে এবারের কর্মসূচী পালনের ইচ্ছে তাদের। যাওয়া-আসা মিলে সাত দিনের কর্মসূচী। খরচাপাতি জার্মান দূতাবাসের। বাছাইপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে লাঞ্চের আমন্ত্রণ পেলাম গুলশানের এক রেস্তোরাঁয়।
নির্ধারিত দিনে যথাসময়ে যথাস্থানে হাজির হলাম। কিছুক্ষণ পর এলেন শরৎ চৌধুরী। তিনি সামহোয়্যার ইন ব্লগের ব্লগার ও মডারেটর। মেইলের সূত্রে তার অংশগ্রহণের ব্যাপারে জানা ছিলো। পূর্বপরিচয় ছিলো না। আরেকজন ব্লগারের লাঞ্চে যোগ দেওয়ার কথা ছিলো। ব্যস্ততার কারণে তিনি সাক্ষাতের স্থানকাল বদলে নিয়েছিলেন। সে বেলায় সেখানে আমরা দুজনই। নিজেদের মধ্যে পরিচয়পর্ব সারতে সারতে জার্মান দূতাবাসের প্রতিনিধি ম্যাথিয়াস চলে এলেন। খেতে খেতে আড্ডাচ্ছলে আলাপ হলো বাংলাদেশের ব্লগিং সংস্কৃতি, রাজনীতি, শাহবাগ, তথ্য স্বাধীনতা এবং আরো অনেক কিছু নিয়ে। লাঞ্চ থেকে ফিরে ম্যাসিয়াসের মেইল পেলাম দু পাতার প্রশ্নপত্রসমেত। তাতে কিছু দাপ্তরিক তথ্য আর ব্লগসম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের উত্তর লিখে পাঠাতে হবে। উত্তরপত্র জার্মানিতে যাবে। সেখান থেকে বাছাইকৃত ব্লগারদের তালিকা আসবে।
পরীক্ষা দেওয়ার দিন পেছনে ফেলে এসেছি অনেক আগেই। সচলেও শীতনিদ্রায়। ঘুমন্ত কীবোর্ডে ঠেলেঠুলে, কজনের মাথা খেয়ে প্রশ্নপত্রের খটমট তথ্য (জার্মানি সম্পর্কে কী জানি, জার্মানির প্রতি আমার মনোভাব কেমন ইত্যাদি) আর অচেনা রচনা (আগামী দশ বছরে আন্তর্জালের বিবর্তন কেমন হবে বলে আমার ধারণা) প্রস্তুত হলো। জার্মানিতে কী কী দেখতে করতে আগ্রহী জানতে চাওয়া হয়েছিলো। মূল আয়োজনশেষে ব্যক্তিগত ঘোরাঘুরির সুযোগ রয়েছে সেটাও জানানো হয়েছিলো। জার্মানিতে আমার স্বজন ও সুজন নেহাত কম নয়। এক সপ্তাহের প্রোগ্রামশেষে জার্মানিতে বসবাসরত কাছের মানুষগুলোর সাথে দেখা করব বলে জানালাম।
উত্তরপত্র পাঠানোর কয়েকদিনের মাথায় হঠাৎ অচেনা ফোন। আরো কিছু প্রশ্ন। সেই মুহূর্তে কী কী উত্তর দিয়েছিলাম মনেও নেই।
এরপর অপেক্ষার পালা। পুরো ঘটনাপ্রবাহ এতটাই অপ্রত্যাশিত যে এখান থেকে কী প্রত্যাশা করা যেতে পারে সেটাই জানা নেই। কামলাজীবনে পা রাখার পর ব্লগে আমার পদচারণা অনিয়মিত। ব্লগার হিসেবে রীতিমতো কোলে তুলে জার্মানি নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বলা চলে পরাবাস্তব।
জুনের শেষভাগে জার্মান প্রতিনিধির চরমপত্র এলো। আমি এবং শরত চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছি। পাসপোর্ট, ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ আর এটাসেটা তথ্যের পাশাপাশি তারা ব্যক্তিগত ভ্রমণের সময়সীমা জানতে চেয়েছেন। সে অনুযায়ী ভিসা আর স্বাস্থ্যবীমার ব্যবস্থা করবেন তারা। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে শরত চৌধুরীকে প্রোগ্রামশেষে দেশে ফিরতে হবে। এদিকে হাতে গোনা যে কজন কাছের বন্ধুর সাথে সম্ভাব্য জার্মানযাত্রা নিয়ে আলাপ করেছিলাম তাদের দুয়েকজন পরামর্শ দিলো শুধু জার্মানিতে না ঘুরে ইউরোপের অন্য কিছু দেশ দেখার। এ যাত্রা তাই জিজ্ঞেস করে নিলাম জার্মানির বাইরে পা রাখার সুযোগ আছে কি না। থাকলে কদিনের জন্য। যা জানলাম তা হলো জার্মান দূতাবাস আমাকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের শেঞ্জেন ভিসা দেবে। এ সময়ের মধ্যে শেঞ্জেনভুক্ত যেকোনো দেশে আমি ভ্রমণ করতে পারব।
