পড়ব পড়ব করে কয়েক বছর পার করে দিয়ে অবশেষে এই বই পড়ার সুযোগ হলো এই মাসকয়েক আগে। তাও আবার বন্ধু পড়ছিল, আমি আফসোসমুখে জানিয়েছিলাম যে বইটা আমারও পড়তেই হবে বটে, তাই শুনে এক্কেবারে জন্মদিনের সন্ধ্যায় বই হাতে করে হাজির। একে জন্মদিন, তায় আবার একেবারে অপ্রত্যাশিত উপহার, ধন্যবাদেরও ভাষা যোগায়নি মুখে। আচ্ছা, ধান ভানতে নেমে এমন শিবের গীত না গাওয়াই সমীচীন, সুতরাং পেছনের এইসব হাবিজাবি গল্প তোলা থাক এখনকার মতো, বই পড়ার অনুভূতির গল্পটাই বলি কেবল। আজকাল এক নিঃশ্বাসে কোনোকিছু পড়া হয় না, ধৈর্য্য বা সময় কোনোটাই ঠিকঠাক মেলে না। অনেকগুলো দিন বাদে ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ পড়ে ফেলেছি এক নিঃশ্বাসের মতোই। এই বইটা এত বেশি মানুষ পড়েছেন এবং বইটা সম্পর্কে তাঁদের জানাশোনা এত ভালো যে এ সম্পর্কে কিছু লেখা আমার মতোন অপদার্থের পক্ষে বিপদজনক, অবশ্য একটাই সান্তনা, এ লেখাটা মোটেই গ্রন্থালোচনা ধরনের কিছু নয়, নিতান্তই এক নাদান পাঠকের পাঠানুভূতি মাত্র।
‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ ইতিহাসে ঠাঁই না পাওয়া এক ইতিহাসের গল্প। ইতিহাস আমার পাঠ্য ছিল না বড় ক্লাসে, তবু যতটুকু জানি ইতিহাস প্রাকৃতজনের জীবনকে কোথাও সোনার অক্ষরে দূরে থাক, তামার হরফে লেখারও প্রয়োজন মনে করেনি। তো ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ প্রথম দফায় যে কারণে আমাকে টেনেছে তা হলো এ গল্প ইতিহাসেরই কিন্তু সেই আজন্মকাল ইতিহাসের ঠাঁইবিহীন মানুষগুলোর। এ গল্পের প্রধান চরিত্রগুলো সেইসব অন্ত্যজ মানুষেরা যাদের হাসি-কান্না-সুখ-দুঃখের মিলিত জীবনটুকু বরাবর চাপা পড়ে গেছে ‘বাংলায় কোন মনীষী প্রথম ইসলাম নিয়ে আসেন?’ কিংবা ‘সেন বংশের কীর্তি তুলে ধরো’-র মতো খুব সচেতন প্রশ্ন-প্রয়াসের ফাঁকতালে। লক্ষণ সেনের শাসনামলে ব্রাত্যজনেরা কী অপরাধে দলে দলে রাজার কাছে গর্দান দিয়েছে কিংবা এই অঞ্চলে তুর্কি শাসকের প্রথম ইসলাম কায়েম করার সময় কত শত ব্রাত্যজনের মাথা গড়াগড়ি খেয়েছে আর কেনই বা বাংলার অন্ত্যজ মানুষরা ইসলাম আসার পর দলে দলে সে ধর্ম গ্রহণ করেছে, তার জবাব ইতিহাস লিখেছে কি না আমার জানা নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে, শওকত আলীর এই উপন্যাস সেই অন্ত্যজ মানুষদের এক প্রতিনিধিত্বশীল অংশকেই আমাদের চোখের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে একদম দিনের আলোর মতো স্পষ্ট করে।
