তা, এইভাবে চোখা চোখা কইরা দেখা মৌলিকভাবে দোষণীয় কিছু না। জ্ঞানচর্চায় নির্দিষ্টতা আবশ্যক। উদ্ভিদের সংজ্ঞা নিয়া বিনা কারণে দিনের পর দিন ঝুলাঝুলি করা চলে না। যখন কাজের একটা সংজ্ঞা হাতে থাকে, তখন সেই সংজ্ঞার উপর ভিত্তি কইরাই কোনটা উদ্ভিদ আর কোনটা না, সেই ভেদ করা চলে। এই কারণেই জ্ঞানচর্চার মধ্যে থাকা মানুষেরা নির্দিষ্টতাবাদী হন। আলেম ওলামারাও তো জ্ঞান চর্চার মধ্যেই থাকেন। কেতাবি জ্ঞান নিয়া চর্চা করেন ওনারা। তাই তাদের বিষয় নিয়া তারা আক্ষরিক হবেন, তাতে বিস্ময়ের কিছু নাই। তা নাস্তিকরাও কিন্তু জ্ঞানচর্চার মধ্যেই থাকেন। জ্ঞানচর্চায় অনাগ্রহী নাস্তিক মেলা ভার। জাগতিক জ্ঞান চর্চায় ব্যস্ত থাকেন তারা। ফলে মুসলমান আর তার ধর্মের সংজ্ঞায় মোল্লারা যে নির্দিষ্টতা তৈরি করেন, সেইটা নাস্তিকেরা কদরই করেন। সাধারণ মুসলমানই কেবল এই নির্দিষ্টতা, এই আক্ষরিকতারে ধারণ কইরা উঠতে পারেন না। ফলে তারা নানান কিছুর মধ্যে থাকেন, নির্দিষ্ট সংজ্ঞার মধ্যেই খালি থাকেন না। কেতাবি মোল্লা আর আক্ষরিকতাবাদী নাস্তিক, উভয়ই তাই যখন-তখন এদেরকে বিব্রত কইরা তোলেন। কী করবেন? স্ববিরোধরে ক্ষমা কইরা দিতে তো ওনারা জ্ঞানের চর্চায় শেখেন নাই।
কিন্তু সাংস্কৃতিক বিষয় উদ্ভিদের মতো কি? ভৌত বিজ্ঞানের বিষয় আষয়রে যেমনে দেখতে হয়, মানুষের কৃষ্টিরে সেইভাবে দেখলে কি চলবে? ভৌতবিজ্ঞানে মানুষ দর্শক। সে খালি দেখে আর জানতে থাকে। সে বিষয়ের উপর হাত দেয় না। ফলে মানুষ হাত না দিলেও সেইটা সেইরকমই থাকতো বইলা আশা করা চলে। কিন্তু সংস্কৃতি তো সেইরকম বিষয় না। এইটা মানুষের সাথে সার্বক্ষণিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ারত। মানুষ তো এইটার কেবল দর্শক না। মানুষ এইটারে প্রতিনিয়ত বদলাইয়া দিতেছে। ফলে সংস্কৃতি প্রতিনিয়ত বদলাইতেছে। সেইখানে দর্শকের জায়গা থেইকা একটা সংজ্ঞা বানাইয়া সেইটাতে স্থির থাকার সুযোগ কই? ফলে মুসলমানে সুদ-মদ খাইতে পারে না, জেনা করতে পারে না মনে করার কারণ নাই। কেতাবি মোল্লারা মুসলমানিত্বের কাঠামোটা তৈরি কইরা দিলেও, মুসলমানিত্বের প্রাণটা কিন্তু গঠন করছেন সাধারণ মুসলমানেরাই। সাধারণ মুসলমানেরা যা করেন, সেইটাই হইয়া দাঁড়ায় মুসলমানিত্বের জীবন্ত সংজ্ঞা। ফলে মদ খাইয়াও মুসলমান হওয়া যায়, আবার জেনা কইরাও মুসলমান থাকা যায়।
স্থির সংজ্ঞা দিয়া হয়তো সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় সুবিধা হয়, কিন্তু উল্টাটা মনে করার কোনো কারণ নাই যে সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার সুবিধার জন্যে মুসলমানের সংজ্ঞা স্থির কইরা দিলে মুসলমানের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যেও সুবিধা হয়। মুসলমানিত্বের যদি কোনো সংজ্ঞা থাকে, সেইটা হবে ডাইনামিক। কোনো লক্ষণ দিয়া তারে নির্দিষ্ট করা যাবে না। অন্য ধর্মের ক্ষেত্রেও সেইটা সত্য। জাতের ক্ষেত্রেও সত্য। কারণ এগুলা মূলত সাংস্কৃতিক নির্মাণ। এবং প্রতিনিয়ত বিনির্মিত। ভৌতবিজ্ঞানের বিষয়ের মতো নির্দিষ্টতার লক্ষণ থাকার বাধ্যবাধকতা এদের নাই। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর লক্ষণ যুগে যুগে পাল্টাইছে। একটা বিশেষ লক্ষণ দিয়াই যদি খ্রিস্টান চিনার বাধ্যকতা থাকতো, তাইলে দুনিয়ার তাবৎ খ্রিস্টানরে এখন বিধর্মী শুধাইতে হইতো। মুসলমানরে তাইলে একটা নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দিয়া একটা পরিবর্তনহীনতার মধ্যে বাইন্ধা দিবো কেনো?
