ডিএম, শ্লেকার, কারস্টাড্ট, কাউফহফ এবং অবশেষে লিডেল ঘুরে, তাদের ব্যবসায়িক লাভের সমুদ্রে বিন্দু পরিমান জলদান করে ঘরে ফিরে প্যাক করার সময় বাধলো আসল বিপত্তি।
এথনিক প্যাসেঞ্জার হিসেবে ৩৫ কিলো পাওয়া গেলো বটে কিন্তু আধা ঘন্টায় লাগেজ গুছিয়ে সেটা ওজন দেয়ার পর চল্লিশ ছাড়িয়ে গেলো! তারওপর এখনো একটা ছোট ব্যাগ পাল্লায় তোলা হয়নি। হাতে থাকার কথা ল্যাপটপের ব্যাগটাও। খালাতো ভাইয়ের দশ কিলো আসবে এয়ারপোর্টে! কী রেখে কী নেই, এই চিন্তায় মাথার ভনভন কাটাতে ঢুঁ মারি সচলে, সামহোয়ারে, পেপার পড়ি, গান শুনি, এক দুই টুকরা টম এন্ড জেরী দেখি- খো খো করে হাসি, কিন্তু পরিত্রাণের উপায় আর পাই না।
সব খুলে আবার ঢুকালাম এক এক করে, একেবারে ওজন মেপে। যা না নিলেই নয়, সেটা কমে দাঁড়ালো ২৪ কিলোতে। বাকিগুলো ঢুকানো হলো আলাদা ব্যাগে। খালাতো ভাইয়ের দশ কিলো সাঁটিয়ে যতটুকু নেয়া যায় যাবে, বাকিটুকু থেকে যাবে। এই আশায় একটা পিঠব্যাগও স্ট্যান্ডবাই রাখা হলো। তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে লাল লাল চোখে, ঢুলুঢুলু আমেজে আইসিইতে একটানে ফ্রাঙ্কফুর্ট।
আমার জীবনে ফ্লাইটের এতো আগে কখনো এয়ারপোর্টে যাওয়ার রেকর্ড নেই। সময় মারার জন্য এদিক ওদিক ঘুরি, এটা সেটা দেখি, খাই- ইত্যাদি।
খালাতো ভাই এলে তার জিনিষ ঢুকিয়ে জিনিষ পত্তর শাফল-রিশাফল করে চেকইনে গিয়ে দেখা গেলো ৪৯ কিলো+। পিঠে তখনো সাড়ে পাঁচ কিলোর ব্যাগটা পড়ে আছে। পড়বি তো পড় একেবারে দজ্জাল মহিলাটার কাছেই গিয়ে পড়লো সিরিয়াল। মহিলা কোন কথাই শুনতে রাজী নন। 'তিনি সবই জানেন' কিন্তু 'ওজন কমান' ছাড়া কিছুতেই আপোষ করতে রাজী নন। দিলো ফিরিয়ে। এইবার তিন মাথা বসে নানা ফন্দি আঁটি। ফলিত কাজ কিছুই হয় না। মাথায় কি চিন্তা আসতেই ব্যাগ থেকে কাপড় খুললাম, ল্যাপটপের ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ তার কেবল, চার্জারসহ বের করলাম। এবার আবার নিলাম মহিলার কাছে। তিনি দেখলেন, ৪৩,৫- 'হুঁ, এবার ঠিকাছে। কিন্তু এর চেয়ে বেশী জিনিষ নিতে পারবেন না এবং কোন জিনিষ আর ঢুকাতেও পারবেন না।' টিকিট, বোর্ডিং কার্ডে লিখে দিলেন নিজের তেলাপোকা মার্কা হাতের লেখায়, 'কেবল ল্যাপটপ; অন্য কোন হাতে বহনযোগ্য বস্তা নয়'!
এবার আবার মাথা চুলকানী। এখন কী হবে। আমি ফলিত তত্ত্বে বিশ্বাসী। মুহূর্তেই ল্যাপটপের ব্যাগখানা ফুলে ঢোল হয়ে গেলো। স্ট্যান্ডবাই থাকা পিঠের বস্তাটিও পিঠে ঝুলিয়ে দিয়ে বললাম, 'ওকে, হ্যাভ এ নাইস জার্ণী!'
'আছি এখানেই, সমস্যা করলে এসে ব্যাগ ফেরৎ দিয়ে যেও'- ঠেলেঠুলে ছোটভাইকে পাঠিয়ে দিলাম ইমিগ্রেশনে।
আধাঘন্টা পর এসে ফুচকি দিয়ে জানালো সবঠিকঠাক। এখানে ঝামেলা হয় নি। 'দৌড়ের উপরে থাক'- শুনেই টংটং করতে করতে হাঁটা দিলো ভেতরের দিকে। একটু পর ফোন করে জানালো বোর্ডিং পাস পাইছে, ঝামেলা হয় নি। আমি মনে মনে হিসাব করলাম, ৪৯ যোগ সাড়ে পাঁচ সমান সমান সাড়ে চুয়ান্ন কিলো! সাব্বাশ!!
