আমাদের সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভাব নাই। এই ধরনের আচরণের প্রবক্তা পুরুষেরা হলেও কম বেশি পুরুষ নারী সবাই এটাকে চালু রাখতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতি নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে নিষ্ঠার সাথে। খুব প্রচলিত একটা কথা, ধারনা যেটা আমার জীবদ্দশায় বোধকরি সবচেয়ে বেশিরভাগ শুনা প্রবচনগুলোর একটা তা হল “নারীরাই নারীর শত্রু” আমার কাছে এই প্রবচনটাকেও ভয়াবহ রকমের পুরুষতান্ত্রিক স্টেরিওটাইপিং মনে হয়। এই এক ধারনাকে প্রচলিত রেখে কত মেয়েকে যে কতভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে তার হিসাব বের করা সত্যিই কঠিন।
সুবিধাবাদী পুরুষেরা এটাকে ব্যবহার করে, সুবিধাবাদী নারীরাও এটাকে ব্যবহার করে। নিজের সমস্ত আচরণ দিয়ে যেই পুরুষ ক্রমাগত আশেপাশে থাকা মেয়েদের শোষণ করে তারাও দিনশেষে বলে “ তোমরা মহিলারাই মহিলাদের শত্রু” আবার সমাজের যাবতীয় স্টিগ্মা দিয়ে আবধ্য মেয়েটা যে নিজেই সময় বুঝে পাশের মেয়েটার প্রতি শোষিতের আচরণ করে সেও বলে “ মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু” অন্য দেশের কথা জানিনা কিন্তু আমাদের দেশে খুব ছোটবেলাতেই কিছু মুখস্থ বচন শিখানো হয় যা থেকে আমরা আর আজীবন বের হতে পারি না। নারী নারীর শত্রু সেরকমই এক মুখস্থ বচন, আমার জন্মলগ্ন থেকেই শুনে আসছি। যাদের মুখে মুখে কথাটা ফিরে তার নিজেরাও কখনও চিন্তা করে দেখেননা তারা এটা কেন বলছে।
এখন দেখা যাক কথাটা আমরা কেন বলি। যখনই কোন মেয়ে আরেক মেয়ের ব্যাপারে সহানুভুতিহীন কোন আচরণ করে বা কোন মেয়েকে আঘাত করে আমরা বলি নারীরাই নারীর শত্রু। তাহলে এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে পুরুষেরা কি কখনও কোন পুরুষকে আঘাত করে না? সমাজে খুন রাহাজানি, শোষণ সব কি শুধু নারী নারীর বিরুদ্ধে করে, অথবা পুরুষ নারীর বিরুদ্ধে করে, পুরুষ পুরুষের বিরুদ্ধে কোন অন্যায় করে না? আমিতো উল্টোটাই দেখছি জীবনভর। পৃথিবীতে যত অন্যায় শোষণ নিপীড়ন তার সাথে পুরুষের একাংশের সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বেশি। আমিতো দেখি অত্যাচারী ক্ষমতাবান কিছু পুরুষই দুনিয়াটাকে নিজেদের কব্জায় রেখে সবাইকে শোষণ করে বেড়াচ্ছে। সেই শোষিত দলের মধ্যে নারী যেমন আছে পুরুষও সমভাবেই আছে। এককভাবে নারী বা এককভাবে পুরুষ নেই। তাহলে পুরুষ পুরুষের শত্রু এই কথাটা প্রচলিত হয় না কেন?
কারণ সম্ভবত এই যে আমরা ধরেই নেই পুরুষ মাত্রই অত্যাচারী, শোষক। নারী মাত্রই শোষিত। পুরুষ শোষিত হচ্ছে এ ব্যাপারটা যেমন আমাদের কাছে বোধগম্য হয় না তেমন নারী অত্যাচার করছে সেই কথাটাও অস্বাভাবিক লাগে। ঝামেলা ঠিক এখানেই। আমরা শোষক শোষিতের এই সুপ্রাচীন গ্যাঞ্জামটার ভিতরও জেন্ডার ডিস্ক্রিমিনেশন টেনে নিয়ে আসি। আমরা খুব সহজ একটা কথা বুঝি না বা বুঝতে চাই না তা হল ভাল মন্দ কখনও লিঙ্গ হিসেব করে হবে না। মানুষের আদি সারভাইবাল ইন্সটিংট বলে টিকে থাকার লড়াইয়ে দরকার হলে অপরকে ল্যাং মার। আমাদের পুরুষ নারী সবার মধ্যেই সেই ইন্সটিংট সমভাবেই আছে। সভ্যতা আগানের সাথে সাথে মেধা, মনন দিয়ে আমরা আদিমতা ঝেড়ে ফেলতে চাচ্ছি, মানবিক গুণাবলী বিকশিত করে দুনিয়াটাকে বসবাসের জন্য আর একটু সহনীয় করতে চাচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা ভাল চিন্তা করছি, অপরকে ভালবাসছি, উপকার করছি। কিন্তু এর সাথে নারী পুরুষের কোন সম্পর্ক নেই। ক্ষমতা হাতে দিলে কিছু পুরুষ যেমন সেটার অপব্যবহার করবে কিছু নারীও সেটা করবে। সেক্ষেত্রে পুরুষ যদি পুরুষের শত্রু হয়ে না যায় তাহলে নারী কেন নারীর শত্রু হবে?
