বই পড়ুয়া শুনলেই সবাই ভাবে খুব বোদ্ধা কেউ, মানে অনেক ভাল ভাল বই পড়বে, অনেক জ্ঞানী গুনি হবে, চট করে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিবে। তাই নিজেকে বই পড়ুয়া দাবি করতে একটু ভয়ই লাগে, কে আবার কি প্রশ্ন করে বসে আর আমি হা করে তাকিয়ে থেকে নিজের সম্মান খোয়াই। আর ফেসবুকের বই পড়ুয়া গ্রুপের কল্যাণে এখন কেন যেন নিজেকে বই পড়ুয়া দাবি করার সাহসই হয় না ( মানুষ এত বইও পড়তে নাকি পারে! এরা সব অমানুষ) কিন্তু একটা জিনিস আমি সহজেই দাবি করতে পারি আমি বই পাগল, সর্ব অর্থেই। বই পড়তে আমি ভালবাসি আর আমার পড়ার মধ্যে কোন বাছ বিচার নাই, আমি যা পাই পড়ি। ভাল লাগলে শেষ করি, ভাল না লাগলে রেখে দেই।
একদম পিচ্চিকালের কথা তো মনে নেই, তবে গল্প শুনেছি সবার কাছে। আমি পড়তে আগ্রহী ছিলাম সব সময়ই। আর বানান করে পড়তে শেখার পর থেকেই যেখানে যা পাই পড়ে ফেলি। সেই কালে আমি স্কুলের বই পেলেই সব পড়ে শেষ করে ফেলতাম। রূপকথার আর ছড়ার বই এর তো কথাই নেই। পড়তাম আর ছোট ভাইকে গল্প শোনাতাম। সবচেয়ে ভয়াবহ হল বাসায় চাচাদের বিসিএস এর জন্য কিছু সাধারণ জ্ঞানের বই ছিল, আমার জ্ঞানপিপাসার অবস্থা তখন এতই চরম যে আমি সেসব পড়েও সব মুখস্থ করে ফেলেছিলাম। আমার সেই আতলামির দিনগুলিতে বাসায় কেউ এলে তব্দা খেয়ে যেত “এইটুকু পুচকে এত জ্ঞানী”? আমার বাবা মা প্রায়ই শুনত “আপনার মেয়েটা বড় হয়ে খুব ব্রিলিয়েন্ট কিছু হবে” শুনতে শুনতে একসময় তারা নিজেরাও সেটাই ভাবা শুরু করল। সেই কারণে বড় হয়ে কোন রেজাল্ট দিয়ে আর আমার পিতামহ মাতামহ কে কখনও খুশি করতে পারিনি (নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা যাকে বলে) বিশেষ করে মেডিকেলে পড়া অবস্থায় রেজাল্ট কি প্রশ্ন শুনে যখন দাঁত বের করে বলতাম "পাস করেছি”, আমার বাবা হতাশ হয়ে বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ত। তার ব্রিলিয়েন্ট, জ্ঞানী মেয়েটার কি করুন পরিণতি!
রূপকথার বই গুলির বেশিরভাগেরই বেশিরভাগ অংশ মনে নেই,কোনটার নাম মনে আছে তো ঘটনা মনে নেই, আবার ঘটনা কিছুটা মনে আছে তো নাম ভুলে গেছি, কোনটার কিছুই মনে নেই। তবে এতটুকু মনে আছে প্রায় অনেক গল্পেই একটা সাহসী রাজপুত্র আর একটা বুদ্ধিমতী রাজকন্যা থাকত। রাজকন্যা অনেক বুদ্ধি খাঁটিয়ে কঠিন একটা কাজের ফরমায়েশ করত আর তাকে পাওয়ার জন্য রাজপুত্র সেই ভয়ঙ্কর কঠিন কাজ খুব সাহসের সাথে অল্প সময়ে করে ফেলত! তখনকার দিনগুলি ছিল সিন্ডারেলার, ঘুমন্ত রাজকন্যার, ছিল রুশ-দেশের রূপকথার, ইউক্রেনীয় লোককথার, ইশপের আর ঠাকুর মার ঝুলির, গোপাল ভাঁড়ের।
ঠিক কিভাবে কোথা থেকে কার্টুন এর বই পড়া শুরু হয়েছে আমার মনে হই, তবে ছোটবেলার কথা মনে হলেই মনে পড়ে কার্টুন গুলোর কথা। টিনটিন তো আমি এখনও পড়ি, সুপার হিরো গুলোর মধ্যে ব্যাটম্যান আমার এখনও বেশী প্রিয়, এখনও কোন স্যার টা দেখতে চাচা চৌধুরীর মত সেটা খেয়াল করি, নন্টে ফন্টের কীর্তিকলাপ মনে করে এখনও হাসাহাসি করি। অস্থিরতার দিনগুলিতে এখনও এরাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখে।
তিন গোয়েন্দা প্রথম পড়ি ক্লাস থ্রি তে থাকতে এক বন্ধুর কাছ থেকে নিয়ে, এরপর কিশোর, রবিন, মুসা, জিনা, রাফি, শুঁটকি টেরি, ঝামেলা ফগরাম্পারটক আর খোঁড়া গোয়েন্দা আমার বন্ধু ছিল অনেক অনেক বছর। রকিব হাসান যতদিন লিখেছে ততদিন পড়েছি, এখনও মাঝে মাঝে পুরনো গুলো বের করে পড়ি। সেই সময়ের আর প্রিয় হল সুকুমার রায়ের বিড়াল আর পাগলা দাশুর গল্প , সুনিলের কাকাবাবু আর সন্তুর অ্যাডভেঞ্চার গুলো, সত্যজিৎ রায়ের প্রদোষচন্দ্র মিত্র নামক গোয়েন্দার নানাবিধ কীর্তিকলাপ। বাসায় মাসুদ রানার বেশ কিছু বই ছিল। আমাকে ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় হটাতই একদিন আম্মু বলল, এগুলো কিন্তু পড়ো না, আর একটু বড় হয়ে পড়তে হয় এসব। ব্যাস আর যায় কই, টানা অনেকদিন বসে বসে খালি মাসুদ রানাই পড়েছি। পাগলকে কখনও বলতে হয় না সাঁকো না নাড়াতে। যদিও মাসুদ রানা আমার কখনই খুব বেশী ফেভারিট ছিল না পরবর্তীতে।
সেবা প্রকাশনীর বই এর কথা তো বলে শেষ করা যাবে না, একবারে সব মনেও পড়বে না। কিছু বই বাসায় আগে থেকেই ছিল, বাবা মা কিছু কিনে দিত। বাস্কারভিলের হাউন্ড, থ্রি কমরেডস, হ্যান্স ব্যাক অফ নটরডেম, ব্রাম স্ট্রকারের ড্রাকুলা, জুল ভার্ন এর রহস্যের দ্বীপ, এমিলের গোয়েন্দা দল, আরও নাম ভুলে যাওয়া কত কত বই। টম সয়ার আর হাকেলবেরির সাথে মিসিসিপি নদীতে অ্যাডভেঞ্চারে বের হতাম, আবার কখনও ক্যানসাসের প্রেইরির বনে ঘুরতাম ছোট্ট লরার সাথে। স্কুলে পড়া অবস্থায় একবার বাসা থেকে অ্যাডভেঞ্চারে বের হয়ে অনেক ঘুরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত সেবা প্রকাশনী খুঁজে পেয়েছিলাম দুই ভাই বোন। এরপর আব্বু আম্মু টাকা দিলেই ওখানে গিয়ে একগাদা বই কিনে আনতাম। একটা বইয়ের টাকা দিয়ে দুইটা/তিনটা বই হত। আমাকে কেউ বাসার মেইল অ্যাড্রেস জিজ্ঞেস করলে আমি আমার ভাইকে ফোন দেই, সে বিন্দুমাত্র অবাক হয় না। কেউ ফোন নাম্বার জিগ্যেস করলে মোবাইল দেখে তারপর বলি। এটিএম বুথে কার্ড ঢুকিয়ে দাড়িয়ে থাকি পাসওয়ার্ড টা যেন কি! অথচ ২৪/৪, সেগুনবাগিচা এই ঠিকানাটা মাথায় আসতে আমার এক মুহূর্তও লাগে না। অ্যালঝেইমার হওয়ার আগ পর্যন্ত ভুলবো না।
মোহাম্মাদ জাফর ইকবালের আমার পড়া প্রথম বই হাত কাটা রবিন, ক্লাস ফোরে পড়ি তখন, খালার বাসায় গিয়ে বইটা হাতে পেলাম, কারও সাথে কথা না বলে, খাওয়ার সময়ও বই হাতে নিয়ে টেবিলে বসে, অসভ্যতার চূড়ান্ত করে এক নিঃশ্বাসে শেষ করেছিলাম বইটা। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত তার বই পড়েই যাচ্ছি। হুমায়ুন আহমেদের পড়া আমার প্রথম বই নীল হাতি আর শেষ বই দেয়াল। শেষ বইটা পড়ার আগে অনেক বছর তার বই পড়িনি। শেষের দিকের বইগুলোতে সূর্যের দিন, ফিহা সমীকরণ, শঙ্খনীল কারাগার, সম্রাট আর মিসির আলির স্রষ্টাকে কেন যেন আর খুঁজে পেতাম না। জোছনা ও জননীর গল্প পড়ে আমার এত খারাপ লেগেছিল রাগ করে তার বইই পড়তাম না আর। আশাটা একটু বেশীই করেছিলাম হয়তো। কিন্তু সত্যি কথা হল আমার কিশোর সময়ের মুগ্ধতার অনেক বড় একটা অংশ জুড়ে তিনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন।
হাই স্কুলে উঠে আস্তে আস্তে ঢুকে গেলাম সমরেশ, সুনীল, শীর্ষেন্দু, সঞ্জীব, বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, বুদ্ধদেব, এদের বইয়ে। কলেজে উঠে আস্তে আস্তে পড়া শুরু করলাম মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আর সৈয়দ মুজতবা আলির বই। হুমায়ুন আজাদের আমি প্রথম পড়েছি ‘সব কিছু ভেঙে পড়ে।’ ক্লাস টেন এ পড়তাম তখন, হয়ত সময়ের আগেই পড়ে ফেলেছিলাম, নয়ত এই বইটা পড়ে এত প্রচণ্ড অস্থির কেন লাগবে, আসলেই যে সব কিছু ভেঙে পড়ে এটা বিশ্বাস হওয়ার বয়স তখনও হয়নি নিশ্চয়ই। পরবর্তীতে তার কবিতা পড়েও অবশ্য অস্থিরতায় ভুগেছি। সত্যি কথা গুলোকে এত নগ্ন ভাবে রাখ ঢাক ছাড়া বলতেন বলেই হয়ত উনাকে সহ্য করা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব। আর একটা বই বয়সের আগে পড়ে ফেলে আমি ভুগেছি, “ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট”, কার অনুবাদ মনে নেই, বাসায় ছিল, পড়ে বুঝেছি কম, অস্থির হয়েছি বেশী।
আমার স্বভাব হল আমি কোন লেখকের একটা বই ভাল লাগলে তার যত বই যোগার করা সম্ভব হয় সব পড়ে ফেলি। আর একটা স্বভাব ছিল একবার কিছু পড়া শুরু করলে শেষ না করে উঠতে পারি না। এই অভ্যাস টা এখন বদলের চেষ্টায় আছি। এখন চেষ্টা করি প্রতিদিনই একটু একটু করে পড়তে। তাই আগের মত নাওয়া খাওয়া ভুলে বইয়ে ডুবে থাকার ব্যাপারটা খুব মিস করি। স্কুল, কলেজ, মেডিকেলে থাকতে ক্লাস ছুটির সময় আম্মু প্রায়ই বিকেলে অফিস থেকে ফিরে দেখত আমি বই পড়ছি, শেষ খাওয়া খেয়েছি সকালের নাস্তা, শেষ গোসল করেছিলাম গতকাল বিকেলে।
