০১
করিম ছোটবেলা থেকে লোক ঠকানো ধান্দাবাজি করে। ওটাকে সে বলে কম্যুনিকেশন। পড়াশোনাও তার ওই বিষয়। বলে নাকি সুখে থাকতে চায়। রহিমের হাসি পায়। রহিমের জীবনের লক্ষ্য আরো মহত্তর। জীবনের প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে সে চায়। বিজ্ঞানে ছাত্র হয়। চিরন্তন সত্যকে বুঝতে চায় সে। ইউনিভার্সল ট্রুথ। মৃত্যুর পূর্বে রহিম এটা জেনে যায় যে চিরন্তন সত্যের কোনো অস্তিত্ব নেই। আর করিম মৃত্যুর পূর্বে সুখী ছিল।
০২
মানুষ দুই ধরনের প্রশ্ন করে। এক: আপেল কি নিচের দিকে পড়ে? দুই: আপেলের নীচের দিকে পড়া কি উচিত? প্রথম প্রশ্নের উত্তর পর্যবেক্ষণ, তথ্য উপাত্ত দিয়ে যাচাই বাছাই করা যায়। মানে প্রথম প্রশ্নের পর্যবেক্ষণগত উত্তর আছে। কিন্তু দ্বিতীয় প্রশ্নের কোনো শাশ্বত উত্তর নেই। একইভাবে মানুষ প্রশ্ন করে, তিনমাসের ভ্রুণের গঠন কেমন হয়, আবার প্রশ্ন করে তিনমাসের ভ্রুণ হত্যা, গর্ভপাত করা উচিত কিনা। একটার উত্তর আছে, আরেকটার কোনো চিরন্তন উত্তর নেই। আছে কেবল শর্তাধীন উত্তর। যেমন, আমি যদি কোনো সন্তান নিতে না চাই, তাহলে গর্ভপাত করা উচিত কিনা? আমি যদি আমার স্বাস্থের কোনো প্রকার ঝুঁকি নিতে না চাই, তাহলে গর্ভপাত করা উচিত কিনা? আমি যদি পোপকে খুশি করতে চাই, তাহলে গর্ভপাত করা উচিত কিনা? এইসব শর্তাধীন প্রশ্নের উত্তর আছে। এসব প্রশ্নের একটা গিভেন আয়্সাম্প্শান আছে। এই আয়্সাম্প্শানটা সরিয়ে নিলেই কিন্তু এই প্রশ্নের আবার কোনো উত্তর নেই। যেসব প্রশ্নের এমন শাশ্বত উত্তর নেই, সেগুলো নিয়ে আছে কেবল রাজনীতি।
০৩
চিরন্তন সত্যের অভাবে পৃথিবীতে আছে কেবল রাজনীতি। রাজনীতির সত্য মূল্য নেই। রাজনীতি মূলত সুখে থাকার নীতি। পৃথিবীটাকে নিজের মত করে সাজিয়ে নেবার নীতি। পৃথিবীটা ভরে আছে কোটি কোটি রাজনীতিবিদে। এরা প্রত্যেকে চায় নিজের যে সুখের বিচার, সেই মতে পৃথিবীর রাস্তাঘাট, রাষ্ট্র সমাজকে সাজিয়ে নিতে। অন্যকে বোঝাতে - তার যে সুখের বিচার, সেটাই মহত্তর। সেটাই মানবতার প্রকৃত কল্যাণ। কিন্তু এই কাজ একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই রাজনীতিবিদ তার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দেয় হাজারখানেক অনুসারীর মাথায়। অনুসারীরা তার কথা বিশ্বাস করে। আর তার হয়ে কাজ করে পৃথিবীটাকে তার অনুকূল করে গড়ে তোলার জন্য। রাজনীতিবিদ আর অনুসারী। পৃথিবীটা এই দুই ধরনের মানুষেই ভর্তি।
০৪
চিরন্তন সত্যের একটা সোর্স হচ্ছেন ঈশ্বর। তিনি অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। যেমন তিনি বলে থাকেন, গর্ভপাত করা যাবে কি যাবে না। গর্ভ-নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি যাবে না। জনৈক মো: রাজনীতিবিদের মুখের কথা মানুষ বিশ্বাস করতে চাননা বলেই এগুলো ঈশ্বরের মুখ দিয়ে বলতে হয়। ঈশ্বর যেহেতু বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন এবং দেখভাল করছেন, তিনি যেটা সঠিক মনে করেন, সেটাই শাশ্বত, সেটাই রেফারেন্স।
