• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

ডারউইন থেকে ডাবল হেলিক্স - ৬

দিগন্ত এর ছবি
লিখেছেন দিগন্ত (তারিখ: শনি, ০৫/০৪/২০০৮ - ৩:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoএই চারজনের নাম এক নিশ্বাসে বলে ফেললাম বটে কিন্তু এরা প্রত্যেকে যে কত বড় মাপের একটা আবিষ্কার করে গেছেন সেটা চট করে বলে বোঝানো হয়ত সম্ভব নয়। তবে এটা বলা সম্ভব, মানবজাতি এদের আবিষ্কৃত বিষয়কে এখন থেকে অন্তত কয়েকশ' বছর পর পর্যন্ত মনে রাখবে, যেমন মনে রেখেছে আইস্যাক নিউটন বা অ্যালবার্ট আইন্সটাইনকে। এদের সাথে পরিচিত হওয়া যেকোনো বিজ্ঞানপ্রেমীর জন্যই জরুরী। লন্ডনের কিংস কলেজে এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফি নিয়ে গবেষণা করতেন রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন আর মরিস উইলকিন্স, অন্যদিকে কেমব্রিজের স্বনামধন্য ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে ডিএনএর সম্ভাব্য গঠন ব্যাখ্যা করতে মডেল তৈরীতে ব্যস্ত থাকতেন জেমস ওয়াটসন আর ফ্রান্সিস ক্রিক

autoনিউজিল্যান্ডে জন্মানো উইলকিন্সের কথা আগেই বলেছি, বাকিদের কথাও বাদ রাখব না। এদের মধ্যে সবথেকে প্রতিভাবান বিজ্ঞানী হিসাবে যাকে মনে করা হয় তিনি হলেন ফ্রান্সিস ক্রিক। ইনি কাজ করতেন মেডিক্যাল রিসার্চ ইউনিটে, ম্যাক্স পেরুজের অধীনে। মজার কথা, এই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী প্রথম জীবনে পদার্থবিদ ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কাজ করতেন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর বিজ্ঞানী হিসাবে। আরো অনেক বিজ্ঞানীর মতই বিশ্বযুদ্ধের শেষে উনিও পদার্থবিদ্যা ছেড়ে জীববিজ্ঞানে আসেন শ্রোডিংগারের বই পড়ে। ১৯৪৭ সালে উনি প্রথম জীববিজ্ঞানে আসার পরে উনি প্রথম কয়েকবছর শুধু এক্স-রে ডিফ্রাকশন, জৈবরসায়ন আর জীববিজ্ঞানের কয়েকটি মূল টেক্সটবুক পড়েই সময় কাটান। ক্যাভেন্ডিশেই ১৯৫১ সালে তার আলাপ হয় আরেক জীববিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসনের সাথে,auto তখন ওয়াটসনের বয়স মাত্র ২৩। জেমস ওয়াটসনই ছিলেন এদের মধ্যে একমাত্র আমেরিকান। শিকাগোর এক ব্যবসায়ী ঘরের ছেলে ওয়াটসন কিন্তু ছিলেন জীববিজ্ঞানী - আর তার গবেষণার বিষয় ছিল ফাজ ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়া। কোপেনহেগেনে পোস্ট ডক্টরাল প্রোজেক্টে কাজ করার সময়ই নেপলসে এক সিম্পোসিয়ামে তার আলাপ হয় উইলকিন্সের সাথে। উইলকিন্সের দেখানো ডিএনএর এক্সরে ডিফ্রাকশন প্যাটার্নের ছবিই তাকে প্রবুদ্ধ করেছিল ১৯৫১ সালে লন্ডনে ক্যাভেন্ডিশে যোগ দিতে - প্রথমে মায়োগ্লোবিন নিয়ে গবেষণায়, পরে ডিএনএ। এদের থেকে কিছুটা আলাদা প্রকৃতির ছিলেন রোজেলিন্ড। autoব্রিটিশ ইহুদী পরিবারে জন্মানো এই বিজ্ঞানীও ১৯৫১তেই কিংস কলেজে যোগ দেন জন র‌্যান্ডালের অধীনে - প্রোটিনের এক্সরে ডিফ্রাকশন প্যাটার্ন নিয়ে গবেষণা করতে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পাউলিং প্রোটিনের গঠন সম্পর্কিত আবিষ্কার করে ফেলায় উনিও ডিএনএ নিয়ে গবেষণায় যোগ দেন।