সেই কারণে হিজাব না পইরাও মুসলমান হওয়া যায়। নামাজ রোজা না কইরাও মুসলমান হইতে বাঁধা নাই। এইটা ঠিক যে ধর্মের বাইরে মুসলমান-সংস্কৃতি বইলা কিছুর অস্তিত্ব তেমন একটা স্বীকৃত না। কিন্তু স্বীকৃতির নিজেরও অজান্তে মুসলমানের একটা জীবন্ত সংস্কৃতি দাঁড়াইয়া গেছে। মুসলমানের ধর্ম যেখানে কেতাবিগো মৌলবাদিতা থেইকা মুক্ত হইতে পারতেছে না, মুসলমানের সংস্কৃতি সেখানে মুসলমানরে ঠিকই আগাইয়া নিতে পারতেছে। বাংলার মুসলমানেরা সুফি সাধক বাউলদের কাছে এই জীবন প্রাপ্তির জন্যে কৃতজ্ঞ থাকবেন।
নাস্তিকেরাও কি কিছু হেদায়েত করতে পারেন মুসলমানের? বা প্রশ্নটা মোটাদাগে হইলো - সংস্কৃতিতে আক্ষরিকতাবাদীর ভূমিকা কী? আক্ষরিকতাবাদী যেহেতু ঘটমানের থেইকা সংজ্ঞা গ্রহণ কইরা সেই সংজ্ঞাতেই নির্দিষ্ট থাকতে চায়, ফলে তার পক্ষে বৈচিত্র্য ধারণ কষ্টসাধ্য হয়। মুসলমান মুসলমানিত্বের সংজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে, সেইটা সে মানতে রাজি আছে। এরপর সে তার ঢাল তলোয়ার লইয়া সেই মুসলমানিত্বরে কিলাইবে, কিন্তু অন্তত হিপোক্রিসি যে সে করে নাই, সেইটার কদর সে করবে। আরেক রকম যেইটা সে মানবে, সেইটা হইলো যে কোনে প্রকার মুসলমানিত্বের মধ্যে না থাকা। আক্ষরিকতাবাদী নাস্তিক নিজে সেইটার চর্চা করে। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে নিজের উপর যতোরকম মুসলমানিত্ব লাইগা আছে, সেইগুলা ঝাইড়া ফালানোর। ঈদে-চান্দে তাই সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে। গরু কাটার প্রতিবাদ আর গরু খাওয়ার তৃপ্তির মধ্যে যে প্রোথিত হিপোক্রাসি, সেইটা তারে বিব্রত করে। কিন্তু তারপরেও তার কাছে কেবল খাঁটি মুসলমান আর খাঁটি অমুসলমান নাস্তিকই গ্রহণযোগ্য। মাঝখানের ধূসর অঞ্চলে যাদের বাস, তাদের অনির্দিষ্টতা তার ঘটে ধৃত হয় না। তা মোটে দুই রকমের মানুষ খালি যে গ্রহণ করতে পারে, সে কীভাবে সংস্কৃতির হেদায়েত করবে? তা এনারাও সচরাচর সংস্কৃতিতে নতুন অবদান রাখেন। এনারা সংস্কৃতিতে কাঠামো প্রদান করেন। অস্তিত্বকে তার নির্দিষ্টতার সন্ধান পাইয়ে দেন। কিন্তু, বৈচিত্র্য তথা পরিবর্তনশীলতা ও নতুন জীবনদান কেবল তারাই করেন, যারা কাঠামোর বাইরে থাকেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে নির্দিষ্টতা আর আক্ষরিকতা হইতে মুক্ত থাকেন।
সুফি সাধক বাউলেরা যেমন। তেনারা কেতাবি মোল্লাদের হেজামোনিতে ঘি ঢালেন নাই। মুসলমানরে তারা কেতাবিদের সংজ্ঞা দিয়া চেনেন নাই। ওনারা মুসলমানরে শ্বাস ফেলার সুযোগ দিছেন। নাস্তিকেরাও মোল্লাগো মুসলমানিত্বের সংজ্ঞারে বর্জন করতে পারেন। মোল্লারা মুসলমান আর তার ধর্মরে যেইভাবে চেনায়, সেইভাবে চেনা ত্যাগ করতে পারেন।
সাধারণ মুসলমান কিন্তু গ্রহণ আর পরিবর্তনেই আগ্রহী। মদ-খাওয়া-মুসলমান যেমন প্রায় গ্রহণযোগ্য রকমের মুসলমান হইয়া গেছে সমাজে, তেমনি নাস্তিক মুসলমানও সমাজের একটা অনানুষ্ঠানিক পরিচয় হইয়া ওঠা অসম্ভব না। এইভাবে মুসলমানেরে নানারকম কইরা ভাবতে দিতে পারে নাস্তিক মুসলমান নামক পরিচয়। নাস্তিকমাত্রই মুসলমান না, এমন ধারণা দেওয়ার বাধ্যকতা এতে আর থাকে না। সাধারণ মুসলমানেও তখন চিন্তার খোরাক পাইতে পারে যে মুসলমানেও বিবর্তন নিয়া ভাবতে পারে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়া দার্শনিকতা করতে পারে। নাস্তিকও হইতে পারে। পারেই বা না কেন? নাস্তিকেরও তো খোদা আছে।
নাস্তিকের খোদা হইলো সে নিজে। নিজে নিজের খোদা কেনো হইতে পারে না? সাত আসমানের উপরে বইসা থাকা খোদারে মানে না বইলা নাস্তিক কাউরে মানে না তাতো না! নাস্তিক নিজেরে মানে। নিজের কাছে জবাবদিহি করে। নিজের কাছে সৎ থাকতে চায় সে। সাত আসমানের খোদারে বিশ্বাস কইরা নিতে হয়। সত্য বইলা মানতে হয়। কিন্তু নিজের অস্তিত্বের চাইতে সত্য বইলা আর কি কিছু আছে? দেখা জগতের বস্তুরে দেইখা যাচাই করতে হয়। অদেখা জগতের বস্তুরে বিশ্বাস কইরা নিতে হয়। আপন সত্তাই একমাত্র বস্তু, যা দেখাও যায় না, কিন্তু বিশ্বাসও করা লাগে না। আর কিছু থাক না থাক, আমি যে আছি তাতে সন্দেহ কোথায়? আমি না থাকলে চাঁদ দেখতেছি কথাটার মানে কী থাকে, খোদায় বিশ্বাস করতেছি কথাটারও অর্থ কী দাঁড়ায়? নিজের অস্তিত্বের চাইতে পরম সত্য আর কিছু নাই। সেই পরম সত্যরেই কেবল যে এবাদত করে, সেই নাস্তিক মুসলমানেরে সমাজে খালি মাইনাই নেয়া না, তার ভাবনার সমাদর করারও দরকার আছে। এইভাবে নাস্তিক মুসলমানের দ্বারা মুসলমানের হেদায়েত ও পারস্পরিক বোঝাপড়া সম্ভব হইলেও হইতে পারে।
পূর্বকথা - খোদার প্রকোপের প্রায় বাইরে বা নাস্তিকের চেয়েও কম কম আস্তিকতা
মন্তব্য
_________________
[খোমাখাতা]
তাইলে এইটাই হৈলো ধ্রুব বর্ণনের রিকনসিলিয়েশন থিওরী?
