ইরান থেকে বাংলাদেশঃ আমাদের বিচার-অবিচারবোধের পাঠ

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি
লিখেছেন ধ্রুব বর্ণন (তারিখ: রবি, ২৬/১২/২০১০ - ১০:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

ক্ষেত্রবিশেষে পশ্চিমা মিডিয়ার যে অতিরঞ্জন, বায়াস, তাকে অতিক্রম করেই বলতে পারি, আমি যে পর্যায়ের ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগকে বেঁচে থাকার নামান্তর মনে করি, সেটা মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশ, ইরান, পাকিস্তান আর চীনে পাওয়াটা দুষ্কর। তবে সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত পছন্দ। আমার বাংলাদেশে, বা এখন যে দেশে সাময়িকভাবে আছি, কানাডা, সেখানে বলা চলে সেটা আমি প্রায় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়েই ভোগ করে এসেছি।

এই বক্তব্যটাকে সর্বাগ্রে রেখেই যে বিষয়টি তুলতে চাই, সেটা হলো অন্যায়ের ব্যাপারে আমাদের পারসেপশন। আমাদের একটা পারসেপশন আছে যে ইরানে স্টেট স্পন্সরড পার্সেকিউশান চলছে। নির্ঘাত। কিন্তু বাংলাদেশেও যে একটা পর্যায়ে সেটা চলছে, এ ব্যাপারে কি আমরা যথেষ্ট সোচ্চার? যেমন র্যাব বা আমাদের যেকোনো অস্ত্রধারী সংস্থা যে আমাদের দেশের মানুষকে গ্রেপ্তারের পর বিচারের আগেই/বাইরে নির্যাতন করে। এটা যে উচিত নয় সেটা আমরা সবাই আশা করি বোধ করি। কিন্তু এর বিপরীতে আমাদের প্রতিবাদের মাত্রাটা কিরূপ?

'আমরা' বলতে শিক্ষিত ব্লগবাসীদের কথাই ধরে নেই। আমরা আকারে ছোট নই। পাঠক শ্রেণীকে যুক্ত করলে আমরা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের শিক্ষিত যুব সমাজের অন্য নামে পরিণত হতে যাচ্ছি অদূর ভবিষ্যতেই। আমার মনে হয় আমাদের দেশের রাষ্ট্র সমর্থিত বিচার-বহির্ভূত নির্যাতনের ব্যাপারে এই আমরা যথেষ্ট সোচ্চার নই। কিন্তু ইরানের আচরণে, যেমন সাম্প্রতিক জাফর পানাহির বিচারের ব্যাপারে আমরা ক্ষুদ্ধ। এর কারণ আছে। ইরান বা চীনের আচরণ আমাদের কাছে নীতিগতভাবেই চরম অজনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিচার বহির্ভূত নির্যাতন দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের কাছে বলতে গেল অনেকটা জনপ্রিয়! অর্থাৎ আমরা যাদের অপছন্দ করি, সন্ত্রাসী, খুনি, চিহ্নিত অপরাধী, অস্ত্রধারী সংস্থাগুলো দিনের পর দিন এদেরকেই গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন করেছে বলে আমরা জেনে এসেছি।

ফলে এখানে 'আমরা', শিক্ষিত ব্লগবাসী, দ্বিধা-বিভক্ত। আমরা অনেকে মনে করি, চিহ্নিত অপরাধী বিচারের আগে নির্যাতিত হওয়ার যোগ্য। যে অপরাধী বলে জানাই আছে, প্রতিদান তো তার প্রাপ্যই। আর আমাদের দেশে যেহেতু বিচারের গ্যারান্টি নেই, প্রেপ্তারের পর যে শাস্তিটা সে পাবে, সেটাকেই তার বিচারের অংশ বলে ধরে নেয়া যায়। ফলে বিচার বহির্ভূত নির্যাতনের বিপক্ষের কন্ঠ ইতোমধ্যেই দুর্বল হয়ে গেছে।

এ কারণে রাষ্ট্র সমর্থিত এই বিচার বহির্ভূত নির্যাতনকে অনেকটা জনপ্রিয় বলা যায়। অন্তত আমাদের চিহ্নিত শত্রুদের প্রতিদান দেবার মাধ্যমে চিন্তায় যে দ্বিধাটা এখানে তৈরি হয়, সেটা আমাদের বাঁধা দেয় এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। যে কারণে এ ধরনের 'ইনস্টান্ট জাস্টিস' বহু দেশেই প্রচলিত থাকে অসন্ত্রাসী সমাজের সমর্থনপুষ্ট হয়েই, যে সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই আমরা। আমাদের পাশের দেশের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যেও বহু দশক ধরে চলেছে, চলছে এই 'ইনস্টান্ট জাস্টিস'।

আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে এটা অবিচার, এবং অবিচারের কাতারে এই আচরণ ইরানের জাফর পানাহির বিচারের চেয়ে কোনভাবেই খাটো নয়। কিন্তু আমাদের পার্সেপশানকে সম্ভবত জাফর পানাহির বিচারটাই বেশি বিচলিত করে, নাম না জানা কোনো ব্যক্তির র্যাবের হাতে ক্রসফায়ারে মরে যাবার চেয়ে। সে তো হয়ত সন্ত্রাসীই ছিলো। নিশ্চয়ই কারো মায়ের কোল খালি করেছে, কারো হাত কেটে ফেলেছে। রাস্তাঘাটের খুনি সন্ত্রাসী, ওদের এহেন 'বিচার'ই হয়ত দেশের আইন-শৃঙ্খলা আর বিচার ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে উপযুক্ত। কিন্তু জাফর পানাহি তো নির্ঘাত নিরপরাধ। এবং, বিশেষভাবে, সে তো আমাদের গোষ্ঠীরই মানুষ।

আমাদের পার্সেপশানে এই গোষ্ঠী বিচারটা বলবৎ আছে। নিজেদের ধরনের মানুষদের জন্যে আমাদের যত দুশ্চিন্তা। তাদের জায়গায় নিজেদের চিন্তা করাটা খুব সহজ যে। সন্ত্রাসী কথিত কানা মজিদের জায়গায় সেটা আমাদের নেই। নিজেদের গোষ্ঠীর স্বার্থ-রক্ষাটাকে আমি কুচিন্তা হিসেবে দেখছি না, যেখানে আমি নিজে অধিকাংশ সময় কেবল একান্ত নিজের ব্যক্তি-স্বাধীনতা নিয়েই চিন্তিত থাকি এবং তার উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন বিষয়ে তর্ক করে থাকি। এবং লক্ষণীয় আমরা সাধারণত যেসব বিষয়ে প্রতিবাদ করে থাকি, তার অনেককিছুই আমাদের নিজস্ব গোষ্ঠীর অধিকারের সাথেই সম্পৃক্ত। আমি মনে করি, একটা গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর ক্ষতি না করে যদি নিজেদের ব্যাপারে চিন্তিত হয়, সেটা অকাম্য নয় এবং ফলপ্রসূই বটে। বিশেষ করে যখন অন্য গোষ্ঠীর উপর অবিচারের ব্যাপারে আমাদের প্রনোদনা তৈরি হতে চায় না।

ফলে আমি এই গোষ্ঠী চিন্তাটাকেই বরং আরো এগিয়ে নিতে চাই। এবং উপলব্ধি করতে চাই যে, গোষ্ঠীর বাইরে যে তাত্ক্ষণিক বিচারের নামে অবিচার ঘটছে, এটা আমাদের গোষ্ঠীর অধিকার ও স্বাধীনতাকে আঘাত হানার ভিত্তিকে শক্ত করছে। এই যে অস্ত্রধারীর হাতে জনপ্রিয় কর্ম সাধনের দায়িত্ব দিয়ে দেয়া হলো, এতে করে কিন্তু আমাদের গোষ্ঠীর যে কারো উপরেও এই ধরনের 'ইনস্টান্ট জাস্টিসের' দায়িত্ব সাথে করে দিয়ে দেয়া হলো। নিজেদের গোষ্ঠীর কারো জন্যে কি আমরা আসলে এই ধরনের তাত্ক্ষণিক বিচার চাই? আমরা কিন্তু আমাদের জন্যে চাই নিয়মমাফিক বিচারের স্বাধীনতা। বিচারের আগে আমাদের বিচার করা যাবে না, অত্যাচার করা যাবে না, নির্যাতন করা যাবে না। এমন কি যদি আমরা অপরাধ করে থাকি, তারপরেও। অপরাধীর অধিকারের ব্যাপারে আমাদের চিন্তা এগোয়নি বলতে হবে। কারণ, আমরা সাধারণত অপরাধ করি না। ফলে আমরা বিচারের প্রক্রিয়ার উন্নয়ন নিয়ে চিন্তিত নই। বিচারের বাইরের নির্যাতন নিয়েও নই।

কিন্তু আমি মনে করি, বাংলাদেশে বিচার প্রক্রিয়ার দুর্বলতা এবং বিচারের বাইরে নির্যাতনের সম্ভাবনা বাংলাদেশকে এমনকি আমাদের গোষ্ঠীর মানুষের জন্যেই হুমকিপূর্ণ স্থানে পরিণত করে ফেলছে। কোনো নিশ্চয়তা নেই যে বিনা অপরাধে আমাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হবে না। আমরা আইনের বই নিয়ে ঘুরি না। সত্যি বলতে, আমরা নিজেদের বিবেচনার উপরেই চলি, এবং প্রতি মুহূর্তে আমরা নিশ্চিত থাকি না যে আমরা আইনের দৃষ্টিতে সত্যি কোনো অপরাধ করেছি কি না। আমাকে আইনত গ্রেপ্তার করা সম্ভব বা প্রয়োজন হলে করা যায়। কিন্তু আমরা তো ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারের পর আমাদের উপর যা খুশি আচরণের মনস্তাত্ত্বিক সমর্থন দিয়ে রেখেছি অস্ত্রধারীদের। রাষ্ট্রের অস্ত্রধারী তার জনপ্রিয় কর্ম সাধন করতে করতে ধীরে ধীরে একটা শ্রেণীহীন চরিত্রও ধারণ করে উঠেছে বলা যায়। ফলে কানা মজিদের উপর নির্যাতন হবে, কিন্তু আমার উপর হবে না, এমন ভাবার তেমন কোনো কারণ নেই। আমরা কোনো কারণে গ্রেপ্তার হব সেটা ভাবি না। ফলে কোনো কারণে আমরা যদি গ্রেপ্তার হই, এরপর কি ঘটবে, সেটা আমাদের চিন্তার একটা অন্ধকার অঞ্চল। আমরা চিন্তাতেও সেটা এড়িয়ে যাই।

জাফর পানাহির ঘটনাকে ছোট করতে চাই না। অন্যায়ের ব্যাপারে আমাদের পারসেপশনের একটা তুলনামূলক আলোচনাই করতে চাইলাম কেবল। জাফর পানাহি আমাদের স্বগোত্রীয়, তাই তার উপর অন্যায় আমাদের সহজবোধ্য, ইরানের চেয়ে যে বাংলাদেশ এই আমাদের বসবাসের হাজার গুণে উপযুক্ত, সেটা তাত্ক্ষণিকভাবে আমাদের কাছে পরিষ্কার। কিন্তু রাষ্ট্রের আচরণের একটা অন্ধকার অঞ্চলে আমাদের অক্রিয়াশীলতা যে আমাদের অধিকার লঙ্ঘনের ভিত্তিকে একটা অভাবিত উপায়ে ধীরে ধীরে শক্ত করে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে ভাবিত হবার সময় হয়ত এখন এসেছে।

ভাবনাটাকে সহজ করার জন্যে একটা উদাহরণ দেই। আজকের প্রথম আলোর একটা নিউজ থেকে তিনটি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা জানা যাচ্ছে। একজন হলেন মডেল ও অভিনেতা কায়সার মাহমুদ বাপ্পী, যাকে র্যাবের তালিকাভুক্ত 'সন্ত্রাসী' কামরুজ্জামান বাপ্পী সন্দেহে চিরাচরিত 'ক্রসফায়ারে' নিহতের গল্পের আড়ালে হত্যা করা হয়েছে। আরেকজন, মহিউদ্দিন আরিফকে ধরে নিয়ে যাবার পর নির্যাতন করা হয় ও নির্যাতন-পরবর্তী চিকিৎসায় অবহেলার কারণে সে মারা যায়। তৃতীয়জন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নূর আলম, যার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ নেই, তাকে র্যাব ধরে নিয়ে যায় এবং তাকেও 'ক্রসফায়ারের' নামে হত্যা করা হয়। এমনটাই সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট। এদের যে কেউ, স্বাধীন বাংলার বুকে হেঁটে যাওয়া আমি হতে পারতাম, কিংবা আপনি। যখন অন্যের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হবার প্রনোদনা আসে না, তখন নিজেকে সে জায়গায় কল্পনা করাটাই হয়ত সহায়। রাষ্ট্রের অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত অপরাধীকে আটকের পর নির্যাতনের নৈতিক ও মানসিক অধিকার কি আমরা আমাদের নিজের অধিকারের বিনিময়ে দিতে রাজি আছি? যদি এভাবে ভাবলে বুঝতে সহজ হয়, তাহলে ভাবুন যে, সেদিন নিশ্চিত খুনি কানা মজিদের নির্যাতনকে নৈতিক সমর্থন দানটা আজকে আপনার বিচার-বহির্ভূত নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডকে সহজ ও সম্ভব করে তুলেছে। রাষ্ট্রের অস্ত্রধারীর হাতে তাত্ক্ষণিক প্রতিদান বা বিচারের নামে মানবতার ব্যতিক্রম তৈরির আর একটা সুযোগও দেয়া না হোক!