ঠিক তা না। তিনি দেখভাল করেন দেখেই তিনি যেটা সঠিক মনে করেন, সেটাকেই সঠিক মানতে মানুষ নারাজ। এমন যদি হত যে স্বয়ং ঈশ্বর ভোরবেলা পূর্বাকাশে উদিত হয়ে বললেন, "হে মানবগণ তোমরা গর্ভপাত করো না। গর্ভপাত আমি পছন্দ করি না। তারপরেও যদি তোমরা করো, আমি মনক্ষুন্ন হব, কিন্তু তোমাদের এজন্য কোনো শাস্তি দেয়া হবে না।" তাহলেও কিন্তু ঈশ্বরের কথাটার আর কোনো শাশ্বত মূল্য মানুষের কাছে থাকে না। ঈশ্বর বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন এবং সবকিছুর দেখভাল করছেন তো কি হয়েছে? গর্ভপাত বিষয়ক মন্তব্য ওনার একান্তই নিজস্ব মতামত। ফলে, ঠিক ঈশ্বর বলেছেন বলে মানুষ কোনো কিছুকে চিরন্তন সত্য মনে করে, তাও কিন্তু না। যেইমাত্র ঈশর বলে দেন যে - যারা ঈশ্বরের কথা মানবে না, তাদের জন্য পরের দুনিয়াতে আছে অনন্তকাল অগ্নিদাহ - সেই মুহূর্তে কথাটার একটা শাশ্বত মূল্য মানুষের কাছে তৈরী হয়। কারণ মানুষের কাছে প্রকৃত অর্থে চিরন্তন সত্য কেবল তার নিজের চামড়াকে, নিজের সুখ।
০৫
বি অনেস্ট। আপনি যেটাকে সত্য মনে করেন, সেটা করেন এমন বলবেন না প্লিজ। বলুন, যেটা করতে আপনি সুখবোধ করেন, কেবল সেটাই করেন। নিখাঁদ সততা অর্জনের জন্য এই কঠোর উপলব্ধি একান্ত জরুরি।
মন্তব্য
চমৎকার লেখা। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম
ভাল লাগল।
ধ্রুব সত্য বলে আসলে কিছুই নাই। মানুষ নিজের সুবিধার জন্য রেফারেন্স পয়েন্ট বানায় নেয়। সবকিছুই পালটে যেতে থাকে।কে জানি বলছিল, " জগতের সবই মায়া ", ঐটাই আসলে সত্য।
-শিশিরকণা-
(amihimi@gmail.com)
মায়া কিনা, সেই সত্যও জানা অসম্ভবরে ভাই।
আচ্ছা "রাজনীতি করে কি সৎ হওয়া যায়?" প্রশ্নটা কোন শ্রেণীতে পড়ে? নাকি এটা "সময়ের আগে কি ছিল?" অথবা "অনুভূতির রঙ কি?" এর মত অর্থহীন প্রশ্ন?
সেরকমই তো মনে হয়...
আমার ফেসবুকের স্ট্যাটাস হইলো।
(:
মানুষ সত্যি যাতে সুখ বোধ করে তাই করে। ব্যাপারটা অনেকটা মুখোশের মত। আমরা সবাই মুখোশটাকেই সত্যি বলে ভাবতে ভালোবাসি।
ঠিকই
ভালো লাগলো আপনার লেখাটি। আইজাক আসিমভের "লাস্ট আন্সার" পড়েছিলাম অনেক আগে। নায়কের সাথে মৃত্যুর পরে স্রষ্টার কিছু আলাপ। দারুন অভিভূত হয়েছিলাম পড়ে।
অনুভবে একটি জিনিষই আসে। মৃত্যুর পূর্বে শ্বাশ্বত বা চিরন্তন সত্য জানার হয়তো কোন উপায়ই নেই।
শুভকামনা রইলো। আরো লিখুন।
-সৈয়দ নূর কামাল
ধন্যবাদ। লাস্ট আন্সার পড়তে হবে।
লেখাটা কিভাবে যেন চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। আজ পড়লাম। তবে মনে হল পুরো চিন্তাটুকু আসেনি। বাকি চিন্তাগুলো নিয়ে আরেক পর্ব নামিয়ে ফেলতে পারো। মানে শ্বাসত সত্য যখন নেই তখন আপাত সত্য কিভাবে নির্ধারিত হবে?
বিজ্ঞান দ্বারা। কিন্তু এগুলো যেহেতু আপাত, শর্ত-সাপেক্ষ সত্য এবং যে শর্তের উপর এই সত্য নির্ভর করে, তার যেহেতু আবার কোনো সত্যাসত্য নাই, তাই এই আপাত সত্য গ্রহণে কেউ বাধ্য থাকবে না। আপাত সত্য পরম নয়, ব্যক্তিক। পরম সত্যের অনুপস্থিতি মানুষকে স্বাধীন করেছে। Man is free to choose his goal.
এই বিষয়টি নিয়ে আরেকটি লেখা দিতেই বলছিলাম।
নতুন মন্তব্য করুন