আমার ভিসা লাগবে, ইমিডিয়েট লাগবে, কিছুতেই আর দেরী করা যাবে না, খামখেয়ালীপনা করে এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে আর দেরী করা যাবে না। ইণ্ডিয়ান ভিসা ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখলাম লণ্ডনে এখন আর ইণ্ডিয়া হাউস থেকে ভিসা দিচ্ছে না, তার জন্য ভি-এফ-এস নামক এজেন্সি থেকে ভিসা নিয়ে আসতে হবে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত এখন আবার একদিনে ভিসা পাওয়া যাবে না, তার জন্য কমপক্ষে তিন দিন লাগবে। তা হউক গিয়া, ভাব্লাম প্রাইভেট এজেন্সি এই দায়িত্ব নিয়েছে এবার তাহলে সার্ভিস নিশ্চয়ই ভালো হবে।
ভাবলাম যাউক গিয়া অন্ততঃ একটা ইনফরমেশন পেলাম, নাহলে কাল সকালে ইণ্ডিয়া হাউসে গিয়ে নাকাল হতে হতো, যেখানে ভিসার জন্য সকাল ছয়টার সময় লাইন দিতে হয় সেখানে অন্ততঃ যেতে হচ্ছে না।
মনে আছে কলকাতায় প্রথম পাসপোর্ট করার সময় পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে মনে হয়েছিল ওপরে যাবার আগে জীবনে আর কোন্দিন যেনো এখানে আসতে না হয়। নাঃ ওখানে অবশ্য এখনো আর যেতে হয় নি।
যাই হোক পরদিন সক্কাল সক্কাল ভি-এফ-এস অফিসে গিয়ে লাইন দিয়ে দিলাম ভিসার জন্য। অবশ্য আমি সক্কাল সক্কাল লাইন দিলে কি হবে অনেকে আগের দিন রাত থেকেই লাইন দিয়ে বসে আছে তাই আমি অন্ততঃ বিয়াল্লিশ জনের পরে। মন খারাপ হলেও কিছু করার নেই। টোকেন নিয়ে বসে পড়লাম। চার ঘণ্টা পরে স্ক্রিনে আমার টোকেনের নম্বর দেখতে পেলাম, দৌড়ে গেলাম কাউণ্টারে।
কপালে চন্দনের ফোঁটা দেওয়া সাউথ-ইণ্ডিয়ান মাইয়া থার্টি-টু অল আউট স্মাইল দিয়া আমার আবেদন পত্র দেইখা কয় তোমার সারেণ্ডার সার্টিফিকেট কই?
মাইয়া কয় কি,এইটা আবার কি, আমি আকাশ থাইকা পড়লাম।
মাইয়া আরো বিগলিত কণ্ঠে কয় আরে তোমার ইণ্ডিয়ান পাসপোর্ট কই ?
আমি বললাম সেটা তো বাড়িতে, তাছাড়া সেইটা দিইয়া কি হইবো পাঁচ বছর আগে ওইটা ক্যান্স্যাল করা হইসে।
মাইয়া কয় আরে পাগলা ওইটাই এখন ইণ্ডিয়া গভর্ণমেন্টের কাছে সারেণ্ডার করন লাগবো, তাইলে তুমারে ওরা সারেণ্ডার সার্টিফিকেট দিব। সেইটা না হইলে ভিসা আপ্লিকেশন প্রসেস হইবো না আর তুমি ভিসাও পাইবা না
আমার তো কাঁদো-কাঁদো অবস্থা, ইমার্জেন্সি পড়েছে, যেতেই হইবে। পাঁচ বছরের ভিসা থাকায় এতদিন ভিসার প্রয়োজন পড়ে নি, এখন কি ফাঁপরেই না পড়া গেল, মেয়েটাকে বললাম তাহলে আমার ইণ্ডিয়ান পাসপোর্ট তোমার কাছে নিয়ে এলে কি হবে
মাইয়া মুখ গোমড়া করে বলে না রে ভাই, আমরা তো ভি-এফ-এস নামক এজেন্সীর হয়ে কাজ করি, এটার জন্য তোমাকে ইণ্ডিয়া হাউসে যেতে লাগবে আর ভালো কথা সারেণ্ডার সারর্টিফিকেট পেতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ লাগবে।
বমি-বমি ভাব করতে লাগলো, মাথা বন-বন করতে লাগলো, ভেবে পেলাম না কি করা যায়? আমাকে সরি, আমি হেল্পলেস বলে মেয়েটি একটা বোতামে চাপ দিল। ওখান থেকে সরে এলাম।
একরাশ উল্টোপাল্টা চিন্তা নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম। কি জানি কি মনে হলো বাড়ি গিয়ে ইণ্ডিয়ান পাসপোর্ট নিয়েই ইণ্ডিয়া হাউসে ছুটলাম। টোকেন নিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখি ভেতরে পা রাখার জায়গা নেই, লোকে লোকারণ্য, চারিদিক গিজ-গিজ করছে, বাইরে বেরিয়ে এলাম। বুঝলাম আমার লাইন আসতে আসতে কমপক্ষে ঘণ্টা দুয়েক লাগবে। ভাবলাম যাই কিছু খেয়ে আসি গিয়ে।