বইয়ের দুটি পর্ব- প্রদোষে প্রাকৃতজন আর দুষ্কালের দিবানিশি। দু পর্ব জুড়েই রয়েছে শ্যামাঙ্গ, লীলাবতী, মায়াবতী, বসন্তদাস, মিত্রানন্দের মতো অসংখ্য সাধারণ সহজ সরল মানুষ। এই মানুষেরা সকলেই বড় বেশি সাধারণ কিন্তু তাদের প্রতিদিনের জীবন, স্বপ্ন, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, উত্তর খুঁজে চলা একেকটা প্রশ্ন আমাদের চোখে তাদের অসাধারণ করে তোলে। ইতিহাস ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় বীরদের প্রতিটি তলোয়ারের ঝকঝকানি আলোর বিপরীতে নীল কষ্টে বুঁদ হয়ে যাওয়া অনেক অনেক মানুষের বুকের গহীনটাও পুঁড়ে যাওয়ার অনুচ্চারিত কষ্টগাঁথা আছে, এ সত্যটা একদম নগ্নভাবে প্রকাশিত হয় এই উপন্যাসের পাতায় পাতায়।
যে শিল্পী তার শিল্পের মাঝে বেঁচে থাকবার স্বপ্ন দেখেছিল, যে স্ত্রী ভেবেছিল তার স্বামীর সঙ্গেই সুখে জীবনটা কাটিয়ে দেবে, যে সন্ন্যাসী নিজের জীবনটা অন্যদের কল্যাণের মধ্যেই নিবেদনের জন্য অন্যদের মাথা নত না করার ব্রত শেখাচ্ছিল, সেই তাদের স্বপ্ন, ভালোবাসা আর নিদারুণ বাস্তবের মধ্যে ফারাকটা এসে পড়ে বারবার এই উপন্যাসে।
‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ এক অদ্ভুত সময়ের উপাখ্যান, যে সময় কোনো যোদ্ধার জন্য প্রদোষকাল হলে তার প্রতিপক্ষের জন্য উষালগ্ন। যে সময়ে হিন্দু রাজা ও সামন্তপ্রভুদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর প্রতিরোধের শক্তিটুকুও নেই, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে আছে কেবল সীমাহীন সন্দেহ আর অবিশ্বাস, সেই সময়ে তুর্কি প্রতিনিধি ইসলামের বার্তাও এই নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন শান্তি আর বিশ্বাসের বিষয় ছিল না, তাদের ঘোড়ার খুরও বিধ্বস্ত অগ্নিদগ্ধ গ্রামে পুনরায় ধ্বংসলীলা চালাতে আসে। শত শত বছর ধরে নিপীড়িত ব্রাত্যজনের জন্য সে সময় ছিল সত্যিই অন্ধকারের যার কোনোদিকে এতটুকু আলোর দিশা পেতে তারা মরিয়া হয়ে খুঁজেছে চতুর্দিক। আবার সেই অন্ধকার সময়েও তাদের বুকে যেমন ভালোবাসা আছে, তেমনই অভিমন্যুদাসের মতোই কারও কারও বুকে জ্বলে নির্নিমেষ প্রতিশোধের আগুন।
এই বইটি ভালো লাগার দ্বিতীয় কারণ এর চমৎকার ভাষা। তৎসমবহুল প্রমিত বাংলার ব্যবহার আমি এর আগে পড়িনি কোথাও। কেবল শব্দ হিসেবে যে শব্দগুলোকে জানতাম, সেইগুলোই পাশাপাশি বসে এত চমৎকার বাক্য হয়ে গেছে তাও আবার কি না চলিত ভাষায়, এই বিষয়টি অসাধারণ লেগেছে।
লেখক শওকত আলীর এই একটিইমাত্র বই পড়েছি, আর তাতে আমি নাদানস্য নাদান পাঠক মুগ্ধ। পড়তে গিয়ে এবং পড়ার পরও মনে হয়েছে, সচেতন এবং বোদ্ধা পাঠকদের জন্যও এই বইয়ের গ্রহণযোগ্যতা কম হবার নয় কোনোকালেই।
আমার কাছে থাকা বইটি প্রসঙ্গে:
বই: প্রদোষে প্রাকৃতজন
লেখক: শওকত আলী
পাবলিশার্স: ইউপিএল (দশম মুদ্রণ, ২০১৫)
মূল্য: ২৬০ টাকা
মন্তব্য
শিরোনামটা দয়া করে ঠিক করে দিন, প্রিয় মডারেটর। বইয়ের নামটাই বা এমন ভুল করলাম কী করে? ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ করে দিন, প্লিজ...