আমার বই প্রীতির কারণে আর পাঠ্য বই ভীতির কারণে বাসায় নানা রকম নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই আমি কাঁথা মুড়ি দিয়ে বই পড়তাম, বাথরুমে ঢুকে পড়তাম, পাঠ্য বইয়ের ভিতর রেখে, ছাদে গিয়ে, অন্ধকারে টর্চ দিয়ে, ঘরের কোণায় লুকিয়ে পড়তাম। স্কুলে বহুবার বইয়ের নিচে বই রেখে পড়তে গিয়ে ধরা খেয়েছি, এবং আমার অনেক বই টিচাররা শাস্তি দেয়ার নাম করে মেরে দিয়েছেন, আমি সেই দাবি কেয়ামতের দিনতক ছাড়ব না।
আমাদের পাড়ায় তখন প্রতি শুক্রবার সকালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির গাড়ি আসত। আবার আমাদের স্কুলেও ছোট্ট একটা লাইব্রেরী ছিল, তবে সপ্তাহে একটার বেশী বই দিত না কেউই। ক্লাস নাইনে থাকতে আমার একবার লাইব্রেরী করার খুব সখ হল। পাশের বিল্ডিং এ আর এক বাসা ছিল যাদের বাসায়ও প্রচুর বই। ওই বাসার দুই ছেলে আর আমরা দুই ভাইবোন দুই বাসার সব বই দিয়ে একটা লাইব্রেরী বানালাম। একটা বড় খাতায় সব বইয়ের তালিকা করা হল, সব ইচ্ছুক বই পড়ুয়াদের তালিকা করা হল। যে বই নিবে নাম আর নেয়ার তারিখ লিখে নিয়ে যাবে। বলাই বাহুল্য, নেয়ার সময় সবাই যে কয়টা করে নিত দেয়ার সময় দিত তার তিন ভাগের এক ভাগ। কথা ছিল সবাই বই কিনে দিবে এখানে, আমরা চারজন ছাড়া আর কেউ কেনেনি একটাও। এদেশে বই কিনে দিতে ইচ্ছুক বাবা মা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপারই বটে। আর বই পড়ুয়া বাবা মা পাওয়া তো মনে হয় রাজকপাল। এই লাইব্রেরীটা আমরা চালিয়েছিলাম আমি মেডিকেলে ঢুকা পর্যন্ত এবং সাড়ে চার বছরে লাভের লাভ একটাই হয়েছে আমি আমার অর্ধেকের বেশী প্রিয় বই হারিয়ে ফেলেছি। এখন মনে পড়লে কেন যেন মনে হয় হয়ত খুব বেশীই বোকামি করে ফেলেছি । ইদানীং তাই বইয়ের ব্যাপারে আমি ভয়াবহ স্বার্থপর আর হিংসুটে। আর আমার টাকা পয়সা কামানোর ইচ্ছের পিছনে অন্যতম বড় অনুপ্রেরণা হল বাসায় বিশাল একটা লাইব্রেরী বানানোর লোভ।
আমার কৈশোর আর তারুণ্যের পুরোটা জুড়েই ছিল বই। জীবনে যত কেঁদেছি তার তিন ভাগের দুই ভাগ বইয়ের চরিত্রদের জন্য। বাস্তব জীবনের দুঃখ কষ্ট আমাকে খুব বেশী স্পর্শ করতে পারত না সে কারণে। চারপাশের পৃথিবীকে উপেক্ষা করে আমি ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ অথবা “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতাম, খুব অস্থিরতার দিনগুলিতেও ‘চিরকুমার সভা’ পড়ে একা একাই হাসতাম। “কাগজের বউ” পড়ে কেন পৃথিবীর বোকা মানুষগুলো সব ধোঁকা খায় ভেবে কষ্ট পেতাম অথচ আমি নিজেই কত বোকা তা নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা ছিল না। 'লা মিজারেবল' অথবা 'দ্যা ওভারকোট' পড়ে বুকের ভিতর থম ধরানো অনুভূতি নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম, আমার নিজের কোন অভাব আছে কিনা সেটা নিয়ে ভাবার সময় ছিল না। সিসিলিয়ান পড়ে ঘুমোতে পারতাম না কেন তুরি গুল্লিয়ানোদেরকে সবসময় পিসিওত্তারা মেরে ফেলে। 'সোফি’স ওয়ার্ল্ড' অথবা 'সলিটেয়ার মিস্ট্রি' পড়ে দিনের পর দিন গালে হাত দিয়ে বসে ছিলাম, আমার ভাবনার জগতে অনেক বড় ধরণের রদবদল হয়েছে এই বই দুটা পড়ে। ‘দত্তা’ অথবা ‘বেঁচে থাক সর্দি কাশি’ পড়ে প্রেম করার ইচ্ছে টাকে মনে মনে নেড়ে চেড়ে দেখতাম। আবুল হাসানের “নিঃসঙ্গতা” পড়লেই মনে হত কবিরা সবাই আমার মনের ভিতর কি হচ্ছে কেমন করে বুঝে ফেলে? আবার ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ পড়ে স্বপ্ন দেখতাম একদিন আমিও যাব পারী নগরীতে। ছোটবেলা থেকেই আমি বুঝে গেছি জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচার সবচেয়ে সহজ উপায় হল বই।
