এককালে এসএসসি, এইচএসসি দিয়েছিলাম। গোল্ডেন কোনটাতেই পাইনি, দুক্ষেত্রেই দুটো করে মিস গিয়েছিলো। ইন্টারে আবার ইংরেজিতে এ-প্লাস তো অনেকদূর, এ মাইনাস পেয়েছিলাম। এখনকার কথা ভাবলে গা শিউরে ওঠে! পরে কিন্তু জিআরই ভার্বাল আর আইএলটিএসে খারাপ করিনি (আর আমার এ-প্লাস পাওয়া বন্ধুগণ কি করেছে, সে নাহয় নাই বললাম)
কোনমতে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পেরেছিলাম, ১৮ দরকার ছিল, পরীক্ষা দিতে বসতে, আমার ছিলো সাড়ে আঠারো। আজকাল ভাবলেই মনে হয়, বিরাট বাঁচা বেচে গেছি! এখন যে পরিমাণ এ-প্লাসের ছড়াছড়ি, তাও আবার গোল্ডেন!
আমার সময়ের গোল্ডেন-ওয়ালারা কোথায়? আমি বলতে পারি, ৫০% বুয়েট-মেডিকেলে পড়ে, খেয়ে-পরে ভালই আছে। আর বাকি ৫০%? আমার কোন ধারণা নেই, তারা কই গেছে কে জানে। সেই ১০-১২ বছর আগের সেই নাক-উঁচু গোল্ডেন এ-প্লাসরাই যদি হারিয়ে যেতে পারে, তাহলে আজকের কাঁচকি মাছের ঝাঁকে ঝাঁকে মত এ-প্লাসেরা কই যাবে?
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বুয়েটে আমার ক্লাসে, এবং আমার বন্ধুমহলেও এই সোনার ছেলেরা বা মেয়েরা কমই ছিলো। খুব খুব সাধারণ জিপিএ নিয়ে আসা অনেক অনেক ছেলে-মেয়ে পড়তো বুয়েটে। এসএসসিতে ৩-৪টা মিস, এইচএসসিতে ২টা মিস এমন অনেকেই ছিলো। আমি নিজেই তো দুটা করে মিস। তারা অনেকেই বাইরে পড়ছে এখন, অনেকে বিসিএস ক্যাডার (আমি দুটোরই সুযোগ পেয়েছিলাম, আরো অনেকেই পেয়েছিলো), অনেকে অনেক কিছু। ওই দুটো রেজাল্ট কি খুব বড় প্রভাব ফেলেছে তাদের জীবনে। একেবারে ফেলেনি বলা যায় না, ২-৩ মাসের জন্যে ফেলেছে, তারপরে ওটা দিয়ে আর কিছু আসে যায়নি। অন্যদিকে, গোল্ডেন ধুয়ে কেউ পানি খায়নি, খেতে পারেনি।
এখন হয়তো অনেকের বুয়েট-মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন হয়তো শেষ হয়ে যাবে, তবে জীবন কিন্তু শেষ না এখানে। কি আসে যায় বুয়েটে না পড়লে? আমি যেহেতু বুয়েটে পড়েছি, তাই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুয়েট আর ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কিছু কথা বলি।
বুয়েট এমন কোন হাতি-ঘোড়া না, সে আপনাকে এমন বিশেষ কিছুই শেখায় না, যা অন্য কোথাও আপনি পাবেন না। আর বুয়েটে পড়া একটা শখ হতে পারে, জীবনের উদ্দেশ্য না। কারো জীবনের যদি উদ্দেশ্য থাকে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, তবে কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট, শাহজালাল, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একেবারে কোথাও সুযোগ না পেলে, বাপ-মার পয়সা থাকলে কিছু প্রাইভেট (সব নয়!) রয়েছে।
আর আমাদের একটা বাজে ধারণা আছে, সেটা হচ্ছে 'ইঞ্জিনিয়ার বাড়ি/ গাড়ি/ প্লেন বানায়'। আরেকটা ভুল ধারণাও আছে যে, 'আর্কিটেক্ট বাড়ি ডিজাইন করে'।
প্রথমটা নিয়ে বলতে হয়, ইঞ্জিনিয়ার খালি বাড়ি/ গাড়ি/ প্লেন বানায় না, ইঞ্জি্নিয়ার সাথে রাস্তা/ বাধ/ খাল ইত্যাদি বানায়, দুনিয়ার আপামর বস্তু ডিজাইন করে, প্রোগ্রামিং করে, প্রজেক্ট প্ল্যানিং করে, সোসাল, ইকনমিক, এনভারনমেন্টাল ইম্প্যাক্ট এনালাইসিস করে এবং আরো অনেক অনেক কিছু করে, যার লিস্ট খুব সহজে বানানো সম্ভব নয়।
