(ছবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের একাংশ)ঘটনার সালটা ঠিক মনে করতে পারছি না। ২০০২ সালের হবে হয়ত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের দুইটি হলের (শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ও বীরকন্যা প্রীতিলতা হল) পানির পাম্প নষ্ট হয়ে গেছে। মেয়েরা ভিসিকে , প্রভোষ্টকে বলার পরে ১৫-২০ দিনেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। শেষে মেয়েরা ভিসিকে আল্টিমেটাম দিল ৩০ দিনের মধ্যে পানি সমস্যার সমাধান না হলে কঠর আন্দলোনে যাওয়া হবে। যথারীতি পানি সমস্যার কোন সমাধান হল না। শুরু হল আন্দলোন। আস্তে আস্তে সারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন ছাত্রছাত্রী এই আন্দলোনে অংশগ্রহন করলাম।একপর্যায়ে রেজিষ্টার অফিস ঘেরাও করা হল, অনশন শুরু হল। অফিসের সবাইকে অবরুদ্ধ করা হল। এর মধ্যে অফিসের এক চাচা টাইপ লোককে দেখে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে কাছের বন্ধু নোমান বলল এই আন্দলোনের সুযোগে ঐ চাচাকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার।এই শিক্ষা দেবার কারনটা অনেক দিনের রাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন ৫ টাকা করে হওয়ায় কখনও তা আমরা নিয়মিত দিতাম না। বছর শেষে একবারে ২০ টাকা জরিমানাসহ দিতাম, পরীক্ষার আগে। আমি আর নোমান একবার ঐ চাচার কাছে গেছি ফরমে ওনার সাইন নেওয়ার জন্য। চাচা সবকিছু দেখে বলে- তোমরা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র? ১ বছর বেতন না দিলে তো ছাত্রত্বই বাতিল। সাথে আরও কিছু নীতিবাক্য ও বকাবকি করে সাইন করতে যাবে এই রকম সময় আমি বললাম চাচা একটু দাড়ান।চাচা বলে কেন? কি হইছে?আমি যুক্তি দিলাম আমরা যেহেতু বেতন নিয়মিত দেইনি তার সাজা স্বরুপ ২০ টাকা জরিমানা দিচ্ছি। আর আপনি যেহেতু আমাদের এত কথা শুনালেন সেহেতু আমরা এই ২০ টাকা দেব না। এখন হয় আপনাকে আপনার কথা ফেরত নিতে হবে, নইলে ২০ টাকা কম নিতে হবে। এইবার চাচা তেলে বেগুনে চেতে গেল। আরও কিছু কথা কাটাকাটির পরে আমরা ২০ টাকা জরিমানা দিলাম, ঝারি খেয়ে ফিরে আসলাম। ওনার উপর রাগটা সেদিন থেকেই। শুধু আমরা ২ জনই নয়, ওনার উপর মনে হয় অধিকাংশ ছা্ত্রেরই রাগ- ঠিক এই একই কারনে।যাইহোক মূল কথায় ফিরে আসি। রেজিষ্টার অফিসের সামনে মাইকে বিভিন্ন রকমের আলোচনা হচ্ছে আমাদের আন্দলোন নিয়ে। আমাদের পরিকল্পনা অনুসারে ঐ চাচা বারন্দায় আসলে নোমানকে মাইক দেওয়া হবে। একসময় পাওয়া গেল চাচাকে বারান্দায়।নোমান শুরু করল ওর কথা মাইকে। " আসলে আপনারা জানেন না এই সমস্যার জন্য মূলত কে দায়ী। পাম্প কেনার জন্য এখন থেকে ১৫ দিন আগে আমাদের ভিসি স্যার প্রয়োজনীয় টাকা দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ঐ যে বারান্দায় চাচাকে দেখা যাচ্ছে দাড়িয়ে আছেন উনি বেশি বুঝে ফাইল আটকে রেখেছে। যার জন্য আমাদের এই নাজেহাল অবস্থা। এখন চাচাকে বলছি, শুনে রাখেন চাচা- '৫২ ভাষা আন্দলোনে সুযোগ হয়নি আমাদের শহীদ হবার। '৭১ সুযোগে হয়নি শহীদ হবার। এইবার এই পানি আন্দলোনে আপনার একটা শিক্ষাদেবার জন্য শহীদ হতে হলে তাও হব"।এরপরে রেজিষ্টার অফিসের অনেক কর্মকর্তাকে অফিস থেকে বের হতে দিলেও চাচা ভয়তে বের হয়নি। উনি আটকা ছিলেন ৩০ ঘন্টারও বেশি।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন