প্রতি হপ্তান্তে অপেক্ষা করি একটা দিনের জন্য, যে দিনটিতে এক্কেবারে নিজের মতো করে থাকতে ভালোবাসি। রোববার হলো ঐ রকম একটি দিন। রোববারে দীর্ঘক্ষন বিছানায় ঘুম ভেঙ্গে গেলেও গড়াগড়ি করা,শুয়ে শুয়ে ভাবা...এগুলো অনেক পুরোনো অভ্যেসের একটি! ভালো লাগে পুরোনো সব রেকর্ড শুনতে! আজ সারাদিন ডোর্সের অনেক পুরোনো গান অনবরত বেজে চলেছে কম্প্যুতে...।
গত ১৮/১৯ বছর ধরে রোববারগুলো ভিন্ন ভিন্ন রুপ নিয়ে হাজির থাকলেও একটা ভাবনার অস্থিত্বের কোন বদল হয়নি! বরং হয়েছে পরিবর্ধিত, পরিমার্জিত এবং সংশোধিত! এই ভাবনাকে আমি নাম দিয়েছি ‘স্বাবলম্বী হয়ে উঠার ভাবনা’। নিজে হতে চাই, আপনজনদের করতে চাই এবং নিজের জন্মভূমিটাকে বানাতে চাই।
অনেক কিছুই পাওয়া/না পাওয়ার এই জীবনে অনেক গণিতেরই সমাধান করা হয়নি; আবার করেছিও কিছুটা! সোজা বাংলায় বললে বলতে হয়, ব্যর্থ হয়েছি বহুবার কিন্তু যে ক’বার জিতেছি, জেতাটা ধরে রেখেছি আজো! তবে নিজের এই পথ যতোই নিজের মনে হোক, আদতে কিন্তু সমষ্টির একটি ক্ষুদ্র অংশই আমি! তাই সমষ্টির অর্জনে যেমন আনন্দিত হই, ঠিক তেমনি ব্যর্থতাও বুকে শেলের মতো বিধেঁ নিয়ত! তখন ছোটখাটো অর্জনগুলো পানসে লাগে। এই অতৃপ্তিটা দূর করতে সময়ে অসময়ে দলবদ্ধ, গোষ্ঠীবদ্ধ হয়েছিলাম বেশ ক’বার। কিন্তু জানিনা কেন কোন উদ্যোগই ঠিক সফল হয়নি! আমাদের মূল উদ্দ্যেশ্যগুলো কেবলি সরে গিয়েছিলো ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে! যাদের স্বাবলম্বী করতে, যাদের হয়ে লড়তে গেছি, ঐ লড়াইটা শেষ পর্যন্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠি স্বার্থের কাছে পরাভূত হয়েছে! মূল উদ্দেশ্য ছাড়িয়ে পার্শ্ব উদ্দেশ্যগুলো চরিতার্থ করতে আমরা উঠে পড়ে লেগেছিলাম; নিজেকে নিজেই কনভিন্সড করতে পারিনি ঐ পথে আদৌ স্বাবলম্বীতা আসবে কিনা! এখনো যে জানি এমন নয়; তবে একটা অভিজ্ঞতা এই জন্মে হয়েছে, নিজের সামর্থ বুঝতে শিখেছি!
