প্রশ্ন
সূচির ছোটো ভাইটার জন্ম নেয়ার পর থেকেই , সে তার বাবা মায়ের কাছে অনবরত আবদার করছে বাবুটার সাথে সে কিছুক্ষণ একা থাকতে চায়। তার বাবা মা ধরে নিলো অন্য আর সব চার বছরের বাচ্চাদের মতই সেও ছোটো ভাইটাকে নিয়ে ঈর্ষান্বিত এবং একা পেলেই সে হয়ত উল্টাপাল্টা কিছু করবে। তাই তারা প্রথমে রাজি হল না।
কিন্তু পরবর্তীতে যখন সূচি হিংসাত্মক কোন আচরণই করল না বরং উল্টো সে তার ভাইটাকে নিয়ে অনেক বেশী উৎফুল্ল, স্নেহপরায়ণ। তখন তার বাবা মা ভাবল দেখাই যাক না একটু পরীক্ষা করে সে কি চায় । তারা সূচিকে বাচ্চাটার সাথে একা রেখে গেল, কিন্তু বেডরুমের দরজাটা কিছুটা খোলা রেখে যাতে তারা দেখতে পায় সে কি করছে ।
হটাৎ ইচ্ছে পূরণের আনন্দে যারপরনাই খুশী হয়ে , সূচি দুই পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে দোলনায় উকি দিয়ে বাচ্চাটার উপর ঝুঁকে খুব গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন করল-
“ বলতো আল্লাহ আসলে দেখতে কেমন, কারণ আমি প্রায় ভুলে যেতে বসেছি ”।
ইচ্ছাপূরণের উপায়
মৃত্যুর পরে জীয়ান নিজেকে একটা চমৎকার সাজান গোছান প্রাসাদে আবিষ্কার করল , যেখানে সে সারাজীবন ধরে যত স্বাচ্ছন্দ্য আর সৌন্দর্যের কথা কল্পনা করেছে তার সব কিছুই উপস্থিত । আপাদমস্তক সাদা ধবধবে পোশাক পরা এক ব্যক্তি এসে তাকে জানাল
“আপনি এখানে যা চাবেন তাই পাবেন , যে কোন খাবার, যে কোন ধরণের সুখ, আনন্দ , বিনোদন। "
আনন্দে আত্মহারা হয়ে জীয়ান বেচে থাকতে যা যা করার স্বপ্ন দেখেছে তার সবই করা শুরু করল । এরপর অনেকটা বছর পরমানন্দে ডুবে থেকে একদিন আবার সে সেই সাদা পোশাক পরিহিত ব্যক্তিটিকে খুঁজে বের করল।
"আমি যা যা করতে চেয়েছি সবই করা হয়েছে , এখন আমার এমন একটা কাজ দরকার যাতে নিজেকে প্রয়োজনীয় মনে করতে পারি"।
সাদা পোশাকের লোকটি উত্তরে বলল “ আমি খুবই দুঃখিত , কিন্তু এই একটা মাত্র জিনিসই আমি আপনাকে দিতে পারব না, কারণ এখানে করার মত কোন কাজ নেই। "
“কি জঘন্য” রাগে কিড়মিড় করে উঠল জীয়ান “ তার মানে কি আমাকে অনন্তকাল ধরে এরকম একঘেয়ে ক্লান্ত জীবন বয়ে বেড়াতে হবে? ইস, এর চেয়ে যদি আমি জাহান্নামেও যেতাম !
সাদা পোশাকের লোকটি এবারে তার খুব কাছে এসে অস্বাভাবিক নরম গলায় জিগ্যেস করল
“ আপনার তাহলে কি ধারণা স্যার, আপনি এখন কোথায় ?”
সবচেয়ে বড় পাথর
শিক্ষক ক্লাসে ঢুকেই একটা বড় কাঁচের জগ টেবিলে রাখলেন। এরপর ব্যাগ খুলে কমলা লেবু আকৃতির দশটা পাথর বের করলেন এবং তাদেরকে একের পর এক জগটার মধ্যে ভরে ফেললেন । যখন জগটা পাথর দিয়ে কানায় কানায় ভরে গেল তিনি তার ছাত্রদের জিগ্যেস করলেন
"জগটা কি পরিপূর্ণ ? "
তারা সবাই মেনে নিলো যে এটা পরিপূর্ণ। যাই হোক , শিক্ষক অন্য একটা ব্যাগ থেকে এবার কিছু নুরি-পাথর নিলেন । জগটাকে মৃদু ঝাঁকিয়ে বড় পাথর গুলোর ফাকে ফাকে বেশ অনেকগুলো নুরি-পাথরের জায়গা করে ফেললেন।
"এবার কি এটা পরিপূর্ণ ?"
ছাত্ররা জানাল, হ্যাঁ, এবার এটা নিশ্চিতভাবে পরিপূর্ণ । এবারে শিক্ষক তার বালি ভর্তি তৃতীয় ব্যাগটা খুলে জগের ভিতর ঢালা শুরু করলেন। পাথর আর নুরি-পাথরের ফাঁকের সমস্ত খালি জায়গা বালি দিয়ে ভরে গেল ।
শিক্ষক বললেন “ ঠিকাছে, এবার জগটা পুরোপুরি পরিপূর্ণ। তোমাদের কি ধারণা আমি তোমাদের সামনে কি প্রমাণ করার চেষ্টা করলাম? "
একজন ছাত্র বলল “ এটাই যে ব্যস্ততা কোন ব্যাপার না , চাইলেই সবসময় নতুন কিছু করার জন্য সময় বের করা যায় । "
শিক্ষক বললেন “ পুরোপুরি না। এই ছোট প্রমাণটা দিয়ে আমরা এটাই বুঝি যে, আমাদের সবসময় বড় পাথরগুলোই আগে রাখতে হবে, নয়ত পরবর্তীতে তাদের জন্য আর জায়গা খালি থাকবে না। ”
“ আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা কি? যেই পরিকল্পনাগুলো আমরা ভবিষ্যতের জন্য মুলতবী রেখেছি , যেই দুঃসাহসিক অভিযানগুলোতে আমরা যেতে চেয়েও যাইনি, নাকি সেই ভালবাসাটা যাকে পাওয়ার জন্য আমরা লড়তে ব্যর্থ হয়েছি। নিজেকে প্রশ্ন কর কোনটা সেই বড় পাথর যা তোমার মধ্যে স্রষ্টার অগ্নিশিখাকে জীবন্ত রাখতে পারে ,খুঁজে বের কর এরপর তোমার সিদ্ধান্তের জগে তাকে ভরে ফেল,এবং সেটা এখনি, কারণ খুব শীঘ্রই সেখানে তার জন্য আর কোন জায়গা খালি থাকবে না । "
মূল গল্প - পাওলো কোয়েলহো ।
মন্তব্য
"সবচেয়ে বড় পাথর"- খুব ভালো লাগলো গল্পটা। বাকি দুটিও ভালো।
অনুবাদ ভালো হয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ
খুব ভালো। গল্প গুলো ছোটো ছোটো রত্নের মতন, অনুবাদও ঝরঝরে আর সুখপাঠ্য।
সবচেয়ে ভালো লাগলো শেষ গল্পটা, "সবচেয়ে বড় পাথর"। কিন্তু কোনটা যে সবচেয়ে বড় পাথর আজো বুঝলাম না, হয়তো ছোটো ছোটো পাথর আর বালি নিয়েই দিন চলে যাচ্ছে! কেজানে!
লেখাটার জন্য আবার ধইন্যা।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অনেক ধন্যবাদ তুলি আপু।
হুম্ম,সেটাই ।
চমৎকার। আরো আসুক।
"অনুবাদ প্রচেষ্টা" ট্যাগের দরকার নাই।
..................................................................
#Banshibir.
আমি অন্যের লেখার ব্যাপারে খুব পণ্ডিত, কেমন হল, কেন হল সবই বুঝি, কিন্তু নিজে কিছু লিখলে বুঝতে পারিনা কেমন হয়েছে, অথবা আদৌ কিছু হয়েছে কিনা। এবার অনুবাদ ট্যাগই দিলাম আপনার কথায় সাহস পেয়ে।
অনেক ধন্যবাদ
শেষের গল্পটা জানা ছিলো। প্রথম দুইটাও সুন্দর। অনুবাদ ভালো হয়েছে।
ধন্যবাদ রংতুলি । আপনাকে হাচলত্তের অভিনন্দন, আগে দেয়া হয়নি।
****************************************
বড় পাথরটা ভেবে দেখবার মতন, আর জাহান্নামের ব্যাপারটা খুবই উপাদেয় হইছে।
ওইটা আমার কাছেও বড়ই উপাদেয় লেগেছে । তবে কিনা আমার মত অলসদের জন্য জাহান্নামই জান্নাত ।
অনুবাদ প্রচেষ্টা ভালো ছিল। এই চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।
অমি_বন্যা
চেষ্টা অব্যাহত রাখব। ধন্যবাদ।
অনুবাদ মুচমুচে হয়েছে, কোয়েলহো এত বেশী উপদেশ ঠেসে দেন যে তার লেখা পড়তে আর মজা লাগে না,কিন্তু আপনার অনুবাদ চলুক।
facebook
ধইন্না, ধইন্না। কথাটা সত্যি। অধিকাংশ লেখাগুলোই বাচ্চাদের উপদেশের বইয়ের মতন। তবে মাঝে দুএকটা গল্প খুব মনে ধরে গেছে আমার।
সব গল্পই কি আসলে উপদেশ না ? কেউ সরাসরি দেয়, কেউ দেয়া একটু ঘুরিয়ে। সব মিষ্টিতেই বিঁচি থাকে, কোনটা শক্ত, কোনটা মিষ্টিটার মতোই নরম বলে আমরা টের পাই না ! হা হা হা !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বাহ !
