কাল যদি আপনার পা যায়, কালকে আপনিও আর ওই “বেশ তো, ভালোই আছি” বলা আমাদের মধ্যে থাকবেন না। আমরা বাকিরা তখন সেটা বলবো। আপনি বাদ। প্রকৃতির সাধারণ নিয়মে আপনার পা কাটা পড়েছে। তাই নয় কী? আমাদের এই মনস্তত্বের স্বরূপ কী? আমরা কী খুব স্বার্থপর? মোটেও না। আমরা নির্বোধ, প্লেইন স্টুপিড। স্বার্থপর যদি নিজের স্বার্থই দেখে, কেবল বর্তমানে ভালো থাকা নিয়ে সে সুখে থাকতে পারে না। ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা করার অভ্যাস থাকলে সে র্যাবের সাথে সাপলুডু খেলতো না। বাংলাদেশের মানুষ এখন র্যাব নামক সাপের সাথে বসবাস করে এবং স্বেচ্ছায় একটা সাপলুডু খেলে। নিজের জীবন নিয়ে সাপলুডু খেলে হচ্ছে প্লেইন স্টুপিডেরা। তাই আমরা হলাম প্লেইন স্টুপিড।
আমাদের মধ্যে তারা আরও বেশি প্রকাণ্ড নির্বোধ, যারা ভবিষ্যত সম্পর্কে বেকুবি ধরনের ধারণা পোষণ করে। যেমন, র্যাব দিয়ে নাকি অপরাধ দমন হয়। ওয়েল। র্যাব নিজেই তো একটা জ্বলজ্যান্ত অপরাধ। খুনিকেও বিচার না করে মারা অপরাধ। অপরাধ দিয়ে আবার কীসের অপরাধ দমন হয়? আমাদের অনেকেই কিন্তু মনে করে - হয়। এর জন্যে আমরা কিছু খুচরা কোরবানি দিতেও রাজি আছি। এমন মহানযজ্ঞ সম্পাদনে কয়েকজন নিরপরাধ মানুষ তো মারা যেতেই পারে! বাহ বেশ! ফলে ক্রসফায়ারে দিনের পর দিন মানুষ যখন হত্যা হয় আমাদের একদল নির্বোধ চুপচাপ থাকি, আরেকদল ততোধিক নির্বোধেরা তৃপ্তিবোধ করি। এমন ঘটমান গণহত্যায় কী নিদারুণ নীরবতা আমাদের! বেকুবির পরাকাষ্ঠা!
র্যাবের স্টান্টে আসক্ত আমাদের সাথে পাভলভের কুকুরের তুলনা চলে। পাভলভের একটা নিতান্ত সাধারণ পরীক্ষা থেকে জানা গিয়েছিল, পশুর আচরণকে কীভাবে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পাভলভের ক্ষুধার্ত কুকুর খাবার দেখলেই লালা ঝরাতো। পাভলভ কী করলেন, খাবার দেবার আগে একটা ঘন্টা বাজাতে থাকলেন। বারবার খাবার দেবার আগে ঘন্টা বাজানোর ফলে দেখা গেলো, কুকুরটা খাবার দেখতে পাবার আগে কেবল ঘন্টার শব্দ শুনেই লালা ঝরাতে শুরু করলো। ফলে, আর খাবার দেয়া লাগে না। ঘন্টার শব্দ শুনলেই কুকুরটার লালা ঝরতে শুরু করে। একে এভাবে বলা হয় যে, কুকুরের লালা ঝরা ঘন্টার শব্দের সাথে কন্ডিশন্ড হয়ে গেছে।