এবার পাশার দান উলটানোর পালা। মাসটা জুন। প্রোগ্রাম অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে। প্রস্তুতির মাঝে দিন চল্লিশেক সময়। সামনে ইউরোপের মানচিত্র। এবং আমার প্রাপ্য বার্ষিক ছুটি সাকুল্যে এক মাস। এবার?
(চলবে?)
মন্তব্য
জীবনের সেরা একমাস
...........................
Every Picture Tells a Story
একদম!
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
শিরোনামে দুইটা সিনেমার নাম, লেখাটাও সিনেমার মতো আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসলাম। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অভিজ্ঞতা সিনেমার থেকেও চমকপ্রদ। জানি না ঠিকমতো তুলে ধরতে পারব কি না।
নাম খানিকটা বদলে দিলাম। অন্তর্যাত্রার থেকে অবাকযাত্রা বেশি জুতসই ঠেকছে। আর হঠাৎ বৃষ্টির জায়গায় পটভূমি।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
অপেক্ষায় ছিলাম এই লেখাটির।
আমিও।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
কত বছর পরে লিখলেন?! যাক জার্মানরা আপনার শীতনিদ্রা তো ভাঙ্গাতে পারলো।
১ বছর ২ মাস ৩ সপ্তাহ
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। তবে দেখি শুরুর সাথে সাথেই শেষ পরের পর্বের অপেক্ষাতে থাকবো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এটুকু যে নাজিল হয়েছে তাতেই আমি ধন্য বোধ করছি। ভেবেছিলাম লেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ফিরে আয় বাবুল, পরের পর্ব ছাড়
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আইচ্ছা
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
facebook
হে হে হে
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
অনুষ্ঠানে আপনার যোগদান, সফল, সার্থক, আনন্দময় হোক।
বিষয়ান্তর : এইখানে ব্লক মারতে পারবেননাতো!
ধন্যবাদ। ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ খোলা ময়দানে টেনে আনার ব্যাপারটা ভালোভাবে নিলাম না।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
অনুগ্রহ করে বার্তা অপশনটা দেখেন।
আপনাররর লেখা 'চড়ুইভাতি'তে করা আমার মন্তব্য : লিখেছেন প্রৌঢ় ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০২/০৭/২০১৩ - ১২:৩১পূর্বাহ্ন)
তিড়িংবিড়িংকে যে কার্পেটটার উপর রাখা হয়েছে, সেটা খুবই সুন্দর, ঠিক লেখাটার মতই।এবং আপনার হৃদয়টার মতও বটে!
ইকি! এইটুকুনি কেন?? বাকী কই?
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
এই যে- http://www.sachalayatan.com/bunohaash/53281
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
...........................
Every Picture Tells a Story
নতুন মন্তব্য করুন