নারীকে এমন কোন নৈতিকতার ট্যাবলেট গুলে খাওয়ান হয় না যে সে কোন অন্যায় করতে পারে না। খারাপ হওয়ার ক্ষমতা যতটুকু পুরুষের ঠিক ততটুকুই নারীর ।আমাদের দেশে মেয়েদের পদে পদে পায়ে বেড়ি বেঁধে রাখা হয় তাই নিজের ভাল গুন প্রকাশ করার ক্ষমতাও তাদের যেমন কম থাকে দোষ প্রকাশের ক্ষমতাও কম থাকে। আবার ঠিক তেমন ভাবে পুরুষকেও ধরেই নেয়া হয় সে খারাপ হবে। নারী কাপড় কম পড়লেই পুরুষ রেইপ করবে এটাও সেই ধারনা থেকেই আসছে। পুরুষ মাত্রই জঘন্যতম রেপিস্ট এই চিন্তা পুরুষেরাও করে। অথচ এই ভালো খারাপের পুরো সংজ্ঞাটাই সমাজের তৈরি, এখানে নারী পুরুষের বায়োলজিক্যাল কোন ব্যখ্যা নেই। তাই কোন মেয়ে কোন মেয়েকে শোষণ করছে এটা দেখে এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। যে খারাপ মানুষ যে শোষণ করবে, যে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন সে করবে না। আর যে দুর্বল তার উপর শোষক শ্রেণী অত্যাচার করবে( মেয়েরা তুলনামূলক বেশি দুর্বল তাই মেয়েরা অত্যাচারিত বেশি হয়, কিন্তু দুনিয়া-জুড়ে দুর্বল ছেলেরাও কম অত্যাচারিত হয় না) এখানে নারী পুরুষ বলে আলাদা কোন ব্যাপার নেই।
নারীর প্রতি এই বৈষম্যের জন্য যদি কেউ দায়ী থাকে সেটা হল পুরুষ-তন্ত্র। কিন্তু এখানেও বেশিরভাগ মানুষের ধারনায় গণ্ডগোল আছে। পুরুষ-তন্ত্র শব্দটাতে পুরুষ আছে বলেই এই তন্ত্রের নাম উল্লেখ করার সাথে সাথে আমরা পুরুষ আর নারী এই দুই ভাগে দুনিয়াটাকে ভাগ করে ফেলি। আমরা ভাবি পুরুষ এই তন্ত্রের প্রবক্তা, এটার ধারক বাহক আর নারী এই তন্ত্রের গিনিপিগ, অত্যাচারিত শোষিত সত্তা। তাই পুরুষ যা অত্যাচার করে সেটাকে খুব স্বাভাবিক মনে হয়, নারী নারীর প্রতি অত্যাচার করলেই মনে হয় “আরে, এটাত করার কথা না, মেয়ে হয়ে মেয়ের উপর শোষণ, নাহ, মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু” কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলে তাই?
পুরুষ অবশ্যই এই তন্ত্রের প্রবক্তা কিন্তু দুনিয়া-জুড়ে সকল পুরুষই এই তন্ত্রের ধারক এই চিন্তায় ভুল আছে। পুরুষ-তন্ত্র একটা প্রক্রিয়ার নাম। এটা কোন একক পুরুষের সৃষ্টি না আবার এককভাবে এটার ধারক বাহক শুধু পুরুষ এই ধারনা আমার কাছে কখনই সঠিক মনে হয় নি। এই প্রক্রিয়ার সাথে পুরুষ নারী দুজনেই সংযুক্ত এবং হাজার বছর ধরে উভয়েই এই প্রক্রিয়াটাকে সচল রেখে আসছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এটাও বিশ্বাস করি না যে পুরুষ-তন্ত্রে শুধু নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হ্যাঁ, অবশ্যই নারীরা বেশি ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে কিন্তু পুরুষদেরও কম ভুগতে হয় কি? পুরুষ-তন্ত্রই পুরুষকে মানুষ হতে দেয় না, মাংস-লোভী পুরুষ বানিয়ে রাখে। পুরুষ-তন্ত্রই পুরুষকে বলে তোমাকে আঘাত পেলে চিৎকার করতে হবে, কাঁদতে তোমার মানা। পুরুষ-তন্ত্রের কারণেই সম্ভবত পৃথিবীটা অত্যাচারী ছেলেদের দখলে। চারপাশ দেখে আমার মনে হয়েছে যেই ছেলেটা দুর্বল, অসফল, ভালো মানুষ তার জন্যও পৃথিবীটা ঠিক ততখানি শক্ত যতখানি একটা মেয়ের জন্য। এই তন্ত্রের দ্বারা উভয়েই যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আবার এটার সাথে উভয়েই তেমন যুক্ত। তাই একটা নারী পুরুষ-তন্ত্রের ধারক বাহক হিসেবে অন্য নারীকে অত্যাচার করতেই পারে। সমস্যাটা কোন একক নারীর না সমস্যাটা আমাদের সমাজের মূলে। পুরুষ-তন্ত্রের বিষবৃক্ষ ধরে নাড়া না দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে বলে মনে হয় না।
পুরুষতন্ত্রে নারী সিদ্ধান্ত নেয় না নারীর ভুমিকা সিদ্ধান্তের প্রণয়নে। নারী কেমন হবে সেই সিদ্ধান্ত যেমন পুরুষের তেমন নারী কি করবে সেই সিদ্ধান্তও কিন্তু পুরুষের্। জন্মানোর পর সমাজের প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমেই আমরা সমাজের কাছে গ্রহনযোগ্য নারী পুরুষ হয়ে উঠি। এই প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত পুরুষের কিন্তু বাস্তবায়নের সাথে পুরুষ নারী উভয়েই যুক্ত। এখানে নারী নারী হিসেবে যুক্ত না যুক্ত পুরুষতন্ত্রের বাহক হিসেবে। এই সহজ কথাটা বুঝলেই অনেক ঝামেলা মিটে যেত।