আর দ্বিতীয়টির ব্যাপারে জানা দরকার, আর্কিটেক্ট ডিজাইন করে ভালো কথা, কিন্তু সে একটা ভিশন দেখায়, ভাসা ভাসা কিছু হিসেব করে, একটা খসড়ার মতই জিনিশ দাঁড়া করায়, যার অনেকটা কল্পনা/ রূপকল্প, ব্যবহারিক/ প্রায়োগিক অংশ খানিকটা কম। সেই ভিশনকে বাস্তব রূপ দেয়া, ইঞ্জিনিয়ারের কাজ। একা ইঞ্জিনিয়ার একটা বাড়ি তৈরি করে দিতে পারে (দুঃখজনক হলো, বাস্তবেও তাই হচ্ছে), সেক্ষেত্রে সেটি দেখতে হবে একটি ট্যাঙ্কের মত, সুন্দর গাড়ির মত না। আর একা আর্কিটেক্ট একটি সুন্দর বাড়ির ধারণা দিতে পারবে, কিন্তু তা দাঁড়া করাতে পারবে না। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া যেকোন কিছু বাস্তবে তৈরি করা যেমন অসম্ভব, তেমনি আর্কিটেক্ট ছাড়া সেটি সুন্দর ও রুচিসম্মতভাবে পরিবেশন অসম্ভব।
আমরা যত দ্রুত ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ধারণাটাকে বিস্তৃত করি, আমাদের দেশের স্টেরিওটিপিকাল ধারণা থেকে বের হয়ে আসি, আমাদের জন্যে তত মঙ্গল। এত কথার অবতারনার একটাই কারন, প্রকৌশলী হওয়ার জন্য শুধু বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়া লাগে না, জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়েও ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সম্ভব। গণিত, পরিসংখ্যান, পরিবেশ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ইত্যাদি বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে পড়ালেখা করে, খুব সহজেই বাইরে এসে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পোস্ট গ্রাজুয়েট করা সম্ভব। বুয়েটে মাস্টার্স করতে উৎসাহ দিচ্ছি না কারণ, বাংলাদেশ নিকৃষ্টতম মাস্টার্স মনে হয় সেটি। আর ল্যাব, সিলেবাস ও রিসার্চ ফ্যাসিলিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো বুয়েটের থেকে মোটেই পিছিয়ে নেই, বরং কিছু ক্ষেত্রে এগিয়েই রয়েছে। একটা বিষয় বুঝতে হবে, বুয়েট বাংলাদেশেরই একটা একটা অংশ, কোন ফেরেশতা এখানে এসে পড়ায় না, এটি ঈশ্বরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিতও হয় না।
কারো যদি ইচ্ছে থাকে, উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার, তবে দেশের থেকে আমি বিদেশকেই অগ্রাধিকার দেবো। এর প্রধান কারন, মাস্টার্স বা পিএইচডির আসল উদ্দেশ্য গবেষণা, যা দেশে খুব কমই হয়ে থাকে। ইচ্ছে হলে পরে দেশে ফেরত আসবেন, সেটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর বুয়েটে যা হোক, গবেষণা যে হয় না, এটি বলে দিতে পারি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি, বাইরে যাবার ক্ষেত্রে, আপনি কোথা থেকে পাশ করেছেন, কি নিয়ে পড়েছেন, তার থেকে গুরুত্ত্ব পায়; আপনার ইচ্ছাটি কি, জিআরই আর আইএলটিএস স্কোর, একটি ভাল রিসার্চ প্রপোজাল, আপনার স্টেটমেন্ট অফ পারপাস এবং সর্বোপরি আপনার হবু সুপাইভাইজারকে সন্তুষ্ট করার ক্ষমতা। কেউ বিবেচনা করে না, আপনি কোথা থেকে পাশ করেছেন। বাইরের অধিকাংশ মানুষ যেমন বাংলাদেশ চিনেনা, তেমনি বুয়েটও চিনে না। বুয়েটে পড়লে অবশ্যই আপনি বাড়তি একটু সুবিধা পাবেন, সিনিয়র বড় ভাই-আপুদের থেকে, তারা রেফার করে দেন মাঝে মাঝে। আবার, তাদের মারফতে অনেক প্রফেসর বুয়েটকে প্রেফারেন্সও দিতে পারেন, অস্বাভাবিক কিছু নয়।
কিন্তু সব কথার শেষ কথা হলো, হাজার মাইল দূরের অচেনা একজনকে শুধু কাগজপত্র দেখে আর এক স্কাইপ ইন্টারভিউ নিয়ে যাচাই করার ক্ষেত্রে বুয়েট আর অন্য প্রতিষ্ঠান, খুব বেশি পার্থক্যের সৃষ্টি করে না, সেই প্রফেসরকে প্রায় অন্ধকারেই ঢিল ছুড়তে হয়। সে যদি বুয়েটের নাম জেনেও থাকে, প্রেফারেন্স দিয়েও রাখে, আপনি যদি দুটো আন্তর্জাতিক মানের পাবলিকেশন দেখান, আপনাকে কোনভাবেই উনি উপেক্ষা করবেন না। তার বুয়েটিয়ান/ ইঞ্জিনিয়ার দরকার না, দরকার তার কাজের সাথে সম্পর্কিত রিসার্চার, এমনকি সে যদি ইঞ্জিনিয়ার না হয় তাহলেও।
আর যারা দেশে থেকে চাকরি-ব্যবসা করতে চান, তাদের দুশ্চিন্তার কোন কারণই নেই। খুব অল্প ক্ষেত্রেই মনে হয়, এবিষয়ে বুয়েট বা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার প্রভাব রয়েছে, সেটি ভাল-খারাপ যাই বলুন। সরকারি/ বিসিএস জেনারেল লাইনের চাকরিগুলো পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান খুব বেশি কাজে আসে না। আর যদি ইঞ্জিনিয়ারিং-ই করতে চান, তবে স্ট্রাকচার বা জিওটেক, সাধারণত এই দুটো বিষয় বাদ দিয়ে বাকি যেকোনটিতে (ট্রাফিক-ট্ট্রান্সপোর্ট, পরিবেশ, আরবান প্ল্যানিং, পানিসম্পদ, হাইড্রোলজি ইত্যাদি) আপনি উচ্চশিক্ষা নিতে পারেন, ট্রেনিং কোর্স করতে পারেন। বর্তমান বিশ্বে বরং শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছাত্র থেকে দুই বা ততোধিক বিষয়ে জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের মূল্যই এখন বেশি। কোন একটি বিষয়ে গভীর কারিগরী জ্ঞানের (ইন-ডেপথ টেকনিক্যাল নলেজ) যেমন মূল্য রয়েছে, তেমনি সামগ্রিক চিত্রটি অনুধাবণ (গেটিং দ্যা অভারঅল পিকচার) করারও মূল্যও কম নয়। আর কর্মক্ষেত্রে নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার পদবিটি না লাগিয়েও অনেক কাজে আপনি আপনার ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান কাজে লাগাতে পারেন। যেমন, পুলিশের ট্রাফিক ডিপার্টমেন্টে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়ে, জ্বালানী মন্ত্রনালয়ে ইত্যাদি। এছাড়াও পররাষ্ট্র বিষয়ক অধিকাংশ সমস্যাই প্রকৌশল সম্পর্কিত, যেমনঃ টিপাইমুখ বাধ সমস্যা, তিস্তা বা গঙ্গা-পদ্মার পানির সমস্যা, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ইত্যাদি।
সবশেষে বলতে হয়, কারো প্রতিভাকে কাজে লাগানোর ইচ্ছে থাকলে, পরিশ্রম করার আগ্রহ থাকলে, কেউ আটকে রাখতে পারবে না, দু-একটা পরীক্ষায় খারাপ ফলে চলার পথ হয়তো কঠিন হয় একটু, তবে অসম্ভব হয় না। মাইকেল ফ্যারাডে মোটেই অঙ্ক ভাল পারতেন না। তাই বলে তার চুম্বকের বলরেখার প্রকাশ করার পথ থেমে থাকেনি, উনি ঠিকই চুম্বকের চারপাশে লোহার গুঁড়ো ছড়িয়ে তার ছবি একেছিলেন। কারো সত্যিকারের ইচ্ছে থাকলে, উপায় একটা না একটা হবেই।
