আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টি করতে চাই। এটা সম্ভবত আমাদের সবচেয়ে স্বাভাবিক চাওয়াগুলির একটি। কিন্তু এর আগমন বেজায় বিলম্বিত। এ নিয়ে আমরা কল্পকাহিনীর পর কল্পকাহিনী লিখে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা এখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জীবন সৃষ্টির কাছাকাছি যেতে পারি নি। পদার্থবিজ্ঞানী মিচিও কাকু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণার বর্তমান অর্জন সম্পর্ক ঠাট্টা করে বলেছেন, আমাদের সবচেয়ে আধুনিক রোবটটির বুদ্ধিমত্তা এখনো একটি নির্বোধ তেলাপোকার সমান।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের পুরোধা, ব্রিটিশ গণিতবিদ অ্যালান টুরিং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ২০০০ সালের মধ্যে এমন কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি হবে যা পর্দার আড়ালে থেকে আলাপচারিতার মাধ্যমে অন্তত ত্রিশ শতাংশ মানব বিচারককে এই বলে ধোঁকা দিতে সক্ষম হবে যে সে আসলে রোবট নয়, মানুষ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিমাপক এই পরীক্ষাটিকে টুরিং টেস্ট বলে। বলাই বাহুল্য, মহামতি টুরিং এ ব্যাপারে নেহায়েত ভুল ছিলেন। সে হিসেবে খেলার ছলে হলেও মিচিও কাকু বরং অনেক গ্রহণযোগ্য একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ব্যাপকভাবে ছাড়িয়ে যাবে এমন রোবটের আগমন তিনি আগামী পঞ্চাশ কি একশ বছরেও দেখতে পাচ্ছেন না।
এই গবেষণার একটি বড় সমস্যা, একে সংজ্ঞায়িত করার সমস্যা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মোটা দাগে টুরিং টেস্ট দিয়ে ব্যাখ্যা করাটা এই গবেষণার অনেক বড় দুর্বলতা। এটি গবেষকদের সরাসরি মানবগুণাবলী নকল করা প্রোগ্রাম তৈরি করতে উদ্যত করে। যেমন চ্যাটবোট (উদাহরণ, অ্যালিস) বা কতগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রাম, যেগুলো গণনাগতভাবে ভাষা বিশ্লেষণ করে মানুষের মত আলাপ করার চেষ্টা করে। কিন্তু বুদ্ধিমত্তা একটি বিচ্ছিন্ন গুণ নয়। একটি শিম্পাঞ্জি আলাপচারিতা দিয়ে নিজেকে মানুষ বলে ঠকাতে পারে না, কিন্তু তার বুদ্ধিমত্তা নেই, সেটাও বলা যাবে না। বুদ্ধিমত্তা মানুষের চেয়ে কম এবং ভিন্ন হয়তো বলা যাবে।
অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তার মাত্রা আছে। ফলে, যেখানে এখনো একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম একটি শিম্পাঞ্জির মত আচরণই করতে পারে না, সেখানে মানুষের অত্যন্ত উঁচুমানের বুদ্ধিমত্তার নমুনাকে আলাদা করে গবেষণার প্রচেষ্টা আমার মতে অফলপ্রসূ। আমি বলছি না যে ভাষার গণনাগত বিশ্লেষণ অসম্ভব, কিন্তু আলাপচারিতার সম্পর্ক কেবল ভাষার সাথে নয়, আচরণ এবং অভিপ্রায়ও এর সাথে জড়িত। মানুষের মত চ্যাট করা প্রোগ্রাম আবিষ্কার হয়ে গেছে অথচ শিম্পাঞ্জির মত হাতিয়ার তৈরি করে নিজে নিজে তার নানা ব্যবহার বের করা প্রোগ্রাম এখনো তৈরি হয় নি, এমন অদ্ভুত সময়ের কথা কল্পনা করতে আমি পারি না। ব্যর্থতাটা হচ্ছে ভাষা দিয়ে আলাপচারিতা চালানোর বুদ্ধিমত্তা আর শিম্পাঞ্জি বা এমনকি পোকামাকড়ের অনাকর্ষণীয় বুদ্ধিমত্তার মাঝে যোগসূত্র খুঁজে না পাবার ব্যর্থতা।
যোগসূত্র আছে। তাই একলাফে মানুষের বুদ্ধিমত্তার নমুনা নকল করার চেয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণার লক্ষ্য হওয়া উচিত ইঁদুর বা পিঁপড়ার আচরণের নমুনাকে কম্পিউটার দিয়ে অনুকরণ করা। আর এদের সবার মাঝে যে যোগসূত্র, সেখানে রয়েছে জীবনের সংজ্ঞা, জীবনের মানে।
বিজ্ঞানের সংজ্ঞা
জীবনের কোন আধিভৌতিক ব্যাখ্যা আমি দিতে চাই না। তার কারণ - "পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন"। অর্থাৎ যে তত্ত্বের অস্তিত্ব কেবল মুখে মুখে, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যাকে সিদ্ধ করা যায় না, তা নিয়ে তর্কের অর্থ নেই। বিজ্ঞানের সংজ্ঞার এটি একটি সরল তাৎপর্য। বিজ্ঞানের সংজ্ঞায় যাওয়া যায়।
বিজ্ঞানের সহজতম সংজ্ঞা হল, এটি ভবিষ্যত-অনুমানের প্রণালীবদ্ধ চর্চা। এই সংজ্ঞাটি আমরা আরো নানাভাবে জানি। যেমন, বিজ্ঞান হল জ্ঞান আহরণের পদ্ধতিগত উপায়। বা "ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান"। প্রথম ও দ্বিতীয় সংজ্ঞাটির সুবিধা হল ভৌত বিশ্বকে সংজ্ঞায়িত করতে হচ্ছে না। তৃতীয় সংজ্ঞায় ভৌত বিশ্বের উপস্থিতি কেবল ভৌত বিশ্বকে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়োজনই তৈরি করে না, বরং এমন ইঙ্গিত দেয় যেন ভৌত বিশ্বের বাইরেও কোন আধিভৌতিক জগতের অস্তিত্ব থাকতে পারে। তখন সেই জগতের "যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা"কে বিজ্ঞান বলা যাবে কিনা তা নিয়ে তর্কের সুযোগ থাকে। আমি বরং প্রথম আর দ্বিতীয় সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করছি। আমি বলছি, দুটি একই অর্থ বহন করে। আমি বলছি কেন।
পর্যবেক্ষণ, জ্ঞান ও ভবিষ্যত-অনুমান
দ্বিতীয় সংজ্ঞাটি বলছে - বিজ্ঞান হল জ্ঞান আহরণের পদ্ধতিগত উপায়। জ্ঞানের সংজ্ঞা নিয়ে বিস্তর তর্ক আছে। নানাজন নানানভাবে সংজ্ঞায়িত করেন। অধিকাংশ সংজ্ঞাই আমার কাছে অস্পষ্ট এবং অন্য অনেক বিষয়ের সংজ্ঞার উপর নির্ভরশীল মনে হয়। আমি সব সংজ্ঞার তুলনামূলক আলোচনা এখানে করছি না। বরং একটি সংজ্ঞা উল্লেখ করছি, যেটাকে আমি গ্রহণ করি। আর তার আগে আমার সংজ্ঞার গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিকে একটু ব্যাখ্যা করে নিচ্ছি।
কোন সংজ্ঞা আমার কাছে সুসংজ্ঞা নয়, যখন তা স্বনির্দেশক অর্থাৎ ঘুরে ফিরে সংজ্ঞায় নিজেকেই ব্যবহার করে। এর চেয়েও অসঙ্গতিপূর্ণ হলো সেসমস্ত সংজ্ঞা যা অন্য বিষয়কে ব্যবহার করে থাকে, যেগুলোকে সংজ্ঞায়িত করতে আবার প্রথমটির উল্লেখ প্রয়োজন। সুসংজ্ঞায় কেবলমাত্র ব্যবহার করা উচিত অন্য সুসংজ্ঞায়িত বিষয়। এবং একটি বিষয়ের সংজ্ঞায় অন্য যতগুলো সুসংজ্ঞায়িত বিষয় আসে, সেগুলোকে ধরে এভাবে গভীরে যেতে থাকলে এক পর্যায়ে এমন বিষয়ে উপনীত হতে পারা উচিত, যার সংজ্ঞায়নের জন্য অন্য বিষয়ের সংজ্ঞা অবতারণার আর প্রয়োজন হবে না অথবা অবতারণা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ তা হবে মৌলিক ভিত্তি, যা নিজের পরিচয়ে অস্তিস্ত্বমান, বা যার অস্তিত্ব নিয়ে সবাই একমত।
কি সে বিষয়, কোন বিষয়টি অবিসংবাদিতভাবে অস্তিত্বমান, যার উপর ভিত্তি করে আমি অন্য সবকিছু সংজ্ঞায়িত করব? আমার এই সোফা? বিছানা? এই বিশ্ব? আমি? প্রশ্ন আসে, সোফা কি? বিছানা কি? বিশ্ব কি? আমি কি?
