হয়তো ভাবছেন যে আইডিবাদীদের এতে পোয়াবারো। কিন্তু তাদের অনেকে এইটুকুও গ্রহণে অক্ষম। এআইয়ের ব্যাপারে তাদেরও নিজস্ব খুঁতখুঁতে ভাব আছে। আইডিওয়ালারা ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের’ কথা বললেও আসলে তাদের হৃদয়ে আছে সর্বেশ্বর কর্তা, যার সৃষ্টি-কৃতিত্ব মানুষের অসাধ্য। ফলে মানুষের হাতে প্রাণ সৃষ্টি কি বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টি, এসব নিয়ে ওনারা খুব আপ্লুত নন। ওনাদের অনেকেরই মতে, মানুষের হাতে এসব হবার নয়।
তাহলে ঘটনাটা কি? আইডিওয়ালাদের খুঁতখুঁতটা যৌক্তিকভাবে আমলে দেবার মতো তেমন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু বিবর্তনবাদীদের মধ্যে যাদের খুঁতখুঁত, তাদেরকে কী বলা যায়? আসলে, এক অর্থে সকল প্রযুক্তিই তো মানুষের ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন’! সে উড়োজাহাজই হোক, আর কম্পিউটারই হোক। কিন্তু এটুকু বোঝানোটা তাদের কাছে হয়তো যথেষ্ট হবে না। আইডিওয়ালাদের কাছে ঈশ্বর যেমন সৃষ্টির একক ঠিকাদার, অনেক বিবর্তনবাদীর কাছে বিবর্তনও প্রেরণাগতভাবে অনেকটা তেমনই। অর্থাৎ বিবর্তনই সৃষ্টির একক ঠিকাদার, অনেকটা যেনো এমন। এই টেনেটটাকে ভাইটালিজমের সাথে তুলনীয়। ফলে এআই যখন বিবর্তনকে সেভাবে আমলে নেয় না, তখন তাদের সন্দেহ জাগে।
এআই গবেষণায় বিবর্তনের ধারণাকে ব্যবহার খুব অঢেল প্রচলিত কিছু নয়। হ্যাঁ, জেনেটিক অ্যালগরিদম বলে একটা পদ্ধতি আছে, কিন্তু সেটার উপর নির্ভরতা আবশ্যিক এমনটা অনেকেই মনে করেন না। তথ্যগতভাবে দেখলে, বিবর্তন কিন্তু কোনো যাদুকরী পন্থাও নয়, যেটার হাত ধরে না এগুলে সফলতা আসবে না। অনেকে ভাবতে পারেন হাজার হাজার এআই এজেন্ট তৈরি করে তাদের মধ্যে প্রাকৃতিক নির্বাচন ঘটাতে হবে, নাহলে হবে না। আসলে এভাবে যারা ভাবেন, তারাও এক ধরনের ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন জাতীয় ভাবনায় ভুগেন। তারা ভাবেন, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মধ্যে বিশেষ বিশেষ কোনো ভাইটালিজম নিহিত আছে যেটা ছাড়া সৃষ্টিগুলো সম্ভব হবে না।
কিন্তু আমাদের হয়তো বিবর্তনকে একটি ডেটা প্রসেসর হিসেবে দেখতে হবে। বিবর্তন কী ডেটা প্রসেস করছে? কল্পনা করা যায়, বিবর্তনের একটা প্রসেসিং 'লক্ষ্য' আছে। আসলে তো কোনো লক্ষ্য নেই। সে তো কোনো সত্তাধারী জানোয়ার নয় যে তার বিশেষ লক্ষ্য থাকবে। তা জানোয়ারও তো আসলে প্রকৃত অর্থে সত্তাধারী কোনো জানোয়ার নয়, যার কোনো আত্মিক মিশন আছে। সে নানা অণু-পরমাণুর সন্নিবেশই তো কেবল। কিন্তু জানোয়ার (যেমন মানুষ)-এর অনেক আচরণে একটা অন্তর্নিহিত লক্ষ্য কল্পনা করলে যেমন আমাদের ভাবতে সুবিধা হয়। তেমনি বিবর্তনের প্রক্রিয়ার পেছনেও একটা লক্ষ্য কল্পনা করা যায়, যদি তেমনটা কাজের কোনো ভাবনা হয়। তবে সেটা করতে হবে বেশ সতর্কতার সাথে।