আমাদের মধ্যে প্রকাণ্ড নির্বোধদের উপরও রাষ্ট্র কাছাকাছি ধরনের একটা পরীক্ষা চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, মানব-পশুর আচরণকেও কতো সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরা মিডিয়ার কল্যাণে বহু আগে থেকেই দেখা-অদেখা “চিহ্নিত সন্ত্রাসী”দের ভয়ে ভীতত্রস্ত, রাক্ষসের গল্প শুনে শিশু যেমন ভয় পেয়ে যায়। এই ভীতি আমাদের মধ্যে সৃষ্টি করে রাক্ষস বধের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। তখন রাষ্ট্র স্টান্টবাজির মাধ্যমে দেখায়, র্যাব সেই দুষ্ট, চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে বধ করেছে। এই ঘটনা বারবার ঘটানো হলো। চিহ্নিত সন্ত্রাসীর উত্থান হলো। জনমনে বধের তেষ্টা জাগলো। আর র্যাব দ্বারা বধসাধনের তৃপ্তি মিটলো। এমন হতে হতে বধসাধনের তৃপ্তি পেতে এখন আর সন্ত্রাসী দেখা লাগে না। অপরাধ জানা লাগে না। র্যাব দেখলেই আমরা রাক্ষসবধের তৃপ্তি অনুভব করি। র্যাব দেখলেই মনে হয়, রাক্ষসকূল সব বধ হয়ে যাচ্ছে। ক্রসফায়ারে মারা গেলেই এখন মনে হয়, ব্যাটা নিশ্চয়ই “চিহ্নিত সন্ত্রাসী” ছিল। প্রকাণ্ড নির্বোধ আমাদের বিচারমূলক স্বস্তিবোধ র্যাব শব্দের সাথে কন্ডিশন্ড হয়ে গেছে।
লিমনের ঘটনা হঠাৎ ধাক্কার মতো হয়ে এসেছে নির্বোধ আমাদের মননে। কারণ সে ক্রসফায়ারে মরে যায় নি। বা বোবা হয়ে যায় নি। ফলে নিজের হয়ে বলতে পারছে। তার এই বলাবলি আমাদের সস্তা বিচারমূলকতায় অস্বস্তি এনেছে। যদিও যথেষ্ট আনে নি। ন্যায়বিচারের দাবিতে এখনো কেউ রাস্তায় নামে নি প্রতিবাদ জানাতে। কারণ আমাদের অনেকের মধ্যে লিমন এখনো জুতা হারানোর শোকের একটা মলমের চেয়ে বাড়তি কিছু নয়। আর বাকিদের কাছে ন্যায়বিচার মানেই তো র্যাব! সেই র্যাবের বিরুদ্ধেই আবার ন্যায়বিচার চাইবে কীভাবে?
তারপরেও যে দু'চারজনের টনক নড়ে গেছে, রাষ্ট্র এখন কী করবে? যে রাষ্ট্র নির্বোধ জনগণের আচরণকে কুকুরের মতো নিয়ন্ত্রণ করে, সে কী হঠাৎ তার এই কর্মের জন্যে মাফ চাইবে? হঠাৎ বলবে, ভুল হয়ে গেছে? আর কোনো ক্রসফায়ার নয়। আর কোনো র্যাব নয়। আর কোনো ম্যানিপুলেশন নয়? মোটেও না। রাষ্ট্র এই অবস্থায় ভরসা করবে আমাদের মধ্যে নির্বোধতমদের অনুভূতি ও বোধের উপর। যাদের বিচারমূলক স্বস্তি র্যাব শব্দের সাথে এখনও সুতীব্ররকমভাবে কন্ডিশন্ড হয়ে আছে। এই ঘটনা তাদের স্বস্তিকে যাতে ঢিলা করে না দেয়, সেজন্যে রাষ্ট্র আবার “চিহ্নিত সন্ত্রাসী”র সেই রাক্ষস তাড়ানো গল্প বলবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারেক আহমেদ বলবে, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লিমন ও তার বাবার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলবে "উপদেষ্টার বক্তব্য সম্মানের সহিত দেখা উচিৎ এবং এ বক্তব্যকে সরকারি বক্তব্য হিসেবে গণ্য করতে হবে।" যাতে র্যাব নিয়ে নির্বোধদের বিচারমূলক স্বস্তি জোরদার হয়।