সোফার সংজ্ঞা কি? কি দিয়ে একে সর্বসম্মতভাবে সংজ্ঞায়িত করব? গরুকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করে? চারটি পা ও দুটি শিং আছে, গৃহপালিত পশু, দুধ দেয়, ঘাস খায়? নাকি অভিধানের মত স্বনির্দেশকভাবে - গরু মানে গোজাতি? এর কোন সংজ্ঞাটি গরুকে অন্য প্রাণী থেকে নির্দিষ্ট করতে পারছে? নাকি রসায়ন বা পদার্থবিজ্ঞান দিয়ে সংজ্ঞায়িত করব, ভাঙতে ভাঙতে ইলেক্ট্রন প্রোটনে চলে যাব? ইলেক্ট্রনই কি সুসংজ্ঞায়িত, সবচেয়ে মৌলিকভাবে বিরাজমান অস্তিত্ব? নাকি তারও আরো ভাঙন আছে?
গরুর বিভিন্ন সংজ্ঞায় ভিন্নতা আছে, তবে সকলটাতেই কিন্তু একটি সাধারণ ব্যাপার আছে। আর তা হল আমরা সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করছি যা আমরা পর্যবেক্ষণ করি তার ভিত্তিতে। যা কিছু আমরা সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করি, তার সবকিছুই কিন্তু আমাদের পর্যবেক্ষণ। এটাকে আমরা অনুভূতি বা ইনপুট বলতে পারি। এই সোফা, এই জানালা, এই আকাশ কতটা বাস্তব আমি জানি না, তবে আমি জানি যে আমরা এগুলো পর্যবেক্ষণ করি। দূরের ওই গাছটি কতটুকু সত্য তাও আমি জানি না, তবে বলতে পারি, আমি তা পর্যবেক্ষণ করছি। বলতে পারি, অন্যরাও স্বীকার করবে গাছটি তারা পর্যবেক্ষণ করছে।
পর্যবেক্ষণই সংজ্ঞায়নের মৌলিক ভিত্তি। এ কারণে পর্যবেক্ষণ দিয়ে কোন বস্তুকে সংজ্ঞায়ন এত সহজ। আমরা যখন বলি ওটা হল গাছ, অন্যরাও তখন বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ, ওটা গাছ, কিন্তু যখন বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দিয়ে তার সংজ্ঞা দিতে যাই, তখনই শুরু হয় দ্বিমত। নানান জনের কাছে নানান বৈশিষ্ট্য ধরা দেয়। তবে আমি এধরনের সংজ্ঞায়নকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। সংজ্ঞায়ন কঠিন কাজ, কখনো কখনো অসম্ভবের কাছাকাছি এবং আমরা সচরাচর যেভাবে সংজ্ঞায়িত করে থাকি সবকিছুকে, তার চেয়ে বেশি কার্যকরভাবে করাও হয়তো প্রায়োগিকভাবে সম্ভব নয়।
তথাপি, আমি সংজ্ঞায়নের অন্তত একটি মৌলিক বিষয়কে নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করলাম, কারণ অন্তত একটি মৌলিক ভিত্তিকে সনাক্ত করতে পারাটা একটি বড় প্রাপ্তি। এটা আমাদের চিন্তার উপায়কে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ইলেক্ট্রন অথবা কোয়ার্ক বা কোয়ান্টাকে মৌলিক ধারণা না ধরে পর্যবেক্ষণকে মৌলিক ধারণা হিসেবে নেয়া, যার গভীরে নিশ্চিতভাবে আর যাওয়া যায় না। যে কোনকিছু যাচাইয়ের একমাত্র উপায় পর্যবেক্ষণ, তাই 'পর্যবেক্ষণ' এর যাচাই হয় না।
এবার জ্ঞানের সংজ্ঞাটি দেই। জ্ঞান হচ্ছে কোন পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত ভবিষ্যত-অনুমান বা ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা। আমরা জ্ঞান বলতে যা কিছু বুঝি, তার প্রতিটির ক্ষেত্রে এই সংজ্ঞা প্রযোজ্য। জ্ঞানের অন্য কোন সংজ্ঞা এভাবে সমভাবে প্রযোজ্য কিনা আমার জানা নেই।
"আমি জানি আমার পকেটে একটি মুদ্রা আছে", এই কথাটির অর্থ কি? আমার এই বিশেষ জ্ঞানটি কি বোঝায়? এর অর্থ হল, আমি আমার পকেটে হাত দিলে একটি মুদ্রা পাবো। অর্থাৎ আমি ভবিষ্যতের একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে অনুমান করছি। ইতিহাস সম্পর্কে আমার অনেক জ্ঞান আছে, এ কথাটির অর্থ কি? আমি এভাবে বলতে পারি, এই কথার অর্থ এই যে ইতিহাস নিয়ে আমাকে কিছু প্রশ্ন করলে আমি তার উত্তর দিতে পারব, ইতিহাসের কোন বিষয় নিয়ে আমি লিখতে পারব, বলতে পারব। অর্থাৎ এমন কিছু যা পর্যবেক্ষণ করা যাবে। কি কি পর্যবেক্ষণ করা যাবে তার একটা ধারণা দিচ্ছি, বা ভবিষ্যদ্বাণী করছি।
কোন কিছু সম্পর্কে জ্ঞান থাকা বলতে আসলে কিছু বিশেষ পর্যবেক্ষণের অনুমান করতে পারাকে বোঝায়। আমরা যা কিছু জানি বলে দাবী করি, আমরা আসলে তা সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীর দাবী করি। "আমি জানি আজ আকাশে মেঘ" বলতে বোঝাই যে, কেউ আকাশের দিকে তাকালে আজ মেঘ দেখতে পাবে। এমনিভাবে সকল জ্ঞানে এই সংজ্ঞা প্রযোজ্য।
ভবিষ্যতের পর্যবেক্ষণকে অনুমান করার ক্ষমতা হল জ্ঞান। জ্ঞান আর ভবিষ্যত-অনুমান ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাই আমরা যখন বলি বিজ্ঞান হল জ্ঞানার্জনের পদ্ধতিগত উপায়, তখন আমরা আসলে বলি, বিজ্ঞান হল ভবিষ্যত-অনুমানের প্রণালীবদ্ধ চর্চা। অর্থাৎ বিজ্ঞানের প্রথম ও দ্বিতীয় সংজ্ঞা আসলে একই। আর প্রণালী এমন হবে যে অনুমানটি যাচাইযোগ্য এবং পুনর্নির্মাণযোগ্য হবে।
ফলে আমি যখন প্রণালীবদ্ধভাবে কোন ভবিষ্যত-অনুমান করার চেষ্টা করি, তখন বলা যাবে যে আমি বিজ্ঞান চর্চা করি। যেমন পৃথিবী-সাপেক্ষে উচ্চতার ভিত্তিতে কোন বস্তুর ওজন কেমন হবে তার আমি কিছু ভবিষ্যৎ-অনুমান করতে পারি সেটা সংক্রান্ত একটি সূত্র বের করে। সূত্রটির নির্ভরযোগ্যতা যাচাইযোগ্য, কেননা পৃথিবীর সাপেক্ষে বিভিন্ন উচ্চতায় উঠে বা নিচে (অভ্যন্তরে) নেমে আমি কোন বস্তুর ওজন পর্যবেক্ষণ করতে পারি এবং আমার অনুমানের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারি। এবং এটি পুনর্নির্মাণযোগ্যও বটে।
অথবা আমি একটি সূত্র দিতে পারি E=mc^2। কিন্তু সেটা কি অর্থ বহন করে? আমি গাণিতিকভাবে তা প্রতিপাদন করতে পারি, কিন্তু তা কি সবার সম্মতির জন্য যথেষ্ট? সকল গাণিতিক ব্যাখ্যার পরেও আমাকে একটি পরীক্ষা তৈরি করতে হবে যেখানে কোন প্রক্রিয়ার বা বস্তুত নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে সিস্টেমের উপাদানগুলোর সামষ্টিক ভর হ্রাস পাবে এবং আমি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারব যে সিস্টেমটি যে শক্তি উৎপন্ন করবে তার পরিমাণ সূত্রটি দ্বারা নির্ধারিত। এরপর এই পরীক্ষাটি সত্যি সত্যি করে যখন আমার অনুমানের সত্যতা পাওয়া যাবে, তখন আমার সূত্রটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
একইভাবে আমি বিগ ব্যাং, ব্ল্যাক হোল, ইত্যাদি নানা তত্ত্ব দিতে পারি। প্রণালীবদ্ধভাবে যদি তা করা হয় এবং তা যদি কোন ভবিষ্যত-অনুমান করতে পারে, তবে তা হবে বিজ্ঞানের চর্চা। কিন্তু পর্যবেক্ষণ দ্বারা সিদ্ধ হবার আগ পর্যন্ত তা প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর পর্যবেক্ষণ অসাধ্য হলে তো তা হবে অর্থহীন। ঐ তত্ত্ব তখন আর বিজ্ঞান নয়। কারণ ঐ তত্ত্ব আসলে এমন কোন অনুমান করতে পারছে না, যা কখনো পর্যবেক্ষণ দ্বারা সিদ্ধ করা যাবে।
