অনুবাদ: লিওনার্ড ম্লোডিনো এবং স্টিফেন হকিঙের The Grand Design - ১

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি
লিখেছেন আশরাফ মাহমুদ (তারিখ: মঙ্গল, ২৫/০১/২০১১ - ৭:০৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মূল বই: The Grand Design (মহিমান্বিত নকশা)
মূল লেখক: লিওনার্ড ম্লোডিনো এবং স্টিফেন হকিং
=============================

প্রথম অধ্যায়: অস্তিত্বরহস্য (The Mystery of Being)

================================

আমাদের প্রত্যেকেই খুব অল্প সময়ের জন্য বেঁচে থাকি, এবং এই স্বল্প সময়ের মাঝে এই সমগ্র মহাবিশ্বের অল্প অংশই আমাদের পক্ষে দেখা বা অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়ে ওঠে। কিন্তু মানব প্রজাতি খুবই কৌতূহলী। আমরা বিস্মিত হই, আমরা উত্তর খুঁজি। এই কোমল-কঠোর পৃথিবীতে বেঁচে থেকে এবং উপরের সুবিশালতার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মানুষ বরাবরই নানা রকমের প্রশ্ন করে গেছে: আমরা যে পৃথিবীতে বেঁচে আছি সেটাকে কীভাবে বোঝা যাবে? এই মহাবিশ্বের মতিগতিই বা কেমন? বাস্তবতার প্রকৃতি কেমন? সবকিছু কোথায় থেকে এলো? মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে কি কোনো সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন ছিলো? আমরা সকলেই এইসব প্রশ্নাবলি নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করি না, তবে প্রায় প্রত্যেকই কখনো না কখনো এইসব নিয়ে মাথা ঘামাই।

গতানুগতিকভাবে এইসব প্রশ্ন দর্শনশাস্ত্রের পাঠ-এখতিয়ারে ছিলো, কিন্তু দর্শনশাস্ত্রের মৃত্যু হয়েছে।

দর্শনশাস্ত্র আধুনিক বিজ্ঞান বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞানের নানাবিধ উৎকর্ষতার সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে হালনাগাদ করতে পারে নি। ক্রমে বিজ্ঞানিরাই আমাদের একমাত্র এবং নির্ভরযোগ্য আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছেন। এই বইটির উদ্দেশ্য হলো সাম্প্রতিক সময়ের আবিস্কার এবং তাত্ত্বিক অগ্রগতির আলোকে পূর্বোল্লেখিত প্রশ্নগুলোর উত্তরানুসন্ধান। এইসব বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি আমাদের মহাবিশ্ব ও সেখানে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে এক নতুন ধারণার সম্মুখীন করেছে যেটা কিনা গতানুগতিক ধারণা থেকে অনেকাংশে ভিন্ন, এমনকি যদি দুয়েক দশক আগের অবস্থার সাথে মিলিয়ে দেখলে-ও ভিন্নতা চোখে পড়বে। যদিও এই নতুন ধারণার প্রথম খসড়াচিত্র প্রায় শতাব্দি খানেক পুরানো।

মহাবিশ্ব সম্পর্কিত গতানুগতিক ধারণা মতে বস্তুসমূহ একটি সুনির্ধারিত পথে পরিভ্রমণ করে এবং তাদের সুনির্দিষ্ট ইতিহাস আছে। কোনো নির্দিষ্ট সময়ক্ষণে আমরা তাদের অবস্থান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নির্ধারণ বা পরিমাপ করতে পারি। এই ধারণা দৈনন্দিন উদ্দেশ্যের জন্য কার্যকরী, কিন্তু ১৯২০ সালে দেখা গেলো যে এই চিরায়ত ধারণা ভৌত জগতের পারমাণবিক ও অতিপারমাণবিক স্তরের বিভিন্ন "অদ্ভুত" ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য কার্যকরী নয়। ফলে সেই সময় একটি ভিন্ন নির্মাণকাঠামো (framework) পরিগ্রহণ করার দরকার হয়ে পড়ে- কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা। দেখা গেলো যে অতিপারমাণবিক বিভিন্ন ঘটনার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা বেজায় রকমের নির্ভুল এবং যখন বৃহত্তর বস্তুসমূহের উপর প্রয়োগ করা হয় তখন চিরায়ত তত্ত্বের অনুমান বা ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। মনে রাখা দরকার যে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা এবং চিরায়ত পদার্থবিদ্যা ভৌতবাস্তবতার সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ধারণার উপর ভিত্তি করে ঘটে উঠেছে।