বন্ধুরা একসময় যারা অনেকেই প্রচুর বই পড়ত এখন তাদের বেশিরভাগই পড়ে না, অজুহাত হল সময় স্বল্পতা। আমি কখনও বই পড়া ছাড়তে পারিনি কারণ বই ছাড়া পৃথিবীটা খুব বোরিং। সেই তো একটাই আমি, একরকমই দেখতে, একইরকম স্বভাব, একটাই জীবন, একই সব মানুষ, কি ভয়াবহ একঘেয়েমিতা। কিন্তু বই হাতে নিয়ে আমি ঘুরে আসতে পারি কত দূর দূরান্তে, বদলে যেতে পারি কত অদ্ভুত রকম মানুষে, বন্ধু হয় সব কত রঙ বেরঙের চরিত্রেরা, হাসতে ইচ্ছে হলেই হাত বাড়িয়ে একটা বই হাতে নিলেই হয়, বুকের ভিতর কান্না জমলে কোন একটা দুঃখের বই পড়ে কি অনায়াসে সেটাকে চোখ দিয়ে বের করে আনা যায়, একটা জীবন নিয়েও কত সহজে বেঁচে থাকতে পারি অনেকগুলো জীবনে। ঢাকা শহরের এক একঘেয়ে গুমোট ঘরে বসেও কত সহজে কোন এক কালের এক রাশিয়ান বিপ্লবীর জীবনে ঢুকে পড়া যায় কোন টাইম মেশিন ছাড়াই যারা বই পড়ে না তারা সেই স্বাদ কোনদিনও পাবে না। বই তাই আমার কাছে সবসময়ই সবচেয়ে বিশ্বস্ত, রোমাঞ্চকর, প্রাণবন্ত বন্ধু।
মন্তব্য
বইয়ের থেকে দারুণ জিনিস কি হতে পারে পৃথিবীতে! ক্লাস সিক্স থেকে টেনের মধ্যে টিফিনের টাকা বাচিয়ে সেবার অনুবাদ আর তিনগোয়েন্দা কিনতাম, সেটাই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ট সময়। আসলেই বই কিনে দিতে ইচ্ছুক বাবা-মা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার, আমি সেই সৌভাগ্যবানদের একজন । আপনার লাইব্রেরি বানানোর ব্যাপারটা দারুণ লাগলো, আমি শখ করে কেনা বই কাছের বন্ধুদেরও সহজে ধার দেইনা, এই একটা ব্যাপারে বিশাল কিপটা আমি। বই পড়ার মজা যে বুঝলোনা তার থেকে দূর্ভাগা কে হতে পারে?
ধন্যবাদ। আমিও এখন বইয়ের ব্যাপারে কৃপণ হয়ে গেছি। এর আর একটা বড় কারণ মানুষ বই নিয়ে ছিঁড়ে বিড়ে ফেরত দেয় রাগ লাগে খুব।
০০১।
ইশ! কি দারুন একটা লেখা
০০২।
আহারে, দুনিয়ার হজ্ঞল বইপড়ুয়া কি সচলে আইসা জমা হইছে...
০০৩।
আর আপ্নে আমার গল্পটা দাঁড়ি-কমা সহ কপি মার্লেন ক্যান?? [ ]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধন্যবাদ হে সত্যানন্দ
সচল তো একটা অভিশাপ, হইতেই পারে।
আহা, খেপেন কেন, আমিতো আপনার কষ্ট হবে ভেবে নিজ কাধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে লিখে ফেলেছি
আপনি তো মানুষ না, এত বই কি করে পড়েন? আমি আপনার পড়ার লিষ্ট দেখে বিস্মিত
হুমায়ুন আজাদ এর শুরু ও আমার আপনার মতো একি বই দিয়ে। তবে কবিতায় আমি বেশি আছন্ন ছিলাম, জীবনান্দ, হুমায়ুন আজাদ, শামসুর রহমান এর কবিতায় কেটেছে কলেজ জীবন। কলেজ জীবনেই আমি বাসায় একটা ছোটখাট লাইব্রেরি করে ফেলেছিলাম। পড়ালেখার বারটা বাজিয়ে আমি ক্রিকেট খেলে সেই বয়সে যা আয় করতাম তার পুরাটাই ব্যায় হয়েছিলো বই সংগ্রহের কাজে। কিন্তু পাড়ার বন্ধু আর বড় ভাই আর আত্নীয় স্বজনরা আমার বই পড়তে নিয়ে গিয়ে আর ফেরত না দেওয়ায় সেই সংখ্যাটা কমে গেল। তারপর পড়ার উদ্দেশ্যে চট্রগ্রাম যাওয়ার পর বাসায় কেউ যত্ন নেয়নি বইয়ের, যে এসেছে পড়বে বলে নিয়ে গেছে বই, কিন্তু ফেরত দেয়নি। এখনও সেই লাইব্রেরিতে শতিনেক বই আছে স্মৃতি হিসাবে। দেশ ছাড়বো বলে এখন আর লাইব্রেরি প্রসারিত করছি না। আপনার লেখা পড়ে মনে হলো কিছুই তো পড়লাম না জীবনে, আরো অনেক পড়তে হবে।
মাসুদ সজীব
আমারও এরকম অন্যদের দেখে মনে হয় এত বই পড়ে কি করে? তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হল আমি বই পড়া আর মুভি দেখা ছাড়া জীবনে আর কিছু করিনি। বেগুন হওয়ার সুবিধা।
কবিতা পড়ি, কিন্তু আমার গদ্য তেই আগ্রহ বেশী। আমি গল্প খুব পছন্দ করি সেটা বানিয়ে লেখা উপন্যাস হোক আর সত্যিকারের ইতিহাস।
ভালো লাগল। আমি তিন গোয়েন্দা খুঁজে পাই এক বাসায় বেড়াতে গিয়ে। ওই ভদ্রলোকের দুই ছেলে আর আমরাও দুই ভাই। ওদের রুমে খেলতে নিয়ে গেছে। বড় ভাইটা আমি বই পড়ি শুনে তিন গোয়েন্দা ধরিয়ে দিলো। ব্যাস আর যায় কই। এক সপ্তাহে চারটা না পাঁচটা বই শেষ করে ফেললাম ধার নিয়ে।
তিন গোয়েন্দা আসলেই ওই বয়সের বাচ্চাদের জন্য নেশা ধরানো বই। ধন্যবাদ।
