মাসিক স্বর্গবার্তা— স্পেশাল এডিশন (দুই)

ধুসর গোধূলি এর ছবি
লিখেছেন ধুসর গোধূলি (তারিখ: বুধ, ১৭/০২/২০১০ - ৯:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লাঞ্চে ভালোমন্দ ভোজন করিয়া ঈশ্বর কিঞ্চিৎ তন্দ্রালু হইয়া পড়িলেন।

স্বর্গে ইদানিং গরমও বেজায় পড়িয়াছে। তাহার উপর যোগ হইয়াছে ইরির সিজনের লোড শেডিং। একটু পরপরই বিদ্যুৎ প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হইতেছে। ঈশ্বরের কক্ষে যে আইপিএস লাগানোর কথা হইতেছিলো, তাহাও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়িয়া স্বর্গের সচিবালয়ে এই টেবিল সেই টেবিল করিতেছে, কাজের কাজ অগ্রগতির পরিমান মানকঁচু!

হাতে তালপাতার পাখা নাড়িয়া বাতাস করিয়া খানিকটা শীতল হইতেই ঈশ্বরের ঝিমানিটা মোটে ধরিয়া উঠিয়াছে, তখনই কিনা তাঁহার আরশে "ঠক-ঠক" শব্দ বাজিয়া উঠিলো।

ঈশ্বর ধরমড়াইয়া ঝিমানি হইতে সোজা হইয়া বসিলেন। বাম হস্তের তালুতে ঠোঁটের দক্ষিণ কোণ হইতে বাহিয়া পড়া লালা সরাইয়া হাতের তালপাখায় আবার বাতাস দিতে লাগিলেন। নিদ্রাঘোরে তিনি খোয়াব দেখিতেছিলেন বলিয়াই ঠাহর করিলেন। তাহা না হইলে তো তাঁহার আরশে শব্দ হইবার কথা না। স্বর্গ-মর্ত্য, সকল জায়গায় সবকিছুই ঠিকঠাক চলিবার কথা। নো প্রবলেমো!

কিন্তু গরমের চোটেই কিনা, ঈশ্বর মনে মনে ক্ষেপিয়া ওঠেন, "এইবার সচিবালয়ের কেরানি স্বর্গদূতগণের মাসিক মাসোহারা হইতে কিছুটা কাটিয়া না লইলেই নহে। ব্যাটাদের বহুত বাড় বাড়িয়াছে। স্বর্গে কোনো হুরপরী নব্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইলে সকলেই সেইখানে ঝাঁপাইয়া পড়ে লুলবর্ষণে। পানি, বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করে। আর আমাকে ঈশ্বর হইয়াও তালপাতার বাতাসে প্রাণ জুড়াইতে হয়! হতচ্ছাড়াগুলাকে পাইয়া লই আজি। চাখাইবো মজা! লুলগিরি বাহির করিবো উহাদের পিছন দিয়া।"

বলিতে বলিতেই আবারো ঈশ্বরের আরশ ঠক-ঠক শব্দে কাঁপিয়া উঠিলো। এইবার শব্দ আর মিলিয়া গেলো না। "ঠক-ঠক-ঠকা-ঠক" করিয়া চলিতেই লাগিলো, ননস্টপ। সেই শব্দে আরশ এমনতরভাবেই কাঁপিয়া উঠিতে লাগিলো যে ঈশ্বর আর তাহাতে স্থির বসিয়া থাকিতে পারিলেন না। আরশ শাট ডাউন করিয়া উহা হইতে নামিয়াই তিনি হুঙ্কার ছাড়িলেন, "জিব্রিল, এই জিব্রিল। কই গেলিরে হতচ্ছাড়া!"

স্বর্গে লাইভ কনসার্ট করিতে আসিয়াছেন বহু তরুণের হৃদয়ে কালবোশেখী তোলা সিন্ধুবালাদেবী। তিনি স্বর্গের ভিআইপি কটেজের চারশত কুড়ি নম্বর বাড়িতে আছেন। লাঞ্চব্রেকে জিব্রিল সেইখানেই খানিক হাদুমপাদুম করিতে গিয়াছিলো।

দরোজায় দাঁড়াইয়া ভেতরে উঁকিসুঁকি মারিতে মারিতে সিন্ধুবালাদেবীর পানে হাত বাড়াইয়া দিয়া জিব্রিল শুধায়, "জিব্রিল... জেমস জিব্রিল"।

"নাইস টু মিট য়্যু, জিব্রিল ভাইয়া।"— সিন্ধুবালা রিনঝিনে গলায় বলিলেন। "য়্যু নো, আম সো ঠায়ার্ড ভাইয়া। টুমরো আপনাকে বায্ দিবোনি! হোপ য়্যু ডোন্ট মাইন্ড..."

