মিউনিখ গিয়ে আমার প্রধান আগ্রহ ছিল ডাখাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পটা দেখা। জানি আমার বন্ধুরা বরাবরের মত নাক কুঁচকে বলবে বর নিয়ে বেড়াতে বের হয়ে কোথায় রোমান্টিক সব যায়গায় ঘুরবে তা না, শেষ পর্যন্ত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প? কিন্তু আমি এত কাছে এসে এটা না দেখে যাওয়ার মত উদাসীন হতে পারিনি । আমি দেখতে চাই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প নামক জিনিসগুলি আসলেই সত্যি। কারণ আমার কখনও বিশ্বাস হতে চায় না , যে মানুষেরা নিজেদেরকে পৃথিবীর সবচাইতে সভ্য, বুদ্ধিমান প্রাণী বলে দাবি করে, তাদের ভিতর এত ভয়াবহ অসভ্যতা লুকিয়ে থাকে, সময় সুযোগ পেলেই ডানা ঝাপটে বের হয়ে আসে, ধ্বংসের আনন্দে মেতে নিশ্চিহ্ন করে দেয় হাজার মানুষের শ্রমে গড়ে উঠা এক একটা সভ্যতা, আর পৃথিবীর সব কিছুর চাইতে বেশী মূল্যবান এক একটা মানুষের তরতাজা প্রাণ ।
ডাখাউ ক্যাম্পের লোহার গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলেই বিশাল খোলা জায়গা যেখানে তখন কয়েদিদের রোল-কল করা হত। চারপাশে ইলেক্ট্রিফাইড কাঁটাতারের বেড়া আর পরিখা দিয়ে ঘেরা ছিল তখন , আর ছিল ওয়াচ টাওয়ার। ক্যাম্পটি ক্যাম্প এলাকা এবং দাহন স্থান এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। ক্যাম্প এলাকায় ৬৯ টি ব্যারাক ছিল যারমধ্যে একটা ধর্মীয় কয়েদিদের জন্য আর একটা মেডিকেল এক্সপেরিমেন্টের জন্য নির্দিষ্ট করা ছিল।
[img=480x640][/img]
ওয়াচ টাওয়ার
[img=468 x 285][/img] দাহন যন্ত্র
আর ছিল ক্যাম্প প্রিজন বা বাঙ্কার, ছোট ২.৮ মিটার চেম্বার,যেখানে দাঁড়ালে কয়েদিদের হাঁটু সামনের দেয়ালে,পিঠ পিছনের দেয়ালে লেগে থাকত প্রায় , যেখানে দাড়িয়ে থাকা ছাড়া আর নড়াচড়া করার মত তেমন কোন জায়গা ছিল না । এই অন্ধকার বাঙ্কারের ভিতর এক একজন কয়েদিকে দিনের পর দিন আটকে রাখা হত, খাবারও দেয়া হত ৪/৫ দিন পর পর। এ সমস্ত কয়েদীদের মধ্যে অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করত অথবা পাগল হয়ে যেত।
[img=480x640][/img]
বাঙ্কার বা ক্যাম্প প্রিজন
ডাখাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প প্রথম অফিশিয়ালি যাত্রা শুরু করে ১৯৩৩ সালের ২২ মার্চ, মিউনিখ পুলিশপ্রধান হাইনরিখ হিমলারের একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। যদিও এটা জার্মানির প্রথম কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প না, কিন্তু এটাই একমাত্র ক্যাম্প যা ১২ বছরের নাৎজী শাসনের পুরোটা সময় ধরে আতংক ছড়িয়ে গেছে পুরো পৃথিবী জুড়ে। অন্য ক্যাম্প গুলোর স্বতঃস্ফূর্ত আতংকের তুলনায় ডাখাউ ক্যাম্পে আতংক ছড়ানোর কাজটা করা হত অনেক নিয়মতান্ত্রিক , উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সংঘবদ্ধভাবে । একদম শুরুর দিকে এটা বাভারিয়ান পুলিশ বাহিনীর অধীনে থাকলেও ১৯৩৩ সালের এপ্রিলের ১০ তারিখে এসএস বাহিনী( হিটলারের প্রধান আধাসামরিক বাহিনী) ক্যাম্পের দায়িত্ব নিয়ে নেয় এবং সাথে সাথেই ক্যাম্পে অত্যাচারের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায়। ১৯৩৩ এর এপ্রিলের ১২ তারিখেই এসএস ৪ জন ইহুদি কয়েদিকে পালিয়ে যাওয়ার মিথ্যে অজুহাতে গুলি করে মারে ।
ক্যাম্পে আসার সাথে সাথেই কয়েদিদের ব্যক্তিত্ব, সাহস, আশা গুড়িয়ে দেয়ার জন্য তাদের সাথে ভয়াবহ অসদাচরণ শুরু করা হত। ইহুদি, জনপ্রিয় ব্যক্তিদের আবার কখনও কখনও সকল নতুন কয়েদিদেরকেই ২৫ অথবা আরও বেশী চাবুক মেরে স্বাগতম জানান হত । এপ্রিল হতে মে মাসের শেষে ডাকাও তে মোট ১৩ জন কয়েদি খুন হয়।