মন্তব্য
এর একটা উদাহরণ - http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2012-08-24/news/283264
উনি রসায়ন থেকে পাস করলেও উনার গবেষণার ফিল্ডের সাথে বস্তুকৌশলীদের(materials engineer) কার্যক্রম কনভার্জ করে। এমনও দেখেছি রসায়ন থেকে পাস করে ধাতবকৌশলের(metallurgical engineering) এর উপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় অনেকেরই ধারণা থাকে ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-ম্যাথের সাথে প্রকৌশলের অনতিক্রম্য বিভাজন-রেখা রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পাস দিয়েও এই ভুল ধারণা যায় না। বাংলাদেশে বিজ্ঞান সম্পর্কে খুব প্যাথেটিক ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বড় হয়, একারণে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে শুনলে অন্যদের মত হাউকাউ করতে পারি না। বিজ্ঞান পড়ে এদেশে কেউ আলোকিত হয় নাই, আলোকিত লোকজন সবাই স্বশিক্ষিত।
Big Brother is watching you.
Goodreads shelf
রসায়ন ও বস্তকৌশল কিন্তু বেশ কাছের জিনিশ! আলুর রিপোর্ট পড়লে তা মনেই হবে না, এর ছত্রে ছত্রে বিস্ময় যে কিভাবে উনি রসায়ন থেকে পাস করে পরে অন্যদিকে গেলেন!
আর, বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী তো কমবেই, ব্যাঙ্কের চাকুরির সহজলভ্যতা ও বেতন, আমাদের সেদিকেই ধাবিত করছে।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্যে
রসায়ন ও বস্তকৌশল অনেক কাছাকাছি বিষয়। একজনের উদাহারণ দিতে পারি যিনি বুয়েটের বস্তকৌশলে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইন্দাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পি এইচ ডি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন অফ ইনফরমেশন সিস্টেম এবং ইনফরমেশন সিস্টেম ও ম্যানেজমেন্টের উপর তার লেখা পাঠ্যবই রয়েছে।
পথের শুরু দেখে পথের শেষ কোথায় হতে পারে আন্দাজ করা ঠিক না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
সহমত। বাংলাদেশ থেকে যেসব মেধাবী শিক্ষার্থী বেরিয়েছে, কোন বিষয়েই তার কৃতিত্ব সিস্টেমের নয়। এস,এস,সি-এইচ,এস,সি প্রায় পচে গেছে। আমাদের সময় এত খারাপ ছিল না। অর্থাৎ যারা পাবলিক পরীক্ষায় ভালো করত তাদের অধিকাংশই পরবর্তীতে ভালো করত। কেউ কেউ হয়ত বাজে মূল্যায়নের কারণে পাবলিক পরীক্ষায় ভালো করতে পারত না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তথাকথিত গোল্ডেনধারীদের ৫৭% ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাওয়া দূরে থাক, পাস-মার্কই তুলতে পারছে না! হরি হরি! একজন গোল্ডেনধারী ছাত্রের বিদ্যের দৌড় অন্তত এমন হওয়া উচিত যে, মাতাল অবস্থায় হলে গেলেও হেসে খেলে অন্তত পাস-মার্কটা তুলতে পারে!
