বিবেক
যুদ্ধ শুরু হতেই লুইজি নামে এক ব্যক্তি এসে তাতে যোগ দিতে চাইল।
সকলেই তখন তার অনেক প্রশংসা করল । অস্ত্র বিতরণের জায়গায় গিয়ে সে একটা অস্ত্র চেয়ে নিয়ে ঘোষণা দিল “ আমি এখন অ্যালবার্তো নামে এক লোক গিয়ে কে খুন করব”
সবাই জানতে চাইল অ্যালবার্তো টা কে?
সে উত্তরে বলল “ আমার শত্রু”
তারা তখন তাকে বুঝিয়ে বলল যে,সে শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট ধরনের শত্রুকেই হত্যা করতে পারবে , ইচ্ছেমত যাকে তাকে না।
“তাহলে” , সে বলল , “ তোমাদের কি ধারণা আমি বেকুব? এই অ্যালবার্তো তোমাদের সেই নির্দিষ্ট ধরণেরই, তাদেরই একজন। যখন জানলাম তোমরা এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাচ্ছ, আমি ভাবলাম আমিও যাব , গেলে অ্যালবার্তো কে খুন করতে পারব। আমি এজন্যেই এসেছি। আমি ওকে ভাল করেই চিনি , ব্যাটা একটা জোচ্চোর। ও আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, কোনরকম কারণ ছাড়াই সে একটা মহিলার সামনে আমাকে বোকা বানিয়েছিল । বেশ পুরনো একটা ঘটনা । বিশ্বাস না হলে আমি পুরো ঘটনাটা তোমাদের খুলে বলতে পারি।
তারা বলল, না না , ঠিকাছে।
লুইজি বলল,"ঠিকাছে তাহলে অ্যালবার্তো কোথায় আছে বল, আমি সেখানে যেয়ে যুদ্ধ শুরু করব।"
তারা বলল, তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না।
"ব্যাপার না," লুইজি বলল, "আমি ঠিকই এমন কাউকে খুঁজে বের করব যে বলতে পারবে। আজ হোক অথবা কাল ওকে আমি নাগালের মধ্যে পাবই। "
তারা বলল , সে এরকম কিছু করতে পারবে না,কারণ যেখানে পাঠানো হবে সেখানে গিয়েই তাকে যুদ্ধ করতে হবে এবং ওখানে যে শত্রুরা থাকবে তাদেরকেই শুধু মারতে হবে। তাদের আলবার্তো সম্পর্কে কিছু জানার দরকার নেই।
“দেখ”, লুইজি জোরাজুরি শুরু করল, “আমাকে আসলেই ঘটনাটা তোমাদের খুলে বলতে হবে । তাহলেই বুঝবে লোকটা একটা সত্যিকারের জোচ্চোর এবং ওর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা তোমাদের জন্য সঠিক কাজই হবে।"
কিন্তু অন্যরা কেউ জানতে আগ্রহী হল না।
লুইজি কিন্তু বুঝতে পারছিল না কেন ,সে আবার বলল “দুঃখিত, তোমাদের হয়ত কিছু যাবে আসবে না আমি শত্রুদের ভিতরে যাকেই মারি না কেন ,কিন্তু অ্যালবার্তোর সাথে সম্পর্ক নেই এমন কাউকে মারলে আমি নিজে মানসিকভাবে সুস্থির থাকব না ।"
এবার তারা সকলেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলল। তাদের মধ্যে একজন তাকে ভাল করে বুঝিয়ে বলল যুদ্ধ ব্যাপারটা আসলে কি, কেমন,এবং কেন তুমি চাইলেই যে কোন একজন শত্রুকে গিয়ে ইচ্ছেমত হত্যা করতে পার না।
লুইজি তখন কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, "ঠিকাছে, যদি ব্যাপারটা এরকমই হয় তাহলে তোমরা আমাকে বাদ দিতে পার।"
তারা সমস্বরে চিৎকার করে উঠল। “না, তুমি আছ, এবং তুমি থাকবে”
এরপর তারা চিৎকার শুরু করল “জলদি চল , এক দুই, এক দুই...”
এবং অবশেষে লুইজিকে তারা যুদ্ধে পাঠিয়ে দিল ।
লুইজি খুশি ছিল না। যদিও সে কোনরকম ইতস্তত ছাড়াই একের পর এক মানুষ হত্যা করছিল শুধু এটা দেখার জন্য যে সে আলবার্তো বা তার পরিবারের কাউকে খুঁজে পায় কিনা। প্রতিটা শত্রুকে মারার জন্য তারা তাকে একটা করে পদক দিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু তবুও সে সুখী হতে পারছিল না। তার এটা ভেবে খারাপ লাগত যে “ যদি শেষপর্যন্ত অ্যালবার্তো কেই মারতে না পারি তাহলে অকারণেই এক গাদা মানুষকে হত্যা করা হবে”।
ইতিমধ্যে সে বেশ অনেকগুলো পদক পেয়েছে , সোনার, রুপার, সবকিছুর।
লুইজি মনে মনে ধরে নিলো , আজকে একজন কালকে একজন এরকম করে মারতে থাকলে ওদের সংখ্যা কমতে থাকবে , এবং ওই জোচ্চোরটার পালা এক সময় না এক সময় আসবেই।
কিন্তু লুইজির অ্যালবার্তোকে খুঁজে পাওয়ার আগেই শত্রুপক্ষ আত্মসমর্পণ করে বসল। এত এত মানুষকে কোন কারণ ছাড়াই সে মেরে ফেলেছে ভাবতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল । এবং যেহেতু দুপক্ষের মধ্যে তখন শান্তিপূর্ণ অবস্থা তাই সে তার সব পদকগুলো একটা ব্যাগে ভরে প্রতিপক্ষের দেশে ঘুরে বেড়ানো শুরু করল এবং নিহতদের স্ত্রী এবং পুত্রকন্যাদের মধ্যে সেগুলোএক এক করে বিতরণ করে দিতে লাগল ।
এবং এভাবে ঘুরতে ঘুরতেই সে একদিন অ্যালবার্তোকে পেয়ে গেল।
সে ভাবল , “চমৎকার, দেরী হোক তবু একেবারে যায়নি সময় ” এবং সে তাকে খুন করল।
এবার এসে তারা তাকে গ্রেপ্তার করল, হত্যাকারী হিসেবে বিচার করল এবং ফাঁসিতে ঝুলাল। বিচারের সময় সে বার বার সবাইকে বলে বুঝাতে চাইল যে, সে এটা করেছে শুধুমাত্র নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকার জন্য কিন্তু এবারও কেউ তার কথা শুনল না।
মূল গল্প - ইটালো ক্যালভিনো ।
মন্তব্য
দশে করলে লীলাখেলা, একা করলে পাপ
আপনার এই অনুবাদ একটু আড়ষ্ট লেগেছে। তাড়াহুড়োর ফল, বোঝা যায়
সেটাই।
আপনার সৎ মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। তাড়াহুড়ো করিনি, আসলে আমার আগের অনুবাদ গুলোও আমি এক বসাতে এক বারেই করেছি , করে সচলে পোস্ট করেছি সাথে সাথেই। "ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বারে" এর মত করে সেগুলো ভাল হয়ে গিয়েছিল। অনুবাদের ব্যাপারে আমি যেহেতু একেবারেই নতুন( এটা আমার সারাজীবনে করা ৩ নাম্বার অনুবাদ) তাই আড়ষ্ট হল কিনা সেটা ঠিকমত ধরতে পারি না। এর পর থেকে চিন্তা করেছি অনুবাদ করে কিছুদিন ফেলে রাখব তারপর পড়ে দেখব কেমন লাগে, হয়ত তখন বুঝতে পারব।
শেষের টুইস্টটা মর্মে মোচড় দিয়ে যায়।
facebook
হুম। আমি পড়ে কিছুক্ষণ খুব চুপ করে বসে ছিলাম, থাকতে বাধ্য হয়েছি। এ ধরণের গল্প গুলো ভাবায় অনেক।
বিনয় তো ভালো জিনিস আপত্তির কিছু নেই।
তবে হয়েছে কি, শিরোনামে সেটা নাই বা আনলেন !
সাহসের অভাব বলতে পারেন, বিনয় না। এই সচলায়তনেই ষষ্ঠ পাণ্ডব দা গল্প প্রচেষ্টা নাম দিয়ে অসাধারণ সব গল্প লেখেন। আমি প্রচেষ্টার অধিক সাহস করে উঠতে পারছি না আসলে।
ভালো লেগেছে। ৩ নম্বর অনুবাদেই যদি এরকম আউটপুট আসে আমার মতে প্রচেষ্টা চলা উচিৎ।
ফারাসাত
আমার ক্ষেত্রে তো উল্টোটা হচ্ছে, প্রথমটার চেয়ে দ্বিতীয়টা একটু নিম্নমানের , তার চেয়ে তৃতীয়টা আর একটু নিম্নমানের, এরকম মান কমতে না থাকলেই হয়। আপনার উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ।
"প্রতিটি উতরাই মানে পরবর্তী চড়াইতে ওঠার যোগ্যতা অর্জন" - এভাবে ব্যাপারটা ভাবুন। প্রচেষ্টাটা জারী থাকা জরুরী। পাঠকদের প্রতিক্রিয়াগুলো বোঝার চেষ্টা করুন, তারও আগে নিজে পাঠক হয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করুন। অনুবাদ ভালো হতে বাধ্য।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
প্রচেষ্টা জারী থাকবে
প্রচেষ্টা আবারো ভালো লাগলো। চলুক
অনেক ধন্যবাদ
প্রথম পর্বের অনুবাদগুলো বেশি ভালো লেগেছে। এবারের সংলাপগুলো অতটা জমে নাই। তবে অনুবাদ খুব খাটুনির ব্যাপার আর আপনার যেহেতু আগ্রহ আছে, চেষ্টা চালিয়ে যান
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ
লো কালভিনোর ভক্ত হয়ে যাচ্ছি। অনুবাদ না পেলে হয়ত পড়াই হতো না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আমি লো ক্যালভিনর অনেক ভক্ত
করতে করতেই হয়ে যাবে। চেষ্টা চলুক।
ধন্যবাদ।
ফাহিমের মন্তব্যে সহমত। আমি নিজে অনুবাদে কখনও সুবিধে করতে পারিনি। কাজেই জ্ঞান দেবনা। শুধু বলে রাখি, নিজেকে পাঠকের জায়গায় বসিয়ে লেখাটা পড়লে কিন্তু কাজে দেয়।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
সেভাবেই পড়ে দেখব ঠিক করেছি। আসলে লেখালেখি ব্যাপারটা আমার জন্য একেবারেই নতুন বলেই হয়ত প্রতিবার একটা কিছু লিখি তারপর সেখান থেকে কিছু শিখি।
ধন্যবাদ পরাণদা
চলুক।
লো কালভিনোর বইয়ের বাংলা অনুবাদ হলে যেন আপনার হাতে ধরেই হয়
গল্পটা ভাল, অনুবাদ আড়ষ্ট লেগেছে আমারো। এই ধরেন, শুরুর দিকেই অনেকগুলো বাক্যে শেষে দাঁড়ি নেই। আপনার অনুবাদ আগে মনে হয় পড়িনি, তাই তুলনা করতে পারলুম না।
ভালো লেগেছে ...
০২
অনুবাদকর্ম খুবই খাটুনির কাজ। চলুক
ডাকঘর | ছবিঘর
উৎসাহের জন্য অনেক ধন্যবাদ
নতুন মন্তব্য করুন