গত সপ্তাহেই আমেরিকায় এসে পৌঁছে গেছি। ইন্টারনাল ট্রান্সফার নিয়ে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত চলে এলাম। আমাদের কোম্পানীর নিয়মমত দুবছর কোম্পানীতে থাকলে সেখান থেকে যেকোনো প্রান্তে কাজ করতে যেতে পারে। আর তার জন্য দায়িত্ব সবই কোম্পানীর।
তা এরকমই সুযোগ নিয়ে ঝোঁকের বশে চলেই এলাম। আপাতত একাই এসেছি, বৌ পড়ে আছে হায়দ্রাবাদে। তবে কোম্পানী আমার স্থানান্তরনের জন্য অনেক সুবিধা দিচ্ছে। প্রথমত আমার ভিসার, বিমানে আসার ও আমার মালপত্র আনার খরচা (এমনকি আসবাবপত্র) দিচ্ছে। তারপরে, প্রথম দুমাস থাকার জায়গা, এক মাস গাড়ি। গাড়ি চালানো আমাকে আর আমার বৌকে শেখানোও কোম্পানীর দায়িত্ব। আর আমাকে সবসময় সাহায্য করার জন্য লোকও আছে কোম্পানীতে। আর বন্ধুবান্ধবের সংখ্যাও নেহাত কম কিছু নয়।
তাও চলে এসে কেমন একটা একা একা লাগছে। একটা বড় দুই বেডরুমের ঘর পেয়েছি, যাতে একা থাকাটা দুঃসহ মনে হয়। আশেপাশে লোকজনও বিশেষ একটা নেই। ঠান্ডা প্রচন্ড ... একটা বড় জোব্বামত জ্যাকেট পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। পায়ে জুতো পরার অভ্যাস আমার কোনোকালেই ছিল না, কিন্তু জুতো না পরলেই জমে যাবো। তাই উপায় নেই। এর ওপর আমি গাড়ি চালাতেও জানি না। এখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট আছে ভালই কিন্তু আমাদের অফিসের দিকে কিছু নেই। এখনো মোবাইল আর বাস-পাস পেয়ে উঠিনি। SSN টা না পেলে ক্রেডিট কার্ডও আসবে না – তাই একটা কিছুও কিনতে পারছি না। বাড়িতে ফিরে কাজ কিছু থাকে না, বসে বসে ডিসকভারি চ্যানেল দেখতে হয়।
এরই মধ্যে একটু আধটু করে আমেরিকা চিনছি। পাশাপাশি দুটো দোকান – মানে রিটেল শপ আরকি। দুটোতে দুরকম দাম। আমি প্রথমে আধঘন্টা সার্ভে চালিয়ে তারপরে কিছু কাঁচা সব্জী কিনেই ফেললাম। একটা ইন্ডিয়ান দোকানে গিয়েছিলাম – তা আমার চেনা জিনিসপত্রই কি দামী লাগছে। গড়ে সব জিনিসের দামই অনেকগুণ। আর আমার ওই দামটাকে চল্লিশ দিয়ে গুণ করার বদভ্যাস না যাওয়া অবধি আমাকে মনে হয় মনকে অর্ধভুক্ত করেই রাখতে হবে।
একটা জিনিস সস্তা এখানে – সেটা হল দুধ। সুতরাং দুবেলা অনেকটা করে দুধ খাচ্ছি। অনেকটা ভিখারীদের মত মানসিক অবস্থা – দাম কম পরিমাণে বেশী যে কোনো কিছুই কিনে ফেলছি। এই যেমন কালও জল কিনতে গিয়ে শেষে কোল্ড-ড্রিঙ্কস কিনেই ফিরলাম। অফিসে খাবারের দাম বেশ বেশী – তাই বাড়িতে বেশী বেশী করে খেয়ে আসছি। আর অফিসে এসে হ্যামবার্গার খাচ্ছি। এই তো চলছে।
মজার ব্যাপার হল এখানে মাসে দুবার মাইনে হয়। এটার জন্য আশা করছি আমি পরের সপ্তাহ থেকে কিছুটা স্বস্তিতে থাকব। কিছু না হোক, পকেটে টাকাকড়ি তো থাকবে। এখন তো দেশ থেকে আনা ডলারে চালাতে হচ্ছে। ওদিকে ডলারের দাম বাড়ছে, আমি আসার সময় ৩৯ টাকার কম ছিল, এখন আবার ৪০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এটা বেশ স্বস্তির খবর।