এমন অজস্র উদাহরণ দেয়া যাবে। বা বলা যাবে, আমরা যখন বিজ্ঞানের চর্চা করি, তখন আসলে পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত ভবিষ্যত-অনুমানের চেষ্টা করি। আমার একটি সেমিনার বক্তৃতায় আমাকে এর প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, কোন কিছুর পরিসংখ্যানগত মূল্যায়ন, যেমন - খুব সাধারণভাবে, কোন নমুনার গড় ও ভেদাংক বের করা কি কোন রকমের ভবিষ্যত-অনুমান কিনা। আমি বলেছিলাম, এর উত্তরে আমি বলতে পারি, হ্যাঁ। আমি বলতে পারি, ওই নমুনা থেকে দৈবভাবে একটি উপাত্ত নির্বাচন করলে তা কোন মানের কতটা কাছাকাছি কত সম্ভাবনায় থাকতে পারে, পরিসংখ্যানগত মূল্যায়নটি তার একটি অনুমান দেবার চেষ্টা করে। বিজ্ঞানের সকল চর্চাই এভাবে অনুমানের চেষ্টা করছে।
পর্বের সমাপ্তি
জীবনের সংজ্ঞা দিতে চেয়েছি। এবং তা দেয়ার চেষ্টাটা পদ্ধতিগতভাবে করতে চেয়েছি। এর সংজ্ঞায়নের আগে এ নিয়ে আলোচনায় কতটুকু আমাদের সীমাবদ্ধতা, তা নির্ধারণের চেষ্টা করেছি। আর এ জন্যই আজকের পর্বের অবতারণা। বৈজ্ঞানিক আলোচনার পূর্বে বিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চেয়েছি। আগামীতে ফলে জীবনকে সংজ্ঞায়িত করার মত কঠিন কাজটা কিছুটা হলেও সহজ হতে পারে।
আমরা বুঝেছি, আমরা সীমাবদ্ধ আমাদের পর্যবেক্ষণ দ্বারা। জগত সম্পর্কে আমাদের যত ধারণা, তার সবই এই পর্যবেক্ষণ দ্বারা সীমাবদ্ধ। তবে এটা দুর্বলতা অর্থে সীমাবদ্ধতা নয়। বরং আমরা বলতে পারি, জগত ধ্রুব কি না তা আমরা জানি না, কিন্তু তার যে পর্যবেক্ষণ, তাকে আমরা ধ্রুব বলতে পারি। তার সংজ্ঞা আপেক্ষিক নয়। আমরা আমাদের সকল ইন্দ্রিয় দিয়ে যে অনুভূতিগুলো পাই, তাই আমাদের কাছে সত্যি, কেননা ইন্দ্রিয়কে এড়িয়ে কোন কিছু সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব নয়।
এটা বরং সীমাবদ্ধতার উপলব্ধি নয়, সত্যের উপলব্ধি। একে ছাপিয়ে উঠতে আমরা পারি না। অন্য সকল কিছু প্রতিষ্ঠা পায় এর ভিত্তিতে। যা ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা যায় না, তা প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব হয় না। তার বাস বড়জোর কল্পনায়।
যে জীবনের সংজ্ঞা দেবার জন্য বিজ্ঞানের দর্শনালোচনা করা, সেটা এ পর্বে অনুপস্থিত থাকলেও এই দর্শনালোচনার নিজস্ব গুরুত্ব কিন্তু অশেষ। এই দর্শনালোচনা ছাড়াও বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব। কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে পদ্ধতিগত চর্চাটির 'পদ্ধতি'তে এবং অনুমানে প্রমাদ সৃষ্টি হতে পারে। মূল এই চেতনা ধারণ না করে আগালে সহসাই পদ্ধতিগত ভুল করা সম্ভব। তার পরেও তা হয়তো হবে বিজ্ঞান চর্চা, কিন্তু তা হবে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে করা চর্চা। আমাদের ভাষাভাষীরা, আমরা যদি কখনো আমাদের বর্তমান এবং অতীতের দিকে তাকিয়ে আমাদের মাঝে বিজ্ঞানের রেনেসাঁর অনুপস্থিতি অনুভব করি, তখন আমরা হয়তো একটু এটাও ঘেঁটে দেখতে পারি যে বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে আমরা কোন কালে অতটুকুও আলোচনা করেছি কিনা।
মন্তব্য
লেখাটা ইন্টারেস্টিং।
ভালো পয়েন্ট।
ধরুন আমি দাবী করছি যে আমার একটি জ্ঞান হলো "আমার পকেটে একটি মুদ্রা আছে"। ধরুন বললাম যে এ জ্ঞানের অর্থ হলো
তাহলে একমাত্র উপায় থাকে হচ্ছে গিয়ে, মুদ্রাটা দেখানোর আগে যদি আমি বলি, আমার পকেটে হাত দিলে আমি একটি মুদ্রা পাবো এবং তারপরে বের করে দেখানো। "আমি জানি আমার পকেটে একটি মুদ্রা আছে" তারই নামান্তর।
আর আমি যদি বলি যে আমি জানি আমার পকেটে একটি আটআনা আছে, তার অর্থ হল যে আমি দাবী করছি আমার পকেটে হাত দিলে আমি একটি আটআনা পাবো অর্থাৎ একটি ভবিষ্যত-অনুমান করছি, ব্যাপারটা এই অর্থে বোঝাতে চেয়েছি। মুদ্রাটি কি মুদ্রা, সেটা না জানার কোনো সমস্যা নেই এই সংজ্ঞায়।
জ্ঞানের সংজ্ঞায় এর চেয়ে বাড়তি কথা জুড়ে দেয়া যায়। কিন্তু আমি দাবী করছি যে আমার সংজ্ঞাটি প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত।
ভালো লাগলো আলোচনা করে।
এমন সাবলীল ভাষায় বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ কমই হয়। আশ্চর্য হলো এই যে বিজ্ঞান যা আমরা অনেকেই ইংরিজিতে পড়ি, তার কথা লিখতে গিয়ে আপনাকে 'রোবট', 'কম্পিউটার', 'প্রোগ্রামিং' ইত্যাদি সামান্য কয়েকটি জরুরি শব্দ ছাড়া আর কোনো ইংরিজি শব্দ ব্যবহার করতে হয় নি, এর জন্য সাধুবাদ জানাই। বাংলিশের আমি ঘোর বিরোধী নই, আমার মনে হয় অনেক সময় বিশুদ্ধ বাংলায় লিখলে গতি ও ভাব দুই-ই ব্যাহত হয়। কিন্তু আপনার লেখাটা দু বার পড়ার পর মনে হচ্ছে সে মত বদলে না ফেলার কোনো কারণ নেই। পরের পর্ব লিখুন, দেরি হয় হোক, এই রকম উচ্চ মানের লেখার জন্য ধৈর্য ধরতে কোনো অসুবিধা নেই।
এরকম আসলে সচরাচরই ঘটে। আমার প্রথম লেখাটির মন্তব্যগুলো পড়লে বোঝা যায়। কিন্তু এ সংক্রান্ত আমার দর্শন হলো, এর পরেও হাল না ছেড়ে মানুষকে নিজের ভাষায় মনের কথাগুলো বলার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। পাঠকও কিছুটা প্রাথমিক বিনিয়োগ করলো, অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়ে। আমার ধারণা, এ চেষ্টা চালিয়ে গেলে দুপক্ষেরই রপ্ত করে ফেলা সম্ভব। সে চেষ্টাই চলছে। প্রথম থেকেই আমার বিশ্বাস, বাংলিশ এই কঠিন বিষয়বস্তুগুলোকে বুঝতে সহজ করে এমন ধারণা ভুল।
আবার একটি বড় বিরতি দিলেও এ কথায় আশ্বস্ত থাকবো যে অন্তত একজন পাঠক পাচ্ছি।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন
আপনার লেখাটি আগ্রহোদ্দীপক। বিজ্ঞান সম্পর্কে আপনার ধারণাও অনেক পরিষ্কার। অল্প কথায় এভাবে এর আগে খুব কম মানুষকেই 'মূল কথাগুলো' বলতে শুনেছি। খুব ভালো লেগেছে একই 'স্কুল অফ থটের' আরেকজনের খোঁজ পেয়ে। আপনার কি কোনো ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট আছে? আমার নিজের বিচরণ ক্ষেত্রও এখন এ,আই। আপনার সাথে কথা বলতে পারলে ভালো লাগবে।
আর অবশ্যই আরো অনেক লেখা চাই।
শুভেচ্ছা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমারও!
মেইল করে দেন
ভালো থাকবেন।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
পরবর্তী পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম...
আমার কাছে একটা জায়গায় বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন এসেছে, সেটা রাখছি -
আপনি যেভাবে জ্ঞান বা বিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করছেন, "পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত ভবিষ্যত-অনুমান বা ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা" তা বেশ গ্রহনযোগ্যই মনে হচ্ছে এই আলোচনার জন্য। কিন্তু যখন 'সমাপ্তি'-তে এসে যখন বলছেন,
"অন্য সকল কিছু প্রতিষ্ঠা পায় এর ভিত্তিতে। যা ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা যায় না, তা প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব হয় না। তার বাস বড়জোর কল্পনায়।"
তখন 'ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব'- অংশটুকু দিয়ে কি বোঝাচ্ছেন তা যদি একটু ব্যাখ্যা করতেন!