কোয়ান্টাম তত্ত্বকে নানাবিধভাবেই সূত্রবন্ধ করা যায়, তবে সবচে' সহজ বর্ণনা দিয়েছিলেন রিচার্ড (ডিক) ফাইনম্যান, যিনি কিনা ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির একজন বর্ণিল বিজ্ঞানি ছিলেন এবং মাঝে মাঝে কাছেরই একটা বস্ত্রমোচন ক্লাবে (strip joint) বাঙ্গো ড্রাম বাজাতেন। ফাইনম্যানের মতে, একটি সিস্টেমের কেবল মাত্র একটি সুনির্দিষ্ট ইতিহাসই নয় বরং সম্ভাব্য সব ইতিহাসই থাকতে পারে। আমাদের উত্তরানুসন্ধানের জন্য আমরা ফাইনম্যানের পদ্ধতিটি আরো বিশদভাবে ব্যাখ্যা করবো এবং এটি প্রয়োগ করে দেখবো যে মহাবিশ্বের কোনো একক ইতিহাস নেই, এমনকি কোনো স্বাধীন অস্তিত্বই নেই। অনেক পদার্থবিজ্ঞানির কাছে-ও ব্যাপারটা বৈপ্লবিক ধারণা বলে মনে হতে পারে! মনে হয় বটে, আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ই আমাদের সহজাত ধারণা সাথে খাপ খায় না। কিন্তু আমাদের সহজাত ধারণাসমূহ প্রতিদিনের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে ঘটে ওঠা, অত্যাধুনিক প্রযুত্তিলব্ধ পারমানবিক জগৎ বা আদি মহাবিশ্বের চিত্রের উপর ভিত্তি করে নয়।

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভবের আগ পর্যন্ত অনেকে ভাবতো যে সব জ্ঞানই সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব অর্থাৎ আমরা ইন্দ্রিয়াবলি দিয়ে একটা বস্তুকে যেমনটি অনুভব করি বস্তুটি তেমনই। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের চমকপ্রদ সাফল্য- যেগুলো ফাইনম্যানের ধারণার মতো ধারণার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত এবং আমাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার সাথে সাংঘর্ষিক- দেখায় যে বাস্তবতা আসলে এইরকম নয়। বাস্তবতার গতানুগতিক চিত্র তাই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সাথে খাপ খাওয়ার নয়। এই রকমের বিভ্রান্তি কাটানোর জন্য আমরা মডেল-নির্ভর বাস্তবতার (model-dependent realism) সাহায্য নিই। ব্যাপারটার মূল ধারণা হলো যে আমরা ইন্দ্রিয়তাড়িত হয়ে জগতের একটি কল্পিত মডেল মস্তিষ্কে বানিয়ে নিই। যখন এমন কোনো মডেল বিভিন্ন ঘটনাকে ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে তখন আমরা এই মডেলকে এবং এর সব গাঠনিক ও ধারণাগত উপাদানকে বাস্তবতার বৈশিষ্ট্য বা পরমসত্য হিসাবে মেনে নিই। কিন্তু দেখা যায় যে এইসব ঘটনাবলি অন্য মডেল দিয়ে-ও ব্যাখ্যা করা যায়, যেখানে ভিন্ন ঘরনার মৌলিক উপাদান এবং ধারণা ব্যবহার করা হয়। ধরুন, এমন দুইটি ভিন্ন মডেল একটি ঘটনা সম্পর্কে নিখুঁত ভাবে ভবিষ্যদ্বাণী বা অনুমান করতে পারে তখন বলতে পারবেন না যে একটি মডেল অন্য মডেলের চেয়ে বেশি বা কম বাস্তব, বরং আমরা যেকোনো একটি গ্রহণযোগ্য মডেলকে দ্বিধাহীনভাবে ব্যবহার করতে পারি।

