ছায়াসঙ্গী-ক
খালামনি ------ তুমি এ কথা প্রতিদিনই বল ------ আজ আমি একা শুব ------- যাও তো -------
বন্ধ হয়ে যায় রিমোর দরজা। ফিরে চলে বড়বোনের আশ্রয়ে রায়না।---------
তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে। শরীর প্যাচপ্যাচ করছে ঘামে। কোথায় যেন টক করে শব্দ হয়। চমকে উঠে রায়না। স্পন্দন টের পায় নিজের ভেতর। নড়ার শক্তিও যেন হারিয়ে গেছে। পাশে শোয়া রিয়ার অবয়বকে দেখার জন্য তাঁকাবার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছে। অসহায় এক নীরব ক্রোধ জেগে ওঠে নিজের মাঝে। শক্ত হাত পা যেন কার দাস হয়ে ওর সাথে প্রতি রাতেই বিট্রে করে চলে। ঘৃনা হয় হাত-শরীর-পা-বুক ---- আর চেতনার উপর। এই চেতনায় দীর্ঘদিন বাস করে অন্য কেউ। আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে প্রতি রাতের নীরব যন্ত্রণা হয়ে ক্রমশই ক্ষত করে নিচ্ছে একটু একটু করে জীবনের স্পন্দনগুলো।
ছেলেবেলা থেকে রায়না আবিষ্কার করে ওর মন কোন একজনের দাস। যাকে একই সাথে ঘৃণা করে আর ভয় পায়। ঠিক কবে --- কেন ---- কিভাবে ওর দাস হয়েছে সে তা কিছুতেই মনে করতে পারেনা। স্মরণ হবার পর থেকে টের পায় কে যেন ওর সমস্ত স্বত্ত্বাকে আবৃত করে রেখেছে। দিনের আলোর ঔজ্জ্বল্যে অনেক জনের মাঝে যে নিরাপদ দূরত্বে অপেক্ষা করে। ঠিক একাকী হবার সাথে সাথে এক তীক্ষè------- ধারালো অবয়ব নিয়ে অনুসরণ করে ওকে। সর্পিল গতিতে একেবেঁকে ঠান্ডা শরীরের পরশ শীতল স্রোতের মতন রায়নার প্রতি লোমকূপে বুলায়। এক অদেখা দাঁতের হাসি টের পায় রায়না একাকীত্মের প্রতিটি মূহুর্তে।
ঢিপ করে উঠে বুকটা। কান পাততেও ভয় লাগছে। রিয়া আড়মোড়া ভাঙে। ধপ করে পিশাচটা কোথায় যেন নাই হয়ে যায়। বাস্তবে ফিরে আসে রায়না। রায়নাও নড়ে চড়ে শোয়। হাত পা সবই এখন রায়নার দাস। দাঁতে দাঁত চেপে পা গুলোকে উপরে তুলে ধুপ করে বিছানায় ছাড়ে। রিয়ার ঘুম চোখে বিরক্তি আনন্দের কম্পন তোলে রায়নার বুক জুড়ে।
খালামনি----- থামো তো-----কি করছো এত রাতে?
রিয়ার কথাকে অগ্রাহ্য করে রায়নার চোখে খুশির ঝিলিক। তারপর পরম মমতার সুরে বলে
রিয়া--- একটু পানি খাওয়াবি?
রিয়ার শব্দ না পেয়ে পাশে তাঁকিয়েই ধপ করে ওঠে বুকটা। আবার ঘুমন্ত রিয়া। কথা বলল একেবারে জাগ্রত-------- সে কিভাবে এত তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পারে ? ভাবতেই চরম বিতৃষ্ণায় নিজের উপর নিজের অভিশাপ নেমে আসে শত শত। একসময় ক্লান্ত হয় মন। ক্লান্তি নামে চোখের জলের ধারা হয়ে। ক্লান্ত মাথার কোষগুলো নির্জীব হয়ে একসময় জাগরনী ঘুমের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।
ক্লান্তিকর রাত্রি পার হয়ে আবার এক আনন্দময় সকালের সূচনা রায়নার জীবনে। লাফ দিয়ে উঠে বসে। ক্লাস শুরু সকাল আটটা থেকে। এর মাঝেই পৌনে সাতটা বাজে। দ্রুত হাতে একের পর এক কাজ করে মেশিন হাত পা গুলো। ব্রাশ করতে করতে রাত্রির অবশ শরীরের ভাবনাগুলো অবিশ্বাস্য মনে হয় নিজের কাছে। কিন্তু রায়না জানে এর প্রতিটি সত্য-------- আবারও চেতনার ঐ পিশাচ ফিরে আসবে ঠিক নির্দিষ্ট সেই সময়ে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আয়নায় চোখ বুলায়। আজ প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস ----- বীনুকে ডিপার্টমেন্টের কাছে আসতে বলা হয়েছে।
বেছে বেছে সাইকোলজি নিয়েছে সাবজেক্ট পছন্দের সময়। এনিয়ে বাড়িতে কম ঝড় বয়নি---- ইকোনমিকস-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সূযোগ পাওয়া মেয়ে কিনা সাইকোলজির মতন এক আধপাগলা সাবজেক্ট পড়বে। ভাতিজা ভাতিজি গুলোও হাসাহাসি করেছে পাগলের ডাক্তার বলে বলে। কিন্তু রায়না অনেক ভেবে -------- অনেক মনের সাথে যুদ্ধ করে বিষয়টি নিয়েছে। কারণ ও একবার লড়তে চায় ঐ পিশাচটির সাথে। টেনে হিচড়ে খামচে ওকে নামাতে চায় ঘাড় থেকে।
মন্তব্য
চলুক...
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
সাইকোলজি বিষয়টির প্রতি রয়েছে আমার ভীষণরকম দূর্বলতা। মানুষের মন যে কত বিচিত্র তা নিয়ে ভাবতে বসলে কোন কূলকিনারা পাই না।
ভাল লিখেছেন। চালিয়ে যান। পরের অংশের অপেক্ষায় থাকলাম।
মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। পরের পর্বে কি বুঝতে পারব?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
চালিয়ে যান, জমে উঠেছে
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ইহা এন্টেনার বাহির দিয়া চলিয়া গেলো...
নতুন মন্তব্য করুন