এখন বোধজ্ঞানশূন্যতা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, কাউকে অপরাধী প্রমাণ করতে কোর্টকাছারিতে যাওয়া তো দূরের কথা, মিডিয়াতে পাতার পর পাতা “চিহ্নিত সন্ত্রাসী” সাজানোরও প্রয়োজন পড়ে না। সন্ত্রাসীদের সাথে জানপরিচয় ছিলো বললেই নির্বোধ আমরা বলি, ও হ্যাঁ, হ্যাঁ! তাইলে পা খোয়ানো ঠিকই আছে। ন্যায় বিচারই হইছে তাইলে। যদি ভেবে থাকেন, সাহারা খাতুন একটা নির্বোধ, তাহলে ভুল করবেন। আমাদের মধ্যে প্রকাণ্ড নির্বোধ যারা, তাদের স্বস্তি ও নিরাপত্তাবোধকে তিনিই শাসন করছেন। বশে রাখছেন। এইসব শুনে নির্বোধতমরা সত্যিই আশ্বস্ত হয়।
এত কিছুর পর যখন টের পেলেন, আসলে আপনিই নির্বোধ - ছোটখাটো কিংবা প্রকাণ্ড - আপনি সেটা মেনে নিয়েই আবার চুপ করে বসে থাকলেন। এক লিমনের পা গেছে তো কী হয়েছে? তাই না? রাষ্ট্রের এই প্রহসন ও অন্যায় কিন্তু আমাদের এই নীরবতা আর নির্বুদ্ধিতার উপরেই টিকে আছে। দেখুন, সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম বাদ দেওয়া এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্যেও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার মিনতি করতে হয়। যে দেশে রাষ্ট্র ম্যানিপুলেটিভ, সে দেশে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে চলার কোনো জো নাই। সরব হতেই হবে। নিজের জন্যেই হতে হবে। রাষ্ট্র ভয়ঙ্কর দেখে আপনি চুপ নন। আপনি চুপ দেখেই রাষ্ট্র ভয়ঙ্কর। যদি উপলব্ধি করতে পারেন, র্যাব দিয়ে ন্যায়বিচার হবার নয়, র্যাব বরং জ্বলজ্যান্ত অপরাধের প্রতিমূর্তি, আপনার রাষ্ট্রকে বলুন র্যাব ভেঙে দিতে। আর কোনো পা হারানো নয়। আর কোনো ক্রসফায়ার নয়।
মন্তব্য
র্যাব ভেঙে দিতে হবে কেন? ক্রসফায়ার বন্ধ হোক।
RAB জিনিসটা বানানো হয়েছিলো কেনো?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
এই প্রশ্ন আসছে কেন?
কারণ, এই প্রশ্নের জবাব জানলে আপনি RAB এর কোনো প্রয়োজনীয়তা বোধ করতেন বলে মনে হয় না। একটা স্বাধীন দেশে পুলিশ আছে। RAB-এর প্রয়োজন কেনো হবে!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
স্বাধীন দেশে পুলিশ থাকলে র্যাব থাকা যাবে না এরকম মনে হলো কেন?
পুলিশকে আরেকটু প্রশিক্ষন দিয়ে সেনাবাহিনী/বিজিবি ভেঙে দেয়ার পক্ষেও কি আপনার মত?
এই জন্যেই জানতে চাইছিলাম RAB কেনো তৈরি তা আপনি জানেন কিনা!
জলপাই = দেশের নিরাপত্তা (কীভাবে, তা খুব ভালো জানি না!)