নারী হলেই নারীর জন্য সহানুভূতিশীল হবে এই ধারনাটাতেও গণ্ডগোল আছে। যে সহানুভূতিশীল সে যে কারও প্রতিই হবে আর যে না সে হবে না। অভিজ্ঞতাও এখানে একটা ফ্যাক্টর। যে যেই ঝামেলা ভোগ করেনি সে সেটা বুঝে না। এ কারণে আমার সহকর্মী মেয়েটা আমাকে যত ভালো বুঝে আমার পাশের বাসার ভাবী বা অনেক প্রিয় বোনও অনেক সময় বুঝে না কারণ তার কাছে সম্ভবত সমস্যাগুলো অচেনা। অনেকে আবার একই ধরনের অবস্থার ভিতর থেকেও বুঝে না কারণ তার কাছে মনে হয় এটাই স্বাভাবিক। সমাজের রীতিনীতিগুলোকে আমরা এমনভাবে আমাদের মনে গেঁথে নেই বা গেঁথে দেয়া হয় যে এর অন্যথা কিছু ঘটলে সেটাকেই ভুল ভাবি, নিজেদের রীতিনীতিগুলিকে প্রশ্ন করতে পারার ক্ষমতাকে খুব সুকৌশলে খুব ছোটবেলাতেই নষ্ট করে দেয়া হয়। এবং সেটা নারী পুরুষ উভয়েরই। তাই আমরা বেশিরভাগ মানুষই অনেক বড় বড় পাশ দিয়ে অনেক বিদ্বান হয়েও চিন্তা করার ক্ষমতাকে নিজেদের আয়ত্তের ভিতর আনতে পারি না।
আর আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য বই পড়া বদগুণ, চিন্তা করা বেয়াদবি, কথা বললেই মুখরা প্রতিবাদ তো দুরের কথা, ঘর থেকে বের হলে চরিত্রহীন, আত্মবিশ্বাসী হলে সে নষ্টা মেয়ে। এরকম ট্যাবুর ভিতর বড় হয়ে মেয়েরা আরেকজনের মতের, আদর্শের, জীবনের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হবে, অন্যের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিতে শিখবে এটাই তো আমার অস্বাভাবিক লাগে মাঝে মধ্যে।
খেয়াল করলে দেখা যায় সমাজে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই সমাজ টিকিয়ে রাখার ( স্টেরিও-টাইপ গুলিকে আবহমান রাখা) ক্ষেত্রে টাস্ক ভাগ করে দেয়া আছে। গ্রামের মোড়লরা, হুজুররা যেমন কোন মেয়েকে স্কুলে যায় বলে, মুখে মুখে কথা বলে বলে, কাউকে ভালবাসে বলে দোররা মেরে সমাজ টিকিয়ে রাখার কাজ করে তেমন মহিলারা পাশের বাড়ির মেয়েটা কি করল, কি পড়ল, কার সাথে কথা বলল এসদের হিসেব রেখে সমাজ টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব পালন করে। যে কারণে পাড়ার মুদি দোকানে বসে পাড়ার আঙ্কলরা হিসেব করে কোন ছেলে ভালো বেতন পায়, কোন মেয়ে শরীরের কতখানি বের করে কাপড় পরে ঠিক একই কারণে পাড়ার অ্যান্টিরা হিসেব কষে কার কবে বিয়ে হবে, বাচ্চা হবে, কেন হবে না। এরা এটা করে কারণ এরা এটাকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করে। এদের সাথে কথা বললেই বুঝবেন এরা ভাবে এরা সমাজটাকে উচ্ছন্নে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখে কোন মহৎ কর্ম সম্পন্ন করছে। এক্ষেত্রে নারী পুরুষ কোন ব্যাপার না। অল্প কিছু মানুষ ছাড়া সবাই মোটামুটি সমাজের তৈরি এই ভয়াবহ দুঃসহনীয় প্রক্রিয়াটার সাথে যুক্ত।
শাসকরা তাদের হাতিয়ার হিসেবে সবসময় শোষিতদেরই বেশি ব্যবহার করে আসছে। যে কারণে ইংরেজদের পেয়াদা, লাঠিয়াল হিসেবে দেশি লোকেরাই কৃষকদের অত্যাচার করত সেই একই কারণে নারীরাই নারীদের শত্রু হয়ে ঘরে বাইরে অত্যাচারে সাহায্য করে, ইন্ধন যোগায়। একজন নারী যখন আরেকজন নারীকে অত্যাচার করে তখন সে নারী হিসেবে করে না, করে পুরুষ-তন্ত্রের ধারক হিসেবে। আবার অবস্থাভেদেও প্রতিটি মানুষের অবস্থান বদল হয়। যেমন মেয়ের মা হলে সে শোষিতের দলে আবার সেই একই মা ছেলের মা হিসেবে শোষক। মজার ব্যাপারটা হল পুরুষ-তন্ত্র নারীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আবার তারপর নিজেরাই বলে দেখ তোমরা মেয়েরাই কিন্তু মেয়েদের শত্রু। এটাকেও আমার পুরুষ-তন্ত্র টিকিয়ে রাখার আর একটা দারুণ কৌশল মনে হয়।
নারী পুরুষের ভিতর সমতা, সাম্যবস্থা তৈরি করা ছাড়া সমাজের সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব না। আর সেটা তৈরি করতে হলে সবার আগে পুরুষ-তন্ত্রের প্রচলিত ধ্যান ধারনাগুলোকে নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার দরকার আছে বলে মনে করি। পুরুষ-তন্ত্র শুধু মেয়েদের অত্যাচার করেই ক্ষান্ত হয় না , পুরুষ নারীকে পরস্পর পরস্পরের বিপক্ষে দাড় করিয়ে রেখেই ক্ষান্ত হয়না, নারীকেও পরস্পর পরস্পরের বিপক্ষে দাড় করিয়ে রাখে। এতে অল্প কিছু সুবিধাবাদী, শোষক শ্রেণী ( সে পুরুষ হোক অথবা নারী) ছাড়া বাকি সবাইই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হয়ত নারীরা বেশি হয় কিন্তু পুরুষেরাও কম হয় না। পুরুষ-নারী এভাবে না ভেবে আমরা ভালো-খারাপ, শোষক-শোষিত, মানুষ-অমানুষ এভাবে ভাবা কেন শুরু করি না ? আমি সবাইকে বলব একবার হলেও অন্তত সেটা ভেবে দেখতে।
এই সমস্যার সত্যিকারের সমাধান হওয়া নিশ্চয়ই অনেক সময়সাপেক্ষ কিন্তু শুরু করতে হবে এখনই। এবং সেটা শুরু করতে হবে নিজেকে দিয়ে। প্রথমে নিজের চিন্তায় বদল আনার চেষ্টা করতে হবে। আর যারা চিন্তা করার ক্ষমতাসম্পন্ন তাদের চিন্তাগুলিকে আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। এ বিষয়ে লেখালেখি করতে হবে, কথা বলতে হবে। অনেক চিন্তা ভুল হবে, অনেক ভাবনা পরবর্তীতে বোকামি মনে হবে কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা প্রাণ খুলে কথা বলা শুরু করছি ততোক্ষণ পর্যন্ত কিছুই হবে না।
আপনি নারী হন বা পুরুষ যে কোন ভালো, মন্দ, ন্যায়, অন্যায়, অসঙ্গতি দেখলেই যখন পুরুষ নারী এই ব্যখ্যায় না যেয়ে মানুষ অমানুষ এই ব্যখ্যায় যাবেন বুঝবেন সেদিনই আমরা এই সমস্যা সমাধানের দরজায় পৌঁছে গেছি। সমস্যা অনেক কিন্তু সমাধান কিন্তু একটাই সেটা হল সবাইকে মানুষ ভাবতে হবে। এবং শুরুটা করতে হবে নিজেকে দিয়েই।
ফুট নোট- লেখাটির কিছু অংশ চরম উদাস দার লেখায় মন্তব্য হিসেবে ছিল।
মন্তব্য
কঠিন!!! মুগ্ধ হলাম!!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
ধন্যবাদ
ধন্যবাদ, আপনার লেখায় মন্তব্য লিখতে গিয়েই লেখা হল নাহলে হয়ত আলসেমিতে আরও দেরী হত। সেজন্য আরেকবার ধন্যবাদ
পোষ্টের ফুটনোটে উল্লিখিত লেখাটা পড়তে গিয়ে ধাক্কা খেয়েছিলাম। আমার ভাবনাটা সেখানে প্রকাশ করতে গিয়ে দেখলাম আপনার মন্তব্য আমার লাইনে আছে। ভালো লাগল। আশাও হল যে একটা পছন্দের পোস্ট পেতে চলেছি। অনেক ধন্যবাদ ধূসর জলছবি, সে আশা পূর্ণ হওয়ায়।
৫ তারা অবশ্যই।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
সেটাই, লেখার সময় বের করার মত অবস্থায় ছিলাম না তবুও মনে হচ্ছিল এখন আর কিছু না বললেই নয়। ভিতরের তাড়া খেয়েই যেভাবে হোক লিখে ফেললাম। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ
একজন পুরুষ যদি আরেকজন পুরুষের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়, একজন নারীও হবে না নারীর প্রতি। চুরি, ডাকাতি, গুম-খুনের সময় কেউ বলে না, আহা, ও পুরুষ, তুমিও পুরুষ, আমিও পুরুষ, এমনটা না করি!
নারীর প্রতি এই খানিকটা অনায্য দাবি রাখা হয়, কারন সে শোষিত। আমার মনে হয়, সেজন্যেই সকলে মনে করে তার একটা এমপ্যাথি থাকবে, সফট কর্নার থাকবে অন্য নারীর জন্যে। কথাটা সর্বক্ষেত্রে সত্য না, শোষিতকে শাষক করে দিলেই সে বদলায় না, বরং আসল রূপটাই তার প্রকাশ পায়। তার সাথে আমি এও মনে করি যে, অধিকাংশ মানুষই, অন্তত বাঙালি, একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত সৎ, মহৎ। অবিমিশ্র ভালো, আমাদের সমাজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। যে সরকারি অফিসার ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত সৎ, তাকে ১,০০,০০০ টাকা সাধলে কি হবে বলা যায় না।
এছাড়াও, সমাজে নারীকে গড়ে তোলাই হয়, পুরুষের প্রতিনিধি হিসেবে এবং আপনি যখন অধ:স্তন প্রতিনিধি হয়ে কথামত কাজ করলে যেমন পিঠ চাপড়ানি পান, তেমনি নারীরও পিঠ চাপড়ানির পাবার খায়েশ থাকবে না কেন? আপনি পান শুধু উপরের তলা থেকে, নারী তখন বাহবা পায় পুরো সমাজের থেকে, বিশেষ করে পুরুষ বদমাশদের থেকে। বদমাশরা চালায় সমাজ যেখানে, সেখানে কি আপনি জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়াই করবেন? চাকরি চাইলে ছেড়ে দিতে পারেন, সমাজ বিচ্যুত হয়ে কয়জন দাড়াতে পারে?