এরপরে শুরু হবে বাড়ি খোঁজা, তারপরে গাড়ি কেনা। সব কিছুই কেমন একটা সুতোয় গেঁথে করে ফেলতে হচ্ছে, কোনোটা বাদ ফেলার কোনো সম্ভাবনাই নেই। অগত্যা ... চলছে। আবার কবে দেশে ফিরব সেটাও ঠিক নেই কিছু – কিন্তু ফিরতে তো হবেই। তাই সে দিকেও একটু আধটু নজর রাখতে হচ্ছে। এখন ছটা বাইশ বেজে গেছে, এতক্ষণে এখানে লোকজনে ফাঁকা হয়ে যায় – লোকে এখানে সকাল ৮টায় এসে ৫টায় বেরিয়ে যায়। এরই মাঝে ৯ই মার্চ এখানে ডে-লাইট সেভিং চালু হওয়ায় ১ ঘন্টা সময় এগিয়ে দিতে হল। তার পর থেকে আমার শারীরবৃত্তীয় ঘড়ি আমাকে ৯টার আগে অফিসে ঢুকতে দেয় না।
আবহাওয়া ভাল যেদিন রোদ ওঠে। তবে অর্ধেক দিনেই বৃষ্টিই হয়ে চলে। রোদ উঠলে এখানে থেকে দূরের পাহাড় দেখা যায় – ভিউটা খুব সুন্দর (ক্যামেরা না থাকায় ছবি দিতে পারলাম না)- রাস্তাঘাট ঝকঝকে তকতকে – যেমনটা হওয়া উচিত আরকি। কিন্তু ট্রাফিকের ভয়ে নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে আমাকে অন্তত আধ মাইল ঘুরে আসতে হয়। মাইলের কথায় বলা ভাল – এখানে সবই মাইল, গ্যালন আর ফারেনহাইট। মনে মনে কনভার্সন না করে শান্তি হয় না, মাইলটা নাহয় দু কিলোমিটার ধরে নিই, কিন্তু ফারেনহাইট স্কেলটা খুবই গোলমেলে। আর গ্যালনের জ্বালা তো এখনো সহ্য করতে হচ্ছে না। আমার একটা বন্ধু নতুন গাড়ি কিনেছে – সেদিন বলে ২৫ দিচ্ছে মাইলেজ। তা ভাল, আমি মনে মনে হিসাব করতে বসলাম ২৫ মাইল প্রতি গ্যালন হলে সেটা কত কিলোমিটার প্রতি লিটার হবে। এক গ্যালন আবার ৩.৭৮ লিটার। বুঝে দেখুন হিসাবটা কত গোলমেলে।
এর মাঝে একদিন মেল পেলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান হবে – যাব বলে মেলও করলাম – এখনো কোনো উত্তর নেই। দেখা যাক, যেতে পারলে আমি এটার একটা আপডেট দেব।
তা এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক এখানে আরো কতদিন চালিয়ে দেওয়া যায়। আর না পারলে তো দেশে ফেরার পথ খোলাই আছে। লড়াই হল বেঁচে থাকার আরেক নাম ...
মন্তব্য
স্বাগতম এ ভূবনে। আপনার আম্রিকাজীবন আনন্দময় হোক।
হ্যাঁ দেখি কতকাল টিঁকে থাকতে পারি ...
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আরো এক শিয়ালের লেজ কাটা গেল। স্বাগতম। কোন স্টেটে উঠলেন? ওয়াশিংটন? সুযোগ-সুবিধার বয়ান শুনে লোভ হচ্ছে। আপনার কোম্পানিতে ওপেনিং থাকলে জানান দেবেন কিন্তু!
ওয়াশিংটন জায়গাটা দেখতে মন্দ নয় কিন্তু ওই শীতটা আমার ঠিক সহ্য হচ্ছে না। শিয়ালের লেজ জুড়ে যাবে সে আশা রাখি ...
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আপনার লেখা পড়ে তো আমার নিজেরই একা একা লাগছে!