১৯৩৩ সালের ক্যাম্প আইনে ( স্পেশাল রেগুলেশন) ডাখাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পকে জরুরী অবস্থা জারী করে সার্বভৌম ক্ষমতা দেয়ার চেষ্টা করা হয়, যেটা চলবে নিজের তৈরি আইনে, নিজের লোকদ্বারা এবং নিজস্ব বিচারব্যবস্থায়। বাভারিয়ান বিচারবর্গের হস্তক্ষেপে সেটার বাস্তবায়ন শেষ পর্যন্ত হয় না, হিমলারকে বাধ্য করা হয় ওয়াকলে কে ক্যাম্প কমান্ডেন্ট থেকে বরখাস্ত করতে( যে ক্যাম্প কমান্ডেন্ট সবসময় ক্যাম্পে আসত হাতে চাবুক আর পাশে একটা জার্মান শেফার্ড নিয়ে) । নতুন ক্যাম্প কমান্ডেন্ট থিওদর এইকে “ডিসিপ্লিনারি এন্ড পানিশমেন্ট রেগুলেশন” নামে নতুন ধরনের এক আইন তৈরি করে, যেটা ১৯৩৩ সালের ১লা অক্টোবর থেকে কার্যকর করা হয়,এবং যার মাধ্যমে যে কোন কয়েদিকে বিপ্লবী আখ্যা দিয়ে ফাঁসি অথবা গুলি করে মারা আইনসিদ্ধ হয়।
১৯৩৩ সালের শুরুর দিকে জার্মান কম্যুনিস্ট এবং ডেমোক্রেটদের ধরে ধরে ক্যাম্পগুলোতে আনা হত যাদের অনেকেই তাদের বিপ্লবের জন্য কারাভোগ শেষ করেছেন । আস্তে আস্তে ইহুদি, প্রফেশনাল অপরাধী, দেশান্তরী, সমকামী, ভিক্ষুক, মাতাল, জিপসিদের ধরা হয় এবং তারও পরে শুরু হয় বিদেশীদের ধরে আনা যাদের মধ্যে প্রথম ছিল অস্ট্রিয়ানরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আরও দলে দলে নতুন কয়েদিরা আসতে থাকে। মাঝে ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যাম্পটাকে কিছুদিনের জন্য খালি করা হয় এসএস ডেথ ডিভিশন এর তথাকথিত ট্রেনিং এর উদ্দেশে। কয়েদিরা আবার ফেরত আসে ১৯৪০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ১৯৪০ সালের মধ্যেই ১৩৩৭৫ পোলিশ নাগরিককে ডাখাউ ক্যাম্পে ধরে আনা হয়। ১৯৪১ সালে বলকানদের আর ১৯৪২ থেকে রাশিয়ানদের ডাকাও তে আনা শুরু হয়। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে বেশী ছিল (বেশী থেকে কমের দিকে) পোলিশ, রাশিয়ান, ফ্রেঞ্চ, যুগোস্লাভিয়া এবং চেকরা । ৩০০০ ক্যাথলিক প্রিস্ট, বিশপ ছিল ডাখাউ ক্যাম্পে। ১৯৪৪ সালে ডাখাউ এর ভিতরে মহিলাদের জন্যও ক্যাম্প খোলা হয়।
এভাবে কয়েদির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে মৃত্যুহারও ভয়ানক ভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৯৪০ সালে ১৫২১, এবং ১৯৪১ সালে ২৫৭৬ জন কয়েদী প্রাণ হারায়। কয়েদিদের যে কাজ করান হত তার অনেক গুলোতেই জীবননাশের হুমকি ছিল, কাজের মধ্যেই চলত অকথ্য অত্যাচার, কখনও কখনও দিনের পর দিন কোন বিশ্রাম না দিয়েই টানা পরিশ্রম করান হত । কাজ শেষে ক্যাম্পে ফেরার পর ভয়ানকভাবে ক্লান্ত এইসব কয়েদিদের বাধ্য করা হত রোলকল এলাকাতে কয়েক ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকতে। এরপর বাঙ্কারে ফিরার পর তাদের বিছানা ঠিক করা, লকার গোছানো, মেঝে পরিষ্কার করা সহ আরও অনেক কিছু করতে হত যার প্রতিটা কাজের সাথেই ছিল শাস্তির ব্যবস্থা, পান থেকে চুন খসলেই খেতে হত চাবুকের বাড়ি। যেহেতু পর্যাপ্ত খাবার দেয়া হত না তাই অধিকাংশ কয়েদি দুর্বল, অসুস্থ হয়ে পড়ত স্বাভাবিকভাবেই। ডিসেম্বর ১৯৪০ থেকে মে ১৯৪১, শুধু এই ৬ মাসেই এক চতুর্থাংশ কয়েদি ( ২৩.৫%) মারা যায়।
[img=640x480][/img]
কয়েদিদের ডরমিটরি
মধ্যযুগীয় যত শাস্তি তাদের দেয়া হত তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ছিল “পোল হ্যাঙ্গিং” নামে এক শাস্তি যেখানে কয়েদীদের হাত পিছনে নিয়ে শিকল দিয়ে বেধে এরপর কোন উঁচু স্থান হতে তাদের ঝুলিয়ে রাখা হত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিছানা ঠিকমতো গোছানো হয়নি, মেঝে যথেষ্ট পরিমাণ ঝকমক করছে না , টুপি দেখে কোন এসএস কর্মীকে না চিনতে পারার মত অপরাধ গুলোতেই এই শাস্তি দেয়া হত। দেখে শুনে আমার মনে হয়েছে তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য আসলে কোন কারণ লাগত না, শাস্তি দিতে হবে এটাই সবচেয়ে বড় কারণ ছিল। আর তাদের সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল বোধহয় মানুষ হয়ে জন্মানো।