গল্প বলা যাবে কিনা একে এখন আমি সন্দিহান। কারণ অনেকের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত সাধারন একজনের কিছু একান্ত মানসিকতার অভিব্যক্তি। হয়তো আমার লেখার নবীনতার কারণে অস্পষ্টরূপ ধারণ করেছে। তবু বাকি অংশটি সাহস করে দিয়ে দিলাম।
ছায়াসঙ্গী---খ
ছেলেবেলা থেকে ভূতের ভয় ওর। মা বাবা ভাই বোন সবাই জানে। ছেলেবেলায় যেখানে ভরসার ছাদ হয়ে দেখা দিত পরিজনেরা। তা ক্রমাগতই ওদের কাছে বিরক্তিতে পরিণত হয়েছে কালে কালে । এখন ভয়ের কথা শুনে কেউ হাসে----- কেউ বা ধমকায়-------- কেউ বিরক্তিতে নাক বেঁকিয়ে বলে ন্যাঁকা। সব উপহাস সহ্য করে রাত্রির জমকালো অন্ধকারে আকুতি নিয়ে অপেক্ষা করে কারও পাশে এসে শোয়ার। বাড়িতে থাকতে মায়ের পাশের জায়গা দখল করে বাবাকে বসবার ঘরে বিতাড়িত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার ইচ্ছা আর শক্তি নিয়ে ঢাকায় এসে বড়বোনের বাসায় উঠেছে। আর শুরু হয়েছে একের পর এক ঝামেলা। বড়বোনের ছেলে মেয়েগুলো এ্যাডাল্ট হয়ে যাবার পর একা শুতেই বেশি ভালবাসে। রুম শেয়ার করলেও বিছানা শেয়ার করাটা ওদের কাছে চরম বিরক্তির। খালামনি আপন হলেও ওর সাথে শোয়া? বিরক্তিতে ভ্রু কুচকায় রিয়া। বিশাল বাড়িতে যাদের দুই দুইটা রুম খালি পড়ে থাকে তাদের কাছে বিরক্তিটা অস্বাভাবিক নয় তা বেশ ভাল করেই বোঝে রায়না। কিন্তু --------।
ক’দিন ধরে রায়নার ঘুম হারাম। রিয়া হঠাৎ স্কলারশিপ পেয়ে গেছে। সবার আনন্দের মাঝে ওর বুক দিয়ে শীতল স্রোত নেমে গেছে। ঠিক করে আর এ বাড়িতে আর নয়। রিয়া দেশের বাইরে চলে যায় একসময়। একাকী রাত কাঁটাবার ভয়ে হলমুখো হয় রায়না। হলে গিয়ে আরেক ঝক্কি তে পড়ে। ছোট খাটে ডাবলিং করে থাকাটা হলের মেয়েদের কাছে এ্যাবসার্ড একটা ব্যাপার। তবু রাত্রি নামার সাথে সাথে যেন পাগলামো বাড়ে রায়না। শুধু নিজের রুমই নয়------ বন্ধু------- বন্ধুর বন্ধু-----তাদের কাছে গিয়ে গল্প করার ছলে একসাথে থাকার আবদারে ওকেই ভয় পেতে শুরু করেছে সবাই। আড়ালে ওরা কি সব বলে বলে মুখ টিপে হাসে আর সামনে সামনে বলে
তোমার বিয়ে প্রয়োজন আসলে----- সাইকোলজিতে পড়------ এ কথা উদ্ধার করতে পারনি?
আঘাত পেলেও মেনে নিয়ে পুনরায় ওর শকুন চোখ আতিপাতি করে খুঁজতে থাকে কারও পাশে থাকার এক চিলতে জায়গা। এরমাঝে হলের এক ঘটনাবহুল অধ্যায় পুনরায় ওকে বাধ্য করে বোনের বাড়ির আশ্রয় নিয়ে থাকতে।
একরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। পেটের তলায় তীব্র চাপে নতি স্বীকার করে আস্তে করে উঠে। সশব্দে বিছানা থেকে নামে। যেন ওর শব্দের গমকে অন্যের ঘুম ভাঙে। আশাতীত ভাবে পাশে শোয়া শিউলি নড়েচড়ে শোয়। এটুকু অবলম্বন করে সাহসে বুক বাঁধে। আলতো করে হেঁটে যায় বাথরুমের গেটে। বাথরুমের লাইটের সাথে ঘরের লাইটও জ্বালায় হাত বাড়িয়ে। পাশের বেডের রাবেয়া জেগে বিরক্তিতে লাইট নেভাতে বলে। পাংশু মুখ আর ভয়ার্ত হাতে ঘরের লাইট বন্ধ করে। দরজা খুলেই বাথরুমে গিয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে কম সময়ের মাঝে বেরিয়ে হুড়মুড়িয়ে ঘরে আসতে গিয়ে অনুভব করে এক বাঁধন। ঠিক গলার কাছটায়। তীব্র চমকে হাত বাড়িয়ে সরাতে গিয়ে টের পায় অনড় বাঁধনটি। হৃৎপিন্ডের স্বপ্রনোদিত চাহিদায় নিঃশ্বাসের সাথে সাথে যেন দৃষ্টিও ফিরে আসে রায়নার। বোঝে যে মশারির দড়ি। মাথা নামিয়ে বিছানার কাছে আসতেই হোঁচটÑ ধাক্কা লাগে শিউলির গায়ে। আচমকা ঘুমে এ ধাক্কা শিউলির গলা চিড়ে সামান্য শব্দ বের করতেই রায়নার অনুভবে আসে অশরীরি আত্মার উপস্থিতি। যে ঠিক পেছনে। তীব্র আর তীক্ষè চিৎকারে পুরো হল কেঁপে ওঠে। অন্ধকার ঘরে শিউলি উঠে বসে দেখে রায়নার ফেনা তোলা মুখ। ছিটকে উঠে লাইট জ্বালায়। একের পর এক ফর্মালিটি পার হয়ে রায়নার গন্তব্য স্থল নির্দিষ্ট হয় বোনের বাসায়।