সেটাই, এখন আসলে সেরকমই সময় এসেছে, জলে বাস করেও কুমীরদের সাথে লড়তে হচ্ছে, হবে। কিন্তু আমরা অধিকাংশ মানুষ নারী পুরুষ উভয়েই বুঝি না লড়াইটা ঠিক কার সাথে। একে অপরের সাথে অহেতুক লড়ে একটা জীবন নষ্ট করে ফেলি। এজন্যই এ বিষয়ে বেশি বেশি কথা বলতে হবে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
পুরোমাত্রায় সহমত। এটিও একটি পুরুষতান্ত্রিক স্টেরিওটাইপিং। যে-নারী (শারীরবৃত্তিক দিক থেকে, যাদেরকে ব্যাকরণগতভাবে ‘মাইয়া’ বলাই শ্রেয়তর) এই কথাটা উচ্চারণ করেন, তিনিও আসলে পুরুষের বানানো কথাটা পুরুষতন্ত্রের স্বার্থে পুরুষ হয়েই উচ্চারণ করেন।
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
সেটাই
- এই কথাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী প্রতিটি নারী-পুরুষ এবং যারা নারী-পুরুষ কোনো পরিচয়েই নিজেদের সীমাবদ্ধ করতে চায় না তাদের সবসময় এটা মনে রাখা অবশ্যকর্তব্য। নাহলে আমরা এক পা এগিয়ে আবার সেই দশ পা পিছিয়েই পড়ব।
- এক্কেরে বুলস আই।
- এটা খুবই জটিল একটা প্রক্রিয়া। ঠিক এই কারণে পুরুষের চাইতে নারীর মনস্তাত্ত্বিক সংগ্রামটাও দ্বিগুণ। সে যদি মনে করে সে সন্তান না নিয়ে কাজে মন দিবে, তাও তার মধ্যে দ্বিধা কাজ করে, কারণ তার পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব তার মধ্যে অপরাধবোধ সৃষ্টি করে যে সে চিরন্তন নারীর দায়িত্ব পালন করতে পারল না। আবার সে যদি চায় সে শুধু তার সন্তানকেই সময় দিবে, তাহলে সে নিজেকে তার পুরুষ সঙ্গীর চাইতে অধম মনে করে, কারণ পু্রুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো নারীবাদ তাকে শিখিয়েছে যে তাকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। এই দোটানা থেকে বেরোতে এখনো অনেক প্রজন্ম বাকি।
সমাজের অর্ধেক পিছিয়ে থাকলে তো সমাজ আগাবে না কখনোই। পুরুষতন্ত্র এমন একটা তন্ত্র যে আমরা কেউই এর থেকে মুক্ত না। আমি আমার আশেপাশে অনেক অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী কর্মজীবি মাদের দেখেছি যাদের ছেলে সন্তানরা তাদের নারীসঙ্গীদের কাজ করতে দিতে আগ্রহী না। অনেক শাশুড়ি হয়তো চিন্তিত না তাদের বউমার সন্তান হওয়া নিয়ে, কিন্তু সেই বউমার কাছাকাছি বয়সী শিক্ষিত ভাসুর কথায় কথায় ঠাট্টার ছলে মনে করিয়ে দেয় যে বয়স বেড়ে যাচ্ছে। তার মানে পুরুষতন্ত্র এক প্রজন্ম পরেও আবার ফিরে আসতে পারে। তাই নিজেদের ভিতরের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের ব্যাপারে সচেতনতা অতীব জরুরি। আমার নিজের অভিজ্ঞতাঃ বিদেশে পড়তে আসার পর বন্ধু মহলে সবার আগে একবার পরীক্ষা দিয়েই ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় পাশ করার পর বিদেশের পিএইচডি ধারী অনেক ছেলে আমার সামনেই বলেছে “মেয়ে হলে পাশ করতে একটু সুবিধা হয়”। আমি ওই পুরুষতান্ত্রিক অহমে পূর্ণ ছেলেটার কথার চাইতে অবাক হয়েছি আশে পাশে বসে থাকা লিবারেল বন্ধুদের চুপ থাকায়। কারণ তারা জানতো যে আমার পরীক্ষক কোনো পুরুষ ছিল না, যাকে আমি আমার নারীত্ব দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে লাইসেন্সটা বাগিয়ে নিব । বরং ভীষণ বদরাগী এক মহিলা ছিল, যে সহজে কাউকে পাশ করায় না। তার মানে কি দেখুন, ধরেই নেয়া হয়েছে যে পরীক্ষক একজন পুরুষ ছিলেন। যদি থেকেও থাকেন, পুরুষরা এতটা চরিত্রহীন যে মেয়ে দেখলেই তাদের লোল পড়বে এবং পাশ করিয়ে দেবে! এই ছোটো ছোটো ঘটনাগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকে পুরুষতন্ত্র। আমার নিজের অভিজ্ঞতায় আমি আমাদের আগের প্রজন্মের পুরুষ-নারী দুই অংশের কাছ থেকেই সমান পুরুষতান্ত্রিক শোষণমূলক মন্তব্য শুনেছি। কিন্তু আমার প্রজন্মে ছেলেদের যত শোষনমূলক কথা বলতে শুনেছি, আমার আশে পাশের মেয়েদেরকে বলতে ততটাও শুনিনি । তারপরও এই স্টেরিওটাইপিং থেকে বের হতে পারছি না আমরা।
লেখা ভাল লেগেছে।
জলপদ্ম
সহমত
এই জন্যই এগুলো নিয়ে কথা বলা জরুরী। ঠিক হতে সময় লাগবে কিন্তু মুখ খুলেতে হবে এখনই ধন্যবাদ
লেখাটার সাথে পুরোপুরি একমত। 'নারীই নারীর শত্রু' এই কথাটা ছোটবেলা থেকে অনেকবার শুনেছি। এটার প্রমাণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি যে চিত্রটাকে দেখানো হয় সেটা হল শাশুড়ির হাতে পুত্রবধূ নির্যাতন। কেন একজন শাশুড়ি তার পছন্দ করে আনা পুত্রবধূর উপর চড়াও হয়? কেন সে একজন মেয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের প্রতি সহনশীল, ধৈর্যশীল হতে পারে না? একটা সময় ভাবতাম যে তবে কি এটাই সত্যি যে মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু! বিষয়টার আসলে এতোটা সহজ না। শাশুড়ি হিসেবে যেই মহিলাটি থাকেন তিনি আমাদের গড়া এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বড় হয়েছেন। তার বড় হওয়ার প্রতিটা পদে তিনি জেনে এসেছেন যে এই জগতটা ছেলেদের জন্য। এই সমাজে মেয়েদের স্থান নেই। মেয়ে হয়ে এখানে কিছুটা অবস্থান তৈরী করা যায় শুধু মাত্র পুত্র-সন্তান জন্ম দিতে পারলে! তাই একজন মহিলা যখন পুত্র-সন্তানের মা হন তখন তিনি ভাবতে থাকেন হয়তো তার সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হল। পুরুষের জগতে তিনিও যেন কিছু ক্ষমতা পেলেন। কিন্তু সেই ক্ষমতা দেখাবেন কোথায়? কোন পুরুষের উপরে তো সেটা দেখানো যাবে না! স্বামীর বাড়ির কারো উপরেও না!। তাহলে? শেষমেশ শাশুড়ির সদ্য প্রাপ্ত ক্ষমতার বলি হয় নববধূ। এখানে শাশুড়ি পুত্রবধূকে মেয়ে হিসেবে নির্যাতন করেন না, বরং তার এতো দিনের জমে থাকা না পাওয়ার আক্ষেপ আর স্বল্পবুদ্ধিতার কারণে নির্যাতন করেন। নির্যাতিত পুত্রবধূটির সেই অত্যাচার সহ্য করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। সে মুখবুজে সহ্য করে আর প্রার্থনা করে একটা পুত্র সন্তানের জন্য। সময় ঘুরে সেই পুত্রবধূও আবার শাশুড়ি হয়। এভাবে পুরুষতন্ত্রের শৃঙ্খলে আবদ্ধ অত্যাচার চক্র চলতে থাকে।
শাশুড়ি বউয়ের দ্বন্দ নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ দারুণ হয়েছে। এই ভয়ঙ্কর চক্র ভাঙ্গার চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং প্রতিনিয়ত বুঝতে পারছি পুরুষতন্ত্র পৃথিবীটাকে কত কঠিন বানিয়ে রেখেছে।
মারাত্তক লিখেছেন আপু।ছেলেদেরকে আমরা আগেই বেনেফিট অফ ডাউট দিয়ে বসে আছি। তারা খারাপ হতেই পারে এই ধরণের চিন্তাভাবনা এতটাই স্বাভাবিক আমাদের সমাজে যে এটার সুযোগ নিয়ে খারাপ ছেলেরা অন্যায় করে ও এমন ভাব নিতে পারে যে তাদের অন্যায় করাটা প্রি-হিসটোরিকাল সময় থেকেই সমাজে গ্রান্টেড।
ধন্যবাদ । বেনিফিট অফ ডাউড দিয়ে দিয়েই আজ এই অবস্থায় এসে দাড়িয়েছে সমাজ।
নারী-পুরুষের সহজ স্বাভাবিক সম্প্রীতি আর পারস্পরিক শ্রদ্ধবোধ প্রদর্শনের চর্চাটা বোধ করি পরিবার থেকেই শুরু হওয়া জরুরি।
পরিবারের বিকল্প নেই। তবে শুরুতে কাজ হবে না জেনেও কথা বলে যেতে হবে। কোন একদিন হয়ত আমরা এই চক্র থেকে বেরোতে পারব।
সচলের অসাধারণতম লেখার মধ্যে একটা। প্রতিটা পয়েন্ট একদম সমস্যার মূল কথাটা বলেছে। নারীবাদ কখনই পুরুষ বনাম নারীর লড়াই না। নারীবাদ আসলে সুবিধাভোগী আর সুবিধাবঞ্চিত এর লড়াই, শোষক আর শোষিত এর লড়াই।
তবে যেখানে হতাশায় পড়ে যাই, তা হোল, এই একটা প্রক্রিয়া সমাজকে এত হাজার বছর ধরে টিকিয়ে রেখে এসেছে, এর শক্তি নিয়ে। নারী পুরুষ সমানভাবে সব করবে এই চিন্তাকল্পনা নিশ্চয়ই যুগে যুগে নানা মানুষ করেছে, কেন তারা সেটা এস্টাবলিশ করতে পারে নি? সারভাইভ্যাল অফ দ্য ফিটেস্ট প্রক্রিয়ায় কি তাহলে এই অসম শোষক/ শোষিত বন্টনই সবচেয়ে কার্যকর বন্দোবস্ত হিসেবে টিকে গেছে?
