হঠাত করেই ফোন পেলাম এক কোম্পানী থেকে, “আপনি কাল থেকে জয়েন করতে পারবেন?”। আমার বেশ ভালো লেগেছিলো চাকরীটা পেয়ে।পরের দিনই গেলাম জয়েন করতে। যথারীতি আমার লাইন ম্যানেজার আমাকে নিয়ে চললেন জব রেসপনসিবিলিটি বোঝাতে। আমরা হাসপাতালের মতো একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছালাম। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা এইটা আদো কোন হাসপাতাল কিনা! থাক ধরে নিই যে এটি একটি হাসপাতাল। যাইহোক হাসপাতালের করিডোর ধরে আমরা হেটেঁ চলেছি, লম্বা এই করিডোরটি সামনে গিয়ে দু’দিকে চলে গেছে। আমরা হাতের ডানদিকে মোড় ঘুড়তে ঘুড়তেই আমার চোখ গিয়ে আটঁকে যায় একটা ঘটতে যাওয়া ঘটনা দিকে। দেখি হৃষ্টপুষ্ট তেজী একটা ষাড়কে বেশ ক’জনে মিলে জবাই করতে চেষ্টা করছে। আমি আতঁকে উঠের আগেই দেখি ঠিক আমার সামনে করিডোরের মেঝের উপর আরেকটি সুন্দর শুভ্র পশমের ষাড়কেও জবাই করতে এগিয়ে গেল বেশ ক’জন। আমি অবাক হয়ে দেখতে পেলাম, শুভ্র ষাঁড়টি চোখে টলটল জল নিয়ে শুয়ে পড়লো মেঝেতে; কেউ তাকে ঝাপটে ধরার আগেই! নিজের লম্বা সুন্দর গলাটাকে এমনভাবে বাড়িয়ে দিলো যেনো কোন আপত্তিই নেই তার মরণে!তার আচরণে মুগ্ধ, আশ্চর্য, মর্মাহত ও দুঃখিত হওয়ার আগেই কসাই সাহেব শুভ্র ষাড়টির গলায় সঝোড়ে চালিয়ে দিলেন হাতের ধারালো অস্ত্রটি!ষাঁড়টির গলা দিয়ে রাস্তার ধারে ফেটে যাওয়া নলের পানির স্রোতের মতো ফিনকি দিয়ে বের হয়ে আসলো রক্ত। সাদার উপর লাল রক্ত তৈরী করে যাচ্ছে ভয়াবহ সব জৈবিক ফর্ম অতি দ্রুত লয়ে; যা নিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে অন্য আরেকটি ফর্মে এবং একসময় রক্তগুলো শুকাতে থাকলে জানি একটি স্থির ফর্মে দাঁড়াবে।
চোখ দু’টো ছলছল করতে থাকে আমার, অনেক কষ্টে কান্নাটা গলার কাছে আটকে রাখি। কিন্তু লাল হয়ে উঠা শুভ্র গরুটি তা বুঝতে পেরে হঠাত সে নিজের বিষাদ চিহ্ন মুছে ফেলে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে তাকায়! সে তার সামনের পায়ের দু’আঙ্গুলে মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙ্গা ছুরির টুকরোটা তুলে নিয়ে শরীরটাকে একটু বাকিঁয়ে ছুড়ে মারে আমার দিকে!ততক্ষণাত আমি আমার কান্না কান্না ভাব থামিয়ে একটু দূরে সড়ে যায়। যদিও সড়ে দাড়াঁনোর কোন প্রয়োজন ছিলো না; কেননা ওটা করিডোরে হাটঁতে থাকা লোকজনের গায়ের সাথে লেগে ছিটকে পড়েছে দূরে কোথাও! শুভ্র ষাড়টি আমার দিকে দু’চোখ পাকিঁয়ে তাকাঁনো অবস্থাতে লাল হয়ে মরে গেল; একটু পর সে একটি স্থির ফর্মে থিতু হবে।
আমি সম্বিত ফিরে পেয়ে আমার বসের দিকে তাকাতেই সে বললো, “বুঝলেন তো আপনার কি করতে হবে? এরকম শুধু তাকিঁয়ে থাকলে হবে না, অতি দ্রুততার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার স্কেচ করে ফেলতে হবে এবং পরে জন্তুটি মারা গেলে কালার চাপাবেন। বুঝলেন?” আমি ধীরে ধীরে বললাম, আচ্ছা। তিনি বললেন, “এক্রেলিক কালার ব্যবহার করবেন; ওতে কাজে যেমন আরাম পাবেন, শুকাবেও জলদি”। এরপর আমরা মূল অফিস ঘরের দিকে এগুতে থাকি, আর পড়তে চেষ্টা করি আমার মগজে ঘটতে থাকা ভাবনাগুলো!ব্যাপারটাকে দেখা যাক শব্দ দিয়ে ধরা যায় কিনা!