বাসায় আসতেই ওর চেয়ে পনের বছরের ছোট ভাতিজার দাঁত কপাটি বের করা হাসির বিদ্রুপ বাণ ক্ষত করে রায়নাকে। বোনের বকা-------- দুলাভাইয়ের অভয় দেয়া হাসি বিষদাঁত হয়ে ওকে ক্রমাগত রক্তাক্ত করতে থাকে। একা থাকার পরিকল্পনা নেয় রাত্রি বেলা। মধ্য রাতেই এর পরিণাম টের পায় বাড়ির লোকজন। পরদিন বোন বিরক্তমুখে হুজুরের বাড়ির তাবিজ হাজির করে রায়নার সামনে। স্মার্ট রায়না লুকিয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়। দুলাভাই উপদেশ দেয় ডাক্তারবাড়ি যাবার। কিন্তু উপদেশ পর্যন্তই। কেউ আর মাথা ঘামায় না বিষয়টা নিয়ে। সামান্য এক ভূতের ভয়---- ছোঃ-------।
প্রকৃতির বিধান মেনে সারাদিনের আলোকোজ্জ্বল দিন শেষে আরও রাত নামে। জমাট অন্ধকার আর ঐ হতচ্ছারা চাঁদকে ভেংচি কেঁটে ঘরের জানালাগুলোয় হাত বাড়ায় রায়না বরাবরের মতন। ঠিক ঐখানেই কে যেন হাসছে-------- ওরা কি দু’জন---- তিনজ’ন না দশজন------ আর ভাবতে চায় না রায়না। ঠাস ঠাস শব্দে বন্ধ করে জানালা। ঘাড়ের খুব কাছে কার যেন নিঃশ্বাস। আলোর নগরী-----জেগে থাকা অনেক মানুষের উপস্থিতিতে পিছু তাঁকায় রায়না। কোথাও কেউ নেই ------- শুধু শূন্যতার বাতাস ছাড়া। বেরিয়ে এসে এক রুম থেকে আরেক রুমে যেতে যেতে রায়নার চেতনা জানায় করিডোরে কে হাঁটে------- ও নাকি ওরা? থমকানো মন আর চমকানো মুখ কোনভাবে তাঁকিয়ে দেখতে পারে না প্রকৃতির সত্যটাকে। অথর্ব আর ক্লান্ত মন অসহায় আক্রোশে ক্রুদ্ধ গর্জন করতে থাকে। যে গর্জন কেউ দেখে না। অসম্ভব শান্ত মুখের চোখ দু’টি শুধু জান্তব কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ায়------ যেখানে ভয়ের কাছে পরাজিত গ্লানি------ চারপাশের চাপা হাসির কুন্ঠিত অবয়ব--------- ভয়ংকর মূহুর্তের উৎকন্ঠা -------- স্রষ্টার প্রতি ঘৃণা আর নিজের প্রতি ক্রোধের আক্রোশ!
পনের বছরের ছোট রিমোর দরজার সামনে লজ্জিত---হীন--------কুঞ্চিত রায়না চেতনার অলীক মিথ্যার সত্যকে জেনেও এসে দাঁড়ায় রাত্রিকালে।
‘প্লিজ একটু শুই তোর পাশে আজ রাতে------- কাল ডিস্টার্ব করব না------ প্লিজ--------!’
মন্তব্য
রায়নার অবস্থা দেখে আমার ই তো আতঙ্কিত .......
দেরি না করে একে পরের পর্বে সাইকিয়া ট্রিষ্টের কাছে পাঠান।
সেকন্ড লাস্ট প্যারাটা
বেশি ভালো লেগেছে।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আপনমনেই হাসলাম।
আপু, এটুকু বলতে পারি, আপনার লেখার কিছু কিছু বিষয় অনুভব করতে পারি। আমার কাছে ভাল লেগেছে লেখাটা। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে শুধুমাত্র ভূতের ভয়ে কেউ এতটা কাবু হয়ে যাবে! আরেকটু টুইস্ট ঢুকিয়ে দেন, জম্পেশ হবে!
এরে ধরে নাকের মধ্যে পোড়া মরিচ ঢুকিয়ে দিলেই এইসব ভূত দৌড়ে কুল পাবে না...
আমাদের এক কবি আছেন। মোস্তাক আহমাদ দীন
তার প্রতিটা শব্দের পরে তিনটা করে ডট থাকতো
আমরা তাকে ডাকতাম ডটডট কবি
রায়নার অবস্থা দেখি শোচনীয় ! ভাল হইছে, চলুক, চলুক
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
- মাথার ওপর দিয়ে যায় নি।
সাইকিক গল্প। দেশীয় হুমায়ূন কাকুর "মিছির আলি ও রায়নার রাত্রিকালীন বায়না" কিংবা আংরেজী "এক্সফাইলস- দ্য নাইট ডিজায়ার" টাইপের মনে হচ্ছে। তবে ভাষাবুননে উপভোগ্য দারুণ।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
জটিল! হাসতে হাসতে গড়াগড়ি!
গল্প ভাল লেগেছে!!
আসলে একটা বয়সে 'ক্লাস সিক্স, সেভেন, এইট' এই সময় অনেকেই এইরকম বেশি বেশি ভয় পায়।
---
স্পর্শ
বর্ণনা দারুণ লেগেছে/
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
নতুন মন্তব্য করুন