০
ঘুম নিয়ন্ত্রণক যন্ত্রটার কাঁটা প্রায় শূন্য ছুঁইছুঁই করছে। আর পাঁচ সেকেন্ড বাকি।
মহাজাগতিক তরঙ্গ, বর্হি-আক্রমণ ইত্যাদি নিরোধক দশ ইঞ্চি কাঁচের শামিয়ানার ওপারে বিচ্ছুরিত আলোর অরণ্য। একটা উল্কা ঈগল হয়ে ঠোঁকরে যেতে চায় নিরাপত্তা-কাঁচ; নিজে পুড়ে খাক হয়ে যায় নিমেষেই।
১
ধীরে ধীরে চোখ মেলে সে।
ঘুম নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটা অনেক কাজের- বিশেষ করে অর্ণবের মতো নিদ্রাহীনতায় ভোগা মানবদের জন্য। সময় বেঁধে দেয়া যায় কতক্ষণ তন্দ্রায় থাকবে, কতক্ষণ নিদ্রায় থাকবে। যন্ত্রটি শ্রাব্যসীমার নিচে শব্দ-তরঙ্গ সৃষ্টি করে মস্তিষ্কের বাম পাশের নিউরণসমূহকে কর্মশীতল করে দেয়। হালকা মেজাজের আলোক বিচ্ছুরণ চোখের পর্দায় সৃষ্টি করে মুদে থাকার তাড়না।
বিছানার ওম ছেড়ে নেমে আসে অরণ্য।
পূর্বনির্ধারিত সিকুয়েন্সে গান বাজছে- পাঁচ মিনিট চলবে। এর মাঝে কেন্দ্রীয় তথ্যনিয়ন্ত্রক কম্পিউটার থেকে সর্বশেষ উপাত্ত জমা হবে হাতের কব্জির চামড়ার নিচে আটকানো তরঙ্গ বিশ্লেষক জৈবিক চাকতিটিতে। সব ধরনের তথ্য হালনাগাদ করে চাকতিটি।
চাকতিটি সার্বজনীন- সবার বাম হাতের কব্জির চামড়ার নিচে থাকে। থাকতে হয়, রাখতে হয়। কেন্দ্রীয় তথ্যনিয়ন্ত্রক কম্পিউটারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখে বিশ্লেষক যন্ত্রটি। যে কোন সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারে এটি পরিচয় নিশ্চিত করে। কোন মানবশিশু জন্ম গ্রহণ করলে তৃতীয়দিনে এই বিশ্লেষক চাকতিটি শরীরে রোপণ করে দেয়া হয়। ফাঁকিবাজির সুযোগ-ও আছে অবশ্য, কিন্তু ধরা খেলে আন্তর্ছায়াপথ নৈতিক নীতিমালা লঙ্ঘনের দায়ে বৃহষ্পতির চাঁদে নির্বাসন দেয়া হয়; যে একবার গিয়েছে সেই জানে মর্মব্যথা।
অরণ্য তরঙ্গস্নান করে শরীর জীবাণুমুক্ত করে নিল।
২
ল্যাবে ঢুকতেই চোখে পড়ল ল্যাব-পরিচালক অনন্ত আবিই-০৯২৮৩৭৪৬৫ এর সাথে কথা বলছে। অনন্তের মুখশ্রী দেখে মনে হলো মেজাজ খারাপ। ভারী কাঁচের কারণে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আবিই-০৯২৮৩৭৪৬৫ এসেছে পাশ্ববর্তী ছায়াপথ এন্ড্রোমিডার NGC 185 এর সুদূর একটি গ্রহ থেকে। তৃতীয় শ্রেণীর বুদ্ধির অধিকারী। সে নাইট্রোজেন ব্যবহার করে শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য। নিম্নশ্রেণীর প্রাণীগুলোকে সনাক্ত করা হয় সঙখ্যাবাচক কোডিঙের মাধ্যমে। অরণ্য অবশ্য ছোট্ট একটা নাম দিয়েছে আবিই-০৯২৮৩৭৪৬৫-কে: 'গুটু।' সে অরণ্যের সহকারী, থাকে অরণ্যের ল্যাবের পাশেই।
হালকা শব্দ করে কামরায় প্রবেশ করল অরণ্য। গুটুর উপর থেকে চোখ না সরিয়েই অনন্ত বলল, 'পাঁচ সেকেন্ড দেরী হয়েছে।'
'হে হে। আগে আসলে মনে হয় গুটুরে ধমকানির দৃশ্যটা ধারণ করে রাখতে পারতাম।'
'আমি কাউকে ধমকাই না।' অনন্ত স্বীকার্য পাঠের মতো করে বলল। সে চোখ সুরু করে তাকিয়ে অরণ্যকে দেখল। পুরু চশমার ওপাশে দু'পাটি নদী জেগে উঠল, সেখানে স্রোত নেই।
'কেন দেখা করতে বললে? তাড়াতাড়ি বলো। আমাকে আজকে আরেকটা সেটাপ দিতে হবে, সময় নেই।'
'তোমার কাজ অন্য একটি দল চালিয়ে যাবে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য তোমার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।' অনন্ত থেকে শ্বাস নিল। 'এই ল্যাবে।'
অরণ্য ঝুঁকে অনন্তের মুখের কাছাকাছি এলো। 'ঘটনা কী? সাঙঘাতিক কিছু?'
