আকাঙ্ক্ষা, স্বার্থপরতা, কল্লা-কাটা মোল্লা ও অন্যান্য

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি
লিখেছেন ধ্রুব বর্ণন (তারিখ: শুক্র, ১৫/০৪/২০১১ - ৫:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানবিক

মৃত্যুর পর স্বর্গ বা নরক কোনকিছুই আমার জন্যে অপেক্ষা করছে না। তাই যদি খুন করে ফেলি কাউকে, কিছু আসে যায় না আমার পরকালের, যেমন আসে যায় না একটি মানুষকে বাঁচালে। নিতান্ত বিবর্তনীয় কারণ ছাড়া আর কোনো কারণে কি তাহলে আমি মানবতাতাড়িত? নাকি এ কেবলই প্রোথিত?

আমি ভাবতে চাই, এই জীবনের প্রয়োজনেই আমি মানবিক। যদি এই জীবনে মানবিকতার মূল্য আমার কাছে না থাকতো, তাহলে আমি মানবিক হতাম না। বাকির লোভে আসল কে ছাড়ে? আমি নিতান্ত স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক মানুষ, তাই আমি মানবিক।

নই?

পরিশেষে সব অর্থহীন। আমি কি মানবিক নই? পৃথিবীটা মানবিক নয়। আমি তো পৃথিবীরই অংশ। পৃথিবীটা চেতনার সংগ্রাম। মত ও পথের দ্বন্দ্ব। এতসবের ভীড়ে আমি মত ও পথের একটা নমুনা মাত্র! সমস্ত মত তৈরি কেবল নিজের জায়গা করে নিতে। কেউ চায় নি মানব সভ্যতার কল্যাণ। মানব সভ্যতার কল্যাণ চেয়ে মানব সভ্যতা এক পাও এগোয় নি। মানব সভ্যতার যত পথ গড়িয়েছে, তা কেবল ব্যক্তির লোভ-লালসা আশা-আকাঙ্ক্ষাপূরণের জন্যে। যুদ্ধ হয়েছে মানবতার জন্যে নয়, জাতির জন্যে নয়, ব্যক্তির নিজের জন্যে। আবিষ্কার হয়েছে ব্যক্তির জন্যে। ধান ফলেছে ব্যক্তির জন্যে।

পরের জন্যে স্বার্থত্যাগ একটা অস্থিতিশীল প্রক্রিয়া। এটা সর্বজনীনভাবে বলবৎ থাকার বিষয় নয়। তাই এটা বিরল আর প্রভাবে নগণ্য। মানুষের সভ্যতার যা উন্নতি, তা কেবল রাজন্যের বিলাসিতাপূূর্ণ জীবন-যাপনের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্যে, বা অধুনা নাগরিকের জীবন-যাপনের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য। আকাঙ্ক্ষা ছাড়া একটা চাকাও ঘোরে না। আকাঙ্ক্ষা ছাড়া মানবিকতার চাকাও ঘোরে না। তবে বহুর আকাঙ্ক্ষায় দ্বন্দ্ব অনিবার্য। যেসব আকাঙ্ক্ষায় ঐক্য বিরাজ করে, তার আশেপাশে মানবতা ঘুরঘুর করে। যেখানে দ্বন্দ্ব, সেখানে মানবতা হল ব্যর্থ আত্মত্যাগের গল্প। ফলে ব্যর্থ।

বিজয়ীর ইতিহাস

কেবল শক্তিশালী টিকে থাকে। আজকের যে শহুরে মানবের মানবতা, সে এক ভ্রম। শক্তিশালীর কাছে সে ধ্বংস হবে। আমরা বুঝি না, আমরা মানতে চাই না, কারণ সভ্যতার ঘড়ির কাঁটার মাত্র একটা পলের উপর আমাদের সকলের জীবনের ব্যাপ্তি বিরাজ করে। কিংবা মানতে চাই না এ কারণে যে ইতিহাস কেবলই বিজয়ীর লেখা। তাই আজ থেকে পাঁচশ বছর পরে জানবো, মার্কিন আর ইংরেজদের গড়া সভ্যতাটা কিভাবে সবচেয়ে বর্বর সভ্যতা ছিল এবং কিভাবে প্রাচ্যের কোনো এক মহান মানবতা পরিশেষে তাকে উদ্ধার করেছে। যদিও তারা আংশিক সত্য কথা বলবে। সত্য হলো এই যে, হিংস্রদের সভ্যতা প্রতিবার আরো ভয়ংকর, আরো হিংস্রদের দ্বারা করায়ত্ত হয়। জীবদ্দশায় কেবল তারই গুণগান চলে।

স্বার্থপরই মানবিক

ফলে আমরা যতো মত পথ আদর্শকে মানবতা বলে জানি, তার কোনোটিই মানবতা নয়। কারণ তার প্রতিটিরই একাংশ মানবিক হলে অন্য অংশটি হয় নিষ্ঠুর। কখনো পৃথিবীর সবাইকে এক চোখে দেখা যায় না। কেউ দেখতে পায় না। পৃথিবীর সব বর্ণের মৃত্যুতে কেউ কখনো সমান দুঃখী হতে পারে না। সেখানে নির্লিপ্ততাই সর্বোচ্চ মানবিক। সাম্যবাদী। নৈয়ায়িক। তাই নিজের যাপনে ভণ্ডরাই হয় প্রকৃত সাধু। স্বার্থপরই সত্যিকারের উপকারী। মানবতার যে বোঝা, তা কেবলই বোঝা। কোন উপকার ন্যায্য হতে পারে না। কোনো ত্যাগ নিরপেক্ষ হতে পারে না।

যে করে সে করে। কিন্তু সে উত্তম হয়ে আমি অধম হই কিভাবে? হই না। আমি স্বার্থপরের মতো জীবন-যাপন করেও অধম বলে নিজেকে মানতে অস্বীকার করি। ছোটো বোধ করতে অপারগ হই। কারও হতে কোনো অংশে হীন বলে মেনে নিতে পারি না। হীন সে, যে অন্যেকে তার উচ্চতা শেখায়। ভণ্ড সে, যে অন্যকে সাধুতা শেখায়। আমি নিরোপকারী স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক এবং উত্তম। মাথা উঁচু করে স্বার্থপরের মতো বাঁচতে চাই। স্বার্থপরতাই ন্যায্য মানবতা। আমার আকাঙ্ক্ষাই সভ্যতার আকাঙ্ক্ষা। সভ্যতা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমি গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতো তুচ্ছ প্রতিটি মানুষ গুরুত্বপূর্ণ।

আকাঙ্ক্ষাই মহৎ

আকাঙ্ক্ষাই পৃথিবীকে গড়েছে। আকাঙ্ক্ষার কারণেই মানুষ নড়ে। সঙ্গীকে কাছে টানে। অনস্তিত্বকে আবিষ্কার করে। জীবনকে পরিবর্তিত করে। বিজ্ঞান যদি জানা হয়, সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান হলো অসম্ভবের বিজ্ঞান। যা নেই, তাকে সৃষ্টি করতে জানার বিজ্ঞান। বিগ ব্যাং, ব্ল্যাক হোল, নক্ষত্ররাজি, মানুষের অতীত বিবর্তনকে জানা যদি হয় আছে কে জানা, অসম্ভবের বিজ্ঞান হলো হওয়াকে জানা, তৈরি করাকে জানা। অনেক অনেক আছেকে জানাটা অনেক অনেক তৈরি করাকে জানতেই সাহায্য করে। আর তা না হলে কিই বা আসে যায় মানুষের অতীত বিবর্তনের ইতিহাসে? এসবই জানা ওই আকাঙ্ক্ষার জন্যে।