যাইহোক ভূমিকা অনেক বেশী লম্বা করে ফেলছি, এবার থামা যাক।
জানিনা অন্যদের ভাবনাটা কি রকমের। আমি আমার পুরোনো পথের যাত্রাটা শেষ করতে চাই। অন্তত কয়েক হাজার মানুষকে স্বাবলম্বী কি করে হতে হয় তার একটা দৃষ্টান্ত তৈরী করতে চাই। দরুন বাংলাদেশের এমন দু’টি অঞ্চল, যার একটি উর্বর মাটির, অন্যটি অনুর্বর। এরকম দু’টি অঞ্চলের সবচেয়ে প্রান্তিত মানুষগুলোকে আহবান জানালাম ‘আসুন আমরা স্বাবলম্বী হই’। আমি জানি কথাটা শুনেই অনেকে মারতে তেড়ে এসে বলবেন, শালা শুয়োরের বাচ্ছা, ফুটাঁনি মারতে আইছচ্? কিন্তু আমি জানি ধীরে ধীরে যখন তার বিপদে আমাদের পাশে পাবে তখন তার সময় হবে আমাদের কথা শোনার। তাদের আমাদের কথা শুনতে হবে এমন কোন বাধ্যবাদকতাও নেই। কিন্তু নিজের ভালোটা প্রাণী মাত্রই আমরা ভালো বুঝি, তাই একদিন বুঝতে চাইবে। ঠিক সেদিন থেকে আদতে আমার এই ‘স্বাবলম্বী হওয়ার প্রজেক্টের’ যাত্রা শুরু হবে।
ব্যাপারটা একটু খুলে বলি। জানি বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রের বাইরে নয়, তাই অন্যান্য সমস্যার আছঁড় আমাদের গায়ে এসেও লাগবে। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ন এই দেশে একটা অনন্য নজির স্থাপন করতে পারি অন্তত কয়েকটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলকে স্বাবলম্বী বানিয়ে!
ব্যাপারটা কি রকম?
এই ভাবনাটা অতীতে অনেকেই ভেবেছেন, এখনো ভাবছেন এবং হয়তো কেউ কেউ নিজের মতো করে চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন। যদি ভারতীয় ভূখন্ডের কথা বলি (একান্ত নিজস্ব ভাবনা এটি) তবে এই ভাবনাটার হয়তো অপরিপক্কভাবে শুরু করেছিলেন গান্ধীজি। আমাদের দেশে ভাবনাটার লিখিত রুপ পেয়েছিলাম কর্ণেল তাহেরের লেখায় (যদিও উনার অনেক কিছুতেই আমার দ্বিমত আছে)। পরে অনেক ছোট খাটো গ্রুপ/সংগঠন/গোষ্টি নানাভাবে নানা সময়ে চেষ্টা করেছেন এবং করছেন (হয়তো)। ভাবনাটার মূল ভাব এরকম, দেশের প্রতিটি অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলা, যাতে বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরতা কমে আসে, দ্রারিদ্র বিমোচন হয় এবং অনেক অনেক ভালো ভালো ব্যাপার হয়! তবে আমার এই মূহুর্তের ভাবনাটা সিম্পল, ‘দেশের কয়েকটি অঞ্চলকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে নির্বাচন করে ২০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া এবং তা কার্যকর করা’!
স্বাবলম্বীতার ধারনাটা আসলে কি?
ব্যক্তিগতভাবে এর একটা সহজ উত্তর আমার জানা আছে, তা হলো ‘অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাকস্কৃতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়া’।
অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়া কাকে বলে?
(নিজে যা বুঝি) নিজের (গোষ্ঠির) অর্থনৈতিক দিকটাকে এমনভাবে দাড়ঁ করানো যাতে তা দীর্ঘস্থায়ী, ঠেকসই ও উন্নয়নমূখী হয়। তা যেন নৈতিকভাবে সম্পদের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে, কমাতে নয়!
সামাজিক স্বনির্ভরতা কাকে বলে?
সামাজিকভাবে এমন একটা জায়গায় যাওয়া, যাতে করে দুনিয়ার কেউ যেন তাচ্ছিল্যের চোখে দেখার স্পর্দা না দেখায়।
সাকস্কৃতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়া কাকে বলে?
নিজের বৈশিষ্ট্য ও বিশিষ্টতা বজায় রেখে আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠা ধীরে ধীরে। পৃথিবীকে যেন নিঃসঙ্কোচে আহবান জানাতে পারি। প্রয়োজনে যেন বলতে পারি, দেখ আমাদের এই জিনিষ তোমরা নিতে পারো এতে সাংস্কৃতিকভাবে তোমরা লাভবান হবা! এভাবে আমরা একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠতে পারি!
কেমন করে তাহলে স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব?
