বয়েস অনেকটা বেশী হয়ে যাবার জন্য ডাক্তার “আর হবার সম্ভাবনা প্রায় নেই” বলে দেবার পরও যখন প্রতিমার কোল আলো করে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হলো তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে প্রতিমা ছেলের নাম রেখেছিল অজেয়। শুধুই শিক্ষা সম্বল করে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিলেতে লড়াই করতে আসা প্রতিমা চেয়েছিল ছেলে যেনো তার সত্যিকার অর্থেই অজেয় হয়।
প্রতিমার স্বপ্ন কিন্তু স্বপ্নই থেকে যায় নি, বিলেতের মাটিতে আরো অন্যান্য ভালো ছেলে-মেয়েদের সাথে সাথে প্রতিমার ছেলে দুর্বার গতিতে এগিয়ে সব বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে এগিয়ে যাওয়া অজেয়কে কেউ আটকাতে পারছিল না। অজেয়কে কারো পক্ষেই জয় করা সম্ভব হচ্ছিল না। প্রতিমার স্বামী ছেলেকে প্রাইভেট স্কুলে পড়াবার স্বপক্ষে না থাকায় ছেলেকে সাধারণ স্কুলে দিয়েও ঠকেনি প্রতিমা। প্রতিভাধর ছেলে এগিয়েই চলল।
যথা সাধ্য ছেলেকে স্বাবলম্বী করা থেকে শুরু করে আদব-কায়দা কোন কিছুই শেখাতে বাকি রাখেনি প্রতিমা। ছেলে ইংরাজীটাও ওদের মতো করে বলতে শিখলো, না হলে যে ওদের সাথে পাত্তা পাওয়া ভার। এগিয়ে চলল অজেয়
নাঃ ছেলে নিরাশ করে নি প্রতিমাকে। অক্সফোর্ড থেকে পাশ করে আসা ছেলে যখন লণ্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স থেকে তার পড়াশোনা শেষ করে বেরোলো তখন অনেক নামী দামী কোম্পানী তাকে লুফে নাবার জন্য প্রস্তুত ছিল। অসম্ভব ভদ্র আর শিক্ষিত ছেলের চাকুরির অভাব হলো না, বলা ভালো হয় না।
সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল, এরমধ্যে, হটাৎ করেই অজেয় র সাথে অক্সফোর্ডে পড়া আবার একই সাথে একই জায়গায় কাজ করা অ্যানকে বিয়ে করে বসলো। অবশ্য প্রতিমাকে সে জিজ্ঞেস করেছিল। প্রতিমা ছেলের কথা-বার্তায় বুঝেছিল ছেলেকে এই বিয়ে না করতে বলার কোন মানে হয় না। ছেলে তার মায়ের মতামত জানতে চাইছে না, সে শুধু মাকে জানিয়ে রাখতে চাইছে। নাঃ সারাজীবনে একবারও রাগ না করা, একটিবারও মন খারাপ না করা প্রতিমার এবারও খুব একটা কষ্ট হয় নি। নিজেকে শুধু বোঝাতে চেয়েছে, ওরাও তো মানুষ আর ছেলে যদি কাউকে ভালোবেসে বিয়ে করা তাহলে তাতে তার মন খারাপ করার কোন মানে হয় না।
একবার শুধু নিজের ছেলে বৌয়ের মুখে ভাঙ্গা ভাঙ্গা উচ্চারণে প্র-টি-মা শুনতে পেয়ে কেমন জানি থতমত খেয়ে গেছিলো। প্রতিমাদের দেশে বিয়ের পর তার স্বামীর মাকে সাধারনতঃ মা বলেই ডাকে কিনা। তবুও মানিয়ে নিয়েছিল এবং মেনে নিয়েছিল প্রতিমা। প্রতিবাদ করে নি, করার প্রয়োজনও বোধহয় সে বোধ করে নি ।
প্রতিমা তো নিজেই ছেলেকে ইংরেজ হবার শিক্ষা দিয়েছে, তাতে অবশ্য তার কোন কষ্ট নেই, ছেলে তার ভালো থাক এইই তার ইচ্ছে। ওঃ ভুল হয়ে গেছে আজকাল কিন্তু ছেলে আর ওদের সাথে থাকে না, ওদের একটা ফুটফুটে মেয়ের জন্ম হয়েছে কিনা, তাই থাকার জায়গার অভাবের অজুহাত দেখিয়ে ছেলে পালিয়ে গেল।
যাঃ, মন খারাপ করার কোন মানে হয় না, প্রতিমা কখনো মন খারাপ করে নি আজো করলো না সে। বুড়ো স্বামীকে নিয়ে ভালোই তার দিন কেটে যাচ্ছে। ছেলেও উইকেণ্ডে এসে দেখা করে যায়। তাও খুব একটা মন্দ কাটছিল না প্রতিমার দিনগুলো, কিন্তু যেদিন অজেয় র বাবা মারা গেলেন সেদিন প্রতিমা যেনো সত্যি সত্যি বড় একা হয়ে গেলো।