অসম্ভবের বিজ্ঞান

এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মানুষ বিদ্যমান। অদম্য আকাঙ্ক্ষা। এর সর্বোচ্চ অর্জন হলো অসম্ভবকে সৃষ্টি। টেলিফোন। রকেট। কম্পিউটার। এগুলো মহাবিশ্বে অস্তিত্বশীল ছিলো না। এমন কোনো কিছু আগে কেউ দেখে নি কখনো। মানুষ তাকে তৈরি করেছে। বিগ ব্যাং হোক না হোক, বহুবিশ্ব থাক বা না থাক, মানুষ আদমের সন্তান হোক বা না হোক। মানুষই যে ঈশ্বর তা সে দেখিয়ে দিয়েছে। যা ছিলো না, তাকে সে তৈরি করেছে। মানুষের যে বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা, সে যদি আজকের মতো সমানই থাকতো, কেবল মানুষের আকাঙ্ক্ষার ক্ষমতাটাকে যদি মুছে ফেলা হতো, এসব কিছুই তৈরি হতো না। মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছাড়া মানুষের এই বুদ্ধিমত্তাটা তাই মূল্যহীন। আকাঙ্ক্ষা ছাড়া মানব জীবন - জড়।

মানুষের যে সৃষ্টিকর্তা হবার ইচ্ছা আর সামর্থ্য, তার একটা আরেকটার উপর ভর করে বেড়েছে। বানর হয়তো লাঠি তৈরি করেছে, ছুরিও হয়তো ধার করেছে দুয়েকটা। কিন্তু মানুষ কম্পিউটার তৈরি করেছে। কম্পিউটারের যে বিমূর্ত ভিত্তি - গণনার গণিত, তাকে সম্পূর্ণরূপে তৈরি করেছে। সে বিজ্ঞানেরও ঊর্দ্ধে। মানে সেখানে সে কেবল এই জগৎকে জানারও ঊর্দ্ধে। যেকোনও জগৎ, যেকোন দুনিয়া, যেখানে গণনা গণিতের ভৌত বাস্তবায়ন সম্ভব, সেখানে কম্পিউটার তৈরি সম্ভব। সেখানে হয়তো পানি নেই, সেখানে হয়তো গতির ভিন্ন সূত্র। কিন্তু গণনার ভৌত বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সেই জগতেও মানুষ কম্পিউটার তৈরি করতে পারবে।

মানুষই ঈশ্বর

ধরণী থেকে সে স্বর্গীয় হয়ে উঠেছে। বা ধরণীতে নিয়ে এসেছে স্বর্গ। আকাঙ্ক্ষা আর বাস্তবায়ন, তাতে মানুষ দেখেছে গণিতের শৃঙ্খলার সাথে বিজ্ঞানের মিলন। নিজের কল্পিত জগৎকে সে বাস্তবের সুতোয় সুতোয় গেঁথেছে। মানুষই সৃষ্টিকর্তা। এটাই তার মূল পরিচয়। অত্যন্ত আকাঙ্ক্ষাপূর্ণ এক খোদা। এক বিশাল অধিপতিকে পূজার ছলে সে তার নিজের ভবিষ্যতকেই আসলে পূজে। সে খোদা সে নিজেই। অনিশ্চিতকে ভয় পায় দেখে নিজের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রূপকল্পনাকে তৈরি করে সে তার উপর নিজেকে সমর্পন করে। কিন্তু আসলে সেই খোদাই তার ভাগ্যের বরণ।