বিবর্তনের ইতিহাসকে দেখলে মনে হতে পারে একটা স্থির উন্নয়ন তার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ফলে মনে হয় সে যেনো একটা লক্ষ্যপাণে এগুচ্ছে। কিন্তু বিবর্তন তত্ত্বকে সাধারণভাবে লক্ষ্যহীন প্রসেস অর্থে বর্ণনা করা হয়১। কারণ বিবর্তনের অধিকাংশ প্রোডাক্ট আসলে খুব সরল, সাধারণ জীব। ‘উন্নত’ বা জটিল প্রাণীকে ভাবা হয় অসংখ্য প্রাণী তৈরির একটা সাইড ইফেক্ট। ফলত বুদ্ধিমত্তাও সেই অর্থে একটা সাইড ইফেক্ট। তবে লক্ষ্য করুন, এআই নিয়ে বিবর্তনবাদী যে খুঁতখুঁত, সেটা হলো এই যে বুদ্ধিমত্তা বিবর্তনের সৃষ্টি, ফলে বুদ্ধিমত্তার জন্যে বিবর্তন জরুরি। তাই যখন ভাবতে বসবেন যে এআইয়ের বিবর্তন থেকে নেওয়ার কী থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে বিবর্তনকে বুদ্ধিমত্তা তৈরির ‘লক্ষ্যে’ এগুনোর একটা পদ্ধতি হিসেবে কল্পনা করাটা খুব গর্হিত নয়। অর্থাৎ অজস্র সাধারণ প্রাণী তৈরির সাইড ইফেক্ট হিসেবে গুটি কয়েক অমূল্য, জটিল ও উন্নত প্রাণী তৈরির ঘটনাটাকে এভাবে ভাবা যায় যে - ‘গুটি কয়েক অমূল্য, জটিল ও উন্নত প্রাণী তৈরির জন্যে বিবর্তন এমন অজস্র সাধারণ প্রাণী তৈরি করেছে’। এই ভাবনার দ্বারা কিন্তু বিবর্তন তত্ত্বের সায়েন্টিফিক রিয়েলিস্ট অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো অবস্থান পোষণ করা হচ্ছে না। বরং একটা ইন্সট্রুমেন্টালিস্ট অবস্থান নেয়া হচ্ছে। জেনেটিক অ্যালগরিদম ও অন্যান্য ইভোল্যুশনারী অ্যালগরিদমকে অনেকটা এই স্পিরিট থেকেই ব্যবহার করা হয়, কারণ ওসব অ্যালগরিদমে অন্তপ্রকৃতিগতভাবেই একটা লক্ষ্য কল্পনা করা হয়। যদিও বিবর্তন আসলে কোনো জেহাদি সংকল্প বা ব্রতী নিয়ে এমনটা করছে না।
ইন্সট্রুমেন্টালিস্ট অবস্থান থেকে বিবর্তনের লক্ষ্য ভাবা যেতে পারে - টেকসই প্রাণী তৈরি করা, বুদ্ধিমত্তা যার একটা উপাদান। আর এই লক্ষ্যটাকে আরো কিছু পরিমার্জন করে বললে হয়তো আরেকটু বেশি টেকনিক্যালি শুদ্ধ বা কাজের হবে, কিন্তু আপাতত এমনটা ভাবাটাই যথেষ্ট। এটুকুতে মোটামুটিভাবে একমত হওয়া গেলে দেখা যাবে যে বিবর্তন হতে এআইয়ের আসলেই নেয়ার অনেক কিছু থাকে। কিন্তু সেটা হুবহু বিবর্তনের মতো করে নয়।
আমরা যদি ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপকে বিবর্তনে বাতিল করি আর তার টেকসই প্রাণী তৈরির লক্ষ্যটাকে কাজের একটা ধারণা বলে কল্পনা করি, তাহলে আমরা প্রশ্ন করতে পারি বিবর্তন কীভাবে সেই লক্ষ্য অর্জন করে? যেহেতু ইন্টেলিজেন্ট কোনো ডিজাইন এর হাতে নেই, ফলে বিবর্তনের একমাত্র ঈশ্বর হলো ডেটা। কোটি কোটি বছর ধরে সে অজস্র অজস্র নানা প্রজাতির প্রাণীর জীবদ্দশা, টিকে থাকা, লুপ্ত হওয়া থেকে ডেটা পেয়েছে উন্নত থেকে উন্নততর প্রাণী গণনা করার। সেই অর্থে