ধরুন আমরা বাংলাদেশের একটি বা দু’টি গ্রাম প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করে দু’টি প্রজেক্ট শুরু করবো। প্রজেক্টটা হতে পারে সম্পূর্ণ দু’টি ভিন্ন মাটিতে, যার একটি উর্বর এবং অন্যটি তুলনামূলকভাবে কম উর্বর। এই দু’টি জায়গায় বিদ্যুত, পানি, জ্বালানি উতপাদনের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকবে; ওয়াসা-ডেসা বা অন্যান্য সরকারী কোম্পানীগুলোর উপর তেমনভাবে নির্ভরতা থাকবেনা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে নিজস্ব উদ্যোগে এবং নিজেদের প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে; যাতে করে দেশের একটি গ্রামে বসে দুনিয়ার অন্যপ্রান্তের মানুষের সাথে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ গড়ে উঠে। মোটামুটিভাবে এসমস্ত কিছুর আয়োজন ধীরে ধীরে করতে পারলে একটা জায়গায় হয়তো যাওয়া যায়, যে জায়গার মালিকানা অর্জন করলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়তো আমাদের ধন্যবাদ জানাবে!
এখন বলতে পারেন পদ্ধতিটা কি হবে?
পদ্ধতিটা সম্পর্কে পুরোপুরি আমি জানিনা। জানলে হুদাই এখানে এতো প্যাচাল পাড়তাম না। শুধু এটুকু জানি, আমার মতো করে হয়তো অন্যজনও ভাবছেন (হয়তো তার পদ্ধতিটা ভিন্ন!)। পদ্ধতি ঠিক হতে পারে আমাদের মধ্য যারা নানা বিষয়ে এক্সপার্ট তাদের ও এষ্টাবলিসড্ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে। জানি আমাদের প্রাথমিকভাবে কৃষি, বিদ্যুত, গ্যাস তথা অবকাঠামোগত বিষয়ে অনেক বেশী সময় দিতে হবে। রিয়েলিস্টিকভাবে বের করতে হবে কি করে কৃষি জমি, চাষের জমি আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত করা যায়! ২৪ ঘন্টা বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে জ্বালানি চাহিদাও। এই কয়েকটা জিনিষের পাশিপাশি অতি দ্রুততার সাথে শিক্ষার উপর জোড় দিয়ে আমাদের মানুষগুলোকে স্কিলড্ বানাতে হবে, যাতে করে উনারা ভবিষ্যত পৃথিবীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ফিট হয়ে উঠে। এই পদ্ধতিতে আগালে হয়তো আমরা একটা তুলনামূলকভাবে ভালো বাসস্থান উপহার দিয়ে দেতে পারবো ভবিষ্যত প্রজন্মকে।
পুরো প্ল্যান ও পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হতে পারে। যাদের সামান্যতমও ইচ্ছে থাকবে তিনি যেন কষ্ট করে একটু ভেবে বিস্তারিতভাবে নিজের মতামত জানান। হয়তো এই আলাপের সুত্র ধরে পরিণত উপায়ে আজ থেকে এক বছর পর আমরা (যারা আগ্রহী) কাজে নামতে পারি। এর মধ্য প্রাথমিকভাবে ফান্ডিং নিয়েও নানা পদ্ধতির কথা ভাবা যেতে পারে।
ধন্যবাদ তাদের, যারা কষ্ট করে লেখাটা পড়েছেন।
(লেখাটা বিরক্তির কারন হলে পড়ে মাফ করে দিয়েন, বিনিময়ে একটা গান শোনেন)
মন্তব্য
এই গানটা শুনে দেখতে পারেন... http://uk.youtube.com/watch?v=7jQ4jO4AwFY
তৃণমূল উন্নয়নের জন্য আমার একটা আইডিয়া ছিল। চৈনিক উন্নতির মডেল থেকে ধার করা। অনেকটা ইপিজেডের মত। কিন্তু ডিসেন্ট্রালাইজড একটা মডেল দরকার। আচ্ছা ইপিজেড তেমন ভাবে সফল না কেন?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
দালি-র কাজটা অসম্ভব ক্যারিশম্যাটিক লাগলো !
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আপনার দূরদর্শী চিন্তা পড়ে অনুপ্রাণিত হলাম।
নতুন মন্তব্য করুন