মন্তব্য
ওহ! আমি মনে করলাম আপনি যাচ্ছেন।
যাই হোক এরকম একবার হয়েছিল দিল্লী এয়ারপোর্টে। বোর্ডিংয়ের জন্যে ফাইনাল চেকইনের সময় আমার ল্যাপটপকেও ব্যাগ হিসেবে ধরে বলল মাত্র একটি ব্যাগ এলাউড। চেক ইন আগেই হয়ে গিয়েছিল তাই একটু দুরে গিয়ে ল্যাপটপ খুলে হাতে নিয়ে হ্যান্ড ব্যাগে ঢোকালাম ও অন্য লাইন ধরলাম। সেটি ফুলে ঢাউস হয়ে গেলেও সেই বৈতরনী পার হওয়া গেল। তবে বাধল বিপত্তি, প্লেনের উপরের লাগেজ কম্পার্টমেন্টে সেই ভূড়িওয়ালা ব্যাগ তো ঢোকে না। সেই ব্যাগের কিনারা করতে না পেরে পেছনে লাইন লেগে গেল এবং সকলে আমার দিকে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। এয়ার হোস্টেস (পুরুষ প্রজাতি) আমাকে এসে উদ্ধার করল এই বলে যে আপনার ব্যাগটি নীচে লাগেজ কম্পার্টমেন্টে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তথাস্তু বলে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। তবে একটু পরে পালপিটিশন শুরু হল কারন আমি এক পরিচিতের বেশ কিছু টাকা বহন করছিলাম (আমার ভর্তুকী দেবার সামর্থের বাইরে) দেশে তার আত্মীয়দের দেয়ার জন্যে। টাকাগুলি রাখা ছিল ল্যাপটপের ব্যাগে নিরাপত্তার জন্যে এবং সেটি তখন ট্যাগ বিহীনভাবে বিমানের লাগেজ কম্পার্টমেন্টে পরে আছে। আমার যাত্রাটি কেমন হয়েছিল চিন্তা করেন। তবে সেবারই কানে ধরেছিলাম যে এরপর দরকার হলে লাগেজ ছাড়া যাব তবে এমনভাবে হেনস্থা হওয়া ও আয়ু কমানোর কোন মানে নেই।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
- দিল্লী এয়ারপোর্টে নাহয় ল্যাপটপকে হ্যান্ডব্যাগ বলে গণ্য করলো, মানলাম; কিন্তু ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টে কেমনে করে?
এবার ভালো হইছে না, ৩৫ কিলোর পারমিশন নিয়া যে সাড়ে চুয়ান্ন কিলো পাঠাইছি!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বাহ্, চিকন বুদ্ধি বটে!
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
- চিকন কই দেখলেন, এইটাতো রীতিমতো পুকুর সমান। ব্যাগেজ ডিসপ্যাচ করে ঐ বেটির সামনে দিয়া চেগাইয়া চেগাইয়া খালি হাতে হাঁইটা আসছি।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুসর,
তোমার আদরের শ্যালকের জন্য ক্যান্ডী নিতে ভুল করো না। দরকার হলে অন্য সওদা দু'কেজি কম নাও। অন্যথায় গুতিয়ে তোমার জীবন ঝালাপালা করবে।
অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো
- হ, এইটা ভালো বুদ্ধি বস। তবে ইট্টু দেরী হইয়া গেলো না!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আয় হায় আমি ভাবলাম ধুসর যাচ্ছে.....
কি মাঝি? ডরাইলা?
- আমিও তাই ভাবছিলাম
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
- ঠিক, ধান না পাইলে খালি ঢেঁকিতেই পার দিতে থাকে
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে ।
ধুসর তার মামার সাথেও শালী খুঁজে
- ভায়রার সনেও খোঁজে!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি ভাবলাম আপনে যাচ্ছেন।
প্রচুর লোকজনকে আনা-নেওয়াতে বেশ ভালোই অভিক্ষতা হয়েছে। বেল্টে এমনভাবে ব্যাগ দিতে হবে যেনো ওজন কাটায় কাটায় থাকে ।কাউন্টার থেকে যাতে টিকেটে ব্যাগের পরিমান উল্লেখ করা না থাকে। ব্যস, তারপর ২/১টা এক্সট্রা হাতে নিয়ে গেলেও অসুবিধা নাই।
আমি তো হাতে একটা ট্রলি প্রায় ১৫ কি.লো চকলেট আর পেছনের ব্যাগে ৫ কি.লো নিয়েছিলাম । কয়েকজনকে এইরকম সাজেশন দিয়েছিলাম। কাজ হয়েছে।
- আমিও এই জিনিষটা খেয়াল করেছি। ব্যাগের অবস্থানের কারণে কয়েক কিলো ওজন হেরফের হয়। যাহোক, ফ্রুলিংক্সের কাছ থেকে টেকনিক গুলো জানার আগ্রহ ওপেন থাকলো।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন