ফ্যাসিবাদের চৌদ্দটা লক্ষণ

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি
লিখেছেন ধ্রুব বর্ণন (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৮/০৬/২০১২ - ৮:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফ্যাসিবাদের লক্ষণ বিষয়ে সেকুল্যার হিউম্যানিস্ট পত্রিকা ফ্রি ইন্কোয়ারিতে ছাপানো একটা লেখা ইন্টারনেটে বেশ জনপ্রিয়। দুই একটা জার্নালেও সেটা উদ্ধৃত হয়েছে। লেখক সেখানে ফ্যাসিবাদের চৌদ্দটা লক্ষণ বের করেছেন। অনেকে এগুলোকে ফ্যাসিবাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্য বলে থাকেন। হিটলার মুসোলিনিদেরকে দেখে দেখে নাকি লেখক এই লক্ষণগুলোর উদ্ঘাটন করেছেন। তবে দুষ্ট লোকেরা বলে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানদেরকে চিহ্নিত করতেই নাকি এই লিস্টি তৈরি। যা হোক, দেখা যাক এক নিমিষে ফ্যাসিবাদের লক্ষণগুলো কীসে কীসে।


(নাৎসি জার্মানিতে জাতীয়তাবাদী চিহ্ণের ব্যবহার। ছবি কৃতজ্ঞতাঃ lifesciencesfoundation.org)

১. উগ্র জাতীয়তাবাদ: ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে সরকার জনগণ উভয়ই জাতীয়তাবাদী স্লোগান, চিহ্ণ, গান নিয়ে মুখর হয়ে থাকে। দেশের সব জায়গায় জাতীয়তাবাদী চিহ্ণের পতাকা ওড়ে, নয়তো জামা কাপড়ে সিল হয়ে লেগে থাকতে দেখা যায়। হিটলারের জার্মানিতে সে দেদারসে দেখা গেছে।

২. মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা: দেশের সরকার এবং জনগণের মাঝে মানবাধিকার নিয়ে একধরনের অবজ্ঞা বিরাজ করে। শত্রুভয় ও দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন তাদের কাছে মানবাধিকারের ঊর্ধ্বে। ওইসবের প্রয়োজনে মানবাধিকার একটু আধটু লঙ্ঘন করা চলে। মানুষের মনে কারাবন্দীদের অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা করা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য থাকে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে সমর্থনই করতে তাদের দেখা যায়।


(কার্টুনের মাধ্যমে নাৎসিরা ইহুদিদের উপর কমন শত্রু চরিত্র আরোপ করেছিলো। ছবি কৃতজ্ঞতাঃ www.chgs.umn.edu)

৩. একটা কমন শত্রু থাকা: দেশের সব সমস্যার জন্যে জনগণের কাছে একটা কমন শত্রু তথা বলির পাঁঠা উপস্থিত থাকে। দেশের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে? হিন্দুদের দোষ। যুদ্ধে হেরেছি? আলবৎ ইহুদিদের দোষ। কেবল শত্রু নির্ণয়েই তার শেষ নয়। জনগণ কমন শত্রুকে সমূলে নিশ্চিহ্ণ করতে চায়। সেই শত্রু সাধারণত ভিন্ন ও সংখ্যালঘু ধর্মের বর্ণের বা জাতির হয়ে থাকে। কখনো কখনো তারা হয় লিবারেল, কম্যুনিস্ট, সমাজতন্ত্রী কিংবা জঙ্গী নামধারীরা।

৪. মিলিটারিকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান: দেশের দুর্যোগের মুহূর্তেও সরকারি তহবিলের মোটা অংশটা মিলিটারির ভাগ্যে জুটে, দুর্যোগটাকে দূরে ঠেলে হলেও। দেশের মানুষের কাছে দেশের সৈন্যরা অতিশয় মহৎ। মিলিটারি সেবা মহান কর্ম।

৫. লিঙ্গবৈষম্য সর্বব্যাপী বিরাজমান: ফ্যাসিবাদী সরকার প্রায় সার্বিকভাবে পুরুষতান্ত্রিক। তাদের শাসনে লিঙ্গবৈষম্য আরো প্রকট হয়। প্রচলিত লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনকে সমর্থনের মাধ্যমে আরো প্রকটরূপ দেওয়া হয়। তালাক, গর্ভপাত, সমকামিতাকে দমন করা হয়। রাষ্ট্রকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক রক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

৬. নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম: কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিডিয়া সরাসরি রাষ্ট্রাধীন, অন্যান্য ক্ষেত্রে মিডিয়া পরোক্ষভাবে নানা সরকারি নিয়মকানুনের বেড়াজালে বন্দী কিংবা সরকারপন্থী ভাষ্যকার ও মুখপাত্রদের দখলে। সেন্সরশিপ সেখানে সর্বব্যাপী বিরাজমান।

৭. জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আহাজারি: জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ভয়কে একটা প্রধান অস্ত্র হিসেবে সরকার ব্যবহার করে।

৮. ধর্ম আর রাষ্ট্রের মাখামাখি: ফ্যাসিবাদী সরকার সাধারণত দেশের প্রধান ধর্মটি নিয়ে বিস্তর গুটিবাজি করে, ওটা ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মন ভুলায়। কথায় কথায় বিসমিল্লাহ, কোরান তেলওয়াত কিংবা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে কোনো লেখক বা ওয়েবসাইটকে ধরে সাইজ করে দেওয়া এইসব প্রায়ই দেখা যায়। এমন কি সরকারের মূলমন্ত্র কিংবা নীতিগুলো প্রধান ধর্মটির নানা বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও মুখে মুখে ওই ধর্মকেই ব্যবহার করে এইসব গুটিবাজি করতে তাদের বাঁধে না।

৯. কর্পোরেটদের নিরাপত্তা: অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় ধনিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠিরাই ফ্যাসিবাদী সরকার গঠনে সাহায্য করে যাতে করে ফ্যাসিবাদী সরকারটি সকল ক্ষমতা একহাতে নিয়ে ওই গোষ্ঠির স্বার্থের দেখভাল করে।

১০. শ্রমিকদের ক্ষমতা সীমিতকরণ: শ্রমিকদের একতাবদ্ধ আন্দোলন এদের সবচেয়ে বড় ভয়। তাই ফ্যাসিবাদী সরকার হয় শ্রমিক ইউনিয়ন সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ণ করে দেয় নতুবা খুব করে নিয়ন্ত্রিত করে।

১১. বুদ্ধিজীবিতা ও শিল্পকর্মের প্রতি অবজ্ঞা: ফ্যাসিবাদী সরকার উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে হয় সরাসরি বৈরিতা প্রদর্শন করে নয়তো সেরকম অবজ্ঞাকে সমর্থন করে। অধ্যাপকদের ও বুদ্ধিজীবীদের সেন্সরের মুখে পড়া কিংবা গ্রেপ্তার হওয়া সেখানে বিরল ঘটনা নয়। শিল্পসাহিত্যের মুক্তপ্রকাশের উপর আক্রমণও সেখানে ঘটতে দেখা যায়।

১২. অপরাধ ও শাস্তি নিয়ে মাত্রাধিক আগ্রহ: ফ্যাসিবাদী আমলে পুলিশ কিংবা বিশেষ বাহিনী আইন প্রয়োগের ব্যাপারে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ করে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও অন্যায় নিয়ে উদাসীন থাকতে, এগুলোকে উপেক্ষা করতে মানুষকে দেখা যায়। এমন কি দেশপ্রেমের উছিলায় (নিজের এবং অন্যের) নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতাকেও জলাঞ্জলি দিতে তারা প্রস্তুত।

১৩. অবাধ স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতি: ফ্যাসিবাদী সরকার প্রায় সবসময়েই এক পর্যায়ের একটা গোষ্ঠিশাসন, যেখানে একদল লোক আর তার বন্ধুরা মিলে অধিকাংশ সরকারি পদ, সুযোগ সুবিধা, ক্ষমতা ভোগ করে। সরকারি নেতাদের দ্বারা দেশের তহবিলের উপর বিশেষাধিকার ভোগ এমন কি লোপাট করার ঘটনাও প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়।

১৪. নির্বাচনে কারচুপি: ফ্যাসিবাদী আমলে অনেক সময় নির্বাচন হয় কেবল নামকাওয়াস্তে। অন্যান্য সময় নির্বাচনে ঘটে কারচুপি ও অবৈধ হস্তক্ষেপ, ঘটে বিপক্ষ দলের প্রার্থীদের হত্যর ঘটনা, ভোট গণনায় হস্তক্ষেপ, আসনের সীমানা নড়াচড়া করানো এবং মিডিয়ার অসৎ ব্যবহার।

লক্ষণ দিয়ে কিছু চিহ্ণিত করার মাঝে বিশাল গোলমাল আছে। অনেকে তখন রাজাকারেরা ভাত খায় দেখে ভাত খাওয়াও খারাপ বলতে পারে। ক্ল্যাসিফিকেশানের বিপত্তি অনেক। একটা গুণ ধরে বিচার করলে দেখা যাবে আমি সাদা, আপনি কালো। আবার অন্য দশটা গুণ দিয়ে বিচার করতে গেলে দেখা যাবে আপনি আমি আসলে ভাই ভাই। ক্ল্যাসিফিকেশানের বিপত্তি নিয়ে আরেকদিন বলবো।

তবে ফ্যাসিবাদকে নিয়ে সমস্যা হলো ফ্যাসিবাদ নিজেই একটা লক্ষণ। ফ্যাসিবাদ আসলে কী তা নিয়ে তাই বিস্তর গোলমাল। উইকিপিডিয়া বলছে - ফ্যাসিবাদ হলো একটা চরমপন্থী, জাতীয়তাবাদী ও কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক মতাদর্শ। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক পার্টি কি আজকাল আর নিজেকে ফ্যাসিবাদী বলে ঘোষণা দেয়? উইকিপিডিয়া বলছে ফ্যাসিবাদ নাকি ব্যক্তির চেয়ে রাষ্ট্রকে প্রধান ও মহান করে তোলে এবং সকল মানুষকে একটা একক জাতীয় চরিত্র প্রদানের চেষ্টা করে। সেই চেষ্টায় পূর্বপুরুষের ইতিহাস, ঐতিহ্যের গাঁথা ব্যবহৃত হয়। পিটি ট্রেইনিং দিয়ে, প্রোপাগাণ্ডা মুখস্থ করিয়ে লাইনে আনার চেষ্টা চলে। উপরের চৌদ্দটা পয়েন্ট সেইসবের কতোটা সৎ লক্ষণ কে জানে। তবে হিটলার মুসোলিনি যে এইসব গুণাগুণ প্রচুর দেখিয়েছেন, তাতে তেমন সন্দেহ দেখছি না। যুক্তরাষ্ট্রেও যুদ্ধবাজরা ক্ষমতায় এলে দেশ গেলো দেশ গেলো, জঙ্গিরা এসে খেয়ে নিলো, যুদ্ধ করো, এইসব চলে বেশ খানিকটাই। কথা হলো আমাদের আশে পাশেও কি এইসবের লক্ষণ একেবারেই কম? বিগত কয়েকটি সরকারের আমলে হিন্দুবিদ্বেষ, ভারতবিদ্বেষ, মিলিটারি তোষণ, মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, পুলিশি শাসন যা দেখলাম, তাতে অনুভূত হয় যে বাংলাদেশে এবং পৃথিবীর বহু দেশেই ফ্যাসিবাদি লক্ষণ অল্পবিস্তর বহুকাল ধরেই হয়তো ছিলো। তবে ফ্যাসিবাদের লক্ষণ থাকাটাই আমার কাছে হায় হায় করার মতো বিষয় না যতক্ষণ বিষয়টা নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। কথা হলো আমরা সতর্ক কতোটা আছি? ফ্যাসিবাদ বলতে আমরা আদৌ কী বুঝি?


