রবির সামাজিক ব্যবসা ও আমার (একান্ত ব্যক্তিগত) মতামত, কিছু উদাহরণ

ধ্রুব আলম এর ছবি
লিখেছেন ধ্রুব আলম [অতিথি] (তারিখ: রবি, ০৩/০৮/২০১৪ - ১:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা বলা হয়ে গেছে, ইতোমধ্যেই। সচলে একটা লেখা এসেছে, তবুও বলি। কারণটা হলোঃ আমি দুটো প্রশ্ন সবখানে দেখেছি, শুনেছি।

(ক) কিছু তো একটা দিয়েছে, এতে ক্ষতি কি? লাভ না হোক, ক্ষতি কি?
(খ) তুমি কি করেছো সারাজীবনে? কি দিয়েছো? এখন কেউ কিছু করলেই জ্বলে?

আমি প্রথমটার উত্তর দেব। তবে সোজা বাংলায়, ক্ষতি নাই, কোন ক্ষতি নাই। তবে দুইখান কথা (আসলে দুখান না, লেজুড়-ওয়ালা একগাদা কথা) আছে, সেই কথাগুলোই বলবো আর কি। এই মতামত একান্ত ব্যক্তিগত, শিরোনামেই বলেছি, কেউ দাগা নিবেন না মনে।

আর দ্বিতীয়টা নিয়ে কিছু বলার নাই, মাফ করে দিয়েন। কিছু করি নাই, কিন্তু নীতিকথার ঝাণ্ডা উড়াই। কিন্তু ওইযে এক ব্যাটা ছিলো, সৈয়দ মুজতবা আলি, সেও অনেক ঘ্যানর-ঘ্যানর করতো, সেও জীবনে কিছু করে নাই, খালি নীতিকথার বুলি কপচাইসে। কিন্তু দেখেন এই যে ইউনুস সাহেব, খালি মুখে না, কাজেও দেখিয়েছেন। আমি পেরথম দলের লোক, কাজ-টাজ করি না, খালি বক বক এবং সেই জন্যেই ক্ষমাপ্রার্থী।

শুরু করলাম, ত্যানা পেচানি-

১। অনেক কোম্পানির কর্পোরেট সোশাল রেস্পন্সিবিলিটির ফান্ড থাকে, তারা সেখান থেকে চাইলে সাহায্য করতে পারে, আবার নাও পারে। কেউ প্রতি বছর করে, কেউ করে না, তবে যেই করুক ঢোল পিটাতে কম যায়না কেউই। কারন সোজা, যতই সোশাল রেস্পন্সিবিলিটি হোক, আসল কাজ হচ্ছে প্রচার। যাকগে, আজকালের যুগে এটা অনৈতিক না, রবি যদি এমন কিছু করতো, সমস্যা ছিল না।

আরেকটা ব্যাপার, এই সিএসআরের টাকা কিন্তু আমার শোনামতে (কিছুটা জানামতেও), স্পন্সরশিপের মতও ব্যবহার হয়, যেমনঃ ডাচ-বাঙলা ব্যাঙ্ক যে বৃত্তি দেয় সেটা তার নামেই দেয়, যদি কেউ হাসপাতালে একটা ওয়ার্ড বা ভার্সিটিতে একটা ল্যাব (বুয়েটে একটা 'হুয়েই' ল্যাব আছে, জানিনা সেটায় ওদের নিজের ছাড়া আর কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে নাকি, তবে ল্যাবের নাম ওদের) করে দেয়, মাঝে মাঝে নিজের নামেই দেয়।

রবি সিএসআর ফান্ড ব্যবহার করেনি (সে নিজেই বলেছে, মানুষের টাকা দিবে)। সে মানুষের টাকা নিয়েছে, টাকা নিয়ে যা দিয়েছে তাতে তাদের প্রচারণার ছাপ। যাকাতে বা যেকোন দান খয়রাতে (বা ধরেন রিলিফের মালেই) কেউ কি নিজের সিল মেরে দেয়? (যাতে বোঝা যায় আমি দিয়েছি?) এটা কি সাহায্য হলো? এটা কিভাবে নৈতিক হয়?

তুলনাটা রিলিফের সাথে চলতে পারে, দুক্ষেত্রেই, অভাবী/ দুস্থ মানুষের সাহায্য প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমি যা দেই, তাই তারা নিবে, কোন ক্ষতি নাই। কিন্তু আওয়ামি লিগ বা বিএনপি, অথবা কোন ভার্সিটি (যেমন বুয়েট) যদি রিলিফ বিতরণ করা শুরু করে তাদের স্বীয় লোগো মার্কা, তাহলে ক্ষতি কি? ক্ষতি নাই, খারাপ লাগে, চোখে লাগে, অন্যায় মনে হয়, এটুকুই। তবে কর্পোরেট বাস্তবতার যুগে মেনে নিতে হবে সব।

২। অনেকেই লোগো-ওয়ালা জামা দেয়, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নেতারাও, কেউ বলে না দান করতেসি। দান-খয়রাত সম্প্রদান কারক, এতে সত্ত্ব ত্যাগ করে দেয়া হয় (লোগো মেরে না) এবং তার থেকেও বড় কথা, দানের বিপরীতে কেউ কিছু আশা করে না। মানুষ হয়তো তার মা-বাবার নাম অমর রাখতে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ইত্যাদি করে দেয়, এর থেকে বেশি কিছু চাইতে আমি কাউকে দেখিনি। (রাজনীতিবিদদের ব্যতিক্রম হিসেবে ধরলাম!)

রাজনৈতিক নেতা বা দলগুলোও কখনো প্রচার করে না, সমাবেশে আসেন ভাই, জামা পাইবেন (তারা লোগো-ওয়ালা জামা দেয়, নিজের পয়সাতেই দেয়, তবে দান বলে না, মাহাত্ম্য প্রচার করেনা দানের)।

তারথেকেও বড় কথা রবি নিজের পয়সা খরচ করে দেয়নি, প্রচার তারা আগেও করেছে, পরেও করছে, কিন্তু মানুষের পয়সায় যে জামাটা সেটায় লোগো মারার অধিকারটা সে কই পেলো? সে উদ্যোগ নিয়েছে, আয়োজন করেছে বলেই?

কাহিনীটা চেনা চেনা লাগে, ১৯৭১-এ ২৬ মার্চ প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণার পরে, এক মেজরও দিয়েছিলেন ঘোষণা, সেইটা পরে একদল ব্যাপক প্রচার করে, তারে ঘোষক বানায়। কিন্তু ভাই, ঘোষক ছাড়া কি আমাদের চলতোই না? ঘোষনা (কারও পক্ষে) দিতে কি লোকের অভাব হয়? ঘোষণা কি আর কেউ দেননি? একইভাবে, রবির মত এমন খয়রাতি গ্রুপেরও কি অভাব হয়? রবির স্পেশালিটিটা কি? এই অফারটা 'যদু-মধু-কদু' দিলেও কিছু লোক গ্রহণ করতো, কিন্তু তারা মনে হয়না, লোগো মেরে জিনিশ দিতো।

আমি এখনো কাউকে দেখিনি এভাবে দিতে, বসুন্ধরা তার টিস্যুর টাকা এসিড সারভাইভারদের দিতো, কি দেয় জানি না, প্রচার মাঝে মধ্যে করতো, তবে এভাবে দিতে শুনিনি (বলছি না তারা মহান)। আর ব্র্যাক বা ইস্টার্ন ব্যাঙ্ককে বলতে শুনি না, জামা দেব ঈদে, এবং তারপর দেখি না লোগো-ওয়ালা কিছু দিতে। সবাই মোটামুটি একটা নর্ম মেনে চলতো (নৈতিকতা বলা চলে), এখন অবশ্য বাকিরাও বিখ্যাত সামাজিক ব্যবসা শুরু করবে।

৫৮ টাকার উপযোগ তো গ্রাহক তো কথা বলে পাবেই- এই যুক্তি অনেকের। কিন্তু সে গ্রাহক তো ৫৮ টাকা খরচই করতো না, সে হয়তো ২০-২৫ টাকা করতো। অতিরিক্ত লাভ কি ইতোমধ্যেই হয়ে যায়নি?

লাভের পয়সা কেউ দান করতে বলেনি, না করলে না করো। কিন্তু তোমাদের ঈদের জামা দেব বলে, আমার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বানালাম, তাও অন্যের পয়সায় (ধরলাম আংশিক হলেও)

৩। যেহেতু ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল), তাই ২টা উদাহরণ দেই।

প্রথমটা ঢাকা নিয়েঃ যেকোন একটা প্রজেক্ট নিলে তার ফিজিবিলিটি এনালাইসিস করা লাগে, এর মধ্যে অনেক কিছু থাকে, কস্ট-বেনিফিট এনালাইসিস, ট্রাফিক-এনভারনমেন্ট-সোসাল ইম্প্যাক্ট এনালাইসিস ইত্যাদি ইত্যাদি। ঢাকার বিষয়ে মজার ব্যাপার হলো, ট্রান্সপোর্ট বিষয়ক যে প্রজেক্টই নেয়া হোক না কেন (আমি যেহেতু ট্রাফিক নিয়ে কাজ করতাম, তাই বলছি); সব ফিজিবল হয়ে যায়। যা ইচ্ছা তাই নেন হাতে, সবই ভালো। এর কারণ হচ্ছে, আমাদের শহরের যাতায়াত-যোগাযোগ পরিস্থিতি এত বেশি খারাপ যে, আপনি যা করবেন, তাই লাভ। এই জন্যেই, ঢাকায় বাস-ট্রেনের সার্ভিসের মত গণ-পরিবহনের উন্নতির বদলে একের পর এক ফ্লাই-ওভার, ওভার পাস, এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। এগুলোতে ক্ষতি নেই, লাভ আছে, কিন্তু এর থেকেও অনেক জরুরী অনেক কাজ ছিল, সেগুলো হচ্ছে না।

রবি যাদের জামা দিয়েছে, তারা এতই নিঃস্ব যে, এদের আপনি যদি ২টা চকলেট দেন, এরা খুশি। (এদেরকে আপনি বিনা দোষে থাপ্পড়ও দিতে পারেন, এরা কিচ্ছু করতে পারবে না, কাদবেও না হয়তো, অভ্যাস হয়ে গেছে। আমি অনেককে দেখেছি, গায়ে লেগেছে বলে এদের মারতে, কারণ নোংরা হয়ে গেছেন তাদের ছোঁয়ায়)। কিন্তু চকলেটের বদলে ভাত দিলে একটু ভালো হত, এই যা।

এদের রবি ভাত দেয়নি, ছাপ-মারা জামা দিয়েছে, ঈদের জামা (ছাপ-ছাড়া হলে সমস্যা ছিলো না, কেউ তাদের ভাত দিতে বলেনি)। এটা প্রচন্ড নোংরা একটা এক্সপ্লয়েটেশন, এত নোংরা করে এদের আগে কেউ বলেনিঃ ভিক্ষার চাল কাঁড়া-আকাঁড়া, লোগোওয়ালা আর লোগো-ছাড়া, তোদের কি আসে যায়, তোদের তো জামাই নাই। জামা না দিলে কিছু আসতো যেতো না, তারা অনেক ঈদই জামা ছাড়া পার করেছে, হয়তো কেউ কেউ যাকাত পেয়ে যেতো। কিন্তু এই জামা পরে তারা এখন চলন্ত বিজ্ঞাপন, কিন্তু সেটা তারা জানে না। তাদের না জানিয়ে, একটা মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপণ বানানো হয়েছে, এর মাঝে কেউ অনৈতিক কিছু না দেখলে, তাদের নৈতিকতার শিক্ষায় একটু সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয়।

দ্বিতীয় উদাহরণ বাংলাদেশ নিয়ে। কয়েকটা ঘটনা শিক্ষকদের থেকে শোনা (এবং সম্ভবত সত্যি)। মেঘনা-গোমতি সেতু তৈরির সময় বাংলাদেশ চেয়েছিলো ২ লেনের বেশি একটা সেতু, ডোনাররা বলেছিলো, তোমাদের সারাজীবনেও এত গাড়ি হবে না। একে তো নিজের বানানোর মুরোদ নাই, এখন ফ্রি পাচ্ছো দেখে যত পারো বেশি নিতে চাও? ওসব হবে না। ২-লেন দিবো, নিলে নাও, না নিলে ফেরি চালাও। কিন্তু আমাদের প্রফেসররা হোক, আর বিশেষজ্ঞরাই হোক, তারা জানতেন, সেতু একটা বটলনেক। রাস্তা যত বড়ই হোক, সেতুর মুখে এসে, সেতু যতটুকু, রাস্তাও ততটুকু হয়ে যায়। এটা কি ডোনাররা জানতেন না? অবশ্যই জানতেন। কিন্তু তাদের এত কিছু ভাবতে ইচ্ছা হয়নি এবং ছিলো তাচ্ছিল্য, ফকির আবার কবে উন্নতি করছে? রবির মত তারা আরেকটা ব্যাপার বুঝতেন, যা দিবো এরা তাই নিবে, কারণ কিছুই নাই এদের।

সুতরাং দুই লেন সেতু হলো, একটা সেতু তৈরি হয় ৫০ বা ১০০ বছরের জন্যে। এটা খুলে দেয়ার ১০ বছরের মধ্যে (১৯৯১-২০০১) রাজধানী থেকে সেতু পর্যন্ত জ্যাম হওয়া শুরু করলো! ভিক্ষার টাকায় যা পারসি, তাই বানাইসি, কি করতাম? কিন্তু আমাদের বলতে হবে এখন, অত্যন্ত রূঢ় ভাষায় হলেওঃ না বানালেই ভালো ছিল, এখন এটা গলার কাটা।

(এরকম আরো একটা গলার কাটা ঢাকার মহাখালি ফ্লাইওভার, আসলে ওভারপাস। কিন্তু সেটা প্রথম উদাহরণের ফসল। "যা বানাবো, তাতেই লাভ, ক্ষতি কি?")

