আমার এখনো স্পষ্ট মনেআছে সেই ছোট্টবেলা আমাদের শহরের বাজারে যমুনি নামে এক পাগলী ছিল। আমাদের বাসা বাজারের লাগোয়া ছিল বলেই বোধহয় এই পাগলীকে আমরা রোজ দেখতাম। পাগলীটি মাঝে মাঝেই খুব চেঁচাতো আর মাঝে মাঝেই কি সব উদ্ভট আওয়াজ করতো তা লিখে বোঝাতে পারবো না। ওহ্ বলতে ভুলে গেছি মহিলাটি সম্ভবতঃ বিহারী ছিল কারন রেগে গেলে সে হিন্দীতে গালিগালাজ করত আর তার নাম ছিল যমুনি। এই নামটি সে কি করে পেলো সেটাও আমার জানা নেই। এখনো চোখবুজে ভাবার চেষ্টা করলে আমার চোখ বোজা তারায় যমুনিকে স্পষ্ট দেখতে পাই
বাজারে কতরকম লোক আসে। ভালো মন্দ শিক্ষিত অশিক্ষিত যোয়ান বুড়ো, তা যেই সুযোগ পায় সেই পাগলী যমুনিকে খোঁচায়, বাক্যবাণে জর্জরিত হয়ে রেগে না গেলে তাকে ঢিল (নুড়ি পাথর) ছুঁড়ে মারা হতো রাগানোর জন্য আর তাতেও কাজ না হলে জ্বলন্ত দিয়াশলাইয়ের কাঠি ছুঁড়ে দেওয়া হতো এককথায় চেষ্টার কোনো কসুর করা হতো না
লাঠি দিয়ে খোঁচানো এমনকি পাগলীর ছেঁড়া কাপড় ধরে টানা সবকিছুর পর রেগে গিয়ে যখন যমুনি যা ইচ্ছা তাই বলে তেড়ে আসত বাজারে আসা সেইসব ভালো মন্দ শিক্ষিত অশিক্ষিত যোয়ান বুড়ো সবাই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতো আর কি আমোদই না পেতো। কখনো কখনো আবার যমুনি রেগে গিয়ে থুঃ থুঃ দিত। বলতে আজ বাধা নেই আমি সেই সময় ছোট্টটি হলেও আমিও যে দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতাম না তা নয় তবে ঠিক উপভোগ করতাম কি না বুঝতে পারছি না, দাঁড়িয়ে দেখতাম ঠিকই, একটু খারাপ লাগা কি কোথাও ছিল ? হয়তো ছিল হয়তো ছিল না
শুধু একবার মনে আছে বাজার করতে আসা রক্ষিত স্যার বলেছিলেন “আপনারা কেন এই পাগলীটাকে কষ্ট দেন, সেওতো কোন কালে কারো মেয়ে ছিল, হয়তো কারো স্ত্রীও ছিল, হয়তো এর ছেলে মেয়েরা আজও তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে”। রক্ষিত স্যারকে মান্যি করে সবাই তাই সামনে কেউ কিছু বলে নি, কিন্তু স্যার চলে যাবার পরেই একজন বাজারী পাশের দোকানের বিক্রেতাকে বলে উঠলেন, স্যারের যদি এতই কষ্ট হয় তাইলে পাগলীরে উনার বাড়ী নিয়া গেলেই তো পারে। আমি হলপ করে বলতে পারি স্যার সেইদিন সেইকথা শুনলে হয়তো যমুনি পাগলীকে বাড়ী নিয়ে যাবার চেষ্টাই করতেন, একথা বলছি কারন বড় হয়ে ওনাকে ওনেক কাছে থেকে দেখেছি আর জেনেছি
তা যাইহোক যমুনির একটা ব্যাপার ছিল সেটা হচ্ছে কখনো কোন বাচ্চাদের কোনোকিছু বলতো না, এমনকি কখনো বাজারের কোন দুষ্ট বাচ্চা অবদি ওকে রাগাতে চাইলেও কিছু বলতো না
সেই ছিন্নমূল আধাখাওয়া রোগা পাগলী যমুনির যে কি হয়েছিল যে একদিন বেচারীর পেট ফুলে উঠলো। আমি তখন ছোট হলেও কানাঘুষায় বুঝতে পারলাম যমুনি মা হতে চলেছে
দিনে দিনে যমুনির পেট ফুলছে আর বাজারের জ্ঞানী-গুনী মানীজনেরা ফুঁসছে। ভালো মন্দ শিক্ষিত অশিক্ষিত যোয়ান বুড়ো সব্বাই এক্কাট্টা হয়ে ঠিক করলো এরকম বদ পাগলীকে বাজারে থাকতে দেওয়া যাবে না, হটাৎ করে একদিন কর্পুরের মতো উবে গেল যমুনি, ধীরে ধীরে সবাই ভূলে গেলো পাগলীর কথা
কখন কবে কিভাবে তাড়িয়ে দেওয়া হলো কেউ জানে না, নাঃ ভূল অনেকেই জানে না, আবারো ভূল বললাম আমি জানি না মানে জানতাম না
হটাৎ করে আজকে মনে পড়ছে খাওয়া দাওয়ার পরে রাত্রিবেলা মাঝে মাঝে জানালার শিক ধরে বাজারের দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর প্রায় দিনই দেখতাম সবশেষে দোকান বন্ধ করা মোনালিসার মালিক হারান দোকান বন্ধ করতে করতে যমুনিকে খেতে দিচ্ছে আর কি সব বলছে। যাঃ কি সব ভুলভাল বকছি, কোথায় হারান আর কোথায় নোংরা শতছিন্না যমুনি
প্রশ্ন তাহলে থেকেই যায় মা তো আর একা একা হওয়া যায় না, তখন আমি থোড়ী জানতাম একা একা মা হওয়া যায় না, যমুনিকে কে মা বানিয়েছে সেটা অবশ্য আমার কোনোদিন জানা হয়নি।
তাহলে কি বাজারের কুকুর টুকুর কিছু !!! কে জানে হতেই পারে, অনেকদিন আগের কথা তো তখন থোড়ী সব বুঝতাম
ছবি সুত্রঃ- অন্তর্জাল
মন্তব্য
Lina Fardows
হ্যাঁ , বাজারের কুকুর টুকুরই কিছু হবে !!! না হলে এমন কাজ কে করবে। যারা এমন কাজ করে তারা কুকুর ছাড়া আর কি । অনেকদিন আগের কথা হলেও থোড়ী ঠিকই বুঝেছেন ।
Lina Fardows
মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা।কত কুকুর যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ? কে রাখে পাগলী যমুনীর খবর ? যমুনীরা হারিয়ে যায় কিন্তু ককুরগুলি ঘেউ ঘেউ করতেই থাকে।
_____________________
জাহিদুল ইসলাম
এডমনটন, আলবার্টা, কানাডা
http://www.ualberta.ca/~mdzahidu/
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
ঠিক বলেছেন। কুকুর-টুকুরই হবে।
তবে, লীলেনজী এই লেখা দেখলে বোধহয় একখান ঝাড়ি দেবেন।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
কোনোদিন জানা হবেও না। আর যমুনিরাও হারিয়ে যেতে থাকবে।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
দারুন লিখেছেন, দেবু'দা ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
দীর্ঘশ্বাস। মাঝে মাঝে মানুষ কেন যে মনুষ্যত্বের এত নিচে নেমে যায়!
এবার দেশে যেয়ে চন্দ্রগ্রহন সিনেমাটা দেখলাম। আমি কয়েকদিন ঘুমাতে পারিনি, এখনও মাঝে মাঝে মনে হয়, কি কঠিন এই বাস্তব
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
নতুন মন্তব্য করুন