ধন্যবাদ!
পর্যবেক্ষণকে আমি বলছি অনুভূতি বা ইনপুট। অনুভব এই অর্থে। আর এই ইনপুট আসছে যে মাধ্যম দিয়ে সেগুলোকে নাম দিচ্ছি ইন্দ্রিয়। তাই ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব বলতে পর্যবেক্ষণ করার আমাদের যে উপায় তার কথাই আসলে বোঝাতে চেয়েছি, বিশেষ কোনো আত্মিক বা আধ্যাত্মিক অর্থে নয়। ভালো করেছেন প্রসঙ্গটা তুলে, পাঠক মনে মনে প্রতারিত বোধ করে থাকুক, এটা একদম চাই না।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
আপনি যেটা বলেছেন, "আত্মিক বা আধ্যাত্মিক অর্থে নয়" সেটা লেখা পড়েই বোঝা যায়! আমার প্রশ্নটা আসলে হয়ত ঠিকমত করা হয়নি -
আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে, বিজ্ঞানে তো দুধরনের পদ্ধতির ব্যবহার হয় 'আরোহী' এবং 'অবরোহী'। আরোহী পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যে তথ্য পাওয়া যায়, তাই সঠিক উপসংহার হিসেবে নিয়ে নেওয়া হয়। অবরোহীতে তার উল্টো। এখন ধরেন 'স্ট্রিং তত্ত্ব' - এখানে যে ১০ মাত্রিক, ১৪ মাত্রিক বা ২৬ মাত্রিক স্থান এর কথা বলা হয় - এটা কি কোন ভাবেই ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভূত হওয়া সম্ভব? বা মাল্টিভার্স সিস্টেম-এর কথা হচ্ছে... গাণিতিক ভাবে এর অস্তিত্ব দেখানো হচ্ছে। এই বিষয় গুলোর ব্যাপারে আপনার মতামতটা কি? এগুলো কি শুধুই কল্পনা?
আর যখন ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভূত হবার ব্যাপারটা থাকছে তখন তার সীমাবদ্ধতার কথা আপনিও বলেছেন। ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করছি। তাহলে যখন বলছেন, "যা ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা যায় না, তা প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব হয় না। তার বাস বড়জোর কল্পনায়।" তখন একটা বেড় দিয়ে দেওয়া হয়না চিন্তার জগৎ কে? কারণ এমন তো হতে পারে, যা গাণিতিকভাবে দেখানো সম্ভব হচ্ছে তা বোঝানোর মত প্রযুক্তি আমরা এখনও তৈরি করতে পারিনি। ভবিষৎতে হয়ত পারব। সেটা কল্পনা বলে যদি চলার পথ বন্ধ করে (আপনি অবশ্য কোথাও 'পথ বন্ধের' কথা সরাসরি বলেননি!!) দেই তাহলে চিন্তার পথটাকেই কি বন্ধ করে দেওয়া হয়না?
ধন্যবাদ।
হুম। পর্যবেক্ষণের সমার্র্থক হিসেবে 'ইন্দ্রিয় অনুভব' ব্যবহার করাতে ক্ষতি বই লাভ হয় নি বলে দেখছি। চলুন ইন্দ্রিয় অনুভবের জায়গায় এখন থেকে পর্যবেক্ষণই পড়ি। এরপর আলোচনায় আগাই। যদিও আমি বলবো, আমাদের জন্য পর্যবেক্ষণ আর 'ইন্দ্রিয় অনুভব' একই কথা, কেননা নতুন নতুন যেই প্রযুক্তিই আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা বাড়াতে তৈরী করি না কেন, তা কিন্তু পরিশেষে আমাদের চোখ বা কান বা ত্বক দিয়েই অনুভূত হয়। সবকিছুই শেষে গিয়ে একটি গ্রাফচিত্র বা একটি পরিমাপক যন্ত্রের ডিসপ্লেতে উপস্থাপিত হতে বাধ্য, যাতে আমরা আমাদের চোখ কান দিয়ে অবশেষে অনুভব করতে পারি। এটাই তো পর্যবেক্ষণ, তাই না?
স্ট্রিং তত্ত্ব বা বহু বিশ্ব তত্ত্ব, এগুলো বিশেষ স্ট্যাটাস পাবে কেন? কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রতিপাদ্যগুলো কি আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারছি না? স্ট্রিং তত্ত্ব বা বহু বিশ্ব তত্ত্বেরও সেরকম প্রতিপাদ্য থাকতেই হবে যা আমরা পরিশেষে পর্যবেক্ষণ করতে পারবো। যেমন কোনো পর্যবেক্ষণ উদঘাটন করা, যা স্ট্রিং তত্ত্ব থেকেই কেবল অনুমান করা যায়।
কোনো তত্ত্বের কোনো আলামত না পেলে কিন্তু আমি বলছি না যে এগুলো বিজ্ঞান না, আমি বলছি তখন ওগুলো প্রতিষ্ঠিত না। বিজ্ঞান তখনি হবে না, যখন টের পাবেন যে ওগুলো পর্যবেক্ষণ অসাধ্য, যেমন ঘোড়ার চির অদৃশ্য ডিম।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
ধন্যবাদ! শেষের কথাগুলো বুঝলাম এবং একমত।
কিন্তু কিছু মনে করেন না, "আমাদের জন্য পর্যবেক্ষণ আর 'ইন্দ্রিয় অনুভব' একই কথা" এই কথাটা আমি মানাতে পারছি না নিজেকে! কারন 'ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভবে' কিছু মাত্রিক পার্থক্য থাকলেও, তা বেশির ভাগ মানুষের জন্য একই অর্থ বহন করে। কিন্তু 'পর্যবেক্ষণ' মানে আমার মনে হয় শুধু 'ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব'-এর চেয়ে বেশী কিছু। ধরেন, একটা সমীকরণ থেকে যে গ্রাফচিত্র আমরা পাচ্ছি তা সকলের চোখে একই রকম দেখালেও তার অর্থ আলাদা হতে পারে। আমার মত, যার কোন ধারণা নেই বিজ্ঞান বিষয়ে, তার কাছে তা একটা ছককাটা ঘরের উপরে একটা দাগ। আমার পর্যবেক্ষণ খুব বেশী হলে দাগটা কয়টা ঘরের উপর দিয়ে গেছে তা। কিন্তু আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতায় আপনি সেই দাগটার একটা অর্ন্তগত অর্থ আপনি বুঝবেন।
এটা হয়ত তর্কের খাতিরে তর্ক হয়ে যাচ্ছে! যাক! দুঃখিত! আমার কাছে পুরো লেখাটায় এই একটা জায়গায় এসেই একটু খটকা লাগছিল বলে প্রশ্নটা করেছিলাম। তার উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
পরবর্তী পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম...
ভাল থাকবেন।
বিজ্ঞান বিষয়ে খুব সুলিখিত একটা লেখা। তবে কিছু কিছু ব্যপার একটু পরিষ্কার হতে চাই।
জ্ঞান সম্পর্কে আপনার ব্যখ্যায় আপনি বাকি লেখায় এর উপরই নির্ভর করেছেন। এই যায়গাটাকে একটু খটকা লাগছে। আপনার লেখাতে আপনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা বলছেন। সেটার আলোকে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে গেলে কোন অসুবিধা নেই, কিন্তু এই বক্তব্যের একটা দর্শনগত দিক রয়েছে।
সম্ভাবনাতত্ত্বের ভাষায় বলতে গেলে আমরা যা প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষন করি তাহচ্ছে অনেকগুলো সম্ভাবনার একটা বাস্তব রূপায়ন মাত্র। অর্থাৎ একটা ডাইসকে একবার ছোড়া হলে তার ছয়টি পাশের একটি মাত্র দেখা যাবে। সেটা সম্ভাবনার একটা রূপায়ন। কিন্তু এমনটা কি বলা সম্ভব যে এই বিশ্বে যা পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে তা এরকম একটা রূপায়নের চেয়ে বেশি কিছু। অর্থাৎ নিউটন বা অন্য বিজ্ঞানিরা প্রকৃতিতে যা কিছু পর্যবেক্ষন করছেন সেগুলো কিন্তু একটা বিশেষ রূপায়নের ভেতবে সত্য এর বাইরে কিছু আছে কি নেই; থাকলে সেটা কেমন, সেটা কিন্তু একটা অজানা ক্ষেত্র।
আমাদের পর্যবেক্ষনের ক্ষমতা সময়ের সাথে কিভাবে পরিবর্তন হচ্ছে সেটা লক্ষ্য করলেও অনেক কিছু ভাবার সুযোগ থাকে। যেটা বুঝতে পারছিনা সেটা হলো আপনি যেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন সেটার জন্য বাকি সব সম্ভাবনাকে বাতিল করে দেবার কি দরকার? অন্য আরো রূপায়ন যে সম্ভব এটা ধরে নিলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আলোচনায় কোন ক্ষতি হবে বলে মনে হচ্ছে না কিন্তু। বরং বরং এই বিষয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক কলেবর ব্যপকতর হবে বলেই মনে হয়। আমার ধারনা বিজ্ঞানের দর্শন সংক্রান্ত আলোচনায় এই দিকটি নিশ্চিত ভাবেই কোন না কোন ভাবে আছে। আলোচনার খাতিরে পাঠকদেরকে সেদিকেও একটু নিয়ে যাবেন তা না হলে আপনার বাকি আলোচনার ভিত্তি দুর্বল মনে হতে পারে।
ভাল লেখার জন্য ধন্যবাদ।
"পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন"
এখন সম্ভাবনাতত্ত্ব বলছে একটা ছক্কা নিক্ষেপে ছয়টি ফলাফল হতে পারে। আমি একবারে পর্যবেক্ষণ করছি মাত্র একটি ফলাফল। এতে কি আমার সংজ্ঞাটি অন্য সম্ভাবনাগুলোকে বাতিল করে দিলো? অন্য ফলাফলগুলো কি পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য?