মন্তব্য

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আমার মনে হয় অনেক অনেক মানুষের অবচেতনেই ফ্যাসিবাদী মনোভাব লুকিয়ে থাকে।
যখন কেউ হাতে ক্ষমতা পায়, তখন সে এই ফ্যাসিবাদী সিস্টেম চালু করতে চায়।

তবে ফ্যাসিবাদের লক্ষণ থাকাটাই আমার কাছে হায় হায় করার মতো বিষয় না যতক্ষণ বিষয়টা নিয়ে আমরা সতর্ক আছি।

একদম ঠিক কথা বলেছেন। লক্ষণ তো অনেক রকমই থাকতে পারে। তবে যতক্ষণ না সেই লক্ষণটা প্রকট হয়ে বাকি সব লক্ষণগুলোকে গিলে ফেলছে, ততক্ষণ অতটা চিন্তিত হবার কিছু নেই।

আমার কাছে ফ্যাসিবাদ হল ক্ষমতালোভী, মানবতাহীন শাসক দ্বারা পরিচালিত 'আমিত্ব'/'অহং' কেন্দ্রিক চরম স্বার্থপরতা ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ফ্যাসিবাদের প্রতিরোধ কেমনে করন যায় বলেন দেখি!

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

বর্তমান পৃথিবীর তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে শাসকের ফ্যাসিবাদ কিন্তু একদিনে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে না। সাধারণ জনগণের নিষ্ক্রিয়তা শাসককে সেই পথ খুলে দেয়। এই নিষ্ক্রিয়তার কারণ হতে পারে ভয়, হতে পারে সংকীর্ণতা। আমি মনে করি প্রথমে প্রয়োজন শিক্ষা। যা সাধারণ মানুষের মনে উদারতা নিয়ে আসতে পারে। তাকে আত্মবিশ্বাস যোগাতে পারে। দ্বিতীয়ত সাহস। যা আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল করবে।

আর শাসকের মধ্যে এক দিয়ে দেখলে কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসিতের মনোভাবেরই প্রকাশ হয়। তাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হল প্রত্যেকের ব্যক্তিগত পরিসরে যে ছোটখাট ফ্যাসিবাদী মনোভাবগুলো বেঁচে থাকে তাদের হটানো। আমরা যদি আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে স্বাধীনভাবে ভাবা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা না দিই, যথাযথ সম্মান এবং গুরূত্ব না দিই তবে একদিন রাষ্ট্রের শাসক যখন আমাদের সাথে সেই আচরণ করবে তা কি খুব বেশি বিসদৃশ লাগবে বা লাগা উচিৎ ?

মন মাঝি এর ছবি

চলুক চলুক

****************************************

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য।

আমাদের পারিবারিক, ধর্মীয় সমাজ কাঠামোটা জবরদস্তিবান্ধব বটে। তাকে আবার ঢালাও পরিবর্তনেরও বিপত্তি অনেক!

ফাহিম হাসান এর ছবি

৮ নাম্বারে এসে গড়াগড়ি দিয়া হাসি

এটা ঠিক ফ্যাসিবাদের কোন চেকলিস্ট নাই। তালিকা করে লক্ষণ বিচার হয়ত সম্ভব না, কিন্তু অমুক-তমুক লক্ষণ হলে সম্ভাবনা বেশি - এই সিদ্ধান্ত তো টানা যায়।

এইটার কী আর কোন পর্ব আসবে? আপনার নিজের কথা পড়তে মন চাইল।

সময় পেলে গুঁতো দিয়েন। ফ্যাসিবাদী সিল মারতে কোন লক্ষণ necessity আর কোন লক্ষণ sufficiency পূরণ করে ছোটখাট আলোচনা করা যায়।

দিগন্ত এর ছবি

আমি আট নম্বর পড়েই সোজা কমেন্টে। এটা কোনো নেসেসারি কন্ডিশন না। কমিউনিস্ট দেশও যথেচ্ছ ফ্যাসিবাদী আচরণ করে থাকে, তার পেছনে ধর্মীয় ইন্ধন না থাকতেও পারে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

বেশ ভালো সাজেশান।

নেসেসারি আর সাফিশিয়েন্ট কন্ডিশানের সংজ্ঞামতে যেসব লক্ষণ ধারণ করলেই নিশ্চিতভাবে ফ্যাসিবাদ বলা যায়, সেগুলো সাফিশিয়েন্ট কন্ডিশান। যেমন, যদি সরকারি গাড়িতে নাৎসী পতাকা দেখলেই নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে ওই সরকারটা ফ্যাসিবাদী, তাহলে নাৎসী পতাকা নিয়ে ঘোরাটা সাফিশিয়েন্ট কন্ডিশান। এর মানে হচ্ছে এটা বলা যে এমন কোনো কেইস সম্ভব না, যেখানে সরকারি গাড়িতে নাৎসী পতাকা উড়ছে, কিন্তু সরকার আসলে ফ্যাসিবাদী না। এইরকম নিশ্চিত কেইস তো পাওয়া কঠিন। লক্ষণীয় যে এর মানে কিন্তু এই না যে ফ্যাসিবাদী সরকার মাত্রই নাৎসী পতাকা নিয়ে ঘুরবেই। এটা কেবল বলছে যে সরকারি গাড়িতে নাৎসী পতাকা উড়তে কেবল ফ্যাসিবাদী আমলেই দেখা সম্ভব।

আর ফ্যাসিবাদী আমলে যেসব লক্ষণ সর্বদা বর্তমান থাকবেই, সেগুলো ফ্যাসিবাদের নেসেসারি কন্ডিশান। যেমন, ফ্যাসিবাদ সরকার মাত্রেই যদি দেশপ্রেমে ঘাটতিঅলা মানুষদের দেশদ্রোহী সাব্যস্ত করার জন্যে ব্যতিব্যস্ত থাকে, তাহলে দেশপ্রেম নিয়ে গুটিবাজিকে ফ্যাসিবাদের নেসেসারি কন্ডিশান বলা যায়। নেসেসিটির সংজ্ঞানুসারে যে তন্ত্রে দেশপ্রেম নিয়ে গুটিবাজি নেই, সেটা নিশ্চিতভাবে ফ্যাসিবাদ হতে পারে না।

পুঁথিগত বিদ্যানুসারে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও কর্তৃত্ববাদকে ফ্যাসিবাদের নেসেসারি কন্ডিশান বলা চলে। কিন্তু শব্দ তো দখল হয়ে যায়। ফ্যাসিবাদের মানেও পাল্টে যাচ্ছে হয়তো। উপরের লিস্টটা অবশ্য ফ্যাসিবাদকে দেখার ক্ল্যাসিকাল উপায়। কিন্তু এর খুব অল্পই হয়তো নেসেসারি কন্ডিশান। আর সাফিশিয়েন্ট কন্ডিশান তো নাই-ই বলতে গেলে। এখন জাতীয়তাবাদ যদি ফ্যাসিবাদের নেসেসারি কন্ডিশান না হয়, তাহলে বাকি থাকে কী? কেবল কর্তৃত্ববাদ? ওর জন্যে তো কর্তৃত্ববাদ শব্দটাই আছে।

প্রথাগতভাবে ফ্যাসিবাদের আরো নেসেসারি এলিমেন্ট আছে। ফ্যাসিবাদে কর্তৃত্ববাদী আচরণটা আসবে সরকারের তরফ থেকে। আর জনমনে থাকবে তার প্রতি সমর্থন। অর্থাৎ সরকার কর্তৃত্ববাদী কিন্তু জনগণের তাতে ছিঁটেফোঁটাও সমর্থন নেই, তাকে প্রথাগতভাবে ফ্যাসিবাদ বলা হয় না।

ফলে মোটের উপর দাঁড়াচ্ছে উগ্র জাতীয়তাবাদ, সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণ ও জনগণের সেটার প্রতি অঢেল সমর্থন।

এখন অনেকে প্রশ্ন করবে তখন, আমার বস আমার উপর কর্তৃত্ববাদী আচরণ করে, এটা কি ফ্যাসিবাদ নয়? আমার দেশের উপর সাম্রাজ্যবাদীরা হামলে পড়েছে, আগে অস্ত্র নিয়ে, এখন টেকাটুকা নিয়ে, এটা কি ফ্যাসিবাদ নয়? তখন কী করবেন? কেউ শব্দের প্রতি লোভ করলে তাকে শব্দ ধার দিয়ে দিবেন? নাকি পাঠশালা খুলে শিক্ষা দিতে বসবেন? নাকি মহান উত্তরাধুনিক শাব্দিক বিনির্মাণের সম্মানে বলে দিবেন, হ্যাঁ ওটাও ফ্যাসিবাদ চোখ টিপি

মন মাঝি এর ছবি

তখন কী করবেন? কেউ শব্দের প্রতি লোভ করলে তাকে শব্দ ধার দিয়ে দিবেন? নাকি পাঠশালা খুলে শিক্ষা দিতে বসবেন? নাকি মহান উত্তরাধুনিক শাব্দিক বিনির্মাণের সম্মানে বলে দিবেন,

'রেসিজম', 'রাজাকার'- এইসব শব্দ নিয়ে আমার এইরকম একটা আপত্তি আছে। সে হিসেবে ধরলে ইউনিফর্মিটি বা কনসিস্টেন্সির যুক্তিতে কোন ক্ষেত্রেই ধার দেয়াটা হয়তো গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে সাধারণভাবে বললে টেনট্যাটিভলি আমার কাছে ফ্যাসিবাদের মৌলিক অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হল -

