বহুকাল আগে আমি নিজেকে হারিয়ে তোকে ভালবাসতে চেয়েছিলাম; পারিনি। যখন ফিরে এলাম, দেখলাম সে ঘর নেই আর; অভিমানে বিলীন। সেই থেকে আর কোথাও ফিরে যাওয়া হয়নি আমার, না নিজের জন্মভূমিতে-না কাঙ্খিত মাতৃভূমিতে-না এই ভূমে!
তোর আর আমার, আমার আর আমার প্রেমের কিংবা আমার আর আমার প্রেয়শীদের মাঝে যে রাজনীতির দেয়াল উঠেছিলো তার আজ অনেক মন্ডু গজিঁয়েছে। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে এই মাথাগুলো ফণা তুলে আঘাত করেনা! আঘাতে আঘাতে প্রায় ভুলতে বসেছি, একদিন আমারো দু’চোখ সজল হতো।
তাও মাঝে মাঝে রাত্রিরে কিংবা কোন একদুপুরে কাত হয়ে শোয়া প্রেয়শীটি ঘুমিয়ে পড়লে, এখনো ভাবি কালো খরগোশটির কথা কিংবা সক্রেটিসের সেই দু’খানি মূল্যবান পায়ের কথা! এখনো অবশ্য চ্যাপলিনের মতোই আমার নির্বাক হাসি পাই। কিন্তু বেশকিছুদিন আগে নিজেকে যখন আবিষ্কার করলাম জানোয়ারদের দলে, সেই থেকে আমার আর চিড়িয়াখানাতেই যাওয়া লাগেনা!
এসব আবোল-তাবোল গদ্যে-পদ্যে ভাবনা বাদ দিয়ে একটু আগে নিভিয়ে দিলাম ঘরের বাতিটি। আচমকা যেন ঝেকেঁ বসলো বাড়িভর্তি নিস্তব্দতা আর দাদার নাক ডাকার তরঙ্গায়িত শব্দ। পাশে জানালার ফাঁক দিয়ে দেখি কুয়াশার চাদরে ঢাকা ট্রাইফান ক্লোস; রাস্তায় কুয়াশার নেশায় বুদ হয়ে থাকা সোডিয়াম বাতি, যেন জলরঙ্গে আঁকা কোন ছবি! আমি ধীরে ধীরে ডাবল গ্লেইজড্ জানালা গলে বেড়িয়ে পড়ি আবারো সেই বহু পুরানো অভ্যেসে।
আমার মেদহীন শরীরটা মরা-পচা লাশের মতো ফুলে উঠেছে। এমন কি সারা শরীরের খাবলা খাবলা গর্তও দৃশ্যমান, যেন বিস্ফোরণের জন্য উন্মুখ! আমি সহ্য করতে পারিনা এই দৃশ্য......অবিরত খুজঁতে থাকি আমার হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্রগুলো। ছোটবেলায় ছাদে শুয়ে শুয়ে যে তারাটিকে ধরে গুনতে চেষ্টা করতাম বাকীগুলো; আজ প্রথমবারের মতো গেলাম ঐটাতে! একে একে প্রায় সব কটা নক্ষত্র ঘুরেও পেলাম না আমার বাবাকে। আগুনে বিলীন লুনা’পা, আদরের ছোট্ট ভাইয়া আবীর, পরম বন্ধু শিমুল –তোদেরও খুজেঁ পেলাম না কোথাও! তোদের কি আরো দূরের কোন নক্ষত্রে বসবাস?