অবশ্যই পর্যবেক্ষণ-সাধ্য। অসংখ্যবার নিক্ষেপ করলে সবগুলো ফলাফলই দেখা যাবে।
তাহলে সংজ্ঞাটি কি কি বাতিল করে দিচ্ছি? বাতিল করে দিচ্ছে সেই সকল তত্ত্ব যার কোনো আঁচ কখনো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য। যেমন ধরুন আমি একটি তত্ত্ব দিলাম যে, ঘোড়া চির অদৃশ্য ডিম দিয়ে থাকে। কিন্তু এর যাচাই কিভাবে সম্ভব? ওটা তো চির অদৃশ্য, তাই কখনো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না। তাহলে এই তত্ত্বের অর্থ কি?
আপনাকে আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন
আমি বোধ হয় আমার বক্তব্যটি পরিষ্কার করতে পারিনি। তবে এখন বুঝতে পারছি আপনি "পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন" বলতে কি বুঝিয়েছেন। আমি যা ভেবেছি তা নয়। আরেক সময় কথা হবে। ধন্যবাদ।
আমার বোঝার দুর্বলতাও হতে পারে কিন্তু। তবে আপনার কথাগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। সময় করে কখনো যদি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিটা ব্যাখ্যা করতে চান, আমি শুনতে খুবই আগ্রহী। কথা হবে। ধন্যবাদ।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
ভালো লাগছে।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
ধন্যবাদ।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
আরেকটু থিওরি কমিয়ে প্র্যাকটিকাল উদাহরণ আনলে খুব ভাল হতো। সামনের পর্বে আশা করছি।
একটু বেশি কষ্ট করছি আরকি, যাতে পরে "প্র্যাকটিকাল" উদাহরণগুলোর ভিত্তি মজবুত থাকে।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
তুমুল লেখা!!
ধন্যবাদ!
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
সাবলীল ভাষায় বিজ্ঞান লেখনঃ এককথায় অসাধারণ। সাধুবাদ জানাই আর তার সাথে পুরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম। কিছু ব্যক্তিগত ধ্যান ধারণাঃ
আমার ব্যক্তিগত ধারণা, প্রাকৃতিক ভাবেই মানুষ চেষ্টা করে বা করবে এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরী করতে যা মানুষের মত কাজ করবে।কারণ মানুষ তার সৃষ্টির মাঝে নিজের ছায়া খুজে বেড়াবে তখন। একটু ব্যখ্যা করি, একটি ফুল দেখে একজন মানুষের মনে সৌন্দর্য্যের অনুভুতি জাগে কিন্তু একটি মৌমাছির মনে জাগবে মধু আহরণের অনুভূতি। সুতরাং মানুষ এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরী করতে চাবে যা মানুষের অনুভূতিকে বহন করবে। সুতরাং সেক্ষেত্রে টুরিং টেস্টের ইতিবাচক দিকটাই কেন জানি আমার চোখে পরে।
একটু দ্বিমত করছি, আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনার আলোকে তোমার সংগায়ণকে পরিবর্তন করে যা দিতে ইচ্ছে করছে তা হলো, 'জ্ঞান হচ্ছে অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎকে অনুমান করার ক্ষমতা'
কেন এরকম দিচ্ছে তার উদাহরণ দেই, ধরে নেই একজন পুরঃকৌশলী যে কিনা ভবন নির্মানের উপর জ্ঞান অর্জন করেছে তার জ্ঞান বলতে আমি বুঝি তার ভবন নির্মানের দক্ষতা আছে অর্থাৎ সে জ্ঞান অর্জনের সময়কালে হাতে কলমে ভবন নির্মান করেছে ( যা কিনা তার অতীত অভিজ্ঞতা ) এবং সেই জ্ঞানের আলোকে সে ভবিষ্যতে ভবন নির্মান বাস্তবায়ন ঘটাতে পারবে।
মূল পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।
----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
অবশেষে আপনার মন্তব্য পেয়ে আমি আনন্দিত।
আপনার ফুলের উদাহরণ কিন্তু মোক্ষম। আমার প্রস্তাবটি দেই। আমি প্রস্তাব করছি, আমাদের ফুল দেখার পরের অনুভূতি আর মৌমাছির ফুল দেখার পরের অনুভূতি ভিন্ন হলেও মূল তাড়নাতে সাদৃশ্য পাওয়া সম্ভব। এবং ওই মূল তাড়নার সন্ধানের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে বিশেষ বহিঃপ্রকাশের উপর জোর দিলে তা ফলপ্রসূ গবেষণা নাও হতে পারে। কেননা বহিঃপ্রকাশ তো আসে ওই মূল তাড়না থেকেই। আর মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলো আকর্ষণীয় হলেও, ওগুলোকে নকলের লক্ষ্য ধার্য করা কিন্তু অন্যান্য প্রাণীর বৈশিষ্ট্যগুলো নকলের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। তাই, গবেষণার বাস্তবসম্মত লক্ষ্য হতে পারে ধীর পায়ে এগুনো। প্রথমে গুবরে পোকা, পিঁপড়া, মৌমাছি, বা মিচিও কাকুর অ'নির্বোধ' তেলাপোকা। তাহলে মূল তাড়নাগুলোর সাদৃশ্যটির আন্দাজ পাওয়া যাবে।
আর আমার প্রস্তাব হলো ওই সাদৃশ্যের মাঝে রয়েছে জীবনের অর্থ। যেটা নিয়ে সুদূর ভবিষ্যতে আমি কিছু একটা উৎপাত সৃষ্টি করার ইচ্ছা রাখি। মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলো একটি একটি করে নকলের চেষ্টা করার চেয়ে মূল তাড়নাটিকে নকল করাটা বেশি ভালো না? যেখান থেকে সবগুলোই উৎসারিত হওয়া সম্ভব?
পুরঃকৌশলীর উদাহরণ থেকে আঁচ করতে পারছি, আপনি কত দ্রুত ধারণাটি রপ্ত করে ফেলতে পেরেছেন! 'অভিজ্ঞতা' শব্দটি দেখেও ভালো লাগলো, কেননা ভবিষ্যত-অনুমানের ক্ষমতা তৈরির যে উপায়গুলি, তার মাঝে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটিকে মনে করি এই অভিজ্ঞতা। বিশেষভাবে যাকে বলে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা।
তথাপি এটা কি সংজ্ঞাতে থাকা অপরিহার্য? ভবিষ্যত-অনুমানের ক্ষমতা তৈরির এটা কি একমাত্র উপায়? আরো উপায় কিন্তু আছে। যেমন কল্পনা। বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে অনেককিছুর ভবিষ্যত-অনুমান কিন্তু কেবল কল্পনা করে করা সম্ভব। যেমন আজতো এভাবে করে দেখলাম, কিন্তু ওভাবে করলে কি হত? এই কল্পনা করা আর না করার কিন্তু পার্থক্য আছে। এই কল্পনা না করলে 'ওভাবে করলে কি হতে পারে' সে সংক্রান্ত অনুমান কিন্তু আমি দিতে পারি না।
এই কল্পনা কিন্তু হাতেকলমে অভিজ্ঞতা না। সাধারণত পুরঃকৌশলের মতো বৃহদাকারের জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও কল্পনা উভয় উপায় অবলম্বনের প্রয়োজন।
তাই অতীত অভিজ্ঞতাকে উপায়সমূহের তালিকায় রেখে সংজ্ঞাটি বললেও তা পর্যাপ্ত থাকে, এই আমার প্রস্তাব। তবে, যুক্ত করলে সবগুলো উপায় যুক্ত করতে হবে আরকি।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন
লোকে কানপড়া না দিলে সাহস করে নিজে হয়ত পড়ে ফেলতাম না।
পরবর্তি লেখাটার জন্যে কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করছি।
কানপড়া মাঝে মাঝে ভালো তাহলে! দীর্ঘ অপেক্ষার ধৈর্য হোক আপনার।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো। বিজ্ঞানের প্রায়োগিক দিকটাই মূলত গুরুত্ব পেয়েছে এখানে। তবে পর্যবেক্ষণ ছাড়া তত্ত্বকে বিজ্ঞান বলা যাবে না- এটা নিয়ে চিন্তায় পড়লাম। বিষয়টা নিয়ে আরেকটু ভাবতে হবে
যা হোক, এরকম লেখা আরও চাই।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আপনার মন্তব্যের জবাবটি ১২তে চলে গেছে।
বিষয়টি নিয়ে ভাবনার ফলাফল জানাবেন।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
গৌতমদা আমার মনে হয় সব তত্ত্বকে বিজ্ঞানের তত্ত্ব হতে হবে এমনটা আশা না করলেই আমরা বেঁচে যাই। বাগানের দশ প্রজাতির ফুলের মধ্যে কোনটা দেখলে আমি মনে কোন কবিতা বা গান জেগে উঠবে সেটা বিজ্ঞান বলতে পারবে না এতেই আমি খুশি।
যদি মাঝখানে ঢুকে পড়ার অনুমতি দেন, তাহলে বলি "বাগানের দশ প্রজাতির ফুলের মধ্যে কোনটা দেখলে আমার মনে কোন কবিতা বা গান জেগে উঠবে সেটা বিজ্ঞান" যদি বলতে না পারে, এই অনুমান করা যদি অসাধ্য হয়, তাহলে নিউরোবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকরা কিন্তু বেজায় কষ্ট পাবেন।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
"পর্যবেক্ষণ ছাড়া তত্ত্বকে বিজ্ঞান বলা যাবে না- এটা নিয়ে চিন্তায় পড়লাম"
'পর্যবেক্ষণ ছাড়া' আর 'পর্যবেক্ষণ-অসাধ্যে'র মধ্যে পার্থক্য আছে কিন্তু। ৫.১ মন্তব্যের ঘোড়ার চির অদৃশ্য ডিমের উদাহরণটি পড়ে ফেলতে পারেন।
ধন্যবাদ।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন
চমৎকার লেখা।
একটা প্রশ্ন: টুরিং ২০০০ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধির আবিষ্কার নিয়ে কোন ভবিষ্যতবাণী কি আসলেই করেছিল? কোন সূত্র আছে?