বিজিবি = নিয়মতান্ত্রিক সীমান্ত প্রহরা
পুলিশ = অভ্যন্তরীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা
RAB = ?!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
তাইলে র্যাবরে ক্যানো ইন্ট্রোডিউস করা হইছিলো সেটা তাইলে এখানে একটা প্রশ্ন হয়া দাড়ায়। যতদূর
মনে হড়ে, র্যাবরে আনা হইছিলো কয়েকটা কারনে,
->একটা কনককশন বানানো , যেটাতে ভেজাইল্লা পুলিশের লগে পিওর জয়তুন মিশায়া ঠিক অনুপাতে আনা হইবো। পুলিশ আর জয়তুন এর কাজের প্রেমিস আলাদা। নতুন একটা সংগঠন দিয়া এদেরকে এক করা আরকি।
->জলপাই রংয়ের প্রতি জনতা আর সন্ত্রাসীর পাভলভের কুত্তাডার মতন রস ঝরানো কন্ডীশন্ড ভয়।
->নিজেদের বানানো সন্ত্রাসীদের আদর খায়া রাষ্ট্রের টাইট পশ্চাত ঢিলা হয়া যাইতাছিলো। অনেকরকম চেষ্টা কইরাও তো কাটাবনের কুত্তা বাবু আর হাতিরপুলের সুমনরে সাইজ করা যাইতাছিলো না।
সেই সময়, এই সবকয়টা কারন কি যথেষ্ট গুরুগম্ভীর আসিলো না?
-মেফিস্টো
আপনার মন্তব্য বুঝতে পারিনি। RAB'র প্রয়োজনটা কী ছিল যেটা পুলিশ পারত না?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমার মনে হয়, র্যাবের ইন্ট্রোডাকশনের সাথে আমেরিকার আল কায়েদা বধের যুদ্ধের একটা মোটা দাগের তুলনা চলে। নিজেদের তৈরি কুকীর্তি মাটি চাপার দেবার হাতিয়ার এগুলো। র্যাবের জন্মেতো সম্ভবত সেই আমেরিকারই ইন্টারেস্টও জড়িত আছে। তবে আমি আমেরিকা বা বাংলাদেশ রাষ্ট্র, কাউকেই ষড়যন্ত্রমূলক দুষ্ট শয়তান মনে করি না। রাষ্ট্র ভালো কাজ করতে চায় না। কারণ ভালো কাজ কঠিন। ফলে রাষ্ট্র সুযোগ পেলেই সস্তা উপশমের শরণাপন্ন হয়। যেটা তার কুউদ্দেশ্যগুলো ঠিকই সাধন করে, আসল কাজে স্টান্টবাজি ছাড়া কিছু হয় না।
যদি মনে হয় আর কি!
দেশী বিদেশী অ্যাকশন ছবির কেরামতি আছে এমন মনোভাবের পেছনে বলে মনে করেন কি ?
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
ভালো প্রশ্ন করেছেন। নাহ্। ঠিক পেছনে আছে সেভাবে দেখি না। বরং মানুষের রাক্ষস বধের স্টান্টবাজির যে আকাঙ্ক্ষা, সেটারই আরেকটা বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই এইসব অ্যাকশন ছবিতে। একদিক দিয়ে এসবকে ভালো হিসেবেই ভাবা যায়, মানুষের বধসাধনের তৃপ্তিটা ইমাজিনারি লাইফেই মিটে যায়। কিন্তু অবধারিতভাবে অনেকের কাছে সেটা সত্যিকারের জীবনে প্রয়োগেরও প্রণোদনা দিতে পারে। অ্যাকশন ছবির নির্মাতারা অ্যাকশন ছবি বানাবে। আমরা আমাদের কথা বলে যাবো। মানুষ তার পছন্দ বাছাইতে মুক্ত।
কথাগুলো হয়ত আমাদের সবার মনেই উকি দিচ্ছে বার বার। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি ? নিরব থেকে কিভাবে সরব হতে চান ?
সরব হওয়া তো কর্ম। কর্ম প্রণোদনা উৎসারিত। পাশবিক প্রণোদনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে উপলব্ধি প্রয়োজন। আমরা উপলব্ধি তৈরি করতে পারি। সেখান থেকে ব্যক্তির প্রণোদনা, সরবতা, অভিব্যক্তি নিজের মতো উৎসারিত হবে। ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে।
শেষ প্যারা পুরোটাই কোটেড।
বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কখনই বিন্দুমাত্র সমর্থনযোগ্য নয়। র্যাবকে হত্যার লাইসেন্স দেওয়া যায় না কিছুতেই। র্যাবকে বাতিল করে ফেলতে হবে এরকম চিন্তা করি না তবে এদের আদ্যপান্ত সংস্কার দরকার এটা জ্বলন্ত!! আইনশৃংখলা বজায় রাখার জন্য র্যাবই যে একমাত্র ভরসা সেই চিন্তা বাদ দিয়ে পুলিশকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকরী করা যেতে পারে, এটা নিশ্চিত করতে পারলে র্যাবের প্রয়োজন নাই। র্যাব নি:সন্দেহে দূষিত হয়ে যাচ্ছে, এদের সংস্কার করলেও সুফল পাওয়া যাবে কীনা জানি না!!
আর আমরা জনতা প্লেইন স্টুপিড কোন সন্দেহ নাই, নিজের পায়ে কুড়াল না পড়লে আমরা ক্যাঁক করে উঠি না!
ঠিক। আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে এস্টিমেশন একেবারে আতঙ্কজনক।
লিমনের পা গেছে তো কি হয়েছে, আমার তো যায়নি। আমি এতেই খুশি। এই হলাম জনতা।
খুব দুঃখ নিয়ে লিখলাম, স্বাধীন ভাই। অনেক সময় চলে যাচ্ছে। আমাদের আরও আগে অনেক বেশি উচ্চারত হওয়া দরকার ছিলো। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়েও সরব হবার সময় এসেছে। সময় চলে যাচ্ছে।
ইউনিভার্সিটিতে আমার এক বন্ধু আছিলো নেভী থেইকা পড়তে আসা। ওর কিছু দোস্তবন্ধুরা কাম করতো র্যা ব এ । সেই সময় র্যা ব ক্রসফায়ারের তান্ডব আছিলো চরমে।বন্ধুরে একদিন জিগাইলাম, আইচ্ছা মামা, এই যে র্যাাব এর লোকেরা ক্রসফায়ারের নামে সন্ত্রাসীদের বডিতে বিচী বিন্ধায়া দেয়, ক্যামনে সম্ভব ঠান্ডা মাথায় এই কামটা দিনের পর দিন?ক্রসফায়ার না হ্যাডা – ওরা যে ঠান্ডা মাথায় কামটা করে সেটা তো বোঝাই যায়। অয় কইলো তখন, যেটা করা হয় সেটা হইতাছে, একটা সন্ত্রাসীরে ধরার পরে ওর পুলিশ-বিডীআর-কোর্ট-কাছারির রেকর্ড সব নিয়া বসা হয়।কখনো কখনো ভলান্টারী, কখনো কখনো সিলেকশন ব্যাসিস এ জল্লাদ অ্যাপয়েন্ট করা হয়। তারপরে অনেকটা হাশরের ময়দান স্টাইলে একের পর এক আমলনামার পয়েন্টগুলা পইড়া শুনানো হয় জল্লাদ আর আসামী দোনোরেই – “যদু মাসের মদু তারিখ তুমি জনাব ইয়ে কে দুনিয়া থেইকা সী-অফ জানাইছো।“ জেনেরালী যেগুলিরে মারা হয় তাদের এই লিস্ট বেশ ভালই লম্বা হয়, লিস্ট পইড়া শেষ করতে করতে জল্লাদ মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়া যায় - সাইকোলজিকাল শরবত খাইয়া তার মায়াদয়া থ্রেশোল্ড এর নীচে চইলা যায়। এরপর খালি রাইত হওনের দেরী।
-মেফিস্টো