১। চরম/অনমনীয় পরমত অসহিষ্ণুতা;
২। যে কোন দ্বিমত বা দ্বিপথের ক্ষেত্রে জবরদস্তির প্রয়াস;
৩। দ্বিমতাবলম্বী বা দ্বিপথাবলম্বীদের বিমানবিকীকরণ - demonisation, dehumanisation, degradation - এক্সপ্লিসিটলি বা ইমপ্লিসিটলি, যেভাবেই হোক না কেন;
৪। সার্বিক রেজিমেন্টেশন ও ইউনিফর্মিটির জবরদস্তিমূলক প্রয়াস - বাস্তব বা/এবং মতাদর্শিক;
৫। ব্যক্তির প্রাইভেট স্পেস বা জগৎকে নিয়ন্ত্রনে রাখার প্রবণতা।

উপরের অন্তত প্রথম চারটা শর্ত পূরণ করলেই মনে হয় অন্তত পুঁথিনিরপেক্ষভাবে হলেও 'ফ্যাসিবাদ' বলা যেতে পারে। এই ৪ বা ৫ টা শর্ত বাদে বাদবাকি আদর্শ-উদ্দেশ্য-পদ্ধতি-প্রকরণ যে কোন কিছুই হতে পারে - এমনকি আপাতদৃষ্টে আধুনিকতা বা প্রগতিশীলতার তক্‌মাও যদি থাকে।

--------------------------------
তবে একটা প্রশ্ন আপনার কাছে, আপনার মতে বনসাই-কাম-গ্রীনহাউজ -টাইপ রাজনৈতিক সিস্টেমকে কি ফ্যাসিবাদি বলা যায়?

****************************************

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

হুমম। আপনি কি উগ্র জাতীয়তাবাদ ফ্যাসিবাদের থেকে বাদ দিলেন? তাইলে কিন্তু অনেক সমাজতান্ত্রিক রিজাইমও ফ্যাসিবাদের আওতায় পড়ে। যেমন আমি ক্যাস্ট্রোর কিউবারে ফ্যাসিবাদ বলি না। পুঁথিগত কারণে বলি না। কিন্তু কর্তৃত্ববাদ কিংবা বনসাই-কাম-গ্রীনহাউজ তো শুধাই-ই। এখন বনসাই-কাম-গ্রীনহাউজ টাইম সিস্টেম তো প্রায় সময়েই আপনার প্রথম চারটা শর্ত পূরণ করে ফেলে। বনসাই তৈরিতে সহিষ্ণুতা কই, দ্বিতীয় পথের সন্ধান কই, জবরদস্তি ছাড়া আছে কী? ফলে ক্যাস্ট্রোর কিউবারেও ফ্যাসিবাদ শুধানো সহজ করে ফেললেন কি? চিন্তিত

মন মাঝি এর ছবি

হুম্‌! চিন্তায় ফেলে দিলেন। আমিও ক্যাস্ট্রোর কিউবারে ঠিক ফ্যাসিবাদ বলি না। চিন্তিত

আসলে 'উগ্র জাতীয়তাবাদ'-টা বাদ দেয়ার অন্যতম কারন - আমার মাথায় তখন স্টালিনিস্ট আর নর্থ কোরিয়ান কমিউনিজমের কথা ঘুরতেছিল। এই শেষের দুইটা আমার কাছে 'উগ্র জাতীয়তাবাদ'-এর থেকে খুব দুরবর্তী কিছু মনে হয় না -- প্রায় ইন্টারচেঞ্জ্যাব্‌লই বরং (আপনার দ্বিমত থাকলে বলবেন)। নর্থ কোরিয়াকে শুধু ঘোষিত রাষ্ট্রীয়/রাজনৈতিক মতাদর্শেই নয়, প্রায় পুঁথিগতভাবেই বোধহয় (?) কাল্টীয়ত্ব (যেটা নাৎসিবাদেও বেশ জোরালোভাবে ছিল মনে হয়) ও টেরিটোরিয়ালিত্ব-সহই উগ্র জাতীয়তাবাদের যমজ ভাই মনে হয়। আর স্টালিনিজমে তাত্ত্বিকভাবে টেরিটোরিয়ালিত্ব কতটুকু ছিল জানি না, কিন্তু বাস্তব-চর্চায় তাতে খুব একটা ঘাটতি ছিল বলে মনে হয় না। তবে তার চেয়েও বড় কথা, স্টালিনিজমের তত্ত্বচর্চাটাই বলতে গেলে উগ্র জাতীয়তাবাদের মত। কিম্বা অন্যভাবে বললে হয়তো - চরম কর্তৃত্ববাদী ও সেলফ-রাইটিয়াস এবং চালিকা-তত্ত্ব বা রাষ্ট্রীয়-মতাদর্শের ক্ষেত্রে সহিংস ও নিবর্তনমূলক ভাবে উগ্র এক্সক্লুসিভিজম ও সুপ্রিমেসিজমের লক্ষণযুক্ত - যা কিনা উগ্র জাতীয়তাবাদেরও লক্ষণ। আর এই শেষ দুই বৈশিষ্ট্যকে আমার লিস্টের ২ ও ৩ নং আইটেম মনে হয় কাভার করতে পারে। এই জন্যই আলাদাভাবে কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ বা সিস্টেমের নামোল্লেখ করিনি। বরং ন্যূনতম কিছু মৌলিক লক্ষণে রিডিউস করতে চেয়েছিলাম - যা একত্রে ফ্যাসিবাদের সমার্থক হয়।