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
এটা নিয়ে চিন্তা করতে গেলে ঠিক এই কথাগুলোই মাথায় আসে। এত মতবাদ, দর্শন এলো গেল কিন্তু কেউই পুরুষতান্ত্রিক এই অসম ব্যবস্থাটার কিছুই করতে পারল না। চিন্তার এই পর্যায়ে এসেই হতাশ হই আমিও।
চরম উদাসের লেখায় এই বিষয়েই মন্তব্য করেছিলাম, এক ধাক্কায় উপসংহারে চলে গেছি সেখানে, এখানে আরেকটু ব্যাখ্যা করি।
পুরুষতান্ত্রিক এই ব্যবস্থাটার মূল উদ্দেশ্য বংশ পরম্পরা ধরে রাখা। জেনেটিক্স প্রপাগেট করা। কাজেই এই ব্যবস্থাভুক্ত মানুষেরা প্রচুর পরিমাণ মানুষ উৎপাদন করে যাচ্ছে নিয়মিত ছন্দোবদ্ধভাবে। অপরদিকে যারা নারী স্বাধীনতার সুযোগের সমান কথা ভাবছে, সেখানে নারীকে সন্তান উৎপাদন বা লালন করা বা এই পর্যায়ে পৌছবার আগের অনেক সিদ্ধান্তে অন্যান্য অপশন বাছাই করার স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে, ফলে এই ক্ষেত্রে মানুষ সংখ্যা বাড়ছেনা, দুই এক জেনারেশান পরেই চিন্তা ভাবনা চাপা পরে যাচ্ছে, নয়ত মেইন্সট্রিমের জেনেটিক্স এর সাথে মিশে ওদিকেই হেলে পড়ছে। বিশাল মহীরুহের পাশে চারাগাছ গজাচ্ছে আর মরে যাচ্ছে। মূল গাছকে ছাড়িয়ে আর উঠতে পারছে না।
আরেকটা কারণ হলো নারীস্বাধীনতা বা প্রথার বাইরে যে চাওয়া তার কোন সিস্টেমাটিক স্ট্রাকচার এখনো নাই। ধরো, মুরগি, দুনিয়াতে এখন কতগুলা ফ্রী রেঞ্জ চিকেন আর কত গুলা ফার্মের মুরগি? সিস্টেমে আবদ্ধ ফার্মের মুরগি প্রচুর পয়দা করে যাচ্ছে, তাদের খাঁচার মধ্যে সুখে আছে। বনে বাদারে ঘোরা মুরগি বিলুপ্তপ্রায়, তার রিপ্রোডাকশান রেট আনপ্রেডিক্টেবল। যেভাবে বংশগতি বাড়বে সেটাই সাস্টেইনেবল সমাধান হবে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
সেটাই। বংশগতি বাড়াও তো দুনিয়ার জন্য একটা সমস্যা। পুরুষতন্ত্র উঠিয়ে দিতে পারলে জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণও সহজ হবে। সমস্যা হল এটা জনগণকে বোঝাবে কে?
আপনার বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি সহমত। নারীর প্রতি বৈষম্যের দায় নারীর বা পুরুষের, নারীদের বা পুরুষদের নয়, এর দায় সমাজে প্রচলিত পুরুষতন্ত্রের। আর এই পুরুষতন্ত্রের প্রবক্তা, প্রচারক আর প্রজন্মান্তরে পরিবাহকদের মধ্যে নারী-পুরুষ সবারই অবদান। "নারীরাই নারীদের শত্রু" এই বক্তব্যটি একটি পুরুষতান্ত্রিক প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ধন্যবাদ
পুরুষতন্ত্র ব্যাপারটা লঙ্কার মতো, সেই যে প্রবাদে আছে 'যে যায় লঙ্কায় সে-ই হয় রাবণ'।
লেখাটা দেরিতে পড়া হলো। এই লেখা আগে পড়লে আমার আর লিখতে হতো না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
"লেখাটা দেরিতে পড়া হলো। এই লেখা আগে পড়লে আমার আর লিখতে হতো না" - তা কেন? আপনার আর এ লেখা দুটি সহযাত্রী হয়ে চলল। কে জানে কতদূর এদের যাত্রাপথ বিস্তৃত হবে! আকাঙ্ক্ষা রাখি, চলুক বহু দূর।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ ।আমরাতো সবাই একই কথাই বলছি যার যার মত করে। আপনার আর আমার আমাদের বক্তব্য যে একই এটাও মানুষকে বোঝানোর দরকার আছে। তাই আপনাকে লিখতেই হবে।
মুগ্ধতা...
বিভেদটা কবে ঘুচে যাবে, কোনদিন পুরুষতন্ত্রের শেষ হয়ে আরেকটা নারীতন্ত্রের উদ্ভব না হয়ে স্রেফ মানুষ শেষ কথা বলবে জানি না। আশাবাদের দুঃস্বপ্নও দেখি না। তবুও ততদিন পর্যন্ত কিছু চিৎকার রেখে যাওয়া, কিছু কথা রেখে যাওয়া, চুপিসারে...