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কয়েদিদেরকে( রুম এল্ডার , ক্যাপো ইত্যাদি নির্বাচন করে) কাজে লাগান হত ক্যাম্পের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা চালিয়ে নেয়ার জন্য। এদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ভাবে অন্যান্য কয়েদিকে অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করত । কিন্তু এর উল্টোটাও ছিল, কিছু কয়েদি এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে অন্য কয়েদিদের উপর অত্যাচারও করত, যদিও এদের সংখ্যা ছিল কম। হাজার প্রতিকূলতার মধ্যেও এরা এক দল আরেকদলকে সাহায্য করেছে, মানসিক সাহস যুগিয়েছে, প্রাণ বাঁচিয়েছে, হয়ত এটা প্রমাণের জন্যই যে তারা সৃষ্টির সেরা জীব।
ডাখাউ ক্যাম্প তৈরি করার পর থেকেই হিটলার বাহিনী দেশী বিদেশী বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের ক্যাম্প পরিদর্শনে নিয়ে আসত। তাদেরকে দেখানর জন্য একটা আদর্শ ক্যাম্প বানানো ছিল যেটা দেখে মনে হবে ক্যাম্পে কয়েদিরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। আবার সাথে সাথে তাদেরকে এটা বুঝানোর চেষ্টাও করা হত যে এসব কীটপতঙ্গেরা যাদের জার্মান রক্ত নেই,অথবা যারা বেঈমান এদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
ডাখাউ তে তথাকথিত হাসপাতালটা ছিল সবচেয়ে আতংকের যায়গা , যা চলত এসএস ডাক্তারদের দ্বারা , যারা এস এস মেডিকেল একাডেমী থেকে বের হওয়া এবং যাদের প্রায় সবাই সার্জারি শিখেছে ক্যাম্পে সুস্থ কয়েদিদের উপর অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করে। অসুখের ভান করছে এই অপবাদ দিয়ে অনেক অসুস্থ মানুষকে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়েছে। খুব বেশী অসুস্থ যারা , সেবা দেয়ার ঝামেলায় না গিয়ে সোজাসুজি মেরে ফেলাই ছিল এস এস ডাক্তারদের কাছে সবচেয়ে স্বাভাবিক। যদিও জার্মানিতে ইউথ্যানাসিয়া নিষিদ্ধ , কিন্তু অসুস্থ, কাজ করতে অক্ষম কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীনদেরকে গ্যাস চেম্বারে বা বিষ দিয়ে মারা হত প্রতিদিন। তারপর পুড়িয়ে ফেলা হত দাহন যন্ত্রে। রোগীদের মারার আর একটা পন্থা ছিল , খুব বেশী অসুস্থ রোগীদের ওয়াশরুমে রেখে সারারাত তাদের গায়ে ঠাণ্ডা পানি ছেড়ে রাখত। যদি কোন বোকা , দুর্ভাগা এরপরও বেচে যেত তখন তার পিছনে কিছুটা বিষ খরচ করত এসএস ।
কয়েদীদের উপর বিভিন্ন অমানুষিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছে নাৎজীরা। বৃহৎ উচ্চতায় বিমানচালকদের সক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা পরীক্ষার জন্য কয়েদিদের উপরে নৃশংস পরীক্ষা চালানো হয়েছে , এতে ৭০ জনের অধিক কয়েদী প্রাণ হারায় । বরফপানিতে কয়েদীদের চুবিয়ে রেখে অথবা দিনের পর দিন সমুদ্রের লবণাক্ত পানি খাইয়ে দেখা হত ঠিক কতদিন পর তারা মারা যায়। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত ১১০০ কয়েদীকে ম্যালেরিয়া জীবাণুতে আক্রান্ত করা হয় গবেষণার অজুহাতে।
[img=640x480][/img]
বৃহৎ উচ্চতা পরীক্ষা
যুদ্ধের পরে প্রাপ্ত তথ্যমতে ডাখাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মোট ৪১৫৬৬ জন কয়েদি মারা গেছেন যাদের মধ্যে ৪০০০ সোভিয়েত কয়েদিকে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে মারা হয়েছে, ৪৮৫১ জন মারা হয় কাজে সক্ষম ছিল না বলে গ্যাস চেম্বারে । প্রধান ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন সাবক্যাম্পে যাওয়া আসার পথে গাড়িতে না খেয়ে মারা যায় অসংখ্য কয়েদি, যাদের কথা কোথাও লিপিবদ্ধ নেই। আরও একদলের কথা লিপিবদ্ধ নেই , এরা মূলত ছিলেন হিটলারের কর্মকাণ্ডের বিরোধী, যাদের কে গেস্তাপোরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে নিয়ে আসত মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই।