ওয়াটসনের লেখা বইতে উনি ফ্রান্সিস ক্রিকের কোনো প্রশংসাই বাকি রাখেননি। ওয়াটসনের লেখা থেকে জানা যায় ক্রিক ছোটোবেলা থেকেই অসংখ্য প্রশ্ন করতেন দেখে ওনাকে একটা এন্সাইক্লোপিডিয়া কিনে দেওয়া হয়েছিল। ডিএনএ নামে একটি বইতে উনি ক্রিক সম্পর্কে লিখছেন -

"উনি ছিলেন বাক্যবাগীশ, যেকোনো আলোচনায় বক্তব্য রাখতে ভালবাসতেন। ক্যাভেন্ডিশের হলঘরে প্রায়ই তার অট্টহাসির প্রতিধ্বনি শোনা যেত। মাসে অন্তত একবার করে উনি নতুন কিছু না কিছু আইডিয়া বের করতেন আর সেই আইডিয়া দীর্ঘ সময় ধরে কোনো না কোনো উৎসাহীকে বোঝাতেন।"
উল্টোদিকে রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের বিবরণে ওয়াটসন এতটা উদার ছিলেন না।
"উনি (রোজালিন্ড) ছিলেন যুক্তিবাদী ও সব কাজেই নিখুঁত। আর সব ক্ষেত্রেই উনি নিজের মতে দৃঢ় - এমনকি নিজের রিসার্চ গাইড রোনাল্ড নরিসকে (পরবর্তীকালে নোবেল বিজেতা) গাধা বলে আখ্যায়িত করতেও তার মুখে বাধে নি।"
১৯৬৮ সালে প্রকাশিত "ডাবল হেলিক্স" বইতে উনি আবার আবিষ্কারের ইতিহাসের সাথে সাথে "রোজি"-কে নিয়ে কিংস কলেজে টানাপোড়েনের বিবরণও দিয়েছেন।

যাই হোক, কিংস কলেজে উইলকিন্স আর রোজালিন্ড মিলে শুরু করেন এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফির কাজ, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাদের সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা শুরু হয়। রোজালিন্ড যেমন ছিলেন তথ্য-সন্ধিৎসু, উইলকিন্স ছিলেন ঠিক উলটো। উনি কাল্পনিক মডেল বানিয়ে প্রাপ্ত তথ্যের সাথে মেলাতে চেষ্টা করতেন। ডাবল হেলিক্স আবিষ্কারের আসল কাহিনী শুরু হয় ১৯৫২ সালে, রোজালিন্ডের সেমিনারের মধ্যে দিয়ে। autoআর এই সেমিনারের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ ওয়াটসনের মুখে শুনেই নতুন উদ্যমে ডিএনএর খসড়া ছবি আঁকা শুরু করেন ক্রিক। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া এক্সরে ছবি দেখে ও তার সাথে প্রাপ্ত ঘনত্ব ও আকৃতির সাদৃশ্য থেকে ক্রিক প্রস্তাব করলেন ডিএনএর প্রথম মডেল। এই মডেলের কেন্দ্রস্থলে তিনটি শৃঙ্খলা ছিল, আর তারা সংযুক্ত ছিল হাইড্রোজেন বন্ধনী দিয়ে। আর সেদিন সন্ধ্যায় ক্রিক ফোন করে উইলকিন্সকে জানালেন তার এই প্রচেষ্টার কথা।