জিব্রিল মনোক্ষুণ্ণ হইয়া "ঠিকাছে" বলিয়া পকেট হইতে তাহার ভিজিটিং কার্ডখানা বাহির করিয়া সিন্ধুবালার হস্তে দিয়া কহে, "এইখানে আমার ফিমেইল ঠিকানা রহিয়াছে। কেবল তোমার মতো ফিমেলদের লাগিয়া। উহার মারফত পত্র দিও। আর ইস্নিপ্সের যে লিংকখানা দেখিতেছো, সেইখানে আমার কণ্ঠে গোটা কয়েক লুলসঙ্গীতও আছে। শুনিয়া জানাইও কীরূপ লাগিলো!"

"ওয়াও ভাইয়া, আপনি গানও করেন? হাউ খিউট! আমি অবভিয়াসলি লিসেনিবো ভাইয়া। লিসেনিয়া জানাইবো, পত্রমারফত! হি হি হি..."

জিব্রিলের গণ্ডদেশ কিছুটা রক্তবর্ণ ধারণ করে ইহা শুনিয়া। বিদায় লইয়া সিন্ধুবালা ভেতরে গিয়া কপাট রুদ্ধ করিয়া দেয়। আর জিব্রিল কপাটের পাশে "লাইক্কক্স দিস" বোতামে চাপ মারিয়া দপ্তরে ফিরিবার প্রস্তুতি লয়।

ঠিক সেই সময়েই ঈশ্বরের হুঙ্কার তাহার পেজারে প্যানপ্যান করিতে শুরু করে। জিব্রিল ঈশ্বরের আগত, অনাগত কয়েক ডজন বংশধরকে তুলিয়া তুমুল গালিবর্ষণ করিতে করিতে ঈশ্বরের এজলাসের দিকে ঊর্ধশ্বাসে দৌঁড়াইতে থাকে লুঙ্গি উঁচাইয়া।

"ডাকিলে যদি একটা হতচ্ছাড়াকেও নিকটে পাওয়া যায়। সব কয়টার বেতন হইতে বিশ রুবল করিয়া কাটিয়া লওয়া হইবে। যত্তোসব নচ্ছাড়ের দল!"
ঈশ্বর আপন মনে বিড়বিড় করিয়া হস্তযুগল পেছনে বাঁধিয়া পায়চারী করিতেছিলেন বিচলতার সহিত। ইত্যবসরে হাঁপাইতে হাঁপাইতে, ফোঁপাইতে ফোঁপাইতে এজলাসে জিব্রিল আসিয়া উপস্থিত হইলো।

"জিব্রিল... জেম..." খটাশ করে কী একটা জিনিষ উড়িয়া আসিয়া জিব্রিলের মুখমণ্ডলে পতিত হওয়া মাত্রই তাহার কণ্ঠ থামিয়া গেলো।

ঈশ্বর জিজ্ঞাসা করিলেন, "কিছু বুঝিলে মূর্খ?"

জিব্রিল মাথা ঝাঁকাইয়া বলিলো, "যাহা বুঝিলাম তাহা হইলো, জুতার সাইজ দশ!"

ঈশ্বর দন্তে দন্ত ঘঁষিয়া হুঙ্কার ছাড়িলেন, "বলি আমার এজলাসে, শয়ন কক্ষে আইপিএস এখনও লাগে নাই ক্যানো! ঈশ্বর হইয়াও আমাকে আপনা হাতের উপর নির্ভর করিতে হইতেছে। ইহা হইলে জগৎ সংসার কীরূপে চলিবে? তোমাদের মতো নিষ্কর্মার পাল্লায় পড়িয়া দেখি আমাকে ঈশ্বরকর্ম চাঙ্গে তুলিয়া গয়া আর কাশিতে গিয়া তীর্থকর্মে মনোনিবেশ করিতে হইবে!"