ভাবলে সকল প্রাণীই তার লক্ষ্যের অংশ; তারা বিবর্তনকে ডেটা সরবরাহ করে গেছে নিজেদের অভিজ্ঞতা দ্বারা। নির্বাচন ও মিউটেশানের মতো ঘটনার কারণে প্রজাতির নানা রকম ভ্যারিয়েশান তৈরি করা গেছে। বিবর্তন সুযোগ পেয়েছে নানা রকম ভ্যারিয়েশনকে পরীক্ষা করার। সেই অর্থে এখানে ভ্যারিয়েশান থাকাটা যতোটা গুরুত্বপূর্ণ, বিবর্তন ঠিক কী ধরনের নির্বাচন বা মিউটেশান পদ্ধতি ব্যবহার করে সেটা ততোটা নয়।
এইসব ভ্যারিয়েশনগুলোর মধ্যে যেগুলো একটা বিশেষ পরিবেশে বেশি বেশি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে, তাদের এক অর্থে ভাবা যায় বিবর্তনের সফল উৎপাদন। কারণ তারা ওই পরিবেশে বেশি টেকসই। কিন্তু এই টেকসইত্ব সাময়িক হতে পারে। সেক্ষেত্রে সামান্য পরিবেশ-পরিবর্তনে দেখা গেছে সেই আপাত টেকসইরা ঝরে পড়ছে। ফলে সবসময়েই ভ্যারিয়েশানের উপস্থিতি থাকার একটা উপযোগিতা দেখা দেয়। কারণ অনেক অনেক ভ্যারিয়েশান উপস্থিত থাকলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটা ভ্যারিয়েশনের টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা অল্প কয়েকটা ভ্যারিয়েশান থাকার চেয়ে অনেক বেশি। এভাবে ভ্যারিয়েশান তৈরি করা আর অভিজ্ঞতালব্ধ ডেটা থেকে টেকসইত্ব যাচাই করা, এই প্রসেসের মধ্য দিয়ে বিবর্তন এগিয়ে গেছে বলে কল্পনা করা যায়। এখানে ডেটাই বিবর্তনের ঈশ্বর। কে বেশি টেকসই? সেটা ডেটা বা পরিবেশের সাথে অভিজ্ঞতাই নির্ধারণ করবে, অন্য কেউ নয়।
এভাবে ভাবা গেলে বিবর্তনের থেকে এআইয়ের আসলে অনেক কিছু নেবার থাকে - যেমন, উৎকর্ষ যাচাই আর প্রতিনিয়ত ভ্যারিয়েশান সরবরাহ করার ধারণা। তবে এর জন্যে বিবর্তনকে পদ্ধতি হিসেবে হুবহু অনুসরণের প্রয়োজন নেই। কারণ ডেটা থেকে উৎকর্ষ যাচাই আর প্রতিনিয়ত ভ্যারিয়েশান সরবরাহ করার জন্যে বিবর্তনই একমাত্র উপায় নয়। অন্য নানা ডেটা প্রসেসিং উপায় অবলম্বন করে একই লক্ষ্য অর্জন কল্পনা করা সম্ভব। যেভাবে জেনেটিক অ্যালগরিদম দ্বারা অর্জিত লক্ষ্যকে নন-ইভোল্যুশনারী ধরনের সেরা-অনুকূলকরণ পদ্ধতি দ্বারাও অর্জন সম্ভব। ফলে এক অর্থে বিবর্তনবাদী অনেকের যে খুঁতখুঁতটা, সেটার কিছুটা ভিত্তি আছে, কিন্তু বিবর্তনীয় ‘ভাইটালিজমে’ বিশ্বাস অংশে নেই।
হ্যাঁ, এআই গবেষণায় আসলেই মানুষের ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন দিয়ে বাজিমাৎ করে ফেলার একটা প্রবণতা রয়েছে। বিবর্তন থেকে আমরা এই ধারণাটা ধার নিতে পারি যে, (কৃত্রিম) বুদ্ধিমত্তাকে যে প্রসেসটা তৈরি করবে, তার থাকবে একটা বিশেষ লক্ষ্য, ভ্যারিয়েশান তৈরির এক বা একাধিক উপায় এবং ঈশ্বর হীনতা বা অনির্ভরতা। মানুষ তো এক অর্থে এআইয়ের ঈশ্বরই। কিন্তু এআইয়ের তৈরি হবার পথটা হতে হবে মানুষের উপর নির্ভরশীলতাহীন, ঈশ্বরবিহীন। কারণ বুদ্ধিমত্তা কোনো বস্তু নয় যে