ব্যাপারটা এমনই, ওই পিচ্চিগুলা বা আমরা গরিব, তাই আমরা হতে পারি চলন্ত বিজ্ঞাপণ (না-জেনে) বা গিনিপিগ (সোশাল এক্সপেরিমেন্টের বা প্রজেক্টের)। আমাদের আবার নৈতিক-অনৈতিক কি? গরিবের অত কিছু ভাবতে নেই, যা ক'টা ভাত মাটিতে ফেলে-ছড়িয়ে দেবো, তীর্থের কাকের মত খুঁটে-খুঁতে তুলে খাবি। এটাই কর্পোরেট বিশ্বের শেষকথা।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত লেখাটার জন্য।

আমি আমার দুইটা কথা এইখানে ফেলে যাবো।

(খ) তুমি কি করেছো সারাজীবনে? কি দিয়েছো? এখন কেউ কিছু করলেই জ্বলে?

এইটা পুরা অবান্তর একটা কথা। আমি সারাজীবন মানুষ খুণ করে এসেও যদি বলি, "চুরি সমাজের জন্য ক্ষতিকর" ( এমনকি আমি যদি সারাজীবন চুরি করে এসেও বলি কথাটা ) তাহলেও আমার কথাটা ভুল হয়ে যাবে না। আমার কথা সঠিকই থাকবে। আমি ফাঁসিতে ঝুললেও আমার কথা ঠিক, আমার এই বলাটাকে সারা দুনিয়ার সবাই সমালোচনা করলেও ঠিক। ( কে ঠিক কথা বলসে, আর কে ভুল বলসে, তা গণতন্ত্র দিয়ে হয় না। হয় প্রমাণ দিয়ে, যুক্তি দিয়ে। তা না হইলে গ্যালিলিওর যুগে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতো। ) এই জন্যেই সত্য সুন্দর।

আমরা এইখানে কথা বলতেসি কি করা উচিত নিয়ে। আমরা জীবনে কিসু করি বা না করি, আমাদের চিন্তা হয় ঠিক নইলে ভুল হবে।

অনেক কোম্পানির কর্পোরেট সোশাল রেস্পন্সিবিলিটির ফান্ড থাকে

সামাজিক দায়িত্ব বলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলা তথাকথিত "জনসেবামূলক" কাজ করে, সেইটা একটা লোকভুলানো কাজ। রাষ্ট্রকে তার প্রাপ্য কর দিলে দান-খয়রাত তার কোন ধরণের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে না। ( "উচিত" কাজের মধ্যে পড়ে কিনা, সেইটা আরেক প্রশ্ন। এই প্রসঙ্গে পরে আসবো। )

১৯৭১-এ ২৬ মার্চ প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণার পরে, এক মেজরও দিয়েছিলেন ঘোষণা, সেইটা পরে একদল ব্যাপক প্রচার করে, তারে ঘোষক বানায়। কিন্তু ভাই, ঘোষক ছাড়া কি আমাদের চলতোই না? ঘোষনা (কারও পক্ষে) দিতে কি লোকের অভাব হয়? ঘোষণা কি আর কেউ দেননি?

বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ঘোষণা দেয়া সেই মেজরের সাথে রবির তুলনা কতোটুকু যুক্তিসংগত, সেইটা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। এইখানে স্বাধীনতার ঘোষণার উদ্যোগটা বঙ্গবন্ধু নিসেন, মেজর না। ধারণাটা বঙ্গবন্ধুর ( তাঁকে অন্য কেউ দিসে কিনা আমার জানা নাই, তবে সেইসব পক্ষে হয়ে ঘোষণা দেয়া মেজর-টেজরদের না। ) রাজা একটা কথা বললে, আর সেইটা কোটাল রাজার পক্ষ থেকে ঘোষণা করলেও সেই ঘোষণার বিষয়বস্তুর সব দায়ভার রাজার কাঁধেই পরে।

রবিরটা দেখি এইবার। এইখানে উদ্যোগটা নিসে রবি, ধারণাটাও তার। গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিসে, এবং এইটা সে জানায়াই নিসে। রবি বিতরণের কাজটাও করসে। এই কাজের দায়ভার তার ছিল, সেইটাও সে নিসে।

আমি এখনো কাউকে দেখিনি এভাবে দিতে, বসুন্ধরা তার টিস্যুর টাকা এসিড সারভাইভারদের দিতো, কি দেয় জানি না, প্রচার মাঝে মধ্যে করতো, তবে এভাবে দিতে শুনিনি

আমার মতে তারা এইটা প্রচার না করে খুব অনৈতিক একটা কাজ করসে ( আবার বলি, "অনৈতিক" বলতে বুঝাচ্ছি যা করা উচিত না। ) তাহলে আমি তাদের পণ্য যখন সম্ভব হইতো, কিনতাম।

ক্ষতি নাই, খারাপ লাগে, চোখে লাগে, অন্যায় মনে হয়, এটুকুই।

ক্ষতি নাই তাহলে অন্যায় মনে হয় কেন?

৫৮ টাকার উপযোগ তো গ্রাহক তো কথা বলে পাবেই- এই যুক্তি অনেকের। কিন্তু সে গ্রাহক তো ৫৮ টাকা খরচই করতো না, সে হয়তো ২০-২৫ টাকা করতো। অতিরিক্ত লাভ কি ইতোমধ্যেই হয়ে যায়নি?

তাকে তো কেউ জোর করে ৫৮ টাকা ভরায় নাই। যে পারসে, সে ভরসে।

কিন্তু এই জামা পরে তারা এখন চলন্ত বিজ্ঞাপন, কিন্তু সেটা তারা জানে না।

"তারা এখন চলন্ত বিজ্ঞাপন" এইটা দর্শকের চিন্তা। চিন্তাটা বদলাইলেই হয়। ভালো কাজের বিজ্ঞাপনকে খারাপ হিসেবেই কেন দেখতে হবে?

রাস্তা যত বড়ই হোক, সেতুর মুখে এসে, সেতু যতটুকু, রাস্তাও ততটুকু হয়ে যায়।

আমি ব্যাপারটা বুঝলাম না। রাস্তার প্রস্থ সব জায়গায় একই হইতে হবে কেন? রাস্তার পাশগুলা যদি সমান্তরাল না হয়, তাহলেই তো প্রস্থটা আস্তে আস্তে কমতে পারে।

কিন্তু আমাদের বলতে হবে এখন, অত্যন্ত রূঢ় ভাষায় হলেওঃ না বানালেই ভালো ছিল,এখন এটা গলার কাটা।

সেতুটা ব্যবহার না করার বাছাই তো আমাদের আছেই। আগে যেমনে যাইতাম তেমনি যাই।

এইটা শুনতে খারাপ লাগে, কিন্তু কথাটা সত্যি। যার চেয়ে-টেয়ে নিতে হয়, তাকে যা দেয়া হয়, যে শর্তে দেয়া হয়, সেইটা সে বিবেচনা করে তার লাভ আছে মনে হইলে নিবে, না নিলে নাই। ( লক্ষ্য করবেন, আমি বলতেসি না, তাকে কতোটুকু দেয়া উচিত। "উচিত" নির্ভর করে আপনার উদ্দেশ্যে উপর। আপনি আজকে বাঁচতে চাইলে কাজ করা উচিত, মরতে চাইলে ছাদ থেকে লাফ দেয়া উচিত। )

সমাজের অস্তিত্বের ভিত্তিই বিনিময়। আর সেইজন্যেই এইটা সত্যি যে, কেউ কাউকে নিঃস্বার্থভাবে কিছু দেয় না ( এইখানে স্বার্থ বলতে "আমার মনের আনন্দ/ শান্তি", " না দিলে আমার কষ্ট লাগে, আমার নীতিতে বাঁধে" বুঝাচ্ছি না। আমি এইখানে বস্তুগত স্বার্থ বুঝাচ্ছি। ) যে দিসে, সে নিজের লাভের জন্যই করসে। আমি "donate" করসি, এই মিথ্যা কথাটা তাদেরকে বলতে না দেয়া হোক। তাদের আসল উদ্দেশ্যটা তাদেরকে বলতে বাধ্য করা হোক। এবং শ্রোতাদের মধ্যে মিষ্টি মিথ্যাকথার চেয়ে তিতা সত্যি কথাকে গ্রহণ করার প্রবণতা হোক। তাদের মাথায় এই বোধ জন্ম নিক যে ওই মিষ্টি মিথ্যা কথা আসলে বিষ । আর তিতা সত্যি কথাগুলা আসলে ওষুধ।

....................................

প্রশ্ন

ধ্রুব আলম এর ছবি

আপনাকে আসলে বোঝাতে যাওয়া বৃথাই মনে হচ্ছে। কারণ হিমুভাই যেখানে ফেল, সেখানে আমি কোন ছার। আমি তাই খুব বেশি যুক্তি খণ্ডনে যাবো না। আর সাথে কয়টা তথ্য দেব।

জিয়া ও রবির এনালজিটি ভাল হয়নি, দুঃখিত ব্যপারটি নিয়ে। বলতে চেয়েছি, দুজনেই আরেকজনের পক্ষে করে দেয়া একটি কাজের কৃতিত্ব নিয়েছে (মেজরসাব নিজে নেননি মনে হয়, তার দল নিয়েছে), একটি রাজনৈতিক অন্যায়, আরেকটি সামাজিক ব্যবসা (সামাজিক ব্যবসা এযুগে আম্রিকান নীতিতে হালাল, তাই আমারো সমস্যা নেই, থাকতে পারে না)। কিন্তু এই সামাজিক ব্যবসাকেও রবি বিজ্ঞাপণে রুপান্তরিত করেছে।

আমার মূলকথাটি ছিলো, রবি উদ্যোগ নেক, আয়োজন করুক, সবই ঠিক, কিন্তু টাকাটা তো রবির না, গ্রাহকের সামান্য হলেও হক আছে। কি ধরণের হক? কারন রবি একটা কথা দিয়েছিলো, সে ঈদের জামা গরিবদের দেবে। দিয়েছে? হ্যা, কিন্তু এটা তো ঠিক দেয়া হয়নি, এটা হয়েছে বিজ্ঞাপন। এমন লোগোওয়ালা টি-শার্ট তো হরহামেশা অনেকেই দিচ্ছে, দিতো (লাইফবয় টিশার্ট পরা অনেক রিকশাওয়ালা দেখা যেত একসময়)। এ আর নতুন কি বা ঈদ উপহারই বা কি? 'জনসেবা' হয়ে গেল এটা?

আমার মতে তারা এইটা প্রচার না করে খুব অনৈতিক একটা কাজ করসে ( আবার বলি, "অনৈতিক" বলতে বুঝাচ্ছি যা করা উচিত না। ) তাহলে আমি তাদের পণ্য যখন সম্ভব হইতো, কিনতাম।

প্রচার না করায় অনৈতিক কি হলো বুঝলাম না। যাকগে, আরো অনেক পণ্যেই এক-দুই টাকা করে বেশ কিছু কোম্পানি নানা উদ্যোগকে সাহায্য করে। খুজে-পেতে নিয়েন, পাবেন।

ক্ষতি নাই তাহলে অন্যায় মনে হয় কেন?

ধরেন,আমার এডভাইজর আমাকে বিভিন্ন কাজে এককালে সাহায্য করেছেন, কিন্তু সুযোগ পেলেই আমাকে জঘন্য সব কথা শোনাতেন। ওভারওল, আমার কোন ক্ষতি করেন নাই, বরং উপকার করেছেন কিছু। আমার তার আচরণ অন্যায় মনে হয় কেন?