সেই প্লেটো থেকে শুরু করে নিউটনের উৎকৃষ্ট থিউরী হয়ে আধুনিক কোয়ান্টাম তত্ত্ব পর্যন্ত, আমরা বিজ্ঞানের ইতিহাসে একের পর এক উন্নততর তত্ত্ব অথবা মডেল-ধারণা আবিস্কার করেছি। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে এই ধারা কি চলতেই থাকবে, নাকি একটি পরমতত্ত্বে গিয়ে থামবে- যে পরমতত্ত্বের সাহায্যে মহাবিশ্বের সকল বল ও পর্যবেক্ষণকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে, নাকি আমরা একের পর এক উন্নততর তত্ত্ব আবিষ্কার করে যেতেই থাকবো অর্থাৎ এমন কোনো পরমতত্ত্বই আবিস্কার করা সম্ভব হবে না যেটা উন্নয়ন-অসাধ্য হবে? এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর এখনো আমাদের হাতে নেই, বরং আমাদের কাছে এমন একটি তত্ত্ব আছে যেটি পরমতত্ত্বের অধিকতর কাছাকাছি; যার নাম এম-তত্ত্ব। এখনো পর্যন্ত এম-তত্ত্বই একমাত্র মডেল, যার এমন সব বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো একটি পরমতত্ত্বের থাকা উচিত এবং আমাদের পরবর্তী আলোচনা হবে অনেকাংশই এই এম-তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে।

সাধারণ বিচারে এম-তত্ত্বকে একক কোনো তত্ত্ব বলা যায় না। এটি বরং একটি তত্ত্বগুচ্ছ বা তত্ত্বের সমষ্টি, যেটার প্রতিটি সদস্য তত্ত্ব ভৌত ঘটনাসমুহের কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশকে বর্ণনা করে। ধরেন গিয়ে অনেকটা মানচিত্রের মতো। অনেকে জানেন পুরো পৃথিবীর ভূতলকে একটি একক মানচিত্রে পুরোপুরি দেখানো সম্ভব নয়। সাধারণত মানচিত্র তৈরিতে যে মারকেটর অভিক্ষেপণ (Mercator projection) ব্যবহার করা হয় তাতে উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে যতোই যাওয়া হয়, এলাকাসমুহ বড় থেকে আরো বড় দেখায় এবং উত্তর ও দক্ষিণ মেরুকে দেখানো যায় না।। তাই পুরো পৃথিবীর একটি নির্ভরযোগ্য মানচিত্র তৈরি করতে হলে কতগুলো ভিন্ন ভিন্ন মানচিত্র অংশ ব্যবহার করা হয়, যেখানে ক্ষুদ্রাংশগুলো পৃথিবীর একেকটি অংশকে নির্ভুল ভাবে প্রকাশ করে। ফলে মানচিত্রের অংশগুলো একে-অপরের উপর আপতিত হয় এবং যেখানে আপতিত হয় সেখানে উভয় চিত্রই একই এলাকা বর্ণনা করে। এম-তত্ত্ব অনেকটা এরকমই। এম-তত্ত্বের বিভিন্ন সদস্য তত্ত্ব দেখতে অনেক সময় একে অপর থেকে ভিন্ন মনে হলেও তারা মূলত একটি একক তত্ত্বের অন্তর্নিহিত বিভিন্ন অংশ। মূল তত্ত্বের এইসব বিভিন্ন রূপ যার একেকটি একেক সীমায় প্রযোজ্য, যেমন- যখন চলকের মান যেমন শক্তির পরিমাণ খুবই ছোট, তার জন্য রয়েছে একটি সদস্য তত্ত্ব, যেনো মারক্যাটর অভিক্ষেপণ থেকে পাওয়া পৃথিবীর মানচিত্রের বিভিন্ন অংশ, যে অংশে একাধিক মানচিত্র একে অপরের উপর আপতিত হলে-ও তারা একই অনুমান যোগায়। যেমন কোনো ভালো সমতল প্রতিলিপি বা মানচিত্র নেই যেটি কোনো আপতিত মানচিত্র ছাড়া পুরো ভূতল পুরোপুরি দেখাতে পারে তেমনি এমন কোনো একক তত্ত্ব নেই যেটি এককভাবে সকল পর্যবেক্ষণকে ব্যাখ্যা করতে পারে।

আমরা বর্ণনা করবো কীভাবে এম-তত্ত্ব সৃষ্টি বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নসমূহের উত্তর সরবরাহ করতে পারে। এই তত্ত্ব মোতাবেক, আমাদের মহাবিশ্বই একমাত্র মহাবিশ্ব নয়। বরং এম-তত্ত্ব মতে, একদম শূন্য থেকে বহু সংখ্যক মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিলো। তাদের সৃষ্টিতে কোনো অতিপ্রাকৃতিক শক্তি বা ঈশ্বরের অংশগ্রহণের প্রয়োজন নেই। বরং ভৌত সূত্রসমূহ মেনেই এই বহুসংখ্যক মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছে। বিজ্ঞান এইরকমই অনুমান করছে। প্রতিটি মহাবিশ্বেরই নানা ইতিহাস আছে এবং পরবর্তী কোনো নির্দিষ্ট সময়ে, যেমন সৃষ্টির সূচনা থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত, এরা সম্ভাব্য অনেক অবস্থাতেই থাকতে পারে। তবে এইসব অবস্থার বেশিরভাগই আমাদের পর্যবেক্ষিত মহাবিশ্ব থেকে সম্পুর্ণ আলাদা এবং কোনো প্রকার জীবনের জন্য প্রতিকূল হতে পারে। খুব কম মহাবিশ্বেই আমাদের মতো জীবনের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব। তাই আমাদের অস্তিত্বই যেসব সম্ভাব্য মহাবিশ্বে আমাদের অস্তিত্ব সম্ভব সেগুলোকে নির্দিষ্ট করে দেয়। যদিও মহাজাগতিক স্কেলে আমরা অতীব ক্ষুদ্র এবং গুরুত্বহীন, তদাপি আমরা যেনো সৃষ্টির রাজার আসনে চড়ে বসেছি।

মহাবিশ্বকে গভীরভাবে বুঝতে হলে আমাদেরকে শুধু মহাবিশ্বে কীভাবে সবকিছু ঘটে সেটা জানলেই হবে না, জানতে হবে ‘কেনো’ ঘটে সেটা-ও।

কেনো কোনো কিছু না থাকার বদলে কিছু বিদ্যমান?
কেনো আমাদের অস্তিত্ব আছে?
কেনো ঠিক এই ভৌত সূত্রসমূহ আছে, কেনো অন্য কোনো ভৌত সূত্র নেই?

এগুলোই জীবন, মহাবিশ্ব এবং সবকিছুর পরমতম প্রশ্ন। আমরা এই বইয়ে এগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। ‘হিচহাইকারস গাইড টু গ্যালাক্সি’তে (The Hitchhiker's Guide to the Galaxy) দেয়া উত্তরের মতো আমাদের উত্তর শুধুমাত্র "৪২" হবে না।

===============
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি নাবিউল আফরোজ, জুবায়ের আলম, সোহাগ হোসেন এবং আরো অনেক- যারা বিভিন্ন সময় পরিভাষা, গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ব্যাপারে সহায়তা করেছেন। ব্লগারবৃন্দ ও পরিচিত অনেকজন যারা উৎসাহ দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন তাদেরকেও শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক তীক্ষ্মনজর ও খেয়াল রাখার পরেও কিছু মুদ্রণপ্রমাদ রয়ে গেছে, আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। পাঠক হিসেবে আপনি সাহায্য করতে পারেন অনুগ্রহ করে এইসব মুদ্রণপ্রমাদ ধরিয়ে দিয়ে।


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

আপনার অনুবাদ ভালো হয়েছে। চলুক
আমিও এই পুরো বইটাই অনুবাদ করেছি। ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করেছিলাম মুক্তমনায়। পাওয়া যাবে এখানে http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=10809


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

ধন্যু। হাসি

আপনিই তাহলে তানভীরুল ইসলাম, বটে, আমার অনুমান সঠিক তাহলে! আপনার প্রথম কয়েক পর্ব পড়েছি, মনে হয় তাড়াহুড়ো করে করেছিলেন, তবে আপনার বাক্য ভেঙে ভেঙে করার ব্যাপারটা দারুণ লেগেছে। হাসি
বইটা আমি আমাজনে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে সংগ্রহ করেছিলাম, অনুবাদের ইচ্ছে মনে রেখে। অভিজিৎদা বইটি প্রকাশের প্রথমদিন খোমাখাতায় স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, সেদিন অনুবাদের আগ্রহের কথা বলি। উনি মুক্তমনায় প্রকাশের জন্য অনুরোধ করেন এবং কিছু ব্যাপারে ইমেইল চালাচালি হয়। তখনো বইটা হাতে পাই নি, পেলাম এক সপ্তাহ পরে। টুকটাক অনুবাদ শুরু করেছি, এর মাঝে হঠাৎ একদিন অভিজিৎদা আপনার প্রথম পোস্টের লিংক দিলেন। সত্যি বলতে কী, আমার তো মাথায় হাত, আমার অনুবাদ তখন প্রায় মাঝপথে, ফলে না পারছিলাম ছেড়ে দিতে, না পারছিলাম বইতে।
আপনার যেহেতু বইটি পড়া আছে, এবং অনুবাদ করেছেন- আমার কোনো ভ্রান্তি চোখে পড়লে জানালে প্রীত হবো। যদি কিছু মনে না করেন আপনার সাথে যোগাযোগের ইচ্ছে রইলো, আমার খোমাখাতা এখানে পাবেন, যোগ করতে পারেন। হাসি