অজানা এক গতিতে ছুটে যাই সপ্তম আসমান ফেলে......একটা আকার ধরার চেষ্টা করি অবিরাম-প্রাণপন! জীবনানন্দের আয়ুহীন স্তব্দতা ও বিস্ময়ে, দালির পরাবাস্তব উপত্যকায়, ভয়েসের ঠাট্টা-তামাশায়, পিকাসোর ভাঙ্গাগড়ার নানাঅঙ্গের নানা রুপে, মিরোর জৈবিক ভালবাসায়, কুব্রিকের দেহ চষে চষে, ফ্রিদার চলমান বিছানায় দেহ পিঞ্জর আর নক্ষত্রের সম্পর্ক দেখতে দেখতে কিংবা কিস্লোভস্কির সাথে শহরময় একা ঘুড়তে ঘুড়তে আমি ক্লান্ত......আমার বিকৃত দেহটা আর কয়েক সেকেন্ড পর বিস্ফোরিত হতে যাচ্ছে। আমি ভয় বা বিস্মিত হওয়া ভুলে গিয়ে বরং আয়ূহীন এক স্তব্দতায় পাশ ফিরে শূই; আজ বহুকাল পর আমার চোখ দু’টো জ্বালা করে খুব! বহুদূর থেকে আমার অনাগত সন্তানের স্বর ভেসে আসে,‘................... বাবা, ও বাবা, তুমি কেঁদো না......’। আমি জলের আস্তর সড়িয়ে সড়িয়ে ওকে ছোয়াঁর চেষ্টা করি।।
মন্তব্য
হ, উপরের ছবিটা ফ্রিদা কাহলোর (আর নীচেরটা কিস্লোভস্কির ফিল্মের ষ্টিল পিক), আমার অসম্ভব প্রিয় একজন শিল্পী । কাজটার নাম বা তার নাম দেইনি ইচ্ছে কইরা, ছবিটা এতোটা পাওয়াফুল যে দৃষ্টি ওদিকে টানে বেশী! তাছাড়া তিনি একেছেনও ভিন্নার্থে। আমি যেহেতু ঐটা রিলেইট করতে চেয়েছি নিজের বোধের সাথে তাই মূল নামটা উহ্য রাখলাম, কারন এখন ছবিটা আমার বোধের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ!
অবিরত খুজঁতে থাকি আমার হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্রগুলো। ছোটবেলায় ছাদে শুয়ে শুয়ে যে তারাটিকে ধরে গুনতে চেষ্টা করতাম বাকীগুলো; আজ প্রথমবারের মতো গেলাম ঐটাতে! একে একে প্রায় সব কটা নক্ষত্র ঘুরেও পেলাম না আমার বাবাকে। আগুনে বিলীন লুনা’পা, আদরের ছোট্ট ভাইয়া আবীর, পরম বন্ধু শিমুল –তোদেরও খুজেঁ পেলাম না কোথাও! তোদের কি আরো দূরের কোন নক্ষত্রে বসবাস?
অদ্ভুত লাগ্লো লাইন গুলো...
এই বিষাদ এই সুর...আমাকেও ছুয়ে গেলো ভাই...এরা থাকে কোথায়?
আমাদের মধ্যে নাকি??
---------------------------------------------------------
জায়গায় খাইয়া, জায়গায় ব্রেক...
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
কী কষ্ট মাখা সব শব্দ।
সব নিজের জীবনের সাথে মিলে যায়। এইরকম করে যদি লিখতে পারতাম।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ভালো লেগেছে খুব।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
[restrict] besh ....
amar nijer ekta likhar kotha mone porlo khub... self-obsessed bastard er moto kore...
KOthon kobita ta...
chomotkaar likha.. mama.. chomotkar
তুমি মিয়া কই, কাজে নাকি? হু তোমার কথন কবিতাটার সাথে এইটার একটা ভাবগত মিল আছে। ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর !
সবাইকে ধন্যবাদ কষ্ট করে দীর্ঘ লেখাটা পড়ার জন্য।
বিচ্ছিন্ন ভাবনার গোছালো পংক্তি। ভাল্লাগলো খুব।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
বড়দের ভালো লাগলে আমরা ছোটদেরও আনন্দ হয় খুব, থাংকু শেখ ভাই।
নতুন মন্তব্য করুন