এই ভদ্রলোককে দেখুন। ইনি এমএমই থেকে ফিজিক্সে গেছেন। সিএসই থেকে পিওর ম্যাথসে গেছেন এমন মানুষও চিনি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
উৎসাহমূলক লেখা.......জীবন দিয়ে এগুলো উপলব্ধি করেছি
জনাব, আপনি যদি দয়া করে ভিন্ন কোনো নামে সচলে মন্তব্য করেন তাহলে কোনো বিভ্রান্তি ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আমি অনেক আগে থেকে এই নিক থেকে সচলে লিখছি এবং মন্তব্য করছি। আপনিও যদি একই নামে লেখালিখি করেন তাহলে ব্যাপারটা একটু ঝামেলাপূর্ণ হয়ে যায়।
আপনার জন্য শুভকামনা। ভালো থাকুন।
_________________
[খোমাখাতা]
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে
ধ্রুব, আপনার লেখাটির ঊদ্দেশ্য ভাল। আশা করি অনেক ছাত্র-ছাত্রী এই লেখাটি পড়ে উপকৃত হবে।
তবে লেখার একটা অংশ আমার কাছে আপত্তিজনক মনে হচ্ছেঃ
আর্কিটেক্টের কাজে বাস্তব কম এমন ধারনা আপনার কিভাবে হল ? আপনি আর্কিটেক্টের কাজ সম্পর্কে ঠিক মত জানেন তো ? ইঞ্জিনিয়ার যেমন অনেক ধরনের হয়, সেরকম আর্কিটেক্টও কিন্তু অনেক ধরনের হয়। তাদের কাজের ক্ষেত্রও বিভিন্ন এবং কাজের পরিধি ছোট, বড়, মাঝারি অনেক রকম হয়ে থাকে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
জ্বী জানি। আমি এখানে সিভিল কন্সট্রাকসনের কথা বলছি। বুয়েটের সিলেবাসে অনুগ্রহপূর্বক পুরকৌশল ও আর্কিটেকচারের ডিজাইন বিষয়ক বিষয়গুলোর পরিমাণ (ক্রেডিট ও কোর্স) তুলনা করে দেখবেন। আপনার ধারণা পরিষ্কার হবে। কর্মজীবনে কে কি করেন, সেটি দিয়ে যাচাই করলে হবে না। কর্মক্ষেত্রে আমার বন্ধু পুরকৌশলী হয়েও এখন বায়ো-মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। (আমাদের প্রচুর মেকানিক্স পড়ানো হয়, মনে হয় সেজন্যে সে হতে পেরেছে!)