আমি একঃ মানুষ কেন ভালবাসে? আবার কেন দূরে সড়ে আসে বা কেনই বা একা থাকে?
আমি দুইঃ যখন আমি ভালবাসি বা ভালবাসার চেষ্টা করি বা যা করি ঐ টাইপের তা, তখন কিছুক্ষনের জন্য আমি বা আমরা নিজেদের আইডেনটিটি ভুলে যেতে থাকি; ভাবতে থাকি আমরা যেন হরিহর আত্মা, আহা! কিন্তু একটা পর্যায়ে যখন ভালবাসার বর্জপাত বা বীর্জপাত হয় তখন থামি, মনে পড়ে নিজেদের স্বকীয় স্বত্তার কথা; দু’জন জাষ্ট দূরে থাকতেই ভালবাসি।......এই তো?
আমি একঃ কোন এক ষ্টেশনে পড়েছিলাম, “Life is Laugh”। হু, জীবনতো হাসিই বটে! আমরা বহু কারনেই হাসি তারমধ্যে দু’টি বেশ মজার! এক. শিশুর মতো নিষ্পাপ কিন্তু বোধহীন স্বার্থপর টাইপ। দুই. নিজের জীবনের দশা দেখে হাসা; ভাবি কেন মরিনা! মরে গেলে কিছু নাই মিলিয়ে যাওয়া ছাড়া, তাই তেমন ইন্টারেষ্টিংও লাগে না।
আমি দুইঃ ......হু, জীবন এই রকমেরই এক তামাশার নাম। যে তামাশা নিজে দেখবা এবং দেখাবা। মানে নিজে হাস এবং অন্যকেও হাসাও। এই তো জীবন??
আমি একঃ তাই ভাবলাম, কাজটা শুরু করে দেই আর না ভেবে। যাইহোক ডেড-বডিগুলো মডেল হিসেবে বেশ ভালোই; নড়ে-চড়ে না!!
(বিঃদ্রঃ কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের যারা জীবনের নিগূঢ় অর্থ অনেক আগেই আমাদের চোখের সামনে মেলে ধরেছেন; আমরা কখনো দেখেছি এবং বুঝেছি আবার কখনো দেখেছি কিন্তু না বুঝে ছুড়ে ফেলেছি। যাদের ছবি ব্যবহার করেছি এই লেখাটাকে বোধগম্য করতে তাদের কিছুই দেয়ার নেই আমার কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া। কি অদ্ভূত, কিভাবে মিলে যায় কিছু কিছু মানুষের চিন্তা বা স্বপ্ন!)
মন্তব্য
আপনি যে কেমনে হুট কইরা বিয়া কইরা মরহুম হইয়া গেলেন তাও আমার মগজে ঢুকে না। আমারে একদিন ঠান্ডা মাথায় বুঝাইয়া বইলেন তো এর কি কি ফজিলত!!
ভাল লাগলো ধ্রুবদা। বেশ ভাবনার উদ্রেক করে। মন্তব্যের পাতায় চোখ রাখছি... এখানে জম্পেশ আলোচনার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
থাকস্ তারেক। আমি কিন্তু লেখাটা যখন ডাফট্ থেকে ফাইনাল করছিলাম সচলের জন্য তখনও কিন্তু আপনার মতো আশাবাদী হতে পারিনি...হা হা হা...কিন্তু একজনকেও যদি কিছু ভাবনার বিষ খাইয়ে দিতে পারি তবে মন্দ না...।
কিছুই তো বুঝলাম না।
ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।
প্রতিটি ভাগকে আলাদা করে পড়লে বেশ কিছু দৃশ্য চোখে ভাসে। কিন্তু পুরোটা মিলে একটা গল্প দাঁড় করাতে বেশ কসরত করেও ব্যার্থ হলাম।
পাঠক দুর্বল জানি, তবে লেখকের উপরেও পূর্ণ দোষ চাপানোর সুযোগ হাতছাড়া করছি না।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আপনি জীবনে যত স্বপ্ন দেখেছেন তা কি জোড়া দিয়ে একটা গল্প দাড়াঁই সবসময়? আবার জীবনে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন বিছিন্ন ঘটনার হঠাত করে কোন এক সময়ে এসে যোগসুত্র পাওয়া কি যায়না? তাছাড়া আমরা কি সংগীতের বা রাগের প্রতিটি তাল লয় সবসময় ঠিকঠাক বুঝি ? বা এখানে উল্লেখ করা ছবিগুলোর ঠিক ঠিক মানে কি হঠাত এক দেখায় বোঝা কি সম্ভব? আর সম্ভব হলেও তা কি সম্পূর্ণ মানে নিয়ে দাড়াঁই আপনার যুক্তি বোধের বাউন্ডারিতে? আপনিই হয়তো এর উত্তর ভালো জানেন!