তবে হ্যাঁ, ২ ও ৩ নং পয়েন্ট একান্তই সেটা কাভার করতে না পারলে, ৫ নং পয়েন্টটা উড়িয়ে দিয়ে তার জায়গায় (বা তার পরে) আমরা 'সহিংস বা জবরদস্তিমূলক ভাবে উগ্র এক্সক্লুসিভিজম ও সুপ্রিমেসিজমের লক্ষণযুক্ত' - এই বাক্যাংশটা একটা নতুন পয়েন্ট হিসেবে যোগ করতে পারি হয়তো। এইভাবে বললে হয়তো স্টালিন-কোরিয়া টাইপ থেকে ক্যাস্ট্রো-টাইপ ফিল্টার আউট করা যায়। আপনি কি বলেন? হাসি

নতুন লিস্টিটা হয়তো এরকম হতে পারেঃ--

১। চরম/অনমনীয় পরমত অসহিষ্ণুতা;
২। যে কোন দ্বিমত বা দ্বিপথের ক্ষেত্রে জবরদস্তির প্রয়াস;
৩। দ্বিমতাবলম্বী বা দ্বিপথাবলম্বীদের বিমানবিকীকরণ - demonisation, dehumanisation, degradation - এক্সপ্লিসিটলি বা ইমপ্লিসিটলি, যেভাবেই হোক না কেন;
৩। সহিংস বা জবরদস্তিমূলক ভাবে উগ্র এক্সক্লুসিভিজম ও সুপ্রিমেসিজমের (শ্রেষ্ঠতাবাদের) লক্ষণযুক্ত;
৫। সার্বিক রেজিমেন্টেশন ও ইউনিফর্মিটির জবরদস্তিমূলক প্রয়াস - বাস্তব বা/এবং মতাদর্শিক;
এবং টেনটেটিভলি --
৬। ব্যক্তির প্রাইভেট স্পেস বা জগৎকে নিয়ন্ত্রনে রাখার প্রবণতা।

****************************************

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

সুপ্রিমেসিজম দিয়ে ক্যাস্ট্রোকে বাঁচাতে পারলেন বটে। এই শব্দের দ্বারা ক্যাস্ট্রো কেনো কর্তৃত্ববাদ হলেও ফ্যাসিবাদ নয় বোঝা যায়। সুপ্রিমেসিজম শব্দটা ফ্যাসিবাদকে জেনারালাইজও করে বটে। উগ্র জাতীয়তাবাদ সুপ্রিমেসিজমের একটা বিশেষ উদাহরণ বলা চলে।

সুপ্রিমেসিজম অর্থে হয়তো স্ট্যালিন কিংবা উত্তর কোরিয়াকে হয়তো ফ্যাসিবাদে ফেলা চলে। তবে প্রথাগতভাবে কিন্তু সমাজতন্ত্রের টেক্সটে ফ্যাসিবাদ চরম ঘৃণ্য পাপ। নিজেরা প্রায় সকল গুণে ফ্যাসিবাদ তুল্য হলেও নিজেদের শত্রুকে তারা ফ্যাসিবাদী আখ্যায়িত করবে। হিটলারের জার্মানিতে বলশেভিকরা ঘৃণ্য ছিলো, স্ট্যালিনের সোভিয়েতে তেমন ঘৃণ্য ছিলো ফ্যাসিবাদ। কিন্তু স্ট্যালিনের আচরণ যে সত্যিকার অর্থে ফ্যাসিবাদেরই অপর রূপ ছিলো, সেটার সাক্ষ্য স্বয়ং ফ্যাসিবাদের প্রধান জনক মুসোলিনির বাণী। তিনি একবার বলেই বসেন যে স্ট্যালিন তার কর্মে বলশেভিকবাদকে ধ্বংস করে একজন সত্যিকারের ফ্যাসিবাদী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। বুঝুন ঠেলা!

দুই মাত্রায় রাজনীতিক মতাদর্শের পট নিয়ে আমার লেখাটা দেখেছেন? ওখানে কিন্তু ফ্যাসিবাদী বা অফ্যাসিবাদী উভয় কর্তৃত্ববাদ একদম নিচের বিন্দুর কাছাকাছি থাকবে। উভয়েরই কমন কিছু দগদগে ত্রুটি আছে, যেটা ওই পটের নিচের বিন্দুটি দ্বারা ক্যারাক্টারাইজড। সমাজতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ নিচের বিন্দুর কিঞ্চিৎ বামে হেলে থাকে, আর ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদ থাকে কিঞ্চিৎ ডানে হেলে। দুটোর মধ্যে কোনটা বেশি খারাপ? পলপটকেও কি ফ্যাসিবাদী ভাবা যায়?

ফ্যাসিবাদ হয়তো বেশি খারাপ। কিন্তু সমাজতন্ত্রীরা অনেক সময় ফ্যাসিবাদী বনাম সমাজতন্ত্রী-অফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদকে একটা ফল্স ডিলেমা হিসেবে উপস্থাপন করে। তারা বলতে চায় যে যেহেতু ফ্যাসিবাদ বেশি খারাপ, তাই অফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদই একমাত্র উপায়। মানে কর্তৃত্ববাদের তাদের কাছে বিকল্প নাই। জোর করা ঠিক আছে। মতপার্থক্য হলো - কী নিয়ে জোর করা হচ্ছে, তার পেছনের দর্শনটা নিয়ে।

বাপ্পীহায়াত এর ছবি

প্রথম ৩টা কিন্তু কম বেশী আমার মাঝেও আছে ইয়ে, মানে... তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে (মনে হয় আরও অনেকের মাঝেও আছে)

১। উগ্র জাতীয়তাবাদ: স্পেশালি পাকিস্থান অথবা ভারতের বিরূদ্ধে বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলার সময় দেঁতো হাসি
২। মানবাধিকার: ৭১-এর যুদ্ধঅপরাধী'দের আবার মানবাধিকার?
৩। কমন শত্রু: আবার জিগস দেঁতো হাসি

তাহলে কি আমি-ও ফ্যাসিবাদি হয়ে যাচ্ছি?