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
অভিনন্দন। প্রিয় দেবদ্যুতি, এখন তুমি নিজেই নিজের লেখার শিরোনাম ঠিক করতে পারবে।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
জানতামই না তথ্যটা। অনেক ধন্যবাদ তথ্যটার জন্য, সাদিয়া’পু
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
দ্যুতিদিদি, রিভিউ পড়ে ভালো লেগেছে। বইটি পড়ার আগ্রহ জন্মেছে। বইয়ে ব্যবহৃত লিখনশৈলীর, যেটার তুমি আলাদা করে উল্লেখ করেছ, দু-একটি নমুনা তুলে দিলে আরও ভাল লাগত।
হাচল হিসেবে প্রথম লেখা? অভিনন্দন!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অভিনন্দিত হলুম, লহমা’দা। তো হাচল হয়ে প্রথমে তোমাকেই একটা বার্তা পাঠিয়েছিলুম, সে বোধহয় পৌঁছোয়নি, পৌঁছবেই বা কী করে, টেকনোলজির জগতে আমার বিশেষ অজ্ঞতার একটামাত্র প্রমাণ এটা।
আর হাতের কাছে বইটা নেই, তোমাকে সে লেখার নমুনা পাঠাই কী করে বলো তো, সন্ধ্যের পরে পাঠাবো, ঠিকাছে?
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
প্রথমেই দেখো বইয়ের শুরুর লাইনগুলো-
এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে তুলে দিচ্ছি-
একদম শেষে লেখক বলছেন-
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
অসাধারণ! অনেক ধন্যবাদ দ্যুতিদিদি।
তোমার বার্তাটা না পাওয়া বড়ই দুঃখের হল। কিন্তু বার্তা পাঠিয়েছিলে সেইটা জানাটা খুব আনন্দ দিলো।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অসাধারণ একটি উপন্যাস। এই উপন্যাসের ভাষা নিয়ে লেখক বিস্তর এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। এই বইয়ের ভাষা ও বর্ণনাভঙ্গীর ভেতর ঢুকতে সময় লাগলেও সেখান থেকে বেরুনো সহজ নয়।
শওকত আলী'র আরো কয়েকটি বই পড়েছিলাম। এর ভেতর 'উত্তরের ক্ষেপ' আর 'দক্ষিণায়নের দিন' পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
শওকত আলীর বইগুলোর নামই কী সুন্দর! ‘উত্তরের ক্ষেপ’ আর ‘দক্ষিণায়নের দিন’ আমিও পড়ব নিশ্চয়ই শুভকামনা...
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
আমি এটা পড়া শুরু করেছি। প্রায় অর্ধেকের মত পড়েও ফেলেছি। প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পরেই স্থির করেছিলাম এই বই নিয়ে পাঠ্যানুভূতি লিখবো। তার আগেই আপনার লেখা চলে এলো।
অসাধারণ একটি উপন্যাস। শব্দ প্রয়োগ, ভাষাশৈলী, চরিত্রের উপস্থাপন, প্রস্তাবনা সব মিলিয়ে অসাধারণ।
আমিও নবাম্র দিয়ে মৎস্য ব্যঞ্জন অধিক পছন্দ করি। আমি পড়া শেষ করে নিই। এই বই নিয়ে আমারও লেখার ইচ্ছে আছে।
আপনার লেখা পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
শুভকামনা জানবেন।
সত্যি কথা বলতে কী, এই বই নিয়ে কোনোদিন এতটুকুও লিখব, সে সাহস করতে পারিনি এতদিন। সন্দেশ যখন ঘোষণা দিল গত বছর পড়া সেরা বইটি নিয়ে লিখতে, ভেবে দেখলাম, গত বছর পড়া সামান্য ক’টি বইয়ের মধ্যে সেরা এটিই। আমার গ্রন্থালোচনার সাহস হবে না বইটি নিয়ে, তাই পাঠানুভূতিই সই, লিখে ফেললাম।
আপনার পড়া শেষ হলে আরেকটি লেখা আশা করতে পারি নিশ্চয়ই শুভকামনা।
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
হাচলত্বের অভিনন্দন গ্রহণ করো হে! পোস্ট লিখে তামা তামা করে দেও বুঝলা। শুভকামনা।
বইটা আমি পড়িনি তাই ও বিষয়ে 'রতন কোনো কথা কহিল না' নীতি নিলাম। ভালো থেকো।
রতন যখন পড়িবে তখন নিশ্চয়ই কথা কহিবে, এই ভাবিয়াই পুলকিত হইলাম আপাতত। আমি কি আর লিখে তামা তামা করা লোক, বলো?... শুভকামনা তোমারও জন্য, বালিকা
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