বাস্তব ধারণা কম বলতে আমি বুঝিয়েছি, আর্কিটেক্ট নিশ্চয়ই রডের বিশদ (ডিটেইল) লে-আউট বা রাস্তার জয়েন্টগুলো ডিজাইন করে অর্থাৎ এই জাতীয় কাজগুলো করে দিবে না। এগুলো তাকে কেউ করতেও বলে নি। এগুলো পুরকৌশলীরা করবেন। আপনার হয়তো ধারণা হয়েছে আর্কিটেক্ট ও আর্কিটেকচার ফার্ম, একই জিনিশ। আর্কিটেকচার ফার্ম পুরো প্রজেক্ট তৈরি করে দেয় এবং ওতে সব পেশার মানুষই যুক্ত থাকেন। আর্কিটেক্ট একাই সব করেন না। তবে দেশের মানুষ জানে আর্কিটেক্টই সব পারেন ও করেন। ইঞ্জিনিয়ারিং (যা বলতে সাধারণ মানুষ বোঝে শুধুই বাড়ি নির্মাণ) করতে হলে, আর্কিটেক্টই হতে হবে।
আর বাস্তব শব্দটি ব্যবহারের কারণ হচ্ছে, বাস্তবে কন্সট্রাকসন অতি বাজে ব্যপার, ওতে বড় বেশি ডিটেলে যেতে হয়, যেটি সাধারণত আর্কিটেক্টদের যাওয়া পরে না। অনেক সময় পুরকৌশলীদেরও জানা থাকেনা, সাহায্য নিতে হয় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের। (এতে আমি লজ্জা বা দোষের কিছু দেখি না)
আর আমি এখানে কোন পেশাকে খাটো করিনি। একজন আর্কিটেক্টের কাজই নয়, ফাউন্ডেশন থেকে শুরু করে পুরো কনস্ট্রাকসনটি বিশদ (ডিটেইল) ডিজাইন করা। তাকে সাহায্য করার জন্যে পুরকৌশলীরা থাকবেন। আবার পুরকৌশলীদের সহায়তার জন্য থাকবেন যন্ত্রকৌশলী ও বিদ্যুৎপ্রকোশলীরা এবং অন্যান্যরা।
আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
ক্ষমা করবেন, আমার মনে হচ্ছে 'বাস্তব' শব্দটির ভুল প্রয়োগ ঘটেছে। আপনি হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন যে স্থপতির কাজে ব্যবহারিক অংশ কম।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, সঠিক শব্দটি চয়নে সহায়তার জন্যে। আমি ঠিক করে দিচ্ছি। এমন ভুলের জন্যে লজ্জিত, হয়তো না জেনেই, নিজের ভুলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনেককে আঘাত করে ফেলেছি।
আপনার সম্পাদনার পর পড়ে দেখলাম আবার। মাত্র একটা শব্দ পাল্টে দেয়ায় পুরা ভাবটাই বদলে গেছে। শব্দ চয়নে 'খুউব খিয়াল কইরা'
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
ধন্যবাদ
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধন্যবাদ
পরে কিন্তু জি আর ই ভার্বাল আর আইল্টিএসে খারাপ করিনি ( আর আমার এ প্লাস পাওয়া বন্ধুগন কি করেছে, সে না হয় নাই বল্লাম) - এই অংশটুকু পুরো লেখাটাকেই নষ্ট করে দিয়েছে। আর পড়ার ইচ্ছা হয় নাই
উনি উনার বাস্তব অভিজ্ঞতা বলেছেন, আমার সময়েও অনেক স্ট্যান্ড করাদের চেয়ে স্টার পাওয়া ছাত্র বুয়েটে অনেক ভাল করেছে, তো এতে আপত্তির কি আছে? মোদ্দা কথা, এস এস সি/ এইচ এস সি এর রেজাল্টই জীবনের শেষ কথা না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