১৯৪১ এর ডিসেম্বরে অ্যামেরিকা বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়ার সাথে সাথেই যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে, অস্ত্রের চাহিদাও বহুগুণ বাড়ে। হিটলার এবং তার দোসররা কয়েদিদের যুদ্ধোপকরণ তৈরির কারখানায় কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে একদিকে যারা কাজে সক্ষম তাদের জন্য শাস্তি কমান হয় , খাবার সরবরাহ বাড়ানো হয় সক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য আর একদিকে কাজে অক্ষম কয়েদিদের মেরে ফেলার প্রবণতাও বেড়ে যায় কয়েক গুন। এরপরও যখন অস্ত্র কারখানাগুলো তাদের চাহিদা পরিমাণ কয়েদি পাচ্ছিল না, তখন হিমলারের হুকুমে কাজে সক্ষম যে কোন ব্যক্তিকেই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ধরে আনা শুরু হয় । যেখানে ১৯৪২ সালের ডিসেম্বরে ৮৮০০০ কয়েদী ছিল, সেখানে অগাস্ট ১৯৪৩ সালেই সেটা বেড়ে দাড়ায় ২২৪,০০০ জনে, এবং পরবর্তীতে বাড়তেই থাকে, ১৯৪৫ সালের জানুয়ারিতে সেটা গিয়ে দাড়ায় ৭৫০,০০০জনে।
যুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে এসে , যখন পরাজয় কড়া নাড়ছে দরজায়, হিটলার বাহিনী সিদ্ধান্ত নেয় কোন কয়েদীকে শত্রুর হাতে পড়তে দেয়া যাবে না। শেষ মুহূর্তের বিশৃঙ্খলাতে পুরোপুরি সেটার বাস্তবায়ন না ঘটলেও, হাজার হাজার কয়েদীকে গ্যাস চেম্বারে মারা হয়েছে, সহস্র মারা পড়েছে স্থানান্তরিতের সময়, টাইফাস এপিডেমিক এলাকাতে পাঠানো হয়েছে কয়েক হাজার কয়েদিকে যারা অধিকাংশই বেঁচে নেই। এপ্রিলের ১৮ তারিখ হিমলার সিদ্ধান্ত নেয় উত্তর দিকের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলো থেকে কয়েদিদের সমুদ্রপথে সরিয়ে আনার, এরকম কয়েদি-পরিপূর্ণ দুটি জাহাজ ব্রিটিশ বাহিনী ভুল করে তখন ডুবিয়ে দেয়। আর দক্ষিণ দিকের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প গুলো থেকে কয়েদিদের আল্পসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় পায়ে হাঁটিয়ে । পথিমধ্যে মারা পরে আরও অনেক কয়েদি ।
ডাখাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কয়েদি , খাবার সরবরাহে কমতি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে পরিস্থিতি শেষের দিকে ভয়াবহ রূপ নেয় । ১৯৪৪ সালে এখানে টাইফাস এপিডেমিক শুরু হয় , এবং খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরে। ১৯৪৪ এর নভেম্বরে ৯৯৭ জন , ডিসেম্বরে ১৯১৫ জন এবং ১৯৪৫ সালের প্রথম তিন মাসে ১০,৪২৭ জন টাইফাস আক্রান্ত কয়েদী মারা যায়। দাহন যন্ত্রের ধারণক্ষমতার চেয়ে মৃতের সংখ্যা বেশী হয়ে যায় , এর মধ্যে কয়লার সরবরাহ কমতে কমতে ফেব্রুয়ারিতে বন্ধই হয়ে যায় , তাই শেষের দিকে কয়েদীদের গণকবর দেয়া হয়েছে পাশের এলাকাতে। অবশিষ্ট বেঁচে থাকা কয়েদিদেরকে প্রথমে বোমা মেরে বা খাবারে বিষ দিয়ে মারার প্লান করা হয়, কিন্তু তাড়াহুড়োর কারণে সেটার বাস্তবায়ন করতে না পেরে, ২৬ এপ্রিলে ১০,০০০ টাইফাস আক্রান্ত কয়েদিকে আল্পসের দিকে পদব্রজে পাঠানো হয় আসে পাশের এলাকার মানুষের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে গুরুত্ব না দিয়েই ।
এপ্রিলের ২৮ তারিখ পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের একাংশ মিলে ডাখাউ শহরে একটা সশস্ত্র বিক্ষোভ ঘটায়, কিন্তু এসএস বাহিনীর হাতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধরাশায়ী হয় । এর পরের দিনই অর্থাৎ ২৯ই এপ্রিল ডাখাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প স্বাধীন হয় ইউএস আর্মির হাতে । ইউএস আর্মির কিছু সৈনিক ক্যাম্পের অবস্থা দেখে আতংকিত হয়ে এসএস সদস্যদের খুন করা শুরু করে যেটাকে ডাখাউ ম্যাসাকার বলা হয়। তাদের কমান্ডারের হস্তক্ষেপে প্রায় সাথে সাথেই সেটা থেমে যায় ।
যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পর ডাখাউ ক্যাম্প প্রথমে ইউএস আর্মির অধীনে ছিল, এরপর ১৯৪৮ সাল থেকে এটাকে রিফিউজি ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হয় । বেঁচে যাওয়া কয়েদীদের প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ১৯৬৫ সালে এটা ডাখাউ মেমোরিয়াল সাইট হিসেবে পৃথিবীবাসীর জন্য উন্মুক্ত হয়।
প্রতিবছর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে কয়েক মিলিয়ন মানুষ এখানে আসে তাদের পূর্বপুরুষদের দুর্ভাগ্য, নৃশংসতা ,অমানবিকতা , সেই সাথে প্রতি মুহূর্তের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জিতে যাওয়ার অসম্ভব প্রচেষ্টার রূপটা দেখতে। যাওয়ার সময় প্রত্যেকেই তাদের মাথার মধ্যে করে নিয়ে যায় এক টুকরো ডাখাউ , আর অন্তত একবারের জন্য হলেও তারা মনে মনে শপথ নেয় , আমরা আর কোথাও কোন ডাখাউ তৈরি হতে দিবো না।
(যদিও এই জার্মান জাতীরই এক ভয়ংকর সন্তান পুরো পৃথিবীটাকে জ্বালিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিল, তবুও ডাখাউ দেখে আমার তাদের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়েছে, নিজেদের লজ্জার ইতিহাসটাকেও তারা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরছে কত অবলীলায় । আর কি অদ্ভুত জাতি আমরা, নিজেদের গর্বের ইতিহাস গুলোকেও প্রতিনিয়ত বিকৃত করছি নিজেরাই। আমাদের চাইতে দুর্ভাগা কোন জাতি কি পৃথিবীতে আছে ? মাঝে মাঝে সত্যিই খুব সন্দেহ হয় )
ফুট নোট- এই লেখার সকল তথ্য “ক্যাটালগ ফর দা এক্সিবিশন অফ দা ডাখাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প ১৯৩৩ টু ১৯৪৫” থেকে নেয়া। ছবি আমার তোলা, ক্যামেরা সাধারণ ডিজিটাল, তাই ছবির নিম্ন মানের জন্য খুবই দুঃখিত।
মন্তব্য
আমার বাড়ির পাশে জার্মানির সবচে বড় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প বুখেনভাল্ড। ক্যাম্পগুলোর চেহারা, আয়োজন, অত্যাচার মোটামুটি একইরকম! একটা লেখা দেব দেখি সময় পেলে।
প্রসঙ্গত, হিটলার জার্মান নয়। তার জন্ম অস্ট্রিয়ায়! তাতে তার অপরাধ কিছু কমে না! আর তার সহযোগী পশুরা তো জার্মানই ছিল!
যুদ্ধের অতীত সংরক্ষণ এবং প্রদর্শণে জার্মানদের আয়োজন ভালো। তবে এখানে নাজীরা এখনো রয়েছে। চাপা পড়ে রয়েছে, তবে রয়েছে।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হিটলারে জন্ম অস্ট্রিয়ায় সেটা জানি। আমি আসলে হিটলার বলে পুরো পরিস্থিতির কথা বুঝাতে চেয়েছি। সেতো জার্মান জাতিকেই পৃথিবীর রাজা হওয়ার সপ্ন দেখিয়েছে।
বুখেনভাল্ড সম্পর্কে পড়েছি কিছুটা। একই আসলে, ঠিকই বলেছেন।
তবুও তো চাপা পরে আছে, আমাদের রাজাকার গুলোর মত তো বীর দর্পে ঘুরে বেড়ায় না। এটাই খারাপ লাগে।
একটি বিষয় বলতে ভুলে গেছি, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এইটা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। সেই চেষ্টা করাও হাস্যকর। এটা ভাবাই বড় রকমের বোকামী!
মানুষ অন্য সকল প্রাণির মতই একটা প্রাণি! প্রকৃতির হিসেবে সম্ভবত ক্ষতিকর প্রাণি!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমরা তারপরও প্রমানের চেষ্টা করি সবসময়। নিজেদেরকে ক্ষতিকর ভাবতে কেন যেন কষ্ট হয় খুব, বোকামি জানি, তবুও।
আপনি আমার কথা বুঝতে পারেন নি। এটা আবেগী হয়ে বলা কথা নয়!
ধরলাম ক্ষতিকর নয়, তবুও মানুষ কেন সৃষ্টির সেরা জীব হতে যাবে! মানুষ সেই দাবীই বা করবে কেন! প্রকৃতিতে অন্য কারো থেকে ভালো হওয়ার মাপকাঠি কী!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
যুক্তির বিচারে অবশ্যই সেরা না। আর যুক্তি দিয়ে যদি চিন্তা করি তাহলে আমাদের সেই দাবী করতে যাওয়াটাই বোকামি। মাপকাঠি নির্দিষ্ট করা যাবে না বলেই সেরা নির্বাচন সম্ভব না। কারন কোন দিক থেকে আমরা সেরা তো কোন মাপকাঠিতে পিঁপড়েরা।
আমি আসলে আবেগী কথাটা বললাম এই কারণে যে আমরা আবেগী বলেই এভাবে ভাবতে ভালবাসি। এটাই বোকামি, তবুও আমরা ভাবি, বলি। আমার মন্তব্যটাতে আসলে তাই বলতে চেয়েছি। বিশদে বলা হয়নি। অন্য প্রাণীর ভাষা বুঝিনা বলে হয়ত জানিনা ওরাও নিজেদের সেরা ভাবে কিনা।
তবে আপনার চিন্তাটা খুব চমৎকার লেগেছে। সবাই যদি এভাবে ভাবতে পারত হয়ত পৃথিবীটা অন্যরকম হত।
অন্য কোন প্রাণীর যদি ভাষা নাও থাকে, সামাজিক জীবন নাও থাকে, তাও বলা যাবে না, ঐ প্রাণী মানুষের চেয়ে নিচু। প্রকৃতিতে একটা ফায ভাইরাস আর একটা মানুষ -- দুটোই সমান সফল প্রজাতি। প্রকৃতিতে কোন 'আশরাফুল মাখলুকাত' নেই। অনার্যদা এইটাই বলেছে। দর্শনের কথা বলেননি।
তবে আপনার লিখার কনটেক্সট এর সাথে অবশ্য এই যুক্তির কোন প্রাসঙ্গিকতা নেই।
লিখা পড়তে পড়তে আমিও ভাবছিলাম, মানুষ সত্যিই অদ্ভুত। নিষ্ঠুরতায় তার তুলনা নেই।
আমি আসলে মানুষের সাথে ভাষাগত কন্টাক্ট এ দুর্বল, আরেকবার প্রমান হল।
এই কথাগুলো এবং আমার অন্যান্য বক্তব্যে আমি কি একবারও বুঝাতে চেয়েছি অনার্যদা ভুল বলেছেন? বুঝলাম না আসলে। নিশ্চয়ই আমারই বুঝানোর ব্যর্থতা। আমি বলেছি উনি যেটা বলেছেন সেটাই সত্যি, কিন্তু আমরা আবেগি বলে নিজেদের শ্রেষ্ঠ ভাবতে পছন্দ করি, ভেবে আনন্দ পাই। যুক্তির বিচারে কেউই শ্রেষ্ঠ না।
অবশ্যই। আমি কিন্তু কাউকে নিচু বলিনি। আমি বলেছি
আমরা ওদের ভাষা বুঝিনা, ভাষা যে নেই সেটা কেমন করে খুব নিশ্চিত হব।
আর নিষ্ঠুরতার ব্যাপারে বলব, মানুষের মধ্যে ভাল খারাপ সবই আছে। তাই মানুষ খুব নিষ্ঠুর, বা মানুষ খুব ভাল, কোনটাই আমি বলি না । আমি সেটাই বলতে চেয়েছিলাম।
এ কথাটা বলে আমি কিভাবে এটা বুঝালাম যে আমি ভাবি মানুষ সৃষ্টির সেরা? আমি বলেছি তারা এটা প্রমান করতে চায় বলেই হয়ত এরকম করেছে। তারা তো আসলেই প্রমান করতে চায়, তাই না? এখানে আমার চিন্তা কিন্তু লিখিনি, সমগ্র মানুষের সাধারন ধারনার কথাই লেখা। তারচেয়েও বড় কথা এটা একটা আবেগি লাইন ছিল। যুক্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচারের কথা ভেবে আসলে তখন লিখিনি। যদিও যুক্তি খুব অনুপস্থিত তাও ভাবছি না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য
ডাকাও > ডাখাউ
ধন্যবাদ ভাইয়া, জার্মান উচ্চারণটা ঠিকমতো ধরতে পারিনি আমি। অন্য নামগুলোতেও হয়ত ভুল হয়েছে কিছুটা।
হাইনরিখ!
এই ভুল আমিও করতাম! রবার্ট কখ'কে কক বানিয়ে দিয়েছিলাম
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
লেখা ভাল হয়েছে আপু।
ওরা নাজী না বরঞ্চ নাতজী বলে। অনেকটা পিজা'র পরিবর্তে পিতজা'র মত।
নির্যাতন শিবিরগুলোর প্রবেশ পথে সাধারণত নাতজীরা কিছু প্রবাদ বাক্য ব্যবহার করত, যুদ্ধ পরবর্তীকালীন সময়ে যা সাধারণ মানুষ পারতপক্ষে এখন আর উচ্চারণ করতে চায় না।
এই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প এ মনে হয় লেখা আছে "Arbeits macht Frei" অর্থাৎ "কর্মেই মুক্তি"।
প্রথম প্রথম জার্মানিতে এসে এরকম একটি বেচাল প্রবাদ বাক্য বলে বসেছিলাম কোথাও। পরে আমার জার্মান রুমমেটরা
এই ইতিহাস বলেছিল।
-- ঠুটা বাইগা
ধন্যবাদ।
আমিতো নাৎজী লিখেছিলাম। খেয়াল করলাম উপরের এক যায়গায় নাজী লেখা হয়ে গেছে ঠিক করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ঠিকই বলেছেন। এখানে ঢুকার মুখে লেখা "Arbeits macht Frei" অর্থাৎ "কর্মেই মুক্তি"। এখানকারই দুই কয়েদী সয়ফার এবং জিপ্পার ( নামের উচ্চারণ ভুল হতে পারে) , এর উল্টো একটা গান লেখে ডাখাউ সং নামে, যেটা সেই সময় কয়েদিদের মধ্যে গোপনে গাওয়া হত। গানটা -
Barbed wire, loaded with death
is drawn around our world.
Above a sky without mercy
sends frost and sunburn.