'আমরা পৃথিবীতে রওয়ানা দিচ্ছি আগামী পাঁচ মিনিটের মাঝেই।'
'সেকি। আমার কিছু ব্যক্তিগত কাজ আছে। আমি পারব না এই মূহুর্তে গ্রহ ত্যাগ করতে।'
'কী ধরনের কাজ শুনি বাপু। লিস্ট দিয়ে যাও, সমাধান হয়ে যাবে।'
'ইয়ে মানে..না না আমি পারব না। বললামই তো। তাছাড়া আমার চেয়ে-ও ভালো বিশেষজ্ঞ এই ল্যাবেই আছে- তুমি জানো।'
অনন্ত বাতাসে হাত ঝাঁকাল, 'অরণ্য, পৃথিবীর অনেক বিপদ। মানুষের অনেক বিপদ। মহামারী লেগেছে।'
অরণ্যের শরীরে একটা শীতল স্রোত অনুভব করল। তার পৃথিবী। তার জন্মস্থান!
'আমাকে সব খুলে বলো।'
অনন্ত উঠে দাঁড়াল। সাড়ে ছয় ফিট শরীরে এটুকু মেদ নেই এই বয়েস পঞ্চাশ উত্তীর্ণ শরীরে। 'নিচে নেমে শাটল রকেট ইস্টিশনে আসো। কথা হবে যাত্রাপথে।'
অরণ্যকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে বের হয়ে গেল। তার পিছু পিছু গৃহপালিত ভৃত্যের মতো গুটু-ও।
৩
অরণ্য এসেছে পৃথিবী থেকে। বয়েস তখন পাঁচ কী ছয়! মানব শিশুদের মাঝে যাদের বুদ্ধিমত্তা সাধারণের চেয়ে বেশি তাদেরকে গ্রহান্তরে পাঠানো হয় ছোট্টবেলাতেই- বুদ্ধিমত্তার সুষ্ঠ বিকাশের জন্য। পৃথিবী এই ২১৮৯ সালে এখনো সজীব। এখনো কিছু কিছু মানবী গর্ভধারণ করে আবেগ নিয়ে। অরণ্যের সবকিছু মনে নেই। তার মায়ের একটা শর্ত ছিলে যে অরণ্যের শৈশবস্মৃতিটুকু তার স্মৃতিপ্রকোষ্ঠে রোপণ করে দিতে হবে- অনেকটা ডিজিটালি সিডিতে তথ্য সঙরক্ষণের মতো। অরণ্য অইটুকুই মনে করতে পারে।
তার মনে আছে একটি নারীকে।
আর একটি ঘটনা- একটি ছোট্ট শিশু ছুটে এসে দু'হাতে ছুঁয়ে দিচ্ছে একটি নারীর গালের উঠোন। যেন প্রথম শীতল স্পর্শের অনুভূতি মায়ের শরীরে সঞ্চারিত করে দিচ্ছে। মা আদুরে ভঙ্গিতে তার নাকটা টিপে দেয়।
আরো অনেক স্মৃতি আছে। অরণ্য ভাবতে পারে না নিখাত- এটুকু ভাবতেই চোখ ছলছল হয়ে আসে!
গুটুকে সে বলেছিল। ব্যাটা বিশ্বাস করে নি। অবশ্য বিশ্বাস না করারই কথা। তবে সে কথা দিয়েছিল একদিন ঠিক ঠিক তাকে পৃথিবী দেখিয়ে আনবে- নিজে-ও আবার জন্মস্থানটুকু দেখে নিবে। মা নিশ্চয় এখন বেঁচে নেই; কিঙবা কোন প্রৌঢ় মহিলা। অথচ পৃথিবীতে যাওয়া মানে পাঁচ বছরের সঞ্চয়টুকু বিসর্জন দেয়া। অরণ্য জানে খরচ আসলে এত বেশি নয়- কিন্তু কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা এই বিশাল দর হাঁকিয়েছে মানুষকে বিমুখ করার জন্য; যেন কেউ খরচের ভয়ে না যেতে চায়!
৪
হালকা অ্যালকোহল মেশানো কফিতে চুমুক দিয়ে অরণ্যের মনে হলো সে নেমে যাবে। কী হবে নতুন করে পৃথিবী দেখে। তার চেয়ে বরঙ তার যেটুকু স্মৃতি আছে তাহা অটুট থাকুক। একটা ভার্চুয়াল পৃথিবী বানিয়ে নেয়া যেতে পারে।
'বুঝলে..।' অনন্তের হাতে একটা ই-খেরোখাতা। সে আবোলতাবোল লিখে রাখে এটাতে। অরণ্য একবার চুরি করে পড়েছিল বলে সে কী রাগ! 'তোমাকে কেন বাছাই করলাম..'
'আমি জানি। আচ্ছা, তোমার কি মনে হচ্ছে না যে তুমি আমার অনুভূতিকে কাজে লাগাচ্ছো।'
'তোমার বলা উচিত ছিল 'তোমাদের।' আমি ব্যক্তিবিশেষ এই অভিযান পরিচালনা করছি না, আমার-ও উর্ধ্বতন লোক আছে।'
'মানে, তোমরাই..জেনিটিক্যালি পরিবর্তিত মানুষগুলো। যারা..যারা ...।'
'হা হা। হাসালে। পরিবর্তন তোমার-ও করা হয়েছে। হয়তো আমাদের একটু বেশি মাত্রায়। টিকে থাকার জন্য। শখে নয়। তুমি নিজে-ও এসব জানো।'
'হুম, জানি। সে কারণেই বেশি ক্ষোভ আসে না!'
'যাই হোক, আসল কথায় আসা যাক।'
অনন্ত বাইরে থাকায়। স্নানঘরের এলেবেলে জলবিন্দুর মতো ছড়িয়ে আছে গ্রহ-নক্ষত্র সমষ্টি। শাটল রকেট উজান-বাতাসের মতো ঘেঁষে ঘেঁষে চলে যায় তরঙ্গপ্রবাহ বিলিয়ে।
'তার আগে একটু ইতিহাস বলা লাগে। তুমি তো জানোই ১৯৯০ সালের দিকে অর্থ্যাৎ প্রায় দুইশত বছর আগে পৃথিবীর মানুষরা 'মানবিক জিনোম প্রকল্প (Human Genome Project) হাতে নেয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল ডিএনএ ও মানব শরীরে যত জিন আছে সবগুলোকে সনাক্ত করা এবঙ তার বৈশিষ্ট্য, কার্যাবলি সঠিকভাবে জানা। দুটি ব্যাপার স্বীকার্যের মতো মনে করা হতো তখন:
১. ডিএনএ হলো জীবনের মৌলিক ভিত্তি ও উপাদান। এতে মানুষের যাবতীয় বঙশগতি ও আনুষঙ্গিক তথ্য কোডেড হয়ে থাকে।
২. জিনগুলোর কার্যাবলি ও সম্পূর্ণরূপে জানতে পারলে মানুষ কৃত্রিমভাবে প্রাণ বা জীবন সৃষ্টি করতে পারবে।'
অনন্ত অরণ্যের দিকে তাকাল, যেন সমর্থনের আশায়। 'আগ্রহ পাচ্ছি, বলতে থাকো। যদি-ও অনেক তথ্য আমার জানা।'
'অবশ্য তোমার জানার কথা। শুধু লিনার শরীরের মাপঝোক জানলে তো হবে না।' অনন্ত আলতো হাসে, নৈঃশব্দিক। 'যাই হোক। পরবর্তীতে কিছু নতুন গবেষণা ধারণা পাল্টে দেয়। যেমন ধরো:
১. ডিএনএ একা নিজে থেকে নিজেকে কপি বা নকল করতে পারে না। সে অন্যান্য জৈবিক উপাদান, অণু, কোষ ইত্যাদির সাহায্য নেয়।
২. ডিএনএ বঙশগতির সকল তথ্য রাখে বটে কিন্তু এটাতে প্রোটিন আনজাইমের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়।
৩. এবঙ সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো যে ডিএনএ জীবনের সৃষ্টি করে না! বরঙ, জীবনই ডিএনএ সৃষ্টি করে! ডিএনএ তথ্য ধারণের একটি বিশ্বস্ত মাধ্যম কেবল।'
৫
অনন্ত হাঁ করে শ্বাস নেয়। আরেক কাপ কফি দেয়ার জন্য বার্তা পাঠায়। 'কিন্তু ততদিনে একটা সর্বনাশ হয়ে গেছে। তৎকালীন একটা রাষ্ট্র..রাষ্ট্র কী জানো তো?' অরণ্য জানে কী জানে না সে তোয়াক্কা না করে অনন্ত বলেই যেতে লাগল, 'যুক্তরাষ্ট্রের একদল জীববিজ্ঞানী এইডস মোকাবেলার জন্য কিছু জেনেটিক প্রকৌশলের আশ্রয় নেয়। তারা মানুষের এক ধরনের এনজাইমকে এইচআইভি ভাইরাসের ডিএনএর মাঝে স্থাপন করে। ফলে ভাইরাসের জেনেটিক পরিবর্তন হয়। ফলাফল প্রত্যাশিতই ছিল। পরিবর্তিত ভাইরাসগুলো এইচআইভি ভাইরাসের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করে! এবঙ পরবর্তীতে টিকা আবিষ্কার করা হয়। কিন্তু এইচআইভি ভাইরাসের জীবনচক্র ছোট হয়ে আসে। ফলশ্রুতি তারা দ্রুত বিবর্তিত হওয়ার সুযোগ পায়...'