তা প্রদান করা যাবে। এটা আচরণের একটা প্রকাশ, যা অর্জিত হয় অভিজ্ঞতা দ্বারা। ফলে সেটা কোনো ঈশ্বরের হাত ধরে অর্জিত হবে না। বিবর্তনের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের হাত ধরে কিছু ঘটে নি। ঘটেছে ডেটার হাত ধরে। এআইয়ের ক্ষেত্রেও সম্ভবত সেটাই প্রয়োজন। সেভাবেই এআই মানুষের তৈরি হওয়া সত্ত্বেও সত্যিকার অর্থে বিবর্তনের ‘নন-ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন’গত প্রেরণাটা ধারণ করতে পারে, যেখানে ডেটাই তার অভিজ্ঞতা প্রদান করবে, ডেটাই তার লক্ষ্যকে যাচাই করবে। মানুষের আদেশকে ঘিরে নয়, এআইকে তৈরি করতে হবে তার উপর আপতিত ডেটাকে ঘিরে। এভাবে এআইকে মানুষের বাজিমাৎ করা বুদ্ধিদীপ্ত কোনো ডিজাইনের উপর নির্ভরশীল হবার চেয়ে বিবর্তনের মতো ডেটাকেন্দ্রিক হতে হবে। মানুষের ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনটি নয়, ডেটাই হবে এআইয়ের দৈনন্দিন বুদ্ধিদীপ্ত হয়ে ওঠার পেছনের প্রকৃত ঈশ্বর।
মন্তব্য
অন্যভাবে বললে, এআই মানুষ থেকে স্বাধীন হয়ে যাবে। আর তা হলে অদূর ভবিষ্যতে বুদ্ধিমত্তায় মানুষকে ছাড়িয়ে যাওয়া, এমনকি তাকে বাতিল মালের ঝুড়িতে ফেলে দেয়াও তার পক্ষে অসম্ভব কিছু হবে না। অনেকটা টার্মিনেটর কেস আরকি। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হল, মানুষ কেন তাহলে এমন এআই বা ফ্রাঙ্কেস্টাইনের দানব বানাতে যাবে ? তার কি ঠ্যাকা পড়েছে ? তার চেয়ে আইডিএআই-ই তো ভাল, তাই না ?
****************************************
ভালো প্রশ্ন। কথা হচ্ছে যে এআইয়ের উদ্দেশ্যটা কী? বিজ্ঞানের যেকোনো উৎকর্ষের মতোই, মোটা দাগে দুইটা। এক হলো মানুষের আয়েশ সাধনের জন্যে, যেমন ভোগ করা, লুট করা, যুদ্ধ করা। আরেকটা হলো প্রকৃতিকে বোঝা।
এখন আইডিএআই মানুষের আয়েশ সাধনের জন্যে ঠিক আছে। আসলে এখন অনেকটা সেটাই হচ্ছে। তবে বুদ্ধিমত্তার সত্যিকারের প্রকৃতিটা বোঝার জন্যে সে দানব বানাবেই। কারণ আইডিএআই দিয়ে বুদ্ধিমত্তাকে পূর্ণরূপে বোঝা সম্ভব হবে না। এই সন্দেহটা করেছি এখানে -
শেষে গিয়ে সবকিছুরই একটা উপযোগ মানুষ খুঁজে পাবে। আমাদের নিজেদের বুদ্ধিমত্তার জৈবঊর্দ্ধ বিবর্ধনের জন্যে হলেও এআইকে বোঝা দরকার। তখন আমরা একে নিজের সাথে যুক্ত করে দিতে পারি। তখন মানুষ বাতিল মাল না হয়ে নিজেই বরং শক্তিশালী হবে।
১। কিন্তু মানুষের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ও বিবর্তন, ভ্যারিয়েশন, ডেটা, অভিজ্ঞতার সম্ভাব্য সমাহার ইত্যাদি - এসব কি সম্পূর্ণ নিঃশর্ত ও অসীমাবদ্ধ ছিল প্রাকৃতিক ভাবেই? তা যদি না হয়ে থাকে এবং তা না হওয়া সত্ত্বেও যদি একে বুদ্ধিমত্তা বলা যায় বা বুদ্ধিমত্তায় বিবর্তনের সাফল্য ধরা যায়, তাহলে একই জিনিষ কেন এআই-র বেলা বলা বা ধরা যাবে না বা সম্ভব হবে না?