হয়ত উনি সত্যিই লিখেছেন, তবে লেখাতে কি কিছুটা হলেও নিজেকে একটু বেশি গুরূত্ব দেয়া হয় নি? সবসময় ভালো রেজাল্ট করা ছাত্রছাত্রীগণ পরবর্তী জীবনেও অনেক সাফল্য পেয়েছে সেটা স্বীকার করতে সমস্যা তো নেই। বুয়েটেও উনার সাথে নিশ্চয়ই অনেক এ প্লাস পাওয়া বন্ধুগণ ছিলেন, তাদের অনেকেই আম্রিকার অনেক উপরের দিকের ইউনিতে পিএইচডি করছেন, যদি হিসাব করেন তাহলে আম্রিকার উপরের দিকের বাংলাদেশি ছাত্রদের মধ্যে সবসময় ভালো রেজাল্ট করা ছাত্রসংখ্যাই বেশি। আমার কথা হচ্ছে, ভালো রেজাল্ট না করেও পরবর্তীতে অনেক ভালো জায়গায় যাওয়া যায় এই মত প্রকাশের জন্য ভালো রেজাল্ট করা বা এ-প্লাস পাওয়া বন্ধুগণদের ছোট করার কোন মানে হয় না। যাই হোক, আমি আমার খারাপ লাগা জানিয়ে গেলাম মাত্র। এটা আপনার মতের সাথে মিলতেই হবে এমন না ভালো থাকবেন
কিভাবে নষ্ট করলো, জানালে বাধিত হবো। যদি বন্ধুবান্ধবের নাম, স্কোরশুদ্ধু তুলে দিতাম, তবে তা লেখাকে নষ্ট করতো বলে আমার ধারণা।
লেখাটি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ, আমি তা উল্লেখও করেছি। এসএসসি ও এইচএসসির বাজে রেজাল্টের উল্লেখ যদি লেখাকে নষ্ট না করে, তবে জি আর ই ভার্বাল আর আইএলটিএসে খারাপ না করা কেন লেখাকে নষ্ট করবে?
আর অনুগ্রহপূর্বক, নিচে নাম উল্লেখ করবেন। নামহীন কারো সঙ্গে আলোচনা করছি, ভাবতে ভালো লাগে না।
ধ্রুব-ভাই, লেখাটির কাঙ্খিত গঠনমূলক উদ্দেশ্যটি ভাল লেগেছে, সেটি অনেকের উপকারে লাগবে বলেও মনে করি। তবে কোথাও কোথাও লেখার সুরে যে তিক্ততা এসেছে সেটি দরকার ছিল বলে মনে হয়নি। সে তিক্ততা লেখাটিকে তার পাঠকের কাছে খানিকটা কমজোরী করে দিয়ে থাকতে পারে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
তিক্ততা ব্যক্তিগত উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। নিজগুণে ক্ষমা করবেন। গোল্ডেন এ-প্লাস না পাওয়াদের এই সমাজ যে পরিমাণ উপেক্ষা করে এবং এই দুই পরীক্ষার ফলাফলকে যেভাবে মাথায় তুলে নাচে, আমি তা ঘৃণা করি।
হেন কেউ বাদ নেই, যাদের থেকে আমার কথা শুনতে হয়নি। তার উপরে ইংরেজি জ্ঞানের খোঁটা তো আছেই। যে জাতি এসএসসি আর এইচএসসির ইংরেজি জ্ঞান দিয়ে কাউকে যাচাই করে, তারা কতটুকু জ্ঞান ধরে, সে নিয়ে আমার বিরাট সন্দেহ আছে। এই কলোনিয়াল হ্যাংওভার লাথি মেরে দূর করা দরকার বলে মনে করি।
আর গোল্ডেন পেয়ে 'মোরা কি হনু রে' সিন্ড্রোম তো আছেই। এই সিন্ড্রোমে ভোগারা কই আছে, তা আমি আসলেই জানি না। চেনাজানা কয়জন নাকি সেই ২০০৩-ই নাকি কোথাও চান্স পায়নি!