Far from us are all joys,
far away our home, far away our wives,
when we march to work in silence
thousands of us at the break of day.
But we have learned the motto of Dachau
and it made us as hard as steel:
Be a man, mate,
stay a man, mate,
do a good job, get to it, mate,
for work, work makes you free!
আমি জার্মানটা পড়েছিলাম, ইংলিশটার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
জার্মান শব্দের প্রথমে z হলে, সেটার বাংলা উচ্চারণ লেখার চেষ্টা না করাই ভাল।
শব্দের শুরুতে 'ত' আর 'জ' একসাথে যুক্ত করে বলতে হয়। এ এক মহা জ্বালা!
--- ঠুটা বাইগা
মন খারাপ হয়ে গেল পড়ে। গত কয়েকদিন ধরে ২য় বিশ্বযুদ্ধের উপর মুভি দেখছিলাম কয়টা, পাশবিকতার ছিটেফোটাও তুলে ধরতে পারেনি সহজে, তবুও খারাপ হয়ে যায় মন।
বাস্তবতার পুরোটা লেখা বা মুভিতে ফুটানো যায় না আসলে হয়ত। তবে যতোটুকু ফুটে উঠে মন খারাপ হওয়ার জন্য যথেষ্ট । ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার নামটা জানলে ভাল লাগত।
লিখতে ভুলে গেছিলাম। আমি --বেচারাথেরিয়াম
ধন্যবাদ, বেশ কিছু তথ্য জানলাম।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
ঠিক কথা।
কি জানি? মানুষের পরস্পরবিরোধী রূপ দেখতে দেখতে কনফিউসড আমি। খুব খারাপ আবার খুব ভাল দুইটা রূপই তো দেখা যায়।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এসব জেনে মন খারাপ করার আসলে দরকার আছে। ইতিহাস থেকেই তো মানুষ শেখে । ভাল থাকবেন।
কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলো মুভিগুলোতে যেভাবে দেখানো হয়, কোনোটাতেই এতো ডিটেলস থাকে না, 'শিন্ডলার'স লিস্ট' এ কিছুটা হলেও ফুটে উঠে! অনেক কিছু জানলাম আপনার লেখা থেকে, মনটা খারাপ হলো যদিও। আনার্য দা'র সাথে একমত মানুষ "প্রকৃতির হিসেবে সম্ভবত ক্ষতিকর প্রাণি" সাথে ভয়ংকর ও নিকৃষ্টও!
.........
রংতুলি
শিন্ডলারস লিস্ট-এ আসলেই কিছুটা হলেও ফুটে উঠেছিল।
মন খারাপ হয়ে গেলো
বীভৎস!
মানব ইতিহাসের এই ভয়ঙ্কর কলঙ্কময় এই দিক তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
ভাবতে অবাক লাগে মাদাম তেরেসা যেমনি মানুষ তেমনি হিটলারও।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
হ ।
সৈয়দ মুজতবা আলী, উনার একটা লেখা (হাতের কাছে মূল লেখাটা নেই বলে নামটা লিখতে পারছি না, পরে দিয়ে দেবার ইচ্ছা রাখি) আছে হিটলার আর তার তৎকালীন কর্মকান্ডের ওপর। ঐ লেখার একটা অংশ ছিল এই সব বন্দিশালার ওপর। আমার শুধু মনে হয়েছে, ঐ সময়টাতে জার্মানরা রাহুগ্রস্ত ছিল, দেশের কর্তৃত্ব ছিল ভয়াবহ মানসিক রোগিদের হাতে। যথাসম্ভব ঐ লেখাতেই পড়েছিলাম, কোনোএক কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের কর্মকর্তার স্ত্রীর শখ ছিল, ইহুদি বাচ্চাদের মাথার খুলির চুলওয়ালা চামড়া দিয়ে টেবিল ল্যাম্পের শেড বানানো।
সবচেয়ে কষ্ট লাগে যখন দেখি, শুধুমাত্র ইহুদি বিদ্বেষের জন্য আমাদের প্রজন্মের কাছে হিটলারকে নায়কোচিত চেহারা দেয়া হয়। এই লোকটিই বোধহয় একমাত্র খৃষ্টান, যিনি মুসলমানদের জন্য কিছু না করেও কাঠমোল্লাদের কাছে হিরো।
ব্রুটাস
যে ডাক্তার কয়েদিদের ম্যালেরিয়া জীবাণু ইঞ্জেক্ট করেছে, তাকে পরে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। ফাসি হওয়ার আগে সে বলেছে তার কোন অনুশোচনা নেই, সে শুধু চায় সেই কয়েদিগুলোর উপর গবেষণার ফলাফল নিজের চোখে দেখে যেতে।
এরা সবাই ভয়ানক মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিল।
আপনি কি Eduard Wirths এর কথা বলছেন? সে সুইসাইড করেছিলনা?!
না , তার নাম ছিল ড. ক্লাউস শিলিং। আপনি যার কথা বললেন উনি গাইনোকলজিকাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করত ইহুদি মহিলাদের উপর । সেটা আরও ভয়ংকর।
ওহ! হ্যা। ধন্যবাদ
বইটার নাম ও হিটলার.
..................................................................
#Banshibir.