পরের দিনই চলে এলেন উইলকিন্স, রোজালিন্ডকে নিয়ে। কিন্তু দুই অভিজ্ঞের কাছে মডেলের ত্রুটি বেশী সময় চাপা থাকল না। সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করে রোজালিন্ড দেখিয়ে দিলেন যে শৃঙ্খলা যে কটিই হোক না কেন, তারা থাকবে বাইরের দিকেই। কারণ, এক্সরেতে ডিএনএ ক্রিস্টালের মধ্যে যে জলের অণু দেখা গেছে, তা ওই শৃঙ্খলার মাঝেই অবস্থান করতে বাধ্য। এভাবে, তার প্রথম দফার ক্রিস্টালোগ্রাফির ছবির ব্যাখ্যাই প্রথমবারের মত ক্রিক আর ওয়াটসনকে ভাবতে শেখায় যে A,T,C,G মূলকগুলো ডিএনএর গঠনের ভেতরের দিকে আছে, মূল কাঠামো আছে বাইরের দিকে। এর আগে অবধি সব পাউলিং আর ওয়াটসন-ক্রিক সহ সব বিজ্ঞানীই এর উল্টোটাই ভেবে আসছিলেন। কিন্তু এই আলোচনার ফল হল সুদূরপ্রসারী। একদিকে রোজালিন্ড এরকম আবোলতাবোল মনগড়া ছবি আঁকাকে একেবারেই পাত্তা দিতে চাইলেন না।, ওনার বক্তব্য ছিল - আগে তথ্য-সংগ্রহ, পরে তা থেকে মডেল। ওয়াটসন-ক্রিক চাইলেন তার উলটো। এই সময়েই লরেন্স ব্র্যাগ, সে সময়ে ক্যাভেন্ডিশে সর্বোচ্চ পদে আসীন, হয়ত বিরক্ত হয়েই ঘোষণা করলেন যে ওয়াটসন-ক্রিক আর ডিএনএ নিয়ে কাজ করবেন না। ডিএনএর কাজ দেখবে কিংস কলেজ - মানে উইলকিন্স আর রোজালিন্ড। বিফল মনোরথে তখনকার মত গবেষণা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হলেন ওয়াটসন আর ক্রিক।

এদিকে তখন আটলান্টিকের ওপারের সাথে দ্বন্দও আস্তে আস্তে জমে উঠেছে। পাউলিং চেয়ে পাঠালেন ডিএনএর এক্সরে ডিফ্রাকশনের ছবি, উইলকিন্সের কাছে। কিন্তু কোনো ছুতোয় উইলকিন্স এড়িয়ে গেলেন। হয়ত গুরুত্ব না বুঝেই পাউলিং আর এ নিয়ে অগ্রসর হলেন না। ইচ্ছা করলেই উনি ক্যালটেকে তখন এক্সরে ডিফ্রাকশনের ছবি বের করে নিতে পারতেন। বলা হয় লরেন্স ব্র্যাগ নিজের প্রতিদ্বন্দীর থেকে এক ধাপ আগে থাকার জন্যই পাউলিংকে ছবি পাঠাননি।

autoযাহোক, এ সময়েই একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার এই ডিএনএর গঠন উন্মোচনে ব্যস্ত বিজ্ঞানীদের কাজকে প্রভাবিত করে। সেটা হল অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী এরুইন শ্যার্গাফের পরীক্ষা। আলট্রাভায়োলেট স্পেক্ট্রোফটোমিটার যন্ত্রে পরীক্ষা করে উনি দেখালেন যে ডিএনএতে A আর T প্রায় সমপরিমাণে থাকবে, অন্যদিকে একই ভাবে প্রায় সমপরিমাণে থাকবে C আর G। এদের মধ্যে G আর C এর পরিমাণ কিছুটা কম। এই ১:১ এর সূত্রকেই বলা হয় শার্গাফের সূত্র। এই সুত্রের আগে পর্যন্ত সব বিজ্ঞানীই ভেবে আসছিলেন যে এই মূলকগুলো হয়ত সমপরিমাণেই আছে। কিন্তু শার্গাফের পরীক্ষা ও প্রমাণ তাদের নতুন ভাবনাচিন্তা করতে বাধ্য করল।

