বাবা দিবসের আখ্যান

ধুসর গোধূলি এর ছবি
লিখেছেন ধুসর গোধূলি (তারিখ: সোম, ১৮/০৬/২০০৭ - ৫:০১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এদেশের লেবার রুমে যাবার নিয়ম কানুনে বেশ কড়াকড়ি। নিয়মকানুন ব্যাপারটাই আমার অসহনীয় লাগে। আর আমার 'লেইট' হওয়াটা কখনোই কাটাতে পারিনি, আজ এতোগুলো বছর পরেও।

প্রাণের সহধর্মীনি স্ট্রেচারে শুয়ে আছে লেবার রুমে, তাকে কথা দিয়েছি আমি তার সাথে থাকবো, কিন্তু এখনো আমাকে নানা রকম কাগজপত্রে সই করে যেতে হচ্ছে। ওদিকে আমার আদরের বউ বলে দিয়েছে আমার হাতে হাত রাখা ছাড়া এনাস্থেশিয়া নেবে না। ডাক্তাররা যতোই বুঝাচ্ছে এতে করে জটিলতা বাড়তে পারে, কিন্তু বউ নাছোড় বান্দা হয়ে গোঁ ধরে রয়েছে।

একজন নার্স এসে আমাকে যখন জানালো এ কথা। আমার মনের পর্দায় ভেসে উঠলো সতেরো বছরের সেই অবোধ বালিকার কথা। একগুঁয়ে আর কাকে বলে। সেই প্রথম দিন থেকেই তার একগুয়েমীটাকে আমার ভালো লেগে এসেছে। আশ্চর্য! কোনদিক দিয়ে দিন কেটে যায়। সেদিনের ১৭ বছরের বালিকা, যে চটাং চটাং কথা বলতো আমাকে, সে আজকে আমার মেয়ের মা হবে!

একগাদা কাগজ সই করার পর ডাক্তারের সাথে ঢুকলাম লেবার রুমে। আমাকে দেখেই সে যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। "তুমি একটা এম্পটি হেড। এতো দেরী করলে কেন, কষ্ট তো হচ্ছে আমার, তুমি বুঝবাটা কি..." ডাক্তার নার্সরা এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ী করে। আমি আস্তে করে গিয়ে ওর বাম হাতটা আমার ডান হাতে নিলাম, কপাল থেকে রেশমী চুলের জঙলা সরিয়ে আলতো করে চুমো খেয়ে বললাম, "বধূ আমি আছি তোমার পাশে। আমাদের স্বপ্ন আজ জন্ম নিবে। জন্ম হবে একটা নতুন উচ্ছ্বাসের, এই উচ্ছ্বাস তোমার আমার। আমাদের 'তনয়া'...।"

ও আতংকিত চোখ করে বললো, "আমার ভয় করছে। আমি যদি না বাঁচি আর..."
বললাম, "ভয় পেয়োনা জান। ভেবে দেখতো কতোগুলো দিন আমরা এই স্বপ্নের জাল বুনে গেছি। কতগুলো বৃস্টিস্নাত রাত কাটিয়েছি আমরা খোলা আকাশের নিচে, সেই সিঁড়িতে বসে তোমার বাম হাত আমার ডান হাতে ধরা...। আমি আছি তোমার সাথে, ভয় নেই একটুও!

নার্সের হাতের মাস্ক ওর নাক-মুখ আড়াল করে দিতেই যেন গভীর ঘুমে ঢলে পড়লো। আমার ভেতরটা কেমন যেন খচ করে উঠলো, সয়ে নিলাম।

তনয়ার জন্ম হলো। আমার তনয়া, আমাদের তনয়া, আমাদের দুজনের মিলিত স্বপ্ন। আজকে আমার, আমাদের তনয়ার ৯ বছর পূর্ণ হলো বধূ, তুমি কি দেখতে পাচ্ছো! তুমি কি দেখতে পাচ্ছো আমাদের স্বপ্নের বেড়ে ওঠা, আমার বাবা হওয়ার গম্ভীরতা!


মন্তব্য

মাশীদ এর ছবি

আহা!
আজকে আরো কিছু লেখার মত এটাও মন ছুঁয়ে গেল রে।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

উৎস এর ছবি

আমি আর শোমচৌ মিলে একদিন বাবা ব্লগারুদের একহাত দেখে নেব।

কনফুসিয়াস এর ছবি

সাংঘাতিক। আমি তো সত্যি ভেবেছিলাম। পরে লেখকের নাম দেখে বুঝলাম!
-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ডরাইছি।
====
মানুষ চেনা দায়!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

লেখা ভালো লাগলো। আমার অভিজ্ঞতা মিলিয়ে দেখলাম। কিন্তু এখন কনফু-র মন্তব্যে আমি কনফিউজড! মানেটা কী? সত্যি নয়?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অরূপ এর ছবি

চলুক

নজমুল আলবাব এর ছবি

সাব্বাস...

সুমন চৌধুরী এর ছবি

৯ বছর!!!
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

বদ্দা, সিসটেমে ইট্টু গোলমাল হইয়া গেছিলো। ঐটা ৯ না ৬ হইবো!
নাজমুল ভাই- লন তাইলে বলপেন ক্যাম্পাস।

জিজু, বুকে আসো।

জুবায়ের ভাই, আমি কিন্তু আপনের অভিজ্ঞতাই লেখছি। কোথায় জানি পড়েছিলাম কোন একসময় চোখ টিপি

মা.মু. ডরাইছো তাইলে! তাড়াতাড়ি সব ঠিক করো নাইলে পরেরবার তোমারে নিয়া লেখুম। মুহাহাহাহা
মিয়া মোহাম্মদ কুংফু - বাকিটা আর কইলাম না!

উৎস ভাই, আসেন মল্লযুদ্ধ ডাকি বাবাব্লগারুদের বিরুদ্ধে!
মাশীদ, থ্যাংক্স দোস্তাইন।

পরিশেষ - এট দ্যা ইলেভেন্থ আওয়ারে মাথা থাইকা ১০ মিনিটে খটাখট বাইর হইছে এই জিনিষ। ধিরা নিলাম এইটা ট্রেইলার। আসল জিনিষটা শুরু করুম নাকি? জনগণ কি কয়, নাকি অন্যকেউ হাত দিবে!
জুবায়ের ভাইকে কি একটা রিকোয়েস্ট ঠুঁকে দেবো নাকি। জুবায়ের ভাই আছেন?
_________________________________
<স্বাক্ষর দিমুনা, পরে জমিজমা সব লেইখা লইলে!>

দৃশা এর ছবি

গুরু এই ছুইটকা বয়সে ৯ বছরের তনয়ার পিতা কেমতে হইলেন?বাল্যবিবাহ?

দৃশা

দৃশা এর ছবি

কইতে ভুইলা গেছিলাম ...মিষ্টি হইছে।।

দৃশা

কল্পনা আক্তার এর ছবি

যদিও পুরোনো লেখা তারপরও মন্তব্য করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
অতীব ভয়ংকর রকমের সুন্দর হয়েছে আপনার এই লেখাটি!!

বাস্তব জীবনেও আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটির এতোটা কাছে থাকুন এই কামনা করি হাসি

...........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা


........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

কি সুইট একটা লেখা। হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নীরব পাঠক এর ছবি

চলুক

ধূসর জলছবি এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।