মন্তব্য

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ছবি: প্রথম আলো।

সচল জাহিদ এর ছবি

পোষ্টের মূলভাবের সাথে সহমত জ্ঞাপণ করছি। বিচার বহির্ভূত যেকোন হত্যাকান্ডই আরেকটি নতুন অপরাধ।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সচল জাহিদ ব্লগস্পট


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ জাহিদ ভাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

যদিও বিষয়টির পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা বলা যায় তবুও প্রত্যেকটি মানুষ সুবিচারের দাবিদার। বিনা বিচারে মানুষ হত্যা কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

মাহফুজ খান

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

একদম ঠিক কথা। ধন্যবাদ।

আব্দুল্লাহ্ এ এম এর ছবি

এই মুহুর্তে ক্রসফায়ার কায়মনোবাক্যে সমর্থন করি। হ্যাঁ, যদি দেশে আইনের শাসন আকাঙ্খিত মাত্রায় থাকতো, তাহলে কোন মতেই এরকম হত্যাকান্ড সমর্থন করতাম না। সত্যি কথা বলতে, বাংলাদেশে পুলিশ হলো গণদুর্ভোগের সবচেয়ে কার্যকর টুল, আইন আদালত সামগ্রিকভাবে তার সবচেয়ে আপন সহায়ক। বিদ্যমান অবস্থায় পুলিশ এবং বিচার ব্যাবস্থা ভূঁইফোর প্রানঘাতি সন্ত্রাসীদের জন্য কোন সমস্যাই না। কোন কারনে একবার আটক হলে তাদের ছাড়িয়ে আনার জন্য সরকারী দলের নেতা, বিরোধী দলের নেতা, থানার দারোগা, কোর্টের উকিল, সন্দেহ মতে কোন কোন ক্ষেত্রে বিচারক পর্যন্ত এক পায়ে দন্ডায়মান থাকে। মাস্তানের নীপিড়নের শিকার কেউ যদি আইনের আশ্রয় নেয়, তাহলে তার জানমালের দায়িত্ব শুধুমাত্র উপরওয়ালার। আর জানেন তো, উপরওয়ালারও খুব একটা সময় নেই এসব ফাছেক বিষয় দেখভাল করার। এমতাবস্থায় rab এবং তাদের ক্রসফায়ার হলো ভূক্তভোগীদের জন্য অগতির গতি। যদি কখনো বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যে প্রশাসন এবং বিচার ব্যাবস্থা দুষ্টের দমন করতে পারছে, তখন আপনার এসকল উচ্চমার্গীয় ধ্যানধারনা নিয়ে আবার আসবেন। অবশ্য তার কোন প্রয়োজন হবে না, জনগনই এর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করবে। এখন যখন ক্রসফায়ারে স্বস্তিলাভ করে মিষ্টি বিলাচ্ছে, তখন উদ্বিঘ্ন হয়ে রাস্তায় নামবে। তবে হ্যাঁ, ক্রসফায়ারে দুচারটি ভুলভ্রান্তি হয়তো ঘটেছে, কিন্তু তা শতকরা দু একটির চেয়ে বেশী নয়। ক্রসফায়ারে নিহত সোনার ছেলেরা বেঁচে থাকলে তাদের হাতে এর চেয়ে বিশ পঞ্চাশগুন বেশী মানুষ প্রান হারাতো, সমাজের অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতো।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

তবে হ্যাঁ, ক্রসফায়ারে দুচারটি ভুলভ্রান্তি হয়তো ঘটেছে, কিন্তু তা শতকরা দু একটির চেয়ে বেশী নয়।

ঐ শতকরা দুচারটির মধ্যে যদি আপনার কোন স্বজন পড়তেন তাহলে এই আপনাকেই "কায়মনোবাক্যে" অন্য কথা বলতে হতো।