কিংস কলেজে কিন্তু একনিষ্ঠ সাধিকা রোজেলিন্ড তখনও ক্রিস্টালোগ্রাফি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন - যদি কোনোভাবে আরো স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায় এক্সরে থেকে। উনি দেখলেন ডিএনএ মূলত দুটো রূপে পাওয়া যায় - যাদের উনি নাম দিলেন এ আর বি আকার। এ আকারের ডিএনএ হল আর্দ্র - লম্বা আর সরু সরু। বি আকারেরটি হল শুষ্ক, মোটা আর বেঁটে। রোজালিন্ড গবেষণা চালিয়ে গেলেন বি আকারের ডিএনএর ওপর, আর উইলকিন্স শুরু করলেন এ আকারের ওপর। অসীম ধৈর্য নিয়ে দিনরাত খেটে রোজালিন্ড একের পর এক অসাধারণ এক্সরে ছবি বের করলেন ডিএনএর। এর জন্য তিনি দীর্ঘসময় টানা পর্যবেক্ষণে রেখে ডিএনএ ক্রিস্টালকে ধীরে ধীরে গরম বা ঠান্ডা, আর্দ্র বা শুষ্ক করতেন। ফলস্বরূপ উনি একটা এমন এক্সরে ডিফ্র্যাকশন প্যাটার্নের ছবি পান যেটা এককথায় অতুলনীয়।

আটলান্টিকের ওপারে পাউলিং তখন সদ্য ডিএনএর একটা মডেল প্রস্তাব করেছেন। বিপদ বুঝে কিংস কলেজের সব বিজ্ঞানীদের একত্র করে ডিএনএর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যোগ নিলেন পেরুজ। উনি প্রথমেই সব তথ্য একত্রীভূত করতে শুরু করলেন। autoফলশ্রুতিতে, রোজালিন্ডের এই ৫১ নম্বর ছবি অপ্রকাশিত অবস্থায় তার অজ্ঞাতেই তার ছাত্র গসলিং-এর হাত থেকে এসে পড়ে উইলকিন্সের হাতে। ডাবল হেলিক্স আবিষ্কারে এটাই সবথেকে বিতর্কিত অধ্যায়। এমনটাও শোনা যায় যে উইলকিন্স নাকি রোজালিন্ডের ড্রয়ার থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এই ছবি। যদিও এরকম ঘটনা প্রমাণযোগ্য নয়, তাও অনেককাল পরে উইলকিন্সের বক্তব্য থেকেও বোঝা যায় বিতর্কের ঝাঁঝ -

"হয়ত আমার অনুমতি নিয়েই করা উচিত ছিল। অনেকেই বলে থাকেন যে আমি এটা খুবই অন্যায় করেছি - কথাটা হয়ত ঠিকই। সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে হয়ত অনুমতি নেবার ব্যাপারটা আসতই না, তবুও ... ছবিটা হাতে নিয়েই আমি বুঝতে পারলাম এই হেলিক্সের মত পেঁচানো শৃঙ্খলা আছে এতে। আমি উত্তেজিত হয়ে জিমকে (জেমস ওয়াটসন) বললাম - 'এই দেখ এখানে একটা হেলিক্স, আর এই গাধা মহিলা চোখে এটাও দেখতে পায় না'"।
লেখাটা প্রকাশের সময় রোজেলিন্ড বেঁচে থাকলে এত সহজে ব্যাপারটা নিয়ে লেখা বা আলোচনা সম্ভব হত কিনা জানি না, তবে কিসের ভিত্তিতেই বা উইলকিন্স ভেবে নিলেন যে রোজালিন্ড হেলিক্স বুঝতে পারছেন না, যেখানে কয়েকদিন আগেই উনি সহকারীদের একটা মস্তবড় ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন? সমগ্র আবিষ্কারের ইতিহাসে এই ছোটো একটা কলঙ্কময় অধ্যায় কি এড়ানো যেত না?