প্রদোষে প্রাকৃতজন ১৯৭৮ সালে আর দুষ্কালের দিবানিশি ১৯৭৯ সালে ঈদ সংখ্যা বিচিত্রায় প্রথম প্রকাশিত হয়। পরে বই আকারে বের হবার সময় দুটোকে একসাথ করে অখণ্ড আকারে বের করা হয়। একই প্রকার ঘটনা ঘটে শওকত আলীর দক্ষিণায়নের দিন + কুলায়ে কালস্রোত + পূর্বরাত্রি পূর্বদিন উপন্যাস ত্রয়ী, ওয়ারিশ + শরিক + দলিল উপন্যাসত্রয়ী এবং উত্তরের খেপ + দক্ষিণে মোহনা উপন্যাসদ্বয়ের ক্ষেত্রে। এই উপন্যাসগুলো আলাদা আলাদাও প্রকাশিত হয়েছে। আগ্রহী পাঠক এই তিনটা গুচ্ছ পড়ে দেখতে পারেন। শওকত আলীর একক উপন্যাসগুলোর মধ্যে অপেক্ষা, বিদায় নিরঞ্জন, পিঙ্গল আকাশ আর উন্মূল বাসনা পড়তে পারেন। অত্যন্ত কুণ্ঠার সাথে বলছি, ২০০০ সাল অনওয়ার্ড শওকত আলীর লেখা গল্প/উপন্যাস মনে হয় অ্যাভয়েড করতে পারেন।
ঐতিহাসিক উপন্যাসের ক্ষেত্রে ঘটনা কার চোখ দিয়ে দেখা হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বহুল আলোচিত ঐতিহাসিক চরিত্রের (হিরো বা ভিলেইন) চোখ দিয়ে দেখা অথবা বহুল আলোচিত ঐতিহাসিক ঘটনাকেন্দ্রিক নৈর্ব্যক্তিক উপন্যাসই বেশি দেখা যায়। সে তুলনায় নিম্নবর্গের মানুষের দৃষ্টিতে দেখা ঐতিহাসিক উপন্যাসের সংখ্যা বেশি নয়। বাংলা ভাষায় লেখা, নিম্নবর্গের মানুষের দৃষ্টিতে দেখা সার্থক ঐতিহাসিক উপন্যাস সম্ভবত সত্যেন সেন প্রথম লেখেন। শওকত আলীর আলোচ্য উপন্যাসদ্বয় এর আরেকটি সার্থক উদাহরণ।
প্রায় আটশ' বছর আগের জীবনযাত্রার চিত্রণ একটা অসম্ভব কঠিন কাজ। বাংলা ভাষার অনেক ঔপন্যাসিক এই প্রকার উপন্যাস লিখতে গিয়ে পদে পদে ভুল করেছেন (উদাহরণ চাহিয়া লজ্জা দিবেন না)। এই অসম্ভব কঠিন কাজটা শওকত আলী দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করেছেন।
এই উপন্যাসদ্বয়ের সবচে' আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এর ভাষা। শুধুমাত্র তৎসম শব্দ নয়, আমার ভুল না হয়ে থাকলে এই উপন্যাসে প্রাকৃত বা পালি ভাষার শব্দও ব্যবহার করা হয়েছে। অপ্রচলিত প্রতিশব্দ বা উপমা ব্যবহার সত্ত্বেও উপন্যাসের ভাষা কোথাও ঝুলে পড়েনি। এই এক্সপেরিমেন্টটা শওকত আলী আর কেন করেননি তা জানি না, তবে অন্য কেউ মনে হয় সাহস করে উঠতে পারেনি।
প্রিয় ঔপন্যাসিকের প্রিয় উপন্যাস নিয়ে লেখার জন্য দেবদ্যুতিকে ধন্যবাদ।
আপনি লেখকের প্রায় সব লেখা পড়েছেন, বোঝা গেল। আপনার ব্যাখ্যা অত্যন্ত চমৎকার আমি মাত্র এই বইটাই পড়েছি আর বইটা শেষ না করে অন্যদিকে মন দিতেই পারিনি। এখন ব্যস্ততা বড় কম নয়, সবদিকের চাপটাও সেইসঙ্গে ক্রমবর্ধমান, সুতরাং এক একটা বই পড়তে অনেক সময় নেয়া হয়ে যায়, সেখানে এই বইটা একবারে পড়তে পারার পুরো কৃতিত্ব লেখকের। অসাধারণ বললে নেহাতই কম হয়ে যায় বইটা সম্পর্কে। অন্যগুলোও শীঘ্রই পড়বার আশা রাখি।
শুভেচ্ছা জানবেন। আর আপনি নাম লেখেননি মন্তব্যের শেষে। চিনতে পারছি না
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
প্রদোষে প্রাকৃতজন প্রথম পড়েই হা হয়ে গেছিলাম এর ভাষা, ঘটনা এবং বর্ণনার চমৎকারিত্ব দেখে! প্রাকৃতজন বা ব্রাত্যজনের কথা লেখার সাহস খুব কম লেখকের থাকে বলেই আমার মনে হয়। এমন আর একজন আছেন- সমরেশ বসু। তাঁর গঙ্গা উপন্যাসের চিত্রকল্প তৈরি করেই কাটিয়ে দেওয়া যায় অনেকটা সময়।
বাংলাদেশের আনাচেকানাচে বিপুল ভ্রমণ আর লোকসংস্কৃতি পাঠের অনুভূতি আমাকে বলে- প্রান্তজনের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ না থাকলে প্রান্তজনের কথা লেখা যায় না। দরদ থাকা আর যোগাযোগের ঘনিষ্ঠতার কারণে ভেতর থেকে দেখা দুটোর মধ্যে ফারাক আছে। আর ইতিহাস বলে, প্রান্তজনের ইতিহাস লেখা থাকে না! তাই তার ইতিহাস নির্মাণও কঠিন বিষয়।
শাওকত আলী বাংলাদেশে প্রায় উপেক্ষিত একজন লেখক। এর কারণ কী?