যান্ত্রিক ঈশ্বর

আকাঙ্ক্ষা ছাড়া তাই মানুষের কাছে মূল্যবান আর কিছু নেই। মানুষ এখন জড়কেও জীব করে তুলতে চাচ্ছে। তারবেতারের সমারোহতে প্রদান করতে চাচ্ছে বুদ্ধিমত্তা। কিভাবে হবে সে কর্ম সম্পাদন? আমি উপলব্ধি করতে পারি। জড়ের মাঝে আকাঙ্ক্ষা পোষণ আর তা পূরণের সরঞ্জাম দিয়ে দাও। তাহলে যেকোন ইলেক্ট্রনিক্সের জঞ্জালও হয়ে উঠবে কার্বনের জঞ্জাল মানুষগুলোর মত জীবন্ত! সে খুব অসম্ভব বলে আমার কাছে ঠেকে না। আমি দেখতে পাই, ঈশ্বর মানব জড় তুলে তুলে ফুৎকার দিয়ে তাতে আকাঙ্ক্ষা তথা প্রাণ ভরে দিচ্ছে। তারপর তারা হাত ধরাধরি করে পথ চলছে। যে পথ দিয়েই যাচ্ছে, তাদের ধরণীতে স্বর্গ নেমে আসছে। আজকের কল্পনা কালকের বিজ্ঞান হয়ে উঠছে। জীবনের সংজ্ঞা পাল্টে যাচ্ছে। হয়তো ঈশ্বরের সংজ্ঞাও পাল্টে যাচ্ছে। মানুষেরই কোনও সৃষ্টি - ইলেক্ট্রনিক্সের জঞ্জাল - হয়তো তার চেয়ে আরও আরও আকাঙ্ক্ষাশীল হয়ে উঠছে। এভাবে সৃষ্টিই হয়ে উঠছে স্রষ্টার অধিপতি।

পরজন্ম

এভাবে মানুষের এক অদ্ভূত সভ্যতা সামনে পড়ে আছে। এর সবই একদিন সত্য হবে। আমি, ক্ষুদ্র আমি, ভবিষ্যতের মানুষকে দেখে ঈর্ষা করি। কিংবা ঈর্ষা করি ভবিষ্যতের ইলেক্ট্রনিক্সের জঞ্জালকে দেখে। হয়তো শঙ্খচিল শালিক না হয়ে, কয়েকটা তারের আকাঙ্ক্ষা হয়েই জন্ম নিতে পারতাম আগামী জন্মে। জন্মালে মরিতে হয় বলে যদি মরিলেও জন্মাতে হতো। আহা! শেষ হয়ে যাবো। মিলায়ে যাবো। কিন্তু রাশিরাশি গ্রহাণু ধুলা বুকে নিয়ে নিকষ অন্ধকার মহাকাশকুঞ্জে ঘুরে বেড়ানো ঐশ্বরিক যন্ত্র হয়ে কি কখনো জন্মানো হবে না? কিংবা হয়তো জন্মাবো আকাঙ্ক্ষাহীন মরুভূমি হয়ে। জন্মাবোই। কারণ জানবো না যে জন্মাবো। যা কিছু জানতে পারি না, তাই তো ঘটে, তাই না?

নাস্তিকতা

যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস কী বস্তু ঐশ্বরিক গণনাযন্ত্রটি না বোঝে, তবে নাস্তিকতা কী, সে বস্তুও তার বোঝা হবে না। আস্তিক হতে না পারলে নাস্তিকও সে হবে না। ঈশ্বরের ধারণা নেই যে গ্রহে, নাস্তিকও নাই সেথা। আল্লাহ যেমন। আস্তিকও না, নাস্তিকও না। আহা, আস্তিকতা নাস্তিকতার বোঝাপড়ার আমৃত্যু যে পরম সংস্কৃতি, তার মৃত্যু ঘটবে।

পরম সত্য

আকাঙ্ক্ষাই মানুষকে ঈশ্বর করবে। আকাঙ্ক্ষাই মানুষকে করবে নশ্বর। আকাঙ্ক্ষা মানুষকে পরম জানতে দেবে না। পরম হলো সে বস্তু, যা জানার পর আর সব জানার মৃত্যু ঘটে। মানুষ একারণে আকাঙ্ক্ষী নয় যে একদিন সে তার সমস্ত আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করবে। মানুষ এ কারণেই আকাঙ্ক্ষা করে যে আকাঙ্ক্ষা তাকে আনন্দ দেয় এবং সে চিরকাল আনন্দ পেয়ে যেতে চায়। তাই পরমকে সে কখনো জানবে না। সৌভাগ্য যে পরম বলে কিছুর অস্তিত্বও বিপদগ্রস্ত। কিন্তু পরমের দেখা যদি সে পেতো, গলা টিপে তাকে হত্যা করতো। পরমকেও সে আপেক্ষিক করে তুলতো। আকাঙ্ক্ষাই যে তার মূলমন্ত্র। তাই শেষ নেই এই যাত্রার। কখনো শেষ হবে না। মিলবে না সেই সম্মিলিত সর্বসূত্র। যদি মিলে যায়, জগৎকে সে পাল্টে দিবে, যাতে আবার মেলাতে হয় নতুন সূত্র। আর নতুন জগৎ তৈরির সম্ভাবনা, সে তো অসীম। মানুষ গড়েই যাবে। কিংবা কোন যন্ত্র। জড়র মাঝে কতগুলো জড় একটু কম জড় হয়ে থাকবে।