জোকস অ্যাপার্ট - আপনি কি জানেন সচলে আপনার লিখার টপিকগুলো খুবই ব্যাতিক্রমধর্মী? (ভাল অর্থে)

এই লিখাটাও ব্যাতিক্রমধর্মী এবং পড়ে ভাল লাগল

নেক্সট লিখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম চলুক

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের ব্যপারে মানবাধিকার কথাটা একটা লজিক্যাল ফ্যালাসি। কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে না কিন্তু, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার না করাটাই বরং মানবাধিকার লঙ্ঘন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনার লেখা সবসময় পড়ি, কিন্তু বুদ্ধিসুদ্ধি কম বলে আলোচনায় তেমন একটা অংশ নেই না। দূরে থেকে দেখে যাই আলোচনা। এটা যে পড়েছি জানিয়ে গেলাম। আলোচনা চলুক। বরাবরের মতই দূর থেকে দেখতে থাকব হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ক্রেসিডা এর ছবি

আমারো সেম কথা। চলুক

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

সে কী? অ্যাঁ

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আমিও আপনার দলেই, ভাই। হাসি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

এইগুলাতো রাষ্ট্রের ভিত্রে থাইকাই কৈলেন। মানবজাতির সার্বিক হেদায়তের উদ্দেশ্যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ কো?

আবার বিজ্ঞাম যে সকলের অগ্রগতির লাইগা সকলের পক্ষে ডেঞ্ছাড়াস নাটবল্টু নাড়তেছে ... ফ্যাসিবাদীরা নাকি তাতে ডেঞ্ছাড় ডেঞ্ছাড় কৈরা চিল্লায়, বুঝে না সাহসী বিজ্ঞামদা তাগোর ভালোর লাইগাই এইসব করে। এইদিকে দুষ্টলুকে কয়, ব্যক্তিরে ব্যক্তির জ্ঞানগম্যির ভিত্রে থাইকা সিদ্ধান্ত দেয়া অধিকার হরণ কৈরা, তার উপ্রে 'সকলের ভালোর লাইগা' ধাঁচের ফতোয়া চাপায়া দেয়াও ফ্যাসিবাদ। কৈ যাই।

আবার ন্যাটিভগো রিলেজিনও মিশনারিগো ভাল্লাগেনাই ... তারা উচ্চতর সত্য প্রতিষ্ঠা করছে। উচ্চতর সত্য গিলতে গিলতে তাবৎ দুনিয়া কলোনি হয়া গেলগা ... এখন অবশ্যি কলোনি লাগে না ... রংসাদাকরণের কিরিম বেঁচতেছে বিনয়ে, অস্ত্রের জোরে না ...

বিনয়ে ফ্যাসিবাদ নাই।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

তারেক অণু এর ছবি

ডুপ্লি

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনে কি বলতে চান ওগুলার জন্যে শব্দের অভাব পড়ছে? ক্যাস্ট্রোরে যদি বলি ঞলিবারেল, তাইলে কি হবে?

বা ধরেন ঞলিবারেলের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার সময় কি উপরের লক্ষণগুলাঅলাদের নিয়েও একটু সেকটু আলোচনা করেন, নাকি করার দরকার থাকে? চিন্তিত

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

নাহ ... তয় চৌদ্দটা জিনিস এক ছাতার তলে আইছে দেইখা উৎসাহ পাইলাম হাসি


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

তারেক অণু এর ছবি

ভাল লাগল

আচ্ছা খেয়াল করে দেখেছেন কি ফ্যাসিস্ট বলতে হিটলার মুসোলিনিই চলে উদাহরণ হিসেবে, কিন্তু এত এত বছর জেঁকে বসে থাকা ফ্রাঙ্কোর কথা যেন ইউরোপ ভুলেই গেছে!

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

মূল লেখক কিন্তু ফ্রাঙ্কোর কথাও কইছেন, ওনার লেখার প্রেরণা হিসাবেঃ

I will consider the following regimes: Nazi Germany, Fascist Italy, Franco’s Spain, Salazar’s Portugal, Papadopoulos’s Greece, Pinochet’s Chile, and Suharto’s Indonesia. To be sure, they constitute a mixed bag of national identities, cultures, developmental levels, and history. But they all followed the fascist or protofascist model in obtaining, expanding, and maintaining power.

