শুভাশীষ দাশ ক্ষুদ্রঋণের একটি তাত্ত্বিক সমালোচনা করেছেন ওনার “ক্ষুদ্রঋণের নিওলিবারেল এজেন্ডা” লেখায়। সেখানে ক্ষুদ্রঋণকে নিওলিবারেল এজেন্ডার অংশ হিসেবে দেখিয়েছেন। নিওলিবারেলিজম ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কথা বলে, “ক্ষুদ্রঋণও ঠিক একইভাবে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কথা বলে।” নিওলিবারেলিজম এভাবে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের কথা বলে গণ-উন্নয়নের খাতকে সরকার থেকে সরিয়ে ব্যবসায়ীদের হাতে “জিম্মি” করে রাখতে চায়। এতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, নিওলিবারেলিজম আর ক্ষুদ্রঋণ তিনটাই শুভাশীষ দাশের কাছে একই সুতোয় সন্দেহযুক্ত হয়।
নিওলিবারেলিজম একটি এজেন্ডা-ভিত্তিক বৈশ্বিক প্রপঞ্চ, এবং সেটার অংশ হিসেবে সে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কথা বলে, যেমন গ্রামীণ ব্যাংক তার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দারিদ্র বিমোচনের কথা ফলাও করে। একটা কার্যক্রমকে তার দাবির ভিত্তিতে নয়, তার ফলাফলের ভিত্তিতে যাচাই করতে হয়। গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র বিমোচনের কথা বলে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রকৃত উদ্দেশ্যই তা। আবার এমনও নয় যে দারিদ্র বিমোচন ভ্রষ্ট ধারণা। তেমনি নিওলিবারেলিজম ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কথা বলে, তার মানে এই নয় যে তারা সেই আদর্শকে কেন্দ্র করেই তাদের সব কাজ করে থাকে। কিংবা এও নয় যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ভ্রান্ত ধারণা। অন্তত নিওলিবারেলিজমের কাল্টিজমের ফলাফল থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় না।
তবে নিওলিবারেল এজেন্ডার সাথে ক্ষুদ্রঋণের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ার জন্যে শুভাশীষ দাশের ধন্যবাদ প্রাপ্য। ফলে নিওলিবারেল থিংকট্যাঙ্ক ক্যাটো ইন্সটিটিউট যখন “মুক্তবাণিজ্যের কারণে মিলিয়নের দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে” বলে উদ্যাপন করে, সেখানে মুহাম্মদ ইউনূসকে ফিচার করাটা বোধগম্য হয়। তথাপি সেই ক্যাটো ইন্সটিটিউটই অধুনা বুঝে উঠতে শুরু করেছে যে ক্ষুদ্রঋণ হয়তো তেমন কাজে দিচ্ছে না। তারা উপলব্ধি করতে শুরু করে, দারিদ্র্যে জর্জরিতের হয়তো আরো ঋণের বোঝার প্রয়োজন নেই। একটা সমাজে কার্যকর ঋণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে একটা প্রাথমিক উন্নয়নের পরে। আর সাধারণ্যে সেই ঋণ মূলত ভোগের কাজেই ব্যয় হয়, ব্যবসায়ী উদ্যোগের কাজে নয়। এবং তাদের এইসব সুবুদ্ধির উদয় হয় মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তির পরে। তবে নিওলিবারেল থিংকট্যাঙ্কের কাছে তেমনটাই কাম্য। এই নিওলিবারেল তথা শিকাগো স্কুল অব ইকোনমিক্সের মিল্টন ফ্রিডম্যানপন্থীরা বিগত অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত একটুও আঁচ করতে পারে নি কী ঘটতে চলেছে। যেখানে অস্ট্রিয়ান স্কুল অব ইকোনমিক্সের স্কলাররা অনেক আগে থেকেই বিপর্যয় আসন্ন বলে পূর্বাভাস দিয়ে আসছিলো।