আপনার আরোপিত অভিযোগ মাথা পেতে নিলাম। ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।
ধ্রুব,
আপনি কি গোস্বা করলেন কি না বুঝতে পারলাম না। মন্তব্য পড়ে আসলে সেরকমই লাগলো...। সে রকম কিছু হলে দুঃখ প্রকাশ করছি।
আপনার কথাগুলোর সাথে একমত। জীবনে অনেক স্বপ্ন জোড়া লাগে নি, অনেক সঙ্গীতের মানে বুঝি নি...। তবে তারপরেও মন্তব্য করেছি, কারণ আপনার এই লেখাটার গায়ে 'গল্প' ট্যাগ লাগানো ছিলো, তাই গল্প ভেবেই পড়তে গিয়েছি, পড়তে গিয়ে সাধারণত যেটা হয়- বুঝতে চেয়েছি, তারপরে ভাল মতন বুঝতে না পেরে খোলামনে মন্তব্য করেছি!
সব স্বপ্ন বা সঙ্গীতের মত পৃথিবীর তাবৎ লেখাও যে আমার বুঝতে হবে, এরকম কোন দিব্যি অবশ্য নেই। তাই, আপনার যদি সত্যিই খারাপ লাগে তো আগের মন্তব্যটা ফিরিয়ে নিলাম।
ভাল থাকবেন।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
সব লেখা সবাইকে বুঝতে হবে এমনটাও আমি মনে করিনা। সম্ভবত এই লাইনে জ্ঞান সীমীত বলেই এমনটা মনে হয়েছে। তবে ব্যক্তিক্রম ধর্মী এই আলোচনার জন্য আপনাকে সাধূবাদ।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
থাঙ্কু ভাইজান
এখানে আমার জ্ঞান সীমীত পড়তে হবে।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
স্বপ্নদৃশ্য হিসেবে পড়লে মজাই লাগে। তবে গল্প হিসেব পড়তে গেলে দৃশ্যগুলো জোড়া দিতে সমস্যা হচ্ছে।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
গল্পটা লেখকের ভাবনার ক্যানভাস। আমার মনে হয় যতটা না পাঠকের জন্য লেখা তার চেয়ে বেশি লেখকের নিজের জন্য। অতিরিক্ত কল্পনাশ্রয়ের জন্য এ গল্পে প্রতিটি পাঠকের অনুভূতি ও অনুধাবণ ভিন্ন হবে বলে আমার ধারণা।
আমি আমার স্থুল বুদ্ধি দিয়ে গল্পে যোগসূত্র আবিষ্কার করার চেষ্টা করি, যেটা হয়তো কারও সাথেই মিলবেনা। একনকি হয়তো লেখকের সাথেও।
গল্পের নায়ক হঠাৎ করেই চাকরির ডাক পেলেন। এর আগে তিনি ছিলেন জগৎ সংসার নিয়ে উদাসীন। চাকরি পেয়ে তিনি গিয়ে পড়লেন বাস্তবতার যাঁতাকলে। যেখানে নির্বিচারে বোকা মানুষের যারা স্বপ্ন-নীতি আঁকড়ে ধরে (ধবল ষাঁড়) তাদের কুরবানী দেয়া হয় নিজের স্বার্থ উদ্ধারে (চিত্রকর্ম)। এসব বোকা মানুষেরা নিজ নীতি তুলে ধরতে স্বেচ্ছায় সগৌরবে জান দেয়, কারণ অন্যের করুনা নিতে তারা অভ্যস্থ নয় (লেখকের চোখে করুনার জল দেখে ছুরি ছুঁড়ে মারা)। এই বাস্তবতার সামনে এসে লেখকে মাঝে জন্ম নেয় কিছু বোধদয়। লেখক বোঝেন ভালবাসাও একটা জৈবিক চাহিদা মাত্র, আর জীবন একটা তামাশা তা সে যেভাবেই উপভোগ করা হোক না কেন। এই উপলব্ধিতে লেখক নিজেও হয়ে যান শোষক সমাজের একজন। হাতে তুলে নেন রঙতুলি।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
এবার মনে হয় লেখাটা একটু বুঝছি..
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
আসলে তানভীর ভাই, আমি নিজের মত করে মানে বের করেছি, পাঠকভেদে এটা নিশ্চই ভিন্নতর হবে। যেমনটা বলেছি, লেখকের নিজের ব্যাখ্যাও হয়তো সম্পূর্ণ ভাবেই অন্য কিছু।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
আমার মতে, একদম আক্ষরিক ভাবেও যদি ধরে নেয়া হয়, তাহলেও উপরিউক্ত সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না। এবং, তাতে লেখকের চেষ্টাটা মারা যায়।
একদম আক্ষরিক ভাবে ধরলেও এই গল্পের এবসার্ড এবং সুররিয়াল এলিমেন্টস বোধহয় বাদ দেয়া যায় না।
আমিই মনে হয় একমাত্র বুঝলাম এই গল্প... হাহাহা
গল্পের সৃষ্টিকালে স্রষ্টার সাথে থাকার মজাটাই এখানে... হাহাহা
নতুন মন্তব্য করুন