দুর্দান্ত এর ছবি

১। পুরো ১৪টা না হলেও অনেকগুলোই কিন্তু মহামানব হিসাবে চিহ্নিত অনেকের সাথে মিলে যায়। মোহাম্মদ, দালাইলামা, গান্ধী, ম্য়ান্ডেলা, কাস্ত্রো, আরাফাত, ইউনুস, মুজিব এর কথা এখন মনে আসছে।

২। ফাসিস্ম এ তো সামাজিক ন্য়ায়বিচার নেই। সেই হিসাবে সামাজিক ন্য়ায়বিচারের ১৪ দফা নিয়ে আলাদা আলোচনা হতে পারে, যে কিভাবে একটি সমাজে সামাজিক ন্য়ায়বিচার আছে বলে জানা যায়। আরেকটু পিছিয়ে গিয়ে সামাজিক ন্য়ায়বিচার নিজে কতটুকু ন্য়ায়সংগত, সেরকম আলোচনাও সম্ভব (কান্ট দ্রষ্টব্য়) - কিন্ত অতদুর যাবার লোভ হয়নি কখনো। রলস এর সামাজিক চুক্তি ও ব্য়াক্তিস্বআধীনতার আধারগুলোকে যদি মাপকাঠি ধরি, তাহলে দেখবো আপনার লেখা ১৪ দফার সাথে সেইসব আধারগুলোর কম্প্লিমেন্টারি সম্পরক। এদিকের একটি ঘটকে ওদিকের একটি ব্য়াহত হয়, আবার ওদিকে একটা সরিয়ে নিলে এদিকের একটা খেলাপ হবার সম্ভাবনা তৈরী হয়।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

১৪ দফাটা কোন পাতায়? বইটার জন্যে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

দুর্দান্ত এর ছবি

"সামাজিক ন্য়ায়বিচারের ১৪ দফা" কথাটাকে আমি ব্য়াবহার করেছি আপনার এই পোস্টের আদলে। এখানে যেমন করে আপনি ফ্য়াসিস্ম এর ১৪ দফার কথা বললেন, আমি ভাবছিলাম এভাবেই ১৪ (আরবিট্রারি) টা দফা ন্য়ায়বিচারের ক্ষেত্রেও নিশ্চই থেকে থাকবে।
রলসের এই বইটা মূলত সামাজিক ন্য়ায়বিচার নিয়ে আলোচনা আছে। ৩২ অনুচ্ছেদে স্বআধীনতা/উদারতার কয়েকটা আধার নিয়ে কিছু কথা আছে - যেখান থেকে ১৪ না হলেও আধ ডজন দফা বের করে নেয়া যাবে। রলসেরই আরকটা বই 'পলিটিকাল লিবারালাইজম' এ তার নিজের ও সেখানে উল্লেখিত অন্য়দের কথাগুলোতে সামাজিক ন্য়ায়বিচারের আরো কতগুলো উপসরগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা (তার নিজের ও অন্য়ের দেয়া তত্ব) আছে, যেখান থেকে আরো কিছু দফা বেরিয়ে আসবার কথা।

ওপরে আপনার একটা প্রশ্ন চোখে পড়ল। ফ্য়াসিস্ম রুখবেন কিভাবে? নিরদিষ্ট করে ফ্য়াসিজম নয়, যেকোন সাধারন সামাজিক অবিচার রুখতে আগে অবিচার যে হচ্ছে সেটা সমাজের একটি বড় (সবাইকে বুঝতে হবে, এমনটা জরুরী নয়) অংশকে উপলব্ধি করতে হবে। আমাদের দেশের কথা ধরি, সেখানে রাজনীতির খবর এখন বহুল প্রচারিত, কিন্তু সেই খবর দেশের বেশীরভাগ মানুষ তার নিজের ওপরে করা অবিচার চিনতে ব্য়াবহার করছে, নাকি সেটা দিয়ে সে তার খবর ভোগ-তাড়না মেটাচ্ছে (আগের দিনে চিত্রবাংলা যেটা করতো) সেটা ভাবার বিষয়। মিডিয়ায় যারা খবর হচ্ছেন ও যারা এই খবর পরিবেশন করছেন ও এইসব খবরগুলো নিয়ে যারা ভাববার সময় ও সুযোগ পাচ্ছেন - আমার মনে হয় সেই সংখ্য়াটা এখনো লঘু। এর পরিবর্তনের দুটো রাস্তা দেখি। এক আরো বেশী বেশী করে খবর ছড়আতে হবে, দুই, আরো বেশী বেশী করে সেই খবরের প্রতিক্রিয়া ছড়আতে হবে। ব্লগ এই দুটোতেই বেশ দরকারি ভূমিকা রাখছে। নতুন মাধ্য়ম ক্রমে আরো নতুন রাস্তা খুলবে বলে আশা রাখি।

সেই বড় অংশটির আকার ও কিভাবে সেই বড় অংশের বাক্সে ঘটমান অবিচারের 'পয়সা-পতন' ঘটবে ও সেটা কিভাবে অবিচারের প্রতিরোধ গড়বে, সেটা নিয়ে ভিন্ন আলোচনা সম্ভব।

অরফিয়াস এর ছবি

চলুক

এই প্রত্যেকটি পয়েন্ট আলাদা আলদাভাবে বিস্তারিত আলোচনার আগ্রহ জাগায়। শাসকগোষ্ঠির শোষনের হাতিয়ার হিসেবে এদের নানাবিধ ব্যবহার এবং বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপটে দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রগুলো ভিন্ন| পরে একটা বিস্তারিত লেখা দিতে পারেন, ভেবে দেখবেন|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

দুষ্ট লোকে যাই বলুক, লক্ষণগুলো কিন্তু আসেপাশে দেখা যায়। পোস্টটা ভালো লাগলো। চলুক

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তানিম এহসান এর ছবি

পোস্ট ভাল লাগলো।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ভালো লাগলো চলুক
বিস্তারিত আলোচনা হতে পারত। এখনো হতে পারে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

কথা সইত্য। উপরে কিছু করছি। ফ্যাসিবাদ এখনো বোঝার চেষ্টায় আছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।