অস্ট্রিয়ান স্কুলপন্থীরা ক্ষুদ্রঋণের ব্যাপারেও বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন করতে দেরি করে নি। অস্ট্রিয়ান স্কুল কট্টরভাবে মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে। তথাপি মিল্টন ফ্রিডম্যানের সাথে তাদের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। অস্ট্রিয়ান স্কুলপন্থীরা মিল্টন ফ্রিডম্যানকে মুক্ত বাণিজ্যের নকল যোদ্ধা মনে করে। যদিও মুক্ত বাণিজ্য বলতে লোকে মিল্টন ফ্রিডম্যানকেই চেনে। কারণ এর নামেই তার যতো যজ্ঞ সাধন হয়েছে। তেমনি মুক্ত-বাণিজ্য বিরোধীরা ক্ষুদ্রঋণকে মুক্ত বাণিজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে সনাক্ত করে ধুয়ে দিলেও, অস্ট্রিয়ান স্কুল বলছে যে এটা কোনো প্রকার বাণিজ্যই নয়। তাও সেটা আজকের কথা নয়। ১৯৯৫ সনে অস্ট্রিয়ান স্কুলের জেফ্রি টাকার মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পকে মুক্ত বাণিজ্য ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য উভয়ের জন্যে ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্ণিত করেছিলেন তার "ক্ষুদ্রঋণ কাল্ট" প্রবন্ধে। তিনি ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পকে সম্বোধন করেছিলেন একটা “কাল্ট” হিসেবে।
১৯৯৫ সন। সেটা এমন একটা সময়ের কথা, যখন মুহাম্মদ ইউনূস ছিলেন সবচেয়ে পলিটিকালি কারেক্ট চরিত্রের একটি। এবং ইউনূসকে নিওলিবারেল ঘরানার বলে অধুনা চিহ্ণিত করা হলেও ওনার ক্ষুদ্রঋণের বৈশ্বিক উত্থান ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থী তথা ডেমোক্র্যাটদের (ক্লিনটন দম্পতিদের) হাত ধরে। কেনো নয়? যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠির উন্নয়ন নিয়ে মাথা ঘামানোর “ব্র্যান্ড”টি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দখলে। সেখানে একজন ব্যাংকার বলছেন, “পুঁজি কেবল ধনীলোকের কুক্ষিগত থাকার বিষয় নয়! যে অর্থনৈতিক অবস্থাতেই মানুষ থাকুক না কেনো, ঋণলাভ করা তার একান্ত মৌলিক অধিকার।” এ-তো দেখি একেবারে তাদের ঘরের লোক! প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আগে আর কে এতোটা দরদ দিয়ে দরিদ্র মানুষের কথা বলতে পেরেছে? আর পলিটিকালি কারেক্ট মুহাম্মদ ইউনূস একজন “ব্যাংকার”ও, বোধ করি সে কারণে রিপাবলিকানদের সমর্থন লাভেও তাকে বেগ পেতে হয় নি।
জেফ্রি টাকারের লেখা থেকে জানা যায়, ক্লিনটন প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প তখন যুক্তরাষ্ট্রে জেঁকে বসতে শুরু করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকারদেরকে ইউনূসের মডেল কপি করতে বলা হচ্ছে। প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ধ্যাতানী তখন আসন্ন। তোমরা লাভের জন্যে ব্যাংকিং করছো? আর দেখো ইউনূস সাহেব কোনো জামানত ছাড়াই দরিদ্রদের ঋণ দিয়ে তাদের দারিদ্র্য বিমোচন করে ফেলছে। তোমরাও লাইনে আসো।