ইণ্ডিয়ান পাসপোর্ট জমা দিতে গিয়ে দেখলাম সেটা সারেণ্ডার করার জন্য সাথে নব্বই পাউণ্ড সাথে দিতে হবে। পাসপোর্ট করার জন্য টাকা দিতে হয় জানতাম কিন্তু সারেণ্ডার করার জন্যও দিতে লাগে তা জানতাম না, যাইহোক তবু দিলাম বলা ভালো দিতে হলো, জিজ্ঞেস করলাম কবা সারেণ্ডার সার্টিফিকেট কবে পাবো, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছ্যিলের সুরে বললো কমপক্ষে দু-হপ্তা, এখন খুব চাপের সময় চলছে কি না তাই আরো বেশে লাগতে পারে।
আমি মিন মিন করে বললাম এটা কি একটু আগে পাওয়া যায় না কারণ আমার একটু ইমার্জেন্সী ছিল তাছাড়া আমার নাম দিয়ে একটা সার্টিফেকেট প্রিণ্ট করে দেবে (আজকাল হাতেও লিখতে হয় না)
মেয়েটা বলে একমাত্র কারো শরীর খারাপ থাকলে প্রমান সাপেক্ষে ইমার্জেন্সীতে সারেণ্ডার সার্টিফিকেট পাওয়া যেতে পারে। আমি বললাম না সেরকম কিছু নয় তবে আমার সত্যিই খুব তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
মুখের ভাব না পাল্টে বললো কোন চান্স নেই।
আমাকে এই মেয়েটা এবার সরি না বলেই বোতামে চাপ দিল। বুঝলাম মানে মানে সরে যেতে বলছে
মন খারাপ করে বাইরে বেরিয়ে এলাম। আমাকে যে করেই হোক তিন চারদিনের মধ্যেই কলকাতা যেতে হবে, বাইরে এসে সিকিরিউটিদের সাথে মনের দুঃখের কথা বলছিলাম, ওরাও হু হা করছিল
আমার আবার করাপ্টেড বাঙালী মাইণ্ড, ভাব্লাম শালা ঈণ্ডিয়াতে যদি ঘুষ চলে তাহলে তো এই মিনি ইণ্ডিয়ায় ও ঘুষ চলার কথা, শুধু খুঁজে বের করতে হবে সেই ঘুষখোর। সিকিরিউটিদের বলে কয়ে ভেতরে গেলাম আবার, চলল চিরুনী তল্লাশি, ঘুষের কথা তো দূরের কথা, কোন শালাই কথা শুনতে চায় না, প্রায় ঘণ্টা খানেক বাদে ভগ্ন মনোরথ হয়ে বেরিয়ে এলাম।
এবার আর সিকিরিউটিদের সাথে আলাপ জুড়লাম না, উল্টে ওদেরই একজন আমার সাথে কথা বলতে শুরু করলো, এম্নিতেই মন বিক্ষিপ্ত তার উপর এসব কথা শুনতে ভালো লাগছিল না। চুপচাপ শুনেই যাচ্ছিলাম, কিছুক্ষন পরেই আমার করাপ্টেড মাইণ্ড কিছু একটা গন্ধ পেলো।
একঘণ্টার মধ্যেই সারেণ্ডার সার্টিফিকেট আমার হাতে। পরদিন ভি-এফ-এস অফিসে সেই মেয়েরই হাতে আবার পড়লাম। ওরা এজেন্সীর লোক, রোবটের মত ওদের কাজ করতে হয়, ভাব্লাম হয় মেয়েটার আমাকে মনে নেই নাহলে কি করে এত তাড়াতাড়ি সার্টিফিকেট তা নিয়ে আমার সাথে খেজুরে আলাপ করার মত সময় নেই। চারি দিকে প্রচুর সি-সি টিভি তো একজন ক্লায়েণ্টকে বেশি সময় দেওয়াও মুশকিল।
আমার আর কি ভাগ্যিস সময়মত কলকাতা পোঁছাতে পেরেছিলাম না হলে শৈশবের বন্ধুর ছাদানতলায় দেখতে যাওয়া আর আমার হইয়ে উঠতো না। আর যাবার সময় প্লেনে বসে ভাবছিলাম সত্যি একেই বোধহয় বলে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়।
ডিসক্লেইমারঃ- এটা আমার মনগড়া গল্প, সত্যা-সত্য কিছুই এর মধ্যে নাই। কেউ কিছু খুঁজিয়া পাইলে সব দায় উনার উপর বর্তাইবে।
মন্তব্য
ইদানীং বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাবার জন্য ভিসা পেতেও ভাল সমস্যা করে শুনলাম।
- ঈশান
আমিও তাই শুনেছি, কিন্ত কোন কারণ খুঁজে পেলাম না।
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
"বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়" - দড় বলে কোন বাংলা শব্দ আমার জানা নেই। কেউ কী আছেন আমাকে একটু উদ্ধার করবেন?
