ওদের কথাবার্তার ধরন আর ভাষার টান শুনেই বোঝা যাচ্ছিল ইংরাজীটা ওদের মাতৃভাষা। দুজনের মধ্যে কথাবার্তা ইংরাজীতেই হলেও আমি আমার মত করে বাংলায় অনুবাদ করছি।
ছেলে ঃ- (মেয়েটির হাত ধরে) ওহ্ ডার্লিং, তুমি যদি আজ ফিরে না আসতে তাহলে আমি বোধহয় মরেই যেতাম, তুমি কি জানো না আমি তোমায় কত ভালোবাসি!
মেয়ে ঃ- (আর্দ্র চোখে রোমাণ্টিক একেবারে সিনেমার মত ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে) হানি, আমি জানি, তুমি কি জানো বিরহের এই কটা দিন আমি কিভাবে কাটিয়েছি? আমি একটি মুর্হুত তোমাকে ভুলে থাকতে পারি নি
ছেলে ঃ- (ভাবাবেগে তাড়িত হয়ে হাতদুটো আরো জোরে... বলা যায় চেপে ধরে) আমি আর কখনো তোমার সাথে ঝগড়া করবো না, আর আমি করতে চাইলেও তুমি আমাকে বকে দেবে, এই বলে দিলাম কিন্ত
মেয়ে ঃ- (চোখ দিয়ে কি দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো, কি জানি ঠিক দেখতে পাই নি) উমমম, ভুল অবশ্য আমারও ছিল, আমিও এতটা রেগে না গেলেই পারতাম, আমি আর কখনো এভাবে রেগে যাবো না, আর রেগে গেলে, (কথা শেষ হবার আগেই ছেলেটি মেয়েটির মুখ চাপা দিল আর আমি আহা আহা করতা লাগলাম)
ছেলে ঃ- ( পাগলের মত মেয়েটিকে চুম্বনে ভরিয়ে দিতে দিতে) আমি জানি ডার্লিং, আমি জানি, কিন্তু তুমি না বললে বিশ্বাস করবে না, তোমাকে ছেড়ে আমি একটা রাতও বাড়ীতে কাটাতে পারি নি
মেয়ে ঃ- (কপট রাগ দেখিয়ে) তাহলে নিশ্চয়ই রোজ রাতে পিটারের বাড়ীতে ওর সাথে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ওর বাড়ীর সোফায় শুয়ে থাকতে !!
ছেলে ঃ- (হাত জোড় করে মাপ চাওয়ার ভঙ্গিতে) বিশ্বাস করো, সত্যি বলছি গত এক সপ্তাহে আমি মাত্র দু-দিন খেয়েছি
মেয়ে ঃ- (অনেকটা বাচ্চাদের আদর করার মত ছেলেটির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে) এতো মদ খাওয়া কিন্ত ভালো নয় হানি
রোজ অফিস যাওয়া-আসার সময় টিউবে (মানে আমাদের দেশে যাকে বলে পাতাল রেল) ছেলে মেয়েদের এরকম জড়িয়ে ধরে চুমো খাওয়া প্রচুর দেখি, ওদের জড়াজড়িও কেমন যেনো একটু বাড়াবাড়ি রকমের দৃষ্টিকটু লাগে, প্রেম নয়, যেনো যৌন তাড়নাই ওদের বেশী তাড়িত করে । কিন্ত আজকের এই মিলন দৃশ্য দেখে আমার মনে আনন্দের বারিধারা বয়ে গেলো, আহা কি প্রেম। একেই বলে প্রকৃত প্রেম, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হতেই পারে, বৌ রাগ করে কিছুদিনের জন্য বাপের বাড়ী চলে যেতেই পারে কিন্তু দুজনে দুজনকে ছেড়ে কি বিরহে যে দিন কাটিয়েছে সেটা ওদের আজকের কথাবার্তায়ই বোঝা যাচ্ছে।
আহা ওদের বয়েসই বা কতো হবে? বড়জোর পঁচিশ কি ছাব্বিশ, কিংবা কাছাকাছি কিছু, কিন্ত এর মধ্যেই এদের প্রেমের গভীরতা। আহা ওদের মঙ্গল হোক। ওরা সুখে থাকুক।
পাতাল রেলে ওদের পাশের সিটে বসে এসব ভাবছি, হটাৎ কারো মুখে আমার নাম শুনে সম্বিত ফিরে এলো।তাকিয়ে দেখি আমার সহকর্মী ষ্টিভ মরিস্, খাস ইংরেজের বাচ্চা।
ওকে হাই বলার আগেই দেখি আমার পাশের কপোত-কপোতী তাদের ব্যাগ গোছাতে গোছাতে হাসা হাসি করছে। ভেবে কোনো কুল কিনারা পেলাম না এক মুহুর্ত আগে ওরা আবেগে ভেসে যাচ্ছিল এখন ওরা এমন ভাব করছে যেনো ওরা স্বামী-স্ত্রী নয়, বড়জোর ভালো বন্ধু হতে পারে। কেমন যেনো খটকা লাগলেও ভালোলাগাটুকু হারিয়ে গেল না।
কয়েক ষ্টেশন পরে ওরা নেমে গেলে ষ্টিভ আমাকে ফিস ফিস করে বলল দেখলে ওরা কি সুন্দর অভিনয় করে গেল?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম তার মানে !