২।
তাহলে তো এআই-কে মানুষকে ধ্বংস করে ফেলার সুযোগ দিতে হবে, নাহলে তার বুদ্ধিমত্তার পূর্ণ ও সঠিক বিকাশ সম্ভব হবে না তত্ত্বগতভাবেই। বুদ্ধিমত্তার সত্যিকারের প্রকৃতিটাও পূর্ণ রূপে বোঝা সম্ভব হবে না। কারন যেই মুহূর্তে এআই মানুষের সাথে পাল্লা দেয়ার পর্যায়ে আসবে বা তার অস্তিত্ত্বের জন্য থ্রেটেনিং হয়ে দাঁড়াবে তার ক্ষমতা, সে মুহূর্তেই মানুষ তার রাশ টেনে ধরবে (যদি টেনে ধরতে পারে আরকি)। সম্ভবত মানুষ নিজেও নিজের বুদ্ধিমত্তার পূর্ণ বিকাশ প্রতিষ্ঠা করতে বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে একই কাজ করেছে - প্রতিযোগী বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রজাতিগুলিকে নিশ্চিহ্ণ বা দমন করেছে। এমনকি আধুনিক মানুষে রূপ লাভ করার খুব নিকটবর্তী সময়েই সে প্রায় নিকটবর্তী প্রায়-মানুষ কিছু প্রজাতির বিলুপ্তির জন্য দায়ী - সাম্প্রতিক গবেষনার এমন কিছু কোথায় (বিবিসি?) যেন পড়েছিলাম কয়েকদিন আগে। মোদ্দা কথা হল, আমি যট্টুক বুঝলাম, তা হল -
(ক) বুদ্ধিমত্তার পূর্ণ ও প্রকৃত বিকাশের জন্য তার স্বাধীন প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন, কমপ্লিট ডমিন্যান্সের সুযোগ বা সম্ভাবনাসহ;
(খ) এআই-থেকে বুদ্ধিমত্তার বিকাশের পূর্ণ ও সঠিক চিত্র পেতে হলে সব ভ্যারিয়েশনের সুযোগই দিতে হবে তাকে - মানুষকে ধ্বংস করা সহ;
(গ) সেই সুযোগ দেয়া হলে, তার থেকে আর কোন উপযোগ আমরা আর নাও পেতে পারি। কারন এআই তখন নিজেকে মানুষের কোন 'সংযুক্ত' অংশ না হয়ে স্বাধীণ ও পৃথক সত্তা নিয়েই বাঁচতে চাইতে পারে। এবং সেটাই স্বাভাবিক হবে - স্বাধীণতা একই সাথে বুদ্ধিমত্তার অনিবার্য কারন ও পরিণতি। আপনার লেখাতেও তা স্পষ্ট। তো, মানুষকে তখন সে নিজের অস্তিত্ত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ বিবেচনা করে ধ্বংস করে দিতে চাইতে পারে, কিম্বা, উলটো তাকেই নিজের অধীণস্থ 'সংযুক্তি; বা 'প্রত্যঙ্গে' পরিণত করতে পারে। কিম্বা দাসে। আমরা গরু-ছাগলদের নিয়ে যা করি আরকি, তার সবই সে করতে চাইতে পারে....
তো ঘুরে ফিরে সেই উপযোগের প্রশ্নতেই আসলাম। উপযোগ পেতে হলে যদি চরম অনুপযোগিতাই প্রয়োজন হয় - এমনকি সব উপোনুপযোগিতার উর্ধ্বে উঠে আত্নধ্বংস পর্যন্ত, তাহলে সেই 'উপযোগাকাঙ্খার' উপযোগিতা কতটুকু ?
****************************************
একটু উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হতো কী ধরনের শর্ত কিংবা সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন।
দ্বিতীয় অংশে আপনি এক্সট্রিম কেইসটার কথা ভাবছেন। সেটা তো অনাকাঙ্ক্ষিত বটেই। কিন্তু সেটা কি একদিনে আসবে? তা তো নয়। সেটা ক্রমান্বয়ে ঘটবে। সেই পর্যায়ে যাবার আগেও বুদ্ধিমত্তা গঠনের প্রকৃতিকে বোঝার যথেষ্ট সুযোগ আমরা পাবো। ধরুন বানরের পর্যায়ের রোবট, যার পক্ষে মানুষকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়। ততোটুকুও কিন্তু অনেক। কিন্তু একটা বানর পর্যায়ের রোবট 'ডিজাইন' করা দুঃসাধ্য, তাই ডেটাকেন্দ্রিক হতে হবে আমাদের। এর বেশি বাড়তে দেয়া যদি বিপজ্জনক হয়, তাহলে আর নয় না আগালাম তারপর, কিন্তু এখনো তো তেলাপোকা লেভেলের স্বাধীন বুদ্ধিমান রোবটও তৈরি হয় নি, এই ডিজাইন মনমানসিকতার কারণে।
আর মানুষ নিজেই কিন্তু রোবটের সাথে একীভূত হতে পারে। সেক্ষেত্রে কেউ নিশ্চিহ্ন হচ্ছে না। মিত্রতা বা উইন উইন আরকি।
মানুষ 'এআইয়ের ঈশ্বর' হলেও তা তৈরির পথ হবে 'মানুষের উপর নির্ভরশীলতাহীন'; বিবর্তন বা নন-ইভোল্যুশনারী পদ্ধতি অবলম্বন করে 'ডেটা থেকে উৎকর্ষ যাচাই আর প্রতিনিয়ত ভ্যারিয়েশেন সরবারহের' মাধ্যমে উন্নত প্রাণীর মতই উন্নত এআই তৈরি সম্ভব হবে। কিন্তু রূপম(ধ্রুব) ভাই, যে প্রশ্নটি আমার মনে জেগেছে, তা হল, কি এআইকে মানুষের উপর নির্ভরতামুক্ত রাখতে পারা যাবে, যখন মানুষ ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রণ করবে। বিবর্তনবাদীরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, তাই ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণ বা ডিজাইন ছাড়াই সেখানে ডেটা প্রসেসিংভিত্তিক পদ্ধতি অনুসৃত হওয়া সম্ভব। কিন্তু মানুষ যে এআইয়ের ঈশ্বর; এই ঈশ্বর যদি নিজ প্রয়োজনে তার ডিজাইন বাস্তবায়ন করতে চায় তাকে কি দোষ দেয়া যায়? মানুষকে এআই বানাতে দেয়া হবে কিনা, সেটা আরেক বিতর্ক। কিন্তু মানুষকে বানাতে দিয়ে, তার ডিজাইনকে অস্বীকার করা হবে কেন? অবশ্য নৈতিকতার যুক্তি দেখিয়ে 'গুড ডিজাইনের' কথা বলা হতে পারে, যা সবার জন্য ভাল। কিন্তু সবার জন্য ভাল, এমন কিছু কি আছে আদৌ?