আমার ছেলেবলার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম আপনার লেখায়। সময় স্বল্পতায় আসলেই বই পড়া হয়ে ওঠে না এখন আর। প্রবাস জীবন আসলেই দৌড়ের উপর।
ধন্যবাদ। একটু গুছিয়ে উঠলে সময় বের করে পড়েন। জীবনের দৌড়ের কথা আর কি বলব। ভাল থাকুন।
বই নিয়ে যেকোন লেখা আমার অসম্ভব ভালো লাগে। এটাও চেটেপুটে পড়লাম
তাই সমবয়সী অনেকের চে, আমার বাসায় অনেক বেশি বই ছিল, এটার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে একটা স্কুল ব্যাগ লাইব্রেরি বানিয়ে ফেলেছিলাম। সমস্ত বই এর নাম ধাম আর পৃষ্ঠা সংখ্যা মিলিয়ে একটা ক্যাটালগ করেছিলাম। স্কুলের বন্ধুরা সেই তালিকা দেখে বই এর অর্ডার দিত, আমি পরদিন সেগুলা ব্যাগে করে নিয়ে যেতাম। বই এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ১ পয়সা / প্রতিদিন হিসাবে চার্জ করতাম। বেশিরভাগ বই ই ১-২ টাকা রেটে ভাড়া দিতাম। সপ্তা শেষে একবারে সেই টাকা সংগ্রহ করতাম, তাতে আমার আরও ২-১ টা সেবার বই হয়ে যেত। এই ব্যবসা অনশ্য ২-৩ মাসের বেশি চলেনি।
আমার খেতে ভাল্লাগে না, তাই খাওয়ার সময় নিজেকে ডিস্ট্র্যাক্ট করতে আমি অধিকাংশ বই পড়েছি ভাত খেতে খেতে। এইজন্য মাঝে মাঝে আমার বই এ একটু ঝোলের দাগ, কি চেপ্টা ভাত লেগে থাকে। বিয়ে শাদী করার পর একটু সমস্যা হয়েছে, সঙ্গীর পছন্দ একসাথে খাওয়া, তাই এই সময়টা বাদ পড়াতে বই পড়ার পরিমানই কমে গেছে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
০০১।
আন্নে তো পুরাই মারোয়াড়ী ক্যাটালগ আমারও ছিল... কিন্তু এই ব্যাবসাবুদ্ধি জিন্দেগিতেও আসে নাই... কত্তগুলা বই কেনার ট্যাকাটুকা লছ গেল রে
০০২।
এইবার বুচ্ছি, আন্নেরে দেইখাই আলীসায়েব কইছিলেনঃ "বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়নি"
০০৩।
হে হে হে... সঙ্গী একটি অভিশাপ ভাগ্যিস সঙ্গী-টঙ্গী নাই... (কর্মস্থলে না থাকলে) আমি এখনও খেতে খেতে পড়ি/পড়তে পড়তে খাই বই ছাড়া আবার খায় কেম্নে মানুষ?? গলায় ঠেকে না!!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধন্যবাদ শিশিরকণা। আপনার বান্ধবীগুলো অনেক লাকি। কেন তখন আপনার সাথে আমার দেখা হল না । আপনার বই এর ভাণ্ডারের স্বাদ পেতাম। সাথে আপনার মাথার বুদ্ধিও কিছু ধার করতাম। আপনার কাছ থেকে শুনে মনে হল কি সহজ সুন্দর একটা বুদ্ধি। আমার মাথায় কেন আসল না?
খেতে খেতে পড়ার আরামটা করেছি হোস্টেল এ বসে। বাসায় আমার মা এটাকে চূড়ান্ত অভদ্রতা মনে করে। আর এখন নিজের বাসা হলেও আপনার মত সঙ্গীর কথা ভেবে বইকে আর খাওয়ার টেবিলে সঙ্গ দিতে পারি না।
হেহেহে... আমার এত সমস্যা নাই... (আমরা ভাইবোন তো বসিই... আম্মাও প্রায়ই বই নিয়ে খেতে বসে যায়) কে জানি সেদিন বলল "বইপড়া একটা জেনেটিক অসুখ"... ভাগ্যিস আমার গুষ্ঠিসুদ্ধা এই অসুখে তীব্র ভাবে আক্রান্ত
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আমার ভাবনা মতে আপ্নি হলেন রাজকপালে।
আমারও তাই মনে হয়
আরও বহুত কাহিনী আছে আপু... ছোটকালে স্কুল থেকে আইসা তিন গোয়েন্দার বইগুলার সিরিয়াল উল্টাপাল্টা পাইলে বুঝতাম আমার অনুপস্থিতিতে আব্বা ওইগুলা পড়ছে... আর আমার এক খালাতো বোন ছিল... ড্রাকুলা পড়ার জন্য পুরা বাড়ির কাট-আউট অফ কইরা হারিকেন জ্বালায়া, জানলায় রসুন বাটা মাইখা, আরো কি কি জানি কইরা তারপর পড়তে বসছিল
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আঙ্কেল তো ফাটাফাটি। আপনার বোনকে সিরিয়াসলি দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু এভাবে বললে হবে না। আপনি পুরো গল্প গুলো বিস্তারিত লিখুন প্লিজ। এরকম একটা বই পাগল পরিবারের কথা জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। তাতে অন্যরাও উৎসাহিত হতে পারে। আপনাকে আমি নিয়মিত হারে খোঁচাব নয়ত এই লেখাটার জন্য বলে দিলাম।
খাইছে, এরে নিয়া লিখলে কাহিনী শেষ হবে না...
নাহ, নাম কইলে আবার চিনে ফালাইতে পারেন... ভদ্রমহিলা এখন বিয়াশাদী কইরা "ভাবগম্ভীর" জীবন যাপন করছেন... (আর দেখতে চাইলে মোগলী'র ছবি দেখতে পারেন... ছোটবেলার চেহারার সাথে মিল আছে)
লিখুম্নে... একদিন না একদিন...
আপাতত কোয়ান্টামের রাজ্যের সানডে-মানডে কোলোজ কইরা লই
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এ ধরনের ভদ্রমহিলা রা সকলেই বড় হয়ে ভাবগম্ভীর জীবন যাপন করে থাকেন। নিজেকে দিয়ে বুঝলাম আর কি। বসলাম কিন্তু নিয়ে
বই নিয়ে আপনার জীবনের গল্পটা জানতে আগ্রহবোধ করছি ভীষন। লিখে ফেলুন না কষ্ট করে।
মাসুদ সজীব
কত রবি জ্বলে রে
কেবা আঁখি মেলে রে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ঐ মিয়া, এভাবে মন্তব্যে বললে হবে? পোস্ট দেন! না দেয়া পর্যন্ত কিন্তু জ্বালাতন চালিয়ে যাব বললাম!
____________________________
দিমুনি, ... চা-চু খায়া আহি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আমি মূর্খ এবং মিতভোজী মানুষ, চোখের সামনে বই মেলে না ধরা ছাড়া খেতে পারি না।
আর যেহেতু কারো বাসায় গেলে এ বদভ্যাসের কারণে কথা শুনতে হয়, ঠ্যাকায় না পড়লে কারো বাসায় যাই না, খাই না। খিক খিক।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
না, আমি অবশ্য বুকশেলফ পেলেই ঢু মারি... তাই বেছে বেছে বুকশেলফওয়ালা বাড়িতে যাই... খেতে দেয় তো দিক... ওটা উপরি পাওনা
তবে ঐ জাতের বাড়ি বড্ড ভয় পাই যেখানে বুকশেলফের বদলে পেল্লায় টিভিই ড্রইং রুমের প্রধান আসবাব
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বুদ্ধিমত্তার ধার নেই, পড়ার গণ্ডি সীমিত। তবে পৃথিবীতে আর কোন কাজ এতো ভালবাসিনে। শুধু ঐ বই আছে বলে আম্মো এখনো আছি।
বইপড়ার কাহিনি নিয়ে গল্প ফাঁদা যাবে বিস্তর। তবে নানা সুত্রে পরিচিত বহু বিখ্যাত মননশীল পড়ুয়ার বাস্তবজীবনের মানসিক দৈন্যতার পরিচয় জেনে ব্যথিত এবং বিস্মিত হয়েছি।
ঐ যে, কাব্য পড়ে যেমন ভাবো, কবি তেমন নয় গো... সেরকম আর কী।
বইপড়ুয়া গ্রুপ একটি অভিশাপ। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে গুডরিডস।
পুরাই বেদনাময় জীবন। আর চট্টগ্রামের বিখ্যাত গ্রন্থবিপণি বাতিঘর..
ঐদিকে আর না যাই। ভেউ ভেউ..
লেখায় ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বুদ্ধিমত্তা নিয়ে মাথাও ঘামাই না, মাথা ঘামানোর জন্যও কিছু থাকা দরকার মনে হয়, আমি বই পড়ি কারণ ভালবাসি। বই পড়ে আনন্দ পাই, তাই পড়ি।
এই কথাটা বলতে চাই নি। একটা সময় পর্যন্ত আমার ধারনা ছিল বই পড়ুয়া মানেই উদার, মননশীল, সুস্থ চিন্তার অধিকারী। তাই বই পড়ুয়া পেলেই বন্ধু বানাতে চাইতাম। ইদানীং ধারনাটা ভেঙেছে। এখন আর আশা করি না বেশী।
হু, নায়েক ডাকতরের লেকচার সমগ্রও বই... সাইয়্যেদ আবুল আ'লার বইও বই...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আমার বাপেই তো আমারে তিন গোয়ন্দা আর ওয়েস্টার্ণ আর কুয়াশা কিনে দিত। কোন কারণে মাসুদ রানা তার ভাল্লাগে নাই। তাই আমারও লাগে নাই। ভাল্লাগে নাই মানে পয়সা খরচ করে পড়ার মত ভালো লাগে নাই। কিন্তু বন্ধুর থেকে মাসুদ রানা ধার করে আনলে আব্বার পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফেরত দিতে পারতাম না।
কয়দিন আগে আব্বার ৬০ বছরের জন্মদিনেও নীলক্ষেত।কো থেকে তিন গোয়েন্দা আর ওয়েস্টার্ণ কিনে পাঠাইলাম উপহার হিসেবে। যত বুড়া হইতেছি নিজের বাপ রে তত বেশি কুল ড্যুড মনে হইতেছে
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আঙ্কেল শুধু কুল না সুপার কুল ড্যুড
আরে চমেতকার আঙ্কেলরে সালাম
অটঃ আমি কুয়াশা পড়ার পড়, যখন দেখলাম আব্বার এই জিনিস প্রায় মুখস্ত... তব্দা খাইছিলাম... এই লোক একদিন আমার বয়সী ছিল... আবার কুয়াশাও পড়ত... দুইটা জোড়া দিয়া ভিজুয়ালাইজ করতে হিমশিম খায়া গেছি
একদম
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ছাত্রজীবনে আমার সেই বদভ্যাসের আরো একজনকে দেখে ভালো লাগল
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
এই বদভ্যাস (?) কমবেশী সব বই পড়ুয়ারই আছে মনে হয়! এমনকি এখন আমার বড় ছেলেও (৮ বছর) প্রায়ই জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস নিয়ে খেতে বসে যায়!!
____________________________
হেহেহে... জেনেটিক অসুখ...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বই পড়ুয়া সবারই শৈশব কৈশোরের গল্পটা প্রায় একই রকম! আমার জীবনের একটা ফ্ল্যাশব্যাক দিলেন মনে হলো!
আর বলবেন না! আমি তো আমার ভবিষ্যত লাইব্রেরী রূমটার একটা ডিজাইনই করে ফেলেছি। পূর্ব আর দক্ষিণ দিকে লিনটেল থেকে মেঝের পাঁচ ইঞ্চি উপর পর্যন্ত কাঁচের দেয়াল, বাকী দুই দিকে ছাদ পর্যন্ত বুক শেলফ। শুয়ে এবং বসে পড়ার জন্য উপযোগী ব্যবস্থা সহ ১২' বাই ১৪' ফুটের একটা লাইব্রেরী রূম! (আর ডিটেইল দিলাম না কারণ বই পড়া বাদে এই একটি জিনিসের ক্ষেত্রে লেখা বা বলা শুরু করলে আর থামতে ইচ্ছে হয় না!!!
____________________________
হু... দেইখেন একদিন আমিও
আজ পর্যন্ত একটা বুকশেলফ কিন্যাও শান্তি পাইলাম না... প্রত্যেকবার ভাবি এইবার সব বই আঁটবে... তারপর দেখা যায় এইবারও অর্ধেক বই বাইরে...
মনে হয়, ম্যালথাসের তত্ত্বের মতঃ বুকশেলফ বাড়ে গানিতিক হারে... আর বই জ্যামিতিক হারে...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সাথে বারান্দা থাকবে একটা। আর দোলনা ও থাকা লাগবে। নাহ, কবে যে বানাতে পারি!
ছোটকালে বাপের সাথে মিলে একটা বুকশেলফ ডিজাইন করে বানাইছিলাম, যার সবচে ভালো ব্যাপার ছিলো মঝ বরাবর একটা তাককেই চওড়া করে পড়ার টেবিল বানানো হইছিল। ১০ ফুট দেয়াল জুড়ে ১০ ফুট উচু বইএর তাক, উপরের বই পাড়তে হলে ভদ্র লোকের মই লাগবে, আর আমার মত বান্দর হইলে নিচের তাক বেয়েই উঠে যেতে পারবে।
এখন নিজের বাড়িতে ৩টা ঘর, যার একটা বরাদ্দ শুধুই বই এর জন্য। মেঝেতে গদি পেতে, বড় জানালার পাশে অনেকগুলা বালিশ দিয়ে বই পড়ার ব্যবস্থা। সবাইকে আমন্ত্রণ , তবে খালি হাতে আসলে হবে না, বই নিয়ে আসতে হবে।
আমি সুখী!
<ইহা হিংসা জাগানিয়া মন্তব্য>
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আপ্নেরে চিমটি। আমারও নিজের বাসায় এক রুম বই আর বই পড়ার জন্য। আপাতত আবার বাবা মার বাড়িতে আছি। নাইলে আমিও দাওয়াত দিতুম সবাইকে গিফট হিসেবে বই সহ
বাড়ীর ঠিকানা দেন (দেশে হলে)। আর কোন বই পড়া হয়নি এখনো লিস্ট দেন।
____________________________
বই পড়ুয়াদের আজকাল আমি সহ্য করতে পারি না। বই পড়ুয়া গ্রুপটিতে তাই নেহায়েত দায়ে না পড়লে ঢুকি না। কারণটি হলো, যখন আমার না পড়া বইয়ের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে আর আমি দিনে এক ঘন্টাও পড়ার সময় বের করতে পারি না, তখন কেউ যদি লোভনীয় বইপত্রের গপসপ করে, অসহ্য লাগারই কথা।
তবে আপনাকে অসহ্য লাগছে না কারণ আপনি আমার না পড়া কোন বইয়ের নাম দেননি এখানে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
যাক, বেচে গেলাম। বই পড়ুয়া গ্রুপে ঢুকার পর থেকে বিশাল একটা লিস্ট জমেছে আমার। সেগুলো সব জোগাড়ই হয়নি, পড়া তো দূরের কথা। ওখানে ঢুকার পর এমন অনেক দেশি বিদেশী লেখকের বই এর কথা শুনেছি আমি আগে তাদের নামই শুনিনি।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
একটা ইমো হবে একদিন যার মানে যত খুশী তারা। অনেকদিন আগে পীরবাবার একটা লেখায় দিতে ইচ্ছে হয়েছিলো। আর আপনার এই লেখায় দিলাম আজকে।
কোন এক কালে বই পড়তাম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বই -শব্দটার মাঝেই কেমন যেনএকটা কাগজের ঘ্রাণ লেগে আছে!