জিব্রিল বলিলো, "ইউর অনার, স্যার সচিবালয়ে আমি গিয়াছিলাম ঘটনার সরেজমিন তদন্ত করিতে। তাহারা আমাকে বোরাকে চড়াইয়া রমনা নামক জায়গায় লইয়া গিয়া হাইকোর্ট দেখাইয়া রাস্তায় ছাড়িয়া দিয়াছে। বলিয়াছে, চা-নাস্তার খরচাপাতি না দিলে ফাইল নড়িবে না, তাহা সে যতো বড় ঈশ্বরেরই ফাইল হোক। আপনি বিশ্বাস করিবেন না স্যার, সেই রমনা হইতে আমাকে হাঁটিয়া হাঁটিয়া স্বর্গোবধি আসিতে হইয়াছে। সিয়েনজি, ট্যাক্সিক্যাব আসিতে চাহে না, কহে 'ফিরতি খ্যাপ পাওয়া যায় না বস'! বাসে উঠিতে পারিতাম। কিন্তু আমি জিব্রিল বাসে উঠিলে আপনার ইজ্জত থাকে স্যার!"

ঈশ্বর চটিলেন। বলিলেন, "বটে! আমার ইজ্জতের দিকে ভালোই খেয়াল রাখো দেখছি। যাহাহোক, সচিবালয়ের ঐ গর্ধবগুলিকে প্যাঁদাইতে প্যাঁদাইতে বাহির করিয়া লইয়া গিয়া হাইকোর্টের মাজারের সামনে বসাইয়া দিয়া আসো। শালারা ঈশ্বরের সাথে মকশোগিরি করে!"

জিব্রিল জিভ কাটিয়া বলিলেন, "স্যার করিলেন কি? 'শালা' শব্দতো অসাংবিধানিক।"

ঈশ্বর বিরক্তি ভরিয়া কহিলেন, "বাজে বকিও নাতো জিব্রিল। অসাংবিধানিক হইলে দৈনিক কার্যবিবরণী হইতে বাদ দিয়া দিও। ল্যাঠা শ্যাষ।"

জিব্রিল লুঙ্গির পকেট হইতে ডেল মিনি বাহির করিয়া আঙুল চাপিয়া কী কী যেনো লিখিয়া লইলো।

ঈশ্বর এইবার বলিলেন, "ঠক-ঠক-ঠকা-ঠক" শব্দে আমার আরশ কাঁপিতেছে জিব্রিল। ইহার কারণ কী!"

জিব্রিল এইবার লাজুক হাসি হাসিয়া বলিলো, "আদম। ইহা আদমের কম্ম স্যার।"

"খুলিয়া বকো নালায়েক।"

জিব্রিল বলিলো, "স্যার, গতকল্য আদম আমার নিকট হইতে বলিউডি নায়িকাদের ইয়ে আবেদনময় ফটুকের ওয়েব সাইটের ঠিকানা লইয়া গিয়াছে। ইভের সাথে নাকি তাহার ভালোবাসা করিবার প্রয়াস ঠিক জমিতেছে না। তাই তাহার শয়নকক্ষ বলিউডি নায়িকাদের ছম্মকছাল্লো সব ফটুকে ডেকোরেশন করিবে বলিলো। তাহারপর সেইসব ফটুক দেখিয়া দেখিয়া কী কী করিবে বলিলো, আমি স্যার সঠিক বুঝিতে পারি নাই। মনেহয় আদম সেইসব ফটুকই দেয়ালে সাঁটাইতেছে। আর পেরেক-হাতুরির ঠোকাঠুকিতে আপনার আরশ কাঁপিয়া উঠিতেছে।"

ঈশ্বর এইবার রাগে লাল হইয়া উঠিলেন। একে তো গরমে মাথা আউট, তাহার উপর আদমের নামে একের পর এক 'অসাংবিধানিক নালিশ'।

বলিলেন, "যাও, ব্যাটাকে ধরিয়া লইয়া আইসো। স্বীয় ইচ্ছায় না আসিতে চাহিলে, পশ্চাৎদেশে প্যাঁদাইতে প্যাঁদাইতে, চ্যাঙদোলা করিয়া লইয়া আসো। আজিকে তাহার 'ইয়ে অ্যাপিল' বাহির করিবো।"

ঈশ্বরের রক্তিম চেহারা দেখিয়া জিব্রিল তৎক্ষণাত প্রস্থান করিলো।

দুপুরে পাটশাক আর কুচো চিংড়ির ভর্তা দিয়া ডলিয়া মোটা চাউলের ভাত খাইয়া আদম দাওয়ায় বসিয়া গলায় ঝুলানো পিতলের শলাকাখানি দিয়া দন্ত খিলান করিতেছিলো আর আড়চোখে ইভের শাড়ির আঁচল খসিয়া পড়া নাদুসনুদুস কটি পর্যবেক্ষণ করিতেছিলো।

"মাগী, খাইয়া খাইয়া গতরখানা কী করিয়াছে! কাছে গেলেই ছ্যাঁৎ করিয়া ওঠে। জোর করিতে গেলেই বলিয়া বসে, তুলিয়া আছাড় মারিবে। তুই থাক মাগী তোর দেমাক লইয়া। আপনা হাত জগন্নাথই যখন ভরসা, তোকেও দেখিয়া লইবো।" মনে মনে বিড়বিড় করিতে থাকে আদম।

ইতোমধ্যে আদমের উঠানে জিব্রিল হাজির হইয়া হাঁক ছাড়িয়া উঠিলো, "আদম সাহেব বাড়িতে আছো? ইজ এনিবাডি হোম?"

"আন্ধা হইয়া গিয়াছো নাকি? দেখিতেই তো পাইতেছো, দাওয়ায় বসিয়া রহিয়াছি। বাতাস খাইতেছি। আবার চিল্লাইতেছো ক্যানো?" আদম খ্যাকখ্যাক করিয়া ওঠে।

"এইটা হইলো ডেকোরাম, দাপ্তরিক নিয়ম।" বলিয়া জিব্রিল পকেট হইতে ডেল মিনি বাহির করিয়া পড়িতে শুরু করিলো, "মোহাম্মদ আদম, পিতা/স্বামী- নট অ্যাপ্লিকেবল, সাং- স্বর্গবাড়ি, পোস্ট- স্বর্গডাক, থানা ও জিলা- স্বর্গোদ্যান, এতোদ্বারা মহামান্য ঈশ্বর বাহাদুরের আদেশক্রমে তোমাকে পাকড়াও করিয়া লইয়া যাইবার ওয়ারেন্ট জারী হইয়াছে। ওয়ারেন্টে অসহযোগিতা করিলে পশ্চাতে প্যাঁদানোরও বিধি রহিযাছে। তুমি কি ইহাতে রাজী আছো, থাকিলে বলো, 'কবুল'।

জিব্রিল এক নিঃশ্বাসে ওয়ারেন্টখানা পড়িয়া আদমের দিকে চাহিয়া দেখিলো আদম তাহার হাতের মধ্যমাখানা উত্তোলন করিয়া রাখিয়েছে।

""আমার সহিত তোমরা মশকরা করো জিব্রিল? আমি কি তোমাদিগের দুলাভাই লাগি?" আদম ঝনঝন করিয়া ওঠে।

"আজ্ঞে, আবার জিগস!"- জিব্রিল বলে।

আদম বকিয়া চলে, "ইরির সিজনে এ্যামনিতেই লোডশেডিং এর জ্বালায় মাথামুথা ফট্টিনাইন হইয়া আছে। তাহার উপর পরিবার রাত্রিকালে ভালোবাসা করিতে গেলে দেয় হুমকি!

জ্ঞানবৃক্ষের আশেপাশে ভিড়িতে পারিনা ঈশ্বরের আবাল-ুদা দারোয়ানের হেজিমোনিতে। স্বর্গে আসা নতুন সিন্ধুবালাদের নিকটে যাইয়া কিঞ্চিৎ ফষ্টিনষ্টি করিবো, তাহারও জো নাই তোমার হেতু।"

"আহেম"— জিব্রিল কিঞ্চিৎ গলা খাকাড়ি দিয়া ওঠে।

আদম বলিয়া যায়, "গ্রীষ্ম আসিলে ঈশ্বর চোখে রেব্যান সাঁটাইয়া ভূ-মধ্যসাগরের দিকে রওনা হন হলিডে করিতে। কেবল আমাকেই পড়িয়া থাকিতে হয় এই কুটিরে। বজ্জাত ইভের সহিত।