শুভেচ্ছা।
অনার্য তাপস
সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’ পড়েছি, অনবদ্য, কিংবা তারাশঙ্করের ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ও। প্রাকৃতজনদের নিয়ে কম লেখা মানুষদের মধ্যে এই দুজন এবং তাঁদের এই বইগুলো প্রথমদিকেই থাকবে নিঃসন্দেহে। তারপরও আমার মনে হয় ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ লেখা ওই উপন্যাসগুলোর চাইতেও আরেকটু কঠিন ছিল কারণ এর প্রেক্ষাপটটাই ঐতিহাসিক এবং অবধারিতভাবেই সেই ইতিহাস সারা বাংলার জন্য কল্পনাতীত রকমের গুরুত্বপূর্ণ। লেখকের সার্থকতাটা এখানেও বটে।
শওকত আলীর উপেক্ষার ইতিহাস সম্পর্কে মোটেই আলোকপাত করতে পারি না
শুভেচ্ছা
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
শওকত আলীকে এখন উপেক্ষিত মনে হলেও গত শতকের সত্তর/আশি'র দশকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখকই ছিলেন। তারপর বাংলাদেশর পাঠকবর্গ অতিমাত্রায় হুমায়ূন আহমেদের দিকে ঝুঁকে পড়ার মধ্য দিয়ে শওকত আলী কিংবা অন্যরা ধীরে ধীরে গৌন হয়ে পড়েন।
এই তথ্যটা জানা ছিলো না মোটেও... ইন্টারেস্টিং
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
আমিও অনেক দিন ধরেই পড়বো পড়বো করছি, পড়ে ফেলতে হবে।
পড়েই ফেলুন
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
হাচলাভিনন্দন!
বই কমন পড়ছে, তাই বেশি কিছু কইলাম না।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
কমন পড়লে তো আরও বেশি কওয়ার কথা, না?
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
৮০-র দশকের কোন এক সময় বইটা পড়েছিলাম। বাংলায় 'ঐতিহাসিক উপন্যাস' টাইপের মধ্যে আমার পড়া অন্যতম সেরা দুর্দান্ত এক উপন্যাস। পড়তে পড়তে মনে হয়েছিল আমিই যেন প্রোটাগনিস্ট হয়ে চলে গেছি সেই যুগে।
সমরেশ বসু আর তারাশঙ্করের তুলনা এসেছে। দুজনেই দিকপাল লেখক, তবে তাঁদের স্টাইল ভিন্ন। সমরেশের যে কোন লেখাতেই আধুনিক নাগরিকবোধের প্রচ্ছন্ন / পরোক্ষ / সাবলাইমিনাল কিন্তু অনুভাবযোগ্য পিওভি ও ভাইব এড়ানো যায় না, বিষয়বস্তু যাইহোক না কেন। তারাশঙ্করের লেখাতে এটা কম হলেও আছে। শওকত আলীর এই বইতে, যদ্দুর মনে পড়ে (জং ধরা স্মৃতির ভিত্তিতে), এটা মনে হয় ততটা অনুভবযোগ্য নয়। ওপার বাংলার লেখকদের মধ্যে এইদিক থেকে মহাশ্বেতা দেবী বরং আমার প্রিয়।
****************************************
সমরেশের ‘গঙ্গা’য় আধুনিক নাগরিক ভাইব কিন্তু পাইনি কোথাও যদ্দুর মনে পড়ে।
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
চলে গেলেন।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন