অনেকদিন ধরে অনেক কিছু দেখলাম, জামাতকে লাই দিয়ে মাথায় উঠাতে উঠাতে এখন এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে ওরা এখন আর শুধু চুল টানা আর চর থাপ্পড়ে সীমাবদ্ধ থাকছে না, পুরো মাথা কেটে ফেলার আবদার করা শুরু হয়েছে। আমাদের মহামান্য প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রী মহোদয়গণ আবার বলছেন তাদের সেই দাবী তারা বিবেচনা করেও দেখবেন। হেফাজতে ইসলামের লোকজন এবং কতিপয় কপট ধার্মিক, ধর্ম প্রেম যাদের কাছে নিউ মডেলের জুতো কেনার মতই একটা ফ্যাশন( ধর্মের সত্যিকার ভাল দিকগুলো পালন করার সামান্য উৎসাহ তাদের মধ্যে দেখিনা) তারা দেখলাম বেশ আত্মতৃপ্তির আওয়াজ দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশেই বলছি এত খুশি হওয়ার কিছু নেই। এদেশ প্রধানমন্ত্রী, তার সাঙ্গপাঙ্গ অথবা বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ অথবা জামাত, জাপা, হেফাজতে ইসলাম এদের কাররই বাপের সম্পত্তি না। এদেশ আমাদের, আমার, আমার বাসার গৃহপরিচারিকা মেয়েটার, প্রতিদিন দিনমজুরের কাজ শেষে ঘরে ফেরা সেই বাবার যে তার মেয়েকে ডাক্তার বানাতে চায়, ব্র্যাক এর ঋণ নিয়ে ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর প্রচেষ্টারত সেই মায়ের যে তার স্বপ্নের জন্য জীবন বাজি রাখছে, অসম্ভব পরিশ্রমী সেই অল্পবয়স্ক মেয়েটার যে গার্মেন্টসে কাজ করে শুধু নিজের পরিবারের উন্নয়ন না পুরো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কয়েক ধাপ। এদেশ কোন নীতিতে চলবে, কোন পথে আগাবে সেই সিদ্ধান্ত নিব আমরা। ভোটের রাজনীতি করে যারা ক্ষমতায় যায় আর ক্ষমতায় যাওয়াই যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য তারা না।
হেফাজতের ইসলামের মুল উদ্দেশ্য অবশ্যই রাজাকারদের বাঁচানো, কিন্তু সুযোগ পেয়ে এখন ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের স্বপন তারা দেখা শুরু করেছে। তাদের ১৩ দফা দাবীর মধ্যে একটা হল ইসলামবিরোধী নারীনীতি বাতিল করতে হবে, ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধ করতে হবে। এরিমধ্যে প্রকাশ্যে একজন নারী সাংবাদিক পিটিয়ে (যার অপরাধ ছিল সে পুরুষের মাঝে রাস্তায় কেন বের হয়েছে) তারা তাদের দাবী আদায়ের পথে আরও একধাপ এগিয়ে আমাদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে তারা আসলেই দেশকে কয়েক হাজার বছর পিছিয়ে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু যে সমস্ত লোকের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে এই দফাগুলো বের হয়েছে তাদের মস্তিষ্কের উর্বরতা কাজে লাগিয়ে এটুকু বুঝতে হবে যে চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যে তফাত অনেকখানি, আমি যা ইচ্ছে তাই চাইতেই পারি, চাওয়ার জন্য সীমারেখা লাগে না, কিন্তু যা ইচ্ছে তাই পাওয়া কখনই যায় না। সীমারেখা অতিক্রমের চেষ্টা করলেই বাস্তবের খোঁচা খেতে হয়। বাস্তব বড়ই নির্মম।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে বাস্তবতার খোঁচা তারা কখন খাবে? এক নারী-নীতির কল্যাণেই তাদের বাস্তবের খোঁচা খেয়ে রক্তাক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তারা বলছে ইসলামবিরোধী নারী নীতি বাতিল করতে হবে। এর মানে আসলে কি ? মেয়েরা প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবে না ? গেলেও সবাইকে আপাদমস্তক বোরকায় ঢেকে বের হতে হবে? নারীর ভোটাধিকার থাকবে না? নারী নেতৃত্ব নাজায়েজ হবে? সংসদে কোন নারীরা থাকতে পারবে না? নারীর ক্ষমতায়নের সব রাস্তা রুদ্ধ হবে? প্রকাশ্যে নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধ করা মানে কি? পুরুষেরা যেখানে আছে সেখানে নারীরা কাজ করতে পারবে না? স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা থাকবে না ? কোন মিছিলে নারী থাকবে না ? কোন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ থাকবে না? ওহে গবেটের দল, তোরা কোন দেশে বাস করিস মনে আছে তো? এটা বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান না, এদেশের মেয়েরা আরও ৪২ বছর আগেই অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে, এদেশে বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল, জাহানারা ইমামরা জন্মেছেন। এখনও সময় আছে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বন্ধ কর, নয়ত পালিয়ে তোদের স্বপ্নের দেশে চলে যা, আমরা ঠেকাব না।
যে রাস্তা ধরে লং মার্চ করে এসেছিস সেই রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখ । তোরা যখন কাজ কর্ম ফেলে দেশ অবরোধ করে নিজের দেশের বারোটা বাজাচ্ছিস সেই সময়ই এদেশের ২.৩৮ মিলিয়ন (বিজিএমইএ র হিসাব মতে) মেয়ে প্রতিদিন রাস্তায় বের হচ্ছে, পুরুষের পাশাপাশি হেটে গার্মেন্টসে যাচ্ছে , পুরুষের পাশাপাশি দাড়িয়ে শ্রম দিচ্ছে, আর সেই শ্রম থেকে পাওয়া অর্থে তোর দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই মেয়েরা, অল্প পারিশ্রমিকে অসাধারণ শ্রম দেয়া এইসব এক একটা রত্ন, যাদের কাঁধে ভর করে দেশ উপরে উঠছে, যাদের শ্রমের বিনিময়ে দেশের সুনাম হচ্ছে, তাদেরকে ঘরে ফেরত পাঠানো কি এতই সহজ ?
দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী, এবং এদের মধ্যে ৬৪% নানাভাবে কৃষিকাজের সাথে যুক্ত। এই কয়েক কোটি নারীরা পুরুষের পাশাপাশি মাঠে, ঘাটে, বাড়িতে কাজ করছে বলেই আমরা খেয়ে পরে বেঁচেবর্তে আছি। এখন প্রকাশ্যে নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধ করতে চাইলে তোদের পেটে ভাত দিবে কে শুনি?
দেশে এখন এমন কোন কর্মক্ষেত্র নেই যেখানে কম বেশি নারীরা নেই। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী, প্লেন চালনা থেকে শুরু করে ইটের ভাটার দিনমজুর, এমন কোন যায়গা নেই যেখানে নারীরা ভূমিকা রাখছে না, এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে তারা অন্তর্ভুক্ত না, এমন কোন পথ নেই যেখানে তাদের বিচরণ নেই। তাই এদের ইচ্ছেমত বিচরণ বন্ধ করা এখন শুধু কঠিন না, অসম্ভব। এর চেয়ে বরং কতিপয় সাদা পাঞ্জাবী পরা ইসলামের বেশধারী অমানুষদের এদেশে বিচরণ বন্ধ করাটা সহজ।
যে মা তোদের জন্ম দিয়েছে, নিজের শরীর থেকে পুষ্টি দিয়েছে তোদের, নিজেরা না খেয়ে থেকে তোদের মুখে খাবার দিয়েছে, নিজের সমস্ত কষ্টের বিনিময়ে সারাজীবন তোদের মঙ্গল করে গেছে তাদেরকে তোরা অপমান করতে চাইতে পারিস কিন্তু সেই মায়েদের অপমান আমরা সইব না। সাড়া পৃথিবী যদি তোদের পক্ষে সাফাই গায়, পৃথিবীর সব অর্থ যদি তোদের এই নিরর্থক চাওয়ার পিছনে ব্যায় হয়, যত সম্পদ তোরা ধংস করিস না কেন , যত মানুষ মারিস না কেন,যত রক্তই ঝরাস তবুও কোন লাভ নেই। তোদের মত কুলাঙ্গার জন্ম দেয়া সেই চিরদুখি মায়েদের কসম এদেশ আমাদের, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা কোন নপুংসকের না। এদেশে কোনদিন কোন ধর্মান্ধ নীতি কার্যকর করা যাবে না। এদেশের জন্ম হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষতা বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে, আজ হোক বা কাল এদেশে একদিন সেটারই পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে। তোরা দেখে নিস।
মন্তব্য
সুন্দর গোছানো লেখা। ভাল লাগল।
গোছানো লেখা কিনা জানিনা, লেখাটি খুব রাগ নিয়ে লিখেছিলাম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
এদের মধ্যযুগীয় মানসিকতার বাস্তবরূপ যে অসম্ভব তা মনে হয় এরা ভালই জানে। অন্তত নেত্রীদ্বয়কে ঘরে পাঠাতে গেলে নিজেদের অবস্থান কই থাকবে তা নিশ্চই একবার কল্পনা করা দরকার পড়বে।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
সেটাই, এরা কি সপ্ন দেখছে এরাই জানে। তবে সপ্নের বাস্তবায়ন করতে গেলে খবর আছে সেটাই এক্তু লিখলাম।
সাবাশ।।।।।।।।
হুম। ধন্যবাদ ।
মনের কথা বলেছেন। ধন্যবাদ।
আপনার আমার আমাদের মনের কথা তো একই হবে
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
দারুন বলেছ।
একদম মনের কথা।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
It would be good if all the Madrasha students were trained to work in the garments or any productive jobs. That could boost our economy a whole lot better than just the normal people working in the main production system. Because, those religious studies add nothing to our economy but consume all the resources (only for religion and violence and unproductive life). How about turning all the Madrashas to garment factories? Sounds weird? Think again about what Bangladesh could gain from that
নতুন মন্তব্য করুন