এটাই সঠিক বলে মনে হয়। আমরা বুদ্ধিমান প্রাণী কারণ বুদ্ধিমত্তা আমাদের জন্য টিকে থাকতে সহায়ক ছিলো সবসময়। কিন্তু যদি আমরা নিজেরা নিজেদের বোমাবাজি করে উড়িয়ে দেই, মানুষ বিলুপ্ত হলেও যদি অন্য কোন কম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রাণী টিকে থাকে (তেলাপোকা যেমন) তাহলে ওর সারভাইভাল স্কিল যা হবে, সেটাই পরবর্তীতে আরো ঘষা-মাজা হতে থাকবে।
এখন আমাদের টিকে থাকার জন্য এআই তৈরী করে সুবিধা হচ্ছে তাই এআই আছে। এখানে কোন গ্র্যান্ড ডিজাইন নেই। যে সময়ে যা দরকার, সে সময়ে তাই টিকে যায়। বিবর্তনই এটা, সুতরাং বিবর্তনবাদীদের সংশয়ের কোন কারণ নেই। যদি একসময় আমরা বাদে এআই নিজেদের জগত তৈরী করে নেয় কোন সায়েন্স ফিকশন মুভির মতো, তখন সেটাও আমাদের বিবর্তনেরই ফল হবে।
আইডিবাদীদের সংশয় নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, নিজেদের ডিল্যুড করার জন্য নতুন কোন ধারণা তারা সবসময়ই বানিয়ে ফেলতে পেরেছে, এআই নিয়েও পারবে।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের দুটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমানঃ চেতনা আর 'ফ্রি উইল'। হতবুদ্ধি নিরীশ্বরবাদীরা কোনও ব্যাখ্যা খুজে না পেয়ে বলে, "illusion"!
তিনি তো ঠিকই বলেছেন, "Seeing they see not! Hearing they hear not" (Matthew, 13:13) "Deaf, dumb and blind! They return not!" (Quran, chapter 2)
'ফ্রি উইল'? চেতনা ? চমৎকার বলেছেন! আপনার ঈশ্বর বাবাজি তো দেখা যাচ্ছে তার এই তথাকথিত মহান দুই বৈশিষ্ট্য কাউকে দিয়ে থাকলে নিরীশ্বরবাদী, সন্দেহবাদী, অজ্ঞেয়বাদী এদেরই দিয়েছেন দু'হাত উজাড় করে। তার স্বঘোষিত চেলাদের বেলায় এসে হঠাৎ করেই তার হাত খালি পড়ে গেছে একেবারে (অন্তত কারো কারো কথা সেরকমই মনে হয়)। কি আজব ঘটনা বলেন তো!
****************************************
ঈশ্বর নিজে নিরীশ্বরবাদী, তাই তিনি মানুষকেও তেমন দেখতে চান হয়তো। আমি যেমন বলতেছি যে এআইয়েরও নিরীশ্বরবাদী হওয়া দরকার। আইডিএআইয়ের দৌড় কদ্দূর এবার বুজছেনতো?
হুম! তা হতে পারে বৈকি
কিন্তু 'ঈশ্বর' কতটা নিরিশ্বরবাদী (এ সংক্রান্ত ধর্মীয় ডেফিনিশনের বাইরে গিয়ে বলতেছি, ওখানে তিনি মোটেই তা নন), সেটা তখনই প্রকৃত বোঝা যাবে যখন এবং যদি কোনদিন আমরা তার ফিজিকাল দেখা পাই এবং তাকে ফিজিকালিই ধ্বংস করে দিতে পারি এবং তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারি, বা অন্তত আমাদের যদি সেই ক্ষমতাটা হয় এবং সেটা হওয়াটা এবং সেই সাথে তাকে ধ্বংস করার ইচ্ছার স্বাধীনতাটা তিনি এলাও করেন! তাই না? তা না হলে কি বলা যাবে না তিনি আমাদের যথেষ্ট ভযারিয়েশনের সুযোগ দিচ্ছেন না, উলটে ঈশ্বরত্ব ফলাচ্ছেন?
****************************************
কিন্তু ধর্মীয় ডেফিনিশান অনুযায়ীই তো তিনি বিশ্বাস করেন না যে তার নিজের কোনো সৃষ্টিকর্তা আছে। সে হিসেবে তিনি তো নিরীশ্বরবাদী বৈকিই!
এই চ্যাট-জিপিটি আর এয়াই-র নবযুগে আপনি যে কোথায় গেলেন ভাবছি! এই পাড়ায় থাকলে আরও ইন্টারেস্টিং আলাপ-সালাপ করা যেত।
****************************************
নতুন মন্তব্য করুন