'বুঝতে পারছি। ধরো, আগে গড়ে এইচআইভি ভাইরাস বাঁচতো আধঘন্টা এবঙ একটি মানুষের গড় আয়ু ৭০ বছর হলে সে ৩০৬৬০০ টি জীবনচক্র লাভ করে। কিন্তু আয়ুসময় অর্ধেক হয়ে গেলে অর্থ্যাৎ ১৫ মিনিট হয়ে গেলে ৬১৩২০০ টি জীবনচক্র পাবে। ফলে সে বিবর্তনের সুযোগ পাবে বেশি..।' অরণ্য সাঁড়া দেয়।
'দ্রুত বুঝতে পারার জন্য আমি তোমাকে পছন্দ করি। যা বলছিলাম, এইচআইভি ভাইরাসেরই একটি পরিবর্তিত রূপ ফুলিঙ্গ-৪৫০ ভাইরাসটি। এটি মানুষকে আক্রমণ করলে ১০ ঘণ্টার মাঝে লাশে পরিণত করে। ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, আক্রমণিত হলে কিনা তুমি বুঝবে না যদি না পরীক্ষা করো। কারণ কোন উপসর্গ নেই! পৃথিবী এখন লাশের সমুদ্রে পরিণত হচ্ছে...'
'আর আমার দায়িত্ব তা বানচাল করা? যেহেতু আমার জন্মস্থান পৃথিবীতে আমি আবেগের বশে আরো বেশি সচেতন হব!'
'আগেই বলেছি তোমাকে আমি কেন পছন্দ করি।'
কফি নিয়ে এসেছে একটি নারী যন্ত্রমানব। 'আপনাকে এক মিনিটের মাঝে এটি শেষ করতে হবে। কারণ দুই মিনিট পরে আমরা একটা হাইপার-ড্রাইভ দিচ্ছি। নিরাপত্তার জন্য আপনাদের ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হবে।'
চলে গেল সে।
যেমন এসেছিল।
'এখন থেকে চিন্তা শুরু করে দিতে পারো। আমাদের হাতে সময় বেশি নেই। পৃথিবীর সর্বস্থান আক্রান্ত হয়ে নি এখনো। ভাইরাসটিকে না গায়েল করতে পারলে..'
কেবিনের আলো পরিবর্তিত হচ্ছে। অরণ্য কিছু না বলে চোখ বন্ধ করল। অবশ্য না করলে-ও সে এমনিতেই দশ সেকেণ্ড পরে ঘুমিয়ে যেত!
৬
ঘুম ভেঙে দেখল বাইরে অপত্য রোদ। জানালার শার্সির ওপারে অচিন মেঘ দোল খাচ্ছে। এক পলকেই বুঝে গেল পৃথিবীতে আছে।
পরিষ্কার হয়ে নিয়ে তথ্য যাচাইয়ে নামল।
মা মারা গেছে। আত্মহত্যা করেছিলেন। পুরো বাড়িতে আগুন লাগিয়ে। থাকতেন একটি বনের মাঝে একলা।
অবশ্য ভালোই হয়েছে। এত সময় পরে দেখা হলে হয়তো মুখখানি ম্রিয়মান লাগতো। বস্তুত সময় এখনো আবেগ নষ্ট করে দেয়।
পৃথিবীর আন্তর্গ্রহিক তথ্যাগার মতে, ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সঙখ্যা এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার, মৃত। প্রতি এক ঘন্টায় মারা যাচ্ছে তিনজন করে। এই সঙখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
অনন্ত বাইরে বসে আছে। রোদ লাগাচ্ছে নগ্ন শরীরে। পুরো এলাকা জুড়ে খণ্ড খণ্ড বনের মতো, মাঝখানে কিছুটা খোলা জায়গায় বাড়িঘর- এরকম করে ক্রমশ।
সে নিরবে এসে বসে পাশে।
'ঘুমিয়ে ছিলে বলে জাগানো হয় নি।'
'জানি। আচ্ছা ধরো, আমরা ব্যর্থ হলাম। কী ঘটবে পৃথিবীর ভাগ্যে?'