আপনি কি মর্ষকামী নাকি? মাইর-ধোর-অপমানের পরে কোলে তুলে আদর করলে ক্ষতি কি? পোলাপানরে বেত মারলে ক্ষতি কি? (মানসিক ক্ষতির কথা বলে ত্যানা পেচাবেন না, বেতমারা খেয়ে ভালই আছি, কিন্তু সেই শিক্ষকদের আচরণ আমার অন্যায় মনে হয়, কারন ছাড়া, মাফ করবেন)

তাকে তো কেউ জোর করে ৫৮ টাকা ভরায় নাই। যে পারসে, সে ভরসে।

ভাই জোর করে কি কেউ কাউরে কিছু করায়, বিশেষ করে বাজার-অর্থনীতিতে? বাজারে ১০০ টাকার ১০টা টুথপেস্ট, আপনি যেটা ইচ্ছা কিনবেন, তবে কেনার সময় লালটা কিনতে ইচ্ছা করবে (এটা বৈজ্ঞানিক সত্য) অথবা যেটার বিজ্ঞাপন বা মোড়ক চটকদার, আপনি সেটায় হাত দেবেন। রবি পাব্লিক সেন্টিমেন্ট (যেটা আবার রোজার মাসে একটু বেশিই থাকে), সেটাকে ব্যবহার করেছে, এবং অনৈতিকভাবে।

ভালো কাজের বিজ্ঞাপনকে খারাপ হিসেবেই কেন দেখতে হবে?

এইটা একটা বড় প্রশ্ন। আগেই বলেছি, অনেকেই জামা (আরো অনেক কিছুই) দেয়, কেউ এই ধান্ধাবাজিটি করে নি আগে, তারা বলেনি এটা জনসেবা। সেজন্যেই খারাপ বলছি। ভালো কাজ একটা রবি করেছে, কিন্তু যা সে বলেছিলো সে তা করেনি।

ধরুন, আপনাকে (জেলে) কেউ (জোতদার) বললো, ২টা ইলিশ মাছ ধরে নিয়ে আয়, ২০০টাকা দেব। নিয়ে আসলেন, আপনাকে দিলো ৩টা রুই মাছ। আপনি বলে উঠলেন, আরে মিয়া, টাকা কই? সে লোক জবাব দিলো, ৩ টা রুইয়ের দাম ২০০ টাকারও বেশি, আর তোরে টাকা দিলে কি করবি? কিছু কিনে খাবি তো? তো এই মাছ খা, সমস্যা কি? ভাত লাগলে ১টা মাছ বেচে কিনে নিস। আপনার ক্ষমতা নাই, আপনি মুখ বুজে তা নিয়ে চলে আসলেন।

ক্ষতি কি?

রাস্তা ও সেতুর ব্যাপারটি হচ্ছে, রাস্তা ১০ লেনের হলেও, সেতু কখনোই এত প্রস্থের হয়না, অর্থনৈতিক ও নির্মাণের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণে। সুতরাং এটি একটি বটলনেক, আপনি রাস্তা যত বড়ই করুন না কেন, সেতুতে এসে আপনাকে একটু অপেক্ষা করে লাইনে দাঁড়িয়ে যেতেই হবে। তাই সেতু যখন করা হয়, যতটা বড় সম্ভব (বাজেট এক্ষেত্রে বড় ব্যাপার) করা হয়।

সেতুটা ব্যবহার না করার বাছাই তো আমাদের আছেই। আগে যেমনে যাইতাম তেমনি যাই।

ফেরি অপেক্ষা সেতু উত্তম, নাই মামার থেকে কানা মামা ভাল। এবং ঈদের এবং রিপেয়ারের সময় কি ফেরি চলেনি? এটা প্রমাণ করে যে, কত বড় 'ফেইলিয়র' এই সেতুটি। আর গরিবকে কিছু দিবেন আর সে মানা করবে, বা নিবেনা, এমন হয় কি? এক পদ্মা সেতুর ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার ঘাড়ত্যাড়ামি করেছে। কি জন্যে করেছে, সে তর্কে যাচ্ছি না ভাল না খারাপ। কিন্তু হাত পেতে, নিজেরা বসে থাকেনি, ব্যাপারটি প্রশংসনীয়। আমার ব্যক্তিগত মতামত।

এইটা শুনতে খারাপ লাগে, কিন্তু কথাটা সত্যি। যার চেয়ে-টেয়ে নিতে হয়, তাকে যা দেয়া হয়, যে শর্তে দেয়া হয়, সেইটা সে বিবেচনা করে তার লাভ আছে মনে হইলে নিবে, না নিলে নাই।

এই 'না নিলে নাই', এইটা বিবেচনা করার মত বোধ, যাদের দেয়া হচ্ছে, তাদের থাকে কি? গরিবকে যা দিবেন, হাভাতের মত সে তাইই নিবে। ১৫-২০% সুদে ঋণও নিবে। আপনার মত তো এখনো ৫০ বা ১০০ বছর আগের। উন্নত দেশগুলো এমন সব সল্যুশন নিয়ে আসতো একেক দেশের জন্য, যারা জানতোও না তাদের কিসে ভাল, আর কিসে খারাপ। টাকা পাবে, উন্নতি হবে, ব্যস, আর কি চাই?

আর দাতাদের মনোভাব ছিল, আমি এদের থেকে অনেক ভাল বুঝি, যা করবো, তাতেই এদের ভাগ্য ফিরে যাবে। ভাগ্য কারোরই ফিরেনি। তারা হয়েছে গিনিপিগ, আর রবির জামা দেয়া শিশুরা হয়েছে পণ্যের বিজ্ঞাপণ।

সমাজের অস্তিত্বের ভিত্তিই বিনিময়।

অ্যাঁ? নতুন শুনলাম, আমি তো জানতাম বাজারের ভিত্তি বিনিময়। যাকগে, দুটো-একটা সংজ্ঞা দিলে ভাল হয়, বই-টই থেকে।

আর সেইজন্যেই এইটা সত্যি যে, কেউ কাউকে নিঃস্বার্থভাবে কিছু দেয় না ( এইখানে স্বার্থ বলতে "আমার মনের আনন্দ/ শান্তি", " না দিলে আমার কষ্ট লাগে, আমার নীতিতে বাঁধে" বুঝাচ্ছি না। আমি এইখানে বস্তুগত স্বার্থ বুঝাচ্ছি। ) যে দিসে, সে নিজের লাভের জন্যই করসে।

আমি তো জানতাম কেউ কেউ নিঃস্বার্থভাবেই দেয়, যেমন হাজি মুহম্মদ মোহসিন। উনি কি বস্তগত স্বার্থে দিয়েছিলেন কিছু? রবি দাতা না, তবে সে সাজতে চেয়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।

সব কথার শেষ কথা, আপনার উত্তরের ভয়ে আছি, এমন সব জবাব দেবেন, যে আবার সেগুলো নিয়ে কিছু বলতে গিয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারি। আমার অত ধৈর্য্য নেই। তাই না দিলে মাইন্ড করবেন না।

ধন্যবাদ সময় নিয়ে লেখাটি পড়বার জন্যে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি যতোখন পর্যন্ত একটা আলোচনার মধ্যে থাকি, আমি ততোখন পর্যন্ত কিছু মনে করি না, আপনি যাই বলেন বা না বলেন।

আমার মন্তব্যটা অনেক বেশী বড়ো হয়ে গেসে। বিশেষ করে বইয়ের কিছু কথা তুলে সেইগুলা অনুবাদ করতে গিয়ে।

হ্যা, কিন্তু এটা তো ঠিক দেয়া হয়নি, এটা হয়েছে বিজ্ঞাপন।

বিজ্ঞাপন দিলে "বেঠিক" হয়ে যাবে কেন?

'জনসেবা' হয়ে গেল এটা?

আগেও অনেকবার বলসি। আবারো বলি, আমি কোথাও বলি নাই জনসেবা হইসে। এইটাকে জনসেবা কেউ বললে আমি তার বিরোধী।

প্রচার না করায় অনৈতিক কি হলো বুঝলাম না।

আমি কিন্তু বলসি কেন। "তাহলে আমি তাদের পণ্য যখন সম্ভব হইতো, কিনতাম।" প্রচার না হওয়াতে আমি তাদের এই কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত ছিলাম না। থাকলে আমি তাদের পণ্য কিনতাম। সেই টাকাটা অম্লাঘাতগ্রস্তদের সাহায্যে যাইতো।

ধরেন,আমার এডভাইজর আমাকে বিভিন্ন কাজে এককালে সাহায্য করেছেন, কিন্তু সুযোগ পেলেই আমাকে জঘন্য সব কথা শোনাতেন।

আপনি জঘন্য কাজ না করা সত্ত্বেও আপনার পরিদর্শক জঘন্য কথা বলে? কখন বলে?

ধরেন, আপনি একটা কাজ করতেসেন পরীক্ষাগারে। সব কাজ ঠিকই করলেন। শেষে সে বললো, "তোরা কালোরা এইরকমই, কিছুই ঠিক করে করতে পারিস না। নে, এইটা আবার কর ছোটলোক।" তো দুইবার করার জন্য আপনাকে দ্বিগুণ শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। এই শ্রমটা আপনার ক্ষতি। আরেকটু বড়ো ছবিটা দেখতে পারেন। এটা ক্ষুদ্র হতে পারে, কিন্তু পরিমাপযোগ্য। এক কাজ করতে আপনার কতো হাজারক্যালোরি শক্তি ব্যয় হয়? দ্বিগুণ কাজ করতে তার দ্বিগুণ শক্তি ব্যয় হয়। আপনাকে এখন এই অতিরিক্ত শক্তি যোগাড়ের জন্য বেশী খাবার কিনতে হবে। কিন্তু আপনার বেতন সে যা ছিল, তাই দিচ্ছে।

আপনাকে একদম ঠিক কোন পরিস্থিতে বলতেসে ( উপতাত্ত্বিকভাবে ), তা বললে আমি সেইটার ব্যাখ্যাটা দিবো।

মাইর-ধোর-অপমানের পরে কোলে তুলে আদর করলে ক্ষতি কি?

রবি মাইরটা কারে দিসে?

পোলাপানরে বেত মারলে ক্ষতি কি?

পোলাপাইনকে মাইর দিলে তার শিক্ষার আগ্রহ থাকে না। না শিখলে কি কি সমস্যা জানেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হইলে আর্থিক ক্ষতি। ভবিষ্যতে ভালো ফল নিয়ে বের না হইতে পারলে চাকরি নাই।

অনেকেই জামা (আরো অনেক কিছুই) দেয়, কেউ এই ধান্ধাবাজিটি করে নি আগে, তারা বলেনি এটা জনসেবা।

উত্তর দিয়ে দিসি। এইটাকে জনসেবা বলে থাকলে রবি মিথ্যুক।

ধরুন, আপনাকে (জেলে) কেউ (জোতদার) বললো, ২টা ইলিশ মাছ ধরে নিয়ে আয়, ২০০টাকা দেব। নিয়ে আসলেন, আপনাকে দিলো ৩টা রুই মাছ। আপনি বলে উঠলেন, আরে মিয়া, টাকা কই? সে লোক জবাব দিলো, ৩ টা রুইয়ের দাম ২০০ টাকারও বেশি, আর তোরে টাকা দিলে কি করবি? কিছু কিনে খাবি তো? তো এই মাছ খা, সমস্যা কি? ভাত লাগলে ১টা মাছ বেচে কিনে নিস। আপনার ক্ষমতা নাই, আপনি মুখ বুজে তা নিয়ে চলে আসলেন।

এইখানে ব্যাটা মিথ্যা কথা বলসে। আমার তার সাথে "রুই মাছ" বেচার কোন পরিকল্পনা হয় নাই। ২০০ টাকার বদলে রুই মাছ বেচতে আগ্রহী না হওয়ার আমার এক হাজার কারণ থাকতে পারে।

এটা প্রমাণ করে যে, কত বড় 'ফেইলিয়র' এই সেতুটি। আর গরিবকে কিছু দিবেন আর সে মানা করবে, বা নিবেনা, এমন হয় কি?