ঈশ্বর ইভের হেজিমোনির কোনো বিহিত না করিয়া খালি আমাকেই ডাকিয়া পাঠান এজলাসে! বলি, পাঁজরের হাড় কি ঈশ্বরের গেছে নাকি তোমার? এখনও অমাবস্যা-পূণ্যিতে বুকের ডানদিক চিঁনচিঁন করিয়া ওঠে পাঁজরের অনুপস্থিতির ব্যাদনায়।"

জিব্রিল বলে, "তুমি আমার বন্ধু মানুষ আদম। তাই আনঅফিসিয়ালি বলিতেছি, তুমি দেয়ালে পেরেক ঠোকাঠুকি করে বলিউডি নায়িকার ফটুক টানাইতে গিয়া ঈশ্বরের আরশ কাঁপাইয়া দিয়াছো। ইহার জন্যই তোমাকে ধরিয়া লইয়া যাইতে আসিয়াছি। ঈশ্বর স্যার তোমার ওপর বেজায় ক্ষেপিয়া রহিয়াছেন।"

"বালের কথা বলিওনা জিব্রিল। কী এক সাইটের ঠিকানা দিয়াছো, লোড হইতে হইতেই আমার ডাউনলোড লিমিট খতম। আর প্রিন্ট করিবো কি কুপিবাতি দিয়া? ঈশ্বরকে বলিও, তিনি যেনো তাঁহার বিপ্লুলগিরি ছাড়িয়া দেন। তাহা না হইলে আমি মুখ খুলিয়া দিবো কহিলাম। সংবাদ সম্মেলন ডাকিয়া সকল জারিজুরি ফাঁস করিয়া দিবো। এইসব চুদুর বুদুর ছৈল্তন! আর আমার গৃহে আইপিএস না লাগানো হইলে তাঁহার সহিত সকল প্রকারের পান্তামুক বন্ধ, ইহাও কহিয়া দিও।" আদম রাগের চোটে ফোঁসফোঁস করিতে থাকে।

অদূরবর্তী দূরত্ব হইতে ইভ কোমরে আঁচল জড়াইয়া তাহা দেখে। তাহার শলাকার ঝাড়ুখানা খুঁজিয়া মুষ্ঠিগত করিতেই জিব্রিল ঢোঁক গিলিয়া ব্যতিব্যস্ত হইয়া ওঠে—

"ওকে আদম আজ তাহা হইলে উঠি। আরেকদিন আসিলে চা খাইয়া যাইবোনি। বাই!"

এজলাসে জিব্রিলকে একা ফিরিতে দেখিয়াই ঈশ্বর চটিয়া উঠিলেন। ঈবলিশের মতো স্বর্গ-মর্ত্যের মধ্যিখানে অনির্দিষ্টকাল টাঙ্গাইয়া রাখিবার হুমকি দেন। জিব্রিল মিনমিন করিয়া কম বেতনে অধিক কাজ করায়ে লওয়ার অভিযোগ করে। ঈশ্বরের কানে তাহা পৌঁছায় না। যাহা পৌঁছায় তাহা হইলো, "আদম তাহার গৃহে পেরেক ঠুকে নাই স্যার। তাহাছাড়া আপনার আরশে যে সেন্সর লাগানো রহিয়াছে, তাহা পেরেক ঠুকার শব্দে বিচলিত হইবার কথা নহে।"

"তাহা হইলে কী হইয়াছে? আরশ কেনো কাঁপিয়া উঠিতেছে বারংবার?" ঈশ্বর বিচলিত হইয়া শুধাইলেন।

জিব্রিল বলিলো, "এক্ষণি হেতু বাহির করিতেছি স্যার। বিবিসিতে লগাই দাঁড়ান।"

জিব্রিল তাঁহার পকেট হইতে আবার ডেল মিনি বাহির করিয়া আঙুল দিয়া টেপাটেপি করিয়া কিয়দকাল পরেই চিৎকার করিয়া উঠিলো, "ইউরেকা"।

ঈশ্বর জ্বলজ্বল চোখে জিজ্ঞাসিলেন, "কী হইয়াছে? স্বর্গদ্যাশের বিশ্ববেহায়াটা কি ৮৩'র ঘটনার জন্য লজ্জিত হইয়াছে?"