যাহোক, ওয়াটসন আর ক্রিকের হাতে আসা বি আকারের ছবির কথা ক্যাভেন্ডিশে ভেসে আসতেই ব্র্যাগ বুঝতে পারলেন আবার এদের দরকার পড়বে ডিএনএ গবেষণায়। autoসাথে সাথেই ওয়াটসন-ক্রিককেও আবার তাদের পুরোনো কাজে ফেরানো হল। এইবারে সমস্যাটা থাকে জ্যামিতির। হাতে আছে হেলিক্স আর চারটে মূলক -তাদের একটা গঠন কাঠামোয় ফিট করাতে হবে। ঘনত্ব পরিমাপ থেকে এতদিনে ওয়াটসনের ধারণা হয়েছিল হেলিক্সের সংখ্যা দুই। তাছাড়া কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোজমেরা দুভাগে বিভক্ত হয়েই থাকে - তিন ভাগে নয়। এই দুই তথ্য কাজে লাগিয়ে চলল পূর্ণোদ্যমে আবার মডেল তৈরীর কাজ।

প্রায় একই সময়ে - ১৯৫৩, ফেব্রুয়ারী ২৩এর রোজালিন্ডের ডায়রী থেকে জানা যায় যে উনি তখন স্থিরনিশ্চিত হয়ে গেছেন দুটো হেলিক্সের ব্যাপারে, শুধু তার বেস-পেয়ারটাই খুঁজে পাওয়া বাকি। হয়ত আরেক সপ্তাহের মধ্যে উনি সেটাও খুঁজে বের করে ফেলতে পারতেন।

কিন্তু ভাগ্য বিমুখ, ওয়াটসন ক্রিকই শেষ হাসি হাসলেন। ২৮শে ফেব্রুয়ারির সকালে সব কিছু এক বিন্দুতে এসে মিশল। ওয়াটসনের কার্ডবোর্ডের মডেল পূর্ণ হল। পাওয়া গেল হাইড্রোজেন বন্ধনী যা A-T আর C-Gকে (বেস-পেয়ার) আবদ্ধ করে রাখবে। তৈরী হল দুপাশের দুটো হেলিক্স - সুগার ফসফেটের। autoএটা ছিল বিজ্ঞানের সাধনায় মানুষের অগ্রগতির একটা বিরাট পদক্ষেপ - বুঝতে ভুল করেননি ওয়াটসন-ক্রিক। মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে বিস্ময়ে দেখছিলেন যে সব কিছুই হুবহু মিলে যাচ্ছে - দুটো শৃঙ্খলা কোষ বিভাজনের সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আর একটার ছাঁচে ফেলে তৈরী হয় অন্যটা। এ ভাবেই একটা থেকে দুটো ক্রোমোজম। ওয়াটসন-ক্রিক এই সাফল্য পেয়েছিলেন কারণ বাকি অনেকেই আগেভাগে ভেবে রেখেছিলেন যে এই অণু অনেক জটিল কিছু হবে - আগে কিছু প্রোটিনের কাঠামো উদ্ধার করে তারপরে এতে হাত দেবেন। আর পাউলিং-এর মত প্রতিভাবানেরা নিয়েছিলেন শর্টকাট। আর সবশেষে আছে রোজালিন্ডের ছবি। কোনোওটিও এর মধ্যে একে অন্যের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর ছিল না।

কিছুদিন ধরে বিভিন্ন বিজ্ঞানীমহলে নিজেদের কার্ডবোর্ডের মডেল দেখিয়ে বেড়ানোর পরে নেচার পত্রিকায় লেখাটা পাঠালেন ওয়াটসন-ক্রিক। লেখা প্রকাশিত হল তিন সপ্তাহ পর - ২৫শে এপ্রিল । পেপারে তারা উইলকিন্সের নামও দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু "যথেষ্ট" অবদান নেই বলে উইলকিন্স নিজেই সরে যান। আর মার্চে ভগ্নমনোরথ রোজেলিন্ড তার পেপার লিখলেন। তাতে উনি সেই ৫১ নম্বর ছবি দিলেন আর লেখা শেষ করলেন এই বলে -