গল্পগুলো ভীষণ সুন্দর। ছোট থেকেই যে প্রশ্নটা আমার পিছু ছাড়েনি, তা হল, জান্নাতের 'যা চাই, তাই পাই' টাইপের সুখ কখনো একঘেয়ে মনে হবে কিনা, কখনো জান্নাতের নিরুপদ্রব ও নিশ্চেষ্ট জীবন জাহান্নামের গ্লানিকে ছাড়িয়ে যাবে কিনা! আপনার অনুদিত দ্বিতীয় গল্পটিতে সেই চিন্তার প্রতিফলন দেখতে পেয়ে ভাল লাগছে।
আর শেষের গল্পটি সত্যি সাংঘাতিক। জীবনের বৃহৎ সত্য এত ক্ষুদ্র অবয়বে এত সুন্দর ও সার্থক-ভাবে ফুটে উঠেছে যে, সত্যি বিস্মিত।
আপনার অনুবাদ চলুক নিরবচ্ছিন্ন।
অনেক ধইন্না ।
অনুবাদ অনেক সাবলীল হয়েছে।
সবচেয়ে বড় পাথর - এই শিক্ষা নেয়া আমার কোনোদিনও হয়ে উঠবে না।
জাহান্নামেরটা পড়ে অনেকক্ষণ হাসলাম।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
দেখি চেস্টা করে পারি কিনা সেভাবে । অনেক ধন্নবাদ ।
সবচেয়ে বড় পাথর
অনুবাদ মাথায় না রেখে লিখলে কেমন হয়? বললাম এ কারণে যে আপনার মন্তব্যগুলো (যার একটাও অনুবাদ না ) দারুণ হয় - ওরকম করে ধরেন বন্ধুদের সাথে গল্প করছেন তেমন ভাবে আমাদের জন্য গল্পটা বললে?!
লেখালেখি চলুক!
দেখি চেস্টা করে সেভাবে পারি কিনা । অনেক
অনুবাদ ভালো হয়েছে।
পাথরের গল্পটা সবচেয়ে ভালো লাগলো।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
চেস্টা করব দেরি না করতে । ধন্নবাদ
অনেক ভালো লাগলো। আরো চাই । দয়া করে বেশিদিন অপেক্ষায় রাখবেন না
অনুবাদ ভালো লেগেছে জলছবি।আরো আসুক অনুবাদ।
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
প্রথমটা: দারুণ, দারুণ
দ্বিতীয়টা: আপনার অনুবাদ ভালো, কিন্তু গল্পটা পুরাই ভুয়া
তৃতীয়ঃটা: উপদেশের সাথে একমত কিন্তু গল্পটা মোটামুটি
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
অনেক ধন্নবাদ। আমার কাছেও প্রথম টাই বেশি ভাল লেগেছিল ।
এস এম মাহবুব মুর্শেদের ভাবানুবাদকৃত এই গল্পটা আর আপনার 'ইচ্ছাপূরণের উপায়' সম্ভবত একই গল্প - মানে একই উৎস।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমারও তাই মনে হল ।
প্রথম গল্পটি সবচেয়ে মজার। নরক যদি দ্বিতীয়টির মতো হয় খ্রাপ না। আর তৃতীয় গল্পের বড় পাথর খুঁজতে খুঁজতেই তো মেয়াদ শেষ। অনুবাদ চমৎকার!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অনেক
প্রথম গল্পটা দারুণ। প্রচেষ্টার দরকার নেই, অনুবাদই চলুক।
ফারাসাত
ধন্যবাদ ।
চমত্কার!
ধন্যবাদ !
নতুন মন্তব্য করুন