বাংলাদেশ ও ভারতের অ্যাডমিশন টেস্ট নিয়ে আপনার একটা লেখা আসার কথা ছিলো। এই সুযোগে দিয়ে দেন।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
নতুন দেশে যাপন সুখময় হোক, আনন্দময় হোক।
যখন একটু সেটেল হবেন, গাড়ী-টাড়ি হবে, নর্থঈস্টের আশেপাশে ঘুরে দেখতে পারেন... অপূর্ব সুন্দর প্রকৃতি। আমার তিনজন বন্ধু কাজ করে আপনার ঐ একই জায়গায় - তাজিন, জাকি আর আসিফ আলি। দেখা হলে হ্যালো বলে দিয়েন!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
নর্থ ঈস্ট তো নয়, নর্থ ওয়েস্ট (ওয়াশিংটন শহর নয়, স্টেট)। তবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালনে ২৯ মার্চ এর অনুষ্ঠানে আপনার বন্ধুদের দেখা পেতে পারি।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
থুক্কু, আমারই মিস্টেক! তবে আপনের ফেসবুক মেসেজ চেক কইরেন এক ফাঁকে...
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
সুখে থাকুন ......শান্তিতে থাকুন
প্রবাসে স্বাগতম্
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
জীবন টা আসলে মনে হয় এমন ই। যে জীবনের কথা আপনি লিখেছেন, ওই জীবনে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা কখনোই বুঝতে পারব না একাকী থাকার প্রকৃত অবস্থাটা। তবে খুব বেশিদিন তো একা থাকা লাগবে না আপনার। আর চাকরীর অবস্থা ও যথেষ্ট ভাল মনে হল।
শুভকামনা রইল যেন অনেক ভাল থাকতে পারেন। বিদেশ বিভুই য়ের জীবন আসলেই বড় অদ্ভুত।
অতন্দ্র প্রহরী
অত কিছু করে না দিয়ে শুধু যদি আপনার পক্ষে চাকরিটা করে দিতো তারা
তাহলে আমিও যাওয়ার জন্য বায়না ধরতাম
আপনার চাকরীর সঙ্গে আমার চাকরীটা বদলাবদলী করা যায়?
একবার ঢাকার একঘেয়ে কর্মজীবনে হাঁফিয়ে উঠে সাবেক কর্মস্থল ভোরের কাগজের বার্তা সম্পাদক অলোক দাকে (সুকান্তগুপ্ত অলোক) বলেই ফেললাম, অলোক দা, আমাকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি হিসেবে রাঙামাটি পোস্টিং দিন! টেকনাফ থেকে কুমিল্লা -- সব বড় বড় নিউজ ঘুরে ঘুরে কাভার করবো। আমার মন পড়ে থাকে পাহাড়ে --ইত্যাদি।..
তখন ঢাকায় তীব্র তাপদাহ চলছে।
তো অলোক দা একটু চুপ করে থেকে পকেট থেকে ১০ টাকার নোট বের করে পিয়ন ডেকে বললেন, জলদি বিপ্লবকে খুব ঠাণ্ডা দেখে একটা কোক এনে দাও। ওর মাথা গরম হয়ে গেছে!
----
আপনার প্রবাস জীবন আনন্দময় হোক। আশাকরি নানা রকম অভিজ্ঞতার কথা নিয়মিত জানতে পারবো।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
হা হা, ভাল বলেছেন। ঘোরাঘুরি করতেই আমিও খুব ভালবাসি, তবে কি জানেন, কাজের চাপে আর বেড়ানো হয়ে ওঠে না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আপনার প্রবাসজীবন সুখের হোক।
তবে সচলায়তনে লেখালেখি কমিয়ে দিলে এই শুভকামনায় পরিবর্তন আনা হবে
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
লেখালিখি কমবে না, লেখার সাথে আসা ছবির সংখ্যা কিছুদিনের জন্য কম থাকতে পারে - এই যা।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
যেহেতু আপনি একাই (মানে স্ত্রীকে ছাড়া) আছেন বর্তমানে, অতএব আপনি নিশ্চয়ই বিরহী। নিজের জীবনের এমনি এক সময়ে এবিষয়টি নিয়ে একটি কবিতা লেখা অপপ্রয়াস করেছিলাম। সেটি আমার ব্লগে আছে, ইচ্ছে হলে পড়ে দেখতে পারেন।
আর একা যেহেতু আছেন, নিশ্চয়ই হাতে অনেকটা সময় পাবেন লেখালেখির জন্যে। আমরা সেগুলো পড়ার আশায় থাকলাম।
প্রবাসজীবন আনন্দময় এবং অভিগ্গতায় ভরপুর হোক।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
বিরহী বটে কিন্তু বিরহ কাটিয়ে অন্যদিকে মনোনিবেশ করে থাকার চেষ্টা করে চলি। তাই অতটা মন খারাপ করে না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
মজা লাগলো।
পুরুজিতকে তো চিনেন মনে হয়?
আরো লেখেন এরকম!
নতুন মন্তব্য করুন