ডিস্ক্লেমারঃ সন্ত্রাসী,র্যা ব,ভিক্টিম কারো প্রতিই অসম্মানমূলক চিন্তাভাবনা ফুইটা উঠলে লজ্জা পাইলাম।
আপনি আপনার বন্ধুকে বলতে পারতেন, এভাবে সন্ত্রাসীদের মূল হোতাদের আড়াল করে দেয়া বা পেট খারাপের প্রতিকার না করে হাগু করে বারবার মাটি চাপা দেয়াটাকে কী কারণে এক বিরাট অবিচার বলা যাবে না। সরি ফর মাই ল্যাঙুয়েজ। কিন্তু লম্বা লিস্ট গছিয়ে জল্লাদকে কীভাবে কন্ডিশন্ড করে প্রস্তুত করা হয় খুনের জন্যে দেখলেন? এই গল্পের কাছে মারিও পুজোর গডফাদারও নস্যি।
বাই দা ওয়ে, আপ্নের লেখা লেভেল ক্রস কইরা গেসে। যারে কয় একেবারে "আপ দেয়ার"।।
-মেফিস্টো
যারা র্যাবের সমালোচনা শুনলেই কুষ্টিয়া এলাকার গালগল্প টেনে আনেন, তারা একটু কষ্ট করে ঘুরে দেখে আসেন সে সব এলাকায় কোন সর্বহারা ডাকাতি করে 'ক্রসফায়ার' খায় আর কোন অর্জিনাল ডাকাত 'দুধভাত' খায়।
যে দেশের সরকার প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে 'এক্সট্রাজুডিশিয়াল কিল' করাতে পারে, সেই সরকার পারে অপরাধীকে আদালতে দাঁড় করাতে- এই সহজ কথাটা যে বোঝেনা সে বোকার স্বর্গে বিদ্যমান।
চমৎকার বলেছেন!
পোস্টে ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে কম দরকারী হাতি বাহিনী হলো সেনাবাহিনী। প্রতিরক্ষার নামে বাজেটের সিংহভাগ এই হাতি পুষতে ব্যয় হয়। স্বরাষ্ট্রর বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় কম। প্রয়োজনের তুলনায় পুলিশ নাই, পুলিশ যা আছে অত্যাধুনিক অস্ত্র নাই, সন্ত্রাসীদের সাথে ফাইটে যাওয়ার মতো মানসিকতার পুলিশের সংখ্যাও কম না; কিন্তু আদ্যিকালের অস্ত্র তাদের জন্য একটা অন্তরায়। ঘুষ খাওয়ার সাথে কম বেতনের সম্পর্ক থাক বা না থাক, অপর্যাপ্ত বেতন লাইফ রিস্ক নিয়ে সন্ত্রাসী মোকাবেলায় খুব উৎসাহিত করে না।
RAB কখনোই সমাধান না। আইন-আদালতের বারোটা বাজিয়ে, পুলিশকে নষ্ট করে আরো টপ লেভেলের মাস্তান হিসেবে রাবকে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। একজন সন্ত্রাসীকে ক্রসফায়ার দেয়ার ক্ষমতা সরকারের থাকলে তাকে আদালতের মাধ্যমে ফাঁসি দেয়া যাবে না গডফাদারের জুজুতে - এটা কোনো গ্রহণযোগ্য অজুহাত না।
পোস্টে জন-অসচেতনতার ওপর ক্ষেপেছেন। এবং ক্ষেপার কারণের সাথে একমত। কিন্তু এটা একদিনে হবে না। জনগণ সচেতন হওয়ার জন্য দরকার শিক্ষা। সমস্যা হলো শিক্ষাকেই ধবংস করা হয়েছে। সুতরাং সচেতনতার পরিবর্তে উলটোরথে হাঁটছে মানুষ। রথটাকে সঠিক পথে আনার জন্য কথা বলার বিকল্প নেই। দালালদের কথা ছাপিয়ে আপনার আমার কণ্ঠস্বরটা যাতে শোনা যায়, প্রত্যেকের অবস্থানে থেকে সেই কাজটাই আমরা করতে পারি। বাকিটা সময়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
মন্তব্যটা লাইক্কর্লাম।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