গরিবকে নির্বোধ হইতে হবে, এমন কোন কথা আছে নাকি? এইটা "failure" হবে, সেইটা আগে থেকে বুঝে থাকলে না করে দিলেই তো হয়।

এই 'না নিলে নাই', এইটা বিবেচনা করার মত বোধ, যাদের দেয়া হচ্ছে, তাদের থাকে কি? গরিবকে যা দিবেন, হাভাতের মত সে তাইই নিবে।

বাহ! এর আগের বাক্যে যা বললাম, পুরা সেইটাই আপনি বললেন।

অ্যাঁ? নতুন শুনলাম, আমি তো জানতাম বাজারের ভিত্তি বিনিময়। যাকগে, দুটো-একটা সংজ্ঞা দিলে ভাল হয়, বই-টই থেকে।

আমি যা বলসিলাম, সেটা আমার নিজের ধারণা থেকে বলসিলাম। আপনি জিগেস করার পর বই খুঁজলাম।

আমাজনে খুঁজে দেখলাম সমাজবিদ্যার উপর সবচেয়ে বেশী প্রশংসা পাওয়া পাঠ্যবই কি আছে। খুঁজে পেলাম John J. Macionis-এর "Sociology". ( ১০৯ মেগাবাইটের বইটি নামানোর জন্য এখানে টিপ দিন। ) সেখানে যা পেলাম, লিখতেসি।

সমাজবিদ্যাকে তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করার তিনটা প্রধান পথ ( approach ) আছে। এইগুলা তার বইয়ের সমাজবিদ্যার তত্ত্ব ( "Sociological theory" Page - 12 )-এর মধ্যে আছে।

তিনটার দুইটা হচ্ছে অধিদৃষ্টির ( macro-level ) পথ। মানে, সমাজে কি হয় না হয়, সেইটার বড় ছবিটা দেখা। আপনি যদি পদার্থবিজ্ঞানের সাথে তুলনা করেন, তাহলে গ্রহ নক্ষত্র কিভাবে চলতেসে, সেইটা ব্যাখ্যা করে এই তত্ত্ব।

আরেকটা যে পথ থাকে, সেইটা হচ্ছে প্রতীকী-মিথস্ক্রিয়া অভিগমন ( Symbolic-Interaction approach. ) এটা সমাজকে বুঝার চেষ্টা করে অণুদৃষ্টি ( micro-level ) থেকে। এটা দেখে, সমাজের সদস্যদের মধ্যে কিভাবে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয়। পদার্থবিজ্ঞানের সাথে তুলনা করলে অণু-পরমাণুর মধ্যে দেখা।

নীচের দুই বাক্য আমি তুলে দিলাম বইটা থেকেঃ

"Since Weber’s time, sociologists have taken micro-level sociology
in a number of directions..... Other
contemporary sociologists, including George Homans and Peter
Blau, have developed social-exchange analysis. In their view, social
interaction is guided by what each person stands to gain or lose from
the interaction."

( ওয়েবারের সময় থেকে, সমাজবিদরা সমাজটার এই ছোট ছোট দিকগুলা বুঝার প্রচেষ্টাকে বেশ কয়েকটা দিকে নিয়ে গেসে। এইযুগের কিছু সমাজবিদ, যাদের মধ্যে আছেন জর্জ হোমান্স এবং পিটার ব্লাউ, একটা পদ্ধতি বের করেছেন, যাকে বলা হয় "সমাজ-বিনিময় বিশ্লেষণ।" তাদের মতে, সমাজের সদস্যদের মধ্যে যা কিছু ঘটে, সেসব ঘটে, তাদের একেকজন সেইসব ঘটনা থেকে কি পেতে পারে বা হারাতে পারে, সেইটার ভিত্তিতে। )

আমার কাছে প্রতীকী-মিথস্ক্রিয়ার বাকি ব্যাখ্যাগুলা বায়বীয় মনে হয়। আমি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী যে সমাজের সম্পর্কগুলার ভিত্তি হচ্ছে বিনিময়।

আপনি চাইলে এইটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে আমি আগ্রহী। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ একটা বইয়ের উৎস জানতে চাওয়ার জন্য। আপনি জানতে না চাইলে আমি আর এই চমৎকার বইটা নামাইতাম না।

( পুনঃশ্চঃ আমি অনেক শব্দের বাংলা অনুবাদ করতে চাইসি। আমি নিশ্চিত প্রায় সবই বাজে হইসে। আমাকে শব্দগুলার বাংলা অনুবাদ করতে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো। )

আমি তো জানতাম কেউ কেউ নিঃস্বার্থভাবেই দেয়, যেমন হাজি মুহম্মদ মোহসিন। উনি কি বস্তগত স্বার্থে দিয়েছিলেন কিছু?

আপনি সম্ভবত "নিঃস্বার্থভাবে দেয়া" এবং "নিঃস্বার্থ উদ্দেশ্য নিয়ে দেয়া"-কে এক ভেবে ফেলতেসেন।

প্রথমে বলি, দুইটার পার্থক্য কি।

আমি নিঃস্বার্থভাবে যদি কাউকে দেই, আমি তার কাছ থেকে বিনিময়ে কিছু পাবো না।

আমি নিঃস্বার্থ উদ্দেশ্য নিয়ে যদি কাউকে দেই, তাহলে আমি দেয়ার সময় মনে করতেসি আমি তার কাছ থেকে কিছু পাবো না।

আপনি মুহসিনের দানের কথা তো জানেন। এইটাই কথা। তারমানে, তার দানের কথা তখনো মানুষ জানতো। আর মানুষ যদি আপনার দানের কথা জানে, আপনাকে আপনার বিপদের সময় সাহায্য করবেই। আপনার সেইটা উদ্দেশ্য থাকুক বা না থাকুক। এইখানেও বিনিময়। আপনি আপনার সাথে কি হবে জানেন না; তার মানে এই না যে, আপনার সাথে যা হতে যাচ্ছে, তা হবে না।

প্রাসঙ্গিক বলে একটা কথা তুলে দিলাম। আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় কথাগুলার একটা। সমাজের অনেক সমস্যার কারণ বুঝতে ও সমাধান নিয়ে ভাবতে এইটা আমাকে সাহায্য করসেঃ "আপনি আপনার বংশাণুকে ব্যবহার করে নিজের প্রতিলিপি বানান না, আপনার বংশাণুরা আপনাকে ব্যবহার করে তাদের প্রতিলিপি বানায়।" ( "You don't use your genes to replicate yourself. Your GENES USE YOU to replicate themselves." James Kalat - Biological Psychology )

আপনি পরোপকার করলেন নিঃস্বার্থ উদ্দেশ্য নিয়েই। কিন্তু কার্যকরীভাবে প্রতিলিপিক্ষমতাসম্পন্ন বংশাণু শেষ পর্যন্ত আপনাকে দিয়ে সেই কাজটাই করাবে, যেটা তার উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করবে। যেহেতু বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে "আমি কি? আমার উদ্দেশ্য কি?" এই প্রশ্নটা বংশাণুদের জানার দরকার হয় নাই, সুতরাং আপনিও তাই আপনার বংশাণুরা যে এই ষড়যন্ত্র করতেসে, সেইটা by default ( এর বাংলা কি? ) জানেন না.।

ধন্যবাদ সময় নিয়ে এতো বড়ো মন্তব্য পড়ার জন্য।

...........................

প্রশ্ন

ধ্রুব আলম এর ছবি

"Since Weber’s time, sociologists have taken micro-level sociology
in a number of directions..... Other
contemporary sociologists, including George Homans and Peter
Blau, have developed social-exchange analysis. In their view, social
interaction is guided by what each person stands to gain or lose from
the interaction."

( ওয়েবারের সময় থেকে, সমাজবিদরা সমাজটার এই ছোট ছোট দিকগুলা বুঝার প্রচেষ্টাকে বেশ কয়েকটা দিকে নিয়ে গেসে। এইযুগের কিছু সমাজবিদ, যাদের মধ্যে আছেন জর্জ হোমান্স এবং পিটার ব্লাউ, একটা পদ্ধতি বের করেছেন, যাকে বলা হয় "সমাজ-বিনিময় বিশ্লেষণ।" তাদের মতে, সমাজের সদস্যদের মধ্যে যা কিছু ঘটে, সেসব ঘটে, তাদের একেকজন সেইসব ঘটনা থেকে কি পেতে পারে বা হারাতে পারে, সেইটার ভিত্তিতে। )

Social exchange = সমাজ-বিনিময় নয়, সামাজিক বিনিময়। Social = সামাজিক, সমাজ (Society) নয়। সমাজ ও সামাজিক এক কথা হলো না। সামাজিক-বিনিময় অনেক কিছুর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কিন্তু শুধু এর উপর সমাজ নির্ভর করে না, আরো অনেক কিছুর উপরেই করে। বিনিময়ই সমাজের একমাত্র ভিত্তি নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণও নয়। এখানে লেখকও তা বলেননি, তিনি সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অনুঘটক হিসেবে সামাজিক-বিনিময় বিশ্লেষণকে তুলে ধরেছেন।

আপনি অনুবাদ করেছেনঃ
"In their view, social interaction is guided by what each person stands to gain or lose from the interaction."

"তাদের মতে, সমাজের সদস্যদের মধ্যে যা কিছু ঘটে, সেসব ঘটে, তাদের একেকজন সেইসব ঘটনা থেকে কি পেতে পারে বা হারাতে পারে, সেইটার ভিত্তিতে।"

এটিকে আমি ম্যানিপুলেটিভ অনুবাদ বলতে চাইছি। আমি এই বাক্যটি সরল অনুবাদ করছিঃ “তাদের মতে, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া পরিচালিত/ নির্ণীত (এটি সঠিক অনুবাদ হলো না যদিও, ডিটারমাইনড=নির্ণীত) হয়, সেই মিথস্ক্রিয়া থেকে প্রতিটি ব্যক্তির লাভ-ক্ষতি থেকে।”

আমি সমাজের সংজ্ঞা বিষয়ক ঘাটাঘাটি করে দেখলাম (বই-টই না; নেটে, উইকিতে আর অভিধানে), 'বিনিময়' সমাজে আমরা কি করি বা করতে চাই, সেটির উপরে প্রভাব ফেলে। এরকম একটা কথার চল আছে মনে হয়, 'আমরা যা এবং যা করি, তাই সমাজ'। সেভাবে ভাবলে, বিনিময়ের প্রভাব আছে, কিন্তু এটিই সব নয়, এবং আপনি যে পরিমাণ গুরুত্ব বিনিময়কে দিচ্ছেন, তাও সঠিক না। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন মত রয়েছে এ বিষয়ে।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আলোচনাটায় ফিরে আসার জন্য।

Social exchange = সমাজ-বিনিময় নয়, সামাজিক বিনিময়।

অনেক অনেক ধন্যবাদ ভুলটা ধরায়া দেয়ার জন্য। এখনো আমার ভাষাদক্ষতা খুবই খারাপ পর্যায়ে আছে।

সমাজ ও সামাজিক এক কথা হলো না।

সম্পূর্ণ একমত। সামাজিক মানে সমাজ-সম্পর্কিত।

সামাজিক-বিনিময় অনেক কিছুর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কিন্তু শুধু এর উপর সমাজ নির্ভর করে না, আরো অনেক কিছুর উপরেই করে। বিনিময়ই সমাজের একমাত্র ভিত্তি নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণও নয়।

নাহ, সমাজ যে শুধু এর উপর নির্ভরই করে না, তা নয়। এইটা অবশ্যই সমাজের ভিত্তি, এবং সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ( যুক্তিভিত্তিক আলোচনার জন্য একটু পরে আবার আসবো এই ব্যাপারে। ) সমাজের আর কি ভিত্তি আছে, আমার জানা নাই। আপনি যেহেতু এইটাকে একমাত্র ভিত্তি মনে করেন না, আর কি ভিত্তি আছে বলবেন কি?

এখানে লেখকও তা বলেননি, তিনি সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অনুঘটক হিসেবে সামাজিক-বিনিময় বিশ্লেষণকে তুলে ধরেছেন।

অনুঘটক? কই? আমি তো দেখতেসি তিনি বলতেসেন, "সামাজিক মিথস্ক্রিয়া নির্দেশিত ( guided ) হয় সেই সমাজের প্রতিটি সদস্য সেই মিথস্ক্রিয়া থেকে কি পেতে বা হারাতে পারে, তা দিয়ে।" ( আমার আগের অনুবাদ প্রসঙ্গে আসতেসি একটু পরে। )

অনুঘটক মানে তো জানেন অবশ্যই। অনুঘটক ছাড়া একটা নির্দিষ্ট বিক্রিয়া হয় ঠিকই। কিন্তু অনেক ধীরে হয়। নির্দেশনা দেয়া পুরাই ভিন্ন ব্যাপার। নির্দেশনা ছাড়া আপনার গন্তব্য পুরাই অনির্দিষ্ট, আর নির্দেশনা থাকলে সেটা নির্দিষ্ট হয়ে যায়।

()এবার আমার আগের অনুবাদ প্রসঙ্গেঃ

আপনি অনুবাদ করেছেনঃ
"In their view, social interaction is guided by what each person stands to gain or lose from the interaction."