ঠিক কথা। এ কারণে আমি এখনও মোবাইলে, ই বুক এ বই পড়ে বেশী আরাম পাই না।
বাহ, বেশ অভিজ্ঞতা ! বই ছাড়া আর আছে কী জীবনে?
facebook
আপনি এই কথা কইয়েন না। সারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ান। আমরা তো ঘরে বসে বই পড়ে পড়ে কল্পনা করি আর আপনি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন।
ভালো লাগল।তিন গোয়েন্দা এখনও মাঝে মাঝে পড়ি।বই ছাড়া জীবন চলে না।
আপনার ক্ষেত্রে বই এর ধরন ও লেখকের ক্ষেত্রে যে বিবর্তনটা, সেটা অনেকটাই আমার সাথে মিলে গেছে।
পথের দাবি
ভাল লাগল শুনে।
পিচ্চিকালে আপনার মতো একখানা পড়ুয়া মেয়ে পেলে ঠিক বান্ধবী বানিয়ে ফেলতুম ! আফসোস
লেখা ভালো লাগলো।
ইস, আমিও একটা পড়ুয়া বন্ধু পেতাম তাহলে।
খুব ভালো লাগল - মন্তব্যগুলো সহ
ধন্যবাদ
আপনার বই পড়ার ইতিউতিপাতিহাস (মজা করে বলা) পড়ে ভালো লাগলো। আসেপাশে এত্তো এত্তো মানুষ এত্তো এত্তো বই পড়ে ভেবে ভীষণ নির্ভার হয়ে যাই। এতো আলোরপথযাত্রীর মেলায় থেকে দেশটা অন্ধকারে ডুবে যাবে না কখনোই।
আমার বইপড়ার অভ্যাস অবশ্য অনেক পরে তৈরী হয়। ক্লাস ৬-৭ এ থাকতে খুব সম্ভবত। ইনফ্লুয়েন্স হিসেবে পেয়েছিলাম বিখ্যাত- সুহান রিজওয়ান কে।
এখানে উল্লেখ করা অনেক বইয়ের ব্যপারে অনুভূতি প্রায় একই রকম হয়েছিলো আমারও। তবে একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার না করে পারছি না। তখন সম্ভবত কলেজের দ্বীতিয় বর্ষের শুরুর দিক, নীলক্ষেত তখন তীর্থস্থান আমার জন্য। যা হোক, কলেজে ক্লাস ফাকি দিয়ে খালি রুমে বসে পড়ে শেষ করেছিলাম 'হুমায়ুন আজাদ' এর 'সব কিছু ভেংগে পড়ে' (বানানটা ঠিক মত আসছে না কেন বুঝলাম না)। স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। ছুটির পর বাসায় ফেরার পথে অন্তত ৩ বার বাস চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়েছিলাম। ঘোরের মধ্যে সে দিন বাসায় যে কীভাবে পৌছেছিলাম আজো বলতে পারি না। ঠোঁটকাটা লোকটাকে অসম্ভব মিস করি এই বেনিয়া বুদ্ধিবেশ্যাদের দরদালালির হাটে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার সময়ে।
যাক ম্যালা প্যাচাল পারলাম। যাবার কালে রাউন্ডহাউস থেকে একটা বিখ্যাত কোবতে ছেড়ে গেলাম।
---- মনজুর এলাহী ----
আপনার মন্তব্যটা পড়ে মন ভাল হয়ে গেল। কবিতাটার জন্য বিশাল একটা
আপনার কোবতে দেখে এই লেখাটার কথা মনে পড়ে গেলো। অসাধারণ আরেকটা লেখা।
____________________________
আমার বই পড়ার অভিজ্ঞতা ব্যাপক রকমের । একটা সময় আমি ছিলাম বই এর পোকা যাকে বলে। এমনকি মেট্রিক পরীক্ষার সময়, মনে আছে হুমায়ুন আহমেদ এর একটি বই পেয়েছিলাম হাতে। ইংলিশ পরীক্ষা ছিল পরের দিন। টেকস্ট বই এর নিচে লুকিয়ে দরজা বন্ধ করে বইটা পড়ে শেষ করেছিলাম। পরে দেখলাম রাত হয়ে গেছে। আমার পুরো রিভিসন দেয়া বাকি। যাই হোক, পরীক্ষা কেমন হয়েছিল সহজেই অনুমেয়। সেই বই পড়ার নেশা এখন আর নেই। দুর্ভাগ্য ক্রমে সেই নেশা চলে গেছে অনেকদিন হল।
শিশির অশ্রু
এই কাজ আমিও করেছিলাম এইচএসসি পরীক্ষার সময় একবার।
খ্যাক, খ্যাক। উপরে মন্তব্যে বলেছি আমার বই এর তাকই ছিল পড়ার টেবিল। ২/১ টা হুমায়ুন পড়ে আগে ওয়ার্ম আপ করে নেয়া পরীক্ষার আগের রাতে চিরকালের অভ্যাস। নাহলে ঠিক পড়ার মেজাজ আসে না
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
অাজকাল পড়ুয়াদের পড়ার গল্প পড়তে ভীষণ ভালো লাগে।এভাবেই অাপনার এই লেখা খুঁজে পেলাম।দারুণ লিখেছেন।অামার মনের অনুভূতিগুলোই যেন অাপনি লিখেছেন!!শেষের লাইনগুলো অনেক বেশীই ভালো লেগেছে।
নতুন মন্তব্য করুন