স্পর্শ এর ছবি

আমি মূলত কেতাবি ভাষা এড়িয়ে লাইনগুলো হালকা রাখতে চেয়েছি। তবে হ্যাঁ অনুবাদ করতে করতে পোস্ট করেছি বলে ফাইনাল সম্পাদনা করা হয় নি। প্রথম দিকে কিছুটা তাড়াহুড়ার ছাপও আসলে আছে। তবে শেষের দিকের চ্যাপ্টারগুলো ঠিক আছে। আপনি করছেন, সেটা কোনো মন্তব্যে বললেই পারতেন! আমি তাহলে অন্য প্রজেক্ট নিতাম।

খোমাখাতায় আড করেছি। শুভেচ্ছা...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

আরে অন্য প্রকল্প হাতে নেয়ার কী আছে, বরং দুটো অনুবাদ বাঙলা-ভাষী পাঠকদের জন্য বাড়তি পাওয়া হবে। তাছাড়া ভিন্ন আমেজের দুটো অনুবাদ সহায়ক কিছু হবে বৈকি।
আমি ভেবেছিলাম অভিজিৎদার মাধ্যমে আপনি জেনে থাকতে পারেন, কিম্বা উনার স্ট্যাটাসে চোখ পড়ে ‌থাকতে পারে। আমার মুক্তমনায় আনাগোনা নেই বললে চলে, কখনোই একটা মন্তব্য-ও করা হয় নি। তবে সেদিন নিবন্ধিত হলাম। দেখা হবে সেখানে হয়তো। এছাড়া ব্যক্তিগত কিছু ঝামেলার কারণে আমি আসলে ইন্টারনেট থেকে অনেক দিন দূরে ছিলাম, মাঝে মাঝে ব্যবহার করা হতো, ফলে ফলোআপ করা হয় নি।

ধন্যু, যোগ করেছি...

স্পর্শ এর ছবি

হুমম, চোখে পড়েছিলো। কিন্তু আপনি যে করছেন, সেটা মনে হয় বলেন নি। 'ভালো লাগলে করবেন' বা 'অনুবাদ করার কথা ভাবছেন' ধরনের কিছু বলেছিলেন। ততোদিনে আমি তিনচার অধ্যায় পোস্ট করে ফেলেছিলাম। তাই এটা নিয়ে আর ভাবিনি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

বইটি প্রকাশের প্রথমদিন বলেছিলাম যে ব্লগের জন্য করবো, পরে যেদিন উনি আপনার প্রথম পর্বের লিংক শেয়ার করলেন আমার প্রতিক্রিয়া ছিলো:

শিট, আমি-ও তো এটার অনুবাদ শুরু করেছি। মন খারাপ

ওই সময় আমি মাঝপথে। আসলে বিভিন্ন ব্লগে কে কোথায় কী অনুবাদ করছে ঠিক বলা কঠিন, আমার এক বন্ধু (উপরে উল্লেখিত জুবায়ের আলম) বললো দেশের একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাকি অনুবাদ করছেন, আরো অনেকে করে থাকতে পারেন, বলা যায় না।
আমার মতে এটা ভালো দিক, বিকল্প অনুবাদ থাকবে পাঠকের হাতে, তাছাড়া বাঙলা ভাষায় বিজ্ঞান-চর্চা ও পারিভাষিক উন্নয়ন সাধিত হবে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমার মতে এটা ভালো দিক, বিকল্প অনুবাদ থাকবে পাঠকের হাতে, তাছাড়া বাঙলা ভাষায় বিজ্ঞান-চর্চা ও পারিভাষিক উন্নয়ন সাধিত হবে।