"তাদের মতে, সমাজের সদস্যদের মধ্যে যা কিছু ঘটে, সেসব ঘটে, তাদের একেকজন সেইসব ঘটনা থেকে কি পেতে পারে বা হারাতে পারে, সেইটার ভিত্তিতে।"

না, আমার আগের অনুবাদটা ভুল হইসে। তবে আপনি যেটা ধরসেন, সেইটা না। ( আপনি যেটাকে ভুল ভাবতেসেন, সেটা আসলে ভুল হয় নাই বলে আমি মনে করি। কেন মনে হয় নাই, সেইটার ব্যাপারে পরে আসতেসি। ) আমি সঠিক অনুবাদ করতেসিঃ

"তাদের মধ্যে, সমাজের সদস্যরা একজন আরেকজনের সাথে কি রকম আচরণ করে, তার পথটা দেখিয়ে দেয় তাদের একেকজন আরেকজনের সাথে কোন একটা ব্যবহারের জন্য যা পেতে বা হারাতে পারে।"

আমি আগেরবার লিখসিলাম "সদস্যদের মধ্যে যা কিছু ঘটে।" এটা ভুল, কারণ কথাটা দ্ব্যর্থক। উদাহারণস্বরুপ, ঘূর্ণিঝড়ও সমাজের সদস্যদের মধ্যে ঘটে। ( আগেরবার ওইরকম লিখসিলাম কেন, সেই প্রসঙ্গে আরো কথা আছে, তবে পরে আসতেসি। )

() এইবার আসি কেন, "অমুক ঘটনা ঘটাকে নির্দেশিত করে তমুক" ( আপনি যে "পরিচালিত/ নির্ণীত" অনুবাদ করসেন, সেইটাও সঠিক অনুবাদ হয় নাই ) আর "অমুক ঘটনাটা ঘটে তমুকের উপর ভিত্তি করে" কেন আসলে একই অর্থ বহন করে।

কারণ, একজন সদস্য অন্যদেরসাথে কিভাবে মিথস্ক্রিয়া করবে, সেইটার সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘটনাটা আসলে ঘটতেসে মানুষের মাথার ভিতরে, নিউরনে নিউরনে। সমাজের সদস্যরা কিভাবে মিথস্ক্রিয়া করবে, ( আসলে আপনি যে কোন কাজ কিভাবে করবেন ) সেইটার সিদ্ধান্ত নেয় নিউরনরা। আর এই নিউরনরা অবশ্যই যা-ইচ্ছা-তাই করতে পারে না ( তাদের নিজেদের কোন ইচ্ছা নাই বলে। ) যেটার উপর ভিত্তি করে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশিত করে। কথা একই হইলো। এইটা আমাদের একই ঘটনা বা ধারণাকে কয়েকভাবে প্রকাশ করার ভাষাগত বৈচিত্রতামাত্র।

() এইবার ফিরে আসি, কেন আমি আগেরবার ওইরকম অনুবাদ করি নাই। কারণ, আমি কখনো পাঠ্যবই পড়লে সেইটা বুঝার চেষ্টা করার সময় জটিল শব্দে চিন্তা না করার চেষ্টা করি। সেইজন্যেই interaction-য়ের অর্থ "মিথস্ক্রিয়া" আগে উল্লেখ করা সত্ত্বেও আমি বাক্যটা অনুবাদ করার সময় "সমাজের সদস্যদের মধ্যে যা কিছু ঘটে" লিখসিলাম ( অবশ্য ভুল ছিল ওইটা। আসলে অনুবাদটা হবে, "সমাজের সদস্যরা একজন আরেকজনের সাথে কি রকম আচরণ করে" ) শুধুমাত্র ব্যাপারটাকে সহজ করে উপস্থাপন করার জন্য। পাঠ্যবইয়ের কোন লেখার অনুবাদ করার সময়ও আমার মধ্যে এই প্রবণতাটা আছে, কারণ আমি প্রায় সকল পাঠ্যবইয়ের ভাষা ঘৃণা করি, এবং আমি চাই না কোন পাঠ্যবইয়ে এমন কিছু লেখা হোক যেটা একটা বারো বছরের বাচ্চার ভাষাজ্ঞানের কারোর জন্য বুঝা কষ্টসাধ্য হয়।

'আমরা যা এবং যা করি, তাই সমাজ'।

আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, আমরা সমাজে যা-যা করি, তা কেন করি?

()

হ্যাঁ, আপনি বললেন, সমাজের [ বা সামাজিক সম্পর্কের, একই কথা। একটা সাধারণ ( common ) সম্পর্ক না থাকা পর্যন্ত সেইটা সমাজ না। ] ভিত্তি বিনিময় না। আমি বললাম, "না, সমাজের ভিত্তি হচ্ছে বিনিময়।" আরো নির্দিষ্টভাবে বললে, বিনিময়টা হচ্ছে, "তুমি আমার বংশাণু টিকাইতে সাহায্য করবা, আমি তোমার বংশাণু টিকাইতে সাহায্য করবো।"

তো আমার বক্তব্যকে আমি প্রতিরক্ষা ( defend ) করবো। দেখেন, একটা তত্ত্বের পক্ষে এক কোটি প্রমাণ দেখাইলেও সেইটা নিশ্চিতভাবে সঠিক বলে প্রমাণিত হয় না। কিন্তু ব্যাখ্যাহীন একটা ব্যতিক্রম দেখাইলেই সেইটা ভুল হয়ে যায়।

তো আমার কথাটাকে সঠিক প্রমাণ করার একটাই উপায়। ব্যতিক্রমাভেদ্য ( exception-proof ) থাকা। তো, আপনি চাইলে আমাকে শুধুমাত্র একটা সামাজিক সম্পর্কের উদাহারণ দিতে পারেন, যেটা গড়ে উঠার ভিত্তি বিনিময় না। আমি আমার বক্তব্যকে প্রতিরক্ষা করার জন্য যতোদিনই লাগুক, আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।

তো আসেন, শুরু করি।

আমি কিছুখন শয়তানের উকিল ( devil's advocate ) সাজি। আমার বিরুদ্ধপক্ষকে সাহায্য করি। একটা উদাহারণ কি সাধারণ মানুষদের তাদের বাসা থেকে অনেক দূরে বাস করা সম্পূর্ণ অপরিচিত বন্যার্ত মানুষদেরকে সাহায্য করা হইতে পারে?

........................

প্রশ্ন

অতিথি লেখক এর ছবি

পুনঃশ্চঃ আমি উইকিকোষে এইটা পাইলামঃ

"Social exchange theory posits that human relationships are formed by the use of a subjective cost-benefit analysis and the comparison of alternatives."

( সামাজিক বিনিময় তত্ত্বের ধারণা অনুযায়ী মানবিক সম্পর্কগুলি গড়ে উঠে লাভ-খরচ বিশ্লেষণ ও বিকল্পগুলোর মধ্যে তুলনা করার মাধ্যমে। )

সেভাবে ভাবলে, বিনিময়ের প্রভাব আছে, কিন্তু এটিই সব নয়, এবং আপনি যে পরিমাণ গুরুত্ব বিনিময়কে দিচ্ছেন, তাও সঠিক না। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন মত রয়েছে এ বিষয়ে।

বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন মত তো আছেই। কিন্তু সব মতই যে সমান সঠিক, তা ভাবার নিশ্চই কোন কারণ নাই।

.....................

প্রশ্ন

ধ্রুব আলম এর ছবি

অত্যন্ত ক্লান্ত বোধ করছি আলোচনা চালিয়ে যেতে, আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনি আপনার মতে অটল থাকবেন, এটি দিনের আলোর মত পরিষ্কার।

আমি আমার কাছে বিষয়টি কেন অনৈতিক, তা আলোচনা করেছি এই লেখায়। এর বাইরে বেশ কিছু মন্তব্যও করেছি। নৈতিকতার কোন মাপকাঠি নেই, এটি দৃষ্টিভঙ্গীর বিষয়। আমি ও এই ব্লগে অধিকাংশ মানুষ ব্যাপারটি অনৈতিক মনে করেছেন। আপনি করেননি, সেটি আপনার বিষয়।

আপনি চাইলে আপনি কেন এটিকে অনৈতিক মনে করছেন না, বা যৌক্তিকই বা কেন মনে করছেন, একটি ভিন্ন লেখা দিন। সেখানে আগ্রহীরা আলোচনা করবেন। কিন্তু ত্রিমাত্রিক কবির লেখায় বা এখানেও ক্রমাগত প্রশ্ন করে যাওয়া বা উত্তর দেয়া, চাপান-উতোর আর উতোর-চাপান ছাড়া আর কিছু না।

আপনি আপনার অবস্থানটি ব্যাখা করে লিখুন বরং। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি আপনার মতে অটল থাকবেন, এটি দিনের আলোর মত পরিষ্কার।

এখন পর্যন্ত আমার মূল বক্তব্য থেকে সরে আসার মত কোন কারণ আমি পাই নাই। পাইলে অবশ্যই সরে আসবো। ( পরে আসতেসি আবার এই ব্যাপারে )

নৈতিকতার কোন মাপকাঠি নেই, এটি দৃষ্টিভঙ্গীর বিষয়।

নৈতিকতার অবশ্যই মাপকাঠি আছে এবং থাকতে হবে। এইটা কোন অলৌকিক ঐশ্বরিক জিনিষ না। সোজা কথাঃ কোন কাজ যদি নিজের ও অন্যের ক্ষতি করে, সেইটা অনৈতিক। ক্ষতি পরিমাপযোগ্য, সুতরাং কোন কাজ অনৈতিক কিনা, তাও পরিমাপযোগ্য। যে জিনিষ পরিমাপযোগ্য না, সেই জিনিষ আরেকজন মানবে কি মানবে না, সেইটা নিয়ে আপনি কিসের ভিত্তিতে কথা বলবেন? ( ব্রহ্মাণ্ডে অপরিমাপযোগ্য কিছু আছে কিনা, আমার জানা নাই। হ্যাঁ, মানুষের অনুভূতিসহ। )

আপনি চাইলে আপনি কেন এটিকে অনৈতিক মনে করছেন না, বা যৌক্তিকই বা কেন মনে করছেন, একটি ভিন্ন লেখা দিন।

আমি কেন অনৈতিক মনে করতেসি না, তার কারণটা খুব সোজা। জামাহীন বাচ্চারা জামা পাইতেসে বিনাশ্রমে।

যেহেতু আপনি আলোচনা আর চালিয়ে যেতে ক্লান্ত বোধ করতেসেন বলসেন, সুতরাং ধরে নিতেসি, আমার সাথে এইটাই আপনার ( যিনি এখন পর্যন্ত আমার সাথে এই বিষয়ে সচলায়তনে আলোচনা করা সর্বশেষ ব্যক্তি ) শেষ মন্তব্য ( ), তাই সারাংশ করার সময় হইসে। আমি যে প্রশ্নের কোন উত্তর এখনো পাই নাই, সেই প্রশ্নটা লিখে যাচ্ছি। যতোখন না পর্যন্ত আমি এই প্রশ্নটার উত্তর পাইতেসি, ততোখন পর্যন্ত "বাচ্চাদেরকে রবির প্রতীকসহ জামা দেয়ার শর্তে গ্রাহকের সাথে ব্যবসা করা অনৈতিক" বক্তব্যটাকে আমি ভিত্তিহীন ধরে নিবো।

প্রশ্ন ১: রবির বাচ্চাদেরকে জামা দিয়ে ব্যবসা করাকে দাসপ্রথার সাথে তুলনা করা কেন ভুল হবে না?

ব্যাখ্যাঃ কেউ কেউ ( হিমু, দস্যু ঘচাং ফু, ত্রিমাত্রিক কবি ) এইটাকে দাসপ্রথার সাথে তুলনীয় মনে করসেন, কারণ দাসপ্রথাতেও অল্প টাকা দিয়ে শ্রমিকদের দিয়ে অনেক বেশী কাজ আদায় করে নেয়া হইতো। আমি মনে করি, তুলনাটা ভুল। দাসপ্রথাতে দাসরা কাজ করতে বাধ্য, কিন্তু রবির জামা পাওয়া বাচ্চারা জামা পরতে বাধ্য না ( এমনকি গ্রাহকরাও রবির প্রস্তাবটি নিতে বাধ্য না। ) দাসপ্রথার কাজ দৈহিক শ্রমসাপেক্ষ, কিন্তু জামা পরা দৈহিক শ্রমসাপেক্ষ না, বরং শীতসহ বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে তা দেহের জন্য সুবিধাজনক। আর দাসপ্রথার সাথে তুলনা করেই কেন আমার একটা কাজকে নৈতিক-অনৈতিক ধরতে হবে? তাহলে দাসপ্রথা কিসের ভিত্তিতে অনৈতিক? রবির এই কর্মকাণ্ডটিকে কেন তার নিজ বৈশিষ্ট্যে ( তার ফলাফল বিবেচনায় ) বিচার করা যথেষ্ট না?