আমাকে আরো অবাক করে ষ্টিভ বলে ওহ্ মাই গড, বলো কি, তুমি কি ওদের চিনতে পারো নি, ওরা তো বিখ্যাত একটা সিরিয়ালে কাজ করে, এখানকার টিভিতে সেটা রোজ দেখানো হয়। যাঃ আমি আরো ভাবছিলাম তুমি ওদের চিনেই চুপ করে আছো।
ওদের সময়ের বোধহয় খুব অভাব, তাই হয়তো ক্যামেরার সামনে সত্যিকারের অভিনয় করার আগে একটু রিহার্সেল দিয়ে নিচ্ছিল, আর কি!
ভাগ্যিস আমার কান দুটো বাদামী, তাই লাল টকটকে হয়ে গেলেও কেউ দেখতে পেল না। আমি এতক্ষন কি ভাবছিলাম সেটা ষ্টিভকে বললে আমাকে অফিসে আরে কেউ আস্ত রাখবে না, কমপক্ষে একমাস আমাকে সবার হাসির খোরাক হয়ে থাকতে হবে, চুপচাপ নিজের গন্তব্যে নেমে রাস্থা ধরে হাঁটতে লাগলাম। মনে হলো এরা সত্যিই অনেক এগিয়ে গেছে
মন্তব্য
হুমম। সত্যিই এরা অনেক এগিয়ে গেছে
----------------------------------------------------------
স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। স্বপ্ন দেখতে এবং দেখাতে চাই আজীবন।
----------------------------------------------------------
----------------------------------------------------------
স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। স্বপ্ন দেখতে এবং দেখাতে চাই আজীবন।
----------------------------------------------------------
এই সিরিজের নাম দেন পথুয়া প্রেম
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
কেন যে আমিও অভিনয় করিনা!
কদিন পরে আমরাও 'এগিয়ে গেলে' কাজে লাগতো।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আহা দেবুদা... পাতাল রেলে এমন দেখা হয়ে গেলে ভাববেন্না যেন আমিও অভিনয়ে মাতছি... ওটা সত্যি...
আপনাকে একটা ভিন্ন কাজে একটু দরকার...
আহা ! যদি এমুন অভিনয় করতে পারতাম !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আহা বেচারাদের সময়ের অভাব তাই প্রেমালাপ করছে ট্রেনে। সাইকো কিলার কিম্বা রেপ সিনের রিহার্সাল করলে ভালো হতো?
প্রেম নয়, যেনো যৌন তাড়নাই ওদের বেশী তাড়িত করে
আপনার PDA-তে অস্বস্তিটা বুঝলাম, আমরা সত্যি অভ্যস্ত নই বলেই এটা হয় বোধ হয়। কিন্তু যৌনতা প্রেমের সঙ্গীই তো, হাতে হাত চোখে চোখ ছাড়াও তো প্রেম হয়। কোথায় একটা জোক শুনলাম, দেশ আর বিদেশের মধ্যে একটা পার্থক্য নিয়ে, বিদেশে রাস্তাঘাটে 'কিস' করা যায় কিন্তু 'পিস' করা যায় না আর দেশে ঠিক উল্টোটা।
পিস করার অশ্লীল দৃশ্যে আমাদের চোখ অভ্যস্ত। কিন্তু কিস? এ যে অশ্লীলতর!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
অভিনয় কর্তে মঞ্চায়
ভাগ্যিস আমার কান দুটো বাদামী, তাই লাল টকটকে হয়ে গেলেও কেউ দেখতে পেল না।
কেন বলুন তো? আপনার কান কেন লাল হলো?!
যৌনতা আবার খারাপ হল কবে থেকে ?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
আমারও কথা তাই
--------------
উদ্ভ্রান্ত পথিক
অভিনয়ের কারবার শেষ, অভিদশ শুরু করেন সবাই।
------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
হা হা
যা তা মশাই আপনে!
অভিনয়ের নামে এ কী অবিনয়!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
নতুন মন্তব্য করুন