প্রবাদটা কিন্তু তাই-ই, দড় মানে বোধ হয় পোক্ত, নিশ্চিত নই।
পাঠুদা খবর কি !!
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
একই প্রশ্ন ছিল আমারো, উত্তর পেয়ে গেলাম পাঠুদার কাছে, অসংখ্য ধন্যবাদ।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
পাঠক ভাই সঠিক ভাবেই বলে দিয়েছেন এটা একটা প্রবাদই, “দড় মানে বোধ হয় পোক্ত”। তাছাড়া দৃঢ় থেকে দড় (আবার বাংলারই কোন আঞ্চলিক ভাষা থেকেও এটা এসে থাকলেও থাকতে পারে)।
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
চট্টগ্রামের ভাষায় দড় মানে শক্ত
আমার এক বাংলাদেশী বন্ধু। আমস্টার্ডামের বাসিন্দা। অফিসের কাজে দুইজন ওলন্দাজ সহকর্মী সমেত ভারত যাবেন। আপনার মতই দুইদিনের নোটিশ। তিনি ওলন্দাজ পাসপোর্টধারী। অনেক দেশেই ভিসা মোকুফ। আর যেসব দেশে ভিসা লাগে, তাঁর আগের অভিগ্গতায় সেগুলোও মাখমের মত দিনের মধ্যেই হয়ে যায়। এই ধারনা নিয়ে ভারতীয় কন্সুলেটে গেলেন।
কন্সুলেটওয়ালি তিনজনের পাসপোর্ট উল্টে পাল্টে দেখে শুধু আমার বন্ধুর পাসপোর্টটি আলাদা করে রাখলেন। বাকী সবার পত্রপাঠ ভিসা হয়ে গেল। আমার বন্ধুকে বলা হল তার ভিসা হতে দুই সপ্তাহ লাগবে। কারন কি? কারন তিনি জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। বাংলাদেশীদের ভারতীয় ভিসা দেবার আগে অতিরিক্ত যাচাই বাছাই করার নীতি আছে, তাতেই এই দিরং।
বাংলাদেশীদের ভারতীয় ভিসা দেবার আগে অতিরিক্ত যাচাই বাছাই করার নীতি আছে।
খাইছে রে, এটার কারণ কি ? এরা পারেও বটে
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
তাইলে এইটারে আসল গফ (গপ বা গপ্পো) বলা যাইতে পারে। আর গপ বা গপ্পো যাই বলেন, এগুলোই ভালো হয়।
.
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
সত্যি কথাটা বলা গেলো না, কেমন আছেন জুলিয়ান ভাই ?
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
ভারতীয় দুতাবাসের বিপরীতে এহেন অনেক অভিযোগ বিদ্যমান। বাংলাদেশিদের সাথে তাদের সমস্যাটা কোথায় তা খুঁজে বের করা দরকার। আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রও এ ব্যপারটা একটু নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন। শুধু ফাইল বেসিসে টাকার হিসেব না করে আর দাদা/দিদিদের পদধুলি না নিয়ে বিষয়গুলোর সুরাহা করলে অনেক অভাগার গতি হয়।
*
মনজুর এলাহী
ভাইরে, শুধুই বাংলাদেশিদের সাথে নয়, যার সাথে পারে তার সাথেই করে, ওখানে গেলে শুধু মন নয় মেজাজটাও বিগড়ে যায়
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
খুব মজা লাগল দাদা, রাগিব ভাইয়ের সাথে একমত, কয়েকবার ভিসা নিয়েছি ভারতের, এ পরিমাণ হ্যারাসমেন্ট আমাকে মারিকান এম্বাসিও করেনি। আড় ভাবখানা এমন যেন, আমরা কোন বদ উদ্দেশ্য নিয়ে যাচ্ছি। ৩-৪ টা ঘটনা আছে, সেগুলা লিখব বলে মনস্থির করলাম।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
নতুন মন্তব্য করুন