কিছুদিন আগে দেখলাম একজন সামহোয়ারিন ব্লগে বিরিয়ানি বানানোর রেসিপি চেয়েছেন। দেখে মনে পড়ে গেল আমার নিজের পুরোনো দিনের কথা, আমি কিভাবে বিরিয়ানি রান্না করা শুরু করলাম। গল্পটা বেশ মজার তাই আমি এখনও বন্ধুমহলে এই গল্প শুনিয়ে আসছি।
বিরিয়ানির প্রতি ভালবাসা আমার বহুদিনের। এরপরে ব্যাপারটা অন্য জায়গায় চলে গেল যখন আমি হায়দ্রাবাদে এলাম ২০০৪ সালে। সকলেরি নিশ্চয় জানা আছে যে হায়দ্রাবাদ হল বিরিয়ানির শহর। হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানির সাথে কলকাতার বিরিয়ানির কিছুটা তফাত আছে। প্রথম তফাত হল এখানে বিরিয়ানিতে আলু দেওয়া হয় না। এমনকি, লোকে বিরিয়ানিতে আলুর কথা শুনলে চোখ কপালে তোলে। দ্বিতীয়ত, এখানে বিরিয়ানির সাথে দুটো আলাদা আনুষঙ্গিক খাবারও দেওয়া হয় - একটা হল রায়তা আরেকটা “মিরচী কা সালান”। প্রথম দিকে বিরিয়ানির সাথে এগুলো দিলেও আমি খেতাম না, এখন একটু একটু করে রায়তা খাই। তাছাড়া এখানে বিরিয়ানিতে মশলা অনেক বেশী থাকে। আর রান্না হয় “দম” দিয়ে - মানে আবদ্ধ পাত্রে - তাই একে বলে “দম কা বিরিয়ানি”। তবে আমি আগে থেকেই বলে রাখতে পারি যে যারা ঢাকা বা কোলকাতার বিরিয়ানি খেয়েছেন তাদের হয়ত হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি অতটা ভালো লাগবে না। আমার ধারণা আমরা ঠিক এধরণের মশলাদার খাবারে অভ্যস্ত নই বলেই হয়ত এরকম ঘটে। তাই হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি চেখে দেখার শখ হলেও সাবধান। ভেবে খাবেন, খেয়ে ভাববেন না।
যাহোক, আবার রান্নার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। প্রথম আমার এক বন্ধুর বাড়িতে তাদের বানানো বিরিয়ানি খেয়ে মনে হল জিনিসটা বানানো যেতে পারে। তখন আমি আমার আরো তিন বন্ধুর সাথে একসাথে একটা বাড়িতে থাকি, মেস ধরণের আরকি। মেসে পালা করে সবাই রান্না করি, তাই রান্না মোটামুটি শিখেছি। তারপরে, আমাদের বাড়িতে এসে পড়ল আমাদের এক বন্ধুর মাসতুতো ভাই, হোটেল ম্যানাজমেন্ট পড়ে। আর তার শখ হল রান্না করা। মোফিজ আসার পরেই আমার উতসাহ বেড়ে তিনগুণ হল। আমাদের বাড়িতে প্রথম বিরিয়ানি রান্না মোফিজের হাত ধরেই।
একটা পাত্রে ম্যারিনেট করা মাংস নিয়ে থাকে থাকে তার সাথে অর্ধসেদ্ধ ভাত আর ভাজা পিঁয়াজ মিশিয়ে একটা বদ্ধ পাত্রে অল্প আঁচে গরম করতে দেওয়া হল। পাত্রটা আসলে একটা বড় হাঁড়ি, যার মুখটা ময়দা দিয়ে আটকানো যাতে হাওয়া গলে না বেরোতে পারে। প্রায় এক ঘন্টা পরে বিরিয়ানি কমপ্লিট। খেলাম আর ভাবতে থাকলাম এত হ্যাপা তো রোজ রোজ নিয়ে বিরিয়ানি বানানো যাবে না, কিছু কিছু পদ্ধতিগত উন্নতি দরকার যাতে মাঝে মাঝেই একার পরিশ্রমে বানানো যায়।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। এয়ারটাইট পাত্রের কাজ করা হল প্রেশার কুকার দিয়ে, কিন্তু প্রেসার কুকারে তো বাষ্প বেরিয়ে যাবার কথা। তার জন্য, চুলার ওপর তাওয়া বসিয়ে তার ওপরে কুকার বসানো হল, যাতে তাপ ধীরে ধীরে আসে পাত্রে। পদ্ধতির উন্নতির ফলে অনেক তাড়াতাড়ি বিরিয়ানি রান্না হতে থাকল।
তাহলে পদ্ধতির ভাগ হল তিনটে - প্রথমে দই, মাংস আর কিছু মশলা দিয়ে ম্যারিনেট। তারপরে, আলাদা পাত্রে বাসমতী চাল বেশী জল, লবঙ্গ, এলাচ আর দারচিনি দিয়ে কিছুটা সেদ্ধ করা। পরে কিছুটা জাফরান বা কেশর ছড়িয়ে দেওয়া তার মধ্যে। ভাত নামিয়ে জল সরিয়ে তাতে ঘি মেশানো। শেষে, প্রেসার কুকারের নিচের লেয়ারে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে তার ওপর স্তরে স্তরে ঘিয়ে ভাজা পেয়াঁজকুচি আর এই আধ-সেদ্ধ ভাত চাপিয়ে প্রেসার কুকার বন্ধ করে তাওয়ার ওপর বসিয়ে দেওয়া হল। পৌনে এক ঘন্টা পরে বিরিয়ানি প্রস্তুত। খুলে তাতে আরো একটু ঘি ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এরপরে দেখলাম মাংস যত বেশীসময় ধরে ম্যারিনেট করা যায় তত ভাল হবে বিরিয়ানি। আর দেখলাম ঘি ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়। ভাল বিরিয়ানি হতে থাকল।
শুধু একটা ব্যাপারেই একটু রহস্য রয়ে গেল, আলুতে কিভাবে বিরিয়ানির স্বাদ আনা যায়। আলু সেদ্ধ না করেই যদি দেওয়া হয় তাহলে ভাল সেদ্ধ হলেও তাতে নুন ঢোকে না, তাই খেতেও ভাল হয় না। ব্লগাররা যদি কোনো সমাধান জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই জানাবেন।
মন্তব্য
পড়ে লোভ হলো।
অচিরেই ট্রাই করবো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
- আলুটা আগে নুন মেশানো জলে সেদ্ধ করে তারপর ঘিয়ে (অথবা বাটারে) অল্প ভেজে নিন খানিকটা নুন সহযোগে।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বাপ রে !
সাজেশান দেবার ধরন দেখে মনে হয় পাক্কা টমি মিয়া !!
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
নতুন মন্তব্য করুন