"এভাবে আমাদের প্রাপ্ত ফলাফল ওয়াটসন আর ক্রিকের মডেলের সাথে মিলে যাচ্ছে।"
ভাগ্যের পরিহাসে, কে কার সাথে মেলার কথা - আর ঘটল তার উল্টোটাই। ছবি দেখে মডেল মিলিয়েছিলেন ওয়াটসন-ক্রিক, লেখা বেরোলো উলটো। একেই কি বলে নিয়তি?
(চলবে)


মন্তব্য

শিক্ষানবিস এর ছবি

এরকম বিতর্ক ধরণের অনেক কিছুই বিজ্ঞানের ইতিহাসে হয়েছে। এটাও বিজ্ঞান সাধনার অংশ বোধহয়। কারণ বিজ্ঞানীরা সবাই তো আর দার্শনিক নন। প্রজ্ঞা আর জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা থাকলেই দার্শনিক হওয়া যায়। যেসব বিজ্ঞানী অহংবোধ ত্যাগ করতে পেরেছেন তারাই বস। রোজেলিন্ডের নামও নিশ্চয়ই মানুষ মনে রাখবে।

তীরন্দাজ এর ছবি

বিরাট লেখা। আরেকটু মনোযোগ নিয়ে পড়তে হবে।

আপনি সুলেখক...।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

দিগন্ত এর ছবি

আরেকটু ছোটো করে দিলেই হত। দেবার পরে মনে হল লেখা কম আর ছবি বেশী হচ্ছে ... তাই আরো বাড়িয়ে দিলাম। না বাড়ালেই ঠিক ছিল ...।
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হিমু এর ছবি

লেখার বিস্তার নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। আমার মনে হয় বিজ্ঞানবিষয়ক লেখা একটু জায়গা নিয়ে গুছিয়ে লেখাই ভালো। পরের খন্ডের জন্যে ঝুলিয়ে রাখলে অনেক কিছুই খাপছাড়া মনে হয় পরে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

পুতুল এর ছবি

এখন সব ইতিহাস। উপস্থাপনা ভাল লেগেছে।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

হিমু এর ছবি

চমৎকার হয়েছে লেখাটা। এ কাহিনী নিয়ে মনে হচ্ছে সিনেমাও তৈরি হয়ে যাবে শিগগীরই।

প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়লো, দেশ-এর একটি সংখ্যায় একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম অবিভক্ত ও বিভক্ত ভারতের বাঙালি বিজ্ঞানীদের অবদান ও সমসাময়িক প্রতিক্রিয়া নিয়ে, প্রবন্ধের নাম বা লেখিকার নাম মনে পড়ছে না এ মূহুর্তে। সুভাষ মুখোপাধ্যায় নামে জনৈক বিজ্ঞানীর গবেষণা পন্ড হয়ে গিয়েছিলো বিজ্ঞানীদের "প্রভাবশালী মহলের" টিটকিরিতে, যার জের ধরে সুভাষের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। এ ঘটনা অবলম্বনে রমাপদ চৌধুরী লিখেছিলেন তাঁর "অভিমন্যু" উপন্যাসটি। রোজেলিন্ডের ঘটনা তার কাছাকাছিই বলা চলে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

দিগন্ত এর ছবি

কাছাকাছি হয় না। কারণ রোজেলিন্ড মৃত্যুর আগে পর্যন্ত জানতে পারেন নি তার তথ্য চুরি হবার ঘটনা। আর সত্যিকারে তার আগেই ওয়াটসন-ক্রিক আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আবিষ্কার তাকে বিজ্ঞানীমহলে হাস্যস্পদ করে তুলেছিল - যাতে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। নিজের জীবন দিয়ে দিতে হয়েছে যাকে, আমি তো তার লোকসানটাই অনেকটা বেশী বলি ...
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।