খুবই ভালো পয়েন্ট। উইকিপিডিয়ার [citation needed] দেখে ভড়কে যাওয়া সম্ভব।
সূত্র হচ্ছে টুরিং ১৯৫০ এর ৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদ (পিডিএফটির পৃষ্ঠা ১১)
ধন্যবাদ।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
একেবারে পেপারের লিংক দিয়ে দিয়েছেন, খুবই খুশী হলাম।
কিন্তু ইংরেজি লেখাটার সাথের আপনার করা অর্থ/অনুবাদের কিঞ্চিত তফাৎ আছে:
আপনি লিখছেন:
টুরিঙ বলছেন: (আমি ইংরেজি পড়ে যা বুঝছি)
আগামী পঞ্চাশ সালের মধ্যে, ১গিগ মেমরির কম্পিউটার আসবে, আর এগুলোকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা সম্ভব হবে যে যার সাথে একজন সাধারণ যাচাইকারী (an average interrogator) পাঁচ মিনিটির বেশী সময় ধরে কথোকথন চালালেও বড়জোর ৭০% ক্ষেত্রে সঠিকভাবে বলতে পারবে যে সেটা প্রোগ্রাম।
এখানে:
১গিগা মেমরির ব্যাপারে টুরিঙ খুবই সঠিক।
সাধারণ যাচাইকারী বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা জানি না (পুরো পেপারটা পড়লে হয়ত জানা যেত)। যদি সাধারণ রহিম-করিম-যদু-মধু হয় তাহলে টুরিঙের কথা খুব যে মিথ্যা তা বোধ হয় না।
পাঁচ মিনিট অনেক সময়।
টুরিং বলছেন বড়জোর ৭০% সময় সঠিক বলতে পারবে। তার মানে এই না, বাকী ৩০%ই একমাত্র ভুল। যে যাচাইকারী এ পরীক্ষায় অংশ নিবেন, তাকে জলজ্যন্ত মানুষের সাথে চ্যাট করালে কতজনকে সঠিকভাবে চিনতে পারবেন তাও বিবেচ্য। (প্রোগ্রামের বদলে জ্যান্ত মানুষ)। অন্যভাবে বললে, মানুষ মানুষ চিনতে যে পরিমাণ ভুল করে/করবে তাও হিসাবে থাকার কথা।
সে যাই হোক, চমৎকার একটা লেখার জন্য আবারো ধন্যবাদ।
আপনার সিগনেচারের লেখাটা নিয়ে একটা পোস্ট দিন, তর্ক করতে ইচ্ছে করছে
ব্যাপারটা আমি বুঝি নি, আরেকটু বিস্তারিত বলবেন?
যখন লেখক একটি বাক্যের ব্যাখ্যা আর অন্য কোথাও করেন না, তখন সেটার বিভিন্ন ব্যাখ্যার সুযোগ থেকে যায়। ওনার দাবীকে আমার মতো করে ব্যাখ্যা করে ভুল কিন্তু আমিই প্রথম বলি নি। এখানে একটি ভালো আলোচনা আছে এ ব্যাপারে। এভাবে ব্যাখ্যা করার বিরোধিতাও আছে দেখবেন আলোচনায়, যার যুক্তিও বেশ মোক্ষম। তবে, ওরকম প্রোগ্রাম যে এখনো আসে নি, এ নিয়ে দ্বিমত কিন্তু কোনো পক্ষেরই নেই। এই গবেষণায় অগ্রগতি ক্ষীণ। আর আমার এই প্রবন্ধে একটি ছোট খাটো দাবী ছিলো এভাবে আগানোটা ফলপ্রসূ না।
যাহোক, আলোচনা করে ভালো লাগলো।
আমি তো ভাবছিলাম, এই পোস্টটিই আমার সিগনেচারটি সংক্রান্ত পোস্ট। ঠিক এই লাইনটি কিন্তু প্রবন্ধেই আছে এবং ব্যাখ্যাও করেছি। তর্ক শুরু করে দিন। আপনার দৃষ্টিভঙ্গিটা বলুন।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
ধরুন আপনি টুরিঙ টেস্টের একটা সেটাপ দাঁড়া করালেন।
রাস্তা থেকে, ক্যাফে থেকে, বন্ধুদের মধ্য থেকে সব মিলিয়ে ১০০ জন মানুষকে জোগাড় করলেন। আপনি তাদেরকে পরীক্ষণটি সম্পর্কে কী বলবেন?
বলবেন যে, আমি একটা টেস্ট করছি, আপনাকে কম্পিউটারে সবে পাঁচ মিনিটের জন্য চ্যাট করতে হবে। চ্যাট শেষে আপনাকে অনুমানে/ধারণায় বলতে হবে যার সাথে চ্যাট করেছেন তিনি কি মানুষ নাকি যন্ত্র। ঠিক আছে?
এবার যখন একজনকে কম্পিউটারের সামনে বসাবেন, অপর প্রান্তে কে চ্যাট করবে? অপর প্রান্তে যদি আপনি সব সময়ই চ্যাট বট রাখেন তা হলে আপনার পরীক্ষণ বায়াসড। অপর প্রান্তে বটের বদলে কখনও কখনও মানুষও রাখতে হবে। (তাদেরকে কী বলা হবে সেটা অনুহ্য থাক।)
নির্ভরযোগ্য ফলাফল পেতে হলে, একেকজনকে অন্তত কয়েকবার এই টেস্টের মুখোমুখি করতে হবে। কারণ মানুষের অনুমান/বিবেচনা/ধারণা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের অবস্থার সাথে সম্পর্কিত। (টেস্ট দেয়ার আগে কেউ ৪ঘণ্টা জ্যামে কাটালে কী হতে পারে!) যে কয়বার এ টেস্ট করা হবে, তার অন্তত অর্ধেক সংখ্যকবার চ্যাটবট এবং বাকী সময় মানুষের সাথে চ্যাট করাতে হবে। তার পরই কেবল ভুল/সঠিকের হিসাব করা যাবে। চ্যাটবটকে মানুষ বললে যেমন ভুল হবে, মানুষকে বট বললেও ভুল হবে। এ পরের হিসাবটা লেখায় সম্ভবত ধরা হয়নি।
টুরিঙ ৭০% এর কথা এত কিছু চিন্তা করে বলেছেন কিনা জানি না।
পরের হিসাবটাতে তো প্রোগ্রামের কোনো কৃতিত্ব নেই। এখন যদি সব কয়টা প্রোগ্রামকে ধরে ফেলা যায় তারা মানুষ না, তাহলেও এই হিসাবে কিছু ভুল আসতে পারে।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
আরো কেউ কেউ হয়ত বলে ফেলেছে, এরই মধ্যে (সবার মন্তব্য পড়া হয়ে উঠেনি)।
অর্থহীন:
ধরে নিচ্ছি এর মানে meaningless (মূল্যহীন/valueless নয়।)
আমার দ্বিমত আছে। তত্ত্বের অর্থ তো সবসময়ই থাকে, সেটা সবার বোধগম্য নাও হতে পারে। তাই অর্থের চাইতে বলা যাক ব্যাখ্যা। একটা ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য কিনা।
পর্যবেক্ষণ:
পর্যবেক্ষণ বা observation এর সাথে সেন্সরের কথা আসে। যেমন, আলো পর্যবেক্ষণ করতে চোখ বা ক্যামেরা ইত্যাদি। কী পর্যবেক্ষেণ? সেটার উত্তর হচ্ছে ঘটনা বা event (যেটা নিয়ে তত্ত্বটা।)। এখন সহজ কথা হচ্ছে, কোন ঘটনা ঘটল কিনা, তা পর্যবেক্ষণের ফলাফলের উপর নির্ভর করে কিনা। একটা ইভেন্টের প্রকাশ বহু মাত্রায় হতে পারে (যেমন কোন কিছু পোড়ালে, তাপ হয়, দৃশ্য/অদৃশ্য আলো হয়, গ্যাস হয়)। পর্যবেক্ষণকারী কি এসব কিছুই পর্যবেক্ষণ করছে?