জোকস অ্যাপার্ট, ভালো লাগসে আপনার আলোচনা। পরে সময় পাইলে আরেকটু বিস্তারিত মন্তব্য করবো।
সম্মিলিত মোল্লা-বিরোধী মোর্চা কইতে পারেন।
যুক্তি গুলি ভীষণ প্রখর। লেখাটা শেয়ার দিলাম। ব্যাপক হয়েছে।
আলোচনা ভাল্লাগছে, আমি অনেকটা এভাবেই চিন্তা করি। কাঠমোল্লা আর কাঠনাস্তিকের মাঝামাঝি জায়গাটাতেই বোধহয় বেশীরভাগ মানুষের বসবাস
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এইখানে মনে হয় আমিও বাস করি।
আমিও
লেখাটা ঠাসা, terse
একবারে মন্তব্য করতে পারছি না - ভেঙ্গে ভেঙ্গে করছি। আমার মনে হচ্ছিল সময়ের সাথে সাথে বাবা-মায়ের চেয়ে সন্তান আরেকটু ডানে ডিস্পারসড হয়, একটু বেশি লিবারেল। তারপর তার সন্তান আরো ডানে সরে - আরেকটু লিবারেল। প্রজন্মান্তরে এই ডিস্পারশন বাড়ার কথা - কিন্তু তরুণ উগ্রপন্থী মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই পর্যবেক্ষণ সঠিক নয়।
সুফিজমের কথাটা ভাল টেনেছেন - ওরা ধর্মের কঠিন নিয়ম কানুনের মাঝে রিলিফ - কিন্তু সনাতন ধারা তো তাদের স্বীকৃতি দেয় না। সুফি সাধকরা গণ মানুষের মাঝেই শুধু জনপ্রিয়।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
এইটা দেখো - পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাজনৈতিক কুইজ
দীর্ঘকালীন স্কেলে ট্রেন্ড ঊর্ধ্বগামী, কী কও?
নাস্তিক মুসলমান
লেখাটা চমৎকার হয়েছে। একেবারে ঠাসবুনোট লেখা যাকে বলে!
পৃথিবীতে বর্তমানে যে ধর্মগুলো জনপ্রিয় সেগুলো মূলত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম [organized religion]। প্রতিটি ধর্মের রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিধিনিষেধ যা হয়তো কয়েক হাজার বছর আগে প্রাসঙ্গিক ছিল। সময়ের আবর্তে এই বিধিনিষেধগুলো হাস্যকর হয়ে দাঁড়ালেও প্রাতিষ্ঠানিক গ্রহণযোগ্যতার কারণে সেগুলো এখনো বাধ্যতামূলক। প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির অভাবেই তাই নাস্তিক মুসলমান, বা নাস্তিক খ্রিস্টান শব্দগুলোর কোন গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয় না।
ধর্মের সবচেয়ে বড় সমস্যা যুক্তির অভাব। কোন বিধিনিষেধ মেনে চলার পেছনে যুক্তি কী, না মানলে কী ক্ষতি হবে তার উত্তর কোন ধর্মই দিতে ইচ্ছুক না। ধর্মগুলোতে প্রশ্নের কোন স্থান নেই।
আমি আস্তিক – নাস্তিক কিছুই না। আমি বিজ্ঞানের দলের লোক। ফাইনম্যানের কথা ধার করে আমার নিজের সম্পর্কে বলতে পারি:
ধর্ম নিয়ে আলোচনা হলে এই বিষয়টা আমাকে সব সময় আকর্ষন করে। আমার সীমিত জ্ঞানে পরবর্তীতে যেটা বুঝি সেটা হলো, যিনি নির্দিষ্ট একাটি ধর্মকে প্রচার করছেন, তিনি তার শ্রেষ্ঠত্বকে টিকিয়ে রাখতেই মূলতঃ এই কাজটি করেন। অর্থাৎ তিনি যা বলবেন (অর্থাৎ সেটা তার বাক্যও হতে পারে আবার ঈশ্বরের বাক্য বলেও চালিয়ে দিতে পারেন) সেটা সত্য এবং সেটার কোন নড়-চড় হবে না। আমি এমন একটা ধর্মও পেলাম না যেখানে বলা হয়েছে যে বিশেষ কোন আইন 'এত বছর' চলবে তারপর এটাকে আপডেট করে নিতে হবে বা এ ধরনের কোন রিকোম্যান্ডেশন। বরং এর উল্টাটাই সব সময় দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে একটা উদাহরণ আমি প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি। এখানে শেয়ার করছি। মুহাম্মদ যখন ইসলাম প্রচার শুরু করলেন, তখন তিনি আগের ধর্মগুলোর কনটিনিউশন হিসেবে ইসলামকে দেখালেন। এটার একটা সুবিধা হলো ইহুদী এবং ক্রিস্টানদের বোঝানো যে আমি তোমাদেরই লোক। তোমাদের নবী যা বলেছেন তা ঐ যুগে সত্য ছিল। কিন্তু এখন আমার কথা শুনতে হবে। যাইহোক, এভাবে ধর্মপ্রচার করার পর তার মনে হলো হয়তো তিনি মারা গেলে কেউ এভাবে তার মতই কোরআন ভারসন-২ নিয়ে হাজির হয়ে যাবে। তখন তার বলা সবকিছু বানচাল হয়ে যাবে। তাই মুহাম্মদ 'খাতামাতুন নব্যুয়ত' এর কনস্টেটা আনলেন এবং বললেন এর পর ঈশ্বর আর নবী পাঠাবেন না। এই কথা বলে তিনি তার বলা সব কথাকে তার ফলোয়ারদের উপর চাপিয়ে দিলেন এবং সেটার পরিবর্তনের কোন পথ রাখলেন না। তবুও মুহাম্মদের মনে এই ভয় ছিল হয়তো পরে কেউ নবী দাবী করে বসবে। এ কারণে মারা যাওয়ার আগে বিশেষ ভাবে তিনি তিনটা কথা তার ফলোয়ারদের বলেছিলেন তার মধ্যে এক নাম্বার ছিল, তথাকথিত ভন্ড নবীর আবির্ভাব। যাইহোক, মূল কথা হচ্ছে, আমার মতে নিজের স্বার্থে একেকজন ধর্মগুলোকে প্রতিষ্ঠা করেছে, পালন করেছে এবং নিজেকে মহৎ করে রাখার লোভ সামলাতে পারে নি বলে ধর্মগুলো অপরিবর্তনীয় বলে আখ্যা দিয়েছেন।
টুইটার
কামটা উনি খারাপ করেন নাই ... ঐ < /নব্যুওয়ত > ট্যাগটা না বসাইলে আজকে সাঈদীও নিজেরে নবী দাবি করতো।
টুইটার
সেইরাম একটা খাসা কথা!
