ভাঁটার মাঠে লাশ!! ভোরের সূর্য্য এখনো ওঠে পারে নি, হাঁপাতে হাঁপাতে বাঘা এসে খবর দিল ওয়ার্ড কমিশনারকে, তবে মুখ দেখতে না পেলেও বাঘা চিনতে পেরেছে লাশ সুবোধের।
খবর চাউর হয়ে গেছে চারিদিকে। ছুটে গেছে রজনীও, সুবোধের একমাত্র বন্ধু, ল্যাংটো বেলার জগাই মাধাই। একসাথে খেলাধুলো, পড়াশোনা থেকে শুরু করে একপাতে খাওয়া। এহেন বন্ধু রজনী এত বড় খবর শুনে পারেনি থাকতে।
কতবার সাবধান করেছে রজনী, কতবার বুঝিয়েছে, এমনকি ওর বৌকে অব্দি পইপই বলেছে সুবোধকে বোঝানোর জন্য।
হেসে ঊড়িয়ে দিয়েছে সুবোধ, তার মতে অন্যায় করার থেকে অন্যায় সহা অনেক বেশী কষ্টকর, তারপরও রজনী অজস্রবার বুঝিয়েছে বেয়াড়া সুবোধকে।
ঊঠানে রাখা হয়েছে নিথর প্রানহীন দেহটাকে। পোর্ষ্টমর্টেমের রিপোর্টে অনুযায়ী মৃত্যু হয়েছে আনুমানিক কাল সন্ধ্যা আটটা নাগাদ।
নিজের দেহটাকে দেখে নিজেই চিনতে পারছে না সুবোধ। এতো নশৃসংভাবে কুপিয়েছে, লাশটার পাশে থপ করে বসে পড়লো, এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ছোট ছেলেটার দিকে চোখ গেলো। আহা এইটুকুন ছেলে, কিছুই বোঝে না, জোর করে খেলার মাঠ থেকে টেনে আনা হয়েছে, বাপকে শেষদেখা দেখে নিক। বোঝদার মেয়েটি শুধু অঝোরে কেঁদে চলেছে।
অশ্রুহীন নিঃশব্দে করণীয় সব করে চলেছে সুবোধের ছেলে মেয়ের মা। যেনো যন্ত্রচালিত দম দেওয়া রক্তমাংসের রোবট। চোখে প্রায় এক্কেবারে দেখতে না পাওয়া হতভম্ব বৃদ্ধা মা বাকরুদ্ধ। ভাবছে, ছেলে ডিউটি থেকে রোজ এরকম সময়ই তো ফেরে আর ছেলে ফিরেছে চারজনের কাঁধে করে।
চারি দিকে লোকজন গিজগিজ করছে, এদিক ওদিক তাকালো সুবোধ।
পাথরের মত বসে আছে রজনীর বৌ, শুধু রজনী একা দশ হাতে সব সামলাচ্ছে।
বাপ, ভাই, ছেলে, বন্ধু, সবার কাজ একাই করে চলেছে রজনী।
ধড়াস করে ওঠে সুবোধের বুক।
কাল সন্ধ্যের দৃশ্যগুলি সিনেমার মতো চোখের সামনে ভেসে ওঠে ।
গল্প করতে করতে দুই বন্ধু কখন যে ভাঁটার মাঠের ওখানে চলে এসেছে মনেই নেই তার উপর চারিদিক বেশ অন্ধকারও হয়ে এসেছে। সুবোধ বলে “জায়গাটা সুবিধার না, তবে তুই আর আমি থাকতে কোন শালার বুকে দম আছে বল ?” হাসে রজনী......
হাসি মিলায় নি, চার পাঁচজন সশস্ত্র লোক যেনো মাটি ফুঁড়ে উদয় হলো, মুর্হুতে ছিটকে যায় সুবোধ, তাইবলে গায়ে মনে জোর কম নেই সুবোধের। কোনো কিছু ছাড়াই দুজনকে আঁছড়ে ফেলল, হটাৎ পেছন থেকে একটা কোপ, তখন কি আর জ্ঞান আছে ? তোলপাড় করছে সুবোধ...... আরো একটা, আরো আরো আরো...... কাটারীর কোপ পড়েই চলেছে …... একটা নিরস্ত্র লোক কতক্ষনই বা পারে? শুধু একবার পেছন ফিরে দেখতে চাইল কোনোমতে, দেখার সুযোগ পেলো না, গড়িয়ে পড়লো,
শুধু একজনের গলা অনেকটা রজনীর গলার মতো মনে হল ,
“দেখো লাশটারে যেনো শেয়াল কুকুরে না খায়”
মন্তব্য
ভালো লাগছে গল্পটা। অনেক কোমল মনে হছিল। শুধু এই লাইনটায়
রোবট শব্দটা পছন্দ হয় নাই।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ধন্যবাদ ভাই । এখন মনে হছে ঐ লাইনটা আরো একটু অন্যরকম করা যেতো।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
মানুষ একেকটা বন্ধু বানায় সারা জীবন সাধনা করে
আর একটা সন্ধ্যাতেই শত্রু বানিয়ে দিলেন?
এসব গল্পের গরু, গাছে না চড়তে দিলেই হলো।
তবে প্রশ্ন, আমরা সত্যিই কি চড়াই ? নাকি মাঝে মাঝে আমাদের গল্পের গরু সত্যি সত্যি গাছে চড়ে ?
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
বন্ধু যদি বন্ধুকে খুনই করতে পারলো, তাহলে সে কেমন বন্ধু? এমনই নানা বিক্ষিপ্ত কারণে দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে আমাদের বিশ্বাসবোধ, নির্ভরতা আর ভালোবাসার মানসিকতা। হায় কাক! কৃষ্ণকালো নোংরা কাক!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
কাক কাকের মাংশ খায় না, মানুষ মানুষের মাংশ খায়।
আমার কথা নয় কিন্ত।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
ভাল লাগল আপনার গল্প পড়ে । আপনাকে ধন্যবাদ এই লেখার জন্য ।
নিবিড়
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
নতুন মন্তব্য করুন