অজ্ঞাতবাস

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

সেটাই। ঘটে যাবার আগে আমরা ভাবতে অপারগ, বার বার সেটা প্রমাণ করছি। অপরাধীর অধিকার যে আমাদের নিজেদের জন্যে, নিজেদের সমাজের জন্যেই প্রয়োজন, সেই চিন্তা এখনো আমাদের এগোয় নি। আইনের শাসন না চাইলে কিভাবে প্রতিষ্ঠা হবে? ক্রসফায়ারে স্বস্তিলাভ করে মিষ্টি বিলিয়ে নিশ্চয়ই আইনের শাসন চাওয়া যায় না।

অনিন্দ্য এর ছবি

আমি খুব সহজভাবে যেটা বুঝি, তা হলো ৯৮/৯৯ জন দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে গিয়ে যদি ২/১ জন নিরপরাধ ব্যক্তি দণ্ডিত হন, তাহলে সেটা সমর্থন করা যায় না।

ফারুক হাসান এর ছবি

তার চেয়েও আগের প্রশ্ন, র‌্যাব কি কোনো বিচারক প্রতিষ্ঠান? আসামী দোষী না নির্দোষ সেটা কে প্রমাণ করবে? র‌্যাবের শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা কে দিয়েছে?

অনিন্দ্য এর ছবি

হুম, ঠিকই বলেছেন। বেশি সহজভাবে বুঝতে গিয়ে একটু ভুল বলে ফেলেছি। অবশ্যই তাদের "আসামী দোষী না নির্দোষ" এটা নির্ধারণ করার কথা না।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

এভাবে অনেকে ভাবেন দেখেই কিন্তু লেখাটার উত্থাপন। ধরে নিলাম রাস্তার পাণ্ডা, খুনি নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু কায়সার মাহমুদ বাপ্পীর থেকে আমি আপনি কি খুব বেশি আলাদা যে তাকে ভুল করে হত্যা করা হলেও এমনটা আমার আপনার সাথে ঘটবে না? আপনার এই সমর্থন যে আপনার বেঁচে থাকার স্বাধীনতাকে লংঘিত করার সুযোগটাকেই সমর্থন দিচ্ছে, সেটা ভেবে দেখেছেন কি? ভাবলে হয়ত এই সাময়িকের স্বস্তি আসলেই লং টার্মে স্বস্তির কিনা উপলব্ধি করা সহজ হবে। দূরের কথা ভাবতে হবে তো।

ফারুক হাসান এর ছবি

স্বৈরশাসক কিংবা অস্ত্রধারীর হাতে ক্ষমতা আসার সাথে সাথেই তারা দুর্নীতি দমনের নামে ব্যাপক যজ্ঞ শুরু করে। দুর্নীতির রাঘব-বোয়ালদের টাইট দেয়ার নাম করে জনগণের আস্থাভাজন হওয়ার এই কৌশলটি পুরোনো। কিন্তু দুর্নীতি দমনের গুড় মাখানো একনায়কতন্ত্র যখন দেশের ইয়ে মেরে সাদা করে ফেলে তখন আর কিছু করার থাকে না। জল্পাইদের দুষ্টের দমনের সাথে র‌্যাবের ক্রসফায়ারকে সমতুল্য বিবেচনা করা যায়। দুটোই জনগণের খুব পছন্দের। ডিসেম্বরের শীতে লেপের নিচে শুয়ে খবরে ক্রসফায়ারে আরো একজন সন্ত্রাসীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে জনতা আমোদে পুলকিত হয়, ভাবে- এইভাবেই বুঝি সব সন্ত্রাস সমাজ থেকে দূর হয়ে যাবে। অথচ এভাবে অস্ত্রধারীকে সমর্থন করে করে কোন ফাকে যে তাকে হত্যার লাইসেন্স দিয়ে দেই সেটা বুঝতে পারি না। এভাবেই আমাদের ফ্রাংকেনস্টাইন তৈরি করি আমরা নিজেরাই।

এমন হতভাগ্য জাতি আমরা, সাধারণ মানুষ তো দূরে থাক, আমাদের সরকার পর্যন্ত সেটা বুঝতে পারে না, খেয়ালে বেখেয়ালে ক্রসফায়ারের সমর্থন জুগিয়ে যায়। র‌্যাবকে এত দক্ষ একটা বাহিনী বলা হয়, অথচ বছরের পর বছর সে তার নিজের জিম্মায় থাকা আসামীকে ক্রসফায়ারের হাত থেকে বাঁচাতে পারে না। এর চেয়ে বড় কৌতুক আর কি হতে পারে! আসলে হত্যার পেছনে ক্রসফায়ার একটা খেলো যুক্তি হবার পরও দিনের পর দিন সেটা দেখিয়ে যাওয়া হয়। এর কারণ আমরাই। আমাদের, বিচার বিভাগের, সরকারের আস্কারায় এই দুষ্টক্ষতের পরিচর্যা। অথচ ক্রসফায়ার কখনই সন্ত্রাস থেকে মুক্তির পথ হতে পারে না। বরং বিচার বহির্ভূত যে কোন হত্যাকান্ডই সবচেয়ে বড় সন্ত্রাস।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

প্রতিদিন খবরে শুনতে শুনতে শুনতে শুনতে আমাদের কানে সয়ে গেছে ফারুক ভাই। সরকারকেও এই বুদ্ধি বাইরে থেকেই হয়ত দেয়া হয়েছিল বল এখন মনে হচ্ছে। সরকার সানন্দে সেটা লুফে নিয়েছে। আর র্যাবের বিপক্ষে কিছু বলার ক্ষেত্রে একটা ভয়ও হয়ত কাজ করে। ভয় আর তাত্ক্ষণিক সমাধানের লোভ। ষোলো কোটি মানুষকে কত সহজ নিয়ন্ত্রণ করা।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কিছু বললেই আদালত অবমাননার অপরাধে অপরাধী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিচার বিভাগ নিয়ে একটা জরিপের ফল প্রকাশের কারণে যেভাবে টিআইবি'র তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়েছে তাতে দেশের বিচার বিভাগকে কে বা কারা কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে সেই প্রশ্ন তোলা যায়।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ভীষণ সমস্যা। আর এসব সমস্যার দোহাই দিয়ে লোকজন ক্ষণিকের আফিম ক্রসফায়ার খেয়ে মিষ্টি বিলাচ্ছে। মন খারাপ

ওডিন এর ছবি

আচ্ছা সাকারে নিয়া কেউ অস্ত্র উদ্ধারে যায় না ক্যানো? চিন্তিত
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

সাকা মরে গেল তো বেঁচে গেল। ক্রসফায়ারে নিহতের যে ভিকটিম চরিত্র, সেটা কি আপনে সাকারে দিতে চান?

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

একটা ১৮ বছরের বা আটাশ বছরের কার্যকর কারাদণ্ড, দশ দিনের চরম নির্যাতনের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ফলপ্রসূ। চিন্তা করে দেখুন, প্রতিটা জলপাই শাসনে কত কত রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বহুজনকে অসম্ভব নির্যাতন করাও হয়েছে। এতে কি হয়েছে? কার স্বভাব পরিবর্তন হয়েছে? সবাই পরের টার্মে ততোধিক শয়তান রূপে আবির্ভূত হয়েছে। হাজারীকে জিয়াউর রহমান নাকি হাঁড় গুঁড়া গুঁড়া করে দিয়েছিল। শোনা যেত সে নাকি আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। কই, কি হলো? সব হাঁড় তো তার ঠিক হয়ে গেল। বের হয়ে এসে মানুষকে ধরে ধরে সে প্রকাশ্যে এরপর কত নির্যাতন করলো। এর বদলে এই কয়টা বছর (৩০?) যদি হাজারী বিনা শ্রম কারাদণ্ডও ভোগ করত, সেটাই বেশি কার্যকর হত বলে মনে হয়। অথবা তারেক রহমানের কথা ধরুন। তার কোমড় ভেঙ্গে কি উপকার হয়েছে আমাদের। আমরা কি মি: টেন পার্সেন্ট কে হাজতে দেখতে চাই? নাকি কোমড় ভাঙ্গা অবস্থাতেও বহাল তবিয়তে হওয়া ভবন চালাতে দেখতে চাই? লোকটা তো আরো ভয়ংকর রূপে ফিরে আসবে তাই না? এই নির্যাতনে তার কোনো ভাবোদয় হয়েছে বলে মনে হয়? আর ওই সাময়িক স্বস্তির মিষ্টি বিলানো ছাড়া আর কোনো আনন্দ হয়েছে আমাদের? ভবিষ্যতে দশগুণ অপরাধ করার সুযোগ থাকলে অপরাধী টানা দশ মাস ভয়ংকর অত্যাচারও সহ্য করে যেতে পারে। সাইকোলজি দিয়ে এর কারণ ব্যাখ্যা করাও সম্ভব বলে আমার মনে হয়।

আমাদের এই যে অপরিণামদর্শিতা, এটা কিন্তু অস্বাভাবিক না। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সংহতভাবে দৃঢ়চিত্তে নিষ্ঠার সাথে এক লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া, এটা মানুষের স্বাভাবিক আচরণ না। তাই ক্ষণে ক্ষণে এটা মনে করার, মনে করিয়ে দেবার দরকার আছে।

~~সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা মানুষের মুক্তির জন্যে সংগ্রামের সময় অপরাধীর অধিকারের কথাটাও ভুলে যায় না।

জোনাকী এর ছবি

প্রথমে যেটা বলতে চাই সেটা হলো ক্রসফায়ার নিয়ে অনেক আগেই প্রতিবাদ শুরু হয়ে গেছে। অনেকে খবর না রাখলেও নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০০৮ সালেই সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি। তাছাড়া মানবাধিকার সংস্থাগুলি সবসময় সরকারকে তাগাদা দিয়েছে এটি বন্ধ করার। উইকিলিকসে প্রকাশ হবার পর অনেক দেশও এর বিরুদ্ধে মত দিয়েছে।
লিখতে চাই, কেন অনেকেই এর পক্ষে মত দিয়েছিল। এদেশে অপরাধী ধরা পরে না আর ধরা পরলেও ছাড়া পেয়ে যায়, একথা জেনেই হয়ত বাঙালী শিক্ষিত সম্প্রাদায় কিছুদিন দেখতে চেয়েছিল কিভাবে তারা র‌্যাব দ্বারা উপকার পেতে পারে। সরকার সেটারই সদ্ব্যবহার করেছে, একের পর এক হত্যা কান্ড ঘটিয়েছে এদেশে। সম্ভত তুমিও তাদের দলে ছিলে, নতুবা ২০০৪ সালে র‌্যাব গঠিত হবার পর ২০১১ সালে তোমার মতামত প্রকাশ করতে না। যাই হোক, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অপরাধ প্রমাণিত না হলে তাদের ছবিও দেখানো হয় না টিভিতে। পুলিশ কাওকে জেরা করলেই যে সে অপরাধী হয়ে যায় না, এটা তারই প্রমান।
তারেকের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে আদালতে যেত না আর যাবেও না, তাই হয়ত ওকে অপদস্ত হতে দেখে খুশি হয়েছিলাম, একথা বলতে দ্বিধা নাই। তবে আজকে সকল দ্বিধা ঝেড়ে বলতে চাই, অপরাধীর অপরাধ প্রমাণিত হলে তবেই তাদের শাস্তি পাওয়া উচিত, তার আগে নয়। সে যেই হোক, সাকা, তারেক অথবা যে কেও। তবে এটাও ঠিক যে, পুলিশের কাজে বাধা দিলে সব দেশেই সেটা অতি কঠোর ভাবে দমন করা হয়, পুলিশ এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা সবাইকে পালন করতে হবে। কাওকে ধরতে এসে পুলিশ যদি বাধাপ্রাপ্ত হয় তবে তাকে অপদস্ত হতেই হবে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

র্যাব প্রসঙ্গে আমার অবস্থান কি ছিল ৪-৫ বছর আগে, সেটা আসলেই একটা প্রশ্ন। অপারেশন ক্লিন হার্ট না কি একটা হয়েছিল, যখন খালেদা জিয়া আর্মি নামিয়ে দিল মাস্তানি করার জন্যে। মোবাইল ফোন হাত দিয়ে মচকে ভাঙ্গা শুরু করলো। তখন আমি তাদের অসম্ভব ঘৃণা করতাম, এটা মনে আছে। নিজের দেশে নিজেকে বন্দী মনে হত। তখন একটা প্রচলিত গালি ছিল, ব্যারাকে যা। আমি রিক্সায় চড়তে চড়তে সিগারেট ফুঁকতাম আর কটমট করে তাদের দিকে তাকাতাম, ভাবতাম একটা গিয়ানজাম আজকে লাগলেই ভালো লাগে। কিন্তু র্যাব নিয়ে তেমন কিছু মনে পড়ছে না। র্যাব রাস্তা ঘটে মাস্তানি করে নি বলে আমি হয়ত আমার নিজের স্বাধীনতা নিয়েই সুখে ছিলাম। আমার অতীতের মেইল ঘেঁটে পাওয়া যাচ্ছে যে আমি একবারই র্যাব নিয়ে কথা বলেছি, আর সেটা হচ্ছে শিবিরের ব্যাপারে র্যাবের সম্ভাব্য পক্ষপাতিতা নিয়ে। সেসময় পর্যন্ত র্যাবের হাতে মাত্র একজন শিবির ক্যাডার মারা যায় (গিট্টু নাসির)। আর আরেকজন (চট্টগ্রামের, নাম ভুলে গেছি) শিবির থেকে বি এন পি তে যোগ দেবার ঠিক আগ মুহূর্তে র্যাবের হাতে মারা যায়। তবে র্যাবের বিপক্ষে এখানে লেখার আগেই অন্তত ২০০৯ সালে তোমাকে আমার অবস্থান জানিয়েছি, মনে করে দেখতে পারো। আজকেও যদি এটা কেউ উপলব্ধি করে, ক্ষতি কি?