Believe nothing, no matter where you read it or who has said it, not even if I have said it, unless it agrees with your own reason and your own common sense. - Buddha
এই কথার পরে আর কোন কথা থাকে? তারপরও বৌদ্ধধর্ম কি ডগমামুক্ত?
দ্রোহী ভাই, লাইনটা পড়ে চমকে গেলাম।
(অফলাইনে মন্তব্য করার জন্য দুঃখিত)
বুদ্ধের বলা এ কথাটা আমার জানা ছিল না। অসংখ্য ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্যে। হ্যা, এটাও ঠিক যে বৌদ্ধ ধর্মও এই চাপিয়ে দেয়া নীতি মুক্ত নয় (বুদ্ধের এত অসাধারণ একটা উক্তি থাকার পরও)। তাদেরও ধর্মগ্রন্থ রয়েছে (ত্রিপিটক) এবং সেটাও অন্যদের থেকে ভিন্ন কিছু নয়। তবুও আমার মনে হয় এই ধর্মটা কিছুটা অন্য রকম। যতটুকু শুনেছি বৌদ্ধ ধর্মে পরকাল বলে কিছু নেই। অর্থাৎ, হুর, গেলমান বা অসীম সুখের লোভ দেখিয়ে এই ধর্মে ঈশ্বর মানুষকে নিজের দিকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেন না।
(শেষের পয়েন্টটা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা যায় কি? আমার বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান খুবই কম। তাই জানার ইচ্ছে রইলো।)
টুইটার
এ জন্যেই অন্যান্য ধর্মের তুলনায় এই ধর্ম পিছিয়ে পড়ছে। অথচ মানবিকতা মনে হয় এই ধর্মেই অন্যান্য ধর্মের তুলনায় বেশি।
বৌদ্ধ ধর্ম প্রচলিত আব্রাহামিক ধর্মগুলোর তুলনায় অনেক বেশি উদারমনা। বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নাই।
যতটুকু জেনেছি তাতে দেখেছি গৌতম বুদ্ধের দর্শন অতি চমৎকার। কিন্তু গৌতম বুদ্ধের দর্শনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বৌদ্ধধর্ম প্রাতিষ্ঠানিক রূপে এসে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ন জিনিসপত্র নিয়ে মাথা বেশি ঘামিয়ে ফেলে। জীবনের রূপ, রস, গন্ধ, বর্ণ নিজের মত করে উপলব্দি করা ফেলে রেখে তারা ব্যস্ত হয়ে বুদ্ধের কথাগুলোকে আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে। প্রজন [prajna], পুনর্জন্মলাভ [reincarnation] ইত্যাদি দর্শনকে নিজের মতো করে উপলব্দি করার বদলে তারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপে উপলব্দি করার পথ বাতলে দেয়।
বুদ্ধের সোনার মূর্তি গড়ে পূজা দেয়ার মত কাজ যে বুদ্ধের সারাজীবনের শিক্ষাকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেয় এটা কেউ মেনে নেবে বলে মনে হয় না।
বুদ্ধ ধর্মে হীণযান, মহাযান বইল্যা একটা ব্যাপার আছে।
বুদ্ধের প্রয়াণের পর তার অনেক কিছুই বদলে গেছে।
বৌদ্ধ ধর্ম আসলে আব্রাহামিক, কিংবা পৌত্তলিক লাইনে ফেলা যায় না।
বৌদ্ধ ধর্মটা খারাপ না, এর অনুসারীরা একে মডিফাই করে মগডালে লইয়া গেছে।
পুরোপুরি সহমত!
ধর্মের শিক্ষা সম্পর্কে আমি যতটুকু জেনেছি তার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বুদ্ধের শিক্ষাকে আমি সবার উপরে রাখবো। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম হিসাবে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আমার কোন আগ্রহ নাই।
Karen Armstrong-এর লেখা গৌতম বুদ্ধের একটা অত্যন্ত সুপাঠ্য সংক্ষিপ্ত জীবনীগ্রন্থ আছে "Buddha" ( ১, ২ ) নামে। মাত্র ২০০ পৃষ্ঠার মধ্যে অত্যন্ত অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ, অথচ তূলনামূলকভাবে সহজবোধ্য আর উপভোগ্য একটা বই মনে হয়েছে আমার কাছে। পড়ে দেখতে পারেন। তবে এটা মূলত অবৌদ্ধ আর অবিশেষজ্ঞদের জন্য লেখা।
****************************************
লেখাটা ভালো লাগলো। বিশ্লেষণগুলো চমৎকার হয়েছে।
টুইটার
শেষ থেকে ৪র্থ লাইন টা আর একবার চেক করেন তো;
ওইটা কি বিশ্বাস করা লাগে না নাকি লাগে হবে?
অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ লেখা হয়েছে, অসাধারণ স্যাটায়্যার।
মনে হয় ঠিকই আছে। লাগে না - ই হবে। আপন সত্ত্বায় বিশ্বাস করা লাগে না, ওটা যে আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই - এরকম কিছু বুঝানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেই দেখুন। আমরা পর্যবেক্ষণ করে যাচাই করি। পর্যবেক্ষক ছাড়া পর্যবেক্ষণের অর্থ কী? পর্যবেক্ষণের কথা আসলে সেখানে পর্যবেক্ষকের অস্তিত্ব স্বতসিদ্ধ হয়ে যায়। বিজ্ঞানে পর্যবেক্ষকের অস্তিত্ব তাই স্বতসিদ্ধ না হয়ে পারে না।
আবার অধিবিদ্যা দিয়ে দেখলেও লক্ষ করুন - নিজের অস্তিত্বে বিশ্বাস করাটা কতোটা স্ববিরোধপূর্ণ বক্তব্য। আপনি বলছেন - ‘আমি বিশ্বাস করি, আমি আছি।’ প্রথম আমিটা কে? যে নাই সে কীভাবে বিশ্বাস করবে? তাকে তো থাকতে হবেই। অধিবিদ্যা চর্চারও প্রথম শর্ত, নিজে প্রথমে অস্তিত্ববান হওয়া।
আরেকটু ভালোভাবে বুঝতে চাচ্ছি-
'নাস্তিক মুসলমান' বলতে কী বোঝাচ্ছেন? যারা মুসলমান জনগোষ্ঠির যে 'সংস্কৃতি', সেটাকে ধারন করছে কিন্তু নাস্তিক, তারা?
'নাস্তিক মুসলমান' আর 'নাস্তিক হিন্দু'র মধ্যে পার্থক্য কী কী হবে?
'অ্যাগনস্টিক মুসলমান' কি হতে পারে?
আপনি কি স্পেক্ট্রামের একপাশে 'নাস্তিক' আরেক পাশে 'মুসলমান' রেখে মাঝামাঝি যারা আছে তাদেরকে বিভিন্ন শেডের নাস্তিক মুসলমান বলছেন?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
নাস্তিক আর মুসলমানকে এভাবে একটা স্পেক্ট্রামের দুইমাথা হিসাবে কল্পনা করা গেলেই সমস্যা। বরং একটা বহুমাত্রিক স্পেস কল্পনা করাটা এই চিন্তা বোঝার জন্য বেশি সহায়ক। ফলে বরং
এই চিন্তাটা তুলনামূলকভাবে অধিক ঠিক আছে। মুসলমানিত্ব অনেক মাত্রায় প্রকাশিত হয়। কিছু সজ্ঞানে। কিছু নিয়মকানুন হিসাবে বা স্বতস্ফূর্তভাবে। ছোটবেলা থেকে মুসলমানদের মোরাল কোড যে শেখা হয়, সেটাও একজন প্রাপ্তবয়স্ককে প্রভাবিত করতে পারে মনস্তাত্বিকভাবেই, তা সে ঈশ্বর সম্পর্কে যে ধারণাই পোষণ করুক। ফলে কেবল ঈশ্বর সম্পর্কে ধারণা বা বিশেষ পাঁচটা খুঁটির উপর ভিত্তি করে মুসলমান অমুসলমান নির্ণয়টা প্রাতিষ্ঠানিক মুসলমানিত্ব, যেখানে অধিকাংশ সাংস্কৃতিক মুসলমানই অনেক খুঁটি ভায়োলেট করেও সচরাচর মুসলমানই থেকে যায়।
এখন নাস্তিক যদি শুধু ঈশ্বর সংক্রান্ত বিশ্বাসই নয় শুধু, নিজের উপর থেকে মুসলমানিত্বের সকল চিহ্ন ঘুচাতে সক্রিয় হয়, তাহলে তাকে নাস্তিক অমুসলমান বলাই চলে। যেমন, অনেকে সক্রিয়ভাবে চাইলে নিজের উপর থেকে দক্ষিণ এশীয় ভাবটা দূর করতে চাইতে পারে। কিন্তু সকল মুসলমান ঘরের নাস্তিক কিন্তু সক্রিয়ভাবে মুসলমানিত্বের বিরোধী নন, যেমন, মুসলমান নাম পরিবর্তন, ঈদে নামাজে যাওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিরোধ, রোজা রাখার ব্যাপারে সক্রিয় বিপরীত অবস্থান, যাকাতের না দেয়ার ব্যাপারে শক্ত অবস্থান, এগুলা সচরাচর সব নাস্তিক করেন না। বরং বিশ্বাসের ঘরে তাদের বিরোধ। অর্থাৎ নাস্তিকমাত্রই মুসলমানদের সবকিছুর ব্যাপারে আনকমফোর্টেবল হন এমন না।
পার্থক্য লিস্ট করা না গেলেও, নাস্তিক হিন্দু বলতে কী বোঝায় একটা ধারণা নিশ্চয়ই পাওয়া গেছে। নিমাই স্যার যেমন বলতেন - আমি নাস্তিক হিন্দু, কারণ আমি নাস্তিক হয়েও হিন্দু থেকে যেতে পারি। আমার ‘ধর্ম’ আমাকে এটা এলাউ করে। - প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই হয়তো এলাউ করে, কিন্তু তার চেয়েও এলাউ করার বড় কারণ মনে করি যে হিন্দুত্ব প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরেও সংস্কৃতিতে বিস্তৃত। ফলে তিনি সকল হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে সক্রিয় নন।