জিব্রিল মাথা কাত করিলো, "উঁহু"।

"তবে কি সংসদে বিরোধী দল দেশ আর জনগণের স্বার্থে কাজ করিবার ঘোষণা দিয়াছে?" ঈশ্বর আবার শুধান।

"জ্বী না স্যার"। জিব্রিলও তার ডেল মিনিতে চোখ রাখিয়াই জবাব দেয়।

ঈশ্বর এইবার ক্ষেপিয়া ওঠেন, "তবে কি 'জামায়াতে বরাহ স্বর্গদ্যাশ' একুশে ফেব্রুয়ারীতে তাদের অবদান নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়াছে?"

জিব্রিল এবার ডেল মিনি হইতে মুখ তুলিয়া তাকায়। "আজ্ঞে, তাও না স্যার। ঘটনা হইলো, স্বর্গোদ্যাশের স্বরাস্ট্রমন্ত্রী নিজের মুখ খুলিয়াছেন"।


মন্তব্য

নাশতারান এর ছবি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বয়ানে ঈশ্বরের আরশ কাঁপিয়া উঠিল।
গুল্লি

ঈশ্বর এখন কী করবেন?

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ঈশ্বর যে কী করবেন তাই একখানা জটিল ধাঁধা। স্বর্গদ্যাশের স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর পদখানাই এমন! যিনিই এই পদ অলঙ্কৃত করেন, তিনিই "মুখ খুলতে" থাকেন। এখানে ঈশ্বরের আসলে কিছু করার নেই, কিছু করার থাকে না!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নৈষাদ এর ছবি

পৃথিবীর তুলনায় হেভেনে (বাংলা বানানটা লেখা যাচ্ছে না) প্রচুর গিয়ানজাম বলিয়া প্রতিয়মান হইল। সিন্ধুবালা রিনঝিনে গলায় ...টুমরো আপনাকে বায্ দিবোনি!" কথাটির অর্থ বুঝিতে পারিলাম না বলিয়া মনে হইল।

বিপ্লুলগিরি ... ব্যাপারটিও বুঝিতে ব্যার্থ হইয়াছি।

আলমগীর এর ছবি

বায মানে গুগল বাজ (Buzz) আর কি।
বিপ্লুলগিরি মানে ধরুন কারো নাম, লুল তারপর গিরি। যেমন বিপুল নামে কেউ লুলামি করে বিখ্যাত হলে বলা যায় বিপ্লুলগিরি (বিপুল + লুল + গিরি)।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

বিপ্লুল

—হলো একটা ব্লগীয় পরিভাষা।

কোনো বুড়োর হদ্দ, বুকে যার লুলফেলার দুরন্ত কামনা। কিন্তু কোথায় ফেলবে বুঝতে না পেরে সেই লুলে নিজের গেঞ্জি-বুনিয়াদ ভেজায়, তাকেই এক কথায় বিপ্লুল বলা যায়।

আর বায্— এর কথা তো আলমগীর ভাই বললেনই। হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

দুর্দান্ত এর ছবি

হ !

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মাসিক স্পেশাল না, এগুলা সাপ্তাহিক করেন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

হো হো হো
পাংখা পুস্টু হইছে।

==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ

নীল রোদ্দুর এর ছবি

খাইছে!
রসে টইটম্বুর...
একসাথে দুইটা পড়লাম... চলুক.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

তাসনীম এর ছবি

চলুক
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

পলাশ দত্ত এর ছবি

পাচ তারা।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

পলাশ দত্ত এর ছবি

পাচ তারা।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

আলমগীর এর ছবি

অতিশয় উত্তম হইয়াছে।
মুখফোঁড়ের খবর রহিয়াছে এরপরঅবধি।

গৌতম এর ছবি

মুখফোঁড়ের খবর রহিয়াছে এরপরঅবধি।
এক্মত।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মুখফোড়ের খবর রহিবে কীরূপে? তিনি তো স্বর্গবার্তার সম্পাদক, আমি নিতান্ত প্রদায়ক মাত্র। তবে তিনি আপাতত ম্যাটারনার্ল লিভ (তাঁহার পরিবার মা হৈয়াছেন আর তিনি পরিবারের সেবা করিতেছেন)—এ আছেন বলিয়া স্বর্গবার্তার সম্পাদকীয় "আদমচরিত" লিখিতে পারিতেছেন না।

আমরা আশাকরি তিনি শীঘ্রই ফিরিয়া আসিবেন। পরিবারের ডরে তাঁহার মতো ডাঁকসাইটে সম্পাদক রিটায়ার করিতে পারেন না!

মুখফোড়, ফিরিয়া আসোন ঘটোন করোন মারাও। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

জি.এম.তানিম এর ছবি

গুল্লি
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

মাল, পুরা মাল...

_________________________________________

সেরিওজা

স্বপ্নাহত এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

গুরু, হয় দেশে আসেন না হয় ঈশ্বররে ধইরা বাইন্দা আমার জন্য জর্মন দেশের একটা ভিসার ব্যবস্থা কইরা দ্যান। আপনার পদধূলি লইতে মঞ্চায় দেঁতো হাসি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

রেনেট এর ছবি

পুরাই ডিশটিং ডিশটিং হইসে দেঁতো হাসি
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

তুলিরেখা এর ছবি

হায় ধূ গো, আদমের কোনো শালি নাই।
হাসি

লেখা পুরাই সিরাম। চোখ টিপি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আদমের তো তাও শালি খুঁজে বের করা যাবে কোনো সিস্টেমের ফাঁক-ফোকড় থেকে। কিন্তু আমাকে যে স্বয়ং ঈশ্বরের কাছেও শালি চাইতে পাঠানো হয়েছে, সেই খবর আছে আপনার? মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

বর্ষা এর ছবি

গুল্লি গুল্লি

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

দারুণ!

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

চ্রম !

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

সাফি এর ছবি

সাধু সাধু ঃ-)

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ফাডাইলাইচে গো.....
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

সিরাম!!!
---------------------
আমার ফ্লিকার

---------------------
আমার ফ্লিকার

অতিথি লেখক এর ছবি

গুল্লি

( সচলে আমার ব্যবহার করা প্রথম গুল্লি আপনেরেই দিলাম!! )

বোহেমিয়ান

আরিফ [অতিথি] এর ছবি

হাসতে হাসতে শেষ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অরণ্যে গাছের সংখ্যা কমে গেছে মনে হয়। রোদন এখন ভুমিস্পর্শ করার সাধ্য রাখে! এতো অনুরোধের পর তবে আবার স্বর্গবার্তা প্রকাশিত হলো! অশেষ কৃপা!
স্বর্গবার্তা নিয়ে নতুন কিছু বলার নাই। লেখা সেইরকম পাংখা হইসে।

---- মনজুর এলাহী ----

ধুসর গোধূলি এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুল্লি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

মহা ফাজিল লুক আপ্নে! খাইছে

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

রসে টৈটুম্বুর্লেখা! দারুণ মজা লাগলো।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
সাবিহ ওমর এর ছবি

গুল্লি গুল্লি গুল্লি (ইমোটা কেম্নে দেয়?)
পুরা কাঁপায় দিসেন!

ধুসর গোধূলি এর ছবি
শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ফাডায়ালাইছেন ম্যান।

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরে তো ভাগ্যবান কইতে হবে, তাঁর কামকাজের খবর লয়ে স্বর্গবার্তা বের হয়!
পোস্টে উত্তম জাঝা!

কৌস্তুভ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- হে হে হে

স্বরাস্ট্রমন্ত্রীরা পদাধিকার বলে এমনিতেই ভাগ্যবান হন। এইটা অটোপ্রসেস। স্বর্গবার্তা নিয়মমতো বাইর হয়, এইটাও অটোপ্রসেস। এইখানে কারো সাথে কারো লেনদেনের বিষয় নাই— এইটা অটোপ্রসেস না, এইটা একটা ডিসক্লেইমার।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

রাহিন হায়দার এর ছবি

খ্যাক খ্যাক খ্যাক!
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

ফাটাফাটি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অতিথি লেখক এর ছবি

নাইস টু মিট য়্যু, ধুগো ভাইয়া... লইজ্জা লাগে
ওয়াও ভাইয়া, আপনি ব্লগরব্লগরও করেন? হাউ খিউট! আমি অবভিয়াসলি রিডাইলাম ভাইয়া। রিডাইয়া জানাইলাম- '' সেইরম খাসা হইছে ভাইয়া''! হি হি হি...

''চৈত্রী''

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সুবহানাল্লা। চৈত্র মাস আইলেই "চইত্ মাস"-এর দেখা পাওয়া যায়। এইবার কি চৈত্র মাস এখনো আসে নাই?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গুল্লি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।