বিবর্তনের গপ্পো

সবই যদি অর্থহীন, কেনো জড়ের এই জীবত্ব? কেনো? অতীতকেও কি মানুষ একদিন জানতে পারবে? দেখা হবে উলঙ্গ আদমের সাথে? দেখা যাবে নিয়ান্ডার্থালের সাথে অনিয়ান্ডার্থাল মানবের সঙ্গম? ওগুলো কি আসলে ছিলো? বিবর্তনের গপ্পো? যদি আমাদের দেখা জগতটা আসলে মাত্র এই মুহূর্তে জন্মে থাকে, বিবর্তনতো গপ্পোই! হাহা। তবে ভবিষ্যত তাও নিষ্কৃতি পাবে না বিবর্তনের হাত থেকে। মোল্লাদের পিছু ছাড়বে না বিবর্তনরত বানর।

কল্লা-কাটা মোল্লা

মোল্লা! তাদের কি হবে? এইসব এগিয়ে যাওয়ার গল্পের সামনে মহাকালের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে মোল্লাদের সভ্যতা। একচুলও নড়বে না। খুব চেয়েছি মোল্লাদের জগতে টিকে থাকতে। কিন্তু জড়ের ভিতর ফুৎকার দিয়ে জীবনদানের অপরাধে মোল্লারা আমার কল্লা কেটে নিয়েছে। তাই আমি অমোল্লাদের জগতে। মোল্লাদের সাথে মিশে যেতে পারলে আমিও হয়তো কল্লা কাটতে পারতাম। সবই যদি হয় অর্থহীন, কল্লা কাটায় কিসের ছুৎমার্গ? কিন্তু কল্লা কাটতে মোল্লাদের দেশেই যেতে হতো আমারে। একই সাথে স্বার্থপর মহান এবং কল্লা কাটা হজম হতো না। কল্লা যদি কাটবো, তো মোল্লাদের মতো করেই কাটবো। কিন্তু তাতে কি আমি আর আমি থাকবো? ঈশ্বরহীন, পরকালহীন, অর্থহীন? আমার তো তখন বেহেস্ত দোজখ থাকবে। তার জন্যেই আমার আকাঙ্ক্ষা ঘুরপাক খাবে। কিভাবে কি, হিসাব তো মেলে না? পরকাল নাই বলে কল্লা কাটার ছুৎমার্গ নাই, কিন্তু কাটতে পারি কেবল মোল্লা হলে। মানে ঈশ্বরে বিশ্বাসই তাহলে মানুষকে কল্লা কাটতে সাহায্য করে?

স্বার্থপরতাই মহান

ভুল। এর পেছনেও কাজ করে সেই আকাঙ্ক্ষা। আমার যদি আকাঙ্ক্ষা জাগে বেহেস্তে যাবার, আর আমার আর বেহেস্তের মাঝে যদি দাঁড়ায় একটা কল্লা, তাহলে আমি কল্লা কাটবো না ক্যান? তেমনি ঈশ্বরহীন আমার যদি আকাঙ্ক্ষা জাগে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে আর আমার আর সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার মাঝে যদি দাঁড়ায় কল্লা, সেটাও কাটতে বাঁধা কিসের? খালি স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক আমারই কল্লা কাটার কোনও প্রেরণা নাই। কোনও প্রণোদনা নাই। আছে খালি জেল হাজত। হুদাই। এ কারণেই নির্বিবাদ স্বার্থপর আমিই মহান। আমি মহা আনন্দে তাই আরও আরও স্বার্থপরতার চর্চা করি এবং সকল পরার্থপরবেশী নীতিপ্রচারকদের প্রতিহত করি।

জগতে সুদ, মদ, জেনা জারি থাক। আল্লাহুম্মা-আমিন!