কিন্তু কথা হচ্ছে, গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল যদি সত্যিই এতো সফল ও লাভজনক ব্যবসা হয়, তাহলে সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেনো আগেই এর কথা ভাবতে পারে নি - জেফ্রি টাকার প্রশ্ন করেন। গ্রামীণ ব্যাংক যদি জামানত ছাড়া দরিদ্র নারীকে ঋণ দিতে পারে, সিটিকর্প কেনো পারে না? তারা কেনো দরিদ্রদের হাতের লাগাল থেকে তাদের টাকা পয়সা দূরে সরিয়ে রেখেছে? এর পেছনে কি - বামপন্থীরা যেমনটা বলে আসছে - লোভ, সনাতন প্রথা কিংবা বর্ণবাদ জড়িত? জামানতের অভাব কি স্রেফ একটা ছুতা? কিন্তু জেফ্রি টাকার বলছেন, গ্রামীণের মডেল যদি সত্যিই এতোটা লাভজনক হতো, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সেটা কপি করার জন্যে নিশ্চয়ই সরকারের পক্ষ থেকে মূলো দেখানোর বা চাপাচাপির করার দরকার পড়তো না। এর বহু আগেই তারা এই ব্যবসায় নেমে পড়তো। গ্রামীণ ব্যাংক যেমনটা দাবি করে যে তাদের ঋণের ৯৮%ই আদায় হয়ে যায়, তেমনটা যদি সত্যিই হয়, তাহলে ব্যাংকাররা বহু আগেই নিশ্চয়ই উপলব্ধি করে উঠতো যে দরিদ্ররা ৯৮% ঋণযোগ্য। তারা নিশ্চয়ই আজকের মতো এরকম ক্রেডিট রেটিং আর জামানত ব্যবস্থা নিয়ে পড়ে থাকতো না।
কিন্তু জেফ্রি টাকার ফাঁস করছেন যে, গ্রামীণ কোনো ব্যবসা নয়, এটা কোনো ব্যাংকই নয়। গ্রামীণের সম্পদের মাত্র ৩% আসে তার গ্রহীতাদের আমানত থেকে। গ্রামীণ ব্যাংক মূলত চলে বিভিন্ন সরকার আর আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশাল আকারের অনুদান থেকে। এটার নিজেকে চালানোর মতো নিজস্ব কোনো ব্যবসায়িক মডেল নেই। ইউনূস কোনো স্বাধীন উদ্যোক্তাও নন। তিনি বরং তার নিজের ব্যক্তিগত সম্পদ ও উপরতলার কানেকশনকে দেদারসে ব্যবহার করে অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছেন। জেফ্রি টাকারের ভাষায়,
“গ্রামীণ ব্যাংক এক টাকাও ধার দেওয়া শুরু করে নি, তখনি ইউনূস সরকারের মাধ্যমে তার কার্যক্রমের ৬০% ভাগের বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলেন। জাতিসংঘের কৃষি উন্নয়নের আন্তর্জাতিক ফান্ড গ্রামীণকে ৩৪ লক্ষ ডলার প্রদান করেছিলো। অনুদান ও ভর্তুকি এসেছে নরওয়ে, সুইডেন, কানাডা, জার্মানির সরকার, এমন কি যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ড ফাউন্ডেশন থেকে। আইএমএফ আর বিশ্বব্যাংকের কথা তো বলাই বাহুল্য।”
আর অন্য অনেকে গ্রামীণকে অর্থ সাহায্য দিয়েছে অতি নিম্নহারের সুদঅলা ঋণের মাধ্যমে (২%)। গ্রামীণ সেই টাকা নিয়ে আবার অন্য ব্যাংকে রেখে উঁচু হারে সুদ আদায় করেছে। সুদের লাভটা খাটিয়েছে ব্যাংকে। সাধারণ কোনো নাগরিক ঋণ নিয়ে এমনটা করলে সেটা নেহায়েত অসাধু কাজ হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের জন্যে সেটা করাটা জায়েজ। এরপর গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যকারিতা নিয়ে আর কার সন্দেহ থাকতে পারে?
ঋণের ৯৮% ভাগ কীভাবে উঠে আসে, সেটাও ব্যাখ্যা করেছেন জেফ্রি টাকার। গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রহীতাদের নিয়ে পাঁচ জনের একটা সেল গঠন করা হয়, এবং ভবিষ্যতের বড় বড় ঋণের দায় প্রযোজ্য হয় পুরো সেলের উপরে। ফলে সেলের একজন যদি টাকা ফেরত না দেয়, সেলের অন্যেরা হয় তাকে টাকা দেওয়ার জন্যে চাপ দেয়, নয়তো নিজেদের থেকে দিয়ে দিতে বাধ্য হয়। না হলে তারা নতুন ঋণ নিতে পারে না। ফলে যেভাবেই হোক, গ্রামীণের টাকা ফেরত পাওয়া নিশ্চিত হয়।
এই গেলো ব্যবসা ও ব্যাংক হিসেবে গ্রামীণের ইতিকথা। এটা যে আসলে ব্যাংকও নয়, আবার ব্যবসাও নয়। নিজেকে চালানোরই এর সামর্থ্য নেই।
এবার আসা যাক ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কথায়। শুভাশীষ দাশ বলেছেন ক্ষুদ্র ঋণ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কথা বলে। জেফ্রি টাকার গ্রামীণের বিরুদ্ধে করেছেন ঠিক উল্টো অভিযোগ। গ্রামীণ ব্যাংক কেবল ঋণই দেয় না, সে তার গ্রহীতাদের কাছ থেকে একটা গোষ্ঠিবাদী কাল্টিজম আশা করে। গ্রামীণ আশা করে, গ্রহীতা তার ব্যক্তি জীবন ব্যাংকের কর্মচারীদের কাছে গচ্ছিত রাখবে। ইউনূসের ভাষায় - “গোপনীয়তা মিথ্যার জন্ম দেয়।” ‘ব্যক্তিবাদের’ বিরুদ্ধে সোচ্চার ‘যোদ্ধা’ মহাজন ক্যাস্ট্রোও এতো অল্প শব্দে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন কিনা সন্দেহ!
গ্রামীণ ব্যাংকের “ষোল সিদ্ধান্ত” পড়লে অবাকই হতে হয়। কোথায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য? কীসের কী? এই ষোল সিদ্ধান্তের কয়েকটা এমন -
“ঐক্য কর্ম শৃঙ্খলা, এই আমাদের পথচলা।”
“জরাজীর্ণ বাসায় আমরা বসবাস করবো না। নিয়মিত বাসা মেরামত করবো এবং যতো দ্রুত সম্ভব নতুন বাসা বানানোর চেষ্টা করবো।”
“অধিক আয়ের নিমিত্তে আমরা যৌথভাবে বড় বিনিয়োগ করবো।”
“কোনো কেন্দ্রে যদি শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, আমরা সেখানে গিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করবো।”
“সকল সামাজিক কাজে আমরা গোষ্ঠিবদ্ধভাবে অংশ নিবো।”
হ্যাঁ, এই ষোল দফাতে “ছেলের বিয়েতে যৌতুক নেব না”, “মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দেব না”, “না থাকলে টিপকল, সিদ্ধ করে খাব জল” জাতীয় কথাও আছে। কিন্তু উপরের প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তে যৌথ ও গোষ্ঠিবদ্ধতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে নয়তো ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তকে নির্ধারণ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়। গ্রামীণের গ্রহীতাদেরকে সাপ্তাহিকভাবে শারীরিক চর্চায় অংশ নিতে হয়, যেখানে তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে এই ষোল সিদ্ধান্ত আওড়াতে হয়। তদুপরি গ্রহীতাদেরকে উৎসাহী করা হয় তাদের সন্তানদেরকে গ্রামীণের ডে-কেয়ার ঘরানার স্কুলে যেতে, যেখানে তাদেরকে ষোল সিদ্ধান্তঅলা গ্রামীণের টেক্সটবই পড়ানো হয়।
তো যা দাঁড়ালো, যুক্তরাষ্ট্রের বামঘেঁষা ও নিওলিবারেল উভয়ের হিরো, পলিটিকালি কারেক্ট মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংককে “ব্যক্তি উদ্যোগের ঝাণ্ডাবাহী” বরাতে সমালোচনা করা হলেও, এটা না ব্যবসা, না ব্যাংক, না ব্যক্তি উদ্যোগের সমর্থক, বা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ধারক বাহক। জেফ্রি টাকারের ভাষায়, এটা একটা পরজীবী, চরম গোষ্ঠিবাদী কাল্ট। এটা তার মতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোনো গ্রহণযোগ্য মডেল নয়। তাও সেই ১৯৯৫ সনে এই পর্যবেক্ষণ রেখেছিলেন। ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তির পর পুনরায় জেফ্রি টাকার গ্রামীণের ব্যাপারে তার অটল অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। তো ক্ষুদ্রঋণ তাত্ত্বিকভাবে উভয় সংকটে রয়েছে বলেই প্রতীয়মান। এর দায়ও মুহাম্মদ ইউনূসের নিজেরই। তিনি সকল মহলে গ্রহণযোগ্য হবার চেষ্টায় বাম ও ডান উভয় ধারণার একটা ককটেলে পুরেই ক্ষুদ্রঋণকে উপস্থাপন করেছেন।
"Everyone left, right, and center appear to love him. His microcredit scheme seems to mix the best socialist ideals with free market means, and then the rhetoric alone carries the day."
মুক্ত বাণিজ্যের সনাতনীরা আগেই তাকে গ্রহণে অপারগ হয়েছেন। মডেলটা সত্যিই যদি কাজের না হয়, ওনার পরীক্ষিত বন্ধুরাও আর কতোদিন ওনার পাশে থাকবেন সন্দেহ হয়।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ উইকিমিডিয়া ও গ্রামীণ ডট কম
মন্তব্য
জেফরি টাকার এর মতামত আমাদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ন সেটাই বুঝলাম না ।গ্রামীন ব্যাঙ্কের কাজের ফলাফল দেখতে কোনো গ্রামে চলে গেলেই হয় , আর অন্য সব তথ্য দেশেই সব আছে।তা না করে ইউরোপ আমেরিকায় বসে কে কি বল্ল সেটা জানতে হবে কেন ? নাকি বিদেশীরা না বলে দিলে ভালমন্দ বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই?ইউনুসের বিদেশী স্বীকৃতি ও সমালোচনা কে নিয়ে মাতামাতি করা সমান হীন্মন্যতা ।
মাতামাতির কোনো প্রয়োজন নেই। ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পকে মুক্ত বাণিজ্য ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ঝাণ্ডাবাহী দেখিয়ে একে ধুয়ে দেয়া হয়। মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষ থেকে একে যে তার উল্টো হিসেবেও দেখা হয়, সেই উদ্দেশ্যে জেফ্রি টাকারের মতামত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। লেখায় সেটা উল্লেখও করা হয়েছে। কে বলেছে সেটা যদি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না-ই হয়, তাহলে ব্যক্তি নিয়ে আলাপ না করে কেবল বক্তব্য নিয়েই আলাপ করুন না?
কি জিনিস? খায় না মাথায় দেয়?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে গরিবগুর্বোদের ময়দানে ডনবৈঠক দিতে হয় এটা জানতাম না। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার নিলে তো তনুমন সঁপে দিতে হয় দেখছি।
আচ্ছা এই যে ইউনূস ছ্যারে বিভিন্ন দেশ থেকে অনুদান আনতেন, ওনাকেও কি চান্দে চান্দে শরীরচর্চা করতে ঐসব দেশে হাজিরা দিতে হৈত?
শরীরচর্চা তো ভালো জিনিস, উনি ফিট মানুষ পছন্দ করেন।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
গ্রামীণ ব্যাঙ্ক গরিবদের ২০% সুদে ধার দিলেও মহাজনের বাপ কা মাল প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে ৫% সুদে কোটি কোটি টাকা ধার দিয়েছিলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মালিক পক্ষ, অর্থাৎ ইউনূস ছ্যার, ইব্রাহীম ছ্যার, জাহাঙ্গীর ছ্যার, এই ছ্যারেরা সপ্তায় সপ্তায় নিকটস্থ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ব্যায়ামাগারে হাজিরা দিয়ে ডনবৈঠক দিয়েছেন কি না, ডাম্বেলমুগুর ভেঁজেছেন কি না। যদি করে না থাকেন, তাহলে বকেয়া ব্যায়ামটা এখন করে নেবেন কি না। খালি গরিব ব্যায়াম করলেই হবে?
ইউনূস ছ্যার, ইব্রাহীম ছ্যার, জাহাঙ্গীর ছ্যার, এই ছ্যারগো স্পার্টান সৈন্যদের মতো শরীর বানাইতে বলা হোক। যেন পরের অলিম্পিকে ভারউত্তোলনে তারা দেশের জন্য কিছু একটা নিয়া আসেন। খুপ খিয়াল কইরা, "কিছু একটা"।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
শরীরচর্চা, স্লোগান, শপথ, শৃঙ্খলা, গোষ্ঠি পোলিসিং, একটা কাল্টের অনেক বৈশিষ্ট্যই এর মধ্যে আছে। তবে উঁচু মহলের ঋণ আদান প্রদানের কাল্ট সম্পর্কে আমরা অন্ধকারেই আছি।
ভালো লেগেছে। আশা করি Eunuch ভক্তদের চোখ না খুলুক, কিছু ভাবনার খোরাক জুটবে
লেখা পছন্দ হইছে। তবে ক্ষুদ্রঋণ এর সাথে লেফট-রাইট এর কি সম্পর্ক বুঝলামনা। হেয় কি আর্মি বানাইবো নাকি?
[আপনে কাস্ত্রোর পিছ ছাড়লেন না আর !! ]
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ওনার ক্যাস্ত্রোর পিছ ছাড়ার উপায় নাই। ওই ব্যাটারে ফেলাও যায় না, গিলাও যায় না! বড়ই নচ্ছার।
****************************************
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ভুল কিছু কইছি কন? কাস্ত্রোও যে ব্যক্তিবাদের পিছু ছাড়লো না।
রাজনৈতিক অভিলাষে ও তিনি তাই।
ভালো লাগলো। জানার সুযোগ পেলাম
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ভালো পয়েন্ট।
ষোলো সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু জানতাম না, খুবই অবাক হলাম। গ্রামীন ব্যাঙ্ক থেকে ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো সুবিধা, পরামর্শ, বা ট্রেনিং দেওয়া হয় কি?
সেটা আমার জানা নেই। সাস্টেনেবল ব্যবসা না হলেও, এই উদ্যোগে বাংলাদেশের নারীদের কী রকম উন্নয়ন হয়েছে, সেটা আলাদা করে জানার আগ্রহ আছে। বিশেষ করে, আমার ধারণা গার্মেন্টস কর্মীদের জীবনযাপনের উন্নয়ন এর চেয়ে আরো অনেক বেশি স্পষ্ট ও সাস্টেনেবল।
আমার জানা মতে, দেয়া হয়না। ওদের নির্দিষ্ট করা কিছু ক্ষেত্রেই ব্যবসা করতে হয়।
Sixteen Decisions নামে একটা চলচ্চিত্রও আছে। অথচ আমরা মোটামুটি এ ব্যাপারে অন্ধকারেই ছিলাম।
নীচে দেখুন, ওই চলচ্চিত্রের নির্মাতা দশ বছর পরে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে একটা পরিবারের ফলোআপ করছে।
এ ধরনের কেইসের পারিসংখ্যানিক তথ্যের আমাদের অভাব আছে।
চমৎকার বিশ্লেষণের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
_____________________
Give Her Freedom!
ভাল লেগেছে। চমৎকার বিশ্লেষণ।
ধন্যবাদ। বিশ্লেষণের উপাদানের জন্যে জেফ্রি টাকারের লেখাদ্বয়ের উপর কিন্তু আমি বৃহদাংশে ঋণী। ক্ষুদ্রঋণকে মুক্ত বাণিজ্য ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রতিনিধি দেখিয়ে যে ডিসকোর্স চালু হয়েছে, সেটার বিপরীত বিশ্লেষণ আগে থেকেই যে বিদ্যমান, সেই তুলনামূলক আলোচনায় আমার কাজ এখানে সীমিত।
বিষয়টি নিয়ে বিশদ ভাবে জানা দরকার। আরো লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
আচ্ছা ধ্রুব দা, কাল্ট এবং অকাল্টের বাংলা কি লেখা যেতে পারে?
facebook
গ্রামীণ ব্যাংক বা ক্ষুদ্র ঋণের ব্যর্থতা কতটুক তা না বলতে পারলেও অন্তত একটা সফলতার কথা বলা যায় । তা হল দেশের অলিতে গলিতে আনাচে কানাচে গ্রামীণের আদলে সুদারু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা । আপনার লেখা ভাল লাগছে, চালিয়ে যান ।
নতুন মন্তব্য করুন