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ। ততদিন পর্যন্ত চিতকার করেই যেতে হবে আসলে।
ঠিক এরকম করে লিখতে চাই আমি, কিন্তু লিখে ফেলি দাঁতের মাজন বা খুঁজলির বিজ্ঞাপন।
অসাধারণ লিখেছেন ধুসর জলছবি।
কি বলেন এগুলো? আমি আলসেমিতে পুরস্কার পাওয়ার দাবিদার তাই লগ ইন করে মন্তব্য করা হয় না সবসময় তাই বলে ভেবেন না আমি আপনার লেখা নিয়মিত পড়ি না। আমি জানি আপনি কত সুন্দর লেখেন ধন্যবাদ
দারুণ একটা পয়েন্ট তুলে এনেছেন। আসলে একটা কথা শুনতে শুনতে সেই কথাটাকেই ঠিক মনে হয়। যারা চিন্তা ভাবনা করতে চায়, তারাও অনেক সময় প্রচলিত অনেক কিছুকে পাশ কাটিয়ে যান, ধরতে পারেন না। দারুণ।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
চিন্তা করতে চান যারা তাদের চিন্তায় নতুন কিছু যোগ করতে চাই বলেই লিখেছি। আর চিন্তাহীনদের কিভাবে বলে বোঝাবো জানিনা আসলে। শুধু আশা করতে পারি হয়ত কোন একদিন বেশিরভাগ মানুষ চিন্তা করতে শিখবে। দুনিয়াটা বেচে যাবে।
আপনার মন্তব্যটাও অনেক ভাল লেগেছিল, লেখাটাও লাগলো।
শুধু একতু যোগ করতে চাই। সব নারী কিন্তু শাসক শোষিতের সিস্টেম মেনে শোষক হননা। কেউ কেউ আছেন 'সিস্টেমে' পড়ে হয়ে যান।
ছোটবেলা থেকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বড় হতে হতে নিজে থেকেই একসময় ভাবতে শেখেন এই সিস্টেমটাই ঠিক। তারা যে ঠিক অত্যাচারী তা নন। তারা শুধু নিয়মের বাইরে যেতে চান না, অন্যকেও যেতে দেননা।
আপনার লেখায় এই দিকটা আরেকটু বিস্তৃতভাবে আসলে ভাল লাগতো।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
এদের কথাও বোঝাতে চাচ্ছিলাম আসলে। কারণ চারপাশে আপনি যেমন বললেন এমন মেয়েদেরই বেশি দেখি সিস্টেমে আটকে আছে। কিন্তু এই ব্যাপারটা বিস্তারিত লেখা হয় নি, আপনি বলার পর খেয়াল করলাম। লেখাটা লিখেছি এক বসায় যা বলতে চেয়েছি যা মাথায় এসেছে তাই। সময় নিয়ে দেখলে হয়ত ব্যাপারটা মনে পড়ত। আপনাকে অসঙ্খ্য ধন্যবাদ। এই ফিডব্যাক গুলোর জন্যই সচলকে এত আপন লাগে। :-)
লেখাটা অনেক ভালো লাগলো!। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট তুলে এনেছেন। পুরুষতন্ত্রের চাপে পড়ে স্টকহোম সিন্ড্রোমে ভোগা অনেক নারীই একসময় ভাবতে শুরু করেন এই শোষনই আসলে একমাত্র পথ, তার তাদের শাসন তন্ত্র হয়ে যায় শোসনতন্ত্রের মতোই।
আশা করি একসময় এইসব তন্ত্র মন্ত্রের অবসান ঘটবে।
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ধন্যবাদ
আমার পড়া সচলায়তনের অন্যতম শক্তিশালী একটা লেখা। সময় করে মন্তব্য করব করব করেও করা হয়ে ওঠেনি। লেখার বক্তব্য, উপস্থাপন স্টাইল সব বেশি বেশি মাত্রায় সিম্পল, সোজা-সাপ্টা যাকে বলে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া। যুক্তিগুলো অনেক জায়গায় নিজের ভাবনার সাথে এতটা খাপে খাপ মিলে যায় দেখে বারবার হাঁ হয়ে যাচ্ছিলাম। 'নারীই নারীর শতরু' এর মত আরো কিছু পেট্রিয়াকিক স্টেরিওটাইপড স্টেটমেন্ট যা একটি মেয়েকে জীবনকালে অসংখ্যবার শুনতে হয় সেগুলো কিছুটা এরকম -
'সব অনিষ্টের মূল নারী', 'হেলেনের জন্য ট্রয়ের ধ্বংস', 'সে এক হাওয়া যার কারণে আদম গন্ধম খাইলো', 'মেয়ে বস মানেই জীবন হেল', 'মেয়েদের মধ্যে জটিলতা বেশি'... ইত্যাদি। অথচ পৃথবীর যাবতীয় অনিষ্ট, অমানবিক কার্যকলাপের দিকে তাকালে দেখা যায় এখানে নারীর ভূমিকা সামান্যই বরং প্রতিটা অনিষ্টের প্রত্যক্ষ ভক্তভোগী আগে নারী। বলা হয়, 'যুদ্ধক্ষেত্রে নারী'র অবস্থা যুদ্ধরত সৈন্যের চেয়ে ভয়াবহ।' নারী সপ্তাহের লেখাগুলো পড়ছিলাম আর বারবার মনে হচ্ছিল, জন্ম থেকে মৃত্য পর্যন্ত মেয়েদের পুরো জীবনটাই আসলে একটা যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে তাদের আত্নরক্ষা/প্রতিরক্ষার সব অস্ত্র কৌশলে সরিয়ে রাখার কাজটাই করে যায় সমাজ। আর টিকে যায় পুরুষতন্ত্র!
নতুন মন্তব্য করুন