কোম্পানীর কাজে চলে যাওয়া সুদুর চায়না থেকে উড়ে এলো অজেয়। ভালো মতই বাপের শ্রাদ্ধ-শান্তি করালো। নাঃ ওসব আদ্দিকালের গোঁড়া হিন্দুদের মত মাথা ন্যাড়া করে নি অজেয়, অন্যরা কি মনে করলো তা না জানলেও প্রতিমা কিন্তু এতে কিছু মনে করে নি। অনেকেই ভেবেছিল এখন হয়তো না ছেলে মাকে এখানে একা ফেলে রেখে যেতে চাইবে না, কিন্তু চায়নায় মায়ের খুব কষ্ট হবে এই অজুহাতে ছেলে পালিয়ে গেলো।
কখনো মন খারাপ না করা প্রতিমার এবারো মন খারাপ করার কোন কারণ ছিল না। কিছুদিনের মধ্যেই প্রতিমার একা থাকার অভ্যেস হয়ে এলো। তবু কাটছিল দিন ভালোই। ছেলের কথা মনে অবশ্য পড়তো বারবারই, কিন্তু কি আর করা, অতদূরে থাকে ছেলে, মাঝে মধ্যে ফোন করে এটাই অনেক।
দুবছরের মধ্যেই ছেলে পাকাপাকি ভাবে আবার লণ্ডনে ফিরে এলো চায়না থেকে। মায়ের সাথে দেখা করতে এসেছে ছেলে, এর মধ্যে চায়নায় ওদের একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে। খুব খুশী প্রতিমা। তা যাই হোক সবাই ভেবেছিল এবার হয়তো ছেলে তার মা’কে নিজের কাছে নিয়ে রাখবে। প্রতিমা কিন্তু জানতো ছেলে অজেয়-ই থেকে যাবে, বলা বাহুল্য তাইই হলো।
তারপর আর বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না বলে ইচ্ছামৃত্যুর অধিকারিনী প্রতিমা খুশী মনেই এই ধরাধাম থেকে বিদায় নিল। চোখের জল ফেলা ছেলেদের মানায় না বলে সেটা ফেলা থেকে বিরত থাকলো অজেয়। তারপরও আগের নিয়মেই সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল।
কিছুদিন পর অ্যানের মা মারা গেলো। শোকার্ত বাবা একা কি করে থাকবে বলে অজেয়র সাথে পরামর্শ না করেই নিজের কাছে নিয়ে এলো অ্যান। স্বামী বাড়ি এলে হাসি মুখে বললো দেখো আমাদের ছেলে-মেয়েরা একা থাকতে থাকতে কেমন হয়ে যাচ্ছে আর বাবাও একা একা কি করে থাকবে তাই বাবাকে আমাদের কাছেই নিয়ে এলাম। তা ঠিকই বলছো উনি একা থাকতেন কি করে, তা উনাকে এখানে এনে খুব ভালো করেছো আনমনা অজয়ের উত্তর
অনেক রাত হয়ে গেছে, এখনো বিছানায় আসে নি অজেয়। পাত্তা দেয় না অ্যান, ভাবে কিছুক্ষন ফেলুক গে নিজের চোখের জল। এরকম মিনমিনে মিচকে দের দুচোখে দেখতে পারে না অ্যান
পরদিন থেকে আবার সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চলতে থাকে, অজেয় শুধু অজেয়ই থেকে যায়
মন্তব্য
মন খারাপ করা লেখা। তবে ভালো লেগেছে।
বাস্তব বেশিরভাগ সময়েই আমাদের মন খারাপ করে বৈকি। ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ।
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলল অজেয়! কঠিন বাস্তব চিত্র, খুব ভালো লাগল লেখাটা।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সাইফ ভাই থ্যাংকু। কেমন আছেন ?
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
মন খারাপ করে দিলেন...
বেশ কিছু বিরাম চিহ্ণ বাদ গিয়েছে মনে হয়।
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
এটা তো গল্প-ই, মন খারাপ করবেন না, আমরা আমাদের জীবনের সাথে অনেক কিছুকে মেলাতে চাই, কিন্ত মেলানো ঠিক নয়, জীবনের হিসেব বেশিরভাগ সময়েই মেলে না।
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
সুন্দর মন খারাপ করে দেয়া গল্প
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
________________________________________________
হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে
মন ভালো করা কিছু লিখতে চাই, কিন্ত পারি না।
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
মন খারাপ করা লেখা, তবে লেখা ভালো লেগেছে।
নতুন মন্তব্য করুন