অছ্যুৎ বলাইদার মন্তব্যের সাথে একমত।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আপনার পুরো কমেন্টেই সহমত।
প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার ভগ্নদশা হলেও আশার বিষয় এই যে মিডিয়া এখন অনলাইন। আমাদের ডাকাডাকি, বলাবলি, চিন্তা ভাবনা, আলোচনার এখানে সকল পথ খোলা। বাংলাদেশে যে অন্তত দৃশ্যত বাক ও ভাব-প্রকাশের স্বাধীনতা বিরাজ করে, সেটার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারলে বাকিটা আল্লাহর হাতে, বা সময়। আপনাকে মন্তব্য করার জন্যে ধন্যবাদ।
প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় অছ্যুৎ বলাই এর একটি এবং আমার একটি লেখার লিঙ্ক শেয়ার করলাম।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে লিংকের জন্যে।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
লেখাটা লিমনের ঘটনার একদম শুরুর দিকে শুরু করেছিলাম। তারপর ড্রাফটে ভগ্নদশায় পড়েছিল এতোদিন। আপনার ডাকাডাকিতে আমার নীরবতা ভাঙলো। আমার এক ব্ল্যাক মুসলিম কানাডিয়ান শিক্ষক বলেছিল, গুড বিহেভিয়ার ইজ কন্টেইজাস। অন্যান্য নীরব মানুষেরও নীরবতা ভাঙবে আশা করি। ডাকাডাকির বিকল্প নাই।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
পাবলিকের দোষ দিয়ে লাভ কী বলুন?
সরকার তো কোন দ্বিধা ছাড়াই লিমন কে সন্ত্রাসী বলে যাচ্ছে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ক্রসফায়ারে মৃতকে যখন সন্ত্রাসী বললেই পাবলিক শান্ত হয়ে তৃপ্ত হয়ে চুপচাপ বসে থাকে, তখন সরকার এই শিক্ষাই লাভ করে যে কারও উপর দুর্বৃত্তপনা করে তার গায়ে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা লাগিয়ে দিলেই চলবে।
যেমন, ধরুন কথার কথা, লিমন যদি সন্ত্রাসী সত্যিই হয়ে থাকে, তাহলে র্্যাব ইচ্ছাকৃতভাবে তার পা ভেঙেছে জানলেও পাবলিকের কিছু আর যায় আসবে না। কারণ তার ভেতরে রাক্ষস বধের একটা হিরোইজম কাজ করে। পারলে সে গিয়ে লিমনের আরেক ঠ্যাঙ ভেঙে দিয়ে আসবে তখন।
ন্যায়বিচারের পার্সেপশনটা আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজেও অত্যন্ত দুর্বৃত্তপনাপূর্ণ। অভিযুক্তকে বিচার করার আগেই নির্যাতন করার বাঞ্ছা ভদ্র সমাজে একরকম প্রায় বৈধ হয়ে গেছে। ফলে সরকার যখন বলে যে লিমন আসলে সন্ত্রাসী ছিল, তখন পাবলিকের একটা বড় অংশ মনে করবে যে শাস্তিটা কমই হয়ে গেছে। পপুলার সরকার তো তাদেরই সরকার।
Lekha ta valo laglo, Pavlov er gobeshona ta dekhe khushi hoisi as a Psychology er student hishabe. Eti silo shikkhon prokriyar ak ta gobeshona. ha amader RAB ero tai hoyese...
আমার দেশের সব ডিসিশন ই ভালো।
কিন্তু প্রয়োগে সমস্যা।
প্রয়োগ ঠিক মতো কিভাবে করা যায় তাই নিয়ে ভাবতে হবে।
আর মতামত তো সবার জন্য উন্মুক্ত..................
নতুন মন্তব্য করুন