তারচে বড় কথা হলো, পর্যবেক্ষণ হলো ইভেন্টের প্রেক্ষিতে একটা সেন্সরের রেসপন্স। ইভেন্ট হলে রেসপন্স পাব, যদি সেন্সর সঠিক হয়। কিন্তু রেসপন্স পেলেই যে আবার ইভেন্ট ঘটেছে তা নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাবে না। ম্যাপিং ১:১ এবং ইনভার্টিবেল হলেই কেবল এটা সম্ভব। এর উপর আবার প্রোবাবিলিটি আনলে আরো বিপদ।
তত্ত্ব কী করে? কোন কিছুর একটা মডেল করে, তার সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়, যেটা রিপ্রডিউস করা যায়। মডেলের সঠিকতার উপর তত্বের যথার্থতা নির্ভর করে। তত্ত্ব কী সবসময় রিপ্রডিউস করার গ্যারান্টি দেয়? সম্ভবত না। এখানেও আবার প্রবাবিলিটি চলে আসবে। কিন্তু যতটাই দেয়, ততটা সত্য।
(কী বলতে কী বললাম, খেই হারিয়ে ফেলছি, ঘুম আসছে )
আমি আমার মত করে ব্যাখ্যাটা দেবার চেষ্টা করি।
আমি পর্যবেক্ষণ বলতে যা বোঝাচ্ছি, সে হিসেবে উত্তর হবে - যদি বলেন কোন কিছু "হয়", তাহলে অবশ্যই তা পর্যবেক্ষণসাধ্য হতে হবে। আপনি অদৃশ্য আলো সরাসরি দেখেন না। কিন্তু আমরা কি করে জানি যে অদৃশ্য আলো আছে? অবশ্যই কোনো না কোনো পরিমাপক যন্ত্র আবিষ্কার করে তা পরিমাপ করা হয়েছে এবং সবশেষে সে পরিমাপক যন্ত্রের ফলাফল কোনো একটি ডিসপ্লে থেকে আমরা আমাদের সেন্সর দিয়েই দৃষ্টি গোচর করেছি। পর্যবেক্ষণ এই অর্থেই।
সরাসরি না দেখা গেলে পর্যবেক্ষণ হয় না, এটা আমি বলছি না। বিজ্ঞানে আপনাকে পদ্ধতিগতভাবে তত্ত্ব দাঁড় করাতে হবে, এবং তারপর আপনাকে সেই তত্ত্ব থেকে একটি ঘটনা বা ইভেন্টের অনুমান দিতে হবে যা পর্যবেক্ষণযোগ্য। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তো তা সরাসরি পর্যবেক্ষণযোগ্য হয় না, তাই না? আবার বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাহায্য নিয়ে পর্যবেক্ষণযোগ্য করে তোলার পর আমরা তো তা আমাদের সেন্সর দিয়েই গ্রহণ করি, তাই না? অর্থাৎ সবশেষে আমাদের দৃষ্টিগোচর পর্যায়ে নিয়ে আসতেই হবে।
এখন ধরুন আমি একটি তত্ত্ব দিলাম যাকে কোনো ভাবেই আমি পর্যবেক্ষণযোগ্য করে তুলতে পারছি না। এমন কোনো পর্যবেক্ষণযোগ্য ঘটনা দেখাতে পারছি না, যা আমার তত্ত্বটি থেকে অনুমান করা যায়। একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে ঘোড়ার চির অদৃশ্য ডিম। এখন এই তত্ত্বের মূল্য কি আপনার কাছে? মূল্যহীন। এবং এই তত্ত্ব সম্পর্কে বলার সময় আমি মূল্যহীন না বলে অর্থহীন বলতে বেশি পছন্দ করবো। এসব তত্ত্ব দাঁড় করানোর "কোনো মানে নেই" এই অর্থে অর্থহীন।
আলোচনায় অংশ নেবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন
আপনি কি হাইজেনবার্গের ডুয়েলিটি তত্ত্বের সাথে পরিচিত? শুধু আলো না আরো বহু ক্ষেত্রে এ তত্ত্ব প্রযোজ্য। সবকিছু (সম্ভাবনা এক নিয়ে) পর্যবেক্ষেণযোগ্য নয়।
আলোর কথাই ধরি। আলো আরো দশটা তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের মতোই যার কম্পাংক আছে। এখন, গামা-রে হচ্ছে জানা সর্বোচ্চ কম্পাংকের তরঙ্গ। এর চেয়ে বেশী কম্পাংকের কিছু কি নেই? গামা-রে সেন্সর বানাতে গেলে সাব-এটমিক রেঞ্জে যেতে হয়। এর ছোট কি যাওয়া সম্ভব?
পিরিওডিক টেবিলে আমরা পড়েছি ১০৫টা মৌলের কথা। এর চেয়ে বেশী কি হতে পারে, নতুন মৌল কি আবিষ্কার হতে পারে? প্রচলিত 'ধারণা' হচ্ছে না, কারণ পৃথিবীর যে কন্ডিশন তাতে তা 'টিকে' থাকতে পারবে না। তার মানে আবার এই না, অন্য কোন গ্রহে নতুন কোন মৌল পাওয়া যাবে না। (হায় হায় উইকি দেখাচ্ছে এখন ১১৭টা!)
টেকনলিজের সাথে বিজ্ঞানের এখানেই বিপুল ব্যবধান। পর্যবেক্ষণ করতে, বা আপনার ভাষায় পর্যবেক্ষণযোগ্য হতে হলে, আপনাকে কোন না কোনভাবে এক্সপেরিমেন্ট দাঁড়া করাতে হবে। প্রচলিত প্রযুক্তিতে সেটা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই বলে, কোন তত্ত্ব যদি কিছুর বোধগম্য ব্যাখ্যা দেয়, তাকে অস্বীকার করা অপ্রয়োজন।
অসাধারণ!
আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চলে এসেছেন। আসলে, যে তত্ত্বের কোনো বিন্দুমাত্র আলামত বা সে সংক্রান্ত কোনো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়, আমি সেসকল তত্ত্বকে অস্বীকার করছি। আমার সিগনেচারের মূল বক্তব্য কিন্তু এটাই। আমি মনে করি, এটা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দর্শন। তত্ত্বকে পর্যবেক্ষণ-কেন্দ্রিক রাখা, এর বাইরে না যাওয়া। আর আপনি বলছেন সেগুলো অস্বীকার অপ্রয়োজনীয়। আপনার সাথে আমার আলোচনা এখানেই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আমি আপাতত আপনার কয়েকটি উদাহরণ এর বক্তব্য নিয়ে উত্তর করি।
সম্ভাবনা এক এর দাবী কিন্তু করি নি। "সম্ভাবনা এক নিয়ে পর্যবেক্ষেণযোগ্য নয়" এমন ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য বলছি না।
এটাতো পর্যবেক্ষণ-অসাধ্যও নয়। এই উদাহরণ আমার যুক্তিখন্ডনে আর কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে? এবং এটা বরং বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ একটি উদাহরণ। এটি ১১৮তম মৌলটি অনুমান করতে পারে। কি ধরনের কন্ডিশনে এটি টিকে থাকতে পারে তার বর্ণনা দিতে পারে, এবং সেই কন্ডিশন উদঘাটন অথবা তৈরী করে ওই মৌলটির অস্তিত্ব দেখাতে পারে। এ জায়গায় আপনার আর আমার বক্তব্য একই।
গামা রশ্মি পর্যবেক্ষণ করার অর্থ কিন্তু কেবলমাত্র এই নয় যে সাব এটমিক রেঞ্জে যন্ত্র তৈরী করে সেটা চাক্ষুষ করা। বিজ্ঞান বরং এভাবেও পর্যবেক্ষণগত প্রমাণ দেবার চেষ্টা করে:
গামা রশ্মির অস্তিত্বের বর্ণনা দেয়। তারপর সেটার সাথে জড়িত কোন পরীক্ষার বর্ণনা দেয়, যেখানে সরাসরি তাকে দেখা না গেলেও তার কোন আলামত, তার কোন প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। যেমন, হতে পারে, কি ধরনের বস্তু থেকে গামা রশ্মি নির্গত হতে পারে তার ধারণা দেয়া। আর গামা রশ্মি কোনো বিশেষ বস্তুর উপর নির্দিষ্ট সময় ব্যাপী আপতিত হলে ওই বস্তুর পৃষ্ঠে কি পরিবর্তন লক্ষ করা যেতে পারে তার বর্ণনা বা অনুমান দেয়া যেতে পারে। এরপর এই পরীক্ষাটি করে অনুমানের যাচাই করলেই গামা রশ্মি সংক্রান্ত তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা সম্ভব। বিজ্ঞানে পর্যবেক্ষণ বলতে তো তাই বোঝায়। আমার কোনো বক্তব্য দেখে কি আপনার মনে হয়েছে যে আমি বলতে পারি গামা রশ্মি পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য?
এটা দেখতে পারেন, বা এটা,
এই 'কিছু'টির প্রকৃতি দয়া করে বর্ণনা করবেন? এই কিছু কি এমন হতে পারে যে কোনো রকমের পর্যবেক্ষণের সাথে এর কোনো যোগ নেই? এমন কি তত্ত্বটি কোনো ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাখ্যাও নয়? এমন "কিছু"র/বিষয়ের এবং তার ব্যাখ্যাকারী তত্ত্বের উদাহরণ দিতে পারবেন?
আর সেই "কিছু" যদি কোনো ঘটে যাওয়া ঘটনা সংক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু তা পর্যবেক্ষণ সংক্রান্তই। তবে ওই যে, সবশেষে কিন্তু যাচাই করতে হবে ভবিষ্যত-অনুমান করে।
ভবিষ্যত-অনুমানের সেই পর্যবেক্ষণের জন্য অপেক্ষা করতে দোষ নেই। কিন্তু, যদি বলে দেন, সব কিছু পর্যবেক্ষণ করা যায় না, বা এই বিশেষ তত্ত্বের কোনো পর্যবেক্ষণ সম্ভব না, তাহলে ওই তত্ত্বের পর্যবেক্ষণের জন্য আমার আর অপেক্ষা নেই, তাই ওই তত্ত্বের কোনো মানেও নেই।
অতএব, ঘটে যাওয়া ঘটনার পর্যবেক্ষণ নিয়ে তত্ত্বেরও যাচাই প্রয়োজন ভবিষ্যত-অনুমানের মাধ্যমে। আমি একটি গূঢ় পুস্তক লিখতে পারি, এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা ঘটার পর পরই বারবার আমি আমার পুস্তকের বাক্যকে ওই ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী বা প্রফেসি বলে দাবী করতে পারি। কারো কারো কাছে তা বোধগম্য হতেও পারে।
যে তত্ত্বের অনুমান করার ক্ষমতা বা সুযোগ নেই, আমি বলছি, তা জ্ঞান/বোধগম্য বলা ঠিক নয়। ঘটার পরে নানান 'বোধগম্য' ব্যাখ্যা সম্ভব। ঘটার আগে অনুমান তৈরী করতে না পারলে তার মূল্য নেই। আর অনুমান করলে তা যাচাই করতে হবে। যাচাইযোগ্যতার জন্য পর্যবেক্ষণসাধ্য হতে হবে। কোনো তত্ত্বের পর্যবেক্ষণসাধ্যতা আর যাচাইযোগ্য অনুমানের ক্ষমতা কথাগুলো এখানে প্রায় সমার্থক।
আপনার কাছ থেকে আরো আরো যুক্তির আশা রইলো।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
যে বড় মন্তব্য করেছেন, পয়েন্ট বাই পয়েন্ট লিখতে পারছি না।
১. পরিসংখ্যানে প্রোবাবিলিটি থিওরির পাশাপাশি মেজার থিওরি বলেও একটা বিষয় আছে। দুর্ভাগ্য আমি এ বিষয়ে একেবারে মুর্খ।
২. থিওরি সাধারণত আগে আসে না। পৃথিবীতে কোন ঘটনা ঘটার পরই তার ব্যাখ্যার জন্য থিওরি আসে। মানুষের মন অনুসন্ধিৎসু বলেই হয়ত।
৩. আপনি যখন বলেন, কোন কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য হতে হবে, যেমন গামা-রের উদাহরণে বলেছেন, এমন কোন পরীক্ষণ আয়োজন করতে হবে, যাতে গামার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। আমি এখানে ভিন্নমত করি: কলঘরে জল পড়ার শব্দ শুনে আমরা বিশ্বাস করি, কলটা ঠিকমতো লাগেনি। এ বিশ্বাসের পিছনে আছে, যে জল আর কোন কারণে পড়তে পারে না। ধরা যাক, গামা-রে ডিটেক্ট করার জন্য একটা সেন্সর বানানো হলো, যা গামা-রেতে অবশ্যই সাড়া দিবে। কিন্তু সেন্সরটি সাড়া দিলেই যে গামা রে উপস্থিত এমন কথা বলা তখনই সম্ভব হবে যখন আপনি নিশ্চিত (প্রোবাবিলিটি=১) করতে পারবেন যে সেন্সরটি গামাভিন্ন অন্যকিছুতে সাড়া দেবে না। আপনাকে অন্য সবকিছু রুল আউট করতে হবে। সম্ভাবনার বিচারে এসব করা অসাধ্য না হলেও খুব কঠিন।
৪. 'কোন কিছুর' উদাহরণ দিই।
ধরুন মহাজাতক বললো ব্রেইনের আলফা, বেটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বা ডেভিড ব্লেইন একটা সাফাই দেখালো যে, বরফ ঠাণ্ডা পানিতে দম বন্ধ করে কয়েক ঘণ্টা ডুবে থাকা যায়। ফিজিওলজি যারা জানেন, বললেন মানব শরীরের পক্ষে সেটা অসম্ভব। ব্লেইনের নিজের ব্যাখ্যা আছে (যদিও সেটা থিওরি বলা হয়নি)। সেটা ঠিক না বেঠিক তা প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব। কারণ আপনি আর দশটা মানুষকে ধরে পানিতে ডুবিয়ে রাখতে পারবেন না।
গত সপ্তাহে এখানে টিভিতে একটা ডকুমেন্টারি দেখাল। পেরুর এক ব্যক্তি কয়েক মেগাভোল্টের বিদ্যুত লাইনে দিব্যি হাত দিতে পারে। হাত দিয়ে গ্রাউন্ড স্পর্শ করে স্পার্কও তৈরি করতে পারে। ডাক্তারি হিসাবে, দু'শ-তিনশ ভোল্টের লাইনে হাত দিলে হৃৎপিণ্ড কয়েক সেকেন্ডের বেশী চালু থাকবে না। আর সেই ব্যাক্তি কয়েক মিনিট মেগাভোল্ট লাইনে হাত দিয়ে রাখে।
এবার আসা যাক, থিওরি/ব্যাখ্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিস্টরা তার শরীরে কারেন্ট মেপেছে। যে মাত্রা পেয়েছে, তা সাধারণ মানব শরীরের সহ্যসীমার কয়েশত গুণ। ডাক্তারদের মধ্যে একজন কার্ডিওলজিস্ট তার হার্ট পরীক্ষা করেছে, কোন ব্যতিক্রম পায়নি। একজন ডার্মাটোলজিস্ট সন্দেহ করেছেন যে তার স্কিন কোন বিশেষতার দাবী রাখে যে কারণে বিদ্যুৎ তার শরীরের উপরিভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়, হৃৎপিন্ডে কোন প্রভাব ফেলে না। এটাই একমাত্র সান্ত্বনা পাবার মতো ব্যাখ্যা। কিন্তু আপনি একে প্রমাণ করতে পারবেন না। কারণ, থিওরি হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে, রিপ্রডিউসিবিলিটি থাকতে হবে। আর দশজন মানুষ দিয়ে সে পরিক্ষাটা করা সম্ভব হবে না।
এ তর্কের ইতি টানতে চাচ্ছি এখানেই। আরো লিখুন।
খুব সহজে বোঝানো৷আরও লিখুন প্লীজ৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
লিখবো। ধন্যবাদ।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
আপনার এই সিরিজ মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। খুবই ইন্টেরেষ্টিং বিষয়। লিখে চলুন।
অসংখ্য ধন্যবাদ। আর আপনার সমালোচনা কিন্তু আমার একান্ত কাম্য।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
আপনার সিরিজটা পড়ে খুব ভাল লাগছে। প্রত্যেকটা পর্বই পড়েছি যদিও নিয়মিত মন্তব্য করা হয় নি। এই পর্বটা বেশী ভাল লাগল বিজ্ঞানের দর্শন থাকার কারণে। বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে ফজলুল করিম এর অনুবাদ করা একটা বই পড়েছিলাম: "বিজ্ঞানের দার্শনিক"। লুক্রেটিয়াস এর "বিশ্বপ্রকৃতি প্রসঙ্গে" পড়ার পর বুঝেছিলাম পশ্চিমে বিজ্ঞানের দর্শনের ভিত কত গভীর। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
বইগুলো হাতে পেলে পড়ার ইচ্ছা আছে। আপনার স্মৃতি বা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দু' একটা পোস্টও দিয়ে দিতে পারেন। তাহলে আলোচনা করতে পারতাম। ধন্যবাদ।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন
“The question of whether a computer can think is no more interesting than the question of whether a submarine can swim.” - Edsger Dijkstra
নতুন মন্তব্য করুন