চলুক একমত। বইটার অডিও শোনা করবো। একবারে কয়েক পর্ব পড়ে জানাবো তবে।

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

ধন্যু। হাসি

পড়ে ফেলতে পারেন, খুব বেশি সময় লাগে না। ১৮৫ পৃষ্ঠার বই। দুইদিন লাগে ঠিক মতো সময় দিলে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বই পড়া খুব এনগেইজিং। চোখ, হাত, মনোযোগ সব ব্যবহার করতে হয়। তারচেয়ে অনেক আরামের হোলো বই শোনা। ড্রাইভ করতে করতে বই শুনলে খুব দারুণ ইউটিলাইজ হয় সময়টার। আর শোনা বই আমার মনেও থাকে ভালো।

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

আমার অভ্যেস নেই, আর মনে থাকে না, কয়েকদিন শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে এই ধারা কি চলতেই থাকবে, নাকি একটি পরমতত্ত্বে গিয়ে থামবে- যে পরমতত্ত্বের সাহায্যে মহাবিশ্বের সকল বল ও পর্যবেক্ষণকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে, নাকি আমরা একের পর এক উন্নততর তত্ত্ব আবিষ্কার করে যেতেই থাকবো অর্থাৎ এমন কোনো পরমতত্ত্বই আবিস্কার করা সম্ভব হবে না যেটা উন্নয়ন-অসাধ্য হবে?

আমি যতদূর জানি, আমাদের জগতে এখন পর্যন্ত যেসব তত্ত্ব আবিষ্কৃত ও প্রচলিত তার বেশিরভাগই সর্বোচ্চ ত্রিমাত্রিক মডেলের উপর আরোপযোগ্য এবং তার চলকের সংখ্যা নিতান্তই সীমিত। অপরদিকে আইনস্টাইন কিংবা এ জাতীয় বিজ্ঞানীদের যাঁরা আপেক্ষিকতা নিয়ে কাজ করেছেন তারও যথোপযুক্ত কোনো ফিজিক্যাল মডেল নেই বাস্তবে আমাদের নাগালে যা দিয়ে মহাবিশ্বের শুধু ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স না, রিলেটিভ ফিজিক্স কিংবা অন্য কোনো মাত্রায় গবেষণা করা যায়। সমস্যা হচ্ছে আমাদের গবেষণার পথ এখনও অনেক সঙ্কীর্ণ। আমরা স্বীকার্যের উপর স্বীকার্য ধরতে বাধ্য হই। এদিকে আসলে মহাবিশ্ব আসলে কত মাত্রার, কালের সাথে পরিবর্তনশীলতার প্যাটার্ন, তার স্বাধীন চলক আসলে কতটা কিংবা তাদের মধ্যে কোনো ফাংশন আছে কিনা এইগুলা যতদিন না নির্দিষ্ট হবে ততদিন উন্নত থেকে উন্নততর তত্ত্ব আসাটাই স্বাভাবিক। তবে আশার কথা হল মানবজাতি অতি অল্প সময়ে শুধুমাত্র তার মাথা ব্যবহার করে অনেকখানি জট ছাড়িয়ে ফেলেছে। কে জানে, হয়ত অচিরেই আমরা ইউনিফাইড থিউরী পেয়ে যাবো।

আপনার লেখা থেকে এম থিউরী সম্বন্ধে একটু বিস্তৃত ধারণা হল। আগে ভাসাভাসা জানতাম। লেখা চলুক।

-অতীত

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

রজ্জু তত্ত্ব (স্ট্রিং থিউরী) মতে, মহাবিশ্ব দশ মাত্রার; তবে এম-তত্ত্ব মতে এটি এগার মাত্রার। তিনের অধিক মাত্রাগুলো খুবই ক্ষুদ্র স্থানে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে। ফলে আমরা খালি চোখে দেখি না।

স্টিফেন ও লিওনার্ডে এম-তত্ত্ব নিয়ে পরের অধ্যায়গুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। অনুবাদ চোখ রাখলে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন, আমিও খুব গভীরভাবে সবকিছু জানি না। তবে তাদের মতে একীভূত একটি তত্ত্ব আমরা না-ও পেতে পারি, বরং মানচিত্রের মতো কতকগুলো তত্ত্ব নিয়ে একটি সমষ্টিগত তত্ত্ব পেতে পারি, যেখানে সদস্য তত্ত্বগুলো মহাবিশ্বের একেকটি অংশ বর্ণনা করবে (যেমন- নিউটনের গতির সূত্র প্রাত্যহিক জীবনের জন্য প্রযোজ্য হবে, রজ্জু তত্ত্ব অতিপারমাণবিক কণিকাগুলোর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করবে ইত্যাদি। এম-তত্ত্ব এইরকম একটি সমষ্টিগত তত্ত্ব।