হিটলারের প্রেম নামেও তো সৈয়দ মুজতবা আলীর একটা বই আছে যতদূর মনে পরে।
হিটলারের প্রেম প্রবন্ধ, ঐটা পাবেন "রাজা-উজীর" বইতে।
..................................................................
#Banshibir.
বাপরে, ব্রেন ও আপনার। আমি পড়েছি বইটা। নাম মনে ছিল না।
হুঁ বোতলবন্দী জ্বীনকে হুকুম দিলাম সে পলকের মধ্যে খবর বের করে আনল। পীরালির মজাই আলাদা।
(পাশেই শেলফে ছিল, মিলিয়ে নিলাম।)
..................................................................
#Banshibir.
আপনার জ্বীনকে দিয়ে কি একটা বই এর খোঁজ নেয়া যাবে? বইটার নাম "বাংলাদেশ", সৈয়দ মুজতবা আলী'র ই লেখা। আগাম ধন্যবাদ।
মনে পড়ছে না ভাই, সমগ্র হাতের কাছে নাই. হয়তো অন্য কেউ বলতে পারবেন.
..................................................................
#Banshibir.
বহুদিন খুঁজে বেড়াচ্ছি।
স্টুডেন্ট ওয়েজ এ খোঁজ নিতে পারেন(যদি দেশে থেকে থাকেন) ।- ওরা তো সৈয়দ মুজতবা আলী'র সব বই প্রকাশ করছে । তাই তো...
ধন্যবাদ
ভাই, কাঠমোল্লাদের কাছে হিটলারের আবেদনের ব্যপারটা ইদানিংকালের প্রপঞ্চ। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় জার্মান বাহিনীর বীরত্ব(?) নিয়ে স্বপ্নালু হওয়ার প্রবণতা মোটামোটি পুরা ভারতে বেশ ভাল ভাবেই বিস্তার লাভ করেছিল, এর পিছনে সুভাষ চন্দ্র বোসের সাথে হেইনরিখ হিমলারের যোগাযোগ এবং সর্বোপরি "শত্রুর শত্রুই আমার বন্ধু" -- এধরণের মানসিকতা থেকে উদ্ভুত। আমাদের দেশের অনেক সাধারণ মানুষের (শুধু কাঠমোল্লাই না) মনে হিটলার-মোহের পিছনে এইসব ব্যপারও অনেকটা দায়ী। নাৎসী বাহিনীর নৃশংসতা সম্পর্কে বিস্তারিত বাংলাদেশের খুব কম লোকই জানে, এই ব্যপারগুলা নিয়ে বেশী বেশী আলোচনা খুবই প্রয়োজন -- বিশেষত পেপার পত্রিকায় এই নিয়ে তেমন ফিচার টিচার চোখে পড়ে না। যেমন ৬ই আগষ্টে দেশের সব পেপার পত্রিকায় আণবিক বোমা বিষ্ফোরণ নিয়ে অনেক ফিচার আসতে দেখা যায়, আর আমাদের দেশের লোকজন এই নিয়ে জাপানীদের প্রতি বেশ সহানুভূতিও প্রকাশ করে থাকেন (করাই স্বাভাবিক এবং উচিতও), কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানীদের নৃশংসতা নিয়ে আজ পর্য্যন্ত কোন লেখা পড়ি নাই, আর তাদের কাজ-কারবারের কাছে হিটলার বাহিনী নিতান্তই শিশু -- আমাদের মিত্র বাহিনী আর অক্ষশক্তি দুই পক্ষেরই ব্যপারটা জানা দরকার। জাপানীদের কাজ কারবার সম্পর্কে জানতে এখানে ঢুঁ মারতে পারেন --
১. ইউনিট ৭৩১ (উইকি এন্ট্রি)
২. ইউনিট ৭৩১ স্মৃতি সাইট
গত কালই মাত্র the boy in the striped pyjamas মুভিটা দেখলাম, দেখে সারা রাত ঘুমাতে পারি নি মানুষ কোন হিসেবেই শ্রেষ্টত্ব দাবি করতে পারে না !
the boy in the striped pyjamas মুভিটা দেখে আমি কয়েকদিন পর্যন্ত ঘুমাতে পারিনি।
একবার কনসেন্ট্রশন ক্যাম্পে যেয়েই শিক্ষা হয়ে গেছে, খুব বেশী প্রেশার পড়ে মনের পর্দায়, খুব বিদঘুটে ধরনের কষ্ট এসে ঘিরে ধরে।
facebook
সেটাই।
লেখাটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। যার ওপর দিয়ে গেছে শুধু সেই হয়তো বুঝেছে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের নির্যাতনের মাত্রা।
আর প্রতিটা ছবির শুরুতে [img=640x480] আর শেষে [/img]। এটা কি ঠিক করে দেওয়া যায়?
দ্রোণ মৈত্র
সেটাই।
আসলে আমি এই প্রথম কোন ছবি ব্লগ দিলাম। যেভাবে নিয়ম গুলো দেয়া ছিল ওভাবেই করেছি,তারপরও এভাবে এসেছে ছবি । ঠিক করার চেষ্টা করেছিলাম , হয়নি।
দেরীতে হলেও পড়লাম - আন্তরিক প্রচেস্টা আর নতুন তথ্যর জন্য
নতুন মন্তব্য করুন