'তুমি ব্যর্থ হবে না। আমার বিশ্বাস আছে।' অনন্ত উঠে দাঁড়ায়। পা ফেলে। ঘাসে।
অরণ্য বসে থাকে। এখন হাতে প্রচন্ড অবসর। অনন্ত কি প্রশ্নটি এড়িয়ে গেল? বসে বসে সে ঠিক করল একা একা ঘুরে দেখবে আশপাশ।
বিশাল প্রছন্ন অট্টালিকাগুলো শিশ্নের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আকাশের পানে মুখ করে। ওপারে সূর্য এখনো এক তালা রোদের তীর্থ।
অরণ্য ইতস্তত্ব হাঁটে। পায়ের ব্যায়াম হয়। অনেকদিন পর এমনিতেই শরীর থেক মেদ ঝরে যায়।
মা কি বেঁচে থাকলে তাকে চিনতো? এক ঝলকে? অরণ্য কান্না পায়। সে দুখানি কান্না তুলে রাখে বুকপকেটে।
৭
'কল্পনা করে নাও।' দেয়ালের দিকে মুখ করে আছে অনন্ত। অভিব্যক্তি বোঝা যাচ্ছে না।
'পারছি না। সে জন্যই তোমার কাছে জানতে চাচ্ছি।'
'সে কথা তোমার না জানলে-ও চলবে। কাজ শেষ করো তাড়াতাড়ি। আমাদের দ্রুত ফিরতে হবে। বেড়াতে আসি নি আমরা।'
অরণ্য রক্তচোখে তাকাল। 'অন্তু, আমার কাজের জন্য সব তথ্য না ফেলে আমি কিছুই করব না। তুমি আমাকে জানো। এবঙ আমি তাই বুঝাচ্ছি। এদিকে তাকিয়ে কথা বলো, আমি অদৃশ্যে কথা বলছি না।'
অনন্ত তাকায়। তার হাসি পায়। তার কোন সন্তান নেই। মানুষের সন্তানগুলো অবুঝ।
কিছুক্ষণ কেউ কথা বলে না। নৈঃশব্দের ছায়া উপনিবেশ গড়েছে এখানে।
'দু'টো উপায় আছে। পৃথিবীর সুস্থ মানুষগুলোকে স্থানান্তরিত করা। কিন্তু এটি এখন সম্ভব নয়। ৪ বিলিয়ন মানুষকে স্থানান্তরিত করা সময়সাপেক্ষ যা আমাদের নেই, তাছাড়া ব্যয়বহুল। অন্য উপায় হলো পৃথিবীকে উড়িয়ে দেয়া। যেন এই ভাইরাস মহাশূন্য বিস্তারিত হতে না পারে।'
অরণ্যের মনে হলো কেউ তার সামনে পারমাণবিক পিস্তল ধরে আছে। 'কিন্তু, তোমরা তা করতে পারো না। আন্তর্ছায়াপথ নীতিমালা....'
'নীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি সর্বদা নিয়ম মেনে চলে না!'
আর কোন পথ নেই।
অরণ্য বিছানায় শুয়ে আছে। রাত।
আর মিনিট পাঁচেক পরে ঘুমিয়ে পড়বে নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের কারণে। রাগে তার মনে হচ্ছে অনন্তকে মেরে ফেলতে। সে আসার সময় তাকে একটা জৈবরাসায়নিক অস্ত্র দিয়েছিল- পৃথিবীতে কোন ঝামেলা হলে ব্যবহার করতে। যদি-ও এসব ব্যবহারের অনুমতি নেই; অনন্ত বলেছে সে জিম্মাদার। সেটা দিয়ে মেরে ফেলা যায়। নিজের অস্ত্রে নিজে মরুক- ব্যাটা।
নিজের অস্ত্র!
৮
সাত দিন পর।
'আমি সমাধান পেয়েছি।'
'আমি জানতাম। তুমি পারবে।'
'বলা চলে একই প্রক্রিয়া। এবার ভাইরাসটিকে ক্লোনিঙ করা হবে, তবে এর মাঝে মানুষের এনজাইমটি- যেটি এখন ডিএনএতে তথ্য আকারে সঙরক্ষিত আছে তার পরিবর্তন করা হবে। ফলে নতুন ক্লোনড ভাইরাসটি হবে একই ঘরনার কিন্তু মানুষের জন্য ধনাত্নক। এই ভাইরাসগুলোকে গুচ্ছ আকারে বিভিন্ন টিউবে সঙরক্ষণ করা হবে। জীবনধারণের সব উপাদান কেড়ে নেয়া হবে। যখন মূমুর্ষ হয়ে যাবে তখন খাদ্য হিসেবে দেয়া হবে ফুলিঙ্গ ভাইরাসটি। যেহেতু, যে কোন জীবের মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বা আচরণ নির্ধারণ করে পরিবেশ ও বঙশানুক্রমে পাওয়া তথ্যাবলি- কিন্তু এখানে ভাইরাসগুচ্ছের মাঝে একটি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে। আমরা আশা করতে পারি দ্বন্ধটা মানুষের জন্য উপকারী হবে। আরো বিকল্প উপায় আছে-'
'যা বললে তা আমার কাছে তেমন জমে নি, অন্য কিছু......'
'আমরা এন্টি-ফুলিঙ্গ তৈরী করতে পারি। মানুষের যে এনজাইমটি পূর্বে ব্যবহার করা হয়েছিল তার আয়নাছবি (মিরর ইমেজ) তৈরী করা হবে। কোডিঙ এর কারণে এটি হবে মূলত ভাইরাস বিধ্বঙসী। তবে..।'
'তবে কী?'
'এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। অন্তত পৃথিবীর সময় প্রেক্ষাপটে....'
'অর্থ্যাৎ, কিছু লোক মরবেই।'
'আমি হলে 'মরবে' শব্দটা ব্যবহার না করে অন্যকিছু বলতাম। যাগ্গে, তোমার মতো আধা-মানব ভাষিক ভুলবাল করবেই।'
'হে হে। তোমার রসিকতা বোধ দেখি এই সময়ে-ও তুঙ্গে! যাই হোক, তোমার কি মনে হয় না যে কিছু প্রাণের বিনিময়ে আমরা পুরো পৃথিবীটাকে বাঁচাতে পারব?'
'আমাদের সচেতন হতে হবে। ফুলিঙ্গ-৪২০ মানুষকে আক্রমণের সময় এক ধরণের তরঙ্গ নির্গমন করে। আমি একটা যন্ত্রের নকশা করেছি- যন্ত্রটি ভাইরাস-সৃষ্ট তরঙ্গের মতো কিন্তু বিপরীত অ্যামপ্লিটূড বিশিষ্ট তরঙ্গ সৃষ্টি করবে অনবরত। ফলশ্রুতিতে বিনাশধর্মী তরঙ্গ ব্যতিচার (Destructive Wave Interference) সৃষ্টি হবে এবঙ মানুষ রক্ষা পাবে। অনন্তপক্ষে সর্তক হতে পারবে। তাছাড়া আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করেছি।'
'বলে যাও। শুনছি।'
'ভাইরাসটি কিন্তু লক্ষ্মণ দেখায়। তবে যেহেতু আক্রমণ করলে মানুষ তাড়াতাড়ি মরে যায় সে উপলব্ধি করতে পারে না। তাছাড়া লক্ষ্মণগুলো গৌণ।'
'কী রকম?'
'হালকা হাত কাঁপে। চোখ লাল হয়। তবে এসব তো প্রত্যেক দিন প্রায় হয়। তাই অনেকের নজরে পড়ে না।'
'যাই হোক। যন্ত্রটার নকশা দিয়ে দাও। আমি বিশেষ অনুমোদনে উৎপাদনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।'
'আমি ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় তথ্যকেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন যাই। ঘুম পাচ্ছে।'
অনন্ত কি একটু চোখ সরু করল? করুক গে।
৯
স্থান: অনন্তের খাস কামরা। সে মিনিট দুয়েক আগে পৃথিবী থেকে এসে পৌঁছেছে। জামা-কাপড় না খুলেই কাগজ কলম টেনে নিল সে। এখনই অভিযানের রিপোর্টটা লিখে ফেলতে পারলে কাল অফিসে না গেলে-ও চলবে।
কলম চালাতে গিয়ে সে টের পেল তার হাত কাঁপছে। তবু-ও সে বাক্যটি শেষ করল। আয়নার সামনে গিয়ে তাকাল। ভ্রমণক্লান্তির ছাপ পড়েছে মুখে- সেসব ম্রিয়মান করে উজ্জ্বল হয়ে আছে দু'টি রাতুল চোখ- যেন একেকটি লোহিতবামন!
মন্তব্য
খুব ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে খুব পোক্ত লেখকের লেখা। আপনার আরো লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
(আমার জানায় ভুল থাকতে পারে তবে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব/তথ্যে কিছুটা অসংগতি আছে বলে মনে হয়।)
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কয়েকটি প্লট মাথায় আছে, লিখে ফেলব'খন।
সাই-ফাই লেখকরা একটা আতঙ্কে ভুগেন- বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ভুল ব্যাখ্যা হয় কিনা। আমার মনে হচ্ছে আপনার চোখে কিছু ধরা পড়ল। আলোকপাত করলে ভালো হয়। পরবর্তী সম্পাদনায় কাজে লাগবে। বিশেষ ধন্যবাদ।
----------------------------------------
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
----------------------------------------
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
প্রথমেই বলে নিই, লেখাটা ভাল লাগল।
আমি সাই-ফাই এর বিশাল ভক্ত। তাই একেবারে লাফ দিয়ে এসে লেখাটা পড়লাম। আপনার লেখার ভঙ্গীটা দারুণ। দুর্দান্ত কিছু অভিব্যক্তি চোখে পড়ল যেমন,
বা
এবার কিছু বানান নিয়ে কথা। আমি নিজেও বানান ভুলের ভুক্তভোগী। তারপরেও আমার চোখে কিছু কিছু বানান ও বাক্যে অসঙ্গতি ধরা পড়ল। সেগুলো এখানে বলার চেষ্টা করছিঃ
আর লেখার মাঝে বিজ্ঞানও নিয়ে কিছু প্রশ্ন ছিল।
সে আরেক দিন হবে নাহয়।
ভাল থাকুন। ভাল লিখুন।
প্রথমত, নিবিষ্ট পাঠের জন্য অনেক ধন্যবাদ, অনিকেত।
বাঙলা সাহিত্যের সাই-ফাইগুলোর ভাষা 'ধরো তক্তা, মারো পেরেক' টাইপ মনে হয়। চেষ্টা রয়েছে নিজের মতো করে লিখতে। আমার কিছু গল্প আছে, অনেকটা সেই ঢঙে লিখতে চেয়েছি।
ং এর বদলে আমি সবসময় ঙ ব্যবহার করি! আমার পূর্ব লেখাগুলো দেখতে পারেন। উচ্চারণগত মিলের কারণে এবঙ আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি পরাশ্রয়ী বর্ণ (যেমন: ঁ, ং, ৎ ইত্যাদি) পাশ কাটিয়ে যেতে। ঙ এর ব্যবহার কিন্তু নতুন কিছু নয়। মহাত্মা হুমায়ুন আজাদ 'বাংলাদেশ' না লিখে বাঙলাদেশ লিখতেন। আমি একটু বেশি মাত্রায় করি। এছাড়া, জ্ঞানী ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাঙলা বর্ণমালা থেকে কিছু বর্ণ বাদ দিতে চেয়েছিলেন। আমি কিছু কিছু বর্ণের ক্ষেত্রে একমত।
যাই হোক, টাইপোগুলো সুযোগ পেলে ঠিক করে নিব (অতিথি লেখক হিসেবে আমার সম্পাদনার সুযোগ নেই!)
বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন থাকলে করে ফেলুন। পরষ্পরের বোঝাপড়াকে পাকাপোক্ত করে নিতে পারি আমরা।
মঙ্গল হোক আপনার।
----------------------------------------
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
----------------------------------------
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
এছাড়া, বাঙলা একাদেমীর বানান রীতি অনুসারে 'ঙ' ব্যবহার গ্রহণযোগ্য। তবে প্রচলিত ও প্রথাগত ঝোঁক হলো 'ং' ব্যবহার করা।
আর সবাই তো চায় প্রথা ভাঙতে।
----------------------------------------
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
----------------------------------------
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
দুর্দান্ত লেখা হয়েছে। লেখার ধরন, বিজ্ঞানের ব্যবহার, সবটাই ভালো হয়েছে। কিছু অপরিষ্কার বর্ণনা আছে, যেমন ভাইরাসের তরঙ্গ নির্গমন অংশটি। আর গল্পের শেষাংশটি হয়ত আরেকটু বড় হত। অনন্তের প্রাথমিক যে সমাধানটি, তা কিছুটা বেখাপ্পা লাগলো। হয় স্থানান্তর নয়তো পুরো গ্রহ-ধ্বংস, এমন দ্বিমিক সিদ্ধান্ত দেবার কোনো কারণ পাওয়া যাচ্ছে না। আবেগহীন মানুষ বিচার বিশ্লেষণ করে আরো অনেক উপায় বের করতে পারার কথা।