পাঠে ধন্যবাদ জানবেন, অতীত।

তারাপ কোয়াস এর ছবি

মুক্তমনায় তানভীরুল ইসলাম এর অনুবাদের(এই বইয়ের) নিয়মিত পাঠক ছিলাম। আপনার অনুবাদও ভালো হয়েছে। চলুক

আগেই বলি বিজ্ঞানে আমার জ্ঞানের দৌড় কিছু পপুলার সায়েন্স এর বই আর কিছু ডকুমেণ্টারি; এর উপর ভিত্তি করে আমার মনে হয়েছে হকিং এর এই বইয়ে নতুন কোন তথ্য নেই (আমার মত আমজনতার জন্য!), এম থিউরী নির্ভর করে স্ট্রিং থিউরীর উপর আর স্ট্রিং থিউরী নিয়ে উইকির ভুক্তিটা এরকম "The theory has yet to make testable experimental predictions, which a theory must do in order to be considered a part of science."
(বাংলায় একটা প্রবাদ আছে 'যেখানে সুই চলেনা, সেখানে কোদাল চালানো' আমার মন্তব্যটাও যে সেরকম গোছের সেটা নিয়ে একপ্রকার নিঃসন্দেহ)


love the life you live. live the life you love.

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

সচল স্পর্শের অনুবাদ ভালো হয়েছে। একটা গল্প-বলার-মতো-আমেজ আছে। হাসি

জ্বি, আপনার ধারণা সঠিক। এম-তত্ত্ব এখনো পুরোপুরি প্রমাণিত হয় নি, তবে এটির করা কিছু অনুমান পর্যবেক্ষণের সাথে মিলেছে। এই বইটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায়ে মূল লেখকগণ বিস্তারিত বলেছেন। স্টিফেন নিজেকে ব্যাপারটা স্বীকার করেছেন বইয়ের শেষ পাতায়:

এম-তত্ত্ব হচ্ছে মহাবিশ্ব ব্যাখ্যাকারী একমাত্র সম্পূর্ণ তত্ত্ব। যদি এটি অনুমানগুলো সসীম হয় (এখনো প্রমাণ করা বাকি) তবে এটিই হবে মহাবিশ্বের এমন একটি মডেল যেটি মতে মহাবিশ্ব নিজে নিজে নিজ থেকে সৃষ্ট। আমরা অবশ্যই এই মহাবিশ্বের অংশ, কারণ এছাড়া অন্য কোনো সঙ্গতিপূর্ণ তত্ত্ব নেই।

এবং

যদি তত্ত্বটি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়, এটিই হবে ৩০০০ বছরের অধিক সময় ধরে করা অনুসন্ধানের সাফল্যজনক উপসংহার। আমরা তখন মহিমান্বিত নকশাটি খুঁজে পাবো।

আশা করি সাথে থাকবেন।

নীল রোদ্দুর এর ছবি

আশরাফ ভাই, ব্লগে ফিরলেন তবে! মেলাদিন পর!
যাই হোক, আপনার অনুদিত বই-ই কি এইবারের বইমেলায় বের হচ্ছে?

'গড অফ দ্য স্মল থিং' এর বাংলা অনুবাদ পাওয়া যায় ... একাধিক অনুবাদক আলাদা আলাদা ভাবে করেছেন ... সো, ব্যাপার না। হাসি

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

জ্বি, সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠছি। প্রায় নয় মাস পর ব্লগ লিখছি, অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।

না, বইমেলায় আসছে না। আমি ভালো প্রকাশক খুঁজছি, যাকে আমার কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।

  • বইয়ের অনেকগুলো চিত্র আছে। সেগুলো প্রকাশ না করলে বইটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেগুলো প্রকাশ করতে হবে।
  • রয়্যলিটির একটি অংশ পথশিশু কিম্বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে দান করতে হবে।

অনুবাদ সম্পর্কে মতামত জানাবেন, ভুলটুল চোখে পড়লে বলবেন। কথা হবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।