কাওকে ধরতে এসে পুলিশ যদি বাধাপ্রাপ্ত হয় তবে তাকে অপদস্ত হতেই হবে।

এগুলো খুব ডেলিকেট ইস্যু। পরিষ্কার অবস্থান নেয়া কঠিন। কিন্তু একবার যখন কেউ পুলিশ হেফাজতে চলে যায়, তখন তাকে ধরে নির্যাতন করা যায় কি যায় না, সেটা নিয়ে পরিষ্কার অবস্থান নেয়া খুব একটা কঠিন না বলেই আমার মনে হয়। আমার লেখাটার বিষয় কিন্তু কেবল সেটা নিয়েই ছিল। অপরাধী যখন পুলিশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, তাকে নির্যাতনের সময় আমার হাততালিটা দেয়া খুব জরুরি কিনা, এর শর্ট টার্ম ফলাফল কি, এর লং টার্ম ফলাফলই বা কি?

মানুষের তাত্ক্ষণিক উল্লাস তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সুদূর ভবিষ্যতের জন্যে পরিকল্পনা স্বকীয় আচরণ দিয়ে আসে না। এর জন্যে অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে কিছু হিসাব নিকাশ করতে হয়। হিসাব নিকাশে অনীহা মানুষের থাকতে পারে। কিন্তু যে হিসেব কষে, তার দূরের ভবিষ্যতটা অনুকূল থাকবে এটাই কিন্তু সত্য।

যুদ্ধাপরাধের বিচার আমাদের অনুভূতির দাবী অবশ্যই। কিন্তু সেটার বাস্তবায়নটাও অনভূতি দিয়ে হয়ে যাবে না। একটা বুদ্ধিমান সুচিন্তক জাতির মত আচরণ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচারটাকে আমি আমাদের অনুভূতিগুলোকে চিন্তাশীলতা ও মননের স্তরে উন্নয়ন হিসেবেই দেখি। অনুভূতিপ্রবণ থেকে যাওয়া হিসেবে নয়।

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সরকারের হালচালের ব্যাপারে আমার হিসাব নিকাশের ফলাফল ভালো নয়। গতানুগতিক দায়সারা বা জনপ্রিয় আচরণের বাইরে এসে বস্তুনিষ্ঠ পদক্ষেপ এখনো তারা নিতে পারে নি। আমরা নিজেরাই যদি বস্তুনিষ্ঠ পদক্ষেপ চাওয়ার চেয়ে জনপ্রিয় আচরণ চাইবার ব্যাপারে অধিক সরব হই আর সরকারের অন্যায় আচরণের বিপরীতে একমাত্র সরব কন্ঠ যদি হয় সরকারের বিরোধী ডানপন্থীরা, তাহলে একটা গণতান্ত্রিক সরকারের কি ঠ্যাকা পড়েছে কঠিন কাজগুলো করার? আমাদেরকে খুশি রাখাই তো তার মূল লক্ষ্য তাই না? যুদ্ধাপরাধের ইস্যুটা তো আমাদের, সরকারের না।

আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে যেতে না পারলে, আমি এইবার তাদের দোষ দিব না। এ ব্যাপারে আমরাই তো চুপচাপ আছি বহুদিন। সরকারের জনপ্রিয় আচরণ দেখেই মোটামুটি তুষ্ট এবং তৃপ্ত আছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।