ভালো লাগলো পড়ে।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
তরঙ্গ নির্গমন অঙশটি আমার কল্পনাপ্রসূত। আচ্ছা, এমন কী হওয়ার নয় যে ভাইরাস আক্রমণের সময় একপ্রকারের আলোক কিঙবা শব্দ তরঙ্গ নির্গমন করবে। যেহেতু ফুলিঙ্গ অনেক বিবর্তিত এবঙ অনেক ক্ষুদ্র তাকে আমি ইলেকট্রনের মতো দেখেছি; কল্পনায়। আপনি তো জানেনই যে ইলেকট্রন বস্তুকণা ও তরঙ্গ উভয় সত্ত্বাই ধারণ করে।
উপায় অনেক আছে। কিন্তু অনন্ত দু'টির প্রস্তাবনা করেছে অরণ্যের আবেগকে কাজে লাগানোর জন্য, যেহেতু সমাধানটা তাড়াতাড়ি হয়। অরণ্য বিশ্বাস-ও করেছিল যেহেতু অনন্ত ভাবলেশহীন অর্ধ-মানব। গল্পে কিছুটা হিন্টস ছিল। আমি বিশ্বাস করি পাঠক গল্পের বিকাশক, তাই পাঠকের চিন্তার স্থান রাখি বা রাখতে চেষ্টা করি।
ধ্রুব, বিনীত বোধ করছি। শুভেচ্ছা।
----------------------------------------
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
----------------------------------------
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
এতো বিশাল গল্পের পর মন্তব্য ছোট হয়ে গেল। ভালো থাকবেন।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
পাঠ করেছেন বলে ধন্যবাদ।
----------------------------------------
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
----------------------------------------
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
গল্প ভালো লাগলো। নানা প্রশ্ন অবশ্য রয়ে গেলই।
বানান আর বিজ্ঞান দুই নিয়েই কথা ছিলো, সে অন্যরাই বলে দিয়েছেন ও দেবেন।
আমি আরেক দিক নিয়ে একটু বলি, কেমন? সংলাপগুলো কেমন আড়ষ্ট ঠেকছে, মনে হচ্ছে যেন কোনো বিদেশী ভাষা থেকে অনুবাদ করা হচ্ছে।
এই অংশটা দেখুন,
'তোমাকে কেন বাছাই করলাম..'
'আমি জানি। আচ্ছা, তোমার কি মনে হচ্ছে না যে তুমি আমার অনুভূতিকে কাজে লাগাচ্ছো।'
'তোমার বলা উচিত ছিল 'তোমাদের।' আমি ব্যক্তিবিশেষ এই অভিযান পরিচালনা করছি না, আমার-ও উর্ধ্বতন লোক আছে।'
'মানে, তোমরাই..জেনিটিক্যালি পরিবর্তিত মানুষগুলো। যারা..যারা ...।'
'হা হা। হাসালে। পরিবর্তন তোমার-ও করা হয়েছে। হয়তো আমাদের একটু বেশি মাত্রায়। টিকে থাকার জন্য। শখে নয়। তুমি নিজে-ও এসব জানো।'
'হুম, জানি। সে কারণেই বেশি ক্ষোভ আসে না!'
'যাই হোক, আসল কথায় আসা যাক।'
কথাগুলো থেকে তেমন কিছু বোঝা যাচ্ছে না সেটা একটা ব্যাপার, কিন্তু সেটার থেকেও বড় ব্যাপার হলো কেন জানি মনে হচ্ছে বিদেশী একটা কথনভঙ্গী!
আশা করি কিছু মনে করলেন না!
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এখন বানান ভুল (বা টাইপো) সঙশোধনের উপায় নেই। তবে 'ঙ' সম্পর্কিত বানান এভাবেই থাকবে।
বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা অসঙ্গতি ধরা পড়লে বলে ফেলুন। উপকার হবে আমার।
জ্বি না, এটা কোন বিদেশী ভঙ্গী নয় কিঙবা অনুবাদ-ও নয়। লক্ষ্য করলে দেখবেন অনন্ত ও অরণ্য পরষ্পরকে 'ঠেঁস' দিয়ে কথা বলে। তাছাড়া, দু'টি বুদ্ধিমান ব্যক্তির কথাবার্তা তো আর 'খাইসি-করসি' টাইপ করে লেখা যায় না! তাহলে, গল্পের সিটিঙস নষ্ট হয় বা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গল্পে তো আর সব বিজ্ঞান বিশ্লেষণ করে বলা যায় না, তাই 'ইশারায় কাফি' একটা উদ্দেশ্য থাকে- সঙলাপগুলো তাই এরকম।
তুলি, অনেক ভালো লাগল আপনার মন্তব্য পেয়ে। আপনি চাইলে আলোচনা হতে পারে। মঙ্গলে থাকুন।
----------------------------------------
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
----------------------------------------
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
নতুন মন্তব্য করুন