আমার এক তাবলিগ বন্ধু বলেছিলো, সে অ্যাগনস্টিক মুসলমান। সে বলেছিলো যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে তারা অনেকেই সময় দিয়ে চিন্তা করতো এবং তাদের সচরাচরই দ্বিধান্বিত থাকতে দেখেছি। একসময় সে ‘আনাল হাক’ বা ‘আমিই খোদা’ ধারণার ভক্তও হয়েছিলো কিছু সময়ের জন্য, তার সাথে তাবলিগের অনেকেই হয়েছিলো, একসাথে আলোচনা করতে করতে। কিন্তু লেবাসে আচার আচরণে সে ছিল, আছে একেবারেই মুসলমান। এই ভ্যারিয়েশানগুলাও কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত না। কিন্তু আমরা আবার এদেরকে মোল্লাদের সাথে এক কাতারেই অপাঙতেয় ভাবি সচরাচর।
একদিনে একটা মুসলমান সকল মুসলমানিত্ব ও ঈশ্বরে বিশ্বাস থেকে উঠে আসবে এটা অলীক কল্পনা। বরং মুসলমানিত্বের মধ্যে থেকেই যদি চিন্তা-ভাবনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাওয়া যায়, সেটা দোষণীয় কিছু না। এবং বরং সেটাই একটা বড় অংশের জন্য সহজ হয়। আমাদের জন্যে যেমন জ্ঞানচর্চার মধ্যে থেকে থেকে আক্ষরিকতাবাদী নাস্তিক হওয়াটা তাবলিগ সংস্কৃতির ভিতরে দিয়ে গিয়ে আনাল হকের ভক্ত হওয়ার চেয়ে বেশি সহজ।
একটা মানুষের পরিবেশ পরিস্থিতি একটা বড় কন্সট্রেইন্ট। এখন একজন নাস্তিক সরাসরি সকল মুসলমানিত্বের বিরুদ্ধে যাওয়াটা তার সাথে মুসলমানদের একটা অ্যাবসলিউট নন কমিউনিকেশান তৈরি করে। কিন্তু নাস্তিক নিজে তার ধারণাগুলো শেয়ার করতে আবার আগ্রহী। সকল মুসলমানিত্বের বিরুদ্ধে যাওয়াটা একজন নাস্তিকের যদি অভিলাষ না হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে স্বঘোষিতভাবেই মুসলমানদের মধ্যে নিজের একটা অবস্থান সে তৈরি করে নিতে পারে, তার ধ্যান ধারণার কিছুমাত্র বলি না করেই। ফলে তার ধারণাগুলো তখন আরো সহজে মুসলমানেরা কমিউনিকেট করতে পারে। এটাকে রিফর্ম ভাবতে পারো। কিন্তু আমি বলবো মুসলমানিত্ব হাজার হাজার বছর ধরেই সাংস্কৃতিকভাবে রিফর্মড হচ্ছে। গতি হয়তো ধীর ছিলো। ফলে এটা একটা স্বাভাবিক এক্সটেনশান।
লেখাটা একবার পড়লাম, মাথার উপর দিয়া গেল। আরেকবার পড়ার জন্য জাকাইয়া বসছি। তবে আপনার লেখার শিরোনাম নিয়ে আমার একখান কথা আছে।
কথাটাতে আমার আপত্তি আছে বস। নাস্তিকতা আর প্রচলিত ধর্মে বিশ্বাস না করা দুইটা নিশ্চয়ই এক জিনিস না। আমারত মনে হয় বর্তমানে যত সমস্যার মুলে আছে ধর্মীয় লেবাস, আস্তিকতা না। একজন নাস্তিক তখনই নাস্তিক যখন তার যুক্তির কাছে ঈশ্বরের মৃত্যু ঘটে। আবার অনেকের ক্ষেত্রেত এমনটিও হয় যে তার জ্ঞান ও যুক্তির কাছে ধর্ম চুরমার হয়ে গেলেও, ঈশ্বরকে হত্যার মত ধারালো জ্ঞানের ছুড়ি সে আজো পায়নি। সে ক্ষেত্রে এই আস্তিক ব্যক্তির কোন ধর্ম নেই। আমার মনে হয় নাস্তিক মুসল্মানের থেকে অধার্মিক আস্তিক ভাল।
এর অন্তর্নিহিত কথাটা কি এই যে নাস্তিকতার চেয়ে আস্তিকতা ভালো? বা ধার্মিকতার সংস্কৃতির চেয়ে সম্পূর্ণ অধার্মিকতার সংস্কৃতি ভালো? কোনোটাই তো হল্ফ করে বলা যায় না। সকল পথেই খারাপের উদাহরণ পাবেন। ভালো খারাপ আমার চিন্তার বিষয়ও না এখানে। বা মূল খারাপ হচ্ছে যা বৈচিত্র্যকে প্রতিহত করে। মাত্র একটা বা দুইটা টাইপ প্রেস্ক্রাইব করে।
নাস্তিকের খোদা হইলো সে নিজে। নিজে নিজের খোদা কেনো হইতে পারে না? সাত আসমানের উপরে বইসা থাকা খোদারে মানে না বইলা নাস্তিক কাউরে মানে না তাতো না! নাস্তিক নিজেরে মানে। নিজের কাছে জবাবদিহি করে। নিজের কাছে সৎ থাকতে চায় সে। ------ দারুণ!
facebook
ডকিন্সের নেয়া ওয়াইনবার্গের সাক্ষাৎকারে প্রথম শুনেছিলাম- ইহুদি ধর্মটা অনেকটা হিন্দু ধর্মের মত, যেখানে ব্যক্তিগত বিশ্বাস নয় বরং আচারানুষ্ঠানই মুখ্য। ওয়াইনবার্গ বললেন, তার এক বন্ধু আছে নাস্তিক ইহুদি। এখান থেকে মনে হয় ইহুদি এবং হিন্দু ধর্ম হয়ত নাস্তিকদের সমাজে গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে স্ট্রাকচারড। খ্রিস্ট এবং ইসলাম ধর্ম সেদিক দিয়ে মনে হয় একটু আলাদা। তবে ভবিষ্যতে নাস্তিক বা অন্তত অজ্ঞেয়বাদী মুসলমানদের সংখ্যা বাড়লে জগতেরই মঙ্গল।
তবে মডারেট মুসলমান নামে আরেকটা টার্ম নিয়েও ভাবার দরকার আছে। বিংশ শতকের প্রথমার্ধে শিখা গোষ্ঠীর বদৌলতে মুসলমান কিন্তু তিনভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল পুরো: রেডিক্যাল, মডারেট আর অর্থোডক্স। এর মধ্যে অর্থোডক্সরা মওদুদী-ব্রাদারহুড-দেওবন্দী সহ আরও অনেক নব্য চেতনায় দিনদিন আরও শক্তিশালী হয়েছে। রেডিক্যালরা নিজেদের একটা ছোটখাট সমাজ করে নিয়েছে যার সাথে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ দিনদিন কমেছে। আপনি মোতাহের হোসেন চৌধুরীকে কি বলবেন?- অমুসলমান নাকি নাস্তিক মুসলমান? সংস্কৃতি কথা প্রবন্ধে শুরুতে যেমন আছে শিক্ষিতের ধর্ম হচ্ছে সংস্কৃতি আর অজ্ঞের সংস্কৃতি হচ্ছে ধর্ম, তেমনি আবার মাঝখানে আছে পাদ্রিদের মধ্যে সংস্কৃতি থাকলেও আমাদের মোল্লাদের মধ্যে কোন সংস্কৃতি নেই- টোনটা কিন্তু আপনার নাস্তিক মুসলমান এরই মত।
কিন্তু বর্তমানে মডারেট মুসলমান গোষ্ঠী মনে হয় ক্ষতিকর। কারণ তারা, মোল্লাতান্ত্রিক ইসলামকে বিশ্বাস করে, ওদিকে আবার সেই মোল্লাদের দৃষ্টিতে হারাম সকল কিছুতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এমন মডারেট বাড়বে নাকি নাস্তিক মুসলমান বাড়বে- সেটাই প্রশ্ন, হতে পারে দুইটাই বাড়বে....
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ভালো লাগলো আপনার কথাগুলো। মোতাহের হোসেন চৌধুরী পড়ি নি। ইন্টারেস্টিং লাগলো। অনেকদিন পর দেখা দিলেন কি? ব্লগে আরো সক্রিয় হন, প্লিজ।
মানুষের পক্ষে ভাষা থেকে যেমন বের হওয়া সম্ভব না, মিথলজি থেকেও না।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
হ। আমি যেমন আমার বাঙাল ভাষাটা ছাড়তে পারি না। মহান গুগল কি সেইটা একদিন বুঝবে?
ভাইয়া, আপনি সর্বদা গুছিয়ে চমৎকার লেখেন!!!
ধর্মকে সংস্কৃতি হিসেবে দেখি। ধর্মের কিছু আচার-অনুষ্ঠান সামাজিকতার কারণে মানতে/পালন করতে হয়, কিছু কোন ভাবেই মানা যায় না- মানবিকতা, যৌক্তিকতা এই মানা-মানির ক্ষেত্রে মূল নিয়ামক। ঈশ্বর অস্তিত্বে অবিশ্বাসীর ধর্ম পালন কী করে সম্ভব তা এখন হিপোক্রেসি মনে হলেও হয়তো এক সময় স্বাভাবিক হয়ে যাবে নাস্তিক মুসলমান এর ধারণার মতো; সেক্ষেত্রে মূল কারণটা মনে হয় পারিবারিক সামাজিকতা। তবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যে পরিবেশে বেড়ে উঠবে সে পরিবেশে পারিবারিক সামাজিকতার বিষয়গুলো আরো কমে আসবে। এরপরের পরের কোন এক প্রজন্মে হয়তো এই সামাজিকতার কিছুই থাকবে না এবং অবশিষ্ট ধর্মপ্রথারও পূর্ণ বিলুপ্তি হবে। তবে রিফর্মিস্টরা যদি আবার ধর্মকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতি নিয়ত ধর্মের সংজ্ঞা-প্রথা-আচার-অনুষ্ঠান এডাপটিভলি আধুনিকায়ন করে যেতে থাকেন তাহলে ধর্ম হয়তো কিছু মাত্রায় হলেও টিকে থাকবে। সেক্ষেত্রে ধর্মবিলুপ্তি কবে ঘটবে বুঝছি না।
ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রশ্নে বিজ্ঞানের দ্বারস্থ হলে নিশ্চিন্তে থাকা যায়। কিন্তু দর্শন আবার অনেক কিছু বলে পক্ষে বিপক্ষে। তবে বিজ্ঞানই সত্য, বিজ্ঞানই টিকে থাকবে...
আর আমার কাছে মানবিকতাই মহৎ ধর্ম!!!
অট. ক্রিয়াপদ গুলো ওভাবে নি লিখলে কেমন হতো?
_____________________
Give Her Freedom!
একটা বিশেষ শ্রেণীর ক্ষেত্রে কথাটা সত্য। তারা যদি সম্পূর্ণরূপেই ধর্মপ্রথার বাইরে চলে যায়, তাহলে তো আর রিফর্মের প্রশ্নই নেই। তখন রিফর্মিস্টরা জোর করে ধর্মকে অ্যাডাপ্টিভলি টিকিয়ে রাখবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু অন্যান্য শ্রেণীর ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্মে অসহিষ্ণুতা ও অচিন্তাও যে গড়ে উঠছে, সেখানে রিফর্মের জন্যে ধর্মপ্রথা থেকে বাইরে চলে আসতে পারারা কী করতে পারে? দূরে থেকে থেকে হাসি ঠাট্টা মশকরা করতে পারে আর তাদের বিশ্বাসের তুলোধুনাই খালি করতে পারে? অন্য শ্রেণীদের পক্ষে যেহেতু ধর্মপ্রথার বাইরে আসাটা কঠিন, ফলে তাদের জন্য সহজ হয় উগ্রতা ও মৌলবাদিতার দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়া। অবিশ্বাসীদের হাসি ঠাট্টা মশকরা সেটাকে আরো ত্বরাণ্বিত করে, ধারণাগুলোর অযোগাযোগ তৈরি করে।
ওই অঞ্চলের জন্যে দায়িত্ব না নিয়ে মনে মনে ধর্মপ্রথা চিরতরে বিলুপ্ত হবার আশা করাটাই অলীক।
যে ভাষায় কথা বলি, সে ভাষায় লিখলে কেমন হয়, সেটাই দেখছি।
রূপম ভাই,
আপনার লেখা মস্তিষ্কে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে; প্রচলিত চিন্তা-ভাবনাকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলতে চায়! আর সঙ্গে সঙ্গে অনেকের অনেক দিনের জমানো প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে দেয় তা।
আপনার এ কথার অর্থ বুঝতে বেগ পেতে হয়েছে, প্রথমে ধরা দেয়নি। মনে হয়েছিল, মুসলামানিত্বের পাঠ তো মোল্লাদের থেকেই নিতে হবে; কারন তারাই তা মুসলমানিত্বের উপর ডিগ্রি করা লোক; কিন্তু পরে বুঝলাম, মুসলমানিত্বের পাঠ ভৌত বিজ্ঞানের পাঠ নয়; বরং সংস্কৃতির পাঠ যা দিতে পারে কেবল সাধারণ মানুষ যারা পরিবর্তনশীলতার ভিতর দিয়ে মুসলমানিত্বের চলমান সংজ্ঞা দাঁড় করায়। আর তাই নিচের লাইনটা খুব ভাল লেগেছেঃ
প্রচন্ড চিন্তা-জাগানিয়া।
আমরা উৎসব করে ঝকতকে রাস্তায় গো-হত্যাকে অপছন্দ করি; আবার আমরাই প্রতি শুক্রবার উৎসব করে বিয়ে বাড়িতে উৎসব করে গোমাংস ভক্ষন করি। আর যে ঝকঝকে রাস্তায় রক্ত দেখলে আমাদের খারাপ লাগে, সেই রাস্তা কিন্তু আমরাই বানিয়েছি অসংখ্য জংগল আর তার জীব-বৈচিত্র্য সাফ করে।
কিন্তু এমনো হতে পারে, কোন খোদা নাই বইলা, নিজেই খোদা হইয়া বসল; এমন নজীর তো পৃথিবীতেই আছে; তাছাড়া, অনেকের আর নিজের কাছে সৎ থাকারই দরকার নাও পড়তে পারে; যেহেতু এটার কোন শাস্তি সে দেখতে পায় না; বরং অসৎ উপায়ে পৃথিবীতে সুখের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে! এ ব্যাপারে আপনার মতামত পেলে খুশী হব।
এই তো আপনেও পলেমিকাল হইয়া উঠতেছেন।
দ্বন্দ্ব, অসঙ্গতি সর্বথাই বিদ্যমান।
নিজের খোদা হইতে তো সমস্যা নাই। সমস্যা হইলো অন্যের খোদা হইলে। এখন যেই নাস্তিক মানে যে নৈর্ব্যক্তিক খোদা বইলা কিছু নাই, সে ক্যানো ব্যক্তি নির্বিশেষে সকলের খোদা নিজে হইয়া উঠতে চাবে? সে যদি মানে, নিজের খোদা নিজে, তাইলে সে নিশ্চয়ই এইটাও ভাববে যে অন্যের খোদা অন্যে বা সে যেইটা ভালো মনে করে সেইটা। এখানে তো অন্যে আসলে গণ্যই না। কেউ যখন অন্যের খোদা হইয়া বসতে চায়, সেইটা রাজনৈতিক ব্যাপার এবং সেইটারে ঠেকানোর জন্যে উপায়ও আছে। ফলে "হইয়া বসা"টা একটা রাজনৈতিক ঘটনা, যেইটাতে সমষ্টি জড়িত। শুধু "মনে করা"টা ব্যক্তিগত ভাবনা, এবং ব্যক্তিগত ভাবনা বাই ইটসেল্ফ কোনো সমস্যা হিসেবে প্রকাশিত না।
এখন অসৎ বলতে কীরূপ? অন্যের ক্ষতি হইলে আইন আদালত তো আছেই। এর বাইরে আর অতিরিক্ত চিন্তা কী? অন্যের ক্ষতি না হইলে একজনের ভাবনা সৎ না অসৎ সেই বিচার অবান্তর।
আর সব নাস্তিক কিন্তু নিজেরে খোদা মনে করে না। এইটা আমার প্রস্তাবিত নাস্তিক মুসলমানের ভাবনা হইয়া থাকতে পারে। আবার সকল নাস্তিক মুসলমান এমন ঐকিক চিন্তায় বদ্ধ থাকতে চাইতে নাও পারে। অনেক নাস্তিক আছে, সাত আসমানের উপরের খোদারে মানে না, কিন্তু রাষ্ট্র বইলা একটি অশরীরী খোদারে ঠিকই সেজদা করে। তার হুকুমত প্রতিষ্ঠা করার লাইগা মানুষের উপর জুলুমও করে। যেনো কোন কোরানে খোদাই কইরা লেখা আছে যে অমুক একটা রাষ্ট্রভাবনা কায়েম করতেই হইবেক। মার্ক্সবাদীরাও যেমন নাস্তিক হইলেও ভবিতব্য সাম্যবাদরে খোদা মানে। তার লাইগা জিহাদ করে। নানান রকম আছে দুনিয়ায়। আমি খালি একটা রকম প্রস্তাব করলাম।
আমার কাছে একটা খাঁটি নাস্তিক কেবল সাত আসমানের উপরের খোদারেই অবিশ্বাস করে না। সে রাষ্ট্রখোদা, সামন্তখোদা, সাম্রাজ্যখোদা, সাম্যখোদা, জাতিখোদা, বাজারখোদা, ব্যক্তিখোদা, যুক্তিখোদা, এইজাতীয় যাবতীয় অশরীরী, অপ্রমাণিত, কল্পনাপ্রসূত ও কর্তৃত্বপরায়ণ খোদার অস্তিত্বই অবিশ্বাস করে। তার হুকুমতের উপর ঈমান ত্যাগ করে।
নতুন মন্তব্য করুন