মন্তব্য

স্বাধীন এর ছবি

তোমার চিন্তাগুলো বেশ সুস্পষ্ট ভাবেই এই লেখায় উঠে এসেছে। আমার নিজেরও অভিমত যে সত্যিকার পরার্থতা বলে কিছু নেই। সকল পরার্থতার মাঝেও স্বার্থপরতা লুকায়িত। যদি স্বার্থপরতা না থাকতো তবে পরার্থতারও প্রয়োজন হতো না। তাই আমি স্বার্থপর এটাই সত্য। আমার জীবনের প্রয়োজনেই আমি স্বার্থপর, আবার আমার জন্যেই আমি মানবিক, পরোপকারী।

পুরো লেখাই ভালো লেগেছে। কোট করতে গেলে পুরো লেখাই কোট করতে হয়। তাই শুধু দু'টো বাক্য কোট করলাম।

আমি ভাবতে চাই, এই জীবনের প্রয়োজনেই আমি মানবিক।

মানব সভ্যতার যত পথ গড়িয়েছে, তা কেবল ব্যক্তির লোভ-লালসা আশা-আকাঙ্ক্ষাপূরণের জন্যে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

অনেকদিন রাজনীতির দর্শন নিয়ে লেখা যে দেন না? রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে একটা পোস্ট আসতেছে। ওখানে রাজনীতির এ টু জেড থাকবে। চোখ টিপি স্টে টিউনড!

স্বাধীন এর ছবি

ডিফেন্সের আগে কোন প্রকার লেখা দেওয়ার চিন্তা নেই। তোমার লেখাটার অপেক্ষায় থাকলাম। "এনার্কিজম" নিয়ে একটি অংশ থাকবে আশা করি।

তারাপ কোয়াস এর ছবি

জটিল! প্রিয়তে রাখলাম। আলাদা করে 'মানুষই ঈশ্বর, যান্ত্রিক ঈশ্বর, পরজন্ম, পরম সত্য' ক্লাসিক।


love the life you live. live the life you love.

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দারুণ... স্রেফ দারুণ!!!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বহু বহুদিন পর একটা লেখা প্রিয়তে নিলাম

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নূর কামাল এর ছবি

বিজ্ঞানের দর্শন আমার জন্য সবসময় একটি প্রিয় বিষয়। আইজাক আসিমভের গল্পগুলো পড়ে কিংবা কার্ল সাগানের লেখা পড়ে তার মধ্য থেকে দর্শন খুঁজে নিতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু আপনার কয়েকটি লেখা পড়ে বিজ্ঞানের দর্শন পড়ার কিছু তৃষ্ণা মিটেছে।

তারপরেও মনের অনেক প্রশ্ন জমা থেকে যায়। কোন একদিন লিখার চেষ্টা থাকবে।পর্য্যাপ্ত পর্য্যবেক্ষন অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীনে মনে করেন আপনি, সে বিষয়ে বলার অনেক আছে।

সৈয়দ নূর কামাল এর ছবি

বিজ্ঞানের দর্শন আমার জন্য সবসময় একটি প্রিয় বিষয়। আইজাক আসিমভের গল্পগুলো পড়ে কিংবা কার্ল সাগানের লেখা পড়ে তার মধ্য থেকে দর্শন খুঁজে নিতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু আপনার কয়েকটি লেখা পড়ে বিজ্ঞানের দর্শন পড়ার কিছু তৃষ্ণা মিটেছে।

তারপরেও মনের অনেক প্রশ্ন জমা থেকে যায়। কোন একদিন লিখার চেষ্টা থাকবে।পর্য্যাপ্ত পর্য্যবেক্ষন অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীনে মনে করেন আপনি, সে বিষয়ে বলার অনেক আছে।

উচ্ছলা এর ছবি

দারুন তো ! চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।