আর বুয়েট আমার গর্বের স্থান, বড় আদরের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর ভেতরটা আমি খুব ভাল করে জানি, চিনি। স্যাররা কি আচরণ করেন, কি পড়ান এবং বাইরে এসে এখন কি দেখছি, বড় কষ্ট পাই। ওখানে ভাল কাউকে টিকতেও দেয়া হয়না। ভিসিবিরোধী আন্দোলন আর গণজাগরণের সময় কি সুন্দর করে সবার মুখোশ খুলে গিয়েছিলো, তাও দেখেছি।
অন্যদিকে, বুয়েটিয়ানদের নাক-উঁচু ভাব তো সুবিদিত। আমি অনেককে এমনও বলতে শুনেছি, ঢাবিতে পড়ালেখা হয় নাকি, হয় শুধু রাজনীতি। দুঃখের বিষয়, আমি ঢাবিতে বেশ কিছু কোর্স করতাম, তাদের ল্যাব ফ্যাসিলিটি বুয়েট থেকে ভালো ও শিক্ষকদের পড়ানোও ভাল লেগেছে। এর বাইরেও নানাখানে কোর্স করেছি, আমার মনে হয়েছে, বুয়েট সর্ব নিকৃষ্ট। হতাশ হয়েছি, এত মজাদার, ইন্টারেস্টিং বিষয়গুলো, কি চমৎকারভাবেই না পড়ানো যেত, তা ভেবে। আমাদের কিছু সহপাঠী বরং শিক্ষকদের থেকে ভাল পড়াতো!
এরপর রিসার্চ করতে গিয়ে দেখেছি, বাংলাদেশেরই অন্য ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা ভাল ভাল সব রিসার্চ করছে, পেপার বের করছে। বুয়েটে মাস্টার্স নামে চলছে একটি প্রহসন! (যে কেউ ভর্তি হয়ে দেখতে পারেন) আবার সে মাস্টার্সে দ্বার রুদ্ধ করে রাখা আছে অনেকের জন্যে, কারন তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং না! যাকগে, কেউ ভর্তি হতে না পারলে তার জন্যে বরং শাপে বর!
এই বিষয়গুলো নিয়ে লেখতে ইচ্ছে হয়, ভয়ে লেখি না। বুয়েটের নামে কিছু লিখলে আমার গায়ের ছাল-চামড়া কিছু থাকবে না। নানাকাজে (মূলত সার্টিফিকেট, সই-স্বাক্ষর ও রিকমন্ডেসন সংক্রান্ত) সেখানে যাওয়াও পরে, সেগুলোও বন্ধ হবে। নিজে বাঁচলে বাপের নাম! কে যায় ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে?
যা দেখছি, বেদনার জায়গায় নাড়া দিয়ে ফেলেছি। চাইনি অবশ্যই। আশা করি, সময়ের সাথে তিক্ততা কমে আসবে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
কোন ব্যাপার না। অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্যে ও মন্তব্যের জন্যে।
এই দুইটা জায়গায় আমার চোখ আটকে গেলঃ
এই দুইটা বিষয় নিয়েই অনেকক কিছু লেখা যেতে পারে। লিখে ফেলুন।
ছাল চামড়া কেন থাকবে না আমি বুঝলাম না। আপনি কি এখনো বুয়েটের ছাত্র, বা অন্য কোন ভাবে শৃংখলিত ?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
বাইরে মাস্টার্স করছি মাত্র। বেশ কিছুদিন দেশে চাকরি করেছি। আগে কিছু একটাতে থিতু হয়ে নেই। বুয়েটের শিক্ষকদের থেকে এখনো রেকমেন্ডেসনের জন্যে দরকার পরে
( এখন লিখলে ছদ্মনামে লিখতে হবে, কিন্তু আমার হাতে প্রমাণ নেই, সব তাদের মুখের কথা ও আচরণ, সুতরাং সেটি ওভাবে বিশ্বাসযোগ্য হবে না)
উফ এত সুন্দর করে গুছিয়ে কি করে লিখলেন আমি বুঝতেই পারছিনা।ইন্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি ঠিকই কিন্তু এত বাস্তব কথা একসাথে কখনই শুনিনি। আমি তো নিজেই নিজেকে জানিনি এতদিন
ট্রোল
নতুন মন্তব্য করুন