..................

( )

অবশ্য আপনি বা আর যে কেউ আলোচনা চালাইলে আমি অবশ্যই উত্তর দিবো। আমি কোন আলোচনা থেকে প্রস্থান করি না, সেইটা শুধু এই বিষয় নিয়ে না, যে কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ( সচরাচর বিবেচিত ) বিষয় নিয়েও।

..................

রবির আল্পনা জামায় দেখসেন বলে আপনার দৃষ্টিন্দ্রিয়তে ও মানবতাবোধে ( যেটার কোন সংজ্ঞা আমি পাই নাই এখনো ) বাজে লাগতেসে। আমি অনুরোধ করবো, বাচ্চারা জামা না পরলে যে কষ্টটা লাগে, সেইটা একবার একটু স্পর্শেন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করে দেইখেন।

.....................

প্রশ্ন

হিমু এর ছবি

আপনি আপনার ব্যাখ্যায় আমার নাম উল্লেখ করে যা বলিনি সেটা আমার মুখে গুঁজে দিচ্ছেন। আমি রবির এই ভোগলামিকে দাসপ্রথার সঙ্গে তুলনা করিনি। বরং আপনার হাস্যকর ব্যাখ্যাকে দাসপ্রথার প্রেক্ষাপটে রেখে আপনাকে দেখিয়েছি।

আপনি বারবার খুব কায়দা করে রবির দেওয়া জামাটাকে বিজ্ঞাপন হিসাবে দেখা এড়িয়ে যাচ্ছেন। কারণটা কী?

আপনার দেওয়া সংজ্ঞামতেই তো রবির এই কাজ করা অনৈতিক, কারণ রবি এই বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজে বাচ্চাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দিচ্ছে না। আর আপনার কি ধারণা, গায়ের ঘাম না বার হলে কোনো কাজের পারিশ্রমিক প্রাপ্য হয় না? বাচ্চারা যদি রবির বিজ্ঞাপন ছাড়া জামা পরতো, তাহলে সেটা কাজ হতো না। যে মুহূর্তে সে জামায় রবির বিজ্ঞাপনের সাথে সংযোগবাচক কোনো প্রতীক যোগ করা হবে, সে মুহূর্তেই সেটা কাজ হবে এবং সেটা পরা বাবদ রবির কাছ থেকে পারিশ্রমিক প্রাপ্য হবে। এই সহজ কথা বুঝতে না চেয়ে আপনি ঘুরেফিরে একই ক্যানেস্তারা পিটিয়ে যাচ্ছেন।

আপনার মাথায় লবণ রাখলে তো আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। যদি বলি সারাদিন লবণের মাটি মাথায় নিয়ে ঘুরেন, যাতে করে আমি ও আমরা সেই লবণ দিয়ে বরই খেতে পারি, বিনা পারিশ্রমিকে করতে রাজি হবেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি আপনার ব্যাখ্যায় আমার নাম উল্লেখ করে যা বলিনি সেটা আমার মুখে গুঁজে দিচ্ছেন। আমি রবির এই ভোগলামিকে দাসপ্রথার সঙ্গে তুলনা করিনি। বরং আপনার হাস্যকর ব্যাখ্যাকে দাসপ্রথার প্রেক্ষাপটে রেখে আপনাকে দেখিয়েছি।

আমি রবির জামা দেয়ার কাজটা যে অনৈতিক না, সেইটার পক্ষে যুক্তি দেখাইতে গিয়ে ০২/০৮/২০১৪ ৩টা ৯ মিনিটে বলসি যে, "... তারা কোন দান-খয়রাত করতেসে না, বরং এখানে পারস্পরিক সহযোগীতা করা হচ্ছে।" আপনি তার উত্তরে বলসেন, "আপনার যুক্তিটা বাইবেল বেল্টের দাসত্ব অ্যাপোলজিস্টরা দিয়ে থাকে, যে কালোরা সাদাদের কাছে দাস হিসাবে ভালো অবস্থায় ছিলো এবং গোটা ব্যাপারটা একটা পারস্পরিক সহযোগিতা মাত্র। "

রবির জামা দেয়ার ও বাচ্চার জামা পরে রবির ব্যবসা বাড়ানোর পারস্পরিক সহযোগীতাকে আপনি তুলনা করসেন বাইবেল বন্ধনীর দাসত্বসমর্থনকারীদের যুক্তির সাথে। যেহেতু দাসত্বসমর্থনকারীরা এসে এইখানে ওইটা লিখে দিয়ে যায় নাই, সুতরাং এইটা আপনারই চিন্তা। রবির জামা দেয়াকে পারস্পরিক সহযোগীতা হিসেবে বিবেচনা করা যায়, কারণ এইখানে বাচ্চার কোন বাধ্যবাধকতা নাই, বাচ্চার শারীরিক উপকার হচ্ছে, কিন্তু দাসদের মতো পরিশ্রম হচ্ছে না। ( আসতেসি আবার এই ব্যাপারে একটু পরে। )

আপনি বারবার খুব কায়দা করে রবির দেওয়া জামাটাকে বিজ্ঞাপন হিসাবে দেখা এড়িয়ে যাচ্ছেন। কারণটা কী?

কই? আমি তো অকুণ্ঠভাবে স্বীকার করতেসি এইটা একটা বিজ্ঞাপনই। একবার না, বহুবার করসি। আমার ব্যবসাকে ব্যবসা, বিজ্ঞাপনকে বিজ্ঞাপন বলতে মুখে বাজে না। ( কিন্তু বাচ্চাদেরকে রবির বিজ্ঞাপনসহ জামার মতো মৌলিক চাহিদার জিনিষ দেয়াটাকে প্রতিহত করাকে "মানবতা" বলতে বাজে। ) আপনাকে লেখা আমার সর্বশেষ মন্তব্যে, ৪ অগাস্ট ৮টা ২১ মিনিট, তো আমি বরং লিখসিঃ

"আর আমার মতে বিজ্ঞাপন ছাড়া জামা দেয়া অনুচিত। তারা জামা দিতেসে, এইটা বেশী মানুষ জানুক। জেনে তাদের পণ্য বেশী ব্যবহার করুক। তাদের পণ্য এই কারণে বেশী বিক্রি হচ্ছে দেখে আরো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আসবে এই জামা দেয়ার বাজারে। লাভ তখন বাচ্চাদের। তারা তখন দামও হাঁকাইতে পারবে।"

অন্যদিকে আপনি এইটাকে শুধুই বিজ্ঞাপনতক্তা হিসেবে দেখতেসেন।

কারণ রবি এই বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজে বাচ্চাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দিচ্ছে না।

নাহ, আমি তা মনে করি না। আমি মনে করি রবির দেয়া জামাটাই ন্যায্য পারিশ্রমিক। যদি সাথে টাকা দেয়া হয়, তাহলে রবির সেই জামার উপর তাদের যে কোন বিজ্ঞাপন যখন-তখন দেয়ার, জামা বদলানোর ও বাচ্চাদেরকে সেই জামা পরতে বাধ্য করার অধিকার পাওয়া ন্যায্য হয়ে যায়।

আর আপনার কি ধারণা, গায়ের ঘাম না বার হলে কোনো কাজের পারিশ্রমিক প্রাপ্য হয় না?

নাহ, আমি কোথাও বলি নাই তা। সেই জন্যেই বাচ্চা পাচ্ছে জামাটা রবির ব্যবসা বাড়ানোর বিনিময়ে। আপনি বাচ্চাকে ভিক্ষুক বানাইতে রাজি, কিন্তু রবির প্রতীকওয়ালা জামাটা দিতে রাজি না।

এবার -এর প্রসঙ্গে আসি। রবির জামা গায়ে পড়লে কিছু ক্যালোরি তো অবশ্যই খরচ হবে, যেহেতু জামার ভরগুলা গিয়ে পড়তেসে আমাদের হাড়ের উপর। কিন্তু সেইটা তো বাচ্চার ইচ্ছার উপর। সে পরলে পরবে, না পরলে নাই, দাসদের যে সুযোগ ছিল না। দাসরা তাদের খাবার পাওয়ার জন্য আরামদায়ক সীমার চেয়ে অনেক বেশী শারিরীর পরিশ্রম করতো। কিন্তু রবির জামা পরার ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতাটা নাই। জামা পরার সময় বেশী গরম লাগলে খুলে ফেলবে। জামা খুলে ফেলার জন্য তার খাবার কমে বা বন্ধ হয়ে যাবে না।

আপনার মাথায় লবণ রাখলে তো আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। যদি বলি সারাদিন লবণের মাটি মাথায় নিয়ে ঘুরেন, যাতে করে আমি ও আমরা সেই লবণ দিয়ে বরই খেতে পারি, বিনা পারিশ্রমিকে করতে রাজি হবেন?

আবার, উপমাটা ( analogy ) কতোটুকু সদৃশ হইলো? It doesn't even make sense, কারণ আমার মাথায় রাখা লবণ কেউ খাবে না, যেহেতু আমার মাথায় কোন জীবাণু থাকলে সেইটা লবণে লাগবে। আপনি সম্ভবত "লবনের মাটি" বুঝান নাই ( যদি বুঝায়া থাকেন, তাহলে, well, it doesn't make sense, কারণ লবণের মাটি কেউ খায় না, আর লবণের মাটি থেকে লবণ পাইতে হইলে প্রথমে লবণের মাটি আমার মাথা থেকে নামাইতে হবে ) বুঝাইসেন "লবণের বাটি"। লবণের বাটির ভারসাম্য রেখে চলতে হইলে আমার দুই হাত উপরে ধরে রাখতে হবে, ফলে আমি আমার অন্য কাজ করতে পারবো না। সুতরাং, আমার ক্ষতি হবে। পক্ষান্তরে, আমি লবণের বাটি রাখার জন্য বিনিময়ে আমার প্রয়োজনীয় কিছু পাচ্ছি না।

............

প্রশ্ন

হিমু এর ছবি

হ, বিরক্তির কারণে বাটি লিখতে গিয়ে মাটি বের হয়ে গেছে। ত্যানা প্যাঁচানোর একটা সীমা আছে তো, আপনি ঐ সীমাটা বুঝতে অক্ষম।

তবে যা বুঝলাম, আপনি পারিশ্রমিক ছাড়া এই কাজ করতে আগ্রহী না। যদি বলতাম পারিশ্রমিক হিসাবে লবণের বাটিটাই আপনাকে দেওয়া হবে, আপনি ঠিকই একটা অজুহাত বের করে ফেলতে পারতেন।

বাচ্চাদের পারিশ্রমিক হিসাবে জামা দেওয়াটা যে আপনার মতে "ন্যায্য", ঐখানেই আপনার নৈতিকতা জিনিসটা বোঝার ঘাটতি আছে। আপনাকে ওটা বোঝানো সম্ভব না, কারণ আপনি গরিব শিশুদের ঠকানোর ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। আর আপনার নৈতিকতা বিচারে আপনি পদে পদে "আমি তো গরিব না, কাজেই আমার জন্য এই যুক্তি খাটে না" গোছের যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। আপনার চোখে নৈতিকতা ধনীর জন্য এক রকম, আর দরিদ্রের জন্য আরেক রকম, কে আপনাকে নৈতিকতা বোঝাতে পারবে?

একটা বাচ্চা ভিক্ষা করছে, তার মানে এই না যে তাকে দিয়ে নিজের জন্য সুবিধা আদায় করিয়ে নিয়ে সেটার জন্য প্রাপ্য পারিশ্রমিক আপনি দেবেন না। আপনার যুক্তিগুলো সবই ঐ প্রাপ্য পারিশ্রমিক না দেওয়ার অজুহাত।

আর এই যে বারবার বলছেন, বাচ্চাগুলোকে পারিশ্রমিক দিলে রবির আরো কিছু বাড়তি "অধিকার" জন্মাতো, সেটারই বা ভিত্তি কী? আপনি কি পত্রিকায় একবার বিজ্ঞাপন ছাপানোর পর সেই বিজ্ঞাপন পাল্টানোর অধিকার রাখেন? বিজ্ঞাপনে কী কী পরিবর্তন আপনি সাধন করতে পারবেন, সেটা নির্ভর করবে মাধ্যম সেই পরিবর্তনকে কতোটুকু ধারণ করতে পারে, তার ওপর।

রবি বাচ্চাগুলোকে দাস হিসাবে ব্যবহার করছে, এই কথাটা আমি বলিনি, কিন্তু রবির অ্যাপোলজিস্ট হিসাবে আপনি দাসত্ব-অ্যাপোলজিস্টদের যুক্তিগুলো শোনাচ্ছেন বারবার।

আমার ধৈর্য কম দেখে আমি থেমে গেলাম। বিদায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

পুনঃশ্চঃ "কার্যকরীভাবে প্রতিলিপিক্ষমতাসম্পন্ন বংশাণু" -- এখানে আমার শব্দচয়নটা ঠিক হয় নাই। আমি বুঝাতে চাচ্ছি, তাৎপর্যপূর্ণ প্রজন্মসংখ্যায় টিকে থাকা প্রতিলিপিক্ষমতাসম্পন্ন বংশাণু।

ধ্রুব আলম এর ছবি

আপনি প্রচুর পরিমান প্রশাসনিক পরিভাষা এখানে পাবেন, বৈজ্ঞানিক লেখাতেও যা কাজে আসে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ! অসাধারণ জিনিষ তো! আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
পোস্টের বিষয়ের সাথে সহমত। তবে সব জায়গায় মুক্তিযুদ্ধকে টেনে আনাটা ঠিক মনে হয় না আমার কাছে, এখানে তো নয়-ই।

প্রশ্ন ভাইজান আপনি খুব সম্ভব আপনার এই ত্যানাপ্যাঁচানো ত্রিমাত্রিক কবি ভাইয়ের পোষ্টেও প্যাঁচাইছেন। আপনার অসীম ধৈর্য্য আছে। সহজ কথায় যে মানুষ বুঝবে না কোন ব্যাক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান যখন মানবতার সেবা করতে নেমে মানুষের থেকে নেওয়ার অর্থে নিজেদের লগো ব্যবহার অন্যায়, তার সাথে সারাদিন যুক্তি দিয়ে বুঝালেও ফলাফল সেই শূন্যই থাকবে। আপনি সেই শূণ্যের ঘরেই আছেন।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

সহজ কথায় যে মানুষ বুঝবে না কোন ব্যাক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান যখন মানবতার সেবা করতে নেমে মানুষের থেকে নেওয়ার অর্থে নিজেদের লগো ব্যবহার অন্যায়, তার সাথে সারাদিন যুক্তি দিয়ে বুঝালেও ফলাফল সেই শূন্যই থাকবে।

সহজ কথায় যে মানুষ বুঝবে না কোন ব্যাক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান যখন মানবতার সেবা করতে নেমে মানুষের থেকে নেওয়ার অর্থে নিজেদের লগো ব্যবহার অন্যায় না, তার সাথে সারাদিন যুক্তি দিয়ে বুঝালেও ফলাফল সেই শূন্যই থাকবে।

সাথে আরেকটা কথা। আমি কোন জায়গায় বলি নাই রবি "মানবতার সেবা" করতেসে।

অতিথি লেখক এর ছবি

কোনটা মানবতার সেবা আর কোনটা ব্যবসা এটা কি বলে দেওয়া লাগে? মানবিক বোধের কারনেই মূলত মানুষ পথ শিশু সহ এতিম অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসে।

আর আর্ত মানবতার সেবায় নেমে লগো ব্যবহার করা কেন অন্যায় কিংবা অনৈতিক হবে না একটু ব্যাখা করবেন?

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

কোনটা মানবতার সেবা আর কোনটা ব্যবসা এটা কি বলে দেওয়া লাগে? মানবিক বোধের কারনেই মূলত মানুষ পথ শিশু সহ এতিম অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসে।

আপনার "মানবতার সেবা" আর "মানবিক বোধ"-য়ের সংজ্ঞাটা একটু দেয়া যাবে কি? আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় আমি সেইখান থেকে আগাবো। ধন্যবাদ।

...............

প্রশ্ন

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ত্যানা প্যাঁচানোর ক্ষমতায় মুগ্ধ হলাম ভাই দেঁতো হাসি , আপনার সাথে এই বিষয়ে ত্যানা প্যাঁচানোর ইচ্ছে আর ধৈর্য্য কোনটাই নেই রেগে টং

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

"রবির কাজটা অনৈতিক" কথাটার পক্ষালম্বন করতে গিয়ে "মানবতার" এই ত্যানাটা আমি আমদানি করি নাই। আপনার "মানবতাবোধ"-এর সংজ্ঞাটা আপনিই দিবেন তাই।

আর আপনি সম্ভবত খেয়াল করে নাই, আমি ৩রা অগাস্ট ২০১৪ ৫টা ২৭ মিনিটে করা মন্তব্যের ৫ মিনিটের মধ্যেই আরেকটা মন্তব্য করসি, যেখানে লিখসি রবির কাজটা "ব্যবসা"। আপনি "ব্যবসা"র সংজ্ঞা চায়েন, আমি দিবো। ওই ত্যানাটা আমার।

ধ্রুব আলম এর ছবি

চলুক মাসুদ সজীব ভাই

অতিথি লেখক এর ছবি

আরেকভাবে বলা যায়,

সহজ কথায় যে মানুষ বুঝবে না কোন ব্যাক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান যখন ব্যবসা করতে নেমে মানুষের থেকে নেওয়ার অর্থে নিজেদের লগো ব্যবহার অন্যায় না, তার সাথে সারাদিন যুক্তি দিয়ে বুঝালেও ফলাফল সেই শূন্যই থাকবে।

ধ্রুব আলম এর ছবি

১। এক্ষেত্রে রবি ব্যবসা করতে নামেনি, মানবতার সেবায় নেমেছিলো

২। কোন ব্যাক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান যখন মানবতার সেবা করতে নেমে মানুষের থেকে নেওয়ার অর্থে নিজেদের লগো ব্যবহার অন্যায়

আমি উপরিউক্ত দুটি বিষয়ে একমত।

এমন লোগো-ওয়ালা মানবতার সেবার উদাহরণ দিন। আমি লোগো-ওয়ালা সেবা পাইনি এখনো, যেমন 'ফ্রেশ সিমেন্ট' বা 'আওয়ামি লিগ' ছাপ মারা শীতের কম্বল। তবে ভুল হতে পারে আমারও, এমন হয়তো হচ্ছে অহরহ।

কিন্তু কেউ যদি এই কাজটি করে, তবে আমার কাছে এটি অন্যায়, অনৈতিক। তাই বলে, শাস্তিযোগ্য অপরাধ না।

অতিথি লেখক এর ছবি

এমন লোগো-ওয়ালা মানবতার সেবার উদাহরণ দিন। আমি লোগো-ওয়ালা সেবা পাইনি এখনো, যেমন 'ফ্রেশ সিমেন্ট' বা 'আওয়ামি লিগ' ছাপ মারা শীতের কম্বল। তবে ভুল হতে পারে আমারও, এমন হয়তো হচ্ছে অহরহ।

জ্বী। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে এমন একটা উপহার দেখার সৌভাগ্য হইসে।

চকবাজারের বাইরে "সুন্দরবন মানি এক্সচেইঞ্জ" বলে একটা দোকান আছে। আমি মাসখানেক আগে গেসিলাম সেখানে। গিয়ে দেখি একটা ঘড়ি। ঘড়িটা নিথর হয়ে পড়ে আছে না জানি কবে থেকে। সেই ঘড়িতে এক ব্যক্তির নাম আর তার ব্যবসার/ দোকানের ঠিকানা ছিল। যদি আমার স্মৃতি ইতিমধ্যেই সম্পাদিত না হয়ে থাকে, তাহলে সম্ভবত সেইখানে একটা গোলাপ/ নাম-না-জানা ফুলের ছবি ও নীচে নববর্ষ জাতীয় কিছু লেখা ছিল।

ধ্রুব আলম এর ছবি

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা; এদের সাথে আপনি ঘড়ি মিলিয়ে ফেললেন? ঘড়ি, ক্যালেন্ডার, কলম বিতরণকে কি কেউ দান বলে জাহির করে, নাকি কোম্পানি/ পণ্যের প্রচার বলে জানে?

আপনি কি ধারণাটা বুঝেছেন তো? 'বিনাস্বার্থে দান' এবং 'প্রচারলক্ষ্যে পণ্য বিতরণ'?

অতিথি লেখক এর ছবি

আচ্ছা। আমি আমার ভুল মেনে নিলাম। ঘড়িকে উপহার বলা যায়। আর মৌলিক চাহিদার জিনিষ কেউ "উপহার" দেয় না, সেটা দানই হয়ে যায়।

তবে একটা কথা। আমি বা আপনি আর কোন প্রতিষ্ঠানকে মৌলিক চাহিদার জিনিষ দেখতে দেখি নাই, তার কারণ সম্ভবত আমাদের দুইজনের কেউই সেইরকম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সদস্য না, বা তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক অতোটা ঘনিষ্ঠ না।

অতিথি লেখক এর ছবি

“ব্যাপারটা এমনই, ওই পিচ্চিগুলা বা আমরা গরিব, তাই আমরা হতে পারি চলন্ত বিজ্ঞাপণ (না-জেনে) বা গিনিপিগ (সোশাল এক্সপেরিমেন্টের বা প্রজেক্টের)। আমাদের আবার নৈতিক-অনৈতিক কি? গরিবের অত কিছু ভাবতে নেই, যা ক'টা ভাত মাটিতে ফেলে-ছড়িয়ে দেবো, তীর্থের কাকের মত খুঁটে-খুঁতে তুলে খাবি। এটাই কর্পোরেট বিশ্বের শেষকথা।"

দেখেন, এই কথা ত্রিমাত্রিক কবির লেখাতেও বলসি, আপনারটাতেও বলি।

আদর্শ দুনিয়ায় আমি-আপনি কেউই চাই না বাচ্চাদের অপরিচিত কারো কাছ থেকে বিনামূল্যে জামা নিতে, তাদেরকে কাজ করতে হোক। আমরা কেউই চাই না যে চার সারির বদলে দুই সারির সেতু থাকুক আমাদের। কিন্তু যতোখন না পর্যন্ত আমরা চার সারির সেতুর আর কোন উৎস পাইতেসি, ততোখন পর্যন্ত দুই সারির সেতুওয়ালাকে আটকায়া দিলে ক্ষতিটা আমাদের। বাস্তব দুনিয়ায় স্বাগতম। ( আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করবেন। আদর্শ দুনিয়ায় কিন্তু আমরা কারো কাছ থেকে কিছু দান হিসেবে নেই না। সবাই যার যার কাজ করবে। যার যার কর্মফল, সে সে ভোগ করবে। )

এইবার জামার ব্যাপারে। শিহাব সুমন অসাধারণ একটা সুচিন্তিত পথ আমাদেরকে দেখিয়ে দিসেন। রবি এইবার বিজ্ঞাপনের জামা দেয়া দেখে লাভের কথা চিন্তা করে সামনের বার ওদের পথ দেখে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলাও জামা দিতে আসবে। ( আমার আকুল অনুরোধ, পাঠকদের মধ্যে যারা বড়ো বড়ো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তারা যেন রবির এই কার্যক্রমটা তাদের উপরস্থ কর্মকর্তাদের নজরে নিয়ে আসেন। ) যখন এই বিজ্ঞাপনবিক্রেতা বেড়ে যাবে, তখন বাচ্চাদের হাতে সু্যোগও বাড়বে। তখন বাচ্চারা দাম হাঁকানোর সুযোগ পাবে। আমার ধারণা, দেখা যাবে বাংলালিংক বাচ্চাদেরকে টাকা দিয়ে বলতেসে, "তোরা রবিরটা পরবি না, আমাদেরটা পর।" অর্থনীতি চলেই এইভাবে। ক্রেতার সুযোগ বেশী থাকলে বেচার ঠেকাটা বিক্রেতার।

শিহাব সুমনের প্রতি আবারো অশেষ কৃতজ্ঞতা। আপনি অতো সরল, অথচ এতো অসাধারণ একটা সমাধান দিসেন যে আমি প্রতিবারই মুগ্ধ হচ্ছি।

ধ্রুব আলম এর ছবি

মানছি জিয়া ও রবির এনালজিটা মোক্ষম হয়নি, তবে ব্যাপারটা হচ্ছে, রবি কিন্তু 'জাগো' প্রজন্মের কাছে এখন বিরাট কাজ করে ফেলেছে, এমন একটা ধারণা দিয়েছে। ফেসবুকে যা যা প্রতিক্রিয়া দেখছিঃ

১। এই হাসির মূল্য কত? এক লোগোতেই এই আনন্দ নষ্ট করে দিয়েছে কি?
২। আমাদের যা করার করেছি, কিছু শিশুর আছে ঈদ আনন্দ পৌছে দিয়েছি, সবকিছুতেই খারাপ বের করার কিছু মানুষ থাকবেই!

ইত্যাদি ইত্যাদি।

ব্যাপারটি, মেজরসাবকে হিরো বানানোর মত, জোর করে। ঘোষণা দেয়াতে (বঙ্গবন্ধুর পক্ষে) ওই সময়ে একটা মাহাত্ম্য থাকতে পারে, কিন্তু সেটিই তাকে মহান করে তোলে না। এবং উনিই একমাত্র নন, প্রথম তো ননই। রবিও কিন্তু নিজেদের ঢোল পিটাচ্ছে, খানিকটা হলেও অন্যের দানে, এবং প্রতারণামূলকভাবে। এটা মোটেই দান হয়নি, হয়েছে নির্লজ্জ প্রচারণা, কিন্তু তারা শুনিয়েছে মানবতার বাণী।

অতিথি লেখক এর ছবি

রবির নিজের ঢোল পিটানোর অধিকার আছে। সে নিজে থেকে একটা উদ্যোগ নিসে, কাজটা সারছে গ্রাহকের সম্মতিতে, এবং পুরা কাজটার দায়িত্ব সেই নিসে। এইগুলার কোনটাই জিয়ার সাথে যায় না।

রবি "দান" করতেসে, এই কথাটা আমি কবে কোথায় বললাম?

আপনার ফেইসবুকে প্রাপ্য প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেঃ

সবকিছুতে খারাপ বের করার মানুষদেরা দরকার। নিজেকে যাচাই করার জন্য। সবকিছুতে খারাপ বের করার মানুষ সবসময় ভুল হয় না ( বরং আমার ধারণা, তারা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক। )

..................

প্রশ্ন

ধ্রুব আলম এর ছবি

গ্রাহকের সম্মতি কোথায় ছিলো, ছাপমারা জামা দেয়াতে? জনমত তো তা বলছে না।

রবি কোন দায়িত্ব নেয়নি, বরং সে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলো, তা পালন করতে গিয়ে সে শঠতার আশ্রয় নিয়েছে। এটি একটি বিজ্ঞাপণ হয়েছে তাদের। তারা কি বলেছিলো? ঈদের জামা দেবে। এর মানে কি দাড়াঁয়? জনসেবা। তাকে তো কেউ এত মহান হতে বলেনি, সে নিজেই হয়েছে। তাও নিজের পয়সাতে জনসেবা না, কর্পোরেট জনসেবা, তুমি ওমন করলে, আমি এমন করবো। সেটিও মেনে নিচ্ছি, কিন্তু আদতে ফলাফল কি এসেছে?

আবারো বলছি, গরিবের কোন মতামত নেই। আপনি তাকে ৩ দিনের বাসি, কিন্তু খেলে ক্ষতি নেই, এমন রুটি দিলেও সে তা খাবে। অনেক সময় এদেরকে বলা হয়, ক্যাপটিভ কাস্টমার। যেমন, পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা, তাদের ৩০০০-৪০০০ টাকা বেতনটাই অমানবিক। কিন্তু তাদের আর কোথাও যাবার উপায় নেই, তাই ৫০০ টাকার বেতন বৃদ্ধিও আমাদের কাছে নায্য মনে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

গ্রাহকের সম্মতি কোথায় ছিলো, ছাপমারা জামা দেয়াতে? জনমত তো তা বলছে না।

ইয়ে, ২৫ লাখ গ্রাহক বলতেসে।

রবি কোন দায়িত্ব নেয়নি,

আমি জামা কেনা ও বিতরণের দায়িত্বের কথা বলতেসি।

তারা কি বলেছিলো? ঈদের জামা দেবে। এর মানে কি দাড়াঁয়? জনসেবা।

আমি সম্পূর্ণ একমত যে রবির উদ্দেশ্য তাই। "জনসেবা" হিসেবেই দেখানো। কিন্তু আসলে এইটা জনসেবা না।

যেমন, পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা, তাদের ৩০০০-৪০০০ টাকা বেতনটাই অমানবিক।

আবারো, কতোটুকু সমতুল্য পোশাক শিল্পের শ্রমিক ও রবির জামা নেয়া বাচ্চারা?

পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের তিন-চার হাজার টাকা পাইতে শারীরিক শ্রম দিতে হইসে। বাচ্চাদের রবির জামা পাইতে কোন শ্রম দিতে হয় নাই। পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা কাজ করতে বাধ্য। বাচ্চারা জামা পরতে বাধ্য না। পোশাক শিল্পের শ্রমিকদেরকে ওই টাকা ( যে পরিমাণেরই হোক ) দিতে দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান, আর বাচ্চাদেরকে জামা দিতে রবি দায়বদ্ধ না। সাথে যোগ করেন, বাচ্চাদের জামাটা মৌলিক চাহিদা, এইটার অভাবে কষ্ট পাচ্ছিল তারা।

ধ্রুব আলম এর ছবি

আর ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্যে এবং প্রশ্ন সাহেবকে দুটো কথা বলার জন্যে হাসি

উনার সমস্যা আমি বুঝতে পারিনি, হিমুভাই চালিয়ে যাচ্ছেন এখনো। উনারও অসীম ধৈর্য্য, না বুঝিয়ে ছাড়বেন না। আর ইনিও বুঝে উঠবেন না।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আলোচনটা আগের পোস্টেই হতে পারত।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ধ্রুব আলম এর ছবি

হুম, কিন্তু চিন্তা এত বড় হয়ে গেলো যে আলাদা করে দিলাম। আর আমি বুঝিনি, ওখানে এত বিশাল টাইপ আলোচনা হতেই থাকবে, এবং আমার মতটি, আর সেখানে খাপ খাবে নাকি।

আমার প্রতিক্রিয়াটি ব্যক্তিগত এবং সে লেখাটি পড়ার আগেই মাথায় আসা।

মূলকথাটি যা মাথায় এসেছিলো, ফ্রি জিনিশ দিলেই উপকার আর ভাল হয়না, দেয়ার ধরণের মধ্যেও একটা ব্যাপার আছে। রাস্তার কুকুরকে পাউরুটি ছুড়ে দেয়া আর আদর করে বসিয়ে খেতে দেয়ায় একটা পার্থক্য পাই।

ধন্যবাদ, পড়বার জন্যে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কবি ভাই,
এইটা আমার কাছেও মেটাব্লগিং এর দায়ে পড়তে পারে বলে মনে হচ্ছিল। তবে আপনার পোস্টে "দিতাছি দয়া করে, যা দিব তাই খাবি" সমর্থক গোষ্ঠীর সুবিশাল আলোচনার ফলে যেরকম নয়া দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে এর প্রেক্ষিতে এটাকে মৌলিক পোস্ট হিসাবে স্বীকৃতি না দিয়াও পারতেছিনা। ব্যাপারটা কেমুন জানি। ইয়ে, মানে...

সম্পূরক পোস্ট হিসাবে আপনাদের দুটি পোস্টেই অপরটির লিঙ্ক জুড়ে দেয়া যায় কি? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ধ্রুব আলম এর ছবি

আমি নতুন মানুষ, কিভাবে লিঙ্ক জুড়ে দেয় জানিনা, কেউ দিলে খুশি হব। ধন্যবাদ লেখাটি পড়ে মন্তব্যের জন্যে। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব্য লেখার ঘর বা সচলায়তনে নতুন লেখা জমা দেয়ার সময় খালি ঘরের উপরে অনেকগুলা ছোট ছোট প্রতীকওয়ালা বাক্স দেখেন না? ওই যে, B, I, U -- এইসবের একটা বাক্সতালিকা? সেইখানে বাঁ থেকে দ্বিতীয় ঘরটায় একটা ভূগোলক দেখতেসেন? চমৎকার।

এবার আপনি মন্তব্যের যে শব্দগুলার সাথে একটা তড়িৎপৃষ্ঠার সংযোগ লাগায়া দিতে চান, প্রথমে সেই শব্দগুলাকে নির্বাচন করুন আপনার ইঁদুরটার ( mouse )-এর সাহাযে। এইবার সেই ভূগোলকে টিপ দিন। দেখবেন তড়িৎপৃষ্ঠার ঠিকানা বসানোর জন্য URL লেখা একটা ঘর আছে। সেইটার মধ্যে বসান আপনার তড়িৎপৃষ্ঠাটির ঠিকানা।

আবরাকাডাবরা। হয়ে গেল আপনার কাজ!

ধ্রুব আলম এর ছবি

চলুক

ধ্রুব আলম এর ছবি

লিঙ্ক জুড়ে দিয়েছি হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আমি রবি ব্যবহার করি না, আমার নিকটাত্মীয়, কাছের বন্ধু বান্ধবদের মধ্যেও কেউ রবি ব্যবহার করে বলে মনে পড়ছে না। তাই দান করিবার সুযোগ বঞ্চিত হইয়া অতিশয় দুঃখিত! মন খারাপ

ধ্রুব আলম এর ছবি

সমস্যা নেই, ভবিষ্যতে আরো অনেক এমন সুযোগ আপনি পাবেন। সবে তো শুরু, গুরু চোখ টিপি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

ব্যাপারটা এমনই, ওই পিচ্চিগুলা বা আমরা গরিব, তাই আমরা হতে পারি চলন্ত বিজ্ঞাপণ (না-জেনে) বা গিনিপিগ (সোশাল এক্সপেরিমেন্টের বা প্রজেক্টের)। আমাদের আবার নৈতিক-অনৈতিক কি? গরিবের অত কিছু ভাবতে নেই, যা ক'টা ভাত মাটিতে ফেলে-ছড়িয়ে দেবো, তীর্থের কাকের মত খুঁটে-খুঁতে তুলে খাবি।

এর পরেও মানুষ ত্যানা প্যাচাইতে আসে কেম্নে বুঝিনা। চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ধ্রুব আলম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

এক লহমা এর ছবি

এই লেখা, কবির আগের পোস্ট, দুই পোস্ট মিলিয়ে আমার যা মনে হয়েছে, তা এই পোস্ট থেকে কয়েকটি জায়গা একত্র করে দিলে পাওয়া যায়ঃ

“লাভের পয়সা কেউ দান করতে বলেনি, না করলে না করো। কিন্তু তোমাদের ঈদের জামা দেব বলে, আমার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বানালাম, তাও অন্যের পয়সায় (ধরলাম আংশিক হলেও)"

“রবি যাদের জামা দিয়েছে, তারা এতই নিঃস্ব যে, এদের আপনি যদি ২টা চকলেট দেন, এরা খুশি। (এদেরকে আপনি বিনা দোষে থাপ্পড়ও দিতে পারেন, এরা কিচ্ছু করতে পারবে না, কাদবেও না হয়তো, অভ্যাস হয়ে গেছে। আমি অনেককে দেখেছি, গায়ে লেগেছে বলে এদের মারতে, কারণ নোংরা হয়ে গেছেন তাদের ছোঁয়ায়)। কিন্তু চকলেটের বদলে ভাত দিলে একটু ভালো হত, এই যা।

এদের রবি ভাত দেয়নি, ছাপ-মারা জামা দিয়েছে, ঈদের জামা (ছাপ-ছাড়া হলে সমস্যা ছিলো না, কেউ তাদের ভাত দিতে বলেনি)। এটা প্রচন্ড নোংরা একটা এক্সপ্লয়েটেশন, এত নোংরা করে এদের আগে কেউ বলেনিঃ ভিক্ষার চাল কাঁড়া-আকাঁড়া, লোগোওয়ালা আর লোগো-ছাড়া, তোদের কি আসে যায়, তোদের তো জামাই নাই।"
“ব্যাপারটা এমনই, ওই পিচ্চিগুলা বা আমরা গরিব, তাই আমরা হতে পারি চলন্ত বিজ্ঞাপণ (না-জেনে) বা গিনিপিগ (সোশাল এক্সপেরিমেন্টের বা প্রজেক্টের)। আমাদের আবার নৈতিক-অনৈতিক কি? গরিবের অত কিছু ভাবতে নেই, যা ক'টা ভাত মাটিতে ফেলে-ছড়িয়ে দেবো, তীর্থের কাকের মত খুঁটে-খুঁতে তুলে খাবি। এটাই কর্পোরেট বিশ্বের শেষকথা।"
চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ধ্রুব আলম এর ছবি

গুরু গুরু অনেক অনেক ধন্যবাদ, পুরো লেখাটি পরে সারমর্মটুকু তুলে আনার জন্যে হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

'পরের ধনে পোদ্দারি'- বাগধারাটা এইজন্যই বানানো হইছিলো।

রবি নিজের পয়সায় কাউরে নিজেদের লোগোওয়ালা জাইঙ্গা দিলেও কেউ আপত্তি করতো না। আর দশ জনের থেকে পয়সা নিয়ে নিজের নামে পোদ্দারি করেই ফেঁসে গেছে।

ধ্রুব আলম এর ছবি

হে হে হে, সে আর বলতে! খাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

কিন্তু এই পোদ্দারি করার অনুমতিটা "পর"-রাই দেয় নাই কি?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।